Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

মারিও পুজো: গডফাদারের ‘ফাদার’ এর রোমাঞ্চকর জীবন

১৯৬৯ সালে বই-পুস্তকের পাড়ায় এক মাফিয়ার আগমন ঘটলো। বইয়ের দোকানের তাকে সেই বই আসামাত্র অন্যান্য বইয়ের বিক্রি কমে গেলো। ওদিকে মাফিয়া বই মাত্র কয়েক মাসের মাথায় লক্ষাধিক কপি বিক্রি হয়ে গেলো। সে বছর বিক্রি হওয়া বইয়ের তালিকায় সবার উপরে চলে গেলো এর নাম। শুধু এক বছর শাসন করে সন্তুষ্ট থাকতে পারলো না সেই বই। সবাইকে অবাক করিয়ে দিয়ে টানা ৬ বছর বিক্রয় তালিকার সর্বশীর্ষে থাকলো বইয়ের জগতের মাফিয়া ‘দ্য গডফাদার’। নামেও যা গডফাদার, কাজেও তা গডফাদার। থ্রিলারের গন্ধ পেয়ে পাঠকেরাও হুমড়ি খেয়ে পড়লো বইয়ের জগতে। নামের সাথে গল্পের কোনো কারচুপি নেই। সব বয়সের পাঠকের মন জয় করে ফেললো গডফাদার। গডফাদারের প্রশংসায় যখন পুরো বিশ্ব পঞ্চমুখ, তখন একজন অসন্তুষ্ট হয়ে গভীর ভাবনায় মগ্ন ছিলেন। তাকে যখন প্রশ্ন করা হলো,“গডফাদার নিয়ে আপনার মন্তব্য কী?” উত্তরে তিনি আমতা আমতা করে বললেন, “কাহিনী খুব ভালো, কিন্তু আরো ভালোভাবে লেখা যেত!”

গডফাদার আরো ভালোভাবে লিখতে চেয়েছিলেন মারিও পুজো; Image Source: Scraps from the left

তাজ্জব বনে গেলো পাঠকরা। এর চেয়ে ভালোভাবে গডফাদার উপন্যাস লেখা যায়, সেটা তাদের ধারণার বাইরে ছিল। তা এরূপ সাহসী মন্তব্যকারীর নাম পরিচয় কী? ৫০ বছর বয়সী সেই মন্তব্যকারীর নাম মারিও পুজো। হ্যাঁ, ঠিক পড়েছেন। তিনিই মারিও পুজো, যার কলম থেকে সৃষ্টি হয়েছে সেই অমর উপন্যাস ‘দ্য গডফাদার’। নিজের সৃষ্টি নিয়ে সামান্য অসন্তুষ্ট তিনি হতেই পারেন!

পুজো পরিবার

ইতালির নেপলস শহরের এক একান্নবর্তী ‘পুজো’ পরিবারের গল্প। পরিবারের নবদম্পতি অ্যান্টনিও এবং মারিয়া পুজো ভাগ্যের সন্ধানে জন্মভূমি ইতালি ত্যাগ করে পাড়ি জমালেন সম্ভাবনা এবং সুযোগের দেশ যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে। গডফাদারের স্রষ্টা মারিও পুজোর জীবনের গল্পের শুরুটা ঠিক সিসিলির কর্লিওনি পরিবারের মতো। দেশত্যাগী পুজো পরিবার নিউ ইয়র্কের ম্যানহ্যাটনে তাদের নতুন ঠিকানা খুঁজে নেন। ম্যানহ্যাটনের আবাসস্থলে ১৯২০ সালের ১৫ অক্টোবর তাদের ঘর আলো করে জন্ম হয় এক পুত্রসন্তানের। নাম রাখা হয় মারিও জিয়ানলুইজি পুজো। পরিবারের ভাই-বোনদের তালিকায় মারিও ছিলেন দ্বাদশ সন্তান। কিছুটা অভাব অনটনের সংসারের প্রধান আয়ের উৎস ছিল পিতার রেল বিভাগের ট্রাক চালকের চাকরি।

ক্যামেরায় বন্দি পুজো; Image Source: NY Daily

দ্বাদশ সন্তানের দ্বাদশ জন্মদিনে পিতা অ্যান্টনিও তার মাকে ছেড়ে অন্যত্র চলে যান। বেশ কয়েক বছর ধরে তাদের দুজনের সম্পর্ক তেমন ভালো যাচ্ছিলো না। পিতা তার সন্তানদের ত্যাগ করে গেলেও মা মারিয়া তাদের ত্যাগ করেননি। উল্টো নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে একে একে সবাইকে মানুষ করে তোলার কঠিন কাজ হাতে তুলে নিলেন। 

