উইকিপিডিয়ার সহযোগী সংগঠন উইকি লাভস মন্যুমেন্টস (Wiki Loves Monuments) তাদের ২০১৭ সালের আন্তর্জাতিক ছবি তোলার প্রতিযোগিতার সেরা ১৫টি ছবি প্রকাশ করেছে। বিশ্বব্যাপী ৫৪টি দেশের ১০,০০০ জন আলোকচিত্রশিল্পীর জমা দেওয়া ২ লাখ ৪৫ হাজার ছবির মধ্য থেকে বাছাইকৃত চূড়ান্ত বিজয়ী ১৫টি ছবির এই তালিকায় স্থান পেয়েছে বাংলাদেশের দুটি ছবি!
উইকি লাভস মন্যুমেন্টস হচ্ছে মুক্ত বিশ্বকোষ উইকিপিডিয়ার মূল সংগঠন উইকিমিডিয়া কর্তৃক আয়োজিত আন্তর্জাতিক ছবি তোলার প্রতিযোগিতা, যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আলোকচিত্রশিল্পীরা তাদের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য বিষয়ক ছবি তুলে জমা দিতে পারেন। তাদের তোলা এ ছবিগুলো উইকিপিডিয়া এবং এর সহযোগী সংগঠনগুলো কর্তৃক বিনামূল্যে ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এই প্রতিযোগিতার উদ্দেশ্য হচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থিত ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোকে মানুষের কাছে পরিচিত করে তোলা।
২০১৭ সালে জমা দেওয়া প্রায় আড়াই লাখ ছবি থেকে প্রাথমিকভাবে আন্তর্জাতিক বিচারকদের দ্বারা ৪৮৯টি ছবি নির্বাচিত হয়। পরবর্তীতে সেখান থেকে ১৫টি ছবিকে চূড়ান্তভাবে বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বাংলাদেশের যে দুটি ছবি নির্বাচিত হয়েছে, তার একটি তৃতীয় স্থান এবং অপরটি সপ্তম স্থান অধিকার করেছে। দুটি ছবিই জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের, যদিও তা তুলছেন দুজন ভিন্ন ভিন্ন চিত্রগ্রাহক।
চলুন দেখে নেই উইকি লাভস মন্যুমেন্টসের ২০১৭ সালের সেরা ছবিগুলো।
১. ভারতের খান্দোবা মন্দির
এ বছর প্রথম স্থানটি অধিকার করেছে ভারত। ভারতের পুনেতে অবস্থিত খান্দোবা মন্দিরটি এমনিতেই যথেষ্ট আকর্ষণীয়, তার উপর ভান্দারা উৎসব তথা হলুদ উৎসবের সময় যখন উৎসবে অংশগ্রহণকারীরা হলুদ রঙের পোশাক পরে হলুদের গুঁড়ো ছিটাতে থাকে, তখন পুরো মন্দিরের পরিবেশের দৃশ্যটি অসাধারণ হয়ে ওঠে। এরকম একটি মুহূর্তের বর্ণিল এই ছবিটি ধারণ করেছেন ভারতীয় আলোকচিত্র শিল্পী প্রশান্ত সোমনাথ খারোট।
২. থাইল্যান্ডের রাজকীয় প্যাভিলিয়ন
প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে থাইল্যান্ডের খাও সাম রয়ি ইয়োট ন্যাশনাল পার্কে অবস্থিত প্রায়া নাখোন গুহার একটি রাজকীয় প্যাভিলিয়নের ছবি। গুহাটি তিয়ান পর্বতমালায় অবস্থিত, যা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৪৩০ মিটার উঁচু। এই অসাধারণ ছবিটি ধারণ করার জন্য এর আলোকচিত্রী জেনপপকে প্রায় ৫০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়েছিল।
৩. ঢাকার বায়তুল মোকাররম মসজিদ
রাজধানী ঢাকায় অবস্থিত বায়তুল মোকাররম বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদ। ১৯৬৮ সালে নির্মিত এই মসজিদটির ধারণ ক্ষমতা প্রায় ৩০,০০০, যা এটিকে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ধারণ ক্ষমতা বিশিষ্ট মসজিদগুলোর তালিকায় স্থান করে দিয়েছে। বাংলাদেশী আলোকচিত্রশিল্পী আজিম খান রনির তোলা এই অসাধারণ ছবিটিতে উঠে এসেছে জুমার নামাযের সময় সেজদারত মুসল্লিদের নয়নাভিরাম একটি দৃশ্য।
৪. মিসরের হিন্দু প্রাসাদের সর্পিল সিঁড়ি
মিসরের কায়রোতে অবস্থিত ব্যারন এমপেইন প্যালেস বা হিন্দু প্যালেস হচ্ছে কম্বোডিয়ার অ্যাঙ্কর ওয়াট মন্দিরের অনুকরণে নির্মিত একটি প্রাসাদ। কনক্রিটের তৈরি এই প্রাসাদটি নির্মিত হয়েছিল বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে। ছবিতে এই প্রাসাদের সর্পিলাকার সিঁড়িটি ধরা পড়েছে।
৫. ইতালির ভেরুকোলে দুর্গের পরিপার্শ্ব
