কারবালায় মর্মান্তিক ভাবে হত্যা করা হলো নবীজির দৌহিত্র হোসাইন (রা.) এবং তার পরিবারকে। খবরটা পৌঁছা মাত্রই নড়ে বসলেন আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়ের। ঘোষণা দিলেন খলিফার মসনদে থাকা ইয়াজিদকে অপসারণের। তিনি তখন মক্কায়। অন্যদিকে মদিনা অবরোধের নির্দেশ দিয়েছেন ইয়াজিদ। মদিনাবাসীও প্রতিরোধ করে। ৬৮৩ সালের এই সংঘর্ষ হাররা যুদ্ধ নামে পরিচিত। আবদুল্লাহ ইবনে হানজালা ও তার পুত্ররাসহ অধিকাংশ নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি শহীদ হন। সিরীয় বাহিনীর হাতে লুণ্ঠিত হয় মদিনা, লাঞ্চিত হয় নারী। স্তব্ধ হয়ে যায় নবীর শহর। তারপর ইয়াজিদ বাহিনী রওনা দেয় মক্কায়। কিন্তু অবরোধ করলেও তা ফলপ্রসূ হলো না; ফিরে যেতে হলো। কারণ, হঠাৎ মৃত্যুবরণ করেছে ইয়াজিদ।
ইয়াজিদের মৃত্যুর পরে দ্বিতীয় মুয়াবিয়া মসনদে বসেন। কিছু মানুষের কাছে সিংহাসন বিতৃষ্ণার বিষয় হয়ে উঠে। দ্বিতীয় মুয়াবিয়া ছিলেন সেই শ্রেণির। খেলাফত থেকে দূরে সরে মসজিদে নির্জন ইবাদতে সময় অতিবাহিত করতে থাকেন। মাত্র তিন মাসের মাথায় এভাবেই ইনতেকাল করেন। ফলে উমাইয়া সাম্রাজ্যের বড় অংশ আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়েরের খেলাফতে ঐক্যমত্যে পৌঁছাতে আর কোনো বাঁধা থাকলো না।
আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়ের (রা.)
তখন কুরায়েশদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ মুসলিমরা মদিনায় হিজরত করেছে খুব বেশি দিন হয়নি। ইতোমধ্যে মদিনায় ইহুদিরা প্রচার করতে লাগলো গুজব। মুসলমানদের জাদু করা হয়েছে; ফলে তারা কোনো সন্তান জন্ম দান করতে পারবে না। তাৎপর্য সত্য না হলেও তখন অব্দি এতটুকু সত্য যে, হিজরত পরবর্তী কোনো মুসলমান সন্তান জন্ম লাভ করেনি। অনেকের কাছেই বিষয়টা তাই বিব্রতকর। সেই পরিস্থিতির অবসান ঘটায় এক পুত্র। আসমা এবং যুবায়ের ইবনুল আওয়ামের সন্তান। একজন বিখ্যাত সাহাবী আবু বকর (রা.) কন্যা, অন্যজন মহানবী (সা.) এর ফুপাতো ভাই। এই শিশুর জন্ম মদিনার মুসলিমদের জন্য উচ্ছ্বাসে পরিণত হয়। নবী নিজেই তার নাম রাখেন আবদুল্লাহ। ইসলাম গ্রহণের পর মদিনায় জন্মগ্রহণকারী প্রথম সন্তান।
আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়েরের সাথে তিন বিষয়ে প্রতিযোগিতা করা সম্ভব না বলে ধারণা করা হতো- ইবাদত, বীরত্ব আর বাগ্নীতা। নামাজের সময় এমন দীর্ঘ সিজদা দিতেন যে, দেয়াল মনে করে গায়ের উপর পাখি বসে থাকতো। মুসলমানদের ইয়ারমুক এবং মিশর অভিযানে তিনি সঙ্গে ছিলেন। কিন্তু সবচেয়ে স্বাতন্ত্র্যতা তৈরি করেন ৬৪৭ সালে আবদুল্লাহ ইবনে সাদের নেতৃত্বে ইফ্রিকিয়া অভিযানে। উত্তর আফ্রিকার নিয়ন্ত্রণ তখন গ্রেগরি দ্য পেট্রিশিয়ানের হাতে। সংঘর্ষে কয়েকগুণ বিশাল প্রতিপক্ষ আরব বাহিনীকে ঘিরে ফেলেছিল। আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়ের কয়েকজন অশ্বারোহী নিয়ে রাজার অভিমুখে রওনা হন। শত্রুরা ভেবেছিল পত্রবাহক। যখন গ্রেগরি ঠাহর করতে পারল; ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে। আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়ের গ্রেগরিকে হত্যা করে যে তাকবির দিয়েছিলেন; তাতেই তারা ভড়কে যায়।
এই বিজয়ের পরে খলিফা উসমান (রা.) তাকে মসজিদের মিম্বারে দাঁড়িয়ে সমস্ত ঘটনা বর্ণনা করতে বলেন সবার কাছে। আবদুল্লাহ সবিস্তারে বলতে শুরু করেন বিজয়ের কথা। মজলিসে পিতা যুবায়ের ইবনুল আওয়াম (রা.) উপস্থিত ছিলেন। বক্তৃতা শেষে তিনি বিস্ময়ে বলেন, “আমি যখন তোমার ভাষণ শুনলাম; তখন নিশ্চিতভাবে মনে হচ্ছিল; আমি যেনো খলিফা আবু বকরের ভাষণ শুনছি।”
খলিফা আলি (রা.)-এর আমলে উষ্ট্রীর যুদ্ধে তিনি পদাতিক বাহিনীর অধিনায়ক ছিলেন। পিতা যুবায়ের এই যুদ্ধেই নিহত হন। আবদুল্লাহর নিজের গায়ে লেগেছিল তেতাল্লিশটা আঘাত। নিহতদের মধ্যে পাওয়া গেলেও তিনি জীবিত ছিলেন। যে ব্যক্তি তার জীবিত থাকার খবর আয়েশা রা. এর কাছে নিয়ে যান; তাকে দশ হাজার দিরহাম পুরস্কার দেয়া হয়। আসলে পিতা আবু বকরের পরেই আয়েশা সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতে ভাগ্নে আবদুল্লাহকে।
খিলাফত
আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়ের মুয়াবিয়ার খেলাফতকে অস্বীকার করেননি। তার মৃত্যুর পর ইয়াজিদ ইবনে মুয়াবিয়ার বায়আত নেওয়া শুরু হয়। সেই সময়েই আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়ের এবং হোসাইন ইবনে আলি (রা.) মদিনা ছেড়ে মক্কা চলে আসেন। হোসাইন পরবর্তীতে মক্কা ছেড়ে কুফা অভিমুখে রওনা দিলে কারবালার প্রান্তরে নৃশংসভাবে শহীদ হন। আবদুল্লাহ এককভাবে মক্কার শাসনভার গ্রহণ করেন। ইয়াজিদ তাকে আনুগত্যের পত্র পাঠালেও তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। মক্কা অবরোধ করা হলেও তা সফল হবার আগেই মৃত্যুবরণ করেন ইয়াজিদ। কয়েক বছরের মধ্যে ইয়াজিদ এবং দ্বিতীয় মুয়াবিয়ার মৃত্যুতে গোটা মুসলিম খেলাফত তার হাতে বায়আত গ্রহণ করে।
আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়ের এবার হেজাজ এবং পার্শ্ববর্তী এলাকার একচ্ছত্র নায়ক। মদিনা থেকে উমাইয়াদের বিতাড়িত করে নিজে প্রশাসক নিয়োগ দেন। বসরায় পত্র পাঠান। বায়আত গ্রহণে এগিয়ে আসে আবদুল্লাহ ইবনে আলি, আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস এবং আবদুল্লাহ ইবনে উমর। কুফায় নতুন ইমাম ও কর আদায়কারী নিযুক্ত করা হয়। কুফাবাসীও তার প্রতি আস্থা জ্ঞাপন করে। মিশর, আলজেরিয়া এবং বসরাতে দূত পাঠালে তারা বায়আত গ্রহণ করে। ইয়ামেন এবং খোরসানবাসীও বায়আত গ্রহণ করতে দেরি করেনি।
মুয়াবিয়া ইবনে ইয়াজিদ বা দ্বিতীয় মুয়াবিয়া মৃত্যুর আগে দামেশকে আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়েরের জন্য জনগণের পক্ষে বায়আত গ্রহণের শপথ নিয়েছিলেন। দামেশকবাসী দাহহাক ইবনে কায়েস (রা.)-কে দায়িত্ব দিয়েছিল একটা সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য। তিনিও মনস্থির করেছিলেন আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়েরের হাতে বায়আত গ্রহণের। এদিকে শামের অধিকাংশ গভর্নর তার প্রতি আনুগত্য দেখায়। উমাইয়া পরিবারের অন্যতম পুরুষ মারওয়ান ইবনে আবুল হাকামও বায়আতের জন্য রওনা হন। কিন্তু বিপত্তি ঘটে পথে কারবালা হত্যাকাণ্ডের প্রধান কুশীলব উবাইদুল্লাহ বিন যিয়াদের সাথে দেখা হয়ে। উবায়দুল্লাহ ভীত ছিল। যদি আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়ের মসনদে আসীন হয় এবং ঐক্যমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়; তবে কারবালায় হত্যাকাণ্ডের দায়ে তাকে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। ফলে মারওয়ানের হাত ধরে বায়আত গ্রহণ করে; তাকে খলিফা হতে প্ররোচিত করে। এর মধ্য দিয়ে কেবল মারওয়ানের মনই বদলায় না; বদলে যায় ক্ষমতার সমীকরণ।