এক আনাড়ির হাতেখড়ি

মারিও পুজো যখন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন, তখন ধীরে ধীরে লেখার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেন। কিন্তু তার মা ছেলের লেখালেখিতে সন্তুষ্ট হতে পারলেন না। টানাপোড়েনের সংসারে লেখালেখি যেন ছিল এক বিলাসিতা। তিনি মারিওকে লেখালেখি বাদ দিয়ে অন্যত্র কাজ খোঁজার কথা বলতেন। তাই মারিও সিদ্ধান্ত নিলেন সেনাবাহিনীতে যোগদান করবেন। কিন্তু সেক্ষেত্রেও বাধা আসলো। দৃষ্টিশক্তিজনিত সমস্যার কারণে তার সেখানে চাকরি হলো না। তবে মারিও পুজো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে বিমান বাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। যুদ্ধের ময়দানে যাওয়ার অনুমতি না মিললেও তিনি দাপ্তরিক কাজে বেশ কয়েক বছর কাজ করার সুযোগ পান।

স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেন মারিও পুজো; Image Source: New Scientist

বিশ্বযুদ্ধ শেষে মারিও পুজো নিউ ইয়র্ক সিটি কলেজে ভর্তি হন। কলেজ জীবনে লেখার নেশা নতুন করে চেপে ধরলো মারিওকে। তিনি ছোট গল্প রচনা শুরু করেন। ছোট গল্প লেখার পাশাপাশি উপন্যাস লেখার কাজে হাত দেন। কলেজে থাকা অবস্থায় ১৯৫৫ সালে মারিও পুজোর প্রথম উপন্যাস ‘দ্য ডার্ক অ্যারেনা’ প্রকাশিত হয়। নিজের যুদ্ধের অভিজ্ঞতার মিশ্রণে রচিত এই উপন্যাসটি বাজারে তেমন ভালো বিক্রি হলো না। মারিও এবার ‘দ্য ফরচুনেট পিলগ্রিম’ নামে আরেকটি উপন্যাস লেখার কাজে হাত দিলেন। কিন্তু আলসেমি এবং বিভিন্ন কাজের কারণে সেটি লিখে লিখতে প্রায় নয় বছর লেগে গেলো। ১৯৬৪ সালে প্রকাশিত হলো উপন্যাসটি। বাজারে আহামরি বিক্রি না হলেও পূর্ববর্তী উপন্যাসের তুলনায় বিক্রি বেশি হলো। নিউ ইয়র্ক টাইমসে একজন সমালোচক ছোটখাট পর্যালোচনা লিখে ফেলেন তাকে নিয়ে। কিন্তু এই সামান্য সাফল্য দেখে কেউ তখন মারিওকে কোনো যুগান্তকারী লেখক হিসেবে কল্পনা করতে চায়নি। এভাবে শুরু হলো এক ‘আনাড়ি’র সাহিত্যযাত্রা।

মারিও পুজোর প্রথম উপন্যাস; Image Source: Mercado Libre Argentina

ঋণের বোঝা

১৯৬০ সালে তিনি একটি ম্যাগাজিনে সহকারী সম্পাদক হিসেবে কাজ করা শুরু করেন। তার দায়িত্ব ছিল ম্যাগাজিনের জন্য অ্যাকশনধর্মী গল্প লেখা। মাঝে মাঝে বিভিন্ন বিখ্যাত ব্যক্তির নামে ভুয়া গল্প লেখতেন তিনি। অদ্ভুত এই চাকরি মারিও পুজোর বেশ পছন্দ হলো। নতুন চাকরি পেয়ে তিনি সংসার গড়ার কাজে মন দিলেন। ১৯৬৪ সালে এরিকা লিনা ব্রস্ক নামক এক নারীকে বিয়ে করেন। পরবর্তীতে তাদের ঘরে ৫টি সন্তানের জন্ম হয়।

