ঢেঁকির উপরে তখন আম্বিয়াও গান ধরেছে। বিয়ের ধান ভানতে এসেছে সে। সন্ধ্যা থেকে ঢেঁকির উপরে উঠেছে ও আর টুনি। তখন থেকে এক মুহূর্তের বিরাম নেই। উঠোনে মেয়েরা গান গাইছিল। তাদের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার জন্য টুনি আর আম্বিয়া দুজন গলা ছেড়ে গান ধরলো-
ভাটুইরে না দিয়ো কলা
ভাটুইর হইবে লম্বা গলা
সর্ব লইক্ষণ কাম চিক্কন
পঞ্চ রঙের ভাটুইরে।
বিয়ে আমাদের সমাজে বহু পুরোনো প্রথা যা সামাজিক ও ধর্মীয়ভাবে দুজন মানুষকে একসাথে বেঁধে দেয়। বিয়ের সাথে কালে কালে যোগ হয়েছে হাজারো উপপ্রথা। পাশাপাশি দুটো গ্রামেও অনেক সময় দুটো ভিন্ন প্রথার বিয়ে হয়। বিশ্বের কথা তো বাদই দিলাম। এমন কিছু প্রথা আর নিয়ম চালু আছে বিয়েকে ঘিরে, যা আমাদের কাছে রীতিমত উদ্ভট। তাহলে শোনা যাক তেমন কিছু প্রথার গল্প।
১. আবর্জনা-স্নান
রাস্তার পাশে উপচে পড়া ডাস্টবিন আমাদের হাত টাকে একমুহূর্তে নাকে নিয়ে যায়। বিকট দুর্গন্ধে বমি চলে আসা টাও অস্বাভাবিক না। ওদিকে স্কটল্যান্ডে এমনি এক প্রথা চলে আসছে যেখানে বিয়ের আগে শুধু স্ত্রী বা স্বামী স্ত্রী দুজনকেই আবর্জনায় স্নান করানো হয়। আত্মীয়-স্বজন পাড়া-প্রতিবেশী ইচ্ছেমত নষ্ট মাছ, পচা দুধ, পচা ডিম ঢেলে দেয়। মানা হয়ে থাকে তারা এই অত্যাচার যদি সহ্য করতে পারে, তাদের বিয়েটাও নিশ্চয়ই টিকে যাবে।
২. তিমির দাঁত উপহার
ভালোবেসে আপনি কী করতে পারবেন? “যদি তুমি চাও চাঁদ এনে দেব”- এমন কথা তো অনেকেই বলেন। ফিজি তে বিয়ের আগে হবু স্ত্রীর জন্য অন্যরকম উপহারের খোজে নামতে হয় পুরুষদের। বউ তো যেমন তেমন শ্বশুরমশাই এক কাঠি সরস। তার মেয়ের হাত প্রার্থনার আগে জামাই তাকে উপহার দেবে একটা আস্ত তিমির দাঁত।
৩. বউ চুরি
প্রাচীনকালে ক্ষত্রিয়দের ভিতরে নাকি স্ত্রীকে ছিনিয়ে এনে বিয়ে করার নিয়ম ছিল। কিরগিজস্তানে মানা হয়ে থাকে বিয়ের আগে বউকে অপহরণ করা ভাল। এটি এমন এক প্রথা যা অমানবিক হওয়ার দরুন ১৯৯১ সালে অবৈধ ঘোষণা করা হয়। এমনকি বাবা মায়েরাও মানতেন মেয়ে বিয়ের দিন যত কাঁদবে তা ততই মঙ্গলজনক। পাত্রীর ইচ্ছের বিরুদ্ধে অপহরণ করলেও তাকে যোগ্য বলে মানা হত।
৪. বরবৃক্ষ
ভারতের নানা স্থানে গাছ বিয়ে করার এক আজব নিয়ম চালু আছে। যদি কোনো কন্যাসন্তান মঙ্গলিক( যা কিনা মানা হয় মঙ্গল ও শনি গ্রহের বিশেষ প্রভাবের কারণে হয়ে থাকে) হয়ে জন্ম নেয় তবে তাকে অভিশপ্ত ধরা হয়। ধারণা করা হয় তার স্বামী দ্রুত মারা যাবে। এই দোষ কাটাতে তাকে গাছের সাথে বিয়ে দেওয়া হয়। প্রথমত তাকে বিয়ে দেওয়া হয়, তারপর গাছটিকে যেকোনোভাবে ধ্বংস করা হয়। প্রথার বলি গাছ,তাই না?
