বডিলাইনের প্রতিষেধক ব্র্যাডম্যান বের করতে পেরেছিলেন কি না তা জানতে অত দীর্ঘ অপেক্ষার কারণ, সিডনিতে নিউ সাউথ ওয়েলসের বিপক্ষে প্রথম শ্রেণির ম্যাচে লারউড খেলেননি। ব্র্যাডম্যান যদিও রানখরায় ভুগেছিলেন ওই ম্যাচেও।
নভেম্বরের ২৫ তারিখ থেকে শুরু হওয়া সিরিজের প্রথম টেস্টে লারউড-ভোস ফিরলেও অসুস্থতার জন্যে ব্র্যাডম্যান চলে গিয়েছিলেন দলের বাইরে। কী ধরনের অসুস্থতা তাকে খেলতে দেয়নি, তা নিয়ে মতদ্বৈততাও আছে যথেষ্ট। ব্র্যাডম্যানের স্বাস্থ্যপরীক্ষা করে এসিবির ডাক্তাররা জানিয়েছিলেন, তিনি ‘অরগানিক্যালি সাউন্ড’ হলেও খেলবার মতো অবস্থায় নেই। জার্ডিন মনে করতেন, তার স্নায়ুবৈকল্য দেখা দিয়েছিল ম্যাচের আগে। ব্র্যাডম্যান নিজে না খেলার কারণ হিসেবে দায়ী করেছিলেন অতিরিক্ত ক্রিকেট, ভ্রমণ আর এসিবির সঙ্গে দ্বন্দ্বের কারণে তার নিঃশেষ হয়ে যাওয়াকে।
এই দ্বন্দ্বকেই না খেলবার মূল কারণ বলেছিলেন অনেকে। ব্র্যাডম্যানের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট বোর্ডের ঝামেলা চলছিল এর আগে থেকেই। ১৯৩০ অ্যাশেজ নিয়ে ব্র্যাডম্যানের লেখা বইয়ের নির্বাচিত অংশ ছাপা হয়েছিল পত্রিকায়, যার জন্যে এসিবির আরোপিত ৫০ ডলারের জরিমানা পরিশোধ করতে হচ্ছিল দুই বছর ধরে। শুধু অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ক্রিকেট খেলে ক্রিকেটাররা যা আয় করতেন সে সময়ে, তা যথেষ্ট ছিল না কোনো অর্থেই। খেলার পাশাপাশি ক্রিকেটারদের তাই জড়িয়ে পড়তে হতো নানা কাজে। জ্যাক ফিঙ্গলটন যেমন ছিলেন পুরোদস্তুর সাংবাদিক, খেলার ফাঁকেফাঁকে পত্রিকায় কলাম লিখতেন ডন ব্র্যাডম্যানও। কিন্তু এসিবি ১৯৩২-৩৩ অ্যাশেজের আগে নিয়ম করেছিল, দলের কোনো ক্রিকেটার পত্রিকার পাতায় সিরিজ নিয়ে কিছু লিখতে পারবেন না। ব্র্যাডম্যান দাঁড়িয়েছিলেন এ নিয়মের বিপরীতে, যেহেতু এসিবি ক্রিকেটারদের ভরণপোষণের সমস্ত ব্যবস্থা করতে পারছে না। এসিবি রাজি হয়নি তার প্রস্তাবে। ব্র্যাডম্যান তাই অসুস্থতার ভান করে খেলেননি প্রথম ম্যাচে, এমন দাবি অনেক বিশ্লেষকের। সিডনি টেস্টে না খেলাকে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট বোর্ডের বিরুদ্ধে তার করা প্রতিবাদরূপেই দেখেছিলেন অনেকে।
***
টেস্ট শুরুর আগে নিউ সাউথ ওয়েলসের বিপক্ষে লারউড খেলেননি। তবে ভোস খেলেছিলেন এবং বডিলাইন বোলিংয়ের চর্চা জারি রেখে জ্যাক ফিঙ্গলটনকে করেছিলেন ক্ষতবিক্ষত। আঘাত সয়ে সয়ে ফিঙ্গলটন সে ম্যাচে টিকেছিলেন সাড়ে চার ঘণ্টা। তার অপরাজিত ১১৯ রানের ওই ইনিংসে শরীরে বল লাগবার ব্যাপারটি নাকি এতটাই নৈমিত্তিক হয়ে দাঁড়িয়েছিল যে লেগ-ট্র্যাপে থাকা ফিল্ডাররাও নাকি এক পর্যায়ে গিয়ে তাকে সহানুভূতি জানানো থামিয়ে দিয়েছিলেন।
