মোডেস্ট ফ্যাশন কী?
‘মোডেস্ট ফ্যাশন’ তেমন একটা নতুন শব্দ না হলেও, এই সম্পর্কে আমাদের গণমাধ্যম ততটা সক্রিয় নয়, এমনকি কেউ নিজে থেকে না জানতে চাইলে সামাজিক মাধ্যমগুলোও তেমন কিছু জানাতে আগ্রহী হয় না। মোডেস্ট শব্দটি দ্বারা বিনয় বা শালীনতা বোঝালেও, মোডেস্ট ফ্যাশন দ্বারা সামগ্রিক ফ্যাশন জগতের শালীনতাকে বোঝানো হয় না; বরং ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে রক্ষণশীল, ফ্যাশনবান্ধব পোশাক-পরিচ্ছদকেই বোঝানো হয়। তবে, অন্য অনেকেই নিজস্ব ব্যক্তিগত সাজপোশাককে তুলে ধরার জন্য এই শব্দাবলী ব্যবহার করে থাকে।
হুদা বিউটি- প্রসাধনী জগতে এক অনন্য নাম। এই তালিকায় ভিভি ইউসুফের সংযুক্তি সাম্প্রতিক ঘটনা না হলেও, তার সাম্প্রতিক অর্জনসমূহ তাকে অনন্য করে তুলেছে।
‘ফ্যাশন ভ্যালে’র যাত্রা
আর্থিকভাবে স্বচ্ছল পরিবারে জন্মগ্রহণকারী ভিভি সোফিনাস ইউসুফ ও ফাজারুদ্দিন শাহ আনোয়ার- লণ্ডন স্কুল অব ইকোনোমিক্সে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সময় একে অন্যের সাথে পরিচিত হন। সেখান থেকেই প্রণয় ও পরিণয়, এবং বর্তমানে তারা চার সন্তানের বাবা-মা। প্রথম পরিচয়ের সময়ে তাদের বয়স ছিল ২২ বছরের মতো। ভিভি সেই সময় থেকেই ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত তার ব্লগ ‘প্রোড্ডাক ডট কম’ এর কল্যাণে ফ্যাশন ব্লগার হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ২০১০ সালের কোনো একদিন একসাথে কেনাকাটা করতে বেড়িয়ে ভিভি ও ফাজা এক অনাকাঙ্খিত অভিজ্ঞতার সম্মুক্ষীণ হন। আর সেখান থেকেই ‘ফ্যাশন ভ্যালে’র যাত্রা শুরু বলা যায়।
সেদিন কেনাকাটা করতে গিয়ে অতিরিক্ত ট্র্যাফিক জ্যামের কারণে এক শপিং মল থেকে অন্যটিতে যাতায়াত করতে করতে বিরক্ত হয়ে ফাজা স্বগোতোক্তি করে বলেন, “কেন সবকিছু একই জায়গায় পাওয়া যায় না?” আর তৎক্ষণাৎ তারা দুজনই উক্ত ভাবনা বাস্তবে ব্যবসায়িক রূপদানের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। ফ্যাশন ভ্যালে ছিল মূলত একটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান যেখানে স্থানীয় ডিজাইনারদের তৈরি পোশাক ও সাজসজ্জার অন্যান্য সামগ্রী বিক্রয় করা হতো। ফ্যাশন জগতে নিজের প্রতিষ্ঠিত পরিচিতির কারণে ভিভি এই প্রতিষ্ঠানটির মূল প্রতিনিধিত্বকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, এবং ফাজা সিইও হিসেবে ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করেন। নারীদের জন্য মোডেস্ট ফ্যাশন দ্রব্যাদিই এই প্রতিষ্ঠানে বিক্রি হতো।
