Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

থমাস জেফারসন: আমেরিকার স্বাধীনতার জনক ও তৃতীয় প্রেসিডেন্ট

“সর্বোত্তম শাসক তিনিই, যিনি সবচেয়ে কম শাসন করেন। কারণ শাসিতেরা নিজেরাই নিজেদেরকে শৃঙ্খলিত করে নেয়!”

প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিয়েই যখন এ উক্তি করেছিলেন জেফারসন, তখনই ইতিহাসে তার নাম লেখা হয়ে যায় একজন উদার শাসক হিসেবে, যার কাছে সততাই ছিল জ্ঞানের প্রথম অধ্যায়। আমেরিকার ইতিহাসে বহুমুখী গুণের অধিকারী প্রেসিডেন্ট নেহায়েত কম আসেননি। কিন্তু জেফারসন তাদের সকলকেই ছাড়িয়ে যাবেন নিজের জ্ঞানস্পৃহা ও নিজেকে বিকশিত করার অদম্য ইচ্ছা ও সাধনার কারণে। তিনি কী ছিলেন, এ প্রশ্ন না করে প্রশ্ন করতে হবে, তিনি কী ছিলেন না! একাধারে একজন শিক্ষাবিদ, রাজনীতিবিদ, ভূতাত্ত্বিক, পরিবেশবিদ, উদ্ভাবক, স্থপতি, সাহিত্যিক, আর আমেরিকার তৃতীয় প্রেসিডেন্ট কিংবা আমেরিকা নামক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার একজন জনক পরিচয় দু’টি তো তার অসংখ্য পরিচয়ের মুকুটে সবচেয়ে রঙিন পালকদ্বয়।

থমাস জেফারসন; Image Source: espressostalinist.com

থমাস জেফারসনের জন্ম ১৭৪৩ সালের ১৩ এপ্রিল, ভার্জিনিয়ার শার্লটসভিলার একটি বাগানবাড়িতে। তার বাবা পিটার ছিলেন সেখানকার নামকরা সারভেয়ার। তার মা জেনও ছিলেন স্থানীয় এক প্রভাবশালী পরিবারের মেয়ে। ৮ ভাইবোনের মাঝে জেফারসন ছিলেন তৃতীয়। পিতার যথেষ্ট সম্পদ থাকায় শৈশবে কোনোরূপ অর্থনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়নি তার।

শৈশব থেকে মেধার স্ফূরণ ঘটে জেফারসনের মাঝে। প্রাথমিক শিক্ষা গৃহশিক্ষদের কাছে হলেও, প্রায়ই তিনি নিজের বয়সের চেয়ে ভারি সব বই পড়ে চমকে দিতেন শিক্ষকদের। ১১ বছর বয়সে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার হাতেখড়ি হলে জেফারসন দৈনিক ১০-১৫ ঘণ্টা অধ্যয়ন শুরু করেন! উইলিয়াম মেরি কলেজে ভর্তি হয়ে যখন দিনরাত পড়াশোনায় ব্যস্ত ছিলেন, তখন তার সঙ্গীতের নেশাও ছিলো তুঙ্গে। এত ঘণ্টা পড়ালেখার পরও দৈনিক ২/৩ ঘণ্টা নিয়ম করে গান শিখতেন, পিয়ানো বাজাতেন!

জেফারসনের সেই বিখ্যাত পুস্তিকার প্রচ্ছদ; Image Source: en.wikipedia.org

আমেরিকা তখনো ব্রিটিশ কলোনি। আর স্থানীয় আমেরিকান বাসিন্দাদের সাথে ব্রিটিশদের অন্যায় আচরণ সর্বদাই ব্যথিত করেছে তাকে। কৈশোর থেকে দেশের বিভিন্ন অনিয়ম, অনাচার আর অন্যায় নিয়ে ভাবতেন তিনি, কীভাবে সুবিচার প্রতিষ্ঠা করা যায়, সে ভাবনায় বুঁদ হতেন। এসব ভাবনা থেকেই আইনজীবী হবার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। সে সময় আমেরিকায় কোনো আইন কলেজ না থাকায় একজন নামকরা অ্যাটর্নির কাছেই আইন অধ্যয়ন করেন জেফারসন। ১৭৬৭ সালে, ২৪ বছর বয়সে আইনব্যবসা শুরুর মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে কর্মজীবনে প্রবেশ করেন তিনি। শুরুতেই বেশ নাম কামিয়েছিলেন তিনি, তবে তা আইন পেশার জন্য নয়। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে তার কলম থেকে সবসময়ই কামানের গোলার মতো বিধ্বংসী সব শব্দ বেরিয়ে আসতো। এর মাঝে ‘আ সামারি ভিউ অব দ্য রাইটস অব ব্রিটিশ আমেরিকা’ নামক একটি ছোট পুস্তিকা পুরো ভার্জিনিয়ায় শোরগোল ফেলে দেয়, যা তাকে রাতারাতি খ্যাতিমান করে তোলে।

