সাইরাস: প্রাচীন পারস্যের পিতা

স্বীয় প্রজার প্রতি তাঁর আচরণ ছিল স্নেহপূর্ণ এবং সম্মানজনক। যেন তারা তাঁর নিজের সন্তান। প্রজারাও তাঁকে পিতা হিসেবেই মানতো। আর কে আছে যে একটি সাম্রাজ্য উপড়ে ফেলার পরেও ‘পিতা’ উপাধি নিয়ে মরতে পেরেছে? তা-ও আবার তাদের কাছ থেকেই, যাদের পদানত করে তিনি নিজের অধীনে এনেছেন। সুতরাং এটা স্পষ্ট যে, তিনি এসেছিলেন কিছু নেবার জন্য না; দেবার জন্য।

কথাটা বলেছেন প্রাচীন গ্রিসের দার্শনিক ও ঐতিহাসিক জেনোফোন (৪৩১-৩৫৪ খ্রি.পূ.)। নাহ, গ্রিসের কাউকে নিয়ে না। পারস্যের আকিমেনিড সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা সাইরাসের প্রসঙ্গে। শুধু কী তা-ই! সাইরাসকে নিয়ে রীতিমতো জীবনীগ্রন্থ লিখে ফেলেছেন তিনি সাইরোপেডিয়া (Cyropaedia) নামে। তার গুণে মুগ্ধ ছিলেন স্বয়ং আলেকজান্ডার। পরবর্তীতে থমাস জেফারসন, মুহাম্মদ রেজা শাহ পাহলভি এবং ডেভিড বেন গুরিয়নের মতো অনেকেই তাকে মনে করতেন নিজেদের আদর্শ হিসেবে।

সাইরাস: পারস্য সাম্রাজ্যের প্রথম সম্রাট; © livius.org

পারসিকদের কাছে তিনি পিতা এবং ব্যাবিলনীয়দের কাছে মুক্তিদাতা। সাইরাসই একমাত্র অ-ইহুদি, যাকে বাইবেলে মেসিয়াহ বা স্রষ্টার প্রতিশ্রুত প্রতিনিধি বলে উল্লেখ করা হয়েছে (ইসায়াহ: ৪৫:১)। মুসলিমদের একটি অংশ তাকে কোরআন শরীফে বর্ণিত যুল কারনাইন বলে দাবি করে। সমাজ, সংস্কার, রাজনীতি ও বিশ্বাসের ইতিহাসে এই মানুষটার আগমন প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্যের উপর যে দাগ ফেলে গেছে, তা একা আর কেউ পারেনি। কিন্তু কে এই সাইরাস?   

সাইরাস পরিচিতি

মিডিয়া প্রচণ্ড শক্তিশালী রাজ্য এবং তার রাজধানী একবাটানা। শাসক আসটিয়াজেস হঠাৎ অদ্ভুত এক স্বপ্ন দেখলেন। ব্যাখ্যার জন্য জ্যোতিষ ডেকে আনা হলো। তারা জানালো ভয়াবহ দুঃসংবাদ। তার নিজের মেয়ের গর্ভে এমন এক সন্তান তিলে তিলে বেড়ে উঠছে, যে তার নানাকে ক্ষমতাচ্যূত করবে। সুতরাং আসটিয়াজেস তার কন্যা ম্যানডেনকে পারস্য থেকে ডেকে আনালেন। সন্তান জন্ম নেবার সাথে সাথে আদেশ দিলেন হত্যা করার। দায়িত্বটা দেয়া হয় হারপ্যাজাসকে। হারপ্যাজাস আবার সন্তানকে দিয়ে দেয় মিথরাডেটেস নামে জনৈক রাখালের কাছে। রাখাল এবং তার বউ অত্যন্ত যত্নের সাথে শিশুটিকে লালনপালন করে। দশ বছর বছর পর আসটিয়াজেস ঘটনাক্রমে নিজের নাতিকে চিনতে পারেন এবং মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেন। খুব শীঘ্রই ছেলেটি জ্যোতিষদের বাণী সত্য করে দেয়। 

