Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

কালের স্রোতে হারিয়ে গেছে পাশ্চাত্যের যেসব মিউজিক ব্যান্ড

কিছু গান চাইলেও কখনো ভোলা যায় না, কারণ গানগুলো মনে গেঁথে যায় আজীবনের জন্য। আজকে কথা হবে শুধু পাশ্চাত্যের কিছু মিউজিক ব্যান্ড ও তাদের গানগুলো নিয়ে। তারা হয়তো বা এখন আর আগের মতো কাঁপিয়ে বেড়ান না গানের ভুবন। তবুও তাদের গাওয়া গানগুলো আজও শুনলে, মনে ঠিক আগের মতোই দাগ কেটে যায়।

মডার্ন টকিং

মনের মানুষকে “ইউ আর মাই হার্ট, ইউ আর মাই সোল” কথাটি বলেনি, এমন মানুষ খুব কমই খুঁজে পাওয়া যাবে! আর মন দেয়া-নেয়ার পালায় আশির দশকে এই লাইনটির তুলনা তো সেসময়ের তরুণেরা জানেন বটেই! এখন আসা যাক এই জনপ্রিয় লাইনের মাধ্যমে মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে আসা মাত্রই হৈচৈ ফেলে দেয়ার মানুষ দুটির কথায়। থমাস অ্যান্ডার্স ও ডিইটার বোলেন, জার্মানির সঙ্গীতজগতের এই দুই কিংবদন্তীর হাত ধরেই ১৯৮৪ সালে পথ চলা শুরু হয় ‘মডার্ন টকিং’ ব্যান্ডের।

সর্বশেষ ২০০৩ সালে অ্যালবাম বের করা এই ব্যান্ডটির প্রথম অ্যালবাম রীতিমতো বাজিমাত করে দেয়। রেকর্ড অর্জন করে পুরো বিশ্বে ৮০ লক্ষ কপি বিক্রি হয় সেটি! তারা দু’জন ছাড়াও ব্যান্ডে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সঙ্গীতকারের আনাগোনা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত থমাস অ্যান্ডার্স ও ডিইটার বোলেনই ব্যান্ডের হাল ধরে রেখেছিলো। আশির দশকে মডার্ন টকিং জার্মান পপ ডুয়েল হিসেবে শীর্ষ স্থান দখল করে নিয়েছিলো। ব্যান্ডটি একের পর এক জনপ্রিয় গান উপহার দেয় শ্রোতা-ভক্তদের। তাদের জনপ্রিয় কিছু গানের মধ্যে রয়েছে- ‘You Can Win If You Want’, ‘Brother Louie Louie’, ‘Cheri, Cheri Lady’, ‘Atlantis Is Calling (S.O.S. for Love)’ ইত্যাদি।

মাঝে কিছু সময়ের জন্য তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেও নতুন আঙ্গিকে আবারও তারা ফিরে আসেন ভক্তদের অনুরোধে। ইউরোপীয় পপ গানের গতানুগতিকতা থেকে বেরিয়ে এসে ইলেকট্রনিক ড্যান্স মিউজিক ইউরোড্যান্সের নতুন মাত্রা যোগ করেন ব্যান্ডে। নতুনভাবে ফিরে আসার পরও নানান দেশের সেরা দশের তালিকায় গানগুলোর নাম লেখাতে ব্যর্থ হয়নি ব্যান্ডটি। ‘Let’s talk about love’, ‘Ready for romance’, ‘Romantic warriors’, ‘Back for good’, ‘Alone’, ‘The first album’, ‘Universe’, ‘Victory’- এই অ্যালবামগুলোর মধ্য দিয়ে তারা মাতিয়ে রাখেন শ্রোতাদের। ব্যান্ড হিসেবে নিজেরা গান গাওয়া বন্ধ করে দিলেও শ্রোতাদের পছন্দের তালিকায় এখনও জায়গা করে আছে তাদের অসাধারণ সব গান দিয়ে।

মডার্ন টকিং ব্যান্ড-এর দু’জন কিংবদন্তি, Image Source- Modern Talking-WordPress.com

