ধরুন, বের হয়ে গেলেন বিশ্বভ্রমণে। অঢেল আনন্দে উদ্বেলিত আপনি ও আপনার সঙ্গীরা ঘুণাক্ষরেও টের পেলেন না হাসিমাখা এ মুহূর্ত অচিরেই বিলীন হতে চলেছে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। আকস্মিক দুর্ঘটনায় যদিওবা প্রাণে বাঁচলেন, সাহায্য পৌঁছবার পূর্বে কি নির্মম প্রকৃতিতে টিকিয়ে রাখতে পারবেন নিজেকে? নাকি বিনা লড়াইয়ে করবেন আত্মসমর্পণ? যদি লড়াকু মানসিকতারই হয়ে থাকেন তবে জেনে রাখুন এহেন বিপদের সময়ে গতানুগতিক জীবনের বহুল ব্যবহৃত সাধারণ পণ্যগুলোই হয়ে উঠতে পারে জীবন বাঁচাবার চাবিকাঠি। তুচ্ছাতিতুচ্ছ জিনিসগুলোর বহুমুখী গুণাবলীর পরিচয় একে একে পাবেন আপনি যদি আপনার জানা থাকে কোন জিনিসটিকে কীভাবে কাজে লাগানো প্রয়োজন। আবার, আত্মরক্ষার সাধারণ কিছু কৌশল জানা থাকলে নিজেকে রক্ষা করতে পারবেন অনাকাঙ্খিত আক্রমণ কিংবা বিপদ থেকে। কাজেই, প্রতিকূল অথবা বিপদসংকুল পরিবেশে কীভাবে নিজেকে টিকিয়ে রাখবেন কিংবা করবেন আত্মরক্ষা তারই নানা উপায় ও মাধ্যমকে ঘিরেই সাজানো আজকের লেখনী।
আগুন!
জীবনে আগুনের ব্যবহার যে কতটা গুরুত্ব বহন করে তা আমাদের কারুর কাছেই অবিদিত নেই। প্রতিকূল পরিবেশে আগুন জ্বালানো ও এর যথার্থ ব্যবহার বাঁচিয়ে দিতে পারে জীবন, পূরণ করতে পারে অনেক প্রয়োজন, আরো দিতে পারে নিরাপত্তা ও অধিক সময়। তাই দ্রুত আগুন জ্বালানোর কৌশল জানা থাকলে আপনার জন্য অন্যান্য অনেক কাজ সহজতর হয়ে যায়।
দ্রুত আগুন জ্বালাতে গাছের শুকনো ডাল, খড়কুটো কিংবা কয়লা, ডিম রাখার কার্টনের ওপর রাখলে তা সহায়ক হবে। কেননা, কার্টনগুলো খুব দ্রুত জ্বলে ওঠে, তার ফলে সেখানকার তাপমাত্রা কয়লা, এমনকি ঝড়ো আবহাওয়ায় গাছের ভেজা বা টাটকা ডালপালায়ও আগুন ধরিয়ে দেয়ার পক্ষে যথেষ্ট বেশি হয়।
টি-শার্ট যখন পানির ছাঁকনি
এমন এলাকায় আটকা পড়েছেন যেখানে পরিষ্কার সুপেয় পানির বড্ড অভাব? এই পদ্ধতিতে পানি ছেঁকে পেয়ে যেতে পারেন পানযোগ্য পানির হদিশ। এজন্য প্রয়োজন দুটি পাত্র। একটি পাত্রে ময়লা পানি নিয়ে সেটিকে উঁচুস্থানে রাখুন এবং আরেকটি খালি পাত্র তার পাশেই নিচুস্থানে রাখুন। টি-শার্ট থেকে একটুকরো অংশ ছিঁড়ে নিন এবং তার একপ্রান্ত ময়লা পানিতে রেখে অপর প্রান্ত ফাঁকা পাত্রের অভ্যন্তরে রাখুন। এরপর ময়লা পানি থেকে পানির কণা সেই কাপড় বেয়ে ঠিকই পরিষ্কার পাত্রে পৌঁছে যাবে কিন্তু ময়লাগুলোর বেশ অনেকভাগ অংশ পূর্বের পাত্রেই রয়ে যাবে। যদিও এভাবে পানযোগ্য পানি পাওয়া সম্ভব, তবুও এভাবে প্রাপ্ত পানিকে সম্ভব হলে ফুটিয়ে পান করার উপদেশ দেয়া হয়।
মোমরঙ থেকে মোমবাতি!