ইংল্যান্ড ইনিংস ব্যবধানে জয়ী হয়েছিল সে ম্যাচেও। অস্ট্রেলিয়া পৌঁছাবার আগে যারা ছিল ‘আন্ডারডগ’, একের পর এক ইনিংস জয়ে সেই এমসিসিই টেস্ট সিরিজ শুরুর আগে হয়ে গিয়েছিল নিরঙ্কুশ ফেবারিট। টেস্ট সিরিজ শুরুর আগে ইংরেজদের বিপক্ষে ৬ ইনিংসে ব্র্যাডম্যানের করেছিলেন ১০৩ রান, প্রশ্ন জেগেছিল তা নিয়েও। এর চাইতেও বড় প্রশ্ন দেখা দিয়েছিল ইংলিশদের বোলিং কৌশল নিয়ে। পূর্বসূরি পার্সি ফেন্ডারকে লেখা এক চিঠিতে জার্ডিন প্রকাশ করেছিলেন তার উদ্ভাবিত কৌশল নিয়ে উচ্ছ্বাস। জানিয়েছিলেন, লেগ-থিওরির নবোদ্ভূত এই সংস্করণে অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যানদের ছটফটানি দেখে ‘পুরো টিমকেই লেগ-সাইডে রেখে দিতে মন চাইছে’ তার। অস্ট্রেলিয়ানদের মনে বডিলাইন নিয়ে ঘৃণার জন্ম হতে শুরু করেছিল একটু একটু করে। টম গ্যারেট (ইতিহাসের প্রথম টেস্ট ম্যাচে খেলা ক্রিকেটার) সিডনি মর্নিং হেরাল্ডে লিখেছিলেন, এই প্রথমবারের মতো তিনি কোনো বোলারকে ‘ইচ্ছাকৃতভাবে ব্যাটসম্যান লক্ষ্য করে বল করতে’ দেখছেন।
সিরিজ শেষ হতে হতে এমন গ্যারেটের জন্ম হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার প্রতি ঘরে।
***
প্রথম টেস্টে ব্র্যাডম্যানকে নিয়ে নাটক হলেও দল ঘোষণা নিয়ে উডফুল কোনো লুকোছাপা করেননি, যা করেছিলেন জার্ডিন। সংবাদমাধ্যমে কিচ্ছু জানানো যাবে না বলে কুলুপ এঁটে ছিলেন ম্যাচ শুরু হবার শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত। এমনকি একাদশে কারা থাকবেন, তা জানতেন না দলের অন্যরাও, পাছে সংবাদমাধ্যমে তা কেউ ফাঁস করে দেয় চুপিসারে!
সিডনির পিচে সবুজের আভা খানিকটা থাকলেও অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক বিল উডফুল টস জিতে নিয়েছিলেন ব্যাটিং, তখনকার অধিনায়কেরা তো তা-ই করতেন। এমনকি র্যান্ডউইক প্রান্ত থেকে লারউডের করা সিরিজের প্রথম ওভারটিও ছিল টেস্ট ক্রিকেটের স্বাভাবিক নিয়ম মেনেই, শুরু হয়েছিল বেশ শক্তিশালী স্লিপবেষ্টনী নিয়ে। কিন্তু তা বজায় ছিল কেবল শুরুর ওভারেই, প্রথম ওভারের শেষ বল উডফুলের মাথা সামান্য ব্যবধানে এড়িয়ে যেতেই খুলে গিয়েছিল মুখোশ। বিপরীত প্রান্ত থেকে ভোস শুরু করেছিলেন বডিলাইন ফিল্ড নিয়ে, কিপার লেস অ্যামিসের ডানপাশে ফিল্ডার ছিলেন না একজনও।
সিডনির সেদিন উপবিষ্ট হাজার চল্লিশেক দর্শক রানের বদলে তাই দেখেছিলেন, ব্যাটসম্যান ডাক করে কিংবা সরে গিয়েই পার করে দিচ্ছেন বেশিরভাগ বল। পিচ খুব একটা দ্রুতগতির না হলেও ব্যাটসম্যানরা আঘাত নিতে শুরু করেছিলেন পিঠে-বুকে-কোমরে, একবার বল সামান্য ছুঁয়ে গিয়েছিল কিপ্যাক্সের খুলিও।
প্রথম সেশনে একবার পন্সফোর্ডের পশ্চাদ্দেশে বল লাগানো ছাড়া লারউড অবশ্য আর কোনো আঘাত হানতে পারেননি, যা পেরেছিলেন ভোস। ভোসের দেয়া এক বাউন্সারেই হুক করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে দাঁড়ানো লেস অ্যামিসকে ক্যাচ দিয়েছিলেন উডফুল। অজি শিবির অবশ্য তাতে খুব একটা নাখোশ হয়নি বোধহয়, দেড় ঘণ্টার প্রথম সেশনে রান এসেছিল যদিও ৬৩, কিন্তু অমন নতুনধারার আক্রমণাত্মক বোলিংয়ের মধ্যে মাত্র এক উইকেট হারানো তো বিশাল উৎসবেরই দাবি করতো!
