সেই হোর্ডিং
১৯৯৫ সালের কথা। মুম্বাইয়ের গ্রান্ট রোড রেইলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন ওভারব্রিজে কয়েক মাস ধরে বিশাল একটি হোর্ডিং ঝুলে ছিল। কুলি নাম্বার ওয়ান ছবির হোর্ডিং সেটি। তবে সেখানে ছবির নায়ক বা নায়িকার মুখ ছিল না। ছিল ছবিতে নায়িকার বাবা হুঁশিয়ার চাঁদের মুখ। আর তার নীচে ক্যাপশনে লেখা ছিল খুবই ‘অনুপ্রেরণাদায়ী’ একটি উক্তি: “বাঙলে মে র্যাহেঙ্গে, গাড়ি মে ঘুমেঙ্গে, নোটো পে সোয়েঙ্গে!” (বাংলোয় থাকব, গাড়িতে ঘুরব, নোটের উপর ঘুমাব।)
ভারতের ব্যস্ততম নগরী মুম্বাইয়ের পথচলতি মানুষেরাও ঐ রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় একবার হোর্ডিংটি দেখে থমকে দাঁড়াতো। এবং অনাবিল হাসিতে ছেয়ে যেত তাদের মুখ। না, হোর্ডিংয়ে লেখা অবাস্তব, অসম্ভব কথাগুলোর জন্য নয়। বরং হোর্ডিংয়ে থাকা মানুষটিকে দেখে। সেই সময়ে হলে গিয়ে কুলি নাম্বার ওয়ান ছবি কে না দেখেছে! তাই ছবিতে হুঁশিয়ার চাঁদ চরিত্রটি ঠিক কতটা রসে টইটম্বুর, তা-ও কারও অজানা নয়। সারাদিনের ব্যস্ততায় মনটা যতই অসাড় হয়ে থাকুক, হুঁশিয়ার চাঁদকে দেখে কি না হেসে পারা যায়!
এই যে হুঁশিয়ার চাঁদ নামক চরিত্রটির কথা বলছি বারবার, এই চরিত্রটিকে কিংবদন্তীতুল্য করে তুলেছিলেন যিনি, তার নাম কাদের খান। তার পরিচয় মূলত দুটি। একাধারে তিনি একজন অভিনেতা, এবং একজন চিত্রনাট্যকার ও সংলাপ রচয়িতা। ৩০০টি ছবিতে অভিনয়ের পাশাপাশি ২৫০টি ছবির চিত্রনাট্য-সংলাপ লিখেছেন তিনি। ‘৭০ ও ‘৮০-র দশকে বলিউডের বহু ব্লকবাস্টার ছবির মাস্টারমাইন্ড তিনিই।
চিরবিদায়
এই মানুষটি আর আমাদের মাঝে নেই। দীর্ঘদিন প্রোগ্রেসিভ সুপারনিউক্লিয়ার পালসি রোগের সাথে লড়াই করছিলেন তিনি। টানা ১৭ সপ্তাহ টরন্টোর একটি হাসপাতালে কাটাতে হয়েছে তাকে। শেষপর্যন্ত তার বয়সের ভারে ন্যুব্জ শরীরটি সেই লড়াইয়ে হার মেনেছে। গত ৩১ ডিসেম্বর কানাডার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ছয়টায় কোমায় চলে যান তিনি। আর ফিরে আসেননি। ৮১ বছর বয়সে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন।
কাদের খানের জীবনকাহিনী তার লেখা ছবির সংলাপের চেয়ে কোনো অংশে কম ‘সিনেম্যাটিক’ নয়। ছোট্ট একটি উদাহরণ দিয়েই বিষয়টিকে পাঠকের সামনে দিনের আলোর মতো পরিষ্কার করে তোলা সম্ভব। এই মানুষটি জন্মগ্রহণ করেছেন আফগানিস্তানে, তার শৈশব কেটেছে পাকিস্তানে, তিনি খ্যাতিমান হয়েছেন ভারতে, আর তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন কানাডায়!