মোমবাতির পরিবর্তে মোমরঙ দিয়েও চালাতে পারেন আলো জ্বালাবার কাজ। মোমরঙে থাকে দাহ্য পদার্থ, তাই একটি মোমরঙ প্রায় ত্রিশ মিনিট যাবত্ জ্বলতে পারে।
উষ্ণতায় সহায়ক ঘাসপাতা
শীতে উষ্ণতা অনুভবের জন্য ঘাস ও ডালপালার ব্যবহার করা যেতে পারে। বিপদসংকুল পরিবেশে ঘাসপাতার ব্যবহারের মাধ্যমে প্রাপ্ত উষ্ণ অনুভূতি হাইপোথার্মিয়া (যখন শরীর তাপমাত্রা তৈরির চেয়ে দ্রুতহারে তাপমাত্রা হারায়) এর মতো ভয়াল দশা থেকে সুরক্ষা দিতে পারে। তাই উষ্ণতা ধরে রাখতে চাইলে পোশাকের ভেতর ঘাসপাতা ভরে রাখতে পারেন।
মশা-মাছি ও অন্যান্য পোকা থেকে সুরক্ষা
ঘাস, লতা-পাতা ও আগাছা পুড়িয়ে যে ধোঁয়া তৈরি হয় তা পোকামাকড় ও মশা-মাছির বিরাট অপছন্দের বিষয়। এছাড়াও পোকার কামড় থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এক ছড়া থাইম কিংবা কিছু পুদিনাপাতা আগুনে ছুঁড়ে দিলে তার থেকে উত্পন্ন গন্ধও কাজে দেয়। আবার এ গন্ধ বন্যপ্রাণীর থেকেও কিছুটা সুরক্ষা দেয়।
পোকামাকড়ের কামড় ও টুথপেস্ট
পোকামাকড়ের কামড় থেকে হওয়া চুলকানির চিকিৎসায় ব্যবহার করা যেতে পারে টুথপেস্ট। টুথপেস্টে আছে প্রদাহ-প্রতিরোধী (anti-inflammatory) উপাদান যা ফোলা ও লালচে ভাব কমায় এবং অনেক টুথপেস্টে থাকা মেনথল পোকায় কামড়ানো স্থলে ঠান্ডা অনুভূতি দেয় ও চুলকানি কমায়।
ছড়ে যাওয়ায় কাজে দেবে চ্যাপস্টিক
কেটে ছড়ে গেলে সেখানে চ্যাপস্টিক লাগালে তা তা সেখানে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হতে দেয় না। নিম্ন তাপমাত্রা এবং পানিশূন্যতা থেকে মুখমণ্ডল রক্ষা করতে সেখানেও কিছুটা চ্যাপস্টিক ব্যবহার করা যেতে পারে।
একটুখানি প্লাস্টিক
কুড়িয়ে পাওয়া জিনিস থেকে সামান্য পরিমাণে নমনীয় প্লাস্টিক নিয়ে তাতে দ্রুত আগুন ধরাতে পারেন। পিকগুলোতে থাকে সেলুলয়েড যা কিনা আর্দ্র আবহাওয়াতেও চমৎকার জ্বলে।
হাতে-কলমে বানানো কম্পাস
যদি হারিয়ে যান তথা পথ হারিয়ে ফেলেন, কম্পাসের অভাবটা বেশ ভালভাবেই টের পাওয়া যায়। হাতের কাছে কম্পাস না থাকলে নিজেই তৈরি করে নিতে পারেন একটি, যদি আপনার কাছে থাকে সুঁই এবং পানির যোগান। একটি সুঁই কিংবা পিন নিন, তার একপ্রান্ত আপনার জিন্স কিংবা যেকোনো মোটা কাপড়ে ঘষে নিন। এবার পানিতে গাছের পাতা রেখে তার উপর সূঁচটিকে রেখে দিন। আপনি যে প্রান্তভাগটিকে কাপড়ে ঘষেছিলেন সেটি যে দিক নির্দেশ করবে সেটিই উত্তর দিক।
শনাক্ত করুন বিষধর থেকে বিষহীন সাপ
যদি জঙ্গলে পথ হারিয়ে সাপের কামড় খেয়ে বসেন, উত্তেজিত না হয়ে মাথা ঠান্ডা রাখুন। সাপে কামড়ানো মানেই এই নয় সেটি বিষধর সাপ ছিল। এমনো হতে পারে সেটি বিষধর সাপ নয়। জঙ্গলে ডাক্তারি পরীক্ষা ব্যতীত কি করে বুঝবেন যে আপনাকে দংশনকারী সাপ কোনটি? মোটামুটিভাবে চোখে দেখে বিষধর ও বিষহীন সাপ শনাক্ত করার উপায় নিম্নরূপ-
- বিষধর সাপ তার সামনের বিষদাঁত দিয়ে কামড়ালে বড় পরিষ্কারভাবে দৃশ্যমান গর্ত সৃষ্টি হয়। কিন্তু বিষহীন সাপগুলোর সাধারণত দুই সারি দাঁত থাকে যা বিষধর সাপের তুলনায় অনেক বেশি। তাই তাদের কামড়ের চিহ্নও হয় ভিন্নরকম।
- বিষধর সাপের চোখের মণি বিড়ালের ন্যায় কিন্তু বিষহীন সাপের চোখের মণি গোলাকার।
- বিষধর সাপের লেজের দিকের আঁইশসমূহ সামনের দিকে বেশ স্পষ্ট ও বড় আকৃতির, অপরপক্ষে বিষহীন সাপের দেহের আঁইশ বিভাজিত অবস্থায় থাকে।
আবারো আগুন
