‘মাহানায়াকুডু’ (মহানায়ক), ‘আসাল নায়াকুডু’ (জাত অভিনেতা), ‘আন্নাগাড়ু’ (মিয়াঁ ভাই) বলে ডাকা হয় তাকে। এ নামগুলোর চেয়েও যে নামে তিনি সর্বাধিক পরিচিত সেটি হলো এনটিআর (NTR)। নান্দামুড়ি তাড়াকা রামা রাও। বলিউডে সে যুগে নামান্তে কুমার বা কাপুর লাগিয়ে অভিনেতাদের নামকরণ করার চল শুরু হলেও দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে নামের প্রথম অক্ষরগুলো নিয়ে নামকরণের চর্চা লক্ষ করা যায়। তেলেগু সিনেমা জগতে এনটিআরের মতো আরেকজন ছিলেন এএনআর (আক্কিনেনি নাগেশ্বর রাও), যিনি অভিনেতা নাগার্জুনের বাবা। এসভিআর (সামারলা ভেঙ্কাটা রাঙ্গা রাও) তেলেগু ও তামিল দুই সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতেই সমানতালে সব্যসাচীর ন্যায় কাজ করেছেন। এমজিআর (মারুথুর গোপালান রামাচন্দ্রন) তামিল সিনেমা জগতের একজন মহান অভিনেতা।
তৎকালীন মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির অন্তর্গত ছোট্ট একটি গ্রাম নিম্মাকুরুতে, যেটি এখন অন্ধ্রপ্রদেশের অন্তর্গত, রামা রাও এক দরিদ্র কৃষকের ঘরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। জন্মের পরে তাকে তার নিঃসন্তান চাচা-চাচি দত্তক নিয়েছিলেন। রামা রাও একটি ভাই ছিল। তার নাম ত্রিবিক্রম রাও। ত্রিবিক্রম রাও তেলেগু সিনেমা জগতে প্রযোজক ও পরিচালক হিসেবে বেশ সুনাম কুড়িয়েছিলেন।
রামা রাওয়ের প্রাথমিক শিক্ষা গ্রামে সম্পন্ন হলেও পরবর্তীতে তিনি পরিবারের সাথে বিজয়বাড়াতে চলে আসেন। সেখানে ইন্টারমিডিয়েটে ভর্তি হন। পরের বছর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় স্টেট লেভেলে প্রথম হন এবং পুরষ্কার নেওয়ার সময় তিনি নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুকে একটি পোট্রেয়াল উপহার দিয়েছিলেন। ছাত্রজীবনে অ্যাকাডেমিক ফলাফলে ভালো কৃতিত্ব দেখাতে না পারলেও শিল্প ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডগুলোতে তিনি ছিলেন সর্বাগ্রে। তিনবার ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষা দেওয়ার পরে তার ভাগ্যে পাস জুটেছিল।
আরেকটি মজার বিষয় হচ্ছে, রামা রাও একজন অভিনেতা হিসেবে কাজ শুরু করার আগে ছিলেন একজন সিভিল সার্ভেন্ট। দেশ ভাগের বছরে মাদ্রাজ সার্ভিস কমিশনের আওতায় তিনি সাব-রেজিস্টার পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিলেন। প্রায় হাজার খানেক প্রতিদ্বন্দ্বীর ভেতর থেকে রামা রাও নিয়োগ পরীক্ষায় সপ্তম স্থান অধিকার করে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। অন্ধ্রপ্রদেশের (তৎকালীন মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সি) গুন্টুর জেলার প্রাথিপাডু নামক ছোট্ট একটি গ্রামে তাকে পদায়িত করা হয়। মাত্র তিন সপ্তাহের মাথায় তিনি চাকরি ছেড়ে অভিনয় জগতে পা বাড়ান। মাত্র ২০ বছর বয়সে ইন্টারমিডিয়েটে পড়াবস্থায় রামা রাও-এর বিয়ে ঠিক হয় মামাতো বোন বাসাভা তাড়কামের সাথে।