ভেঙ্গাবয়েজ

নব্বইয়ের দশকে ‘To Brazil’ গান গেয়ে সঙ্গীতাঙ্গন কাঁপিয়ে দেয়া এই ব্যান্ডের নাম শুনে যদি মনে করে থাকেন যে, এই ব্যান্ডের সাথে জড়িত সবাই পুরুষ মানুষ, তাহলে কিন্তু ভুল হবে। মোট চার জন সদস্যের এই ব্যান্ডে দু’জনই গায়িকা। ভেঙ্গাবয়েজ হলো নেদারল্যান্ড, রটারডেমের ডাচ ইউরোড্যান্স গ্রুপ। দুই ডাচ প্রযোজক ওয়েসেল ভ্যান ডাইপেন এবং ডেনিস ভ্যান ডেনসসচেন (ড্যানস্কি এবং ডেলমুন্ডো)-এর মাধ্যমেই গড়ে ওঠে এই ব্যান্ড।

১৯৯০ সালের শেষের দিকে ভেঙ্গাবয়েজ বাণিজ্যিক সাফল্য লাভ করে। ভক্ত-শ্রোতাদের কাছে তারা তাদের হিট একক গান- ‘We like to party’, ‘Boom, Boom, Boom, Boom’ এবং ‘We are going to Ibiza’ দিয়ে বেশ জনপ্রিয়তা  পেয়েছে, যার মধ্যে পরবর্তীতে দুটি গান যুক্তরাজ্যের টপ চার্টে জায়গা করে নিয়েছিলো। বিশ্বব্যাপী তারা তাদের অ্যালবামের আনুমানিক ২৫ মিলিয়ন কপি বিক্রি করেছে। ২০০১ সালে ‘ওয়ার্ল্ড মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস’ ভেঙ্গাবয়েজকে সেরা ড্যান্স গ্রুপ হিসেবে ‘বেস্ট সেলিং’-এর পুরস্কার দেয়। এছাড়াও বিভিন্ন দেশে স্টেজ কাঁপানো সব পারফরম্যান্স দিয়ে বেড়ায় এই ব্যান্ড।

সেরা ড্যান্স গ্রুপ হিসেবে ‘বেস্ট সেলিং’ এর পুরস্কার পায়, Image Source: 588.nl

 অ্যাকুয়া

‘I’m a Barbie girl in the Barbie world’ গানটি তো অবশ্যই ভুলবার মতন নয়। তাহলে এই ব্যান্ডটির নামও নিশ্চয় মনে গেঁথে আছে। অ্যাকুয়া হলো ড্যানিশ ইউরোড্যান্স গ্রুপ, যারা জনপ্রিয়তার তুঙ্গে ওঠে ১৯৯৭ সালে গাওয়া ‘বার্বি গার্ল’ গানটির জন্য। গ্রুপটি গঠন করা হয় ১৯৮৯ সালে। মোট চার সদস্যের এই ব্যান্ডটিতে গঠন করা হয় ১৯৯৪ সালে।

প্রথমে অবশ্য ব্যান্ডটির নাম ছিলো ‘জয়স্পিড’। নব্বই দশকের শেষের দিকে এবং বিংশ শতাব্দীর শুরুতে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক সাফল্য অর্জন করে এই মিউজিক ব্যান্ডটি। গ্রুপটি ১৯৯৭ সালে ‘অ্যাকুয়ারিয়াম’, ২০০০ সালে ‘অ্যাকুয়ারিয়াস’ এবং ২০১১ সালে ‘মেগালোম্যানিয়া’ নামে তিনটি অ্যালবাম বের করে। ড্যানিশ মিউজিক ব্যান্ড হিসেবে কমার্শিয়ালি তাদের লাভের পরিমাণ রেকর্ড সংখ্যক। আনুমানিক ৩৩ মিলিয়ন অ্যালবাম বিক্রি করেছে তারা। তাদের একক গানগুলো বেশ কয়েকবার টপ চার্টে স্থান পেয়েছিলো।

ইউরোপিয়ান পপ ব্যান্ড হিসেবে এই জায়গা করে নেয়াটা স্বাভাবিকভাবে কষ্টসাধ্যই ছিলো বটে। তবে দাপিয়ে বেড়ানো ‘বার্বি গার্ল’ গানটির জন্য আদালত পর্যন্তও যেতে হয়েছিলো তাদের। কারণ বার্বি পুতুল প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ম্যাটেল এই গান গাওয়া নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে দেয়। পরে অবশ্য আদালত থেকে দুই দলকেই ঠাণ্ডা মাথায় স্বাভাবিকভাবে বিষয়টা সুরাহা করার কথা বলা হয়।