আগুন জ্বালানো যে টিকে থাকার পক্ষে কতটা দরকারি এটি আমাদের কারুর নিকটই অবিদিত নেই। তাই বিপদে পড়লে হাতের কাছে যা পাবেন আগুন ধরাবার জন্য তা উপযুক্ত উপায়ে সংরক্ষণ করুন যেন প্রয়োজনে কাজে লাগানো যায়।
যদি সভ্যতা থেকে অনেক দূরেই হারিয়ে যান, তবে আপনার হাতের মোবাইল ফোনটিতে নেটওয়ার্ক না থাকলে সেটি সেখানে যোগাযোগের কাজে আসবে না। সেক্ষেত্রে মোবাইলের ব্যাটারিটি ব্যবহার করে আগুন জ্বালাবেন কিনা এমন একটি কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে আপনার।
অনেক স্মার্টফোন এবং ট্যাবলেট যন্ত্রেই রয়েছে লিথিয়াম আয়নযুক্ত ব্যাটারি, যদি আপনি ধারালো কিছু দিয়ে এ ধরনের ব্যাটারি ছিদ্র করেন, তাহলে এটি এমন একপ্রকার রাসায়নিক বিক্রিয়ার সৃষ্টি করবে যা থেকে সৃষ্ট হবে আগুন। আপনাকে শুধুমাত্র যা করতে হবে তা হলো ব্যাটারিটি ছিদ্র করবার পূর্বে আগুন জ্বালানোর উপযোগী কাঠ ও খড়কুটো যোগাড় করে রাখা। কাজেই সহজে আগুন জ্বালতে অন্য কোনো পন্থা না পেলে কাছের মোবাইল ফোনের ব্যাটারিই হতে পারে আপনার আগুন জ্বালার চমত্কার উপায়।
উত্তাল চোরা স্রোত থেকে বাঁচার উপায়
সাগরে সাঁতার কাটার সময় ‘উত্তাল চোরা স্রোত’ এর মতো ভয়ংকর বিপদের মুখোমুখি হতেই পারেন। এটি যেকোনো স্থানেই হতে পারে। যখন কেউ চোরা স্রোতে পড়ে তার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় তাকে যত দ্রুতগতিতে সম্ভব সাঁতরে তীরের দিকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে উত্সাহিত করে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, হয় তার বিপরীত, যত চেষ্টা করতে থাকা হয়, মানুষ তীর থেকে ততই দূরে সরে যেতে থাকে।
যদি আপনি চোরা স্রোতের মুখোমুখি হয়েই যান, সরাসরি তীরের দিকে সাঁতরাবেন না, স্রোতের সাথে আড়াআড়িভাবে কিংবা তীরের সমান্তরালে সাঁতরে বেরিয়ে আসুন চোরা স্রোত থেকে। চোরা স্রোতের ঢেউ চওড়া হয় না, কাজেই কৌশলে সেটি সাঁতার দিয়ে কাটিয়ে গেলে আপনি জীবন বাঁচিয়ে তীরে ফিরে আসতে পারবেন।
কুমিরের কবল থেকে বাঁচার উপায়
সোজাসুজি বরাবর একটি কুমির, একজন মানুষ অপেক্ষা দ্রুত ছুটতে পারে। তাই কুমিরের পাল্লায় পড়লে সোজাসুজি দৌড়ে কোনো লাভ হবে না। তাদের খাটো পা এবং লম্বা শরীর নিয়ে তারা কোনগুলোতে বেশ আনাড়ি আচরণ করে। এ কারণেই তারা এমন কাউকে শিকার করে না যে কিনা অনবরত তাদের চোখের আড়ালে যেতে থাকে, আঁকাবাঁকা বা কোনাকুনিভাবে প্রতিনিয়ত কোণ পরিবর্তন করে দৌড়ালে আপনি ঠিক ক্রমাগত চোখের আড়ালে যাওয়া লক্ষ্যবস্তুতেই পরিণত হবেন- বাঁচার এটাই উপায়।
তাই যদি কুমির আপনাকে তাড়া করে, বাঁচতে হলে অবশ্যই আঁকাবাঁকাভাবে দিক পরিবর্তন করে করে দৌড়োন। তবে এ কথা জেনে রাখা ভাল যে, কুমির, ঘড়িয়াল কিংবা এহেন সরিসৃপ থাকতে পারে এমন ধরনের পানির উত্স থেকে যথাসম্ভব দূরত্ব বজায় রাখাই মঙ্গলজনক।
জেলিফিশের হুল
যদি কোনো জেলিফিশ আপনাকে কাঁটা ফুটিয়ে দেয় তাহলে তা থেকে স্নায়বিক ধাক্কা, এলার্জি এবং শরীরে শক্তিশালী বিষক্রিয়া শুরু হয়। এসকল অসুবিধা ও অনাকাঙ্ক্ষিত সমস্যা এড়ানোর কিংবা প্রতিকারের জন্য নিম্নলিখিত কাজগুলো করতে পারেন:
- তত্ক্ষণাত ক্ষতটি পরিষ্কার করুন এবং শুঁড় বা কর্ষিকার লেগে থাকা অংশ সরিয়ে ফেলুন। এগুলো সরানোর সময় যেন শরীরে নতুন করে কাঁটা বা হুলের খোঁচা না লাগে তাই খালি হাতে জেলিফিশের শুঁড় ধরতে যাবেন না।