যেভাবে পথচলার শুরু
কাদের খানের জন্ম আফগানিস্তানের কাবুলে, ১৯৩৭ সালে। তার বাবা আব্দুল রহমান খান ছিলেন কান্দাহারের, আর তার মা ইকবাল বেগম ছিলেন তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের পিশিনের (বর্তমানে পাকিস্তানের বেলুচিস্তান)। মোট চার ভাই ছিলেন তারা। শৈশবে পাকিস্তানের একটি মিউনিসিপাল স্কুলে পড়েছেন তিনি। এরপর চলে আসেন মুম্বাইয়ের কামাথিপুরায়। সেখানে ইসমাইল ইউসুফ কলেজে পড়ার পর তিনি ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স (ইন্ডিয়া) থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে মাস্টার্স ডিপ্লোমা ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৭০ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত তিনি এম এইচ সাবু সিদ্দিক কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে অধ্যাপনা করেন।
সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মতো একটি কঠিন বিষয়ে পড়াশোনা শেষ করে সেই বিষয়েই অধ্যাপনা শুরু করলেও, কাদের খানের প্রথম প্রেম সবসময়ই ছিল অভিনয়। থিয়েটারের মস্ত বড় ভক্ত ছিলেন তিনি। কলেজে ছাত্রদের থিওরি অব স্ট্রাকচার, হাইড্রোলিকস, আরসিসি স্টিলের মতো খটমট জিনিস পড়ালেও, তার নিজের মন পড়ে থাকতো সবসময় থিয়েটারে, স্তানিসলাভস্কি, ম্যাক্সিম গোর্কি, চেখভ, দস্তয়ভস্কিদের জগতে।
একবার থিয়েটারে তাস কি পাতে নামক একটি নাটকে অভিনয় করছিলেন তিনি। সেখানে তিনি নজরে পড়ে যান কমেডিয়ান আঘার। আঘা গিয়ে তার নাম করেন দিলীপ কুমারের কাছে। বলেন, “পারলে একবার দেখে আসুন এই ছেলের অভিনয়।” সত্যি সত্যিই নাটকে তার অভিনয় দেখতে হাজির হন দিলীপ কুমার, এবং এতটাই মুগ্ধ হন যে নিজের পরবর্তী দুই ছবি সাগিনা ও বৈরাগ-এর জন্য সাইন করিয়ে ফেলেন তাকে।
বম্বে ইন্ডাস্ট্রিতে রাজত্ব
এদিকে অভিনয়ের পাশাপাশি থিয়েটারে নাটকের চিত্রনাট্যও কাদের খান নিজেই লিখতেন। একদিন রোজ মুভিজের প্রযোজন রমেশ বেহল তার কাছে আসেন একটি ছবির চিত্রনাট্য লেখানোর জন্য। মাত্র চার ঘন্টায় চিত্রনাট্য লিখে ফেলেন তিনি, আর এর তিনদিনের মধ্যেই শুরু হয়ে যায় সেই ছবির শ্যুটিং! নিঃসন্দেহে একটি রেকর্ড এটি, এবং এভাবেই নরেন্দ্র বেদীর জাওয়ানি দিওয়ানি ছবির মাধ্যমে চিত্রনাট্যকার হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে তার। এই ছবির জন্য কড়কড়ে ১,৫০০ রুপি পকেটে পুরেছিলেন তিনি। সেই আমলে তার জন্য এটি একটি রাজকীয় অংকই বটে, কেননা এর আগে কখনোই ৫০০ রুপির বেশি কামাই করেননি তিনি। তবে এ তো কেবল ছিল তার পথচলার শুরু। খেল খেল মে ছবির সংলাপ লিখে ১০,০০০ রুপি আয় করেন তিনি।
কাদের খানের কথা বলার ধরন ছিল খুবই বুদ্ধিদীপ্ত, ব্যাঙ্গাত্মক ও নাটকীয়। এবং এই তিনের সংমিশ্রণেই তিনি নিজের একটি সিগনেচার স্টাইল তৈরি করে নিয়েছিলেন। চলিত রীতির সংলাপ ও কথায় কথায় প্রবাদ বাক্যের ব্যবহার তাকে অনন্য করে তুলেছিল। তার এই দিকটি নির্মাতা মনমোহন দেশাইকে সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করেছিল। তার মুখে রোটি ছবির চিত্রনাট্যের বর্ণনা শুনে দেশাই এতটাই বিমোহিত হয়েছিলেন যে, তাকে একটি প্যানাসোনিক টিভি, একটি সোনার ব্রেসলেট আর নগদ ২৫,০০০ রুপি উপহার দিয়েছিলেন। এবং সেই থেকে তার লেখার ফি এক ধাক্কায় ২৫,০০০ রুপি থেকে এক লাখে পৌঁছে যায়।