জেফারসনের বাবা পিটার মারা গিয়েছিলেন জেফারসনের কৈশোরেই। পিতার মৃত্যুতে উত্তরাধিকারসূত্রে বিশাল ভূ-সম্পত্তির মালিক বনে যান তিনি। কৈশোর পেরিয়ে যৌবনে পা দিয়েই এই জমিতে বিশাল এক বাগানবাড়ি বানানোর কাজ হাতে নেন তিনি। সে বাড়ির নকশা প্রণয়ন থেকে নির্মাণ প্রকৌশলের যাবতীয় কাজ তিনিই করেন। আদালত পাড়ায় তখন এমনিতেই তাকে নিয়ে বেশ চর্চা হতো। সকলেই বলাবলি করতো এক নতুন উকিলের ব্যাপারে, যিনি কিনা উকিল কম, বিপ্লবী বেশি। এমন অবস্থায় তার বাড়ি তৈরির খবর সকলে বিস্ময়ে হতবাক করে দেয়। তিনি কি উকিল, নাকি প্রকৌশলী, নাকি স্থপতি, এ বিষয়ে হতবুদ্ধি হয়ে যান অনেকে।

জেফারসনের প্রাসাদতুল্য বাড়ি মন্টিসেলো; Image Source: dominiquediprima.com

নির্মাণকাজ শেষে জেফারসন তার বাগানবাড়ির নাম দিয়েছিলেন ‘মন্টিসেলো’। ইতালিয়ান শব্দ মন্টিসেলো অর্থ ছোট পাহাড়। বাড়িটি অবশ্য তৈরিও হয়েছিল একটি ছোট পাহাড়ের উপরেই। বাড়ির ইন্টেরিয়র ডিজাইনও তিনি নিজ হাতেই করেন। পরবর্তী জীবনে তিনি বহুবার বাড়ির নকশায় পরিবর্তন আনেন, বিভিন্ন পরিবর্তন, পরিবর্ধন কিংবা পরিমার্জনের কাজ করেছেন তিনি আমৃত্যু। এসব কাজের মধ্য দিয়ে বাড়িটির প্রতি তার ভালোবাসার প্রগাঢ়তা প্রকাশ পায়। পাঁচ হাজার একর জমির বিশাল বাগানটিকে তিনি চোখ ধাঁধানো রূপে সজ্জিত করেন। আর বাড়ির ভেতরটা শৌখিন সব আসবাবপত্র, চিত্রকর্ম, ক্লাসিক সব বই দিয়ে সজ্জিত করেন। বাড়ির সার্বিক রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও নিজেই পালন করতেন। কর্মচারীদের প্রাত্যহিক কাজের রুটিন থেকে শুরু করে পোষা প্রাণীদের খাদ্যের তালিকা তিনি নিজ হাতে তৈরি করে দিতেন তার এই রাজপ্রাসাদে বসে।

১৭৭২ সালে মন্টিসেলোতে বিরাট আয়োজন করে মার্থা স্কেলটনকে বিয়ে করেন থমাস জেফারসন। মার্থা ছিলেন একজন বিধবা। তবে তাদের দাম্পত্য জীবন ছিল সুখী দাম্পত্যের আদর্শ দৃষ্টান্ত। দুর্ভাগ্যক্রমে, সে সুখ বেশিদিন টেকেনি। বিয়ের ৮ বছরেই ৬ সন্তান গর্ভে ধারণ করে অসুস্থ হয়ে পড়েন মার্থা। বিয়ের দশম বছরে তিনি মারাই যান। তাদের ৬ সন্তানের মাঝে ৪টিই শৈশবে না ফেরার দেশে পাড়ি জমায়। বেঁচে ছিল কেবল দু’টি মেয়ে। মার্থার মