সাজসজ্জার অংশ হিসেবে নারীরা যখন নিজেদের নাক ও কানে ছিদ্র করেন, তখন অধিকাংশ মানুষকেই এর প্রশংসা করতে দেখা যায়। সেসব জায়গায় ব্যবহার করা বিভিন্ন অলঙ্কার তাদের সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে তোলে বহুগুণ। তবে কিছু কিছু মানুষ বোধহয় শুধু নাক-কান ছিদ্র করে সন্তুষ্ট হতে পারছিলো না। তাই সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য (!) তারা বেছে নিলো দাঁত, চোখ, জিহ্বা, আলজিহ্বা, নাক, কান, গলা, শরীরের ভেতরে বিভিন্ন জিনিস ব্যবহার থেকে শুরু করে একেবারে যৌনাঙ্গ সজ্জিতকরণের মতো ব্যাপারস্যাপারও!
আজ থাকছে বিচিত্র সেসব মানুষেরই গল্প, নিজেদের শরীরই যাদের কাছে মহামূল্যবান এক খেলনা।
দাঁত তীক্ষ্ম করা
আমাদের উপর ও নিচের পাটির সামনের চারটি করে মোট আটটি দাঁতকে বলা হয় কর্তন দাঁত। এগুলোর অগ্রভাগ স্বাভাবিক অবস্থায় কেমন থাকে তা তো আমরা সবাই জানি। তবে এককালে আধ্যাত্মিক সাধনার উদ্দেশ্যে মানুষ তাদের এ দাঁতগুলোকে ছবির মতো করে সূক্ষ্মাগ্র করতে শুরু করে। বর্তমানে অবশ্য এটি চালু আছে ফ্যাশনের অংশ হিসেবে।
ম্যাগনেটিক ইমপ্ল্যান্ট
পৃথিবীতে এমন অনেক লোকই আছে যারা শরীরে নতুন করে কোনো ছিদ্র করে অলঙ্কার পরার বদলে অন্য কোনোভাবে সেটিকে আটকে রাখতে চায়। তারাই মূলত ব্যবহার করে থাকে এসব ম্যাগনেটিক ইমপ্ল্যান্ট। এছাড়া চৌম্বক ক্ষেত্র অনুভব করা, কোনো বস্তুর কাছে হাত নিয়ে সেটা কি চৌম্বকীয় নাকি অচৌম্বকীয় না বুঝতে পারার ইচ্ছাতেও অনেকে এটা করে থাকে।
গলার রিং
কিছু আফ্রিকান ও এশিয়ান নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর সদস্যদের মাঝে গলায় রিং লাগানোর এ সংস্কৃতি চালু আছে। তখন স্বাভাবিকের চেয়ে তাদের গলাটি বেশ লম্বা দেখায়। নারী-পুরুষ উভয়েই এ রিংগুলো গলায় জড়িয়ে থাকে।
কর্সেট বিদ্ধকরণ
কর্সেট হলো এক ধরনের অন্তর্বাস যা কোমর ও নিতম্বকে আঁটসাঁট করে রাখতে অনেকেই ব্যবহার করে। বেশ যন্ত্রণাদায়ক এ প্রক্রিয়ায় একজন মানুষের শরীরের পেছনের অংশ একপাশ থেকে আরেকপাশে বিদ্ধ করা হতে থাকে। এরপর এমনভাবে ফিতা জড়িয়ে দেয়া হয় যেন দেখে মনে হয় কেউ আসল কর্সেটই পরে আছে। অবশ্য এটি একটি সাময়িক প্রক্রিয়া।
জিহ্বা কর্তন
এক্ষেত্রে জিহ্বার অগ্রভাগ থেকে শুরু করে একেবারে যতটুকু ভেতর পর্যন্ত যাওয়া যায়, ততদূর পর্যন্ত মাঝ বরাবর চিরে ফেলা হয় একজনের জিহ্বাকে। সবার সামনে নিজেদের ভিন্নভাবে উপস্থাপন করতে, আধ্যাত্মিক সাধনার উদ্দেশ্যে, এমনকি সঙ্গী/সঙ্গিনীকে চুম্বনের সময় অনুভূতি বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে অনেকেই বিচিত্র এ কাজটি করে থাকে।
জন্তুর রুপ গ্রহণ
পৃথিবীতে এমন কিছু মানুষ আছে যারা বেশ কয়েকবার ডাক্তারের ছুরির নিচে গিয়েছে শুধুমাত্র নিজেদের দেহাবয়বে কিছুটা পরিবর্তন এনে নিজেদেরকে কোনো জন্তুর মতো দেখানোর জন্য! যেমন- আমেরিকায় ‘Stalking Cat’ নামে পরিচিত এক পুরুষ চৌদ্দবার নিজের সার্জারি করিয়েছেন শুধুমাত্র নিজেকে বাঘিনীর মতো দেখানোর জন্য!
