সকালের অ্যালার্ম শুনে বন্ধ করে আবারও ঘুম দেননি এমন মানুষ খুব কমই বলা চলে! সারাদিনের ব্যস্ততার পর ঘুমালেই সকালে অসলতা ভর করাটাই স্বাভাবিক। তবে অনেকেই স্বেচ্ছায় বা একটু আধটু আরামের জন্য এরকম অলসতা করেন না। তাদের অনিচ্ছা সত্ত্বেও ঝিমুনির সমস্যায় ভোগেন। ঝিমুনির সাথে সাথে কর্মশক্তি কমে যেতে থাকে। শুধু তা-ই নয়, ঝিমুনি পেলে শুধুই শুয়ে বসে থাকতে ইচ্ছা করে এমনও হয়। এরকম তন্দ্রাচ্ছন্নভাব এবং কর্মশক্তির অভাব নিজ থেকেই কাজ করে বা কোনো শারীরিক সমস্যার জন্যও হতে পারে।
ঘরোয়া পদ্ধতিতে যেভাবে ঝিমুনির সমস্যা সমাধান করবেন
ঝিমুনির সমস্যাটি প্রতিকারের জন্য এবং কর্মশক্তি বৃদ্ধির জন্য বেশ কিছু পদ্ধতি রয়েছে। আজ তেমন কিছু কার্যকরী ঘরোয়া পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করবো।
১. পুদনি পাতার চা
পুদিনা পাতায় রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এছাড়াও পুদিনা পাতা বিভিন্ন রকম প্রয়োজনীয় তেলের বেশ ভালো একটি উৎস যা কর্মশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। একটি হাঁড়িতে ১০-১৫ মিনিটের জন্য কয়েকটি পুদিনা পাতা ফুটিয়ে নিন। এরপর ছেঁকে পান করুন। ভেষজ চা হিসেবে এই পানীয়টি দিনে ২-৩ বার পান করলেই আপনার কর্মশক্তি বেড়ে যাবে কয়েকগুণ।
২. আঙ্গুরের জুস
ঝিমুনির সমস্যাটি প্রতিকারের ক্ষেত্রে আঙ্গুরের জুসও বেশ কার্যকরী। প্রতিদিন এক গ্লাস করে আঙ্গুরের জুস খেয়ে দেখুন, দেখবেন কাজ করার সময় কত শক্তিই না আপনি পাচ্ছেন!
৩. চা বা কফি
সাধারণত আমরা যে চা খেয়ে থাকি তা-ও স্বাস্থ্যসম্মত হয় যদি তা পর্যাপ্ত পরিমাণে পান করা হয়! চায়ে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা প্রাকৃতিকভাবে শরীরের ক্লান্তি ও অবসাদ দূর করে। কর্মশক্তি ফিরে পাওয়ার জন্য কফি হলো আরও একটি কার্যকরী বিকল্প। এতে রয়েছে ক্যাফেইন যা প্রাকৃতিকভাবে ব্যথানাশক হিসেবে কাজ করে এবং শরীর, মন ও চেহারায় তারুণ্য ফিরিয়ে আনে। চা এবং কফি এই দুটোকেই শরীরের ঝিমুনি বা অবসাদ দূর করতে বেশ কার্যকরী প্রতিকার হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
৪. লেবুর শরবত
গরমের দিনে এর চাইতে তৃপ্তিকর জিনিস আর কী হতে পারে! তাই গ্রীষ্মের তপ্ত প্রখর রোদে এক গ্লাস ঠাণ্ডা লেবুর শরবত খেলে মন্দ কী? লেবুর রসে আছে সাইট্রিক এসিড এবং প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি যা ঝিমুনির সমস্যা সমাধানে বেশ কার্যকরী। এটি আপনার শরীরে গরম বা তাপকে প্রতিহত করে ফ্রেশ একটি অনুভব এনে দিবে। তাই বাজারে যেসব এনার্জি ড্রিংক পাওয়া যায় সেসব না কিনে বাসায় এক গ্লাস লেবুর শরবত খেয়ে নিন। এতে পুরো দিনের কাজকর্মে আপনি বেশ শক্তি পাবেন।
৫. শাক-সবজি ও ফলমূল
প্রতিদিনের খাবার তালিকায় শাক-সবজি ও ফলমূল থাকলে তা আপনার শরীরে বিপাক প্রক্রিয়া সঠিকভাবে বজায় রাখতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। শাক-সবজি ও ফলমূলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ যা শরীরকে নানা ধরনের রোগের সাথে লড়াই করতে সাহায্য করে। তাছাড়া স্বাস্থ্যসম্মত একটি জীবনধারা কর্মশক্তি বাড়িয়ে আপনাকে কাজের চাপ ও ঝিমুনির সাথে মোকাবেলা করতে সাহায্য করবে।
বেশিরভাগ পুষ্টিবিদের মতে, প্রতিদিন ১ গ্লাস ফলের জুস এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে শাক-সবজি খাওয়া দেহের জন্য খুব দরকার। আপনি যদি শাক-সবজি খেতে বেশি পছন্দ না করেন তাহলে জুস বানিয়ে খেয়ে নিলেও হবে। এক গ্লাস শাক-সবজির জুসে শাক-সবজির গুণাগুণ ও পুষ্টি সর্বোচ্চ মাত্রায় বজায় থাকে। বেশ কয়েক রকম পুষ্টিগুণ একসাথে পেতে অনেক রকম শাক-সবজি একসাথে নিয়ে জুস বানিয়ে খেয়ে নিতে পারেন।
আপনি যদি ঝিমুনির কারণগুলো বের করতে পারেন তাহলে এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য আপনি বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপও নিতে পারবেন। ঝিমুনি দূর করার জন্য এই পন্থাগুলো অবলম্বন করতে পারেন।
১. নিয়মিত ঘুম
একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের দিনে অন্ততপক্ষে ৮ ঘণ্টা ঘুমানো দরকার। আর নয়তো শরীরে কাজ করার শক্তি বা ক্ষমতা পাওয়া যায় না। অনিয়মিত ঘুমের সময় বা অভ্যাস কর্মশক্তি কম করে দেয়, যার কারণে অনিদ্রা ও ক্লান্তিভাব চলে আসে সহজেই।
২. নিয়মিত ব্যায়াম
নিয়মিত ব্যায়াম শরীর ও মনকে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ও কর্মক্ষম রাখতে সাহায্য করে। প্রতিদিন মাত্র ৩০ মিনিট হালকা কিছু শরীরচর্চা যেমন- জগিং, পুশ আপ, পুল আপ ও দ্রুত হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলুন। শরীরচর্চা এন্ড্রোফিন নামের হরমোন নির্গত করে যা আপনার শরীরে আরও বেশি কর্মশক্তি যোগায় এবং বিপাকক্রিয়া উন্নত করে। এছাড়াও নিয়মিত ব্যায়াম করলে কাজের চাপের কারণে শরীরে যে ক্লান্তি আসে তা মোকাবেলা করা সম্ভব।
৩. স্বাস্থ্যসম্মত ডায়েট
গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, মাত্রাতিরিক্ত ফাস্ট ফুড খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যেতে শুরু করে। অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুললে শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমে এবং বিভিন্ন ধরনের রোগ বাসা বাঁধতে শুরু করে। আর সেসব রোগের মধ্যে মেদবহুলতা একটি! যাদের শরীরে মেদবহুলতার সমস্যা রয়েছে তাদের কর্মশক্তি অপেক্ষাকৃত কম এবং তারা খুব সহজে আর অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে পড়ে। শাক-সবজি খেলে এবং স্বাস্থ্যসম্মত খাবার রুটিন মেনে চললে শুধুমাত্র কর্মক্ষমই থাকবেন না, বরং প্রতিদিনকার কাজ ও চাপ মোকাবেলা করতে পারবেন।
৪. আশেপাশের পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখুন
স্কুল, কলজ, বাসা, অফিস যেটাই আপনার কর্মক্ষেত্র হোক না কেন, আপনার শরীর ও মনে এর পারিপার্শ্বিক অবস্থার বেশ ভালো একটি প্রভাব রয়েছে। অগোছালো পরিবেশ আপনার কর্মশক্তিতে ব্যাঘাত ঘটায় এবং পরিষ্কার ও স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ আপনার ভেতর নিয়ে আসবে ইতিবাচক মনোভাব। স্বাস্থ্যকর পরিবেশ আপনার শরীরকে কর্মক্ষম রাখার সাথে সাথে মনকেও রাখবে প্রফুল্ল।
৫. ভোর সকালে ঘুম থেকে উঠে কিছুক্ষণের জন্য ব্যায়াম করুন। এরপর গোসল করে নিন। এতে সারাদিন আপনি কর্মক্ষম অনুভব করবেন।
৬. একঘেয়েমি দূর করতে সৃজনশীল কাজ করুন
যখনই হাতে অবসর সময় পাবেন তখনই বিষণ্ণতা বা একঘেয়েমি দূর করার জন্য সৃজনশীল কিছু করার চেষ্টা করুন। কোনো কাজের সাথে সম্পৃক্ত থাকলে আপনার মধ্যে অবসাদ কাজ করবে না এবং সময়টাও ভালো কাটবে। খুঁজে বের করুন, আপনার কী করতে ভালো লাগে। যেমন- গান গাওয়া, সেলাই করা, ছবি আঁকা ইত্যাদি যা-ই হোক না কেন, অবসরে পছন্দের কাজটি করুন।
ঝিমুনির কারণ
ঝিমুনির জন্য নির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই। বিষণ্ণতা বা ডিপ্রেশন হলো ঝিমুনির প্রধান কারণগুলোর মধ্যে একটি। এজন্য শরীর ও মন পৃথিবী এবং আশেপাশের সবকিছু সম্পর্কে উদাসীন হয়ে পড়ে। ঝিমুনির আরও কিছু কারণ যা শরীরে অলসতা বয়ে নিয়ে আসতে পারে তা হলো-
১। উচ্চ ও নিম্ন রক্তচাপ
২। ডায়াবেটিস
৩। অপর্যাপ্ত ঘুম
৪। কাজের চাপ
৫। অধিক পরিশ্রম
৬। শরীরচর্চার অভাব বা একঘেয়েমি
৭। কোষ্ঠকাঠিন্য
৮। মাত্রাতিরিক্ত ঔষধ সেবন
৯। রক্তশূন্যতা
১০। থাইরয়েডের সমস্যা
১১। ইনফেকশন ও অ্যালার্জি
ফিচার ইমেজ: Drake in the Morning