ময়মনসিংহে তিন দিন

মফস্বলের স্কুলের বন্ধুরা যখন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়, তখন থেকে তাদের দেখা হয় বছরে দু’বার। ঈদে এবং পূজায়, তা-ও যদি কেউ আবার বাসার পাট গুটিয়ে অন্য শহরে চলে না যায়। আমারও ব্যতিক্রম না। সবার এত কর্মব্যস্ত জীবন সপ্তাহান্তে বেঁচে আছি কিনা খোঁজ নেওয়া এবং দেওয়াটাই বন্ধুত্ব টিকিয়ে রাখার মাধ্যম। ভাবা যায়- বছর তিনেক আগেই সকাল ৭/৮ টা থেকে সন্ধ্যে পর্যন্ত একসাথেই থাকতাম! তাই নিয়তি এত সহজে মেনে নিতেও তো মন চায় না।

গত ছ’মাসে এক্সিডেন্টসহ বিভিন্ন বিপর্যয়ে কোনো ট্যুরই দেওয়া হলো না। সেমিস্টার ফাইনাল দেওয়ার সময় সিদ্ধান্ত নিলাম- বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া বান্ধবীর ওখানেই ঘুরতে যাব। যে বান্ধবীর সাথে যাব বলে ঠিক করেছিলাম, তার বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্যুরের সময় পড়ে গেল কুইজ। ভাগ্যক্রমে আরেক মেডিকেলপড়ুয়া বান্ধবীর প্রফ শেষ হয়েছিল, তাকে নিয়েই আমার ময়মনসিংহ-যাত্রা। 

অদ্ভুত সুন্দর বাকৃবি; Image Courtesy: Nusrat Jahan Nabila

তিন দিনকে কীভাবে সর্বোচ্চভাবে উপভোগ করা যায়, তার একটা পরিকল্পনা মাথায় ছিল। তবে যা চিন্তা করেছিলাম, তার চেয়ে কয়েকগুণ আনন্দের স্মৃতি নিয়ে এসেছি এটা স্বীকার করতেই হবে!

প্রথম দিন

সিরাজগঞ্জ থেকে ৮ টায় রওনা দিই বাকৃবির উদ্দেশ্যে। ১১.৩০ এর দিকে পৌঁছাই। দুপুরের খাওয়া সেরেই চললাম বাকৃবি দর্শনে। এত জায়গা, এত গাছ, এত মানুষ, এত খাবার! বোটানিক্যাল গার্ডেন, জার্ম প্লাজা, কৃষি এবং পশুপালন কেন্দ্র ঘুরে আসলাম জব্বারের মোড়ে। সেখানে পেয়ে যাই এখন পর্যন্ত আমার খাওয়া সেরা ব্ল্যাকবেরি জুস!

বোটানিক্যাল গার্ডেন; Image Courtesy: Nusrat Jahan Nabila
Image Courtesy: Nusrat Jahan Nabila
Image Courtesy: Nusrat Jahan Nabila

এরপর বেলাশেষে ব্রহ্মপুত্র নদ ঘুরে হলে ফেরা। নদে আমরা ইঞ্জিনচালিত নৌকা নেইনি, যার ফলে এত শান্ত ছিল যে অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছিল। ঘরে ফিরে প্রস্তুতি শুরু হয় দ্বিতীয় দিনের।

দ্বিতীয় দিন

সবচেয়ে কষ্টকর এবং আনন্দের ছিল বোধহয় এই দ্বিতীয় দিনই। ভোর চারটায় উঠে ছয়টার ট্রেন ধরার জন্য তৈরি হই। গন্তব্য বিরিশিরি।

Image Courtesy: Nusrat Jahan Nabila

ময়মনসিংহ রেল স্টেশন থেকে দুই ঘন্টার পথ জারিয়া, এবং জারিয়া থেকে অটোতে আরো প্রায় দেড়/দুই ঘন্টা যাওয়ার পর বিরিশিরি। সেই বিখ্যাত গৌরীপুর জংশন দেখা!

Image Courtesy: Nusrat Jahan Nabila

যে এক্সিডেন্টের কথা বলছিলাম, সেটি ছিল হাঁটুতে ডিজলোকেশন। কিন্তু সাদা পাহাড় এবং ওরকম স্বচ্ছ পানি দেখে ভয় তেমন আর থাকে না। প্রচুর মানুষের ভিড় ছিল। এরই ফাঁকে ছবি তুলে নেওয়ার চেষ্টা করি। 

Image Courtesy: Nusrat Jahan Nabila

বিরিশিরি নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুর উপজেলার একটি গ্রাম। চীনামাটির পাহাড় ও নীল পানির হ্রদ রয়েছে বিরিশিরিতে, যা দেখার উদ্দেশ্যেই আমাদের যাওয়া। একটি বড় চূড়া এবং একটি ছোট চূড়া ছিল। হ্রদের পানি এত সুন্দর নীল যে একেক সময় একেক স্মৃতির কথা মনে পড়ে! নীল জলের উৎস সোমেশ্বরী নদী। যাওয়ার পথে আমরা সোমেশ্বরী নদী এবং কংস নদ উভয়েরই দেখা পেয়েছিলাম।

Image Courtesy: Nusrat Jahan Nabila

তৃতীয় দিন

আজ ময়মনসিংহ শহরেই থাকা ভার্সিটির দুই বন্ধুর সাথে ক্যাম্পাস ঘুরে চলে যাই শহরে। এবারের গন্তব্য শশীলজ।

ময়মনসিংহ শহরের বুকে অনন্য এক স্থাপত্যশৈলী শশীলজের জমিদার বাড়ি। ছবির চেয়েও সুন্দর। ঢুকতেই মূর্তি এবং জমিদার বাড়ির সম্পূর্ণ ভিউ আপনাকে আকৃষ্ট করবেই!

শশীলজের বিকেল! Image Courtesy: Nusrat Jahan Nabila

এরপর জয়নুল আবেদিন পার্কে কিছুটা ঘুরে শহরের বিভিন্ন প্রান্ত দেখা হয়, খাওয়াদাওয়া আর আড্ডা চলতে থাকে। ময়মনসিংহ শহরের আলাদা একটি উষ্ণতা আছে। জ্যামটা বাদ দিলে হলুদ বাতি, পুরনো স্থাপত্য কিংবা বন্ধুদের সাহচর্যের জন্যই হয়তো একদম সুররিয়েল লাগছিল!

ক্যাম্পাসে ফিরে কে. আর. মোড়ের আড্ডা, ট্যুর শেষ হয়ে যাচ্ছে বলে কিছুটা মন খারাপের উঁকিঝুকি, একসাথে বসে গান গাওয়া দিয়ে শেষ হলো এই দিন!

পরদিন সকালে উঠে চলে আসি বাস স্টেশনে। বাসা থেকে একবার বের হলে নাকি মানুষ যাযাবর হয়ে যায়, অন্তত ঘরে তো আর ফেরা হয় না। তাই যেখানেই থাকি, যেভাবেই থাকি, পরিচয় হওয়া সবাইকে আমন্ত্রণ জানাই আমার শহরে! “একদিন ছুটি হবে, অনেক দূরে যাব“- এই অপেক্ষায়, কারণ ছুটিটাও তো সবার একই দিনে পড়তে হবে!

Language: Bangla
Topic: A three-days-long travel story to Mymensingh

Related Articles

Exit mobile version