সেলিম-জাভেদের মতো সেই সময়ের ‘তারকা লিখিয়ে’ ছিলেন কাদের খান। পাশাপাশি তিনি সেই বিরলতম ব্যক্তিত্বদের একজন, যিনি একই সাথে বলিউডের প্রধান দুই ক্যাম্প, দেশাইয়ের একটি ও প্রকাশ মেহরার অপরটি, এই দুইয়ের সাথেই সবসময় সদ্ভাব বজায় রেখে কাজ করে যেতে পেরেছিলেন। একদিকে দেশাইয়ের সাথে যেমন তিনি অমর আকবর অ্যান্থনি, ধারাম বীর, কুলি, গঙ্গা যমুনা সরস্বতীর মতো ছবিতে কাজ করেছেন, তেমনি মেহরার সাথে মুকাদ্দাক কা সিকাদ্দার, লাওয়ারিস, শারাবির মতো ছবিতেও কাজ করেছেন।
তবে তিনি কেবল এই দুই ক্যাম্পের মাঝেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেননি। দক্ষিণী প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ও নির্মাতারা যখন বিখ্যাত দক্ষিণী ছবির হিন্দি রিমেক তৈরির জন্য বম্বেতে এসে ভিড় জমাতে লাগলেন, তাদেরও প্রথম পছন্দ ছিলেন কাদের খানই। হিম্মতওয়ালা, জাস্টিস চৌধুরী, মাওয়ালি, তোহফা, হাইসিয়াত, নায়া কাদাম, সিংহাসনের মত ছবির সংলাপ ও চিত্রনাট্য সৃষ্টি হয়েছিল তার হাত ধরেই। তিনি কেবল দক্ষিণী ছবিগুলোকে হিন্দিতে অনুবাদ করেই ছেড়ে দেননি, বরং সেগুলোকে বম্বের উপযোগী রূপে রূপান্তরেও সফল হয়েছিলেন।
এদিকে দিলীপ কুমারের ছবিতে প্রথম চুক্তিবদ্ধ হলেও, কাদের খানের চলচ্চিত্রে অভিনয়ের অভিষেক ঘটে রাজেশ খান্নার রোমান্টিক কোর্ট-রুম ড্রামা দাগে, যেখানে তিনি ছিলেন অ্যাটর্নির ভূমিকায়। এ ছবির মাধ্যমে অভিনয়ে যেমন তিনি প্রশংসিত হয়েছিলেন, তেমনই সকলে ভূয়সী প্রশংসা করেছিল তার কন্ঠেরও। তার কন্ঠ এতটাই দরাজ ছিল যে, বেনাম নামক একটি ছবিতে কেবল তার কন্ঠেরই ব্যবহার হয়েছিল। নাম ভূমিকায় তিনি থাকলেও পর্দায় তাকে দেখা যায়নি এ ছবিতে, কেবল কন্ঠেই জাদুতেই সবাইকে ঘায়েল করেছিলেন তিনি। অভিনয় জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে গোবিন্দার সাথে তার কমিক জুটি দারুণ জনপ্রিয় হয়েছিল। নাম্বার ওয়ান সিরিজের ছবিগুলো তো আছেই, বিশেষ করে হিরো নাম্বার ওয়ান, এছাড়াও দুলহে রাজার মতো ছবিতে অভিনয় করে তিনি জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছে গিয়েছিলেন।
তার মূল পরিচয় অভিনেতা ও চিত্রনাট্যকার হলেও একটি ছবি পরিচালনাও করেছেন তিনি। ১৯৮১ সালে তার নিজের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে মুক্তি পায় শামা ছবিটি। শ্যুটিংয়ের মাঝপথে ছবির কাজ ছেড়ে দেন মূল পরিচালক। পরবর্তীতে তিনি নিজেই শেষ করেন ছবির বাকি কাজ। কিন্তু তিনি নিজে কখনোই এই ছবির পরিচালক হিসেবে কোনো ক্রেডিট দাবি করেননি।
শেষ জীবনের বিতৃষ্ণা