অস্ট্রেলিয়ার সে খুশি অবশ্য উবে গিয়েছিল পরের সেশনেই। আগের সেশনে ভেঙেছিলেন ব্যাটসম্যানদের মনোবল, দ্বিতীয় সেশনে ভাঙতে শুরু করেছিলেন উইকেট। শুরুটা হয়েছিল পন্সফোর্ডের মাধ্যমে, আগেই গায়ে বল লাগবার কারণে কিছুটা ভীত বোধহয় এমনিতেই ছিলেন। ভয়ের প্রমাণ খেলাতেও রেখে লারউডের বল খেলতে চেয়েছিলেন অফ-স্ট্যাম্পের দিকে কিছুটা সরে গিয়ে, যার মাশুল গুনেছিলেন লারউডের বলে লেগস্ট্যাম্প ছত্রখানের শিকার হয়ে। পরের শিকার ফিঙ্গলটন, এর আগেই যিনি একবার বোল্ড হয়েও, অন্যবার ক্যাচ দিয়েও বেঁচে গিয়েছিলেন ভোস দু’বারই নো-বল করেছিলেন বলে। কিন্তু ব্যক্তিগত ২৬ রানে দাঁড়িয়ে আর বাঁচতে পারেননি, সোজা ব্যাটে খেলতে চাওয়া ফিঙ্গলটনকে শর্ট লেগে ক্যাচ বানিয়েছিলেন লারউড। খানিকক্ষণের মধেই ফিঙ্গলটনের পথ ধরেছিলেন কিপ্যাক্স, এবারে লারউড উইকেট পেয়েছিলেন এলবিডব্লিউর মাধ্যমে। প্রথম সেশনে সমস্ত আঘাত সয়ে তিলে তিলে যে বাঁধের দেয়াল গড়েছিল অস্ট্রেলিয়া, সাত রানে তিন উইকেট তুলে লারউড তা ভেঙে দিয়েছিলেন খুব সহসাই। তার সেদিনকার বোলিং দেখে দরশকসারিতে থাকা ডেঞ্জিল ব্যাচেলর লিখতে বাধ্য হয়েছিলেন,
“Larwood must have had a lunch of boiled dynamite with radium sauce.”
পন্সফোর্ড এবং ফিঙ্গলটন আউট হবার মধ্যিখানে যে সামান্য বিরতি পড়েছিল, বডিলাইনের কারণে ইংরেজ শিবিরে অন্তঃকলহ শুরু হয়ে গিয়েছিল ততটুকুতেই। লেগ-ট্র্যাপ ততক্ষণে আসীন হয়ে বসেছিল পুরোদমে, যাকে আমরা লেগ-আম্পায়ার বলে চিনি, ব্যাটসম্যানের লেগ-সাইডে ফিল্ডারের ঘনত্ব বেশি হওয়ায় সেই তিনি ক্ষণে ক্ষণেই হয়ে যাচ্ছিলেন অফ-আম্পায়ার। এরই মধ্যে জারডিন পতৌদিকে ডেকে বলেছিলেন লেগ-ট্র্যাপে গিয়ে দাঁড়াতে, পতৌদি যে নির্দেশনা মানতে রাজি হননি কখনোই। মাঠের মধ্যে ইংল্যান্ড অধিনায়ক কেবল বলেছিলেন, ‘I see His Highness is a conscientious objector!’ আর দ্বিতীয় টেস্টের পরে পতৌদি যে আর সে সিরিজে খেলেননি, একে অনেকেই দেখতে চেয়েছেন মাঠের বাইরে জার্ডিনের জবাব হিসেবে।
সে যাই হোক, ৮৭ রানে চার উইকেট হারিয়ে অস্ট্রেলিয়া তখন ধসে পড়বার শঙ্কায়। ভিক রিচার্ডসনের সঙ্গে মিলে স্ট্যান ম্যাককেব তার ম্যাজিক দেখিয়েছিলেন এরপরেই। লারউড-ভোসের ছোঁড়া সমস্ত অগ্নিগোলক দাঁতে দাঁত চেপে সামলে নিয়েছিলেন দুজনে, ফায়দা তুলেছিলেন সমস্ত ফুল-লেংথ ডেলিভারির। হিসেব করে হুক-পুলও খেললেন সময়ে সময়ে, সাথে ত্বরিৎগতির এক-দুই নিয়ে ফিরিয়ে এনেছিলেন স্কোরারদের কর্মচাঞ্চল্য। রিচার্ডসন ফিরে গিয়েছিলেন ৪৯ করে, তবে ম্যাককেবকে ফিরতে হয়েছিল সঙ্গীর অভাবে। যদিও তাতে সুযোগ ছিল তিনটি (কোনোটিই ১৫৯ রান করবার আগে নয়), তবুও তার ১৮৭ অপরাজিত রানের ইনিংসটি সর্বকালের সেরা ইনিংসের ছোট্ট সংকলনে ঠাঁই পাবে নিশ্চিত করেই। ক্রিকেটকে দুর্ভাগা বলতে হচ্ছে, কেননা ম্যাককেবের সিডনি ক্লাসিকের দু’টি বলই কেবল দেখবার জন্যে সংরক্ষিত আছে।
