শৈশব পেরিয়ে কৈশোরে পদার্পন করা ছেলেমেয়েদের প্রত্যেকের কিছু শারীরিক এবং মানসিক পরিবর্তন ঘটে। এই পরিবর্তনগুলো ছেলেদের ক্ষেত্রে খুব আলোচ্য বিষয় না হয়ে উঠলেও মেয়েদের ক্ষেত্রে আশ্চর্য ব্যতিক্রম দেখা যায়। তাদের সারা জীবনই পিরিয়ড বা ঋতুস্রাব নিয়ে সমাজের অর্থহীন কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য শুনে যেতে হয়। আমাদের দেশে এই বিষয়গুলোকে এখনও স্বাভাবিক দৃষ্টিতে দেখা হয় না, বরং নানা অত্যাচার আর শোষণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
আজ আমরা আমাদের নিজ দেশের আঙিনা পেরিয়ে প্রতিবেশী দেশ নেপালের এক অদ্ভুত রীতির কথা আলোচনা করবো। এই আশ্চর্য নিয়ম আপনাকে কখনও করবে বিস্মিত, কখনও আপনার মাঝে জন্ম দেবে তীব্র ক্ষোভের, আর কখনও হয়তো নিজেরই অজান্তে ঘৃণায় ছেয়ে যাবে আপনার মনোজগৎ। চলুন জেনে আসা যাক সুদীর্ঘকাল ধরে চলে আসা নেপালের সেই অমানবিক প্রথার কথা, যা কিনা নারীকে অবদমনের চূড়ান্ত পর্যায় দেখিয়েছে আর পৃথিবীতেই নরকযন্ত্রণার সুব্যবস্থা করেছে।
একজন পৌলমী বসু ও দিনবদলের শুরু
পৌলমী বসু একজন গল্প বলিয়ে এবং শিল্পী। নিজের নামকে তিনি হাস্যরসের মাধ্যমে বর্ণনা করেন, “Follow me starts with a P.” পৌলমী বেড়ে ওঠেন কোলকাতা শহরে এবং এই শহরের সমৃদ্ধ চলচ্চিত্রের ইতিহাস তার স্বপ্ন এবং অনুপ্রেরণার সম্পূর্ণ কৃতিত্বের দাবীদার। মাত্র ১৭ বছর বয়সে বাবাকে হারানোর পর পৌলমীর মা তাকে পড়াশোনা শেষ করে নিজের স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে বেরিয়ে যেতে বলেন। মা হয়ে তিনি চেয়েছিলেন, যে আক্ষেপের জীবন তিনি কাটিয়েছেন, সেই একই আক্ষেপের যন্ত্রণায় মেয়েকে যেন দগ্ধ না হতে হয়।
স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে পৌলমীর মা কখনও লাল রঙের শাড়ি পরতেন না। পৌলমীর জন্মস্থান ভারতে লাল রঙকে বিশুদ্ধতা এবং পঙ্কিলতা উভয়ের চিহ্ন হিসেবেই বিবেচনা করা হয়। প্রথাগত হিন্দু ধর্মের নির্দেশানুযায়ী বিধবা নারীরা জীবনের পুরোটা সময় মৃত্যু এবং শোকের প্রতীক হিসেবে শুধু সাদা শাড়ি পরিধান করবেন। এছাড়াও রয়েছে যেকোনো ধরনের উদযাপনী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ এবং পুনর্বিবাহে কঠোর নিষেধাজ্ঞা। বাবার মৃত্যুর ১৬ বছর পর পৌলমী যখন ৩৩ বছর বয়সে উপনীত তখন তিনি তার মাকে সাদা শাড়ি পরার অযৌক্তিক নিয়ম থেকে বের করে আনতে সক্ষম হন। তবে তার মা এখনও নির্দিষ্টভাবে লাল অথবা গাঢ় গোলাপি রঙের শাড়ি স্বেচ্ছায় এড়িয়ে চলেন। পৌলমী সমাজ ও ধর্মের একটি দমনমূলক নীতির চাকা বিপরীত দিকে চালিত করতে সক্ষম হয়েছেন এবং তিনি এই জয়রথের শুরুটা করেছেন তার পৃথিবীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একজন ব্যক্তির জীবনে, যিনি তার মা। “এক এক করেই শুরুটা করতে হয়”, পরিবর্তনের লক্ষ্যে কাজ করে যাওয়া পৌলমীর দৃষ্টিভঙ্গি ছিল এমনই।
