Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

নবজাতকের সুস্থ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে যা দরকার

বিশ্বব্যাপী মানুষ আজ ডায়াবেটিস নামক এক মহামারীতে আক্রান্ত। ২০১৫ সালের আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশনের এক রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিশ্বে ৪১৫ মিলিয়ন মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়েছে, তার সাথে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকিতে রয়েছে ৩১৫ মিলিয়ন নারী-পুরুষ। তথ্যটি খুবই আতঙ্কজনক। বর্তমানে ৫ মিলিয়ন নারী-পুরুষের মৃত্যুর কারণ হচ্ছে ডায়াবেটিস। এই হারে বৃদ্ধি পেতে থাকলে ২০৪০ সালে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াবে ৬৪২ মিলিয়ন।

ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তির পারিবারিক জীবনই শুধু নয়, পারিপার্শ্বিক সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবেও ডায়াবেটিসের প্রভাব খুব মারাত্মক। একজন নারীর ক্ষেত্রে এই প্রভাব আরও ভয়াবহ। একজন নারীর সাথে জড়িত তার ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। সুখী, সুন্দর পরিবার আর ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার জন্য এই বছরের বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবসে নারীদের ওপর, বিশেষ করে প্রসূতি মায়েদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ২০১৭ সালের বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবসে এবারের দৃপ্ত স্লোগান হল-

“নারী ও ডায়াবেটিস: আগামীর সুস্বাস্থ্য আমাদের অধিকার।”

এবারের বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবসকে সামনে রেখে নারীদের মধ্যে ডায়াবেটিস সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা, বিশেষ করে প্রসূতি মায়েদের ডায়াবেটিসের ঝুঁকি এড়াতে পরিকল্পিত গর্ভধারণের বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

পরিকল্পিত গর্ভধারণই পারে আপনার আগত সন্তানের সুস্থ ভবিষ্যৎ; Source: pecsma.hu

পরিকল্পিত গর্ভধারণের উদ্দেশ্য

  • ঝুঁকিতে রয়েছে এমন নারীদের চিহ্নিত করা।
  • ডায়াবেটিসে আক্রান্ত গর্ভবতী নারীর ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য সুরক্ষা কৌশল তৈরি করা।
  • স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় নারীদের চাহিদা ও প্রয়োজনীয়তাকে যথাযথ অগ্রাধিকার দেয়া।
  • ডায়াবেটিসে আক্রান্ত সকল নারীর জন্য স্বল্পমূল্যে ডায়াবেটিসের ওষুধ এবং প্রযুক্তিগত সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা।
  • ডায়াবেটিস রোগ-নিয়ন্ত্রণে সার্বিক ব্যবস্থাপনা এবং ডায়াবেটিস সম্পর্কিত সব ধরনের নির্ভুল তথ্য সহজেই যাতে পাওয়া যায় সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
  • ডায়াবেটিস আক্রান্ত নারীদের গর্ভাবস্থায় ঝুঁকি কমাতে পরিকল্পিত গর্ভধারণে উদ্বুদ্ধ করা।
  • সকল নারী ও মেয়েকে তাদের ডায়াবেটিসের ঝুঁকি এড়াতে নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করার জন্য উৎসাহ দেওয়া।
  • গর্ভবতী মহিলাদের জন্য উন্নতমানের স্বাস্থ্যসেবা, পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং স্বাস্থ্যশিক্ষার ওপর যথাযথ গুরুত্বারোপ করা এবং এর মাধ্যমে মা ও শিশুর স্বাস্থ্যগত বিকাশ নিশ্চিত করা।

এক গবেষণায় দেখা যায়, যেসব মহিলা গর্ভধারণ-পূর্ব সেবা নিয়েছেন, যেমন- গর্ভধারণের আগে রক্তে শর্করার পরিমাণ, রক্তচাপ, রক্তশূন্যতা, পুষ্টি অবস্থা, প্রস্রাবে আমিষ ও ইনফেকশন পরীক্ষা করা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মতো যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া গেলে মাতৃত্বকালীন এবং প্রসবকালীন জটিলতার হার কমে আসে প্রায় শূন্যের কোঠায়।

সময়মত শারীরিক পরীক্ষা এবং ডাক্তারের নিবিড় পর্যবেক্ষণ প্রসবকালীন জটিলতা অনেকাংশে হ্রাস করে; Source: edonet.pl

গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস

গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস প্রসূতি মা এবং নবজাতকের জন্য হুমকিস্বরূপ। পূর্বে ডায়াবেটিস ছিল না এমন নারীদের অনেক সময় গর্ভাবস্থায় রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়। ফলে গর্ভাবস্থায় মা ও শিশুর জটিলতা বৃদ্ধি পায়। গর্ভাবস্থায় যে ডায়াবেটিস হয় তাকে জেসটেশনাল ডায়াবেটিস বলা হয়ে থাকে। ২০১৫ সালের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, সারা বিশ্বে ১৯৯.৫ মিলিয়ন নারী গর্ভবস্থায় ডায়াবেটিসের শিকার হচ্ছেন । এভাবে চলতে থাকলে ২০৩০ সালে এই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াবে ৩১৩.৩ মিলিয়নে।

প্রতি ৭ প্রসূতি নারীর মধ্যে একজন গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছে। এক গবেষণায় দেখা যায়, ২০১৫ সালেই সারা বিশ্বে ১৬.২ শতাংশ নারী জন্মগতভাবে গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছেন। ২০১৫ সালে গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসে আক্রান্ত নারীর সংখ্যা প্রায় ২০.৯ মিলিয়ন। যাদের গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের ইতিহাস রয়েছে তাদের মধ্যে ৫০ শতাংশকেই প্রসবের ৫-১০ বছর পর টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হতে দেখা যাচ্ছে।

বয়স বাড়ার সাথে সাথে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। তাই যেসব মহিলার বয়স ৪৫ বছরের বেশি এবং যাদের পূর্বে গর্ভকালীন সময়ে ডায়াবেটিসের ইতিহাস আছে তাদের পরবর্তীতে ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি অনেক বৃদ্ধি পায়।

অধিকাংশ ক্ষেত্রে, গর্ভকালীন সময়ে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীরা সাধারণত নিম্ন এবং মধ্যবিত্ত আয়ের। ফলে নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতেই গর্ভকালীন সময়ে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রায় ৮৫ শতাংশ নারীর ক্ষেত্রে জেসটেশনাল ডায়াবেটিস গর্ভাবস্থায় চিহ্নিত হচ্ছে, অন্যান্য ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে ৭.৪% নারী প্রথম গর্ভাবস্থায় চিহ্নিত হচ্ছে।

গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হলে তা সঠিক সময়ে নির্ণয় এবং নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া গেলে স্বাভাবিক প্রসব এবং মা ও নবজাতকের সুস্থ জীবন অনেকাংশে নিশ্চিত করা যায়। আর তা না হলে মা ও শিশু জীবনের ঝুঁকির মাত্রা বেড়ে যায়।

যেসব নারীদের গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি;  Source: SlideShare

যেসব নারীর গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে

  • প্রসূতির বয়স যদি ২৫ বছরের বেশি হয়।
  •  ওজন আধিক্য থাকে।
  • পরিবারের কারও যদি ডায়াবেটিস থাকে।
  • আগেও গর্ভকালীন সময়ে যদি ডায়াবেটিস হয়ে থাকে।
  • এর আগে কখনও গর্ভপাত বা গর্ভে থাকা শিশুর মৃত্যু হলে।
  • আগের শিশু জন্মানোর সময় নবজাতকের ওজন যদি চার কেজির বেশি হয়।

যেসব লক্ষণ দেখা দিলে একজন প্রসূতির ডায়াবেটিস হয়েছে কিনা পরীক্ষা করা প্রয়োজন

  •  ঘন ঘন পিপাসা লাগা
  •  ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া
  •  ক্লান্তি  লাগা
  • প্রস্রাবের ইনফেকশন হওয়া
  • চোখে ঝাপসা লাগা
  • বমি বমি ভাব
  • উচ্চ রক্তচাপ

গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে প্রসূতি মা ও নবজাতকের যেসব ঝুঁকি থাকে

  • গর্ভপাত
  • প্রিম্যাচিউর শিশুর জন্ম
  • অত্যাধিক ওজন নিয়ে শিশু জন্মানো
  • জন্মের পরও নবজাতকের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন- শরীরে ক্যালসিয়াম কমে যাওয়া, শরীরে শর্করার মাত্রা কম থাকা, শিশু দুর্বল হয়ে যাওয়া, নবজাতকের শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়া, মায়ের বুকের দুধ ঠিকমতো পান করতে না পারা ইত্যাদি।
  • অপরিণত জন্মের ফলে শারীরিক নানা ত্রুটি নিয়ে নবজাতককে জন্মাতে দেখা যায়। যেমন: হৃদপিন্ড ঠিকমতো গঠিত না হওয়া, ঠোঁট কাটা, তালু কাটা বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে।

প্রসূতি মায়ের গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হলে যেসব চিকিৎসা নিতে হয়

