লুজলি কাপল্ড টেকনোলজিস নিবেদিত পিওনেরস ৪.০ একটি বিজনেস কেস কম্পিটিশন যা প্রতি বছর বুয়েট অন্ট্রাপ্রেনারশিপ ডেভেলপমেন্ট ক্লাব কর্তৃক আয়োজিত হয়। এটি ক্লাবটির ফ্ল্যাগশীপ ইভেন্ট। এবার এই ইভেন্টটি টানা চতুর্থবারের মতো আয়োজিত হয়েছে।
একাডেমিক পড়াশোনা বাদেও বর্তমান প্রতিযোগিতামুখর যুগে কর্মক্ষেত্রে সদ্য বের হওয়া একজন গ্র্যাজুয়েটকে মাপা হয় তার সৃজনশীলতা, পরিস্থিতির ক্রিটিক্যাল অ্যানালাইসিস করার সক্ষমতা এবং মূল্যবোধ বজায় রেখে গঠনমূলক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারার দক্ষতা দেখে। ‘পিওনেরস ৪.০’ বর্তমান তরুণ সমাজকে এমন একটি প্লাটফর্মে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেয় যেখানে তারা এ সমস্ত বিষয়ে নিজেদের দক্ষতা যাচাইয়ের সুযোগ পায় এবং একইসাথে তাদের নেটওয়ার্ক বাড়াতে পারে।
বুয়েট অন্ট্রাপ্রেনারশিপ ডেভেলপমেন্ট ক্লাব
বুয়েট অন্ট্রাপ্রেনারশিপ ডেভেলপমেন্ট ক্লাব শিক্ষার্থীদের দ্বারা পরিচালিত একটি ক্লাব যেটি ভিন্ন ভিন্ন চিন্তা-চেতনার মানুষজনকে একসাথে নিয়ে আসছে, যাদের একমাত্র আদর্শ নিজেদের ইচ্ছাশক্তির উপর ভিত্তি করে জীবন চালনা করা। ক্লাবটির অন্যতম মূল লক্ষ্য বুয়েটের শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্যোক্তা হওয়ার মানসিকতা তৈরি করা এবং ক্যাম্পাসে উদ্যোক্তাদের জন্য একটি পরিবেশ তৈরি করা।
বর্তমান বিশ্বে প্রযুক্তির বৈপ্লবিক সাফল্য অনিবার্য এবং প্রযুক্তির সাহায্য ও যথাযথ ব্যবহার ছাড়া কোনো জাতিই উন্নতি লাভ করতে পারবে না। তাই সময়ের চাহিদা এমন চিন্তা-চেতনার মানুষদের যারা তাদের সৃজনশীলতা এবং উদ্ভাবনী শক্তি দিয়ে নিজ নিজ জাতিকে নেতৃত্ব দেবে। আর অর্থনৈতিক দিক দিয়ে এশিয়ার অন্যতম ভবিষ্যত পরাশক্তি হিসেবে বাংলাদেশে এ ধরনের তরুণদের আরো বেশি প্রয়োজন। তাই বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ, বুয়েট অন্ট্রাপ্রেনারশিপ ডেভেলপমেন্ট ক্লাব, দেশের অন্যতম মেধাবী ও সৃজনশীল তরুণদের নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে, যাতে তারা তাদের ভেতরে উদ্যোক্তা হওয়ার যে সুপ্ত প্রতিভা রয়েছে তা বিকশিত করতে পারে, নেতৃত্বদানে পারদর্শী হয়ে, নিত্যনতুন উদ্ভাবনের মাধ্যমে দেশ ও জাতির কল্যাণে সর্বদা কাজ করতে পারে এবং দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।
পিওনেরস
পিওনেরস ২০১৬ সালে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হয় এবং তখন এটি শুধুমাত্র বুয়েটের শিক্ষার্থীদের জন্যই আয়োজন করা হয়। প্রথমবারের মতো বুয়েট প্রাঙ্গণে আয়োজিত এই বিজনেস কেস কম্পিটিশনে বিশ্ববিদ্যালয়টির ৬০০ শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। তুমুল আলোড়ন সৃষ্টিকারী এই ইভেন্টের আগমনে ক্লাসরুম, লাইব্রেরি, হোস্টেল, এবং ক্যাফেটেরিয়ায় শিক্ষার্থীদের দেখা যায় বিজনেস কেস সলভ করতে।
এত বিশাল পরিমাণে সাড়া দেখে ২০১৭ সালে আরও বড় পরিসরে পিওনেরস ২.০ এর আয়োজন করা হয়। এবার দেশের যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রতিযোগিতাটি উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। ২৫টিরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দু’হাজারের মতো শিক্ষার্থী তখন অংশ নেয়।
পিওনেরস ৩.০ ছিল বুয়েটে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত স্টার্টআপভিত্তিক কেস সলভিং কম্পিটিশন। তরুণদের মধ্যে তা বড় রকমের আলোড়ন তোলে এবং ২,৮০০ এর অধিক শিক্ষার্থী এতে অংশ নেয়। এতগুলো দল থেকে সর্বোত্তম দলগুলো বাছাই করার জন্য স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের উচ্চপর্যায়ে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বিজয়ী প্রথম তিনটি দলকে মোট ১,৭৫,০০০ টাকা পুরস্কার হিসেবে প্রদান করা হয়।
পিওনেরস ৪.০