- হুলের খোঁচা লাগা অংশটি লবণ পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন, ধোয়ার জন্য কখনোই স্বাদু পানি ব্যবহার করবেন না। কেননা, স্বাদু পানি কাঁটাযুক্ত কোষগুলিকে পুনঃসতেজ করে তোলে।
- জেলিফিশের বিষ শরীর থেকে দূর করার জন্য এপল সাইডার ভিনেগার কিংবা অ্যালকোহল দেয়া তুলোর পুঁটুলি ক্ষতস্থানে চেপে ধরতে হবে।
- প্রচুর পানি পান করুন এবং ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন। পানি আপনাকে দ্রুত সুস্থ হতে সাহায্য করবে, উদ্ধার পেয়ে চিকিত্সকের দ্বারস্থ হলে তিনি আপনাকে জরুরি ঔষধপত্রের ব্যাপারে অবহিত করবেন।
মনে রাখুন ‘৩ এর মন্ত্র’
‘৩ এর মন্ত্র’টি এমন এক মূলমন্ত্র যা নির্দিষ্ট কিছু অবস্থায় মানুষের গড়পড়তা টিকে থাকার সম্ভাব্যতাকে নির্দেশ করে:
- বায়ু (অক্সিজেন) ছাড়া সাধারণত ৩ মিনিট, যতক্ষণ না মানুষ জ্ঞান হারিয়ে ফেলে,
- পানি ছাড়া ৩ দিন, যার পর আসে প্রাণ-সংহারী ঝুঁকিসম্পন্ন পানিশূন্যতা,
- খাবার ছাড়া ৩ সপ্তাহ, যার পরেও শরীরের সাংঘাতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। বিপদসঙ্কুল ক্ষেত্রে শরীরের পুনর্গঠন হয় এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে তা প্রায় একমাসও খাবার ব্যতীত চলতে পারে।
যখন আপনি বিপদে আছেন এবং চারপাশে কিছুই ঠিক নেই, তখনই ‘৩ এর মন্ত্র’টি মনে করে আপনার প্রাথমিক ও প্রধান গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যগুলো নির্ধারণ করুন।
ক্ষতের আঠা
বাসাবাড়িতে অনেক কিছুই ভেঙেচুরে যেতে পারে। এক্ষেত্রে আপনি কী করেন? সম্ভব হলে ভাঙা জিনিস আঠা দিয়ে জুড়ে দেন নিশ্চয়ই। একইভাবে সামান্য অসাবধানতাবশত যদি আপনার হাত কেটে যায় এবং আপনার কাছে কোনো ব্যান্ডেজই থাকে, কী করবেন? এহেন ঘটনায় আপনি ব্যবহার করতে পারেন ‘সুপার গ্লু’। এটি শুধু ক্ষতের দুপাশের চামড়া টেনেই জুড়ে দেয় না, পাশাপাশি ক্ষতস্থানকে জীবাণুমুক্তও করে। তবে মনে রাখবেন এটি শুধুমাত্র সেই স্থানেই ব্যবহার্য যেখানে চিকিত্সাসেবা আপনার থেকে বহু যোজন দূরে, প্রকৃতপক্ষে এসকল ক্ষেত্রে একজন চিকিৎসকের কোনো বিকল্প নেই।
যত পিপাসার্তই হোন তুষার খাবেন না
অনেকে মনে করেন তৃষ্ণা নিবারণার্থে তুষার গলাধঃকরণই উত্তম পন্থা। তথাপি বিপদে থাকাকালীন এমনটা না করাই উচিত। এটি এ কারণে নিরুৎসাহিত করা হয় না যে আপনার ঠান্ডা লেগে গলা ফুলে যেতে পারে, বরং এ কারণেই মানা করা হয় কারণ ঠান্ডা তুষার আপনার শরীরের তাপমাত্রা কমিয়ে দেবে এবং তাই আপনার শরীর নিজে থেকে চেষ্টা করবে নিজেকে গরম রাখার। এতে মূল্যবান শারীরিক শক্তি খরচ হয়ে যাবে।
অতিরিক্ত শক্তি খরচার ফলে আপনি আরও দ্রুত জমে যাবেন। তাই উদ্ধারকারীরা সবসময়ই পরামর্শ দেন যে তুষার দিয়ে পিপাসা মেটাতে হলে অন্ততপক্ষে তুষার গলে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা উচিত।
জ্বলন্ত ফ্রাইং প্যানের আগুন নেভাতে
কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে জ্বলন্ত স্টোভে থাকা ফ্রাইং প্যানে ধরে যেতে পারে আগুন। তেল খুব গরম হয়ে গেলে এমনটা হওয়া স্বাভাবিক। এমতাবস্থায় কখনোই সেই জ্বলন্ত তেলে পানি ঢেলে দেবেন না। কেননা, এতে আগুনের পরিমাণ আরো বেড়ে যাবে ও অধিক শক্তিশালী হবে এবং গরম তেল চতুর্দিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যাবে, যা অত্যন্ত বিপদজনক।