সংঘাত
আদ দাহহাক (রা.) আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়েরের হাতে বায়আত গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। ফলে মারওয়ানের সাথে সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে পড়ে। ৬৫ হিজরিতে শামের মারজ রাহিতে ২৯ দিন ব্যাপী ভয়াবহ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। শেষ অব্দি প্রতারণার মাধ্যমে পরাজিত করা হয় দাহহাকের বাহিনীকে। নিহত হন দাহহাক নিজে। শীঘ্রই শামে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন মারওয়ান। কিন্তু স্থায়ী হতে পারেননি। তার মৃত্যুর পরে পুত্র আবদুল মালিকের হাতেই শামবাসী বায়আত গ্রহণ করে। চলতে থাকে দীর্ঘ সংঘাত।
আবদুল মালিক ৭১ হিজরি নাগাদ পুরো ইরাকের উপর কর্তৃত্ব কায়েম করতে সক্ষম হন। বাকি থাকে কেবল হেজাজ অঞ্চল। এবার তাই ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফকে মক্কা অবরোধের নির্দেশ দিল। নিষ্ঠুরতার জন্য সমালোচিত হাজ্জাজ পাঁচটা মানজানিক নিয়ে হাজির হয়। বন্ধ করে দেয় মক্কার বাইরে থেকে রসদসামগ্রী আগমনের পথ। রসদ আটকে দেয়ায় অবরুদ্ধরা যমযমের পানি পান করতে থাকে। মানজানিকের আঘাত গিয়ে পৌঁছায় কা’বা অব্দি। আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়েরের পক্ষের বহু মানুষ নিহত হয়। বাকিরা আস্তে আস্তে সরে পড়তে থাকে। কেবল থাকে মা আসমা (রা.)। একাকী সঙ্গীহীন পুত্রের বুকে ভরসা হয়ে।
হাজ্জাজের গোলার আঘাতে কা’বার দেয়ালগুলো নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। সেই অবরোধের সময়েই আবদুল্লাহ কা’বাকে ইবরাহিমের ভিত্তির উপর পুনঃনির্মাণ করেন। বাস্তবায়ন করেন একসময় যে ইচ্ছার কথা রাসুল (সা.) আয়েশা (রা.) কে বলেছিলেন, “তোমার কওমের লোকেরা যদি নও মুসলিম না হতো, তাহলে আমি কা’বাকে ভেঙে ফেলতাম, হাতিমকে কা’বার ভেতরে ঢুকিয়ে দিতাম এবং দুটি দরজা করতাম। একটা পূর্ব দিকে আরেকটা পশ্চিম দিকে; একটা দিয়ে মানুষ ঢুকতো আর অন্যটা দিয়ে বের হতো।” পরবর্তীতে হাজ্জাজ বিন ইউসুফ যখন আবদুল্লাহর কাছ থেকে মক্কা দখল করে নেয়; তখন হাতিমকে আবার আগের মতো বাইরে বের করে দেয়া হয়।
যে গল্প হৃদয়ের
দীর্ঘদিন অবরুদ্ধ থেকে প্রায় সকলেই হতোদ্যম হয়ে ত্যাগ করেছিল আবদুল্লাহর পক্ষ। আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়ের মা আসমা (রা.)-এর কাছে উপস্থিত হলেন।
-আম্মা, সকলে আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। আমার দুই পুত্র এবং আত্মীয়রাও আমার কাছে নেই। সীমিত যে কয় জন আমার সঙ্গে আছে; তাদের নিয়ে টিকে থাকা সম্ভব না। আমি যদি পার্থিব কিছুর বিনিময়ে খেলাফত ত্যাগ করি; তবে তারা তা আমাকে দিতে প্রস্তুত। এ বিষয়ে আপনার কী মত?