এই বিষয়ে পৌলমীর বক্তব্য, “বেড়ে ওঠার সাথে সাথে আমি বেশ বুঝতে পারছিলাম যে ধর্মীয় ও সামাজিক বিভিন্ন রীতিনীতি ও ঐতিহ্য যুগে যুগে নারীদেরকে পরাধীন এবং নিয়ন্ত্রণ করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হয়ে এসেছে এবং সমাজের এই পক্ষপাতমূলক দৃষ্টি পোশাকের রঙকেও নিস্তার দেয়নি।”
পৌলমী বসুর আলোড়ন সৃষ্টিকারী প্রজেক্ট ‘A Ritual of Exile‘
নেপালে বসবাসরত নারীদের প্রতি মাসে অন্তত পাঁচদিন নিজেদের ঘরের বাইরে অবস্থান করতে হয়। প্রতি মাসে ঋতুস্রাবের পাঁচদিন সময় তারা নিজেদের বাসা থেকে দূরবর্তী একটি কুঁড়েঘরে বাস করে যেখানে তাদের পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার ও পানি ব্যবহার করার সুযোগ থাকে না। মাসিক চলাকালীন সময়ে প্রত্যেক নারীকে বিবেচনা করা হয় অশুচি এবং দূষিত হিসেবে। এই সময়টাতে সূর্যের দিকে তাকানো এবং বাড়ির পুরুষ, গবাদি পশু ও যেকোনো ধর্মীয় প্রতীক স্পর্শ করা থেকে তাদের সম্পূর্ণ বিরত থাকতে হয়। মাসের এই কয়টি নির্দিষ্ট দিনে তাদের খাবার হিসেবে বরাদ্দ থাকে শুধু ভাত, লবণ এবং শুকনো খাবার। তাদের অন্যান্য স্বাভাবিক খাদ্যগ্রহণ করতে দেওয়া হয় না এই বিশ্বাস থেকে যে ঋতুস্রাব চলাকালীন সময়ে তাদের সংস্পর্শে শাকসবজি, ফলমূল, দুধ ইত্যাদি বিনষ্ট হয়ে যাবে। যেসব নারী এই প্রথার বিরোধিতা করবেন তাদেরকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, গবাদি পশুর আকস্মিক মৃত্যু ও শস্যের কম ফলনের জন্য দায়ী করা হয়।
হিন্দু ধর্মের অত্যন্ত প্রাচীন নিয়মানুযায়ী ঋতুমতী নারীদেরকে বাধ্যতামূলকভাবে দিনযাপন করতে হবে নিজ বাসস্থান থেকে দূরবর্তী একটি ঘরে। প্রতি মাসের নির্দিষ্ট কিছুদিন এই ধরনের কুঁড়েঘরে বসবাস করার এই রীতিকে বলা হয় ‘চৌপদী’। আইনত এক দশকের বেশি সময় ধরে যদিও এই প্রথাটি ন্যায়সঙ্গত নয়, তবুও ঋতুবতী নারীদেরকে জোরপূর্বক এখনও এই কঠিন এবং বিপজ্জনক নিয়ম পালনে বাধ্য করা হয়।