বিখ্যাত ‘বার্বি গার্ল’ গানটি এই ব্যান্ডের, Image Source: The Independent

এইস অব বেস

এইস অব বেস মিউজিক ব্যান্ড একটি সুইডিশ পপ গ্রুপ। ১৯৯০ সালে যাত্রা শুরু করা এই ব্যান্ডটির রয়েছে মোট চারজন সদস্য। মজার বিষয় হলো যে, চারজন সদস্যের তিনজনই সম্পর্কে ভাই-বোন। জোনাস ‘জোকার’ বেরগরেন, জেনি বেরগরেন ও মালিন ‘লিন’ বেরগরেনের মাঝে ভাই-বোন সম্পর্ক। আরেকজন সদস্য উলফ একবেরগ।

১৯৯২ সাল থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত ব্যান্ডটি মোট চারটি স্টুডিও অ্যালবাম বের করে এবং এই অ্যালবামগুলো সারা বিশ্বে ৩০ মিলিয়নেরও বেশি কপি বিক্রি করার রেকর্ড তৈরি করে। অ্যাবা গোল্ড ও রক্সেট এর পর সুইডিশ মিউজিক ব্যান্ড হিসেবে জনপ্রিয়তায় তৃতীয় স্থান দখল করে নেয় তারা। ‘Happy nation’ বা ‘The sign’ অ্যালবামটি সর্বকালের সেরা বিক্রিত অ্যালবামগুলোর মধ্যে রয়েছে। অ্যালবামটি যুক্তরাষ্ট্রে নয়বার প্ল্যাটিনাম অ্যাওয়ার্ড সার্টিফিকেট পায়। ডেবিউ অ্যালবাম হিসেবে এটাই প্রথম অ্যালবাম ছিলো যার তিনটি একক গান ‘Billboard Mainstream Top 40 Chart’-এ জায়গা করে নেয়। গান তিনটি হলো- ‘All that she wants’ , ‘The sign’ এবং ‘Don’t turn around’।

পুরস্কার হাতে এইস অব বেস-এর সদস্যরা, Image Source: Ace Of Base

স্পাইস গার্লস

নাম শুনেই নিশ্চয় বুঝতে পারছেন যে, এই মিউজিক ব্যান্ডটির সদস্যরা সবাই মেয়ে। হ্যাঁ, ঠিক তা-ই কিন্তু! পাঁচজন সদস্যের এই ইংলিশ পপ গার্ল গ্রুপটির অভিষেক হয় ১৯৯৪ সালে। গ্রুপের সদস্যরা হলেন- মেলানি ব্রাউন (‘scary spice’), মেলানি চিসম্‌ (‘sporty spice’), এমা বানটন (‘baby spice’), গেরি হেলিওয়েল (‘ginger spice), ভিক্টোরিয়া বেকহাম এবং নি অ্যাডামস্‌ (‘posh spice’)।

তারা চুক্তিবদ্ধ ছিলো ভার্জিন রেকর্ডসের সাথে। ১৯৯৬ সালে মুক্তি পায় বহুল জনপ্রিয় ‘ওয়ানাবি’ (Wannabe) গানটি।  এই গানটি ৩৭টি দেশে প্রথম স্থান অর্জন করেছিলো। তাদের ডেবিউ অ্যালবাম ‘স্পাইস’ (spice) সারা বিশ্বে ৩১ মিলিয়ন কপি বিক্রি হওয়ার রেকর্ড তৈরি করে এবং শুধুমাত্র মেয়েদের ব্যান্ড হিসেবে বেস্ট সেলিং অ্যালবামের ইতিহাস করতে সক্ষম হয়। এছাড়াও ব্যান্ডটি বিভিন্ন সিনেমায় গান গায় এবং টেলিভিশনেও উপস্থাপনার কাজ করে।

কনসার্টে স্পাইস গার্লস, Image Source: SNAP.PA:Showcase

এবার আপনার কাছে জানতে চাওয়ার পালা! এদের মধ্যে আপনার সবচাইতে পছন্দের মিউজিক ব্যান্ড কোনটি? আর কোনটি শুনলেই বা আপনার মনে জেগে ওঠে হাজারো পুরনো স্মৃতি?

Feature Image Source: independent.co.uk

Related Articles