-আল্লাহর শপথ, নিজের কর্তব্য ও করণীয় তুমি ভালো করেই জানো। যদি বিশ্বাস থাকে সত্য ও ন্যায়ের পথে আছো, তবে এই পথেই অটল ও অবিচল থাকবে। ন্যায়ের পথেই তোমার সঙ্গীরা শহীদ হয়েছে। বনু উমাইয়ার দাসদের তোমাকে নিয়ে খেলার সুযোগ দিও না। আর যদি পার্থিব সম্পদ কামনা করে থাকো; তাহলে তুমি অতি নিকৃষ্ট দাস। নিজেকেও ধ্বংস করেছো; ধ্বংস করেছো সঙ্গীদেরকে। আর যদি মনে করো, আমি তো হকের পথেই ছিলাম, সঙ্গীগণ হীনবল হয়ে পড়ায় দুর্বল হয়ে পড়েছি। তাহলে বলবো এটা বীরের ধর্ম না; ধার্মিকের নীতি না। চিরদিন বেঁচে থাকতে পারবে? শাহাদাতই কি শ্রেয় না?
-আম্মা, আমার আশঙ্কা হয় শামের সৈন্যরা আমাকে হত্যা করার পর লাশ বিকৃত করে ফেলবে।
-ব্যাটা, মেষ জবাই করার পর চামড়া ছিলে ফেললে তার কষ্ট হয় না।
আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়ের মায়ের কপালে চুমু খেলেন। বললেন, “এটাই আমার সিদ্ধান্ত। আজকের দিন অব্দি আমি সত্যের দিকে আহবান করেছি। কখনো দুনিয়ার প্রতি ঝুঁকে পড়িনি। ভালোবাসিনি পার্থিব জীবনকে। আমার জীবদ্দশায় আল্লাহর দ্বীন লঙ্ঘিত হচ্ছে; আমি কী করে মেনে নেবো? এজন্যই আমি বিদ্রোহ করেছি। আমি আপনার মতামত জানতে চাচ্ছিলাম। আম্মা, আজই আমি শহীদ হতে যাচ্ছি। আপনার কষ্ট যেন বৃদ্ধি না পায়।”
আসমা (রা.) প্রাণভরে দোয়া করলেন। আর বিদায় নিয়ে আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়ের দাঁড়ালেন প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে। যুদ্ধ করলেন বীরের ন্যায়। একটা কবিতা আবৃত্তি করছিলেন তিনি-
‘আসমায়ু, ইয়া আসমায়ু, লা তাবকিনি; লাম ইয়াবক্বা ইল্লা হাসাবি ও দ্বীনি।
ওয়া ছরিমুন লা নাত বিহি ইয়ামিনি।’অর্থাৎ আসমা, ওগো আসমা, কেঁদো নাকো আর
হাতের তৃপ্তি তরবারি ছাড়া, সম্মান আর ধর্ম ছাড়া কী আছে আমার!