মেয়েটির নাম অঞ্জিল কুমারী। বয়স মাত্র ১২। শৈশবের গণ্ডি পেরোতে না পেরোতেই তাকে বিয়ের আসরে বসতে হয়েছে। নিজের বিয়ে সম্পর্কে তার মতামত, “আমি মোটেই এই বিয়ে নিয়ে আগ্রহী নই এবং আমার নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে এই কাজটি আমাকে করতে হচ্ছে। আমি ভেবেছিলাম বিয়ের পর আমার স্বামীর ভিন্ন কোনো শহরে চাকরি হলে তখন আমি মায়ের বাসায় এসে আমার ইচ্ছেমত সময় কাটাতে পারব।” নেপালে প্রচলিত একটি বদ্ধমূল ধারণা হলো, ঋতুবতী হওয়ার আগেই কোনো মেয়েকে বিয়ে দিতে পারলে তার অব্যবহিত পরিবার স্বর্গবাসী হবে। বাল্যবিবাহ ও চৌপদী পরস্পর সম্পর্কিত কারণ তারা যথাক্রমে মাসিক পূর্ব ও পরবর্তী পবিত্রতার উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত দুটি ধারণা।
১৪ বছর বয়সী কিশোরী মাঙ্গু বিকা তার প্রথম ঋতুস্রাবের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে বলে, “প্রথমবার যখন আমার মাসিক হয় তখন আমি সাপ নিয়ে আতঙ্কিত ছিলাম। তবে বর্তমানে আমি সাপের চেয়ে বেশি ভয় পাই পুরুষদেরকে এবং আমার মনে অপহরণের সার্বক্ষণিক একটি ভয় বিরাজ করে। বিয়ের পর আমার কী হবে তা নিয়ে আমি সত্যিই চিন্তিত। বড় হয়ে আমি একজন শিক্ষক হতে চাই, কারণ আমার স্কুলে যেতে ভালো লাগে। স্কুল আমার জীবনে এমন একটি জায়গা যেখানে ঋতুস্রাবের দোহাই দিয়ে নারীদের মাঝে কোনো বিভেদের দেয়াল তুলে দেওয়া হয় না।” উপরের ছবিতে দেখা যাচ্ছে, মাঙ্গু ৩৪ বছর বয়সী চন্দ্রা তিরুভার সাথে একই চৌপদীতে অবস্থান করছে।
মাসের যে কয়টি দিন শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণার কারণে পরিবারের সবার সহযোগিতা কাম্য, ঠিক সেই সময়টাতেই তুলাকে থাকতে হচ্ছে চৌপদীতে গরু-ছাগলের সাথে। পুষ্টিকর খাবারের বদলে শুধু খেতে হয় ভাত, ডাল আর লবণ। আর এহেন অবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে হয় বলেই তাকে স্কুল ছেড়ে দেওয়ার মতো চিন্তা করতে হয়।
৪২ বছর বয়সী রাঙ্গা যোশি তার পরবর্তী প্রজন্মের সাথে শেয়ার করছেন চৌপদী। সদ্য কৈশোরে পদার্পন করা মিনু (১৪) সম্পর্কে তিনি বলছিলেন, “চৌপদীতে থাকাকালীন সময়ে আমাকে কখনও না খেয়েও থাকতে হয়। আমার বাচ্চারা এখনও অনেক ছোট তাই তাদের পক্ষে ক্ষুধার যন্ত্রণা সহ্য করা সত্যিই কঠিন। বছরের ৬ মাস আমার স্বামী ভারতে কাজ করে এবং যতদিন সে এখানে অবস্থান করে ততদিন আমার চৌপদীতে থাকার সময় সে আমার জন্য খাবার নিয়ে আসে। পুরুষ মানুষ কখনোই বুঝবে না ঋতুস্রাবের সে কী বর্ণনাতীত কষ্ট। কী করেই বা বুঝবে তারা, তাদেরকে তো আর এই যন্ত্রণার ভার বইতে হয় না।”
নেপালের সুর্খেত জেলায় পবিত্র পারিয়ার (১৪) ও ধর্ম নেপালী পারিয়ার (২৫) একই চৌপদীতে অবস্থান করছেন। এই বিষয়ে ধর্ম বলেন, “ঈশ্বরের জন্যই আমাদের এই কষ্ট সয়ে যাওয়া। তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন এবং তার প্রদত্ত নিয়মকানুন অনুসরণ না করলে তিনি রাগান্বিত হন এবং আমাদের পরিবারের পুরুষরাও আমাদের প্রতি রুষ্ট হন।”