পরবর্তীতে এ দম্পতির ঘরে আটটি ছেলেসন্তান ও চারটি কন্যাসন্তানের আগমন ঘটে। ১৯৬২ তে প্রথম পুত্র নান্দামুড়ি রামাকৃষ্ণার মৃত্যু ঘটে। শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েন এনটিআর দম্পতি। পুত্রের স্মৃতিতে রামা রাও প্রতিষ্ঠা করেন তার চলচ্চিত্র নির্মাণ কোম্পানি রামাকৃষ্ণা স্টুডিওজ। রামা রাও এর একেকটি সন্তান পরবর্তীতে রাজনীতি, সিনেমা, চিকিৎসা জগতের একেকটি উজ্জ্বল নক্ষত্রে পরিণত হয়।
রামা রাও প্রিয় পত্নীকে তাড়াকাম বলে ডাকতেন। এনটিআরয়ের তাড়কাম ১৯৮৫ সালে মরণব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে তাকে বিপত্নীক করে পরলোকে পাড়ি জমান। পত্নীর স্মৃতিতে এনটিআর পরের বছর হায়দ্রাবাদে ‘বাসবতাড়াকাম ইন্দো-আমেরিকান ক্যান্সার হাসপাতাল’ প্রতিষ্ঠা করেন। আট বছর বিপত্নীক হিসেবে পার করার পর রামা রাও তার চেয়ে বয়সে প্রায় ত্রিশ বছরের ছোট লক্ষ্মী পার্বতীকে বিয়ে করেন। বিয়ের মোটামুটি দুই বছরের মাথাতেই এনটিআরের জীবনাবসান হয়।
অনস্ক্রিনে রামা রাও প্রথম কাজ করেছিলেন এল ভি প্রসাদের ‘মানা দেশম’ (আমার দেশ) নামক একটি ছবিতে ১৯৪৯ সালে। তখন তার বয়স ছাব্বিশ। এক ব্রিটিশ পুলিশ ইন্সপেক্টরের চরিত্রে রামা রাও এর কিছুক্ষণের উপস্থিতিই বেশ দর্শকপ্রিয়তা পায়। শুটিং শুরু হওয়ার আগে এল ভি প্রসাদ রামা রাওকে বলেছিলেন অভিনয় যেন একদম বাস্তবের মতো হয়। সিনেমায় আগে কাজ করার অভিজ্ঞতা না থাকায় পরিচালক অ্যাকশন বলার পরে তিনি ইন্সপেক্টরের চরিত্রে অভিনয় করার সময় লাঠি দিয়ে সত্যি সত্যি জুনিয়র আর্টিস্টদের পেটানো শুরু করেন!
পরের বছর ‘পাল্লেতরি পিল্লা’ (গেঁয়ো মেয়ে) নামক ছবিতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন নাগেশ্বর রাও এর সাথে। সেখানেও ষাঁড়ের সাথে লড়াইয়ের একটি দৃশ্যে সবার কথা উপেক্ষা করে আসল ষাঁড়ের সাথে লড়তে গিয়ে হাত মচকায় রামা রাওয়ের! তারপর আর তাকে ফিরে তাকাতে হয়নি। একের পর এক সুপারহিট-ব্লকবাস্টার ছবি দর্শকদের উপহার দিতে শুরু করেন তিনি।
সহজ-সাবলীল অভিনয়, অসাধারণ অঙ্গভঙ্গি ও ব্যক্তিত্ব, প্রগাঢ় কণ্ঠস্বর তাকে অল্পসময়ের মধ্যেই তেলেগু সিনেমার সবচেয়ে জনপ্রিয় অভিনেতার মর্যাদা এনে দেয়। পৌরাণিক, বাস্তবিক, বুর্জোয়া, সর্বহারা সবধরনের চরিত্রেই সমানতালে অভিনয় করে গেছেন তিনি।
১৯৫১ সালে ‘পাতাল ভৈরবী’ নামক একটি ফ্যান্টাসি ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে ফ্যান্টাসি ছবিতে তার অভিষেক হয়। পরে এটি বলিউডে একই নামে রিমেক করা হয়েছিল যাতে ‘হাতেম-তায়ী’ খ্যাত নায়ক জিতেন্দ্র প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। রামা রাও ১৯৫৭ তে ‘মায়াবাজার’ নামক ছবিতে প্রথম কোনো পৌরাণিক চরিত্রে অভিনয় করেন। শ্রীকৃষ্ণের চরিত্রে তার অভিনয় তুমুল দর্শকপ্রিয়তা পায়। তামিল ও তেলেগু দুই ভাষাতে সিনেমাটি মুক্তি পেলে এনটিআর দুই ভাষাভাষী সিনেমাপ্রেমীদের মধ্যে জনপ্রিয় নায়কে পরিণত হন। পঞ্চাশের দশকের শেষ থেকে ষাটের দশকের মধ্যবর্তী সময়ে রামা রাও বিখ্যাত হন তার পৌরাণিক ছবিগুলোর জন্য। মহাভারত ও রামায়ণের আখ্যান-উপাখ্যান থেকে অনেকগুলো ছবি নির্মিত হয়। রামা রাও মোট সতেরটি ছবিতে কৃষ্ণ চরিত্রে অভিনয় করেন।
