Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

জন লেননের জীবনের ভালোবাসারা!

১৯৬৬ সালের নভেম্বর মাস। ইয়কো ওনো নামের এক তরুণীর কাজের প্রদর্শনী চলছিল লন্ডন গ্যালারিতে। প্রদর্শনীর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন ইয়োকো। সেখানেই ইয়োকোর সাথে দেখা হয়ে যায় জন লেননের। জন লেনন। বিটলসের সহপ্রতিষ্ঠাতা, গায়ক এবং গীতিকার। সময় লাগে না তাদের একে অপরকে চিনে নিতে। অল্প সময়েই নিজেদের খুব কাছাকাছি চলে আসেন এই জুটি। কখন আলোচিত হন, কখনো সমালোচিত। সাড়ে তিন বছর একে অন্যকে ভালোবেসে যান। সাড়ে তিন বছর পর নিজেদের ভালোবাসাকে একটু সামনে এগিয়ে নিয়ে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন তারা। ১৯৬৯ সালের ২০ মার্চ বিয়ে করেন জন লেনন এবং ইয়কো ওনো। এরপর অনেকগুলো দিন পার হয়েছে, অনেকবার সেই ২০ মার্চ পেরিয়ে গিয়েছে। সামনে ইয়োকো ওনো এবং জন লেননের ৪৯তম বিবাহবার্ষিকী। তবে এই জুটির ভালোবাসার গল্প মানুষের মুখে বেঁচে আছে, বেঁচে থাকবে চিরকাল। আজ এই জুটিকে নিয়ে আর তাদের ভালোবাসাকে নিয়ে চলুন জেনে আসি আরো একটু বেশি।

জন লেনন এবং ইয়োকো ওনো; Source: Billboard

বিয়েতে অসম্ভব খুশি ছিলেন লেনন আর ওনো। বিয়ের দিন মিনিস্কার্ট আর সাদা হ্যাটে নিজেকে সাজিয়েছিলেন ওনো। আর লেনন পরেছিলেন সাদা ব্লেজার আর শার্ট। বিয়ের পরপরই শান্তি প্রতিষ্ঠার কাজে ‘ব্যাগিজম’ নামের প্রচারণা চালান এই জুটি। তাদের এই কাজটি অসম্ভব আলোচিত হয়। ব্যাগিজম হচ্ছে ব্যাগের মাধ্যমে একজন মানুষের পুরো শরীর আবৃত করা। শান্তি প্রতিষ্ঠায় আগে থেকেই কর্মতৎপর ছিলেন জন লেনন। ওনোর সাথে যুক্ত হয়ে সেই তৎপরতা আরো বেড়ে যায়। এমনকি নিজেদের হানিমুনের সময় এই ব্যাগিজমের জন্য ছবি তোলেন তারা। তাদের পাশাপাশি ব্যাগ দ্বারা নিজেদের আবৃত করে তোলা ছবিটি বেশ জনপ্রিয় হয়। সেই অর্থে বিয়েটা ভালোবাসা কিংবা কাজের শেষ নয়, বরং শুরু ছিল এই জুটির জন্য। এটাই ছিল তাদের একসাথে করা প্রথম কাজ। ১৯৭০ সালে, অর্থাৎ বিয়ের ঠিক এক বছর পর জন লেননের গানের দল বিটলস ভেঙে যায়। বেশ সমালোচনা হয় তখন ইয়োকোকে নিয়ে। অনেকে বলতে শুরু করেন যে, ইয়োকোর কারণেই এত জনপ্রিয় ব্যান্ড ভেঙে গিয়েছে। তবে জন লেননের সাথে যৌথভাবে কাজ করে সিরিজ আকারে গান প্রকাশ করেন এরপর ইয়োকো। লেনন আবার ফিরে আসেন। তার শেষ অ্যালবামটি প্রকাশিত হয় মৃত্যুর ঠিক তিন সপ্তাহ আগে। ‘ডাবল ফ্যান্টাসি’তেই এই দম্পতি শেষ কাজ করেন। ১৯৮০ সালের কথা সেটি। এর আগে বছর পাঁচেক নিজেদের একমাত্র সন্তান শনের দেখভাল করার জন্য গানের দুনিয়া থেকে অনেকটাই দূরে থাকেন লেনন।