সাইরাসকে হত্যার নির্দেশ দিয়ে পাঠান আসটিয়াজেস, © wikipedia

বস্তুত তিনি দ্বিতীয় সাইরাস। জন্ম ৬০০ খ্রি.পূ. এবং মৃত্যু ৫৩০ খ্রি.পূ.; আর পিতার পরে উত্তরাধিকার হিসাবে মনোনীত হন ৫৫৯ খ্রিস্টপূর্বের দিকে। ইতিহাসে পরিচিত সাইরাস দ্য গ্রেট নামে। প্রাচীন পারস্যের গোত্রীয় প্রশাসন ও আধিপত্য ভেঙে স্থাপন করেন আকিমেনিড সাম্রাজ্য। পূর্ব পুরুষেরা কয়েক প্রজন্ম ধরে পারসিক গোত্রগুলোকে শাসন করে আসছিল। ব্যাবিলনে প্রাপ্ত সাইরাস সিলিন্ডার থেকে একটা ধারণা পাওয়া যায় তার আদি পুরুষ নিয়ে। বলা হয়েছে,

আমি আনশানের মহান শাসক ক্যামবিসেসের পুত্র এবং আনশানের মহান শাসক সাইরাসের নাতি, … এমন একটা বংশ, যা সবসময় রাজত্ব করেছে। (Bergen, Page: 197-98)

গ্রিসের ঐতিহাসিক হেরোডোটাস এবং জেনোফোন। দুজনেই বিশ্বাস করতেন সাইরাসের দেহে রাজকীয় রক্ত প্রবাহের কথা। পারসিক সূত্রকে অনুসরণ করে তাদের দাবি, পারস্যের ক্যামবিসেস ও মিডিয়ার রাজকন্যা ম্যানডেনের সন্তান সাইরাস। পরবর্তী বেশিরভাগ ঐতিহাসিক মেনে নেন এই বর্ণনা, যদিও মতভেদ প্রকাশ করেছেন কেউ কেউ।

মিডিয়া অধিকার

পিতার পর উত্তরাধিকার হিসাবে পারসিক প্যাসারগাদেই গোত্রের অধিপতি হন সাইরাস। আকিমেনিড বংশটা ছিলো মূলত তারই অন্তর্ভুক্ত। সে যা-ই হোক, প্রথমদিকে পিতার মতো তিনি মিডিয়ার রাজা ও নানা আসটিয়াজেসের সাথে মিত্রতার সম্পর্ক বজায় রাখেন। কিন্তু ৫৫৩ খ্রিস্টপূর্বের দিকে বিদ্রোহ করেন। সমঝোতার চেষ্টা ব্যর্থ হলে উভয়পক্ষে মুখোমুখি দুই দফায় মোকাবেলা হয়। সাইরাস বিজয়ী হন এবং আসটিয়াজেসকে বন্দী করা হয়। প্রথমবারের যুদ্ধ দুই দিন স্থায়ী হয়। বিজয়ী হন আসটিয়াজেস। প্যারাগাদেইতে দ্বিতীয়বার মুখোমুখি হলে জ্বলে ওঠে সাইরাসের বাহিনী। আসটিয়াজেস রাজধানী একবাটানায় পালিয়ে গেলেও দ্রুত আত্মসমর্পণ করেন। সাইরাস রাজকোষ একবাটানা থেকে প্যাসারগাদেইতে স্থানান্তর করার নির্দেশ দেন। 

সাইরাসের কাছে বন্দী হিসেবে; © iroon.com

সাইরোপেডিয়ার বর্ণনামতে, ওই সময়ে মিডিয়ায় আসটিয়াজেস না, বরং তার পুত্র সিয়াক্সারেস রাজা ছিলেন। তার মেয়েকে সাইরাস বিয়ে করেন এবং অনেকটা যৌতুক হিসেবে মিডিয়ার আধিপত্য পান। আবার এটাও তার দাবি- মিডিয়ার রাজধানী একবাটানা অধিকার করা হয়েছে শক্তি দিয়ে। ব্যাবিলনীয় উৎস থেকে প্রাপ্ত তথ্য এক্ষেত্রে বর্ণনামূলক।

