সবকিছুরই শুরুটা যে ভালো হওয়া প্রয়োজন, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই বললেই চলে। সে হিসেবে দিনের সব বেলার খাবারের মধ্যে সকালের নাস্তার গুরুত্বটা সবচাইতে বেশি। সকালে স্বাস্থ্যসম্মত নাস্তা সারাদিনের জন্য শরীরকে রাখে চাঙ্গা এবং মেজাজও রাখে ফুরফুরে। এছাড়াও শরীরকে রাখে একেবারে ফিট এবং বিভিন্ন রোগ-বালাই থেকেও দেয় মুক্তি। এসব বিষয় কিন্তু মোটামুটি সবারই জানা। তবুও বলা এজন্যই যে, এসব বিষয় জেনেও কিছু মানুষ সকালে নাস্তা করার ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন বা এড়িয়ে চলে। সকালের নাস্তা না করার কারণে হতে পারে নানা ধরনের সমস্যা। আজ তবে কথা হোক সকালের নাস্তা এড়িয়ে যাওয়ার যতসব পরিণতি নিয়ে।
হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়
আমেরিকান কলেজ অব কার্ডিওলোজির জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা যায়, যারা সকালের নাস্তায় পুষ্টিকর খাবার খান না বা একেবারেই সকালের নাস্তা করেন না তাদের হৃদযন্ত্রের সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা অন্যান্য সবার থেকে দ্বিগুণ। এই গবেষণায় টানা ছয় বছর ধরে স্পেনের একটি প্রতিষ্ঠানের মাঝবয়সী চার হাজার কর্মীর সকালের নাস্তার ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হয়। এছাড়াও গবেষণায় দেখা যায়, যারা তাদের সকালের নাস্তায় প্রতিদিনে শরীরে ক্যালরির চাহিদার ৫ শতাংশের কম পরিমাণ ক্যালরি সম্পন্ন খাবার খায়, তাদের ওজন বেড়ে যাওয়ার সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ এবং গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায়।
চুল পড়ার সমস্যা বাড়ায়
কেরাটিন নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। আর সকালের নাস্তা এড়িয়ে যাবার বা স্বাস্থ্যসম্মত নাস্তা করার অভ্যাস না থাকলে যদি নতুন চুল না গজায় ও চুল পড়ে যায়, তাহলে সে একদমই অবাক হবেন না! কারণ এর কারণেই আপনার নতুন চুল গজানোতে বাঁধা সৃষ্টি হয়। সকালের নাস্তা আপনার চুলের জন্য উপকারী কারণ এটি চুলের ফলিকলে এনে দেয় পরিপূর্ণ পুষ্টি ও শক্তি। যার ফলে চুলের গোঁড়া হয় মজবুত ও শক্ত। তাই নারী-পুরুষ সবারই উচিত সকালের নাস্তায় সঠিক পরিমাণে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া। আর অবশ্যই সেটা খেতে হবে সময়মতো। তাই খেয়াল রাখুন, ঘুম থেকে ওঠার এক ঘণ্টার মধ্যেই যেন সকালের নাস্তাটা খাওয়া হয়ে যায়। তাহলে আপনার চুলের ফলিকল ভালো থাকবে এবং নতুন চুল গজানোর সাথে সাথে চুল পড়াও কমে যাবে।
বিপাক প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটে
সকালের নাস্তা না খাওয়ার ফলে আপনার বিপাক ক্ষমতা কমে যেতে থাকে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যায়। এছাড়াও পাকস্থলী ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে যেতে শুরু করে। এর ফলে বিভিন্ন ধরনের রোগ, যেমন- জন্ডিস, অ্যানিমিয়াও হতে পারে। বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, যারা সকালের নাস্তা ঠিকমতো করেন তাদের বিপাক ক্ষমতা তাদের চাইতে বেশি যারা সকালের নাস্তা এড়িয়ে যান।
হতে পারে ডায়াবেটিস
টাইপ-২ ডায়াবেটিসের সম্ভাবনা বেড়ে যায় নিয়মিত সকালের নাস্তা বাদ পড়ে যাওয়ার কারণে। সাধারণত এর সম্ভাবনা মহিলাদের মাঝে বেশি লক্ষণীয়। সকালে রান্নাঘরের কাজের চাপে তাদের সকালের নাস্তা করতে দেরি হয়ে যায়, এমনকি বাদও পড়ে যায় অনেক ক্ষেত্রে। তাই যত কাজই থাক, অবশ্যই সকালের নাস্তাকে প্রাধান্য দিয়ে স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিসম্মত খাবার খাওয়া দরকার।
ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়
জ্বি, সকালের নাস্তাকে হেলাফেলা করা ঠিক এতোটাই ক্ষতিকর হতে পারে আপনার জন্য। বিশেষ করে তাদের জন্য যাদের ওজন বাড়তি এবং ওজন কমানোর জন্য না বুঝেই এবং বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ছাড়াই বিভিন্ন ধরনের ডায়েট প্ল্যান করে থাকেন। তাদের মাঝে ডায়েট প্ল্যান নিয়ে একটি ভ্রান্ত ধারণার কারণে দেখায় যায় যে, সকালের নাস্তা হয় একেবারেই করেন না বা স্বাস্থ্যসম্মত কিছুই খান না। আর এর কারণেই শরীরে জন্মাতে থাকে ক্যান্সারের কোষ। আশা করা যায়, এ বিষয়টি জানার পর ডায়েট প্ল্যান করার সময় সকালের নাস্তার দিকে অবশ্যই বিশেষ নজর দিবেন সবাই!