কৃষ্ণ ছাড়াও রাম, রাবণ, মেঘনাদ, ভীষ্ম, কর্ণ, দুর্যোধন, শিব, বিষ্ণু, বিশ্বামিত্র ইত্যাদি চরিত্রে অভিনয় করেন। এনটিআর শুধু অনস্ক্রিনে নয় অফস্ক্রিনেও সমান মুন্সিয়ানায় কাজ করে গেছেন। কোনো আনুষ্ঠানিক বা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াই মাত্র সাইত্রিশ বছর বয়সে এনটিআর ছবি পরিচালনা করেন। ‘সীতা রামা কল্যাণম’ (রাম-সীতার বিয়ে) নামক সে ছবিটিতে তিনি রাবণ চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। ‘সীতা রামা কল্যাণম’ মুক্তির তিনদিন পরে মুক্তি পায় এনটিআরের ক্যারিয়ারের আরেক মাস্টারপিস ছবি– ‘শ্রী ভেক্টটেশওয়ারা মাহাত্ম্যম’।
এনটিআর ভগবান বিষ্ণুর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন এ ছবিতে। ছবিটি মুক্তির পরে দর্শকদের মনে এনটিআরের একটি ডেমি-গড ইমেজ সৃষ্টি হয়। তার মাদ্রাজের বাড়িতে তীর্থযাত্রীদের ভিড় হওয়া শুরু হয়! ভক্তেরা ঘন্টার পর ঘন্টা রামা রাও এর বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকে একটিবার দর্শনের জন্য। সকালে শুটিংয়ে যাওয়ার আগে রামা রাও তাদের সাথে দেখা করতেন এবং মনোযোগ দিয়ে তাদের কথাগুলো শুনতেন। একই বছর ‘ইন্দ্রজিৎ’ নামক আরেকটি ছবি মুক্তি পায় যেখানে এনটিআর রাবণপুত্র মেঘনাদের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন।
ছবিটি প্রায় বারো বছর পরে ১৯৭৩ সালে বাংলায় ডাবিং করে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। এভাবে, বাংলামুলুকেও এনটিআরের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। রামা রাও ‘ভূকৈলাস’-এ রাবণ, ‘সম্পূর্ণ রামায়ণ’ ও ‘লব কুশ’-এ রাম, ‘ভীষ্ম’-তে ভীষ্ম, ‘দক্ষযজ্ঞনম’-এ ভগবান শিব, ‘ভাল্মিকী’-তে বাল্মিকী, ‘তেনালি রামাকৃষ্ণ’-তে কৃষ্ণদেব রায়া মহারাজের ভাঁড় এবং শলাকার পন্ডিত রামাকৃষ্ণা চরিত্রে অভিনয় করে সুনাম কুড়ান।
ষাটের দশকের প্রথম দিকে এনটিআর ‘নর্তনশালা’ নামক একটি সিনেমাতে চুক্তিবদ্ধ হন। মহাভারতের আখ্যান আশ্রিত ছবিটিতে বৃহন্নলা ও অর্জুন চরিত্রে অভিনয় করবেন বলে ঠিক হয়। কিন্তু একটি সমস্যা এসে হাজির হয়। ইন্দ্রসভার নর্তকীদের মতো নাচতে হবে বৃহন্নলাকে। কিন্তু রামা রাও ধ্রুপদী নৃত্যে অভ্যস্ত নন। বিখ্যাত কুচুপুরি নৃত্যশিল্পী ভীমপাথি চিন্না সত্যমকে ডাকা হয় রামা রাওকে নৃত্য শেখানোর জন্য। এনটিআরের বয়স তখন ৪০! চল্লিশ বছরে এসেও রামা রাও খুব দ্রুত নৃত্যে পারঙ্গম হয়ে ওঠেন এবং দর্শকদের আরেকটি মনোমুগ্ধকর ছবি উপহার দেন। ‘নর্তনশালা’ তেলেগুর পাশাপাশি বাংলা ও ওড়িয়াতেও মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। সমালোচকদের ইতিবাচক সমালোচনার পাশাপাশি এটি ব্যবসায়িক সফলতারও মুখ দেখেছিল। সিএনএন ও আইবিএন এর করা সর্বভারতীয় সেরা ১০০ চলচ্চিত্রের তালিকাতেও ‘নর্তনশালা’ স্থান করে নিয়েছে।