ম্যাগাজিনে অ্যাকশনধর্মী গল্প লিখতেন মারিও; Image Source: Denogfeek

মারিও পুজো ম্যাগাজিনে কাজ করা অবস্থায় বেশিরভাগ সময় লেখালেখি করতেন। আর বাকি সময় বই নিয়ে পড়ে থাকতেন। বই পড়ার ফাঁকে ফাঁকে তিনি মাথা তুলে চারপাশে তাকাতেন। মাঝে মাঝে হালকা কৌতুক করে অট্টহাসিতে ফেটে পড়তেন সহকর্মীদের সাথে। কিন্তু হাসিখুশি মারিওর এই রূপ বেশিদিন স্থায়ী হলো না। ১৯৬৫ সালের শেষদিকে তার বাড়িতে নোটিশ পাঠালো বিভিন্ন পাওনাদাররা। মারিও কাগজে হিসেব কষে দেখলেন, সর্বমোট ২০ হাজার ডলার ঋণ করেছেন তিনি। ম্যাগাজিনের বেতন দিয়ে এই টাকা পরিশোধ করা অসম্ভব। তিনি এই লেখালেখি ছাড়া আর তেমন কাজ করেন না। ঋণের নোটিশ রেখে মারিও পুজো উদাস হয়ে তাকিয়ে থাকলেন বারান্দার দিকে। বারান্দায় তখন তার স্ত্রী এরিকা এবং পুত্র অ্যান্থনি বসে গল্প করছিলো। পুজো ঠিক করলেন, যেভাবেই হোক তিনি এই সুন্দর দৃশ্যকে বাঁচিয়ে রাখবেন। কিন্তু কীভাবে?

মারিওর ঘাড়ে পড়লো ২০ হাজার ডলারের ঋণের বোঝা; Image Source: Loans Canada 

দ্য গডফাদার

ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে পুজো পুনরায় কলম ধরলেন। কিন্তু এবার কোনো ম্যাগাজিনের গল্প লেখতে বসেননি, এবার ঠিক করলেন আরো কয়েকটি উপন্যাস লেখবেন। সেখান থেকে যদি কিছু অর্থ লাভ হয়, তাহলে সামান্য হলেও ঋণ পরিশোধ করা যাবে। প্রথমে পুরাতন ফাইল ঘেঁটে অসমাপ্ত একটি উপন্যাসের কাগজপত্র বের করলেন। ১৯৬০ সালের শুরুতে তিনি একটি উপন্যাস লেখা শুরু করেছিলেন, কিন্তু কাজের ব্যস্ততায় আর শেষ করা হয়নি। নতুন করে উপন্যাস লেখার কাজে হাত দেয়ায় তার মনে হলো, মাফিয়াদের নিয়ে কিছু গল্প লেখা যাক!

শুরু হলো গডফাদার উপন্যাসের কাজ; Image Source: The Boston Globe

সেখান থেকে শুরু হলো গডফাদার লেখার কাজ। টাইপরাইটারে আঙুল রেখে চোখ বন্ধ করলেন তিনি। তার কল্পনায় ভেসে উঠলো মা মারিয়া পুজোর গম্ভীর কণ্ঠস্বর। মায়ের শক্তিমান রূপকে টাইপরাইটারের অস্থির আন্দোলনে প্রতীয়মান করে তুললেন একজন ডন হিসেবে, যাকে সবাই ডন ভিটো কর্লিওনি নামে চিনে। কর্লিওনি পরিবারের মাফিয়াবৃত্তিকে ঘিরে লেখা হয়ে যায় গডফাদার উপন্যাস। উপন্যাস শেষ হবার পর প্রকাশকের কাছ থেকে অগ্রিম ৫ হাজার ডলার পেলেন তিনি। তার জন্য এই অর্থ ছিল যথেষ্ট। কিন্তু এরপর যা ঘটলো, সেটি পুরো পরিস্থিতি পরিবর্তন করে দিলো।

সুপার মারিও

১৯৬৯ সালে ‘দ্য গডফাদার’-এর আগমন ঘটে বইয়ের জগতে। ঋণ পরিশোধের জন্য যদি কেউ ‘দ্য গডফাদার’ উপন্যাস লিখে থাকেন, তাহলে বলতে হবে লেখক নিজেই একজন পাকা মাফিয়া। কারণ, বের হওয়ার প্রথম সপ্তাহে নিউ ইয়র্কের প্রতিটি বইয়ের দোকানে বিক্রির তালিকায় এক নাম্বারে উঠে গেলো এই উপন্যাস। দেখতে দেখতে পরের সপ্তাহেও একই ঘটনা ঘটলো। গডফাদারের বিক্রি না কমে বরং বেড়ে গেলো কয়েকগুণ। সমগ্র যুক্তরাষ্ট্রসহ ইংল্যাণ্ড, ফ্রান্স, জার্মানি এবং আরো কয়েকটি দেশে ছড়িয়ে পড়লো গডফাদারের সুনাম। প্রায় ৬৭ সপ্তাহ ধরে বিক্রির তালিকায় এককভাবে শীর্ষে থাকলো গডফাদার। বিক্রয় হলো প্রায় ২১ মিলিয়ন কপি। আর এরই মধ্যে কোথাকার কোন আনাড়ি মারিও হয়ে গেলেন লাখপতি‘সুপার মারিও’। সমালোচকদের দৃষ্টিতে তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ লেখকের তালিকায় জায়গা করে নেন। তবে সবকিছু ছাপিয়ে তার আনন্দ ছিল আরেক জায়গায়। আর যা-ই হোক, ঋণ থেকে তো শেষপর্যন্ত মুক্তি পাওয়া গেলো! বই বিক্রি সম্পর্কে একের পর এক খুশির খবর পাওয়া মারিও নিশ্চিন্ত মনে তার স্ত্রী আর সন্তানদের দিকে তাকান। ভাগ্য খুব দ্রুত বদলে গেলো।