বাদবাকি সকলের আসা-যাওয়ার মাঝে অবিচল হয়ে টিকে ছিলেন ম্যাককেব। শুধু টিকেছিলেন বললে অবমাননাই হচ্ছে অবশ্য। রীতিমতো বিধ্বংসী মনোভাবে লারউডের মুখোমুখি হয়ে করেছিলেন ৪০, ভোসের বলগুলোতে ৬৫, ২৫ চারের ইনিংসে রান করেছিলেন সবার বলেই। ইংল্যান্ডের বোলাররা ঠিক কতটা ব্যাটসুম্যান সোজাসুজি বল করেছিল তা বুঝতে খুব সম্ভবত এই তথ্যটিই যথেষ্ট হবে, তার ১৮৭ রানের মাত্র ১৮ রানই এসেছিল অফ-সাইডের সামনে দিয়ে। রে রবিনসন ওই ইনিংসের বর্ণনে তাই বলেছিলেন,
‘যেন মুমূর্ষু দেহে রক্ত সঞ্চালন।’
অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস থেমেছিল ৩৬০ রানে, পঞ্চাশ বছর পরেও ও’রাইলির চোখে মায়াঞ্জন বুলিয়ে যাওয়া ম্যাককেবের ইনিংসের কৃতিত্বই যেখানে সিংহভাগ। এমনকি শেষ উইকেটে টিম ওয়ালকে সাথে নিয়ে ম্যাককেব যোগ করেছিলেন ৫৫ রান, ম্যাচে ইংল্যান্ডকে কখনো উদভ্রান্ত মনে হয়ে থাকলে, সময়টি ছিল তখনই।
অবশ্য সেই দিগ্ভ্রান্তিতে ভরা যাত্রার স্থায়িত্ব ছিল মোটে ৩৩ মিনিট। ইংল্যান্ডের ইনিংস শুরু হতেই ম্যাচের নাটাই আবার চলে এসেছিল ইংল্যান্ডের হাতে। দ্বিতীয় দিন শেষে কেবল ওয়াইটের উইকেট হারিয়ে ইংল্যান্ড তুলেছিল ২৫২। আগের সফরে এ মাঠে করেছিলেন ২২৫ আর ২৫১, এসসিজির সঙ্গে হ্যামন্ডের নবপরিণীতার মতো ভাব চলছিল ১৯৩২-৩৩ সিরিজেও, এবার প্রথম ইনিংসেই করেছিলেন ১১২। শতকের দেখা পেয়েছিলেন পতৌদি (১০২) আর সাটক্লিফও (১৯৪)। গোটা সিরিজের প্রতীকী চিত্রটা সবচেয়ে স্পষ্ট হয়ে ধরা পড়েছিল খুব সম্ভবত সাটক্লিফের ইনিংসেই। ব্যক্তিগত ৪৩ রানে দাঁড়িয়ে যিনি হতে চলেছিলেন প্লেড-অন, বল স্ট্যাম্পে লাগলেও বেল পড়েনি সেবারে, সাটক্লিফ যোগ করেছিলেন আরও ১৫১।
অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক উডফুলের জীবনবোধে প্রতিশোধপরায়ণতার কোনো ঠাঁই ছিল না, ওয়াল তাকে গুরু মেনে বল করেছিলেন অফ স্ট্যাম্পের বহু বাইরে দিয়ে। এমন বোলিংয়ের পূর্ণ সুবিধা নিয়ে ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংস শেষ করেছিল ১৬৪ রানের লিডে। লম্বা লিড পেয়ে জার্ডিন তার সৈন্যদের লেলিয়ে দিয়েছিলেন আবারও। ফাস্ট বোলিংয়ের ভয়ংকর সুন্দর এক প্রদর্শনী রেখে লারউড দ্বিতীয় ইনিংসে উইকেট তুলে নিয়েছিলেন পাঁচটি। বডিলাইনে আড়ালে পড়ে যায়, নইলে ফাস্ট বোলিংয়ের সম্মোহন, গতি, তেজ কিংবা সৌন্দর্য, লারউডের বোলিংয়ে সবই ছিল পূর্ণমাত্রায়।