আলজিহ্বা বিদ্ধকরণ
অদ্ভুত ও যন্ত্রণাদায়ক এ পদ্ধতির ভেতর দিয়ে মানুষ যে কেন যেতে চায় তা সে-ই ভালো জানে। কেউ কেউ নিজেদের আলজিহ্বাকে পর্যন্ত ছবির মতো করে ছোট ছোট রিং দিয়ে বিদ্ধ করে থাকে। অবশ্য এটা বেশ দুর্লভ।
ডাইনীর মতো কান
এলফিং (Elfing) বা ইয়ার পয়েন্টিং (Ear Pointing) নামে পরিচিত এ প্রথায় একজন ব্যক্তি নিজের কানকে ডাইনীর মতো করে দেখাতে চায়। এজন্য ছবিতে দেখানো মহিলার কানের মতোই কানের উপরের দিককার সামান্য অংশ প্রথমে কেটে ফেলা হয়। এরপর সেই দুটো অংশ এমনভাবে জোড়া দেয়া হয় যেন তা কোনো দিকে নির্দেশ করছে বোঝা যায়।
চামড়া বর্ধিতকরণ
চামড়া বর্ধিতকরণের এ চর্চা শুরুতে দেখা যেত বিভিন্ন আফ্রিকান নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর সদস্যদের মাঝে। কিন্তু বর্তমানে পাশ্চাত্য দেশগুলোর তরুণ সমাজের মাঝেও এ চলটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। মূলত নাক, কান ও ঠোঁটের উপর দিয়েই যায় যত ঝড়ঝাপটা।
শরীরে ব্র্যান্ডিং
কোনো প্রতীক কিংবা কোনো নকশা নিজেদের শরীরে স্থায়ীভাবে ফুটিয়ে তুলতেই এ পদ্ধতির আশ্রয় নিয়ে থাকে কেউ কেউ। এজন্য একজন ব্যক্তি তার শরীরের পছন্দমতো জায়গায় পছন্দমতো নকশা বা প্রতীকটি আগুনের তাপের সাহায্যে বসিয়ে নেন। ফলে আমরণ তিনি সেই নকশাটি নিয়েই বেঁচে থাকতে পারেন।
চামড়া তুলে ফেলা
কোনো কারণে কোথাও জোরে ঘষা লাগলে আমাদের চামড়া উঠে যায় মাঝেমাঝেই। তবে অনেকের কাছে এটাও শখের বশে নিজের শরীরকে সাজানোর একটি উপায়। এজন্য সাধারণত শিরিষ কাগজ কিংবা কোনো রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয়। শেষ পর্যন্ত একজন ব্যক্তি তার শরীরে স্থায়ীভাবে কোনো ছবি বা শব্দের জায়গা করে দেন।
যৌনাঙ্গ সজ্জিতকরণ
মানুষের স্বভাবের বৈচিত্র যে কতটা খাপছাড়া ও উদ্ভট হতে পারে, তারই দৃষ্টান্ত যৌনাঙ্গ সজ্জিতকরণের এ প্রক্রিয়াটি। এ লক্ষ্যে বিভিন্ন পদার্থের তৈরি পুঁতি নিজেদের যৌনাঙ্গের নিচে ঢুকিয়ে রাখেন একজন ব্যক্তি। শারীরিক সৌন্দর্য (!) বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি শারীরিক মিলনে বাড়তি তৃপ্তি লাভই এর মূল উদ্দেশ্য!
কর্নিয়ায় ট্যাটু
শরীরের বিভিন্ন অঙ্গকে সাজানোর জন্য আমাদের যে প্রয়াস, চোখও বাদ যায় নি সেই তালিকা থেকে। এর বিভিন্ন রুপ তো আমরা আমাদের আশেপাশে প্রতিনিয়তই দেখি। তবে বিচিত্র ব্যাপার হলো- কেউ কেউ স্থায়ীভাবে নিজেদের কর্নিয়ায় ট্যাটু পর্যন্ত আঁকিয়ে থাকেন!
অক্ষিগোলকে ট্যাটু
কর্নিয়ায় যদি ট্যাটু আঁকানো যায়, তাহলে অক্ষিগোলকই বা বাদ যাবে কেন? চোখের সাদা অংশকেও তাই অনেকে বেছে নেন নিজেদের ক্যানভাস হিসেবে। এ লক্ষ্যে কেউ যেমন সেখানে হরেক রকম নকশা ফুটিয়ে তোলেন, তেমনি কেউ কেউ আবার বদলে ফেলেন পুরো রঙটাই!