বলিউড ইন্ডাস্ট্রি কাদের খানকে কম দেয়নি। বিভিন্ন ছবি ও বিজ্ঞাপনে অভিনয় করে তিনি আয় করেছিলেন মোট ৬৯.৮ কোটি রুপি। লেখক হিসেবে তো তিনি অসম্ভব সফল ছিলেনই, পাশাপাশি ক্যারিয়ারের শেষ সায়াহ্নে এসে অভিনেতা হিসেবেও তার আকস্মিক জনপ্রিয়তা তাক লাগিয়ে দেবার মতোই। কিন্তু তারপরও, শেষ দিকে তিনি একদমই সন্তুষ্ট ছিলেন না। বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের অভিনেতাদের মানসিকতার সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারছিলেন না তিনি। তার মতে, নতুনদের সাথে তার চিন্তাভাবনা ও অনুভূতির জায়গায় বিশাল একটি ফারাক তৈরী হয়ে গিয়েছিল। “ওদের চিন্তাভাবনা ছিল সব বাইরে থেকে আমদানি করা। কিন্তু আমি এই মাটির সন্তান, আমার অস্তিত্ব ছিল কামাথিপুরার সাথে সম্পৃক্ত,” এভাবেই নিজের অনুভূতি প্রকাশ করেন তিনি।
তাই যখন কাদের খান দেখলেন চলচ্চিত্রের তারা ঝলমলে জগতের সাথে আর মানিয়ে নিতে পারছেন না তিনি, তখন বলিউডকে বিদায় বলে দেন তিনি। ১৯৭২ থেকে ১৯৯৯ পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছিল তার ক্যারিয়ার। এরপর তিনি আবারও ফিরে আসেন শিক্ষকতা পেশায়, বিশেষত মুসলিম সম্প্রদায়ের শিক্ষায়। পুরো পৃথিবীজুড়ে মুসলিমবিরোধী যে মনোভাব সৃষ্টি হয়েছিল, তাতে তিনি খুবই ত্যক্ত-বিরক্ত ছিলেন। তার মনে হতো, মুসলিমরা অন্যের শান্তি নষ্ট করবে কী, তাদের নিজেদের ঘরেই তো শান্তি নেই! আর এর প্রধান কারণ শিক্ষার অভাব, পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধের অভাব। এই অভাব দূর করাই ছিল তার প্রধান লক্ষ্য।
অভিনয়ের প্রতি ভালোবাসা ছিল অমলিন
বেশ অনেকদিন রূপালী জগৎ থেকে দূরে থাকলেও, সাম্প্রতিক সময়ে তাকে কিছু অখ্যাত ছবিতে দেখা গেছে। যেমন ২০১৫ সালে হো গায়ি দিমাগ কি দাহি, ২০১৬ সালে আমান কে ফারিশতে, এবং ২০১৭ সালে মাস্তি নাহি শাস্তি। নিঃসন্দেহে তিনি অর্থের জন্য এসব ছবিতে অভিনয় করেননি, বরং অভিনয় শিল্পের প্রতি ভালোবাসা থেকেই এসব ছবিতে কাজ করেছিলেন।
চলে গেছেন, তবু যাননি
২০১৯ সালের ৩ জানুয়ারি টরন্টোর মিডোভেল কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হয়েছেন কাদের খান। মৃত্যুকালে তিনি রেখে গেছেন তিন ছেলে – সরফরাজ খান, শাহনাওয়াজ খান ও কুদ্দুস খান। সরফরাজ বেশ কিছু ছবিতে অভিনয়ও করেছেন। শেষ কয়েক বছর ধরে চিকিৎসার জন্য টরন্টোয় বাস করছিলেন তিনি ছেলের সাথে। পেয়েছিলেন কানাডার নাগরিকত্বও। তার ছেলে সরফরাজের মতে, মৃত্যুর আগে তিনি প্রচন্ড শারীরিক যন্ত্রণা ভোগ করেছেন। তবু টরন্টোতে তিনি সম্ভাব্য সেরা চিকিৎসাই পেয়েছেন, এবং হাসিমুখেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন।
ভারতীয় চলচ্চিত্রে কাদের খানের অবদান অপরিসীম। আর তাই তার বিদায়ে যে শূন্যতা তৈরি হলো, সেটিও অপূরণীয়। তবে কাদের খান তার লেখা ছবির সংলাপ ও অভিনয়ের মাধ্যমে দর্শকমনে যে মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন, সেই মুগ্ধতার রেশ থেকে যাবে অনন্তকাল। নিজের সৃষ্টিকর্মের মাঝেই বেঁচে থাকবেন তিনি।
সিনেমা সম্পর্কে আরও জানতে আজই পড়ুন এই বইগুলো
১) নতুন সিনেমা সময়ের প্রয়োজন
২) সিনেমা এলো কেমন করে
চমৎকার সব বিষয়ে রোর বাংলায় লিখতে আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন এই লিঙ্কে: roar.media/contribute/