ব্যাগিজম নিয়ে জন লেনন ও ইয়োকো; Source: Rolling Stone

১৯৮৫ সালে টেলিভিশনের পর্দায় ‘জন এন্ড ইয়োকো: আ লাভ স্টোরি’ শীর্ষক একটি টেলিভিশন নাটক প্রচারিত হয়। ১৯৬৬ সাল থেকে শুরু করে লেননের মৃত্যুর বছর, অর্থাৎ ১৯৮০ সাল পর্যন্ত দেখান হয় এই নাটকে। এর পেছনে সাহায্য করেন ইয়োকো। তবে জন লেননের জীবনে ইয়োকোর আগেও এসেছিলেন অন্য কেউ। তার প্রথম স্ত্রী সিন্থিয়া লেনন। জন লেনন এবং বিটলসের জন্য একটি বড় প্রভাব ছিল ভারত। বিটলস প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬০ সালে। দলের চারজন সদস্যের মধ্যে জর্জ হ্যারিসনের ছিল ভারত ও হিন্দুধর্মের প্রতি আকর্ষণ। আর সেখান থেকে ভারতের সিতার ও অন্যান্য বাদ্যযন্ত্র, ভারতীয় ধাঁচের সুরের সাথে খানিকটা মিলে যাওয়া- ইত্যাদি ব্যাপারগুলো লক্ষ্য করা যায় বিটলসের গানে। ভারতের নানা স্থানে ঘোরা, সবজি খাওয়া, আশ্রমে সময় কাটানো- ইত্যাদি কাজ করে তখন বিটলসের সদস্যরা। তাদের সাথে ছিলেন বান্ধবী, স্ত্রী ও অন্যান্য কলাকুশলী। লেননের সাথে এই সময়টুকুতে ছিলেন তার প্রথম স্ত্রী সিন্থিয়া। এক এই সিন্থিয়া? তার সাথে লেননের ছাড়াছাড়িই বা হলো কীভাবে? উত্তরটা অনেকটা লেননের বিপক্ষেই চলে যায়। সিন্থিয়া সবসময় ছিলেন বিটলসের শুভাকাঙ্ক্ষী। দলটির সাথে পুরোপুরি জড়িয়ে ছিলেন এই নারী। ব্যান্ডের গানের কথা লেখা থেকে শুরু করে গানের রেকর্ডিং পর্যন্ত সবটাতেই অবদান ছিল সিন্থিয়ার।

জন লেনন ও তার প্রথম স্ত্রী সিন্থিয়া; Source: Daily Mail

কিন্তু এই সুখ খুব বেশিদিন সহ্য হয়নি তার ভাগ্যে। জনের জীবনে এই সময়ে আসেন ইয়োকো ওনো। সিন্থিয়ার সাথে যে জনের ভালোবাসার সম্পর্ক ছিল না, তা নয়। একসাথে কলেজে পড়াশোনা করেন এই দুজন। সেখান থেকেই তাদের মধ্যে ভালোবাসা গড়ে ওঠে। একসাথে ক্লাস করেন তারা, চিঠি লেখালেখি চলে, চলে কথাবার্তাও। তবে এগিয়ে যাওয়া হয়নি সেভাবে কারোরই। ১৯৫৯ সালের জুলাই মাস। একটি পার্টিতে লেনন বুঝতে পারেন যে তিনি সিন্থিয়াকে ভালোবাসেন। আর সিন্থিয়াও সেটা অনুভব করেন। শুরু হয় প্রকাশ্যে ভালবাসা। ১৯৬২ সালের এপ্রিল মাসে সিন্থিয়ার গর্ভে আসে লেননের সন্তান। দ্রুত বিয়ে করে ফেলেন তারা। তবে এর সবটাই হয় অনেক বেশি গোপনে। বিটলস তখন সাফল্যের চূড়ায়। এমন একটা সময়ে সন্তান এবং স্ত্রীর কথা সবাইকে জানানো সম্ভব ছিল না কারো পক্ষে। নিজেদের সন্তান জুলিয়ানকে অনেকটা একাই মানুষ করেন সিন্থিয়া। জন তখন মাদকের নেশায় মগ্ন। সাথে ছিল বিটলসের সাফল্য। ফলে একটু একটু করে তাদের সম্পর্কে ভাঁটা পড়তে শুরু করে। রবার্তো বাসানিনির সাথে সম্পর্ক গড়ে ওঠে সিন্থিয়ার।