রক্তাল্পতায় ভোগা অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসে আরেকবার মাথা তুলে দাঁড়িয়েছিলেন ম্যাককেব, তবে তা ৩২ রানের জন্যই। ইনিংসের সর্বোচ্চ সংগ্রহ অবশ্য এসেছিল ফিঙ্গলটনের ব্যাটে, ১৪৪ মিনিট স্থায়ী ৪০ রানের ইনিংসে তাকে শরীর দিয়ে বল খেলতে হয়েছিল আটবার। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে ও’রাইলি যখন আউট হয়েছিলেন, অস্ট্রেলিয়া আর ইংল্যান্ডের রানসংখ্যায় কোনো তফাৎ ছিল না, তবে ইংল্যান্ডের একটি ইনিংস তখনো বাকি ছিল।
ম্যাককেবের বলে এক রান নিয়ে সাটক্লিফ প্রয়োজন মিটিয়েছিলেন, এ নিয়ে ঘটা করে কাব্য রচনার কোনো প্রয়োজন দেখেননি ঐতিহাসিকেরা।
***
প্রথম আর দ্বিতীয় টেস্টের মাঝে ব্যবধান ছিল ২৩ দিনের। সিডনির জয়ের রেশ কাটতে না কাটতেই এমসিসি দলকে নেমে পড়তে হয়েছিল ওয়াগা ওয়াগাতে প্রদর্শনী ম্যাচ খেলতে, সেখান থেকে সমুদ্র পেরিয়ে তাসমানিয়াতেও খেলে এসেছিলেন জার্ডিনরা। তার দলের বোলিং কৌশল নিয়ে চলমান সমালোচনার জবাব দেওয়ার জন্যে জার্ডিন বেছে নিয়েছিলেন সে মুহূর্তকেই। রয়টার্সকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন,
“লেগ-স্ট্যাম্প লাইনে আবহমানকাল ধরে চলে আসা বোলিংয়ের সঙ্গে আমাদের বোলিংয়ের কোনো পার্থক্য নেই। একমাত্র পার্থক্য হচ্ছে, আমাদের ফিল্ড সেটিং। এর মধ্যে তিলাগ্র ঝুঁকি নেই।”
তিনি পার্থক্য না দেখলেও পার্থক্য দেখেছিলেন সেখানে উপস্থিত বাকিরা। এমনতর বোলিং আগে দেখা যায়নি, এ নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছিলেন সবাই (অতি অবশ্যই, জার্ডিন-লারউড বাদে)। কোথায় বাকিসব বোলিংয়ের চাইতে লারউড আর ভোসের বোলিং ছিল আলাদা, তা জানতে চাইলে সামনে উপস্থিত হয় দু’টি বিষয়।
প্রথমত, জার্ডিনেরই উল্লেখিত ফিল্ড-সেটিং। লেগ-ট্র্যাপের নামে চক্রাকারে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিলেন ছয়-সাতজন ফিল্ডার, যেন ব্যাটসম্যান আত্মরক্ষার চেষ্টায় ক্যাচ দিয়ে বসেন লেগ-গালি, সিলি মিড-অন, শর্ট লেগ জাতীয় অঞ্চলে। আর কেউ আক্রমণাত্মক হতে চাইলে ব্যবস্থা করেছিলেন তাদের জন্যেও। ফিল্ডিংয়ের কোনো বাধ্যবাধকতা না থাকায় লং লেগ, ফাইন লেগ কিংবা স্কয়ার লেগেও ফিল্ডার রাখবার বন্দোবস্ত করেছিলেন জার্ডিন।
দ্বিতীয়ত, লারউডের গতি। কত গতি, ইতিহাসের পাতায় তা নিয়ে গল্প পাওয়া যাবে বিস্তর। বল করে কারো মাথার ক্যাপ ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন ১৮০ ডিগ্রি, বহুজনকে পাঠিয়েছিলেন হাসপাতালে। একবার উইলফ্রেড রোডস নাকি পায়ে বল লাগবার পর মাটিতে শুয়ে গোঙাচ্ছিলেন সমানে। আম্পায়ার এসে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘হাঁটতে পারবে?’ ছলছল চোখে রোডস জবাব করেছিলেন, ‘মনে হচ্ছে পারবো।’ আম্পায়ার উত্তর করেছিলেন, ‘হেঁটেই তাহলে প্যাভিলিয়নে চলে যাও। তুমি এলবিডব্লিউ হয়েছো।’