  • গর্ভাবস্থায় আক্রান্ত প্রসূতি মায়েদের খাবার তালিকায় এমন সব খাবার রাখতে হবে যাতে তার রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে। খাদ্য বাছাইয়ে রাখতে হবে কম চর্বি জাতীয় খাদ্য এবং বেশি পরিমাণে আঁশ যুক্ত খাদ্য।
  • এ সময় গর্ভবতী মায়েদের পুষ্টিগুণের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে এবং নিয়মমতো ও সময়মতো কিছুক্ষণ পর পর খাদ্যাভ্যাসে অভ্যস্ত হতে উৎসাহিত করতে হবে।
  • ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা
  • কোনো শারিরীক জটিলতা না থাকলে দৈনিক ত্রিশ মিনিট পর্যন্ত হাঁটার অভ্যাস করতে হবে।
  • যেসব মহিলার গর্ভবতী হওয়ার আগে ডায়াবেটিস আছে এবং মুখে খাওয়ার ঔষধ গ্রহণ করেন, তাদের ক্ষেত্রে খাওয়ার ওষুধ বন্ধ করে ইনসুলিন ব্যবহার শুরু করতে হবে। প্রথম থেকেই একজন গাইনোকোলজিস্ট এবং একজন ডায়াবেটোলজিস্টের কাছে রোগীকে নিয়মিত ফলোআপে থাকতে হবে। ঝুঁকি এড়াতে হাসপাতালে ডেলিভারি করাই উপযুক্ত।

গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং নিয়মিত পরীক্ষা করা অপরিহার্য; Source: ddk.nih.gov

ডায়াবেটিসে আক্রান্ত গর্ভবতী নারীর সুষম খাদ্যের ব্যবস্থা

(ক) গর্ভের শিশুর বৃদ্ধিতে সহায়তার জন্য এবং প্রসূতি মায়ের দেহের অতিরিক্ত শক্তির চাহিদা মেটানোর জন্য একজন  ডায়াবেটিসে আক্রান্ত গর্ভবতী মায়ের যেসব খাবার খাওয়া প্রয়োজন:

  • ডিম, দুধ অথবা ছানা/পনির
  • সবুজ শাকসব্জি
  • ডাল, বুট, মটর, বাদাম
  • টক জাতীয় ফল ও অন্যান্য ফল
  • মাছ, কাটা সহ ছোট মাছ ও মাংস
  • সামুদ্রিক মাছ, সয়াবিন তেল, ওটমিল

(খ) গর্ভাবস্থায় রক্তশূন্যতা প্রতিরোধে যেসব খাবার খাদ্যতালিকায় অবশ্য রাখা উচিত:

  • কলিজা, মাংস, মাছ
  • সিমের বিচি, বাদাম, মটর
  • কচু শাক, সবুজ শাক
  • ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ ফল, যেমন- জাম্বুরা, আমড়া, কমলা, আমলকি, ইত্যাদি

(গ) ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য প্রসূতি মায়ের ভাত, রুটি, মুড়ি, বিস্কুট ইত্যাদি পরিমিত খাওয়া উচিত।

(ঘ) একজন প্রসূতি মাকে তিন ঘন্টা পর পর দিনে ৫-৬ বার খাবার খেতে হয়। গর্ভাবস্থার ৬ মাস সময় থেকে সুষম খাবার খাওয়া অবশ্যই জরুরী। কারণ এ সময় গর্ভের শিশু দ্রুত বাড়তে থাকে।

প্রসবকালীন সময়ে প্রসূতির জন্য সুষম খাদ্য যা গর্ভের সন্তানের বৃদ্ধি ও সুস্থতা নিশ্চিত করে; Source: diabeteregime.com

প্রসব পরবর্তী যেসব ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন

ডায়াবেটিসে আক্রান্ত একজন মায়ের সন্তানধারণ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। ৯০ শতাংশ প্রসূতি মায়ের ক্ষেত্রে নবজাতকের জন্মের পরেই নারীদের রক্তে ডায়াবেটিসের শর্করার মাত্রা স্বাভাবিক অবস্থায় চলে আসে। যদি তা না আসে তখন রক্তে শর্করার মাত্রা পরিমাপ করার প্রয়োজন দেখা দেয়। সন্তান জন্মানোর পরে রক্তে শর্করার মাত্রা কমে আসলে ছয় থেকে আট সপ্তাহ পর শর্করার মাত্রা পরিমাপ করে নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন। এ সময় নবজাতককে বুকের দুধ খাওয়ানোর ব্যাপারে কোনো বাধা নেই। নবজাতকের জন্মের পরেই প্রতি ১ ঘন্টা পর পর নবজাতককে বুকের দুধ খাওয়ানো উচিৎ। এর ফলে নবজাতকের রক্তে গ্লুকোজের সঠিক মাত্রা নিশ্চিত হয়। রক্তে গ্লুকোজ কম থাকায় যেসব সমস্যা দেখা দিতে পারে তা থেকে রক্ষা পাওয়া সহজ হয়। তাছাড়া সন্তান জন্মদানের পর স্তন্যদান করালে মায়ের শারীরিক ওজনও নিয়ন্ত্রণে থাকে।