জনের তখন সেদিকে মন দেওয়ার সময় নেই। ইয়োকো তখন তার জীবনে চলে এসেছিলেন। নিজের সিন্তান জুলিয়ানও খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হিসেবে আসেনি কখনো জন লেননের জীবনে। এর মধ্যে ইয়োকোর সাথে হাতেনাতে জনকে পাকড়াও করে ফেলার পর নিজেদের সম্পর্ক নিয়ে আবার ভাবেন এই সম্পতি। অবশেষে বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেওা হয়। সিন্থিয়া এরপর আরো দুবার বিয়ে করেন। তবে তার জীবন জনের প্রভাবমুক্ত হয়নি কখনো। ক্যান্সারে ভুগে অবশেষে মারা যান তিনি। তবে জন ইয়কোকে নিয়ে সুখেই ছিলেন। প্রথমে একবার গর্ভপাত হয়ে সন্তান হারান এই দম্পতি। তবে সেটা সামলে নিয়ে, পুরো পৃথিবীর মানুষের সমালোচনাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সামনে এগিয়ে গিয়েছিলেন তারা। তাহলে কেন পরবর্তীতে সমস্যা এল আবার জন আর ইয়োকোর জীবনে? ১৯৮০ সালে কেন মারা গেলেন জন লেনন?

জন লেননের খুনি; Source: CNN.com

ইয়োকোকে ভালোবেসেছিলেন জন লেনন। লেননকে ইয়োকোকে ছাড়া বাঁচা কেন সম্ভব নয় জিজ্ঞেস করলে এই গায়ক চিন্তা না করেই সহজ ভাষায় উত্তর দেন যে, ইয়োকোকে ছাড়া বেঁচে থাকা তার পক্ষে সম্ভব। কিন্তু তখন বেঁচে থেকে তিনি কী করবেন, সেটিই ভেবে পান না। সিন্থিয়াকে লেনন ভালোবেসেছিলেন কিনা বলা সম্ভব নয়। মোহ ছিল সেটা? আবেগ? উত্তর জানা নেই। তবে ইয়োকো ছিলেন লেননের সবটা জুড়ে। ইয়োকোকে পাওয়ার পর আর সেই হাত ছাড়তে চাননি লেনন। ইয়োকোর বেলাতেও কথাটি সত্যি। লেননের আগে দুবার ঘর বেঁধেছেন ইয়োকো। তবে কোথাও বেশিদিন নিজেকে মানিয়ে নিতে পারেননি। তবে লেননকেই শেষ ভালোবেসেছিলেন তিনি।১৯৭৩ সালে সাময়িক বিচ্ছেদ হলেও সেটা সরিয়ে আবার কাছে আসেন এই দম্পতি। তবে ইয়োকোকে ছেড়ে পৃথিবী থেকে তাকে যেতে বাধ্য করে মার্ক ডেভিড চ্যাপম্যান। বেশ কিছুদিন ধরে লেননকে অনুসরণ করছিল ডেভিড।

ডিসেম্বরের ৮ তারিখ; ১৯৮০ সালের এই দিনে জন লেননের নিউ ইয়র্কের বাসস্থানে ৩৮ ক্যালিবারের পিস্তল দিয়ে ৪০ বছর বয়সী লেননকে মেরে ফেলে সে। বিখ্যাত হওয়ার জন্যেই এই কাজটি করেছিল বলে জানায় ডেভিড। জন লেননের মৃত্যুর পরেও লেননের স্মৃতিতে জাদুঘর তৈরি, লেনন-ওনো গ্র্যান্ট ফর পিসসহ লেননের কাজগুলোকে এগিয়ে নেওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করেন ইয়োকো ওনো।

ফিচার ইমেজ: Irish Mirror

Related Articles