Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ইসরায়েলের জন্য মোসাদ কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

পৃথিবীর সব দেশেরই জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা রয়েছে। এই গোয়েন্দা সংস্থাগুলো যেমন দেশের অভ্যন্তরে সন্ত্রাসবাদ দমন কিংবা বাইরের দেশের গুপ্তচরবৃত্তির উপর কড়া নজরদারি চালায়, তেমনই অন্যান্য দেশেও অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর তথ্যের অনুসন্ধান চালিয়ে থাকে। অনেক সময় গোয়েন্দা সংস্থা দ্বারা বাইরের দেশে বিভিন্ন গোপন অভিযান পরিচালনার সংবাদও গণমাধ্যমের কল্যাণে শোনা যায়। যেমন- আমেরিকার প্রধান গোয়েন্দা সংস্থা সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির (সিআইএ) কথাই ধরা যাক। আমেরিকা পুরো বিশ্বজুড়ে যেসব সরকারকে তার জাতীয় স্বার্থের জন্য হুমকি মনে করেছে, তাদের বিরুদ্ধে প্রায় তিপ্পান্নটি গোয়েন্দা অভিযান পরিচালনা করেছে সিআইএ। এর মধ্যে প্রায় ৩৫টি অভিযানে তারা সফলও হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মূল কাজ হচ্ছে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ গোপন তথ্য সরকারের নীতিনির্ধারকদের হাতে তুলে দেয়া।

বিশ্বের সবচেয়ে চৌকস গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মধ্যে রয়েছে আমেরিকার সিআইএ, ইসরায়েলের মোসাদ, ব্রিটেনের এমআই-সিক্স, সোভিয়েত আমলের কেজিবি, ভারতের র’ কিংবা পাকিস্তানের আইএসআই। অন্যান্য দেশের গোয়েন্দা সংস্থাও হয়তো দারুণ দক্ষতার সাথে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছে, কিন্তু গণমাধ্যমে না আসার কারণে আমরা হয়তো জানতে পারিনি। অনেক সময় এটাও বলে হয়ে থাকে, “গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর খবর পত্রিকার পাতায় না আসার মানে হচ্ছে সেগুলো ঠিকঠাক নিজেদের দায়িত্ব পালন করছে।” সাধারণত একটি দেশের গোয়েন্দা সংস্থার কতটা দক্ষ– তা নির্ভর করে সংকটকালে সেই সংস্থা কতটুকু সফলতার সাথে তাদের দায়িত্ব পালন করতে পেরেছে, তার উপর। সেদিক থেকে এই গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকেই পৃথিবীর সবচেয়ে দক্ষ ও চৌকস গোয়েন্দা সংস্থা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

Image Source: Wallpaper Access

ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থার নাম ‘মোসাদ’। ইসরায়েল রাষ্ট্রের জন্মের পর পরই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড বেন গুরিয়ন ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে একটি সমন্বিত রূপ দেয়ার চেষ্টা করেন এবং সফল হন। ইসরায়েল রাষ্ট্রের গোড়াপত্তনের পর থেকেই রাষ্ট্রটির প্রধান গোয়েন্দা সংস্থা হিসেবে মোসাদ সফলভাবে অর্পিত দায়িত্ব পালন করে আসছে।

মোটাদাগে মোসাদের তিনটি বিভাগ রয়েছে। একটি বিভাগের নাম হলো ‘আমান’, যার কাজ হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর সামরিক তথ্য দেশটির সামরিক বাহিনীর শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে হস্তান্তর করা। অপর একটি বিভাগের নাম হলো ‘শাবাক’ বা ‘শিন বেত’। এই বিভাগ দেশটির অভ্যন্তরে সন্ত্রাসবাদ ও বহির্দেশীয় গুপ্তচরবৃত্তির বিরুদ্ধে কার্যক্রম পরিচালনা করে। এবং শেষ বিভাগটির নাম হচ্ছে ‘মোসাদ’, যার নামেই সংস্থাটি পরিচিত। এই বিভাগ বাইরের দেশে বিভিন্ন গোয়েন্দা অভিযান পরিচালনা করে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এই বিভাগের নামই বার বার শুনতে পাই আমরা।

একসময় আঞ্চলিক ক্ষেত্রে ইসরায়েলের সবচেয়ে কট্টর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল মধ্যপ্রাচ্যের রাষ্ট্রগুলো। প্রথম আরব-ইসরায়েলি যুদ্ধ, ছয়দিনের যুদ্ধ কিংবা ইয়োম কিপ্পুর যুদ্ধগুলো সংঘটিত হয়েছিল মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম-প্রধান রাষ্ট্র ও ইসরায়েলের মাঝে। আজকের দিনে ইরান ইসরায়েলের অন্যতম আঞ্চলিক শত্রু হলেও মজার ব্যাপার হচ্ছে, একসময় দুটি দেশের মধ্যে সুসম্পর্ক ছিল। এমনকি ইরাক যখন ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে, তখন ইসরায়েল তার তৎকালীন মিত্র ইরানকে সীমিত পরিমাণে অস্ত্র দিয়েও সহযোগিতা করেছিল। মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম-প্রধান রাষ্ট্রগুলো কোনো যুদ্ধেই ইসরায়েলের বিপক্ষে জয়ী হতে পারেনি। এই ব্যর্থতার পেছনে বড় কারণ তাদের সামরিক বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সংকটকালীন অকার্যকারিতা। অপরদিকে, ইসরায়েল প্রায় সব যুদ্ধেই তার সীমিত সেনাবাহিনী ও অস্ত্র নিয়ে জয়লাভ করেছে। ইসরায়েলের এই সফলতার অন্যতম প্রধান কারিগর মোসাদ।