দেবী রাম ধামালা (৫৯)। স্থানীয় এই পাহাড়ি বৃদ্ধ একজন কিশোরীকে বকাঝকা করছেন। ঋতুস্রাব চলাকালীন সময়ে অনেক নারীই সঠিক দেখাশোনার অভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাদের এই অসুস্থতার কারণ হিসেবে ভাবা হয় যে তাদের উপর অপদেবতা ভর করেছে এবং এর সমাধান হিসেবে তাদেরকে তীব্র অত্যাচার করা হয়। অনেক নারীকেই সুস্থ করার দোহাই দিয়ে তীব্র মানসিক ও শারীরিক অত্যাচার করা হয়।
ছবি হাতে দাঁড়িয়ে থাকা নারীর নাম মমতা। যে ছবিটি হাতে তিনি দাঁড়িয়ে আছেন সেটি তার মৃত স্বামীর। তার স্বামী শিব পুজান (৩০) ভারতে কর্মরত অবস্থায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান। স্বামীর মৃত্যু মমতার মতো বিধবা নারীদেরকে একঘরে করে দেয়। স্বামীর মৃত্যুর কারণ হিসেবে ধরে নেওয়া হয়, তার স্ত্রীর অতীত জীবন অবশ্যই পাপে পরিপূর্ণ ছিল।
১৬ বছরের কিশোরী সরস্বতীর প্রসবোত্তর রক্তপাত শুরু হলে তাকে তার সদ্য ভূমিষ্ঠ নবজাতকসহ চৌপদীতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। নাজুক শারীরিক অবস্থার মাঝে চৌপদীর মতো পরিবেশে অবস্থানকালে হঠাৎ করেই সে অত্যন্ত অসুস্থ হয়ে গেলে পৌলমী বসু তার নিজস্ব তত্ত্বাবধানে সরস্বতীকে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। সবচেয়ে ভয়াবহ বিষয় হলো, ওই এলাকা থেকে সবচেয়ে নিকটবর্তী হাসপাতালটির দূরত্বই বেশ কয়েক ঘন্টার।
ধর্মীয় আচার নাকি মৃত্যু পরোয়ানা?
শুধু শারীরিক বা মানসিক যন্ত্রণা না, প্রাচীন এই নিয়ম শেষ অবধি ১৯ বছরের এক কিশোরীর মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তুলাশি শাহি এর আগেও বহুবার চৌপদীতে অবস্থান করেছিলেন। তবে শেষবার তিনি যখন যান সেবার তাকে থাকতে হয়েছিল তার আত্মীয়ের গোয়ালঘরের মেঝেতে। শেষ অবধি সাপের কামড় হয়েছিল তার মৃত্যুর কারণ। পায়ে আর মাথায় মোট দুবার তাকে সাপ কামড়ায়। প্রাথমিকভাবে তার পরিবার ঘরোয়া দ্রব্যাদি দিয়ে তার চিকিৎসা করার চেষ্টা করে। মৌসুমি বৃষ্টিপাতের দরুন পাহাড়ি এলাকায় তখন বন্যা চলছে। রাস্তাঘাটের বেহাল দশার কারণে নিকটস্থ হাসপাতালে তিন ঘণ্টার যাত্রা শেষে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হলেও ভাগ্যদেবী প্রসন্ন হলেন না। তুলাশির চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় অ্যান্টি ভেনোম সেই মুহূর্তে হাসপাতালে ছিল না। দীর্ঘ সাত ঘণ্টা পর জাগতিক সকল বন্ধন ছিন্ন করে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে তুলাশি।
ধর্মের দোহাই দিয়ে এই অমানবিক প্রথা রহিত হোক