টানা চতুর্থবারের মতো আবারও পিওনেরস আয়োজিত হয়েছে বুয়েট অন্ট্রাপ্রেনারশিপ ডেভেলপমেন্ট ক্লাবের উদ্যোগে। এবারের মূল উদ্দেশ্য ছিল প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীদের নতুন নতুন আইডিয়া নিয়ে ভাবতে এবং চিন্তাশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করা। নতুন কোনো ব্যবসায় যেসমস্ত সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়, তাদেরকে সেসবের সমাধান বের করতে বলা হয়। এর চূড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে উদ্যোক্তা বাড়ানো এবং অংশগ্রহণকারীদের মাথায় নতুন চিন্তার উদ্রেক ঘটানো। সবাই পিওনেরস ৪.০ প্রতিযোগিতায় জিতবে না ঠিক, তবে এখানে তারা যেন সামনে এগোতে পারে সেই ব্যাপারে সাহায্য করাতেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ পিওনেরস ৪.০ একটি গতানুগতিক কেস কম্পিটিশনের বদলে নতুন নতুন উদ্যোগ আর উদ্ভাবনকেন্দ্রিক ছিল।
ইভেন্টটির রেজিস্ট্রেশন শুরু হয়েছিল ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ থেকে এবং শেষ হয় ৫ মার্চ, ২০২০ এ। এতে ফাইনাল রাউন্ডসহ মোট তিনটি রাউন্ড ছিল এবং ফাইনাল রাউন্ডটি ৯ অক্টোবর, ২০২০ এ অনুষ্ঠিত হয়। এক্ষেত্রে প্রথম রাউন্ডটি ছিল একটি অনলাইন রাউন্ড। এর আগে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করা টিমগুলোকে নিয়ে ৪ মার্চ বুয়েট ক্যাম্পাসে একটি ওয়ার্কশপ অনুষ্ঠিত হয়। ইভেন্টটির দ্বিতীয় এবং ফাইনাল রাউন্ড সম্পূর্ণ অনলাইন প্লাটফর্মে অনুষ্ঠিত হয় চলমান কোভিড-১৯ মহামারির কারণে।
এটি ছিল একটি দলভিত্তিক প্রতিযোগিতা। এতে দেশের যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বনিম্ন ৩ এবং সর্বোচ্চ ৪ জন শিক্ষার্থী মিলে একটি দল গঠন করেছে, এমনকি দলের সদস্য ভিন্ন ভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়েরও ছিল। দ্বিতীয় রাউন্ড শেষে সাতটি টিম- অ্যাজটেক্স, টিম ফ্রেশার্স, স্মেলস লাইক টিম স্পিরিট, দ্য এসেস, গ্যালাক্সি ফোর, টিম ক্যাপিটালিস্টস এবং পোলারিস ফাইনাল রাউন্ডে জায়গা করে নেয়।
এই সুপার সেভেনকে ফাইনাল রাউন্ডের জন্য তাদের আইডিয়া নিয়ে একটি অ্যাড ক্যাম্পেইনের আয়োজন করতে বলা হয় তাদের ফেসবুক পেজের মাধ্যমে। উদ্দেশ্য ছিল তাদের আইডিয়া সাধারণ মানুষদের কাছে কতটা গ্রহণযোগ্যতা পায় তা দেখা। প্রতিটা দলকে ৩টি ভাগে মূল্যায়ন করা হয়। উক্ত অ্যাড ক্যাম্পেইনের জন্য বরাদ্দ ছিল ৩০% নম্বর। এছাড়াও প্রতিটি দলের জন্য একজন মেন্টর নিযুক্ত করা হয় যেন তারা তাদের আইডিয়ার ডেভেলপমেন্ট নিয়ে যথাযথ দিকনির্দেশনা পেতে পারে। এক্ষেত্রে মেন্টরদের রিভিউয়ের জন্য আরও ২০% নম্বর বরাদ্দ রাখা হয়। অবশিষ্ট ৫০% নম্বর বরাদ্দ ছিল সম্মানিত জ্যুরি বোর্ডের সামনে তাদের আইডিয়ার প্রেজেন্টেশনের জন্য।
জ্যুরি বোর্ডে ছিলেন যারিফ মুনির (ম্যানেজিং ডিরেক্টর, বোস্টন কনসাল্টিং গ্রুপ), তানভীর এহসানুর রহমান (চিফ টেকনিক্যাল অফিসার, নভোটেল এন্ড নভোকম লিমিটেড, এবং সিটিও, ইন্টারক্লাউড লিমিটেড), টনি মাইকেল গোমেজ (ডিরেক্টর অভ টেকনিক্যাল প্রোগ্রাম, ওয়ার্ল্ড ভিশন), ফিরোজ মো. জাহিদুর রহমান (সিইও, লুজলি কাপল্ড টেকনোলজিস), আশফিন মোয়েদ (পার্টনার, র্যাজর ক্যাপিটাল), এবং তাউসিফ ইশতিয়াক (প্রিন্সিপাল, বোস্টন কনসাল্টিং গ্রুপ)।
ফাইনাল প্রেজেন্টেশন এবং সার্বিক মূল্যায়ন শেষে দ্য এসেস চ্যাম্পিয়নের জায়গা দখল করে নেয়, এবং জিতে নেয় ১,০০,০০০ টাকা ও লুজলি কাপল্ড টেকনোলজিস-এ তিন মাসের ইন্টার্নশিপের সুযোগ। পাশাপাশি টিম ক্যাপিটালিস্টস এবং টিম পোলারিস যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান দখল করে এবং জিতে নেয় যথাক্রমে ৫০,০০০ টাকা ও ২৫,০০০ টাকা।
তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য আয়োজিত চমৎকার এই প্রতিযোগিতায় অন্যতম মিডিয়া পার্টনার হিসেবে ছিল রোর বাংলা।