খুব দ্রুতই অনলাইন থেকে বাস্তবের ইট-কাঠ-পাথরের জগতেও ফ্যাশন ভ্যালের ব্যবসায় বিস্তার লাভ করে। দুই বছরের মধ্যে মোট তিনটি শো-রুমের যাত্রা শুরু হয়। আর নারীদের পাশাপাশি এখানে পুরুষ ও শিশুদের জন্যও ফ্যাশনেবল সামগ্রী বিক্রি শুরু হয়। ২০১৭ সাল নাগাদ ব্রুনেই, সিঙ্গাপুর ও জাকার্তায় এর শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সময়ে প্রতিষ্ঠানটিতে ১৫০ জন কর্মী নিয়োজিত ছিল, এবং ৫০০ ব্র্যাণ্ড চুক্তিবদ্ধ ছিল। একই সময়ে ভিভির প্রতিষ্ঠিত নিজস্ব ব্র্যাণ্ড ‘ডাক’ (dUCk)-ও ‘লিলিত’- এর অধীনে যাত্রা শুরু করে। সেই সাথে ছিল তার ইউটিউব চ্যানেল ও ‘অ্যাস্ট্রো’ টিভি চ্যানেলে প্রচারিত তার বাস্তব জীবনভিত্তিক অনুষ্ঠান ‘লাভ, ভিভি’। এছাড়াও ভিভি জায়গা করে নেন ফোর্বসের বিশ্বখ্যাত ‘থার্টি আন্ডার থার্টি’ তালিকায়।
এই সময়ে ইনস্টাগ্রামে ভিভির অনুসারীর সংখ্যা ছিল ১.৮ মিলিয়নেরও বেশি। কিন্তু ২০২০ সালের শেষ নাগাদ ফ্যাশন ভ্যালের আয় ও সামগ্রিক আর্থিক অবস্থা এতটাই খারাপ হয়ে পরে যে যাত্রা শুরুর প্রায় দশ বছর পরে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর সেই সময় থেকেই তাদের নিজস্ব ব্র্যাণ্ড ‘ডাক’ ও ‘লিলিত’ স্বকীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে যাত্রা শুরু করে। ফ্যাশন ভ্যালে প্রতিষ্ঠার সময় ভিভি তার বাবার কাছ থেকে ৫০,০০০ মালয়েশিয় রিঙ্গিত ঋণ হিসেবে নিয়েছিলেন, এবং বাকি ৫০,০০০ রিঙ্গিত বিনিয়োগ করেন ফাজা।
ভিভি তার বাবাকে প্রতিষ্ঠানের অংশীদারিত্ব প্রদানের পাশাপাশি আর্থিক ঋণও পরিশোধ করে দেন। যাত্রার একপর্যায়ে প্রতিষ্ঠানটি দেশটির শীর্ষস্থানীয় বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ‘খাজানা ন্যাসনাল বার্হেদ’ ও ‘পার্মোদ্যালান ন্যাসনাল বার্হেদ’ (পিএনবি)- এর মনোযোগ আকর্ষণ করে। আর তাই মিলিয়ন মিলিয়ন মার্কিন ডলারের লোকসান হওয়ার পরেও তারা ‘ডাক’ ও ‘লিলিত’- এই দুটি পৃথক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করে।
সাম্প্রতিক অর্জন
২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে বিশ্বখ্যাত ফ্যাশন প্লাটফর্ম ‘বিজনেস অব ফ্যাশন’ (বিওএফ) এর ‘বিওএফ ৫০০’ এর তালিকায় ভিভি ইউসুফ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের একজন হিসেবে নির্বাচিত হন। একই বছরের ডিসেম্বর মাসে ভিভির আত্মজীবনী ‘দ্য ফার্স্ট ডেক্যাড: মাই জার্নি ফ্রম ব্লগার টু অন্ট্রাপ্রেনার’ প্রকাশিত হয়। বইয়ে উল্লেখিত ভিভির পেশাগত জীবনের বিভিন্ন সময়ের প্রতিকূলতাসহ অন্যান্য সকল বিষয়ে সততা বহুল প্রশংসিত হয়।