যদি আগুনের শিখা ছোট হয়, তাহলে প্যানে বেকিং সোডা দিতে পারেন। এটি অক্সিজেন শুষে নেবে। তথাপি আগুন এড়ানোর সবচেয়ে কার্যকরী উপায় একটি ভারী কটনের কাপড় দিয়ে ফ্রাইং প্যানটি ঢেকে দেয়া। একটি সাধারণ কাঁথা কিংবা আলমারি থেকে বের করা টি-শার্টের স্তুপ হলেই কাজ হবে।
গভীর ক্ষত
অনেকেই বিশ্বাস করেন যে, যখন শরীরের কোনো অংশে কেটে যায়, তখন যত দ্রুত সম্ভব যে ধারালো অংশটি চামড়া ভেদ করে গেঁথে গেছে তা সরিয়ে নিয়ে ক্ষতস্থানটি পরিষ্কার করে ফেলতে হবে। প্রকৃতপক্ষে এ ধারণাটি আসলেই সত্যি। তবে যদি ক্ষতটি গভীর হয়, তাহলে আপনার যে বস্তুটি কেটে গেঁথে গেছে তা সরিয়ে ফেলা উচিত হবে না। কেননা, বস্তুটি বড় বড় রক্তনালিকাকে ক্ষতিগ্রস্ত করলেও সেগুলোকে বন্ধ করে রাখে। কিন্তু আপনি সেটিকে ক্ষতস্থান থেকে বের করে বা সরিয়ে ফেলার সাথে সাথে ক্ষতস্থান থেকে বেশি পরিমাণে রক্তপাত হওয়া শুরু হবে। তাই, কিছু ক্ষেত্রে এম্বুলেন্স কিংবা চিকিৎসাসেবা এসে পৌঁছানোর পূর্ব পর্যন্ত ক্ষতস্থানে স্পর্শ কিংবা হাত দেয়া যাবে না।
হাত সঠিকভাবে মুষ্টিবদ্ধ করুন
পারস্পরিক লড়াইয়ের সময় মুষ্টিবদ্ধ নাকি খালি হাত কোনটি বেশি কার্যকরী- এ বিতর্ক বেশ পুরনোই বটে। তবে বেশিরভাগ সময় হাত দিয়ে একটি মারমুখী আঘাত করার সময় তা মুষ্টিবদ্ধ হয়ে যায়। তবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে মুষ্টিবদ্ধ করে লড়াইয়ের প্রক্রিয়ায় যেন আপনার আঙ্গুলে চোট না লাগে। মুষ্টিবদ্ধ করার সময় বৃদ্ধাঙ্গুলি একেবারে বাইরের দিকে উন্মুক্ত রাখবেন না, আবার অন্যসব আঙ্গুলের নিচে লুকিয়েও রাখবেন না, এতে আঙ্গুলের হাড় ফেটে যাবার সম্ভাবনা থাকে।
হাতের তালু দিয়ে আঘাত করাকে হেলাফেলার চোখে দেখবেন না। কেননা, এ ধরনের আঘাত প্রতিপক্ষের জন্য চমক হিসেবেও প্রমাণিত হতে পারে।
বাঁধন ছিন্ন করার উপায়
যদি আপনার হাত বেঁধে রাখা হয়, হাত মুষ্টিবদ্ধ করে রাখুন। যদি শরীর বেঁধে রাখা হয়, শ্বাস গ্রহণ করুন যাতে আপনার শরীরের অভ্যন্তরে থাকা মধ্যচ্ছদা প্রসারিত হবে। আপনার ও আপনার বাঁধনের মধ্যে যৎ বেশি সম্ভব বায়ুপূর্ণ স্থান থাকবে আপনার তা ছিন্ন করে পালিয়ে যাবার সম্ভাবনা তত বেড়ে যাবে।
ডাক্ট টেপের বাঁধনমুক্ত হবার উপায়
যদি হঠাত্ অপহৃত হয়ে পড়েন বিশেষ উদ্দেশ্যে এবং আপনাকে বেঁধে ফেলা হয় আঠালো ডাক্ট টেপ দিয়ে, এভাবে নিজেকে মুক্ত করতে পারেন: হাতযুগল মাথার ওপরে ওঠান এবং প্রচন্ড শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে সেটিকে নিচের দিকে নামিয়ে আনুন। টেপ ছিঁড়ে গিয়ে আপনি বাঁধনমুক্ত হয়ে যাবেন। আপনার হাত পিছমোড়া করে বাঁধা থাকলেও এ পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারবেন।
ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোর হদিশ জানুন
আপনার প্রতিপক্ষের তুলনায় আপনি শারীরিকভাবে কম শক্তিশালী হতেই পারেন, সেক্ষেত্রে আপনার তাকে অকস্মাৎ চমকে দেবার সুযোগের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। চেষ্টা করবেন যথাসম্ভব দ্রুত ও শক্তির মাধ্যমে আঘাত করতে। যদি চিন্তা ও নিশানা নির্ধারণের সময় দীর্ঘায়িত করেন আপনার প্রতিপক্ষ আপনার উদ্দেশ্য ধরে ফেলতে পারে এবং আরো ক্রোধন্মত্ত হয়ে উঠতে পারে।
ব্যবহার করুন নিরাপত্তা অ্যাপসমূহ