বুদ্ধিদীপ্ত হতে চাইলে সকালের নাস্তাকে ‘না’ আর না
কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী বা যারা ছাত্রজীবনে আছেন তাদের সবার মাঝে সকালে নাস্তা না খাওয়ার প্রবণতাটা অন্য সবার চাইতে বেশি থাকে। সকালে কিছু না খেয়েই স্কুল, কলেজে কোনো রকম ঘুম থেকে উঠে বেরিয়ে পড়াই যেন রোজকার কাজ। কিন্তু এতে করে যে ভবিষ্যতে স্বাস্থ্যের কতটা ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে, তা হয়তবা খেয়ালেই নেই তাদের! তার চাইতেও বড় বিষয় হলো সকালের নাস্তা না করাতে মস্তিষ্ক যথাযথভাবে কাজ করে না। তাই পড়া মনে রাখতে ও বুদ্ধির যথাযথ বিকাশের জন্য সকালের নাস্তা করা চাই-ই চাই।
অপ্রত্যাশিতভাবে বেড়ে যায় ওজন
বিষয়টি অস্বাভাবিক ও অবাস্তব মনে হলেও সত্যি! যারা ওজন কমানোর জন্য বিভিন্ন প্রক্রিয়া অবলম্বন করে থাকেন, তারা যদি সকালের নাস্তা না করে থাকেন তাহলে খাবার খাওয়ার সময়ের মাঝে বেশ খানিকটা তারতম্য থাকার কারণে স্বাস্থ্যে ব্যাপক বিঘ্ন ঘটে। তাই দুপুরের ও রাতের খাবার খাওয়ার সময় তাদের শরীরে ফ্যাটি এসিড ও মিষ্টি খাবারের চাহিদা বেড়ে যায়। তাড়াহুড়া করে ওজন কমানোর ক্ষেত্রে সকালের নাস্তা এড়িয়ে যাওয়া কোনো বুদ্ধিমানের কাজ নয়। কারণ এর ফলে নির্দিষ্ট ও যথাযথ ডায়েট প্ল্যান অনুযায়ী প্রতিদিন ক্যালরির চাহিদা সম্পূর্ণরূপে পূরণ না হওয়ার কারণে শরীরে এর প্রভাব পড়ে।
কমিয়ে দেয় এনার্জি লেভেল
সারাদিন খিটমিটে মেজাজ ও ক্লান্তবোধ করছেন? যদি সকালের নাস্তা না করে, থাকেন তাহলে শরীরের এই অবস্থা নিয়ে একদমই ভাবেবেন না। কারণ নাস্তা না করার কারণেই আপনার শরীরের এই প্রতিক্রিয়া! যাদের এরকম নাস্তা না করার অভ্যাস রয়েছে তারা প্রতিনিয়তই কাজের ক্ষেত্রে অবসাদ অনুভব করে, খুব অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং কাজেও মনোযোগ ধরে রাখতে কষ্ট হয় তাদের। এভাবে সকালে নাস্তা না করার অভ্যাস গড়ে তুললে মস্তিষ্ক ক্লান্ত হয়ে যায় এবং এর কর্মশক্তি কমে যেতে থাকে।
মাইগ্রেনের ব্যথার কারণ
মাইগ্রেনের ব্যথায় কাতর অবস্থা! আর এই ব্যথা কমানোর জন্য নিয়মিত খাওয়া হয় ঔষধ। আর নিয়মিত ঔষধ খেতে খেতে একসময় শরীরে আবার সাইড এফেক্টের সমস্যা দেখা দেয়। প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ সবসময়ই ভালো। তাই নিয়মিত সকালের নাস্তা খাওয়া উচিত, যেন মাইগ্রেনের সমস্যা না হয়। মাইগ্রেনের সমস্যার সাথে সাথে ব্লাড সুগারের মাত্রাও বেড়ে যায় সকালে নাস্তা না খাওয়ার কারণে। তাই এরপর সকালে নাস্তা না খাওয়ার কারণে মাথা ব্যথা করলেই বুঝে নেবেন, পরবর্তীতে এরকম নিয়মিত নাস্তা না খেলে শীঘ্রই মাইগ্রেনের সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
অনিয়মিত মাসিক হওয়ার কারণ
অ্যাপেটাইট-এ (আন্তর্জাতিক গবেষণায় বিশেষায়িত জার্নাল প্রকাশক) প্রকাশিত এক জার্নালের মতে, সকালের নাস্তা না খাওয়ার কারণে অনিয়মিত মাসিকের হার বেড়ে যায়। আর এই অনিয়মিত মাসিক হওয়ার ফলে পরবর্তীতে মাসিক হওয়ার সময় অতিরিক্ত রক্তপাত ও ব্যথা বেড়ে যায়। এছাড়াও দেখা দেয় কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা। বেশিভাগ ক্ষেত্রেই কিশোরীরা সকালের নাস্তা না করার কারণে অপুষ্টিতে ভোগে। ফলে তাদের মাসিকও অনিয়মিত হয়।