ইতালির তাস্কানি অঞ্চলের লুকা শহরের নিকবর্তী ভেরুকোলে দুর্গটি মধ্যযুগীয় একটি দুর্গ। এর অবস্থান সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৬০০ মিটার উঁচুতে। চিত্রটি ধারণ করেছেন আইরিস গনেলি।
৬. ইতালির ভেরুকোলে দুর্গের অভ্যন্তর
এই ছবিটিও ইতালির ভেরুকোলে দুর্গের ছবি। তবে এটি তুলেছেন অন্য একজন আলোকচিত্র শিল্পী, সিমোন লেতারি। এটি তোলা হয়েছে দুর্গের ভেতর থেকে। এতে মধ্যযুগীয় রাজকীয় জীবনের একটি ক্ষুদ্র নমুনা ধরা পড়েছে শিল্পীর ক্যামেরার ফ্রেমে।
৭. বায়তুল মোকাররম প্রাঙ্গণে বইয়ে নিমগ্ন পাঠক
এই ছবিটিও ঢাকার বায়তুল মোকাররম মসজিদের। ছবিতে মসজিদ প্রাঙ্গণে বইয়েের পাতায় নিমগ্ন এক পাঠককে দেখা যাচ্ছে। মসজিদটির আকারের বিশালত্ব এবং সৌন্দর্য এই ছবিতে ধরা পড়েছে। ছবিটি তুলেছেন জুবায়ের বিন ইকবাল।
৮. কানাডার নটরডেম গির্জা
কানাডার মন্ট্রিয়লে অবস্থিত নটরডেম গির্জার ছবি এটি। গির্জাটি নির্মিত হয়েছিল সপ্তদশ শতকে। রাজকীয় সাজে সজ্জিত এই গির্জাটির অভ্যন্তরভাগ অত্যন্ত জটিল নকশায় পরিপূর্ণ। সেই দৃশ্যই উঠে এসেছে দিয়েগো ডেলসোর ক্যামেরায়।
৯. থাইল্যান্ডের মার্বেল মন্দির
আলোকচিত্রশিল্পী জেনপপের তোলা দ্বিতীয় ছবি এটি, যা সেরা ১৫টি ছবির মধ্যে স্থান করে নিতে পেরেছে। ছবিটি থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে অবস্থিত ওয়াট বেনচামোফিত দুট ওয়ানরাম মন্দিরের ছবি, যা মার্বেল মন্দির নামেও পরিচিত। এটি থাইল্যান্ডের সবচেয়ে আকর্ষণীয় মন্দির এবং অন্যতম প্রধান ট্যুরিস্ট আকর্ষণ। ছবিটিতে উদীয়মান সূর্য বাদে পুরো মন্দিরটি সম্পূর্ণ প্রতিসমভাবে ক্যামেরায় ধরা পড়েছে।
১০. অস্ট্রেলিয়ার সিডনি অপেরা হাউজ
অত্যন্ত পরিচিত একটি ছবি এটি- অস্ট্রেলিয়ার সিডনি অপেরা হাউজ। কিন্তু রাতের বেলা পানিতে আলোর প্রতিফলন সহ ভবনটির এরকম অসাধারণ দৃশ্য খুব কমই আছে। ছবিটি তোলার জন্য চিত্রগ্রাহককে শীতকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছিল। কারণ, এ সময় মাঝরাত পর্যন্ত অপেরা হাউজ চালু থাকে, যার আলোতে অত্যন্ত পরিস্কারভাবে ভবনটি ক্যামেরায় ধরা পড়ে।
১১. ইংল্যান্ডের ক্ষয়িষ্ণু জেটি
ইংল্যান্ডের ব্রাইটনে অবস্থিত এই পায়ার তথা স্তম্ভগুলো ছিল ১৮৬০ সালে নির্মিত জেটির স্তম্ভ। সে সময় পর্যটকদেরকে আকর্ষণ করার জন্য এ ধরনের জেটি নির্মাণ করা হতো। ব্রিটেনের ক্ষয়িষ্ণু ঐতিহ্যের সাক্ষী স্বরূপ দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকটি স্তম্ভ উঠে এসেছে এই ছবিটিতে।
১২. জার্মানির ক্যাসিনো হল
জার্মানির স্পা শহর ওয়াইজবাডেনের একটি ক্যাসিনো হলের ছবি এটি। মূলত ক্যাসিনো হল হলেও এটি দেখতে অত্যন্ত আকর্ষণীয়। এর পরিবেশ গ্রন্থাগারের মতো, এর স্থাপত্য নকশাও প্রচলিত ক্যাসিনোর চেয়ে অনেক ভিন্ন।
১৩. জর্জিয়ার স্ভ্যানটি টাওয়ার
জর্জিয়ার স্থানেতি দেশটির অন্যতম প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী শহর। এই শহরের পাথরের নির্মিত স্ভ্যানটি টাওয়ারগুলো নির্মিত হয়েছিল নবম শতাব্দী থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যে। ছবিটির চিত্রগ্রাহককে এই ছবিটি তোলার জন্য মূল রাস্তা ছেড়ে অনেকদূর হেঁটে উপযুক্ত স্থান খুঁজে বের করতে হয়েছিল।
১৪. ইরানের তাবাতাবেয়ী বাড়ি
ইরানের বিখ্যাত কার্পেট ব্যবসায়ী তাবাতাবেয়ী পরিবারের জন্য নির্মিত এই বাড়িটি ইরানি স্থাপত্যের অন্যতম উদাহরণ। বাড়িটি নির্মিত হয়েছিল ১৮৮০ সালে। ছবিতে বিশাল এই বাড়িটির ক্ষুদ্র একটি অংশের নকশা ধরা পড়েছে।
১৫. ইতালির কোমাচিও
ইতালির প্রচীন শহর কোমাচিওর শহরের কেন্দ্রের ছবি এটি। শীতের কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরে এক বৃদ্ধ লোকের সিঁড়ি বেয়ে নামার দৃশ্য চিত্রগ্রাহকের ক্যামেরায় জীবন্ত হয়ে ধরা দিয়েছে।
ফিচার ইমেজ- Wikimedia Commons