এসবকে নেহায়েতই গালগল্প বলেও ভাবতে চাইলেও গণিত তো সে সুযোগ দিচ্ছে না। একদম নির্ভুল হিসেব না মিললেও কোনো গণিতবিদই তার গতিকে ৯৬ মাইলের কমে নামাতে পারেননি।
নতুন এই ধারার বোলিংয়ের নামকরণ নিয়েও চলছিল তোরজোড়। আর্থার মেইলি বলেছিলেন ‘শক অ্যাটাক’, দ্য অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার বলেছিল ‘হেডার বোলিং’। এমসিসি আর উইজডেন সন্তুষ্ট থাকতে চাইছিল ‘ডিরেক্ট অ্যাটাক’ বলেই। তবে, জনমানুষে এটি রয়ে গিয়েছে বডিলাইন নামেই।
কার হাত ধরে এই ‘বডিলাইন’ শব্দটির সৃষ্টি, তা নিয়ে লড়াইটা অবশ্য ত্রিপাক্ষিক। একই না হলেও, কাছাকাছি গোছের শব্দ সর্বপ্রথম ব্যবহারের কৃতিত্ব যাচ্ছে প্রয়াত জন ওয়ারেলের কাছে। প্রথম টেস্ট শুরুর আগে এমসিজিতে ইংরেজদের বোলিং দেখে তিনি লিখেছিলেন, ‘half-pitched slingers on the body line’. অস্ট্রেলিয়ার সাবেক এই টেস্ট ক্রিকেটার বিশেষ্যরূপে বডিলাইনের ব্যবহার করেছিলেন ১০ ডিসেম্বর, ১৯৩২। ততদিনে প্রথম টেস্ট শেষ হয়েছে, মাঝে আরও অনেকেই ‘বডিলাইন’ ব্যবহার করে ফেলেছে।
বিশেষণরূপে ‘বডিলাইন’ প্রথম ব্যবহার করেছিলেন রে রবিনসন। প্রখ্যাত লেখক জালাল আহমেদ চৌধুরীর বই থেকে জানা যাচ্ছে ‘বডি-লাইন’ আবিষ্কারের মজার কাহিনী। বডিলাইনের সৃষ্টি নাকি উপায়ান্তর না পেয়ে। রে রবিনসন সিডনি থেকে মেলবোর্নে তার পত্রিকা অফিসে টেলিগ্রাম করছিলেন দিনের খেলা শেষের রিপোর্ট, কিন্তু পকেটে যথেষ্ট পরিমাণ অর্থ না থাকায় বিশাল সব বাক্য কেটে করে দেন ‘বডি-লাইন’ আর ‘বডিলাইন’। তার সম্পাদক সিড ড্রিমার বডি-লাইন ঠিক রাখলেও বডিলাইন আর ব্যবহার করেননি। নয়তো বডিলাইনের আবিষ্কর্তা হয়ে জার্ডিন আর লারউডের শাপ-শাপান্তের শিকার হতেন উনিই। যার শিকার হচ্ছেন মেলবোর্ন হেরাল্ডেরই আরেক লেখক হিউ বাগি, সিড ড্রিমার খুব সম্ভবত ওনার লেখা সম্পাদনা করেননি।
***
গাবি অ্যালেনের কথা মানলে অবশ্য বডিলাইন নাকি দ্বিতীয় টেস্টের আগে শুরুই হয়নি। বডিলাইনের মূল লক্ষ্যবস্তু ছিলেন ব্র্যাডম্যান, যে কারণে জো ডার্লিং একে‘ব্র্যাডম্যান অ্যাটাক’ বলেও অবিহিত করেছেন, সেই ব্র্যাডম্যান তো ছিলেনই না প্রথম টেস্টে। ব্র্যাডম্যান ফিরেছিলেন দ্বিতীয় টেস্টে, সে-ও বেশ জল ঘোলা করে।
প্রথম টেস্টের পরাজয়ে আটকে না থেকে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটাররা মাঠে নেমেছিলেন ঘরোয়া দলের হয়ে শিল্ড ক্রিকেট খেলতে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সবচেয়ে দ্রুত (১২৬ ইনিংসে) ১০,০০০ রানে পৌঁছাবার কীর্তি সে সময়েই গড়েছিলেন ব্র্যাডম্যান। অবশ্য নিজের হারিয়ে যাওয়া উদ্দীপনা ফেরাতে এর আগেই ফিজিওথেরাপিস্টের পরামর্শে সস্ত্রীক সমুদ্রপাড়ে কাটিয়ে এসেছিলেন তিনি।