আসটিয়াজেস আনশানদের রাজা কুরুশ (সাইরাস)- এর বিরুদ্ধে বিজয়ের জন্য অগ্রসর হন। যুদ্ধে আসটিয়াজেসের বাহিনীই তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে বসে। তাকে যুদ্ধবন্দী হিসেবে নেয়া হয়। তারপর কুরুশ একবাটানা থেকে গনিমত আনশানে পাঠানোর নির্দেশনা দেন। (Grayson, 1975a, Page: 106)

প্যাসারগাদেই নির্মাণ

আসটিয়াজেসের বিরুদ্ধে বিজয় অর্জন সাইরাসকে নতুন উদ্যমে রাজ্য গঠনে আত্মনিয়োগে উৎসাহী করে। যেখানে একসময় যুদ্ধ হয়েছিল, সেই প্যাসারগাদেইতে প্রতিষ্ঠিত হয় শহর। আকিমেনিড সাম্রাজ্যের প্রথম প্রাতিষ্ঠানিক রাজধানী। তথাকথিত শহরের মতো ছিল না যদিও। উপাসনা কিংবা আচারের জন্য শহরটিতে গড়ে উঠেছিল বিশেষ নির্মাণ। তার মধ্যে উপাসনাগার, আবাসিক ভবন, সম্মেলন কেন্দ্র এবং সবকিছুর সাথে সাইরাস ও পুত্র ক্যামবিসেসের সমাধি। সৌন্দর্য বর্ধনে আনা হয় এসেরীয় ধারার স্থাপত্য এবং আয়োনীয় ধারার গাঁথুনি। সাইরাসের সমাধিতে মেসোপটেমীয় বৈশিষ্ট্যপূর্ণ কক্ষের দেখা পাওয়া যায়। খুব অল্প সময়ের জন্য ৫১৫ খ্রি.পূ. পর্যন্ত বিকাশ লাভ স্থিত ছিল প্যাসারগাদেইয়ের। 

প্যাসারগাদেইকে সাজানো হয়েছিল সর্বোচ্চ সৌন্দর্য দিয়ে; © ancient.eu

লিডিয়া বিজয়

লিডিয়ার রাজা ক্রিসাস। রাজ্যের সীমানা বাড়ানোর জন্য একেবারে মুখিয়ে আছেন। সুদূর গ্রিসে ডেলফির মন্দিরে উপঢৌকন পাঠালেন। তাছাড়া আসটাইজেসের অপমানের প্রতিশোধ নেয়াও তার উদ্দেশ্য ছিল। বলা বাহুল্য, আসটাইজেস ছিলেন ক্রিসাসের শ্যালক। ডেলফির মন্দিরে জানানো হলো তার পারস্য আক্রমণের ইচ্ছার কথা। উত্তর জানানো হয় রহস্যজনকভাবে।

যদি ক্রিসাস হালিস নদী অতিক্রম করেন, তবে তিনি একটা বিশাল সাম্রাজ্যকে ধ্বংস করবেন। তবে উচিৎ হবে গ্রিক রাষ্ট্রগুলোর মধ্য থেকে শক্তিশালীকে খুঁজে বের করে তার সাথে মিত্রতা করা।

ডেলফির কথা শুনে ক্রিসাস রীতিমতো খুশিতে উন্মাদ। আক্রমণের জন্য মরিয়া হয়ে রওনা দিল। হালিস নদী অতিক্রম করে মুখোমুখি হলো সাইরাসের। ফলাফল- শোচনীয় পরাজয়। 

ক্রিসাসের সম্পদ পরিণত হয়েছিল প্রবাদে, © ancientworldmagazine.com

অনেক পরে ক্রিসাস ডেলফির মন্দিরে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, তাকে কেন আশ্বাস দেয়া হলো? কেন মিথ্যা বলা হলো? ডেলফির উত্তর ছিলো অনেকটা এরকম-