মারিও পুজো হয়ে গেলেন লাখপতি; Image Source: Triunfo Arcinegas

উপন্যাসের স্বত্ব মোতাবেক মারিও পুজো প্রাথমিকভাবে ৪ লক্ষ ডলার উপার্জন করলেন। উপার্জনের টাকা প্রকাশক মারিওর হাতে দেয়ার পর তিনি সাথে সাথে টেলিফোন করে মাকে এই খুশির সংবাদ দেন। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, মা প্রথমে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। তিনি ভেবেছিলেন মারিও ৪ হাজার ডলার পেয়েছেন। কিন্তু পরে যখন বুঝতে পারলেন সেটা হাজার নয়, লাখ ডলার, তখন তিনি ফিসফিস করে মারিওকে বললেন,“এই কথা আর বেশি কাউকে জানানোর প্রয়োজন নেই!”

হলিউড এবং অন্যান্য

হলিউডে মারিও পুজো; Image Source: Paramount Pictures

মারিও পুজো জানতেন না, তার ভাগ্য বদল তখনো শেষ হয়নি। কয়েক সপ্তাহ পর তাকে হলিউডে তলব করা হলো। প্রসঙ্গ গডফাদার হলেও এবার উদ্দেশ্য ছিল ভিন্ন। এবার উপন্যাসের গডফাদারকে রূপালি পর্দায় রূপান্তরিত করতে হবে। মারিও পুজো এবং পরিচালক ফ্রান্সিস ফোর্ড কপোলা মিলে তৈরি করলেন গডফাদার সিনেমার চিত্রনাট্য। ১৯৭২ সালের ১৪ মার্চ মুক্তি পাওয়া সিনেমাটি সে বছর সিনেমাপ্রেমীদের মাঝে এক নতুন ঝড় তুলে দিলেন। সিনেমার সফলতার পাশাপাশি পুনরায় গডফাদার উপন্যাস বিক্রি গেলো বেড়ে। সিনেমাপ্রেমীদের মুখে বিখ্যাত হয়ে উঠলো সিনেমার “I will make an offer, he can’t refuse” সংলাপটি। অভিনেতাদের শক্তিমান পরিবেশনায় ইতিহাসের অংশ হিসেবে চিহ্নিত হলো গডফাদার সিনেমা।

দ্য গডফাদার সিনেমার পোস্টার; Image Source: IMDB

এই সাফল্যের জের ধরে পরবর্তীতে তিনি ‘দ্য গডফাদার টু’ এবং ‘দ্য গডফাদার থ্রি’ সিনেমার চিত্রনাট্য রচনা করেন। লেখক হিসেবে ততদিনে তিনি বহু পুরস্কার জিতে নিয়েছেন। কিন্তু তার শ্রেষ্ঠ সাফল্য ছিল প্রথম দুটো গডফাদার সিনেমার চিত্রনাট্যের জন্য দুবার অস্কার জিতে নেয়া। মারিও পুজো গডফাদারে থেমে থাকলেন না। তিনি ‘ফুলস ডাই’, ‘দ্য সিসিলিয়ান’, ‘ওমের্তা’, ‘দ্য লাস্ট ডন’, ‘দ্য ফোর্থ কে’, ‘দ্য ফ্যামিলি’ সহ বহু উপন্যাস রচনা করেন। গডফাদারের ন্যায় বাকি উপন্যাসগুলোও বেস্ট সেলার হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।

ব্যক্তিগত অ্যালবামে মারিও পুজোর অস্কার হাতে ছবি; Image Source: Mario Puzo Album

দ্য গডফাদার লেখার অনুপ্রেরণা

মাফিয়াদের রোমাঞ্চকর জীবন তুলে ধরা হয়েছে মারিও পুজোর গডফাদারে; Image Source: IMDB