সাবেক ক্রিকেটার জনি মোয়েসকে নিজের সিডনির বাড়িতে ডেকে নিয়ে বডিলাইনের বিরুদ্ধে ব্যাটিং কৌশল কেমন হওয়া উচিৎ, তা নিয়েও বিস্তর আলোচনা করেছিলেন এক ফাঁকে। লেগসাইডে সরে গিয়ে ফাঁকা অফ-সাইডে বল চালনা করলেই রান আসবে, ব্র্যাডম্যানের বিশ্বাস ছিল এমনটিই। সেবারের সিরিজজুড়েই ব্র্যাডম্যান এই পরিকল্পনার ছাপ রেখেছিলেন।
তবে বডিলাইন কিংবা মানসিক ভঙ্গুরতার চাইতেও তো খেলবার পথে বড় বাধা ছিল। পত্রিকায় লেখালেখিকে কেন্দ্র করে এসিবি-ব্র্যাডম্যান দ্বন্দ্ব পৌঁছেছিল চরমে। এসিবি লিখতে দিতে রাজি হয়নি কোনোভাবেই, আর ‘খেলবো, যদি লিখতে দাও’ গোঁ ধরে ব্র্যাডম্যানও চাইছিলেন না খেলতে। দ্বিতীয় টেস্ট মাঠে গড়ানোর মাত্র ঘণ্টাখানেক আগে নিশ্চিত হয়েছিল সমাধান। উদ্ধারকর্তারূপে এগিয়ে এসেছিল ব্র্যাডম্যানের পত্রিকার প্রধান সম্পাদক আর. সি. প্যাকার। খেলা বাদ দিয়ে ব্র্যাডম্যান তাদের পত্রিকার হয়ে লিখছেন, জনমনে পত্রিকার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করতে সেটাই হবে যথেষ্ট; ব্র্যাডম্যানকে তাই বুঝিয়ে-সুঝিয়ে লেখালেখির দায়বদ্ধতা থেকে ক্ষণকালের জন্যে মুক্তি দিয়েছিল তারা। খেলছেন নিশ্চিত হতেই বোর্ডের সিদ্ধান্তকে একহাত নিয়ে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিও দিয়েছিলেন ব্র্যাডম্যান। ‘খেলোয়াড়দের স্থায়ী রুটি-রুজিতে বাধা দেবার অধিকার বোর্ডের নেই’ বাক্যেই ব্র্যাডম্যানের ক্ষোভ ফুটে উঠেছিল স্পষ্ট। তবে টেস্ট শুরু হচ্ছে ক্ষণিক বাদে, এসিবিও তাই যেতে চায়নি কোনো কথার লড়াইতে।
***
টসের সময় জানা গিয়েছিল, অস্ট্রেলিয়া নামছে দ্বিতীয় টেস্টে নামছে তিন পরিবর্তন নিয়ে। ব্র্যাডম্যানকে জায়গা করে দিতে বাদ পড়েছিলেন পন্সফোর্ড, অভিজ্ঞ বার্ট আয়রনমঙ্গার ফিরেছিলেন একাদশে। তবে প্রশ্ন জেগেছিল প্রথম টেস্টে নড়বড়ে পারফর্ম করা কিপ্যাক্সের পরিবর্তে লিও ও’ব্রায়েনের অভিষেক দেখে। আর্থার মেইলি বডিলাইন বোলিংয়ের নিগূঢ় সমস্যা নিয়ে লিখেছিলেন,
”এই (বডিলাইন) বোলিং কিপ্যাক্সের মতো ব্যাটিং শিল্পীদের চেনে না, এটি ব্যাটিং শ্রমিকদের খোঁজ করে।”
ইংল্যান্ডও নেমেছিল এক বদল নিয়ে, ভেরিটির বদলে সুযোগ পেয়েছিলেন বোয়েস। বোয়েস ব্র্যাডম্যানের উইকেট পেলেও সে সিদ্ধান্ত অবশ্য বুমেরাং বলেই প্রতীয়মান হয়েছিল ম্যাচশেষে। বৃষ্টির কারণে কিউরেটর পাননি উইকেট তৈরি করবার পর্যাপ্ত সুযোগ, উইকেট হয়ে গিয়েছিল মন্থর, এমন পিচে পুরোদস্তুর পেস অ্যাটাকে যাবার সিদ্ধান্ত তাই ছিল রীতিমতো আত্মঘাতী। লারউডের বই থেকে জানা যাচ্ছে, তিনি ম্যাচে প্রথম ওভার করেই দেখতে পেয়েছিলেন, পিচে ভাঙন ধরেছে।