ডায়াবেটিসে আক্রান্ত গর্ভবতী মায়ের নিয়মিত হাঁটাচলা করা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে; Source: independent.ie

নারীদের ক্ষেত্রে টাইপ-২ ডায়াবেটিস

  • নারীদের ক্ষেত্রে যেসব কারণে টাইপ-২ ডায়াবেটিস হয় তার মধ্যে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হওয়ার এক প্রধান কারণ বলে চিহ্নিত করা গেছে। গর্ভাবস্থায় আক্রান্ত নারীদের ক্ষেত্রে টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা বহুলাংশে বেড়ে যায়। অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাত্রার কারণে অনেক নারীই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়।
  • শারীরিক পরিশ্রম না করা, মেদবহুল শরীর এবং খাবার বাছাইয়ে কোনো শৃঙ্খলা না থাকলে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়।
  • নিকট আত্মীয়, যেমন- মা-বাবা, ভাই-বোন কারো টাইপ-২ ডায়াবেটিস হলে পরবর্তী জীবনে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।
  • বয়স ৪০ এর ওপর হলে।
  • জাতিগত কারণে, বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকান বেশ কিছু অঞ্চলের নারীদের মধ্যে টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।

মেদবহুল শরীর টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি; Source:voat.co

টাইপ-২ ডায়াবেটিস প্রতিরোধ কৌশল

  • গর্ভাবস্থার পূর্বে এবং গর্ভকালীন সময়ে মাতৃত্বের স্বাস্থ্য ও পুষ্টির বিষয়ে লক্ষ্য রাখার পাশাপাশি নবজাতক এবং শৈশবকালীন সময়ে শিশুরও স্বাস্থ্য ও পুষ্টির বিষয়ে যথাযথ দৃষ্টি রাখতে হবে।
  • তরুণীদের প্রাথমিক অবস্থায় ডায়াবেটিস এবং গর্ভকালীন ডায়াবেটিস নির্ণয়ের মাধ্যমে গর্ভাবস্থায় প্রসবকালীন সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে স্বাস্থ্যঝুঁকি অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব।
  • সঠিক সময়ে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস সনাক্ত করা গেলে যথাযথ চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা যায় এবং প্রতিনিয়ত ফলোআপের মাধ্যমে প্রসবকালীন জটিলতা কমিয়ে আনা যায়।
  • স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের উন্নত প্রশিক্ষণ নিশ্চিতকরণের মধ্য দিয়ে গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস সনাক্তকরণ, যথাযথ চিকিৎসা, জীবনযাত্রার সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা এবং ডায়াবেটিস ফলোআপ সহজ হয়।

নারীদের টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ ; Source: LiberateHealth

একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারা গ্রহণের মাধ্যমে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের শতকরা ৭০ ভাগ প্রতিরোধ করা যায়। স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাত্রা না মেনে চলার কারণে শতকরা ৭০ ভাগ মানুষ অকালমৃত্যুর শিকার হয়। সন্তানের দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্যগত অবস্থার ক্ষেত্রে মায়ের প্রত্যক্ষ ভূমিকা রয়েছে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব মায়ের সম্পদ নিয়ন্ত্রণে পূর্ণ অধিকার রয়েছে, সেসব মায়েরা তাদের সন্তানের জন্য পর্যাপ্ত খাবার, শিশুর স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও শিক্ষার ব্যাপারে সর্বোচ্চ মান নির্ধারণ করে থাকেন। পরিবারের পুষ্টি এবং জীবনধারার অভ্যাস গড়ে তোলার বিষয়ে প্রধান ভূমিকা পালন করে থাকেন।

আগামীর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে প্রয়োজন পরিকল্পিত গর্ভধারণ; Source: YouTube

ভবিষ্যৎ প্রজন্মের উন্নত স্বাস্থ্য এবং স্বাস্থ্যসম্মত জীবনধারা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে নারীরা মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকেন। তাই আগামী প্রজন্মের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতকরণে পরিকল্পিত গর্ভধারণ আজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দেখা দিয়েছে। তাই সারা বিশ্বের সকল নারীর এই বিষয়ে সচেতন হওয়া খুবই প্রয়োজন।

ফিচার ইমেজ- Cove Dental Center

Related Articles