![](https://assets.roar.media/Bangla/2017/11/wallpapers.fansshare.com-a2f7a43a621aa095111d0a2f3bdb4de4.jpg?w=1200)
বিশ্বের সফল ব্যক্তিদের মধ্যে যারা আরব বংশোদ্ভূত, তাদের নিয়ে রোর বাংলায় একটি লেখা আছে। কিন্তু শুধু ব্যবসায়িক বা রাজনৈতিক ক্ষেত্রে না, বিনোদন জগতেও আরব বংশোদ্ভূতদের সংখ্যা কম নয়। বিশ্বজুড়ে খ্যাতি অর্জন করা বিনোদন জগতের তারকাদের মধ্যে অনেকেই আছেন, যারা আসলে আরব বংশোদ্ভূত। এদের অধিকাংশই লেবানীজ এবং খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী আরব, যদিও এর ব্যতিক্রমও আছে।
রামি মালেক
![](https://assets.roar.media/Bangla/2017/11/popwrapped-rami-malek-wins-his-first-emmy-and-gives-an-inspiring-speech-1-lg-701x394.jpg)
অভিনেতা রামি মালেক; Source: popwrapped.com
রামি সাঈদ মালেক একজন মিসরীয়-আমেরিকান অভিনেতা। তিনি বিশ্বব্যাপী পরিচিতি লাভ করেছেন চলমান জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘মিস্টার রোবট’ এর প্রধান চরিত্রে হ্যাকার এলিয়ট অ্যান্ডারসন হিসেবে অভিনয় করে। এই চরিত্রে অভিনয় করে তিনি ক্রিটিক’স চয়েস অ্যাওয়ার্ড, এমি অ্যাওয়ার্ড সহ আরো অনেক পুরস্কার অর্জন করেন। এছাড়াও একই চরিত্রের জন্য তিনি গোল্ডেন গ্লোব এবং স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ড অ্যাওয়ার্ডের মনোনয়নও লাভ করেন।
ধারাবাহিক ছাড়াও রামি মালেক কিছু হলিউড চলচ্চিত্রে সহকারী অভিনেতা হিসেবেও অভিনয় করেন। তার অভিনীত চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে নাইট অ্যাট দ্য মিউজিয়াম ট্রিলজি, ল্যারি ক্রাউন (২০১১), দ্য মাস্টার (২০১২), দ্য টোয়াইলাইট সাগা: ব্রেকিং ডন – পার্ট টু (২০১২) এবং শর্ট টার্ম ১২ (২০১৩) উল্লেখযোগ্য।
রামি মালেকের জন্ম ১৯৮১ সালের ১২ই মে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসের এক অর্থোডক্স খ্রিস্টান পরিবারে। তার বাবা ছিলেন মিসরের একজন ট্যুর গাইড, যিনি পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রে এসে স্থায়ী হন এবং ইন্সুরেন্স বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। রামির মা-ও একজন মিসরীয় এবং তিনি একজন অ্যাকাউন্ট্যান্ট। রামি ছাত্র অবস্থা থেকেই সঙ্গীত অনুশীলন করলেও পরবর্তীতে অভিনেতা হিসেবে সাফল্য অর্জন করেন।
শাকিরা
![](https://assets.roar.media/Bangla/2017/11/billboard.com-Shakira-portrait-spain-2015-billboard-650-1548-701x464.jpg)
পপ তারকা শাকিরা; Source: billboard.com