আলোচনার শুরুর দিকে ডন ভিটো কর্লিওনি চরিত্রের পেছনে তার মায়ের অবদানের কথা সম্পর্কে বলা হলেও পুরো উপন্যাস জুড়ে মারিও পুজো মাফিয়া জগতের যে রোমাঞ্চকর বর্ণনা দিয়েছেন, এর পেছনে তার অনুপ্রেরণা কে বা কারা ছিলো? অনেকে ধারণা করতেন, হয়তো মারিও পুজো কোনো বড় মাফিয়া চক্রের সাথে পরিচিত ছিলেন। মাফিয়াদের কার্যক্রম খুব সামনে থেকে না দেখে থাকলে গডফাদারের মতো কালজয়ী উপন্যাস রচনা করা সম্ভব না। কিন্তু এই সম্ভাবনা নাকচ করে দেন মারিও। তিনি ‘দ্য গডফাদার পেপারস অ্যাণ্ড আদার রাইটিংস’ বইয়ে এই সম্পর্কে জানান:

“এখন স্বীকার করতে কিছুটা বিব্রত বোধ করছি, কিন্তু আসল ঘটনা হলো, পুরো গডফাদার উপন্যাসটি আমি কোনো মাফিয়ার সংস্পর্শ এবং ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ছাড়াই লিখেছি। আমি কোনো ছোটখাট মাফিয়াকেও চিনতাম না। আমি সম্পূর্ণ উপন্যাসটি অপরাধ নথি এবং কিছু অনুসন্ধানের উপর ভিত্তি করে রচনা করেছি।”

এই বিবৃতিতে অনেকেই আশ্চর্য হয়ে গেলেন। এর মাধ্যমে বোঝা যায় মারিও পুজোর কল্পনাশক্তি এবং চিন্তাধারা কতটা প্রখর ছিল। বই প্রকাশিত হওয়ার পর মারিও পুজো কিছু বাস্তব জীবনের ডনের দেখা পান। তারা সবাই সাক্ষাৎকারের সময় মারিওকে এই প্রশ্নটি করেছিলেন। বরাবরের মতো তারাও কেউ মারিওর কথা বিশ্বাস করতে পারেননি। গডফাদার উপন্যাস পড়ে অনেক ডন তখন মারিও পুজোকে নিজের প্রিয় লেখক হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। মারিও পুজোর লেখনী ছিল তাদের অভিনব জীবনের বিশ্বকোষের মতো। বইয়ের পাতায় তারা সেই জীবনের প্রতিবিম্বের দেখা পান।

ইতালীয় চাষীর বিদায়

১৯৯৭ সালে দ্য টাইমসে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে মারিও পুজো নিজের সম্পর্কে বলেছিলেন,

“আমি একজন সামান্য ইতালীয় চাষী। শুধু তফাৎ একটাই, আমি কিছুটা স্বচ্ছল জীবনযাপন করছি।”

মারিও পুজোর সকল উপন্যাস; Image Source: Everything but the House

বেশ সহজ-সরল মানুষ মারিও গডফাদার সাফল্যের পরেও বিলাসিতার খেয়ায় হারিয়ে যাননি। ১৯৭৮ সালে স্ত্রী এরিকার মৃত্যু হওয়ার পর তিনি ক্যারল জিনো নামক এক নারীর প্রেমে পড়েন। জিনোর সাথে বসবাস করলেও তিনি নিজের সন্তানদের সাথে বেশ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখতেন। তারা সবাই লং দ্বীপে বেশ কাছাকাছি দূরত্বে বসবাস করতেন। সর্বশেষ উপন্যাস ‘ওমের্তা’ সম্পন্ন করার পর তিনি চতুর্থ গডফাদার সিনেমার চিত্রনাট্য লেখার কাজ হাতে নেন। কিন্তু ভাগ্য এবার তার সহায় হলো না। তাই চিত্রনাট্য লেখার আগেই হৃদরোগের কারণে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি। ১৯৯৯ সালের ২ জুলাই নিউ ইয়র্কে মৃত্যুবরণ করেন মারিও পুজো। তার মৃত্যুর মাধ্যমে বিশ্বের থ্রিলারপ্রেমীদের এক অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেলো। সেই সাথে গডফাদারের চতুর্থ কিস্তিও বাতিল হয়ে যায়। কিন্তু মারিও খালি হাতে ফিরে যাননি। একজন আনাড়ি লেখক হিসেবে আবির্ভাব ঘটলেও পৃথিবীর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ থ্রিলার লেখক হিসেবে বিদায় নিয়েছেন তিনি।

দ্য গডফাদার” সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন।

This is a Bangla article about Mario Puzo who was the author of the greatest thriller novel of all time 'The Godfather'. 

Reference: All the necessary references are hyperlinked 

Featured Image: The Boston Globe

Related Articles