সাম্প্রতিক একটি সরকারী তথ্যমতে, নেপালের দৈলেখ জেলায় রয়েছে প্রায় ৫০ হাজার পরিবারের বাস। নেপালের মধ্য পশ্চিমাঞ্চলের এই এলাকায় রয়েছে প্রায় ৫ শতাধিক চৌপদী। তবে মানবাধিকার কর্মীদের দাবী, সরকারের এই তথ্য প্রকৃত অবস্থার গুরুত্ব তুলে ধরতে ব্যর্থ।
দৈলেখ ভিত্তিক মানবাধিকার কর্মী অমর সুনারের মতে, “চৌপদী প্রথার বাস্তবিক চেহারা মূলত সরকারের করা হিসেবের চেয়ে আরও অনেক বেশি ভয়াবহ। হ্যাঁ, এটা স্বীকার করতে হবে যে চৌপদী ব্যবহারের উদ্দেশ্যে তারা নতুন ঘর তৈরি করছে না, তবে এটাও সত্য যে তারা এখনও বহু পুরোনো-অব্যবহৃত ঘর, নিজেদের ঘর অথবা গোয়ালঘরের নির্জন কোনা চৌপদীর বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করছে।”
চৌপদীর এই আচার ব্যবস্থার সমালোচনা করে আরেক মানবাধিকার কর্মী পৌদেল বলেন, “সহজ এবং স্বাভাবিক ভাষায় ঋতুস্রাব অধিকার নিয়ে প্রচলিত আইনগুলো বাস্তবিকপক্ষে চরমভাবে অকার্যকর এবং উপেক্ষিত।”
চৌপদীতে থাকতে গিয়ে আরও এক তরুণী না ফেরার দেশে চলে গেছেন। গৌরী কুমারী নামের এই তরুণী ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। নিজের পড়ালেখা শেষ করে তিনি নেপালের অক্ষরজ্ঞানহীন নারীদের মাঝে শিক্ষার আলো বিলিয়ে দেওয়ার ব্রত নিয়েছিলেন আর পাশাপাশি সেলাই কাজে ব্যস্ত থাকতেন। চৌপদীতে থাকার সময় প্রচণ্ড নিম্ন তাপমাত্রায় আগুল জ্বালানোর চেষ্টা করেছিলেন। তবে শেষাবধি তাকে সকালবেলা মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।
এরকম মৃত্যুর প্রতি রাষ্ট্রযন্ত্রের নির্লিপ্ততার প্রতি ইঙ্গিত করে রাঁধা পৌদেলা বলেন, “নেপালে আমাদের রাষ্ট্রপতি একজন নারী, সংসদের স্পিকার একজন নারী, এমনকি সর্বোচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতি হিসেবেও আমরা একজন নারীকে পেয়েছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় এটাই যে, এ দেশের শাসন ব্যবস্থার শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিরা নারী হয়েও এসব ঘটনার বিষয়ে একটি শব্দ উচ্চারণ করেননি। তাদের এহেন ঔদাসিন্যে আমাদের লজ্জার অন্ত নেই।”
ধর্মের বিধিবিধান অনুসরণ করতে গিয়ে একের পর এক নারীর মৃত্যু প্রহসন ছাড়া আর কিছুই হতে পারে না। ঋতুস্রাব অস্বাভাবিক বিষয় নয়। প্রকৃতিপ্রদত্ত এই নিয়মেই মেয়েরা মা হওয়ার পথে প্রথম পদচিহ্ন এঁকে দেয়। তাই ঋতুমতী নারীদেরকে অশুচি বা অপবিত্র হিসেবে বিবেচনা না করে এই সময়টাতে তাদের পাশে থাকাটা আমাদের সকলের দায়িত্ব। পৃথিবীর কোলে নিরাপদে থাকুক সবাই, মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার মর্যাদা পাক প্রত্যেকে।
ফিচার ইমেজ: nationalgeographic.com