রামা রাও এর ক্যারিয়ারের আরেকটি মাইলফলক ছবি ‘দানা বীর সুরা কর্ণ’। মহাভারতের কর্ণ চরিত্রটিকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয় কাহিনী। রামা রাও এর সিনেমা প্রোডাকশন কোম্পানি রামাকৃষ্ণা সিনে স্টুডিওজ এর ব্যানারে ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৭৭ সালে। পরিচালনা, প্রযোজনা এবং সংলাপ ও চিত্রনাট্য লিখনীর কাজও করেছিলেন স্বয়ং রামা রাও। ছবিটিতে একই সাথে রামা রাও মহাভারতের তিনটি দুর্ধর্ষ চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন– কৃষ্ণ, কর্ণ ও দুর্যোধন। দুর্যোধনের চরিত্রে তিনি যে মানবিকতা ফুটিয়ে তুলেছিলেন সেটি ছিল অনন্য। রামা রাও এর অনেকগুলো সংলাপ বিখ্যাত হয়েছিল। এই ছবিতে তার দুই ছেলে নান্দামুড়ি হরিকৃষ্ণা ও নান্দামুড়ি বালাকৃষ্ণা অর্জুন এবং অভিমন্যু চরিত্রে অভিনয় করেন।
পৌরাণিক চরিত্রে কাজ করতে করতে রামা রাও মানবিক এবং সমাজিক চরিত্রে অভিনয়ের তাগিদ অনুভব করেন প্রবলভাবে। তার সামাজিক ছবিগুলোও ব্যাপক জনপ্রিয় এবং ব্যবসাসফল হয়। ‘ড্রাইভার রামুডু’ সিনেমায় একজন ট্রাক ড্রাইভারের চরিত্রে, ‘জাস্টিস চৌধুরী’-তে একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারকের ভূমিকায়, ‘দেবুদু চেসিনা মানুসুলু’-তে রামু নামক একজন সম্ভ্রান্ত লোকের ছেলের চরিত্রে অভিনয় করেন যে পরিবার থেকে হারিয়ে গিয়ে অসৎসঙ্গে স্মাগলারে পরিণত হয়; সিনেমার শেষে তার বোধোদয় হয়। এরকম আরো কয়েকটি ছবি হলো ‘বোব্বিলি পুলি’, ‘সরদার পাপা রায়ুডু’, ‘আদাভি রামুডু’, ‘বিতাগাডু’সহ আরো অনেক।
তিনি তার পুরো ক্যারিয়ারে প্রায় ৩০০টিরও বেশি সিনেমায় কাজ করেছেন। প্রাপ্তির ঝুলিও কম নয় তার। মাত্র ৪৫ বছর বয়সে পদ্মশ্রী, তিনটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার, দুইটি রাষ্ট্রপতি পুরষ্কার, একটি নন্দী পুরষ্কার, একটি ফিল্মফেয়ার পুরষ্কার (দক্ষিণ) এবং অন্ধ্র বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সন্মানসূচক ডক্টরেট!
সমাজ-কল্পকথা-পুরাণ-ইতিহাসের অনেক চরিত্রে তিনি অভিনয় করেছেন। তার সর্বশেষ অভিনীত চলচ্চিত্রটি ছিল ‘সম্রাট অশোকা’। এই ছবিতে তিনি একইসাথে সম্রাট অশোক ও চাণক্য চরিত্রে অভিনয় করেন। ছবিটি প্রেক্ষাগৃহগুলোতে মুখ থুবড়ে পরে। ১৯৯২ এ যখন ছবিটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় তখন রামা রাও এর বয়স প্রায় সত্তর। তখন তিনি পুরোদস্তুর একজন রাজনীতিবিদ! দুবারের নির্বাচিত অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী! রামা রাও এর একজন কলাকার থেকে রাজনীতিবিদ বনে যাওয়ার কাহিনী এবং রাজনৈতিক জীবনের টানাপোড়নগুলো আরো সিনেম্যাটিক। (সে গল্প পড়ুন এখানে- ‘এই কাহিনী রাজনীতিবিদ এনটিআর এর‘)