কলম্বিয়ান পপ তারকা শাকিরা বর্তমান সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পীদের মধ্যে একজন। তিনি একাধারে একজন সঙ্গীত শিল্পী, গীতিকার, নৃত্যশিল্পী এবং সঙ্গীত প্রযোজক। তার গাওয়া ‘হোয়েনএভার, হোয়ারএভার’ গানটি ছিল ২০১২ সালে বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে একটি। ২০০৫ সালে গাওয়া তার ‘হিপস ডোন্ট লাই’ গানটি একুশ শতকের সবচেয়ে জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে একটির খেতাব অর্জন করে। ২০১০ সালে তার গাওয়া বিশ্বকাপ ফুটবলের থিম সং ‘ওয়াকা ওয়াকা’ গানটি ছিল সর্বাধিক বিক্রিত থিম সং, যা ১ কোটি বারেরও বেশি ডাউনলোড হয় এবং ইউটিউবে দেড়শো কোটি বারেরও বেশি দেখা হয়।
শাকিরা তার সঙ্গীত প্রতিভার স্বীকৃতিস্বরূপ অনেক পুরস্কার অর্জন করেছেন। তার পুরস্কারের ঝুলিতে আছে ৫টি এমটিভি ভিডিও মিউজিক অ্যাওয়ার্ড, ২টি গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড, ১৩টি ল্যাটিন গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড, ৭টি বিলবোর্ড মিউজিক অ্যাওয়ার্ড, ৩৩টি বিলবোর্ড ল্যাটিন মিউজিক অ্যাওয়ার্ড সহ আরো অনেক পুরস্কার। তিনি একটি গোল্ডেন গ্লোবেরও মনোনয়ন পেয়েছিলেন। ২০১৪ সালে ফোর্বস ম্যাগাজিন তাকে বিশ্বের ৫৮তম প্রভাবশালী নারী হিসেবে তালিকাভুক্ত করে।
![](https://assets.roar.media/Bangla/2017/11/maxresdefault10-701x394.jpg)
ওয়াকা ওয়াকা গানে শাকিরা; Source: youtube.com
শাকিরা ১৯৭৭ সালের ২রা ফেব্রুয়ারি, কলম্বিয়ার ব্যারানকিলাতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পুরো নাম শাকিরা ইজাবেল মেবারাক রিপল। তার বাবার নাম উইলিয়াম মেবারাক শাদিদ এবং মায়ের নাম নিদিয়া রিপল তোরাদো। তার দাদা-দাদী লেবানন থেকে প্রথমে নিউইয়র্কে এবং পরবর্তীতে কলম্বিয়ায় অভিবাসী হন। শাকিরা নামটি আরবি শব্দ শাকেরের স্ত্রী-বাচক, যার অর্থ কৃতজ্ঞ।
মিকা
মিকা একজন ব্রিটিশ-লেবানীজ সঙ্গীত শিল্পী এবং গীতিকার। তার আসল নাম মাইকেল হলব্রুক পেনিম্যান জুনিয়র হলেও তিনি মিকা নামেই বেশি পরিচিত। মিকার প্রথম অ্যালবাম ‘লাইফ ইন কার্টুন মোশন’ মুক্তি পায় ২০০৭ সালে, যা বিশ্বব্যাপী ৫৬ লক্ষ কপি বিক্রি হয়। এই অ্যালবামের জন্য তিনি ব্রিট অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেন এবং গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ডের মনোনয়ন লাভ করেন। সে বছর তার অ্যালবামের গান ‘গ্রেস কেলি’ ব্রিটিশ টপচার্টের শীর্ষস্থান দখল করে।
![](https://assets.roar.media/Bangla/2017/11/bbc-p01bqhrt-701x394.jpg)
সঙ্গীতশিল্পী মিকা; Source: BBC
মিকার জন্ম ১৯৮৩ সালের ১৮ই আগস্ট, লেবানেনের বৈরুতে। তার মায়ের নাম জোয়ানি হলব্রুক, যিনি একজন লেবানীজ। কিন্তু তার বাবা মাইকেল হলব্রুক একজন আমেরিকান নাগরিক। মিকার জন্মের পরপরই গৃহযুদ্ধের কারণে তার বাবা-মা লেবানন ছেড়ে প্রথমে ফ্রান্সে এবং পরে ব্রিটেনে যায়। তার সঙ্গীতে হাতেখড়ি হয় প্যারিসে থাকাকালেই।
সালমা হায়েক