Image Source: DW

বর্তমানে ইসরায়েলের মাথাব্যথার একটা বড় কারণ ইরানের পরমাণু কর্মসূচি। ইরান ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ফ্রন্ট থেকে প্রক্সি যুদ্ধ পরিচালনা করছে। ইরানের সমাজে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রবল ঘৃণা বিরাজমান, এবং প্রায়ই ইরানের নেতারা ইসরায়েলকে বিশ্বের মানচিত্র থেকে মুছে ফেলার হুমকি দিয়ে থাকেন। যা-ই হোক, ইসরায়েলের সক্রিয়তায় আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ইরানের এই কর্মসূচির বিরুদ্ধে জনমত গড়ে উঠলেও বাস্তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ইরানের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি। পারমাণবিক কর্মসূচি গ্রহণ করার পর থেকে ইরানের প্রায় এক ডজন পরমাণু বিজ্ঞানী গুপ্তহত্যার শিকার হয়েছেন, যাদের সবার মৃত্যুর পেছনে মোসাদকে দায়ী করা হয়। ইরানের পরমাণু কর্মসূচি সম্পর্কে খুবই স্পর্শকাতর বেশ কিছু ডকুমেন্ট ইসরায়েলের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সংসদে উত্থাপন করেছিলেন। এই ডকুমেন্টগুলো সংগ্রহ করেছিল মোসাদ, বেশ কিছু গোপন মিশন পরিচালনার মধ্যে দিয়ে। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দেশের গোপন পরমাণু প্রকল্পের স্পর্শকাতর তথ্যসংবলিত ডকুমেন্ট সংগ্রহ থেকেই বোঝা যায় এই মোসাদ কতটা গুরুত্বপূর্ণ ইসরায়েলের জন্য।

মোসাদ যেসব ব্যক্তিকে ইসরায়েলের অস্তিত্বের জন্য হুমকি মনে করে, তাদেরকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য কার্যকর ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে বছরের পর বছর। এর ফলশ্রুতিতেই ফিলিস্তিনের অসংখ্য নেতা ও সামরিক ব্যক্তিত্ব গুপ্তহত্যার শিকার হয়েছেন মোসাদের হাতে। উপরে ইরানের এক ডজন পরমাণু বিজ্ঞানীর গুপ্তহত্যার বিষয়টি উত্থাপন করা হয়েছে– সেটিও একই কারণে। মোসাদের মাধ্যমে ইসরায়েল তাদের অপছন্দের বা অস্তিত্বের জন্য হুমকি তৈরি করা ব্যক্তিদের অনায়াসে নিশ্চিহ্ন করতে পারছে, অথচ এর জন্য ইসরায়েলকে কেউ দায়ী করছে না, আন্তর্জাতিকভাবে ইসরায়েলের সমালোচনা করা হচ্ছে না। এছাড়া মোসাদের মাধ্যমে ইসরায়েল বেশ কয়েকবার শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিশোধও গ্রহণ করেছে। যেমন- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইহুদিদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালানো বেশ কিছু নাৎসি নেতাকে মোসাদ গোপনে গ্রেফতার করে ইসরায়েলে নিয়ে এসেছিল এবং বিচার সম্পন্ন করেছিল। এছাড়াও মিউনিখ অলিম্পিকে ‘ব্ল্যাক সেপ্টেম্বর’ গ্রুপ ইসরায়েলি অ্যাথলেটদের হত্যা করার পর মোসাদ সেই গ্রুপের অনেককে নিশ্চিহ্ন করার লক্ষ্যে গোপন মিশন পরিচালনা করেছিল।

Image Source: Wikimedia Commons

তবে সবসময়ই মোসাদ তার দায়িত্ব পালন করতে সফল হয়েছে– এমনটা ভাবলে ভুল হবে। পৃথিবীর কোনো গোয়েন্দা সংস্থারই শতভাগ সফলতার কোনো ইতিহাস নেই। অসংখ্য সফলতার পাশাপাশি মোসাদের ব্যর্থতাও রয়েছে। যেমন- হামাসের প্রধান খালিদ মিশালকে জর্ডানে বিষপ্রয়োগে হত্যা করতে গিয়ে ইসরায়েলের দুই ভুয়া পাসপোর্টধারী এজেন্ট জর্ডানের আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়। খালিদ মিশালকে বিষপ্রয়োগ করা হলেও শেষপর্যন্ত তাকে সুস্থ করতে ইসরায়েল ওষুধ প্রদানে বাধ্য হয়। মোসাদের প্রধান ড্যানি ইয়াতোম এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পদত্যাগ করেন। ২০০৪ সালে নিউজিল্যান্ড সাময়িকভাবে ইসরায়েলের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্কের অবসান ঘটায়, কারণ দুজন ইসরায়েলি নাগরিক অবৈধভাবে নিউজিল্যান্ডের পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে চাচ্ছিল। এছাড়া নরওয়েতে একবার ভুল করে একজন মরোক্কান নাগরিককে হত্যার দায়ে পাঁচজন ইসরায়েলি এজেন্ট জেল খেটেছিলেন দেশটিতে।

Language: Bangla
Topic: How much important is Mossad for Israel?
Reference:
1. The Mossad Works Best Outside the Headlines - Bloomberg
2. Intelligence as a Diplomatic Tool: An Israeli History - LSE
3. Israel’s Mossad spy agency shrouded in mystery and mystique - The Times of Israel

Related Articles