৫. বিয়ে বনাম টয়লেট
উত্তর বোর্নিওর টিডং উপজাতি আবার নবদম্পতিদের একলা সময় কাটানোর উপর খুব গুরুত্ব দেয়। সেটা এতই ভয়াবহ পর্যায়ে যে দুজনকে টানা তিনদিন এক ঘরে বন্দী রাখা হয়। আর অবশ্যই সেখানে প্রাকৃতিক কার্য সম্পাদনের কোনো উপায় রাখা হয় না। ঈশ্বর মঙ্গল করুন! এদিকে আবার ফ্রান্সে এক প্রথা চালু ছিল যেটা নবদম্পতিদের টয়লেট আকৃতির বাটিতে খাওয়ার পরামর্শ দেয়। এই নিয়ম অনুযায়ী বিয়ের দিনে বেঁচে যাওয়া যত এলকোহল আছে তা দুইজনে এই ধরনের রেপ্লিকা বাটিতে করে খাবে, এতে তাদের সম্পর্ক মধুর হবে। ভাগ্য ভাল আজকাল ফ্রান্সের নতুন জুটিরা এসব নিয়মে আর বিশ্বাস রাখেন না।
৬. কাঁদো কনে কাঁদো
চীনে তুজিয়া গোষ্ঠীতে বিয়েতে বউয়ের কান্নাকে শৈল্পিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বিয়ের একমাস আগে থেকে বউকে রোজ নিয়ম করে অন্তত এক ঘন্টা যাবত কাঁদতে হয়। এই কান্নাকাটিতে বাড়ির লোক জোরালো সমর্থন আর উৎসাহ দেয়। কোনো কোনো পরিবারের লোকজন নিজেরাও এই কান্না প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়!
৭. বাসন ভাঙা বিয়ে
আর দশ টা দেশের মতো জার্মানিতেও বিয়েতে বাসন কোসন উপহার দেওয়া হয়। কিন্তু তারপরে ঘটে আসল ঘটনা। বরবউ কে শব্দ করে করে বাসন ছুঁড়ে ভাঙতে হয়। মানা হয়ে থাকে এই বাসন ভাঙা শব্দ সকল অশুভ আত্মা ও অমঙ্গল থেকে তাদের দূরে রাখবে, তারা আজীবন সুখে শান্তিতে সংসার করতে থাকবে ।
৮. খোঁজো তো দেখি
চীনের একটি স্থানে হবু বর বউ কে মুরগি কেটেকুটে কলিজা খুঁজতে হয়। যদি কলিজাটি পরিপূর্ণ সুস্থ অবস্থায় থাকে,তো ভাল, বিয়ের দিনক্ষণ দেখ। আর যদি না থাকে, আরেকটি মুরগির প্রাণবধ। যতক্ষণ না তারা কলিজা খুঁজে পাবে, ততক্ষণ তাদের বিয়ের সিদ্ধান্ত মুলতবী রাখা হবে ।
৯.কুকুরের সাথে বিয়ে
ভারতের বিভিন্ন স্থানে মানা হয় দুর্ভাগ্য তাড়াতে কুকুর বিয়ে করা যায়। কোষ্ঠীতে যদি ছেলে বা মেয়ে দুর্ভাগ্য নিয়ে জন্মানোর লক্ষণ থাকে তবে বিয়ের আগে তাদের কুকুর বা অন্য কোনো প্রাণী যেমন গরু ইত্যাদির সাথে বিয়ে করতে হয়।
১০. তীর মারা ভালোবাসা
চীনের ইয়ুগুর উপজাতিদের ভিতর এই বিয়ের চল আছে। হবু বর কনের অন্তত তিনটি তীর নিক্ষেপ করেন, আর অবশ্যই তা কনের গায়ে লাগতে হবে, ভাগ্য ভাল তীরের কোনো ফলা থাকে না। এরপর হবু বর তীর তিনটি খুঁজে এনে ভেঙে ফেলেন এভাবে নিশ্চিত হওয়া যায় যে দুজন দুজনকে আজীবন ভালোবাসবে।
১১. বরের পায়ে মাছের বাড়ি
দক্ষিণ কোরিয়ায় বহুদিন ধরে এক ঐতিহ্যবাহী প্রথা চলে আসছে। বিয়ের আগের রাতে বরের পায়ে মাছ ও ছড়ি দিয়ে আঘাত করা হয়। এটা বরের শক্তির পরিচায়ক। এই কাজে দায়িত্ব প্রাপ্ত থাকে বরের ভাই-বন্ধুরা, তারা আরো বেশি করে মারে যেন বিয়ের দিন বর হাঁটতে না পারে আর তারা বরের সঙ্গে সঙ্গে ঘুরতে পারে। আর এই একটা দিনই সুযোগ যেদিন বন্ধুকে পেটালে কেউ খারাপ বলবে না।