বলা হয়েছে একটা বিশাল সাম্রাজ্য ধ্বংস করবেন ক্রিসাস, এবং তাই হয়েছে। ক্রিসাস তার নিজের সাম্রাজ্য ধ্বংস করেছে।

লিডিয়া বিজয় নিয়ে প্রায় প্রবাদে পরিণত হওয়া এই কাহিনীটি হেরোডোটাস আমাদের সামনে বর্ণনা করেন। সে যা-ই হোক, সাইরাস লিডিয়া জয় করেন একবাটানা ও ব্যাবিলন অভিযানের মাঝামাঝি সময়ে। হেরোডোটাসের বর্ণনা থেকে এটা স্পষ্ট যে, যুদ্ধ মূলত ক্রিসাস শুরু করেছে। ক্রিসাস হালিস নদী অতিক্রম করে টেরিয়াতে লুটপাট করে। টেরিয়াতে যুদ্ধ শুরু হলেও একরকম ক্রিসাস পরবর্তী শীতের জন্য ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেন। সাইরাস দ্রুত এগিয়ে গিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো থিমব্রাতে মুখোমুখি হন। ১৪ দিনের অবরোধ শেষে ক্রিসাস রাজধানী সার্দিসে মাথা নত করে। প্রথমে ক্রিসাসকে হত্যা করতে চাইলেও পরে তার প্রবীণতা দেখে নিজের রাজনৈতিক পরামর্শক নিযুক্ত করেন। লিডিয়ার রাজকোষের জন্য সাইরাস একজন প্যাকটিয়েস নিযুক্ত করেন। কিন্তু সে বিদ্রোহ প্রস্তুত করতে থাকে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সাথে নিয়ে। ধীরে ধীরে হারপ্যাজাস লাইসিয়া, সাইলেসিয়া, ফিনিশিয়া প্রভৃতি অঞ্চল জয়ের মাধ্যমে এশিয়া মাইনরে পারসিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে।

অন্যান্য অভিযান

৫৪৯-৪৮ খ্রিস্টপূর্বের মধ্যে সাইরাস সমগ্র পারসিয়া, হিরকানিয়া এবং সাবেক মিডিয়াকে একত্রিত করেন। ব্যাকট্রিয়ান অধিকার করেন ৫৪০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের দিকে। যদিও কারো কারো মতে, তারা স্বেচ্ছায় আনুগত্য স্বীকার করে নেয়। আস্তে আস্তে পারস্য সাম্রাজ্য পূর্বের বেদুইন গোত্রগুলোকেও অধীনস্থ করেন। আর্মেনিয়াকেও রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করে নিজের সমর্থক টাইগ্রেনেস অরোনটিডকে ক্ষমতায় বসান। সাইরাসের সিলিন্ডারে বলা হয়েছে, তাবুর রাজারা তার বশ্যতা স্বীকার করে কর দিত। তাতে মনে করা হয় সিরিয়া ও আরব উপদ্বীপ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছিলো তার আধিপত্য। 

জন্মেছিলেন গোত্রীয় রাজা হিসাবে, রেখে যান সুবিশাল সাম্রাজ্য; © ancient.eu

ব্যাবিলন অধিকার

তৎকালীন সময়ে ব্যাবিলন ফিকে হতে শুরু করেছে। ৫৩৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দের কথা। সাইরাস ব্যাবিলনের অভিমুখে যাত্রা করলেন। প্রচুর খাল কাটা হয় নদীকে অগভীর করে সহজে পার হবার জন্য। তুমুল যুদ্ধ হলো দুই পক্ষের মাঝে। ব্যাবিলনের সম্রাট নেবুনিদাস পালিয়ে আত্মরক্ষা করলেন। নিজের সেবক ও গুতিয়ামের গভর্নর উগবারুকে দিয়ে ব্যাবিলন দখল করা হলো। মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে সাইরাসকে উৎসবের মধ্য দিয়ে বরণ করে নেয়া হয়। তৎকালীন ব্যাবিলন সাম্রাজ্যের নিয়ন্ত্রণাধীন যত অঞ্চল ছিল, সব সাইরাসের অধীনস্থ হলো। 