সাবডার্মাল ইমপ্ল্যান্ট
অদ্ভুত এ শখের জন্ম ১৯৯৪ সালের দিকে। থ্রি-ডি ইমপ্ল্যান্ট বা পকেটিং নামেও পরিচিত এটি। এ প্রক্রিয়ার সিলিকন কিংবা টেফ্লনের তৈরি বিভিন্ন আকার-আকৃতির ইমপ্ল্যান্ট নিজেদের চামড়ার নিচে বসিয়ে নেন আগ্রহীরা। তখন বাইরে থেকে তাদের দেহে হরেক রকম ডিজাইন দেখা যায় যা কিনা চামড়ার ভেতর থেকে বের হয়ে আসতে চাইছে, ঠিক ছবির এ লোকটির মতোই।
এ সাবডার্মাল ইমপ্ল্যান্টের এক পাগল বলা যেতে পারে অস্ট্রেলীয় আর্টিস্ট স্টেলিওস আর্কাডিয়াসকে। ১০ বছর ধরে অনুসন্ধানের পর তিনি এক ডাক্তারকে খুঁজে পেয়েছিলেন যিনি তার হাতে গবেষণাগারে প্রস্তুত কৃত্রিম কানের ইমপ্ল্যান্ট বসিয়ে দিয়েছিলেন!
ব্যাগেল হেড
নিজের মাথা, আরো ভালো করে বলতে গেলে কপালকে বিচিত্র রুপ দেয়ার এ চর্চার জন্ম কানাডায়। তবে বর্তমানে মূলত জাপানেই এটি দেখা যায়। এজন্য আগ্রহী ব্যক্তির কপালে স্যালাইন এমনভাবে দেয়া হয় যাতে তার কপালটি ফুলে ব্যাগেলের মতো দেখায়। এজন্যই একে ‘ব্যাগেল হেড’ বলা হয়।
ঝুলিয়ে রাখা
সাস্পেনশন বা নিজের শরীরকে ঝুলিয়ে রাখার মতো এ বিষয়টি দেখলেই ভয়ে গা শিউরে উঠবে অনেকের। তবে ভয়ঙ্কর এ কাজটিই নির্দ্বিধায়, নিঃসঙ্কোচে করে থাকেন অনেকে। এজন্য বিভিন্ন হুক নিজেদের শরীরে বিঁধিয়ে এরপর এর সাথে নিজেকে ঝুলিয়ে দেন সেই ব্যক্তি।
এক্সট্রাঅক্যুলার (Extraocular) ইমপ্ল্যান্ট
চোখে কিছু এসে পড়লেই আমরা সেটা সরানোর জন্য ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠি। এজন্য চোখ ঘষতে থাকা, চোখে পানির ঝাপ্টা দেয়া চলতে থাকে অবিরত। তবে ধরণীতে এমন মানুষেরও দেখা মেলে যারা তাদের অঢেল অর্থ খরচ করে শুধু ছবির মতো নিজেদের চোখে কোনো ইমপ্ল্যান্ট বসানোর জন্যই!
ট্রান্সডার্মাল ইমপ্ল্যান্ট
সাবডার্মাল ইমপ্ল্যান্টগুলোর বেলায় আমরা দেখেছি যে, সেগুলো পুরোপুরি চামড়ার নিচে থাকে। তবে ট্রান্সডার্মাল ইমপ্ল্যান্ট এক্ষেত্রে আলাদা। এর কিছু অংশ বেরিয়ে থাকে বাইরে। আর যে প্রক্রিয়ায় এমনটি করা হয় তাকে বলে ডার্মাল পাঞ্চিং।
ঠোঁট বিদ্ধকরণ
নাক, কান, জিহ্বা, আলজিহ্বার পর ঠোঁটই বা বাদ যাবে কেন বিদ্ধকরণ প্রক্রিয়া থেকে? এটি বেশ পরিচিত এক বিদ্ধকরণ প্রক্রিয়া। অনেকে তো নিজেদের সেই ঠোঁটের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে আংটির পরিবর্তে স্বচ্ছ পাইরাক্সের প্লাগও ব্যবহার করে থাকে।
ঠোঁট সেলাই
কেউ যখন বেশি কথা বলতে থাকে, তখন প্রায়ই আমরা কথা থামাতে তার ‘মুখ সেলাই’ করে দেয়ার হুমকি দেই মজা করে। তবে এটা কিন্তু সত্যও হতে পারে। ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালনের পাশাপাশি মাঝেমাঝেই রাজনৈতিক কোনো সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাতে বিচিত্র এ উপায় বেছে নিয়েছিলো প্রতিবাদকারীরা।