.jpeg?w=1200)
যদি বাংলাদেশের কোনো শিক্ষিত ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করা হয়, মহাকাশে উৎক্ষেপিত প্রথম রকেটের নাম কী কিংবা বিশ্বের প্রথম নভোচারী কে ছিলেন, অনেকেই সেই প্রশ্নটির উত্তর দিতে পারবেন। কিন্তু যদি জিজ্ঞাসা করা হয়, মহাকাশ বিজ্ঞানের এই যে সব বিরাট বিরাট সাফল্য, তার পিছনে কোন বিজ্ঞানীর অবদান সবচেয়ে বেশি? তাহলে উত্তরদাতা নির্ঘাৎ মাথা চুলকাতে বাধ্য হবেন। শুধু আমাদের দেশে কেন, যে দেশে এসব সাফল্য অর্জিত হয়েছিল, সেই রাশিয়াতেও অনেকেই এই বিজ্ঞানীর নামের সঙ্গে পরিচিত নয়। এই বিজ্ঞানীর নাম কারিম কারিমভ, যিনি জাতিগতভাবে ছিলেন একজন আজারবাইজানি।
তিনি ছিলেন একজন প্রখ্যাত প্রকৌশলী এবং মহাকাশ বিজ্ঞানী। সোভিয়েত স্পেস প্রোগ্রামের প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম। চার দশক ধরে তিনি ছিলেন সোভিয়েত ইউনিয়নের মহাকাশ প্রকল্পের কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব। ১৯৫৭ সালে মহাকাশে প্রথম রকেট উৎক্ষেপণ (‘স্পুৎনিক–১’), ১৯৬১ সালে মহাকাশে প্রথম নভোচারীকে প্রেরণ (ইউরি গাগারিন), ১৯৬৭ সালে মহাকাশে প্রথম স্বয়ংক্রিয় স্পেস ডকিং (‘কসমস ১৮৬’ ও ‘কসমস ১৮৮’ এবং বিশ্বের প্রথম মহাকাশ স্টেশন নির্মাণ (‘সালিউৎ’ ও ‘মির’ সিরিজ)– এই প্রতিটি সাফল্যমণ্ডিত অভিযান পরিচালিত হয়েছিল তার তত্ত্বাবধানে। অথচ তার নিজের দেশেও খুব কম মানুষই তাকে চিনত!

কারিম আব্বাস–আলী ওগলু কারিমভ ১৯১৭ সালের ১৪ নভেম্বর তদানীন্তন রুশ প্রজাতন্ত্রের সমৃদ্ধ বাকু শহরে জন্মগ্রহণ করেন। বাকু বর্তমান আজারবাইজানের রাজধানী। কারিমভের বাবা আব্বাস আলী কারিমভ ছিলেন একজন তেল প্রকৌশলী ও প্রযুক্তিবিদ। মা সুরাইয়া কারিমোভা ছিলেন প্রখ্যাত আজারবাইজানি রাজনীতিবিদ আসাদুল্লা আখমেদভের মেয়ে। আখমেদভ ১৯১৮–২০ সালে ‘আজারবাইজান গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র’-এর আইনসভার একজন সদস্য ছিলেন।
কারিমভ শৈশবে রেডিও নিয়ে খুবই উৎসাহী ছিলেন, কারণ সেসময় বাকুতে প্রথমবারের মতো রেডিওর প্রচলন ঘটে। ছাত্র হিসেবে কারিমভ ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। ১৯৩৬ সালে তিনি বাকুতে অবস্থিত ‘আজারবাইজান শিল্প ইনস্টিটিউট’-এ (বর্তমানে ‘আজারবাইজান রাষ্ট্রীয় তেল ও শিল্প বিশ্ববিদ্যালয়’) ভর্তি হন। সেখানে অধ্যয়নরত অবস্থায় তিনি বেশ কয়েকটি রেডিও রিসিভার তৈরি করেন এবং ‘আজারবাইজান রেডিও’-তে যোগদান করেন। ছাত্র থাকাবস্থাতেই তিনি মারদাকান রেডিও স্টেশনের পরিচালক নিযুক্ত হন। ১৯৪১ সালে তিনি ইনস্টিটিউট থেকে ইলেক্ট্রো–মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
