Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

মানুষের শরীরে বাসা বাঁধা ভয়ঙ্কর কিছু পরজীবী

বিজ্ঞানশাস্ত্রের ভাষায়, পরজীবী হলো অন্য জীবের দেহে বাস করা উদ্ভিদ কিংবা প্রাণী। পৃথিবীতে টিকে থাকা বৈচিত্র্যময় এই প্রাণীরাজ্যে এমন কিছু পরজীবীর অস্তিত্ব বিদ্যমান, যেগুলো মানুষের দেহ ছাড়া বেঁচে থাকতে পারে না। আবার কিছু আছে সুবিধাবাদী, যারা মানুষের দেহ ছাড়াও বেঁচে থাকতে সক্ষম, কিন্তু সুযোগ পেলে মানুষের দেহেই বাসা বাঁধে। বিজ্ঞান-মহল থেকে বেশিরভাগ পরজীবীকেই মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এমন পরিচিত কিছু ক্ষতিকর পরজীবী নিয়েই আজকের এই আলোচনা।

পরজীবী; Image Source: Getty Images.

প্লাজমোডিয়াম

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতিবছর সারাবিশ্বে প্রায় ২৫০ মিলিয়ন লোক ম্যালেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হয়। ম্যালেরিয়া মশা দ্বারা বাহিত হয় বলে অনেকেই সাধারণ দৃষ্টিতে একে ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়াঘটিত রোগ হিসেবেই ধরে নেয়। কিন্তু বাস্তবে ম্যালেরিয়া হলো প্লাজমোডিয়াম পরজীবী সংক্রমণের ফলে সৃষ্ট এক অসুখ। এই রোগের লক্ষণ হলো মাথাব্যথা, বমি, উদরাময়, পেট ব্যথা, মাথাব্যথা ইত্যাদি। যদিও এই পরজীবীর আক্রমণ অন্যান্য পরজীবীর মতো এত গুরুতর নয়, তবুও অসতর্কতা এবং খামখেয়ালি ডেকে আনতে পারে মৃত্যু।

যেভাবে আক্রান্ত হতে পারেন

অ্যানোফিলিস মশকী দ্বারা ম্যালেরিয়া মানবদেহে বাহিত হয়। যখন মশকী একজন মানুষকে দংশন করে, তখন কিছু প্লাজমোডিয়াম পরজীবী ওই মশকীর লালা থেকে মানুষের দেহে প্রবেশ করে। পরবর্তীতে প্লাজমোডিয়াম যকৃত ও লোহিত রক্তকণিকায় বিভিন্ন চক্র সম্পাদনের মাধ্যমে তাদের বংশবৃদ্ধি করে, এর ফলে ধ্বংস হয়ে যায় শরীরের লোহিত রক্তকণিকা। এতে করে মানবদেহে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়।

প্লাজমোডিয়াম; Image Source: WHO.

ফিতাকৃমি

ফিতাকৃমি হলো একধরনের চ্যাপ্টাকৃমি। যখন খাবারের সাথে ফিতাকৃমির ডিম বা লার্ভা কারও পেটে প্রবেশ করে, তখন সেগুলো অন্ত্রে পৌঁছে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়, এবং সেখানেই ডিম পেড়ে বংশবিস্তার করে। এর ফলে সিস্টিসারকোসিস নামক পরজীবীসংক্রান্ত সমস্যা বেশি দেখা যায়। চিন্তার ব্যাপার হলো, এই সিস্টিসারকোসিসের কারণে মানুষের মস্তিষ্কেও পরজীবী বাসা বাঁধতে পারে।

যে যে ক্ষতি করতে পারে

  • মানুষের গ্রহণকৃত খাবার থেকে ফিতাকৃমি পুষ্টি গ্রহণ করে, যার ফলে শরীরে পুষ্টির ঘাটতি হতে পারে।
  • কিছু কিছু ক্ষেত্রে ফিতাকৃমি বেশি বড় হয়ে অন্ত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। যার ফলে পেটে ব্যথা, প্রদাহ, বমি বমি ভাব এবং বমি হয়।
  • কোনো কোনো মানুষের ক্ষেত্রে ফিতাকৃমি বা তাদের ডিম অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে, যা আমবাত, চুলকানি, এবং শ্বাসকষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
  • নির্দিষ্ট ধরনের কিছু ফিতাকৃমি মস্তিষ্ক এবং মেরুদণ্ডসহ শরীরের অন্যান্য অংশে স্থানান্তরিত হয়ে যায়, যা বিভিন্ন স্নায়বিক উপসর্গ, যেমন- খিঁচুনি, মাথাব্যথা সৃষ্টি করতে পারে।

যেভাবে আক্রান্ত হতে পারেন

  • লেটুস বা কলমিদল শালুকে থাকা শামুকের লার্ভা খেলে।
  • ভালোভাবে সেদ্ধ না হওয়া শুকরের মাংস, বা সুশি খেলে।
  • দূষিত পানি পান করলে।
ফিতাকৃমি; Image Source: Getty Images.

ফাইলেরিয়াল কৃমি

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরিপে, প্রতিবছর প্রায় ১২০ মিলিয়ন লোক ফাইলেরিয়াল কৃমি (একপ্রকার গোল কৃমি) দ্বারা আক্রান্ত হয়। এই পরজীবী লসিকা নালীর ক্ষতিসাধন করে। তারা যে যে রোগ সৃষ্টি করে থাকে, সেসবের মধ্যে গোদ রোগ অন্যতম। এই পরজীবী মানুষের অন্ত্রে বাস করে না। এরা দেহাভ্যন্তরে প্রবেশের পর লসিকা নালিতে গিয়ে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। ওখানে পূর্ণবয়স্ক হয়ে লসিকা নালিতে প্রদাহ সৃষ্টির পর লসিকা নালি বন্ধ করে দেয়। এর দ্বারা আক্রান্ত রোগীর আক্রান্ত স্থানের চামড়া ফুলে যাওয়ার (হাত, পা, অণ্ডকোষ, স্তন) পাশাপাশি চামড়া লালচে ও চামড়া খসখসে হয়ে হাতির চামড়ার রূপ ধারণ করে।

যেভাবে আক্রান্ত হতে পারেন

  • স্যাঁতসেঁতে ঘাসের মধ্যে দিয়ে হাঁটার সময় ত্বকীয় কোষ দিয়ে এই পরজীবী শরীরে প্রবেশ করলে।
  • দূষিত পানি পানের মাধ্যমে।
  • মশার কামড়ে।
ফাইলেরিয়াল কৃমি; Image Source: Getty Images.

অস্ট্রেলিয়ান প্যারালাইসিস টিক

টিকদের বিবেচনা করা হয় বর্হিপরজীবী হিসেবে। কারণ, জীবদেহের ক্ষতিসাধন করার জন্য তাদের ভেতরে প্রবেশ করতে হয় না, তারা উপর থেকেই কার্যসিদ্ধি করতে পারে। ত্বকে কামড় দিয়ে তারা বিপজ্জনক কিছু রোগ, যেমন- লাইম ডিজিজ, রিকেটশিয়া ইত্যাদি সৃষ্টি করে। এদের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ানক হলো অস্ট্রেলিয়ান প্যারালাইসিস টিক, যারা ‘ইক্সোডেস হলোসাইক্লাস’ নামে পরিচিত। তারা শরীরের ভেতর এমন এক নিউরোটক্সিন প্রবেশ করিয়ে দিতে পারে, যা মানুষের পক্ষাঘাতের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আর কোনোভাবে তা ফুসফুসে পৌঁছাতে পারলে, ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বন্ধ হয়ে রোগী মারা যায়।

যেভাবে আক্রান্ত হতে পারেন

এই অস্ট্রেলিয়ান টিকের অস্তিত্ব শুধু অস্ট্রেলিয়াতেই বিদ্যমান। তবে এখন পর্যন্ত এর কোনো অ্যান্টিভেনম বা প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি।

অস্ট্রেলিয়ান প্যারালাইসিস টিক; Image Source: Getty Images.

স্ক্যাবিস মাইট

এই স্ক্যাবিস মাইট অনেকটা টিকের মতোই, মাকড়সা সদৃশ। কিন্তু ইক্সোডেস হলোসাইক্লাসের মতো এদের ত্বকের উপর থেকে কামড়ে মানুষকে আক্রান্ত করার ক্ষমতা নেই। এরা সাধারণত ত্বকের উপর মল ত্যাগ করে। ফলে ত্বকে চুলকানি ও জ্বালাপোড়া সৃষ্টি হয়। নখের আঁচড়ে বিপদ আরও বেড়ে যায়। কারণ, তখন স্ক্যাবিসের মল টিস্যুর ছিদ্র দিয়ে শরীরে প্রবেশের মাধ্যমে রোগ সৃষ্টি করে। যাদের শারীরিক প্রতিরক্ষাব্যবস্থা দুর্বল, তাদের ক্ষেত্রে এই পরজীবী ভয়ানক বিপদ ডেকে আনতে পারে। এর ফলে ত্বক শক্ত ও জীর্ণ হয়ে যায়।

যেভাবে আক্রান্ত হতে পারেন

এটি একটি ছোঁয়াচে রোগ। আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসলে এই পরজীবী সহজেই সুস্থ ব্যক্তির দেহে স্থানান্তরিত হতে পারবে। তাই, খোসপাঁচড়া যাদের আছে, তাদের এড়িয়ে চলাই উত্তম।

স্ক্যাবিস মাইট; Image Source: Getty Images.

স্ক্রুওয়ার্ম

বর্তমান বিশ্বে আলোচিত নিউ ওয়ার্ল্ড স্ক্রুওয়ার্মের বৈজ্ঞানিক নাম হলো Cochliomyia hominivorax। বিশ্লেষণ করলে ‘hominivorax‘ শব্দের অর্থ দাঁড়ায় ‘মানুষখেকো’, এবং নামের সাথে এই লার্ভাগুলোর কাজের মিল রয়েছে। এরা মানুষের মাংস ভক্ষণ করে থাকে। এই লার্ভাগুলো ধারণ করে একপ্রকার মাছি। লার্ভাসমেত কোনো স্ত্রী মাছি ক্ষততে বসতে পারলে একসাথে প্রায় শ’খানেক ডিম পাড়ে। একদিনের মধ্যে সে ডিমগুলো ফুটে শূককীট বের হয় এবং সেগুলো ওই ক্ষত থেকে মানুষের দেহের মাংসকে নিজের খাবার হিসেবে গ্রহণ করতে থাকে। এই শূককীটগুলো মাংসপেশি, রক্তনালী, স্নায়ুর মধ্যে গর্ত তৈরি করে আশ্রয় নিতে পারে। লার্ভা দ্বারা সৃষ্ট এই রোগের নাম দেওয়া হয়েছে মাইয়াসিস।

স্ক্রুওয়ার্ম; Image Source: Getty Images.

কেউ যদি লার্ভাগুলোকে শরীর থেকে সরিয়ে ফেলতে চায়, তাহলে সেগুলো গর্ত খুঁড়ে আরও গভীরে চলে যাওয়ার চেষ্টা করে। সমীক্ষায় দেখা গেছে, এই পরজীবী দ্বারা আক্রান্ত ৮% মানুষ মৃত্যুবরণ করে। বেঁচে থাকা মানুষেরাও স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপন করতে পারে না। কারণ, শূককীটের দল তাকে ক্রমশ জীবন্ত খেতে থাকে। এর ফলে ধীরে ধীরে শরীরের টিস্যু ও কোষ ধ্বংস হয়ে যেতে থাকে।

যেভাবে আক্রান্ত হতে পারেন

স্ক্রুওয়ার্মের দেখা সাধারণত যুক্তরাষ্ট্রে পাওয়া যায়। তবে আজকাল দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের বিভিন্ন জঙ্গলে এর প্রাদুর্ভাব উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে গিয়েছে। ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জেও এর সন্ধান মিলবে।

This is a Bengali article about the worst human parasites. Necessary references have been hyperlinked inside.
Feature Image: Getty Images.

Related Articles