বল নিয়ে দুই ক্যাপ্টেনের মাঝে খানিকটা বাদানুবাদ হয়ে গিয়েছিল প্রথম ওভার পরেই। সেখানে পরাজিত হয়ে জার্ডিন সোজা চলে গিয়েছিলেন তার বডিলাইন ফিল্ড-সেটিংয়ে। অবশ্য মেলবোর্নের ওই ধীরগতির উইকেটে লেগ-সাইডে হাজারজন রেখেই লাভ কী হতো! লারউড-বোয়েসের ছোঁড়া অবিরত বাউন্সার গোলার বেশিরভাগই চলে গিয়েছিল অ্যামিসের গ্লাভসে, পন্সফোর্ডের জায়গায় প্রমোশন পেয়ে ওপেনিংয়ে আসা ফিঙ্গলটনের শরীরে অবশ্য বল একটু-আধটু লেগেছিল ঠিকই।
লারউডের বুট-সমস্যাও শুরু হয়ে গিয়েছিল এরই মধ্যে। নিজের পুরনো বাঁ পায়ের বুট ছিঁড়ে গিয়েছিল কয়েক ওভার বোলিং করেই৷ ড্রেসিংরুমে গিয়ে ডাকওয়ার্থের বুট বদলে নামলে তা-ও ছিঁড়ে যায় মাত্র দুই বল পরেই, উপায়ান্তর না দেখে লারউড মাঠে নামেন নতুন একজোড়া বুট পরে। প্রচণ্ড গরমে ওই অব্যবহৃত, চাপা বুট লারউডের বাঁ পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলি থেকে বের করেছিল রক্ত, মধ্যাহ্নবিরতিতে ড্রেসিংরুমে ফিরে বুট খুলে রক্তভেজা মোজা নিয়ে বসেও ছিলেন অনেকক্ষণ। লাঞ্চব্রেকের আগেই চার-চারবার সাজঘরে যাওয়া-আসা করে দর্শকদের দুয়োধ্বনিও শুনছিলেন সমানে, তীব্র যন্ত্রণা নিয়েও এরপরে তাই আর ড্রেসিংরুমে ফেরত যাবার সাহস করেননি লারউড। কিন্তু আঙুল ফুলে যাবার দরুণ বোলিংয়ে হারিয়ে ফেলেছিলেন তেজ, ম্যাচ থেকে এক অর্থে ছিটকেই গিয়েছিলেন তিনি। ম্যাচে জয়-পরাজয় নির্ধারণ করে দেয় এই সূক্ষ্ম ব্যাপারগুলোই, ট্যুর বুকে এমসিজির ম্যাচ হারের কারণ হিসেবে জার্ডিন দায়ী করেছিলেন তার মূল ফাস্ট বোলারের এই ভেঙে পড়াকেই।
অ্যালেন বডিলাইনে বল করবেন না, তা জানা ছিল আগেই। বোয়েস আর ভোস মিলে চেষ্টা করছিলেন, কিন্তু গতিতে তো তারা আর লারউডের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারতেন না। তবুও অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস সেরকম গতি পায়নি কখনোই। এক ফিঙ্গলটনের লড়াকু ৮৩ ছাড়া রান করতে পারেননি আর কেউই। বডিলাইন বোলিং বহাল তবিয়তে ছিল ইনিংসের প্রায় পুরোটা জুড়েই, যা পরিষ্কার বোঝা যাবে ফিঙ্গলটনের ওয়াগন হুইলে। তার রানের বেশিরভাগটাই তো এসেছিল উইকেটের পেছনের অংশ থেকে!
রিচার্ডসন চেষ্টা করেছিলেন, প্রথম দিনে বল বাউন্ডারি ছুঁয়েছিল মোটে নয়বার, যার পাঁচটিই এসেছিল তার ব্যাটে। ক্যামিও দেখা গিয়েছিল ম্যাককেবের ব্যাটেও, তবে অস্ট্রেলিয়াকে ২২৮-য়ের ওপরে তুলতে তা সক্ষম ছিল না। যে ডনের জন্যে এত প্রতীক্ষা, ডন ফেরত এলে বডিলাইন সাত-তাড়াতাড়ি পলায়ন করবে বলে ছিল প্রত্যাশা, গ্যালারি থেকে এমসিসির ক্রিকেটারদের ‘আমাদের ডনকে আসতে দাও’ কোরাসে খেপিয়ে তোলা যাচ্ছিল যার জন্যে, সেই ডন প্রথম ইনিংসে টিকেছিলেন মাত্র এক বল। সিরিজে বিল বোয়েস উইকেট পেয়েছিলেন ওই একটিই, অবশ্য বাকি জীবনে আর উইকেট না পেলেও ক্ষতি ছিল না কোনো।
গল্প করবার যে রসদ পেয়েছিলেন ওই উইকেটে, তা সম্ভবত ফুরোয়নি পঞ্চত্বপ্রাপ্তিতেও।