সালমা হায়েক একজন মেক্সিকান অভিনেত্রী এবং মডেল, যিনি পরবর্তীতে হলিউডে নামকরা কিছু চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। মূলত ১৯৯৫ সালে মুক্তি পাওয়া ডেসপারেডো (Desperado, 1995) চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি হলিউডে স্থায়ীভাবে নিজের আসন তৈরি করে নেন। এছাড়াও তার অভিনীত অন্যান্য চলচ্চিত্রের মধ্যে ১৯৯৬ সালে মুক্তি পাওয়া ফ্রম ডাস্ক টিল ডন (From Dusk Till Dawn), ১৯৯৯ সালের ডগমা (Dogma) এবং ২০১২ সালের ফ্রিদা (Frida) বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ফ্রিদা চলচ্চিত্রে মেক্সিকান চিত্রশিল্পী ফ্রিদা কাহলোর চরিত্র রূপায়ন করে তিনি সেরা অভিনেত্রী হিসেবে অস্কার, গোল্ডেন গ্লোব, বাফটা এবং স্ক্রিন অ্যাক্টর্স গিল্ড অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনয়ন লাভ করেন।
![](https://assets.roar.media/Bangla/2017/11/cnn-151230124828-salma-hayek-2015-super-tease-701x394.jpg)
অভিনেত্রী সালমা হায়েক; Source: CNN
সালমা হায়েকের জন্ম ১৯৬৬ সালের ২রা সেপ্টেম্বর, মেক্সিকোর ভেরাক্রুজে। তার বাবা সামি হায়েক দোমিনগেজ লেবানীজ বংশোদ্ভূত। সালমার দাদা লেবাননের মাউন্ট লেবাননের বাবদা গ্রাম থেকে মেক্সিকোতে অভিবাসী হয়েছিলেন। সালমা এবং তার বাবা পুনরায় লেবাননে গিয়েছিলেন লেবানীজ কবি কাহলিল জিবরানের দ্য প্রফেট অবলম্বনে নির্মিত এনিমেশন চলচ্চিত্রের প্রচারণার কাজে ২০১৫ সালে, তাদের পূর্বপুরুষদের গ্রামে। সালমা একটি আরবি নাম, যার অর্থ শান্তিময়।
টনি শালহুব
মার্কিন অভিনেতা টনি শালহুবের পুরো নাম অ্যান্থনি মার্কাস শালহুব। তিনি মূলত টিভি অভিনেতা হিসেবেই বেশি বিখ্যাত। টিভিতে তার বিখ্যাত কাজগুলোর মধ্যে আছে ড্রামা সিরিয়াল মঙ্ক (Monk), যার জন্য তিনি সেরা অভিনেতা হিসেবে একটি গোল্ডেন গ্লোব, দুটি স্ক্রিন অ্যাক্টর্স গিল্ড অ্যাওয়ার্ড এবং তিনটি এমি সহ একাধিক পুরস্কার অর্জন করেছিলেন।
![](https://assets.roar.media/Bangla/2017/11/parade.com-tony-shalhoub-we-are-men-ftr-701x438.jpg)
অভিনেতা টনি শালহুব; Source: parade.com
এছাড়াও তিনি বেশ কিছু চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেন। তার অভিনীত চলচ্চিত্রের মধ্যে ১৯৯১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ব্ল্যাক কমেডি বার্টন ফিঙ্ক (Barton Fink), ১৯৯৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সায়েন্স ফিকশন মেন ইন ব্ল্যাক (Men in Black), ১৯৯৮ সালের থ্রিলারধর্মী চলচ্চিত্র দ্য সিজ (The Siege), ২০০১ সালের ক্রাইম থ্রিলার দ্য ম্যান হু ওয়াজন্ট দেয়ার (The Man Who Wasn’t There), ২০০৭ সালের হরর চলচ্চিত্র 1408 প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