আধুনিকতার ছোঁয়া যখন বিরাজমান সর্বত্রই, তবে নিরাপত্তায়ই বা কেন নয়? নানান ধরনের অ্যাপ্লিকেশন যেমন ফ্যামিলি লোকেটর (Family Locator), বিসেফ (bSafe), এবং অন্যান্য অ্যাপসমূহ আপনাকে আপনার বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনদের গতিবিধি জানতে সাহায্য করবে এবং কেউ সমস্যায় পড়লে প্রয়োজনমাফিক সংকেত পাঠাবে।
ব্যবহার করুন সাংকেতিক শব্দ
ছোটবেলায় আমাদের অনেকেই বিভিন্ন সাংকেতিক শব্দ, নিত্য নতুন শব্দ এমনকি নতুন ধরনের ভাষাও বানিয়ে ফেলতাম। এই আপাত বাস্তবমূল্যহীন শখটিও কখনো কখনো জীবন বাঁচাবার কাজে আসতে পারে। যদি আপনার কথা বলা কিংবা বার্তা পাঠানোর সুযোগ না থাকে, একটি গুপ্ত সাংকেতিক বার্তা আপনার প্রতিকূল অবস্থার কথা জানান দিতে পারে। আর যদি আপনি ধাঁধাঁর মাধ্যমে আরো বর্ণনা যোগ করতে সমর্থ হন তাহলে আপনার উদ্ধারকারীরা হয়তো আপনাকে কোনদিকে নেয়া হয়েছে কিংবা ঠিক কোনস্থানে রাখা হয়েছে তার হদিশও বের করে ফেলতে পারেন।
হাতের কাছের জিনিসের ব্যবহার
বিপদে পড়লে হাতের কাছে যা আছে তা কাজে লাগিয়ে ফেলুন। চাকুর আঘাত থেকে রক্ষা পেতে আপনার হাতব্যাগটি ব্যবহার করতে পারেন। শুধু মনে রাখবেন, সেটিকে শরীরের খুব কাছে বা সাথে সেঁটে ধরে থাকবেন না। আপনার স্কার্ফ হামলাকারীর মুখে ছুঁড়ে পেয়ে যেতে পারেন মূল্যবান কয়েকটি সেকেন্ড। ছাতা, ব্যাগ এবং এমনকি আপনার পকেটে থাকা সামান্য কিছু খুচরো পয়সাও কাজে আসতে পারে। কাছে থাকা চাবির গোছাও কাজে দিতে পারে। তবে সেগুলোকে আঙ্গুলের গিঁটের ফাঁকে ব্যবহৃত অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে গিয়ে সময় নষ্ট করবেন না।
আপনার পিপার (মরিচের গুঁড়া) স্প্রে সঠিকস্থানে রাখুন
আপনার ব্যাগে ‘পিপার স্প্রে’ রাখার কার্যকারিতাই পাবেন না যদি প্রয়োজনীয় মুহূর্তে ব্যাগের গভীর গহ্বরে সেটি তন্ন তন্ন করে খুঁজে বেড়াতে হয়। আপনার ওপর হামলা সাধারণত অতর্কিতে হুট করে হয়ে যেতে পারে এবং সেক্ষেত্রে আপনার আত্মরক্ষার্থে যা ব্যবহার্য সেটির যথাসম্ভব দ্রুত প্রয়োগ করে ফেলতে হবে। এটি সম্ভব হলে আপনার পকেটেই রাখুন যেন আপনার ওপর কেউ আক্রমণ করে বসলে এটি প্রয়োগ করেই আপনি দৌড়ে পালাতে পারেন।
হাত ছাড়ানোর উপায়
আপনার হাত যদি শক্তভাবে ধরে রাখা হয় তাহলে তা ছাড়াতে মনে রাখবেন ‘বৃদ্ধাঙ্গুলির নীতি’। আপনার হাত আক্রমণকারীর বৃদ্ধাঙ্গুলির দিকে মুচড়ে ঘোরান- তবে মনে রাখবেন হাত ঘোরানোটা হতে হবে বেশ দ্রুত ও তীব্র ঝাঁকুনিযুক্ত। যদি আপনার ওপর চড়াও হয়ে থাকা ব্যক্তি আপনার পরিকল্পনা ধরে ফেলে, তাহলে সে আপনার হাত তার সর্বশক্তি দিয়ে চেপে ধরে রাখতে পারে। এমতাবস্থায় আপনার পা ব্যবহার করুন। পা দিয়ে হামলাকারীর কটিসন্ধি এবং হাঁটুতে যতটা সম্ভব জোরদার আঘাত করুন। তাকে যতটা আহত করতে পারবেন আপনার পালিয়ে বাঁচার সম্ভাবনা ততই প্রবল।
চুল ধরে টানা আক্রমণকারীর থেকে সুরক্ষা
শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার বেশ পরিচিতিপ্রাপ্ত একটি ধরন হলো ভুক্তভোগীর চুল ধরে টেনে নেয়া। এই পদ্ধতিটি যে শুধু ভুক্তভোগীর জন্য নিদারুন কষ্টদায়ক তাই নয়, এটি প্রয়োগের মাধ্যমে ভুক্তভোগীর শরীরের ওপর হামলাকারীর প্রায় সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়।
