বিশ্ব কি মাস তিনেক আগেও ধারণা করতে পেরেছিল যে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র এক ভাইরাসের আক্রমণে কাবু হয়ে পড়বে পুরো দুনিয়া? অদৃশ্য এ শত্রুর কবলে এখন আমাদের বাংলাদেশও। করোনার মোকাবেলায় এখন দরকার আপনার সাহায্য, পাশে দাঁড়ান ডাক্তারদের, যেন তারা আপনার শুশ্রূষাটুকু করতে পারেন নিরাপদে।
প্রচণ্ড ঘনবসতির এ দেশে ক্রমান্বয়ে বাড়ছে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। সে তুলনায় ডাক্তার রয়েছেন খুবই কম। আর যারা আছেন তাদেরও রয়েছে জীবনের প্রচণ্ড ঝুঁকি, ইতোমধ্যে আমরা দেখতে পাচ্ছি ডাক্তারদের আক্রান্ত হওয়া এবং কোয়ারেন্টিনের খবর। রোগীদের সঠিক চিকিৎসার জন্য এখন যেটি খুব দরকার তা হলো ডাক্তারদের ব্যক্তিগত সুরক্ষার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে পিপিই (PPE) বা পারসোনাল প্রটেক্টিভ ইকুইপমেন্ট (Personal Protective Equipment)। ফলে ডাক্তাররা যেতে রোগীদের নির্ভয়ে চিকিৎসা দিতে পারবেন। আপনার প্রয়োজনের জন্যই এগিয়ে আসুন এ উদ্যোগ সফল করতে।
এ মুহূর্তে বাইরে থেকে পিপিই কিনে আনাটা খুবই সময়সাপেক্ষ এবং ব্যয়সাপেক্ষ। তাই জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজন দেশেই স্থানীয়ভাবে ওয়ানটাইম-ইউজ পিপিই বানিয়ে ডাক্তারদের মাঝে বিতরণ করা।
‘মানুষ মানুষের জন্য‘ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে বুয়েটের কিছু প্রাক্তন শিক্ষার্থী এবং ‘পে ইট ফরওয়ার্ড‘ নামক আরও একটি ফাউন্ডেশন যৌথভাবে ডাক্তারদের জন্য পিপিই বানানোর উদ্যোগ নেয়। পাশে এসে দাঁড়ায় একে একে অরুণাচল ট্রাস্ট, রোটারি ক্লাব ঢাকা নর্থওয়েস্ট (সাথে আরও কিছু রোটারি ক্লাব) এবং বিসিএস ট্যাক্সেশন অ্যাসোসিয়েশন। এ উদ্যোগের মেডিক্যাল পিপিই বানানোর লক্ষ্যগুলো হলো-
১) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন মোতাবেক মানসম্পন্ন পিপিই
২) স্বল্প খরচ
৩) দ্রুত ডেলিভারি
হাতে সময় খুব কম থাকায় জরুরি অবস্থা মোকাবেলার জন্য স্থানীয় কাঁচামাল দিয়েই কাজ শুরু করা হয়, এ ব্যাপারে এগিয়ে আসে মার্ক্স অ্যান্ড স্পেন্সার, তাদের স্থানীয় ফ্যাক্টরিতে পিপিইগুলো সেলাই করে দেয়ার প্রস্তাব দেন তারা। এতগুলো টাকা সংগ্রহের গুরুদায়িত্ব নিয়ে মাঠে নামবার জন্য ধন্যবাদ প্রাপ্য মানুষের জন্য মানুষ ফাউন্ডেশনের। আর ধন্যবাদ পে ইট ফরওয়ার্ড’-কেও।
এ প্রজেক্টের নমুনাটি ডিজিএইচএস কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছে, রয়েছে বিজিএমইএ’র সমর্থনও। এ মুহূর্তে মাত্র ২৫,০০০ পিপিই প্রস্তুতের ফান্ড সংগ্রহ করা হয়েছে যা এসেছে একটু আগে উল্লেখ করা উদ্যোক্তাদের কাছ থেকেই। এগুলো দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেয়া হবে ডাক্তার ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের মাঝে। কিন্তু এ সংখ্যাটা খুবই অল্প। মাত্র একবার করে ব্যবহার উপযোগী হওয়ায় ক’দিনেই ফুরিয়ে যাবে এ ক’টি পিপিই। দেশব্যাপী মোটামুটি ৯০,০০০ ডাক্তার আর তাদের সাথে থাকা প্রতিজনের জন্য অন্তত তিনজন করেও যদি সহকারী বা নার্স থেকে থাকেন, তবে সবার জন্য ব্যবহার-উপযোগী পিপিই সরবরাহ করতে গেলে সে সংখ্যাটা প্রায় চার লাখের মতো দাঁড়ায়!
আর এ বিপুল সংখ্যক পিপিই দরকার আর্থিক সাহায্য। আপনারই সাহায্য।
এক সেট পিপিইতে থাকছে গাউন, হ্যান্ডগ্লাভস, মাস্ক, জুতোর কভার ও গগলস। এই পুরো সেট বানাতে খরচ পড়ছে এখন প্রায় ১,০০০ টাকা করে। বর্তমান লকডাউন পরিস্থিতির কারণে খরচ বরং বেড়েই চলেছে; কিন্তু এতকিছুর পরেও থেমে নেই পিপিই বানাবার কাজ। যেহেতু এ উদ্যোগ থেকে অর্থলাভ করবার উদ্দেশ্য কারো নেই, তাই এ টাকাতেই ফ্রি বিতরণ করা হবে পিপিইগুলো ডাক্তার ও নার্সদের মাঝে। কিন্তু ভবিষ্যতে মান বাড়ানো দরকার পড়লে বাড়তে পারে এ খরচ।
এ উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য আমাদের স্বাস্থ্যকর্মীদেরকে বিনা পয়সায় সুরক্ষার যোগান দেয়া, তাদের হাতে পিপিইগুলো পৌঁছে দেয়া, ফলে রোগীরা নির্দ্বিধায় চিকিৎসা পাবেন। এজন্যই দরকার বড়সড়ো একটি ফান্ড। প্রায় চার লাখ পিপিই প্রস্তুতের জন্য দরকার ৩০ কোটি টাকারও বেশি! এ পর্যন্ত সবে ১ কোটি ৭০ লাখ টাকার মতো সংগ্রহ করা হয়েছে। যত দ্রুত টাকাটা উত্তোলন করা যায়, তত দ্রুত পৌঁছে দেয়া যাবে পিপিইগুলো।
রোর বাংলার প্রায় ২০ লাখ পাঠকের কাছে তাই এ আর্তি। আপনার সাধ্যমতো অর্থদান করুন, জীবন বাঁচাতে সাহায্য করুন ডাক্তারদেরকে।