কারিমভের স্নাতক সম্পন্ন হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই জার্মানির নেতৃত্বাধীন অক্ষশক্তি সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ করে। এসময় সোভিয়েত সশস্ত্রবাহিনীতে রেডিও ইঞ্জিনিয়ারদের খুব চাহিদা ছিল। কিন্তু কারিমভের মেধার কথা বিবেচনা করে তাকে যুদ্ধক্ষেত্রে প্রেরণ না করে সোভিয়েত সেনাবাহিনীর ‘ফেলিক্স জেরঝিনস্কি আর্টিলারি অ্যাকাডেমি’-তে ভর্তি হওয়ার সুযোগ করে দেয়া হয়। সেসময় জার্মান আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য অ্যাকাডেমিকে বর্তমান উজবেকিস্তানের সমরখন্দ শহরে স্থানান্তর করা হয়। কারিমভ সেখানে চলে যান, এবং তার জ্ঞান পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তাকে সরাসরি অ্যাকাডেমির ৫ম বর্ষে ভর্তি করা হয়।

১৯৪৩ সালে তিনি সেখান থেকে আর্টিলারি ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে ডিগ্রি অর্জন করেন, এবং তার ডিপ্লোমার বিষয়বস্তু ছিল মর্টার উৎপাদন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বাকি সময়টা তিনি বিখ্যাত ‘কাতিউশা’ রকেট লঞ্চারের পর্যবেক্ষণের কাজে ব্যয় করেন। যুদ্ধে অবদানের জন্য তাকে সোভিয়েত সরকার ‘অর্ডার অফ দ্য রেড স্টার’ পদক প্রদান করে।
কারিমভ সোভিয়েত মহাকাশবিজ্ঞানের অগ্রযাত্রার প্রথম থেকেই এই প্রকল্পের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত ছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন শীর্ষ জার্মান রকেট বিজ্ঞানীদের হস্তগত করার জন্য প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়। ১৯৪৬ সালে কারিমভ জার্মানির সোভিয়েত–অধিকৃত অংশে অবস্থিত নর্ডহাউসেনে যান। সেখানে জার্মানির বিখ্যাত ‘ভি–২’ রকেট নির্মাণের একটি কারখানা ছিল। কারিমভ অন্যান্য সোভিয়েত বিজ্ঞানীদের সঙ্গে জার্মান রকেট প্রোগ্রামের অবশিষ্টাংশ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করেন।
১৯৪৬ সাল থেকে কারিমভ আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের জন্য রেডিও মেজারমেন্ট সিস্টেম তৈরির গবেষণায় লিপ্ত ছিলেন। তিনি ‘দন’ রেডিও মেজারমেন্ট সিস্টেম উদ্ভাবন করেন, এবং পরবর্তীতে এটি সোভিয়েত স্পেস প্রোগ্রামে ব্যবহার করা হয়। এই উদ্ভাবনের জন্য তাকে ১৯৫০ সালে সোভিয়েত ‘রাষ্ট্রীয় পুরস্কার’ প্রদান করা হয়। বর্তমান কাজাখস্তানের বাইকোনুরে মহাকাশযান উৎক্ষেপণ কেন্দ্র নির্মাণের পর থেকেই কারিমভ ‘মহাকাশযান সংক্রান্ত রাষ্ট্রীয় কমিশন’-এর একজন সদস্য ছিলেন।

পরবর্তী ১০ বছরে সোভিয়েত ইউনিয়ন বিশ্বের প্রথম আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং বিশ্বের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ নির্মাণ করে। উভয় প্রকল্পেই কারিমভ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এই সময়ের অধিকাংশই তিনি বর্তমান দক্ষিণ রাশিয়ার অস্ত্রাখান প্রদেশে অবস্থিত কাপুস্তিন ইয়ার শহরের মহাকাশযান গবেষণা কেন্দ্রে গবেষণার কাজে ব্যয় করেন। একই সঙ্গে তিনি সোভিয়েত প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে দ্রুত পদোন্নতি লাভ করেন। ১৯৫৯ সালের মধ্যে তিনি ‘ইঞ্জিনিয়ার–কর্নেল’ পদে উন্নীত হন এবং মন্ত্রণালয়টির ‘মহাকাশ সংক্রান্ত বস্তু নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে’র পরিচালক নিযুক্ত হন। এই সময় জুড়ে তার তত্ত্বাবধানে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিভিন্ন গোপন মহাকাশযান উৎক্ষেপণ কেন্দ্র থেকে রকেট উৎক্ষেপিত হয়, যেগুলোর মধ্যে ছিল বিশ্বের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ ‘স্পুৎনিক–১’।