ব্যাবিলন তাকে সাদরে গ্রহণ করে মুক্তিদাতা হিসাবে, © picswe.com

সাইরাস সিলিন্ডার

ব্যাবিলন বিজয়ের পর সাইরাস একটা শিলাস্তম্ভ নির্মাণের আদেশ দেন, যাতে তার নাম লেখা থাকবে। মূলত এটিই সাইরাস সিলিন্ডার নামে পরিচিত। সাইরাসকে লিপিটিতে স্বর্গীয়ভাবে মনোনীত এবং ব্যাবিলনীয় সম্রাট নেবুনিদাসকে ধর্মহীন, নীতিহীন রাজা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। নেবুনিদাস ব্যাবিলনীয় দেবতা মারদুককে অস্বীকার করেছিল। প্রাধান্য দিয়েছিল চন্দ্রদেবতা সিনকে। তারপরেও বিষয়টিকে অতিরঞ্জিত করা হয়েছে বলেই ধরে নেয়া যায়।

সাইরাসের সিলিন্ডার হিসাবে খ্যাত লিপিটি তার সম্পর্কে জানার অন্যতম উৎস © ancient.eu

আরো বলা হয়, নেবুনিদাস প্রচুর পরিশ্রম করাতো প্রজাদের। ফলে মারদুক প্রজাদের প্রতি দয়াপরবশ হয়ে একজন ন্যায়পরায়ণ রাজাকে প্রেরণ করেন। আনশানের রাজা সাইরাসই সেই ন্যায়পরায়ণ ত্রাতা। তিনি মারদুকের উপাসনা করেন। প্রজাদের অধিকার ও শান্তি ফিরিয়ে দেবার জন্য তার আগমন। এমনি আরো কিছু বর্ণনার পরে মারদুকের স্তুতি এবং স্তম্ভের বিভিন্ন কাজের বর্ণনা দিয়ে সমাপ্তি টানা হয়েছে।    

সাইরাসের ধর্ম

সাইরাসকে জরাথুস্ত্র মতবাদের অনুসারী মনে করা হয়। যদিও তার পেছনে শক্ত প্রমাণ নেই। এমনকি সাইরাসের সময়কালে জরাথুস্ত্র মতবাদ তার সংগঠিত অবস্থায় পৌঁছেছে কি না, তা নিয়েও সন্দেহ আছে। কারণ সাসানীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার পরেই মূলত জরাথুস্ত্র মতবাদ স্বর্ণসময় পায়। এভাবে কেউ কেউ তাকে বহু ঈশ্বরবাদী বলে দাবি করতে চায়, যিনি স্থানীয় পারসিক দেবতাদের উপাসনা করতেন। জেনোফোন মনে করেন, তিনি ছিলেন মিথ্রার সমর্থক। সেই সাথে ব্যাবিলনীয় দেবতা মারদুক তো আছেই। 

ধর্মীয় ক্ষেত্রে সাইরাস বিস্ময়কর উদারতা দেখিয়েছেন © tolerance.tavaana.org

সব মিলিয়ে তার ব্যক্তিগত বিশ্বাস নিয়ে অস্পষ্টতা কাটেনি ঐতিহাসিকদের মধ্যে। তবে ধর্ম সম্পর্কে তিনি ছিলেন যথেষ্ট উদার। সাইরাস সিলিন্ডার অনুসারে,

যে সকল বিদেশিদের জোর করে ব্যাবিলনে আটক রাখা হয়েছিল, তাদেরকে নিজভূমে ফিরে যাবার অনুমতি দেয়া হয়। তাদের মধ্যে ইহুদিরাও ছিল, যারা ব্যাবিলনীয় বন্দিদশা থেকে মুক্তি লাভের পর জেরুজালেম ফিরে গিয়ে মন্দির নির্মাণ করেন। তার দুটো ফরমান বাইবেলের বুক অব ইজরাদে সংরক্ষণ করা হয়। একটি হিব্রুতে, অপরটি আরামায়িকতে। (Bickerman, Page: 72-108)