এর থেকে রক্ষা পেতে সর্বপ্রথমে আক্রমণকারীর হাত আপনার দুই হাত দিয়ে শক্ত করে ধরে ফেলুন। এটি আপনাকে নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতে সহায়তা করবে। অতঃপর আপনার পদযুগল ব্যবহার করার পালা। যখনই বুঝবেন আপনার ওপর হামলাকারীর হাতের কব্জা ঢিলে হতে শুরু করেছে, তখনই তার হাতের বন্ধন ছুটিয়ে দৌড়ে পালান।
গলা চেপে ধরা থেকে সুরক্ষা
কেউ আপনাকে হত্যা কিংবা লাঞ্ছিত করার উদ্দেশ্য গলা চেপে ধরলে আক্রমণকারীর কটিসন্ধিতে আঘাত করুন কিংবা আঙ্গুল দিয়ে তার চোখে আঘাত করুন। ব্যথায় তার হাতের চাপে ঢিল পড়তে বাধ্য হবে।
লিফটে আক্রমণ থেকে সুরক্ষা
সবারই এটি কম-বেশি জানা উচিৎ যে, অপরিচিত ব্যক্তির সাথে লিফটে চড়া উচিত্ না এবং সন্দেহজনক কেউ আপনার পরে লিফটে প্রবেশ করলে আপনার সেখান থেকে বেড়িয়ে যাওয়া উচিত। লিফটের সেই দেয়ালের সেই অংশে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়াবার চেষ্টা করুন যেখানে লিফটের বোতামগুলো বসানো। কাউকে বোতাম চেপে দুটি ফ্লোরের মাঝখানে লিফট থামিয়ে তার সাথে একা আপনাকে লিফটবন্দী করার সুযোগ দেবার চেয়ে আপনার লিফটসঙ্গীর হয়ে তার গন্তব্যানুযায়ী লিফটের বোতাম চেপে দেয়াই উত্তম।
গাড়িতে সুরক্ষায়
লিফটের ন্যায় গাড়ির অভ্যন্তরীণ আক্রমণও ঠেকানো সম্ভব। অপরিচিত কারো সাথে গাড়িতে চড়ার আদর্শ নিয়ম মেনে চলার পাশাপাশি আপনি যে গাড়িতে উঠছেন তার নম্বর, রং এবং গাড়ির অবস্থান ও গন্তব্য চালককে দেখিয়ে ও শুনিয়ে সরাসরি ফোনের মাধ্যমে কাউকে জানাতে পারেন কিংবা অন্ততপক্ষে লিখে রাখতে পারেন। যদি এরপরেও লাঞ্ছনা বা শারীরিকভাবে হেনস্থা করার চেষ্টা করা হয়, হামলাকারীর স্পর্শকাতর বা ঝুঁকিপূর্ণ শারীরিক এলাকা যেমন: কটিসন্ধি, নাক এবং চোখে আঘাত করুন।
এছাড়াও ক্ষেত্রবিশেষে আক্রমণকারীর চুল ধরে টেনে তাকে মাটিতে ফেলে তার মুখে হাঁটু দিয়ে সজোরে আঘাত করা যেতে পারে। আবার, আক্রমণকারী আপনাকে জাপটে ধরলে তার যে অঙ্গটি আপনার মুখের নিকটে আছে সেখানে কামড়ে দিতে পারেন। এছাড়াও পেছন থেকে জাপটে ধরলে, আক্রমণকারীর পা জোরে মাড়িয়ে দেয়া বা পায়ে সজোরে লাথি দেবার পাশাপাশি আপনার কনুই দিয়ে তার মুখ বরাবর আঘাত করাটাও বেশ কার্যকরী।
প্রাথমিক চিকিত্সা দেবার উপায় জানুন
এতদিন যদি এ পদ্ধতিগুলোর প্রতি বিশেষভাবে আলোকপাত না-ও করে থেকে থাকেন, প্রাথমিক চিকিৎসা দেবার গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতিগুলো শিখে নিন। জীবনে হয়তো এমনও অবস্থায় পড়তে হতে পারে যেখানে আপনি কিংবা অন্য কেউ সহসা আহত হয়ে গেলেন এবং কাছেপিঠে নেই কোনো হাসপাতালও। এমন অবস্থায় আপনার প্রাথমিক চিকিত্সা সংক্রান্ত সঠিক জ্ঞান বাঁচিয়ে দিতে পারে একটি মূল্যবান জীবন।
কিছু সাবধানতা
- যদি মনে করেন আপনার দিকে সন্দেহজনক ব্যক্তি অগ্রসর হচ্ছে, দিক পাল্টে ফেলুন।
- আপনাকে অনুসরণ করা হলে একা কখনোই বাড়িতে প্রবেশ করবেন না।
- আপনি যদি নারী হয়ে থাকেন এবং একাই বসবাস করেন, তাহলে বাসার দরজার বাইরে লাগানো নামফলকে শুধু নিজের পদবী উল্লেখ করুন।
- বাইরে থেকে এসে যদি দেখেন আপনার বাড়ির দরজা খোলা বা জোরপূর্বক কেউ খুলেছে, ভেতরে ঢুকবেন না, সঙ্গে সঙ্গে নিরাপদ দূরত্বে এসে আগে পুলিশে খবর দিন।
- রাতের বেলা এটিএম বুথে যাওয়া যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন।
- কোনোভাবে বাড়ির ভেতর একা আক্রমণের শিকার হলে জোরে জোরে “আগুন, আগুন” বলে চিৎকার করে লোক জড়ো করুন।