এই পর্যায়ে তিনি সৌভাগ্যবশত এক ভয়াবহ দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যান। ১৯৬০ সালের অক্টোবরে কারিমভের ছোট ভাই এক বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হলে তাকে ভাইয়ের শেষকৃত্যে যোগদানের জন্য কয়েক দিনের ছুটি দেয়া হয়। ঠিক এই সময়েই বাইকোনুরে ‘আর–১৬’ আইসিবিএম উৎক্ষেপণকালে বিস্ফোরিত হয় এবং এর ফলে সোভিয়েত স্ট্র্যাটেজিক রকেট ফোর্সের কমান্ডার মার্শাল নেদেলিনসহ ১২৬ জন সোভিয়েত সেনা কর্মকর্তা ও প্রকৌশলী নিহত হন। কারিমভেরও এই পরীক্ষার সময় উপস্থিত থাকার কথা ছিল, কিন্তু অনুপস্থিত থাকায় তিনি প্রাণে বেঁচে যান। এভাবে ভাগ্যের পরিহাসে কারিমভের ভাইয়ের মৃত্যু তার নিজের জীবনকে রক্ষা করে।
পরবর্তী বছরে সোভিয়েত ইউনিয়ন মহাকাশ জয়ের ক্ষেত্রে এক বিরাট সাফল্য অর্জন করে। ১৯৬১ সালে ইউরি গ্যাগারিন প্রথম মানুষ হিসেবে ‘ভোস্তক–১’ মহাকাশযানে করে মহাশূন্যে গমন করেন। সোভিয়েতদের এই সাফল্য বিশ্বব্যাপী সাফল্য সৃষ্টি করে। এই সাফল্যের পেছনে কারিমভের গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল, এবং এজন্য তাকে মেজর জেনারেল পদ প্রদান করা হয়। এর মধ্য দিয়ে কারিমভ সোভিয়েত স্ট্র্যাটেজিক রকেট ফোর্সের একজন কর্তাব্যক্তিতে পরিণত হন। পরবর্তী কয়েক বছরে তিনি বিভিন্ন নতুন কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণের কাজে আত্মনিয়োগ করেন, যেগুলোর মধ্যে ছিল ‘জেনিৎ’ গোয়েন্দা উপগ্রহ।

১৯৬৪ সালে কারিমভ ‘মহাকাশ সম্পদ কেন্দ্রীয় ডিরেক্টরেটে’র কমান্ডার–ইন–চিফ নিযুক্ত হন। কিন্তু এসময় তিনি সোভিয়েত কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। তিনি মহাশূন্যে আরো মানুষ প্রেরণের পক্ষপাতী ছিলেন, কিন্তু সোভিয়েত কর্তৃপক্ষ আর এ ব্যাপারে আগ্রহী ছিল না। ফলে শাস্তিস্বরূপ কারিমভসহ আরো বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে সদ্য সৃষ্ট ‘সাধারণ যন্ত্রনির্মাণ মন্ত্রণালয়’-এ বদলি করা হয়।
১৯৬৬ সালে আরেক বিখ্যাত সোভিয়েত মহাকাশবিজ্ঞানী সের্গেই করোলিয়োভের সুপারিশক্রমে কারিমভকে নতুন ‘সয়ুজ’ মনুষ্যবাহী মহাকাশযান প্রকল্পের জন্য সৃষ্ট রাষ্ট্রীয় কমিশনের সভাপতি নিযুক্ত করা হয়। ইতোপূর্বে সোভিয়েত ইউনিয়নের যেকোনো রাষ্ট্রীয় কমিশনের সভাপতি হতে পারতেন কেবল মন্ত্রী পদমর্যাদার কেউ। কারিমভ প্রথম ব্যক্তি, যিনি মন্ত্রী না হয়েও পরবর্তী ২৫ বছরের জন্য এই কমিশনের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এই সময় তাকে অত্যন্ত কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও তাকে কাজ করতে হত, তিনি স্ত্রী ও কন্যাকে সময় দিতে পারতেন না, এমনকি অসুস্থ হলেও তার ছুটি নেয়ার সুযোগ ছিল না!