টনি শালহুবের জন্ম ৯ অক্টোবর, ১৯৫৩ সালে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিনে। তার বাবা জো শালহুব এতিম অবস্থায় ১০ বছর বয়সে লেবানন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে যান। টনির মা হেলেনের জন্ম যুক্তরাষ্ট্রে হলেও তিনিও লেবানীজ বংশোদ্ভুত। তার বাবা-মা লেবানন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিল। ১০ ভাইবোনের মধ্যে টনি ছিলেন নবম, যিনি মাত্র ছয় বছর বয়স থেকে মঞ্চে অভিনয় শুরু করেন।
পলা আব্দুল
![](https://assets.roar.media/Bangla/2017/11/Los-Angeles-Magazine-PaulaAbdul_Facebook-701x528.gif)
টিভি ব্যক্তিত্ব পলা আব্দুল; source: Los Angeles Magazine
পলা আব্দুল একজন মার্কিন সঙ্গীত শিল্পী, গীতিকার, কোরিওগ্রাফার, অভিনেত্রী এবং টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব। ৯০ এর দশকে তার পপ গানগুলো বেশ জনপ্রিয় হয়। সঙ্গীতের জন্য তিনি একটি গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড এবং দুটি এমি অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন। ২০০০ এর দশকে তিনি আমেরিকান আইডল প্রতিযোগিতার বিচারক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। এছাড়াও তিনি দ্য এক্স ফ্যাক্টর, ড্যান্সিং উইথ দ্য স্টার্স, সো ইউ থিংক ইউ ক্যান ড্যান্স প্রভৃতি প্রতিযোগিতায়ও বিচারকের ভূমিকা পালন করেন। তিনি লিভ টু ড্যান্স নামে একটি ধারাবাহিকেও অভিনয় করেন।
পলা আব্দুলের জন্ম ১৯৬২ সালের ১৯ জুন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার এক ইহুদী পরিবারে। তার বাবা হ্যারি আব্দুল ছিলেন একজন সিরিয়ান ইহুদী, যার জন্ম হয়েছিল সিরিয়ার আলেপ্পোতে। ছোটবেলায় তিনি সিরিয়া ছেড়ে ব্রাজিলে চলে যান এবং পরবর্তীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী হন।
![](https://assets.roar.media/Bangla/2017/11/abcnet-282480-3x2-700x467.jpg)
প্রিজন ব্রেক অভিনেতা ওয়েন্টওয়ার্থ মিলার; Source: ABC.net
এরা ছাড়াও আরো অনেক আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন তারকাই আছেন, যারা আসলে আরব বংশোদ্ভুত। প্রিজন ব্রেক ধারাবাহিকের মূল চরিত্র মাইকেল স্কোফিল্ড খ্যাত ওয়েন্টওয়ার্থ মিলারের মায়ের দিকের পূর্বপুরুষরা সিরিয়া এবং লেবাননের নাগরিক। আমেরিকান হরর স্টোরি ধারাবাহিকের অভিনেত্রী জেনা দেওয়ানের বাবা অর্ধ লেবানীজ। বিবিসির সিটকম অ্যাবসোলিউট ফ্যাবিউলাস এবং ১৯৯৫ সালের ধারাবাহিক প্রাইড অ্যান্ড প্রেজুডাইসের অভিনেত্রী জুলিয়া সাওয়ালহার বাবা জর্ডানের নাগরিক। জেমস বন্ডের চলচ্চিত্র টুমরো নেভার ডাইজ এবং জনপ্রিয় ধারাবাহিক ডেসপারেট হাউজওয়াইভসের অভিনেত্রী টেরি লিন হ্যাচারের মা অর্ধ সিরিয়ান। দ্য ফাইনাল গার্লস চলচ্চিত্র এবং সার্চ পার্টি ধারাবাহিকের অভিনেত্রী আলিয়া শাওকাতের বাবা একজন ইরাকী।