তার শাহাদতের খবরে শামের যোদ্ধারা উল্লাসে ফেটে পড়ে। মুহুর্মুহু দিতে থাকে তাকবির। শুনে আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) মন্তব্য করেছিলেন, “তার জন্মগ্রহণের সংবাদে তাকবির প্রদাণকারীরা তার মৃত্যু সংবাদে তাকবির প্রদানকারীদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ।” আসলে তিনি ইঙ্গিত করেছিলেন মদিনায় যুবায়েরের জন্মের সময় সাহাবিদের দেয়া তাকবির ধ্বনির দিকে।
তারপরও
হাজ্জাজ বিন ইউসুফ নিজের ক্ষোভ চরিতার্থ করতে আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়েরের মৃতদেহকে শূলে চড়ায়। বার্তাবাহক পাঠিয়ে আসমা (রা.) কে দেখতে ডেকে পাঠায়। শোকাহত মা আসতে অস্বীকৃতি জানালে হাজ্জাজ নিজেই গিয়ে হাজির হয় তার সামনে। কটাক্ষ করে,
-দেখলেন, আল্লাহ কীভাবে সত্যকে বিজয়ী করেন?
-কখনো কখনো ন্যায় ও ন্যায়ের পথিকদের বিরুদ্ধে অন্যায়কে সাময়িক বিজয় দান করা হয়।
-আমি আল্লাহর শত্রুদের কীভাবে পরাজিত করেছি দেখেছেন?
-আমি তো দেখছি, তুমি আমার ছেলের দুনিয়া শেষ করেছো; সে তোমার আখিরাত।
অবশ্য হাজ্জাজের অসদাচরণের কথা খলিফা আবদুল মালিকের কানে গেলে তিনি তাকে ভর্ৎসনা করেন। নির্দেশ দেন সদাচারণের। আরো একবার আসমা রা. এর মুখোমুখি হয় হাজ্জাজ। ‘আম্মা’ বলে সম্বোধন করে জানতে চায় কোনোকিছুর প্রয়োজন আছে কি না। আসমা কেবল উত্তর দিয়েছিলেন, ‘আমি তোমার মা না। পাহাড়ি পথে শূলে চড়ানো ওই ছেলেটার মা। আর আমার কোন প্রয়োজন নেই।’
পাদটীকা
আবদুল্লাহ বিন যুবায়ের শহিদ হন ৭৩ হিজরিতে, ৬৯২ সালে। যেহেতু ৬১ হিজরির মহররম মাসে থেকে তিনি মক্কায় অবস্থান করে শাসনকার্য পরিচালনা করেন; সেহেতু তার সময়কাল ধরা হয় বারো বছর। কেউ কেউ অবশ্য তিন বছর কমিয়ে নয় বছর হিসাবে ধরেন। যাই হোক, মক্কার পতনের মধ্য দিয়ে আবদুল মালিক বিন মারওয়ানের একচ্ছত্র ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত হয় খেলাফতে। টানাপোড়েন কাটিয়ে পুনরায় উড্ডীন হয় উমাইয়া আধিপত্য। ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন কিছু বিদ্রোহ মাথা চাড়া দিয়ে উঠলেও সুবিধা করে উঠতে পারেনি। বরং উমাইয়ারা ছড়িয়ে পড়ে সুদূর সিন্ধু থেকে আন্দালুসিয়া অব্দি।
আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়ের একজন প্রখ্যাত সাহাবি ছিলেন। সরাসরি মহানবী (সা.) থেকে বহু হাদিস বর্ণনা করেছেন। বর্ণনা করেছেন পিতা যুবায়ের ইবনুল আওয়াম, সাহাবি উমর এবং উসমান (রা.)-এর থেকেও। তার থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন একদল তাবেয়ী। ইবনে আব্বাস (রা.)-কে একবার আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়ের সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলো। তিনি বলেন,
আবদুল্লাহ ছিলেন আল্লাহর কিতাবের পাঠকারী, সুন্নাতে রাসুলের অনুসারী, আল্লাহর আনুগত্য ও ভয়ে গরমের সময়েও রোযা পালনকারী। তিনি ছিলেন রাসুল (সা.) এর হাওয়ারির পুত্র। তার মা ছিলেন আবু বকর (রা.) এর কন্যা। রাসুলের সহধর্মিনী আয়েশা (রা.) ছিলেন তার খালা। কাজেই আল্লাহ যাকে অন্ধ করে দিয়েছেন; এমন ব্যক্তি ছাড়া কেউ তার মর্যাদা ভুলতে পারে না।