মরণসাগর পাড়ে

তার জীবনের শেষের দিকের নয় বছর নিয়ে বেশি কিছু জানা যায় না। হেরোডোটাসের দাবি সাইরাস মাস্যাজেটাই যাযাবর গোষ্ঠিকে দমন করতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেন। বিরোধী রানী টমিরিস পুত্র হত্যার প্রতিশোধ নেবার জন্য প্রতিজ্ঞা নেন। প্রথম দফায় সাইরাস বিজয়ী হলেও দ্বিতীয় দফায় পরাজীত হতে হয় দুঃসাহসী রানী টমিরিসের কাছে। সেখানে তার শিরশ্ছেদ করা হয়।

সাইরাসকে শিরশ্ছেদ করে প্রতিশোধ নেয়া হয় © ancient.eu

টেসিয়াসের মতে, ডেরবিসেস নামের মধ্য এশিয়ার যাযাবর গোষ্ঠীর সাথে সংঘাতে তার মৃত্যু হয়। খুব সম্ভবত সাইরাস প্রকৃতপক্ষেই মধ্য এশিয়ার অঞ্চলসমূহে নিজের আধিপত্য বিস্তার করতে গিয়ে মারা যান। ব্যাবিলনীয় লেখা থেকে পাওয়া যায়, সাইরাসের মৃত্যু ৫৩০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের দিকে। প্যাসারাদেইতে তাকে সমাধিস্থ করা হয়। পুত্র দ্বিতীয় ক্যামবিসেস উত্তরাধিকার নিয়ে সিংহাসনে বসেন।

প্যাসারগাদেইতে সাইরাসের সমাধি © irantours24.com

এবং তারপর

উত্থান আর পতনের মধ্যবর্তী সময়ে সাইরাস দ্য গ্রেট এক বিশাল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে যান। কয়েকটি অভিযানের মাধ্যমে পতন ঘটান সেই সময়ের সবচেয়ে শক্তিমান প্রতিপক্ষদের। পুরো মধ্যপ্রাচ্য, মধ্য এশিয়া এবং এশিয়া মাইনরে নিজের আধিপত্য ঘোষণা করেন।

সাইরাসের পরে সাম্রাজ্য প্রসারিত হয় তিন মহাদেশব্যাপী © deviantart.com

রাজ্য বিজয়ের পর সাইরাস প্রায়শ পুরাতন কর্মচারি ও অমাত্যদের আগের পদে বহার রাখতেন। ফলে প্রশাসন ব্যবস্থা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতো। যথেষ্ট সম্মান দেখাতেন পুরাতন সংস্কৃতি ও বিশ্বাসকে। অনেকটা এ কারণেই তিনি প্রজাদের কাছে বেশি প্রিয় হয়ে উঠেছেন। এমন এক সাম্রাজ্যের ভিত দাঁড় করিয়ে যেতে পেরেছেন, যা টিকে ছিল পরবর্তী কয়েক শতক, যা শুরু করেছে পারস্যের ঐতিহাসিক যুগের। 

This Bengali article is about Cyrus the great, founder of the achaemenid empire in ancient persia.

References:

1) From Cyrus to Alexander: A History of Persian Empire, Pierre Briant, Indiana, 2002, Page: 31-49

2) ইতিবৃত্ত (The Histories of Herodotus), অনু.- শাহেদ আলী, দিব্য প্রকাশ, ২০১৫, পৃষ্ঠা: ২৯-১১২

3) CYRUS iii. Cyrus II The Great - Encyclopedia Iranica

4) Cyrus the Great - ancient.eu

5) Who was Cyrus the Great? - National Geographic

and which are hyperlinked.

Featured Image: persiadigest.com

Related Articles

Exit mobile version