তার এই নতুন দায়িত্ব কয়েকটি বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে শুরু হয়। তিনি দায়িত্ব গ্রহণের অল্প দিনের মধ্যেই ‘কসমস ১৩৩’ নামক সয়ুজ সিরিজের পরীক্ষামূলক রকেটটির উৎক্ষেপণ ব্যর্থ হয়। ১৯৬৬ সালের ডিসেম্বরে সয়ুজ সিরিজের আরেকটি রকেট উৎক্ষেপণের সময় বিস্ফোরিত হয় এবং কারিমভ অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান। পরবর্তীতে সয়ুজ সিরিজের আরেকটি রকেট সফলভাবে উৎক্ষেপিত হয়, কিন্তু উৎক্ষেপণের কিছুক্ষণের মধ্যেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আরাল সাগরে পতিত হয়। বার বার ব্যর্থতার পরেও কারিমভের ধারণা ছিল যে, সয়ুজের প্রযুক্তিগত সমস্যাগুলোর সমাধান করা সম্ভব। তার ধারণা ভ্রান্ত প্রমাণিত হয়, এবং ১৯৬৭ সালের এপ্রিলে ‘সয়ুজ–১’ রকেটটি বিধ্বস্ত হয়ে নভোচারী ভ্লাদিমির কোমারভ নিহত হন।

এই দুর্ঘটনার ফলে সোভিয়েত মহাকাশ অভিযান মারাত্মক ধাক্কা খেলেও সোভিয়েত নেতৃবৃন্দ চাঁদে মনুষ্যবাহী রকেট প্রেরণের জন্য কারিমভের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। ইতোমধ্যে ১৯৬৭ সালের অক্টোবরে ‘কসমস ১৮৬’ ও ‘কসমস ১৮৮’ রকেট দুটি মহাকাশে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংযুক্ত হয়, এবং এই সাফল্যের জন্য কারিমভকে লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদে উন্নীত করা হয়। কিন্তু সোভিয়েতদের চাঁদ অভিযানের ক্ষেত্রে অগ্রগতি ছিল খুব ধীরগতিসম্পন্ন, এবং ১৯৬৯ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চাঁদে প্রথম মনুষ্যবাহী রকেট প্রেরণের পর মস্কো এই প্রকল্পের ওপর আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।
এর পরিবর্তে মস্কো মহাশূন্যে প্রথম মহাকাশ স্থাপনের ব্যাপারে উৎসাহী হয়ে ওঠে। বেশ কয়েকটি ব্যর্থতা ও দুর্ঘটনার পর এই প্রকল্পটি সাফল্য অর্জন করে, এবং ১৯৭০ ও ১৯৮০–এর দশকে কারিমভের তত্ত্বাবধানে ‘সালিউৎ’ ও ‘মির’ সিরিজের মহাকাশ স্টেশন মহাশূন্যে স্থাপিত হয়। এর পাশাপাশি কারিমভ ১৯৭৫ সালে মার্কিন–সোভিয়েত যৌথ ‘অ্যাপোলো–সয়ুজ টেস্ট প্রোজেক্ট’ সাফল্যের সঙ্গে তত্ত্বাবধান করেন।
সোভিয়েত সরকার তাদের মহাকাশ প্রকল্প নিয়ে খুবই সতর্ক ছিল এবং তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্রগুলো যাতে এই প্রকল্পে ব্যাঘাত ঘটানোর জন্য কোনো প্রচেষ্টা চালাতে না পারে, সেজন্য সবসময় উদ্বিগ্ন থাকত। এজন্য মস্কো মহাকাশ প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত সকল শীর্ষ কর্মকর্তাকে লোকচক্ষুর অন্তরালে রাখে। কারিমভ ছিলেন সোভিয়েত মহাকাশ প্রকল্পের শীর্ষ ব্যক্তিত্ব, সুতরাং তার ব্যাপারে মস্কো ছিল আরো বেশি সতর্ক। কারিমভকে কখনও ক্যামেরার সামনেও যেতে দেয়া হত না, কেবল রেডিওতে মাঝে মাঝে কারিমভের কণ্ঠে সোভিয়েত মহাকাশ প্রকল্পের সাফল্য ঘোষিত হত।

অবশেষে ১৯৮৭ সালে সোভিয়েত কমিউনিস্ট দলের মুখপত্র ‘প্রাভদা’ পত্রিকায় কারিমভের জীবন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশিত হয় এবং এই প্রতিভাবান বিজ্ঞানী প্রথমবারের মতো জনসমক্ষে আসেন। তাকে সোভিয়েত সরকার ‘হিরো অফ দ্য সোভিয়েত ইউনিয়ন’, ‘হিরো অফ সোশ্যালিস্ট লেবার’ ও ‘অর্ডার অফ লেনিন’সহ নানাবিধ পুরস্কার ও পদক প্রদান করেছে। ১৯৯১ সালে কারিমভ আনুষ্ঠানিকভাবে অবসর গ্রহণ করেন।
১৯৯৫ সালে তিনি ‘মহাকাশের পথ’ (The Way to Space) নামক একটি আত্মজীবনী প্রকাশ করেন, এবং এতে সোভিয়েত মহাকাশ প্রকল্পের বিভিন্ন অজানা দিক সম্পর্কে আলোকপাত করেন। অবসর গ্রহণের পর তিনি একটি গ্রাম্য বাড়িতে বসবাস করতেন, যদিও তখনও রুশ মহাকাশ প্রকল্পের কর্ণধাররা পরামর্শ গ্রহণের জন্য তাঁর কাছে আসতেন। ২০০৩ সালের ২৯ মার্চ এই অনন্যসাধারণ বিজ্ঞানী ৮৫ বছর বয়সে মস্কোয় মৃত্যুবরণ করেন।