- রাস্তায় দীর্ঘসময়ের জন্য গাড়ি থামাবেন না।
- রাস্তার পাশ দিয়ে ব্রিফকেস বা ব্যাগ হাতে হাঁটা যথাসম্ভব এড়িয়ে চলবেন।
- রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় হাতে চাবি থাকলে তা আঙ্গুলের ফাঁকে ফাঁকে ভরে চলতে পারেন। এতে আকস্মিক হামলা হলে হামলাকারীকে আঘাত করার অস্ত্র হিসেবে এটি ব্যবহার করা যাবে।
- অন্ধকার ও নীরব রাস্তা দিয়ে হাঁটবেন না, সেগুলো গন্তব্যে পৌঁছানোর সংক্ষিপ্ততর পথ হলেও না।
- ভয় পাবেন না, বিপদে নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি।
এছাড়াও কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিয়মকানুন আপনার কাজে আসতে পারে:
- সতর্ক থাকুন। আপনার কানে থাকা ইয়ারফোনে বাজতে থাকা গান, আপনার স্মার্টফোনের স্ক্রিন কিংবা আপনার পায়ের নিচে তাকানোর নিছক সাধারণ অভ্যাসই আপনার মনোযোগ অন্যদিকে সরিয়ে রাখতে পারে যা অপকর্মকারীর থেকে পূর্বসতর্ক হতে বাধা প্রদান করে।
- কিছুক্ষণ পর পর আপনার আশেপাশে ও পেছনে লক্ষ্য রাখুন, যদি অতর্কিতে হামলা করার ফন্দি এঁটে আসা দুর্বৃত্ত আপনাকে চমকে দেবার অবকাশ না পায় তাহলে সেদিনের মতো হামলা করার পরিকল্পনা ত্যাগও করতে পারে।
- নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখার অভ্যাস তৈরি করুন। সর্বপ্রকার চেষ্টা করুন যাতে কোনোভাবেই দুর্বৃত্ত আপনাকে কোণঠাসা করতে না পারে। যদি হামলাকারী ভীতি প্রদর্শনপূর্বক দ্রুত আপনার দিকে এগিয়ে যায়, পিছিয়ে যাবেন না। পার্শ্ববর্তী কোনো দিকে সরে যান এবং আপনার নড়াচড়ার গতিবিধি পাল্টে ফেলার চেষ্টা করুন।
- আপনার হাতের তালু দুটি সামনে রাখার চেষ্টা করুন। এটি শুধুমাত্র একটি প্রতিরক্ষা অবস্থানই নয় (শুধু খেয়াল রাখুন আপনার হাতযুগল যেন আপনার চিবুকের সাথে একই স্তরে অবস্থান করে এবং আপনার কনুইদ্বয় থাকে আধা বাঁকানো) বরং শান্তিপূর্ণ মৈত্রীভাবের চিহ্নও যা আপনি যে শারীরিক সহিংসতার ব্যতিরেকে সমস্যা সমাধানে আগ্রহী তা-ও প্রতিপক্ষের সামনে পেশ করে। এই সাংকেতিক অঙ্গভঙ্গির অর্থ প্রতিপক্ষকে বলা: “শান্ত হও। কেননা শান্তিপূর্ণভাবে সমস্যাটির সমাধান করা যাক।” আবার এর সাথে এটিও বুঝিয়ে দেয়া হয় যে সে আঘাত করলে আপনিও প্রত্যুত্তর দেবার জন্য তৈরি।
- দৌড়ান। যদিও আপনি সবগুলো কলাকৌশলেই পারদর্শী হন না কেন, মনে রাখবেন আমরা কেউই কোনো সুপারহিরো নই। হামলাকারীর সামনে আপনার শারীরিক শক্তি বা ক্ষমতা জাহির করার কোনো প্রয়োজন নেই, মুখ্য লক্ষ্য হলো প্রাণ বাঁচানো ও অক্ষত থাকা। আক্রমণ করা হলে আপনার তাত্ক্ষণিক প্রধান লক্ষ্য ৩টি:
১. বাঁধন বা কবলমুক্ত হওয়া,
২. হামলাকারীকে বিচলিত করে দেয়া
৩. পালানো
বৈচিত্র্যময় এ জীবনে কখনো মেঘ কখনো রোদ্দুর আবার কখনোবা আসে বসন্ত। চলার পথে বিপদজনক কিংবা অপ্রীতিকর পরিস্থিতিতে পড়তে হতে পারে, যা আমাদের হাতে নেই। তবে এটিকে মোকাবেলা করার সুযোগ হাতের কাছে থাকলে হেলায় হারানো উচিত নয়। একটু প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব ও যথাসম্ভব অবিচলিত থেকে ঠান্ডা মাথায় কৌশলগত আশ্রয় নিলে অনেক বিরূপ পরিস্থিতিতেই অবস্থার নিয়ন্ত্রণ নিজের দিকে নেয়া সম্ভব। একটি সাহসী পদক্ষেপ বদলে দিতে পারে অনেক সমীকরণ। তাই বিপদকালীন সময়ে কাজে দিতে পারে এমন কলাকৌশল জেনে না রাখলেই নয়।
ফিচার ইমেজ সোর্স: youtube.com, thelist.com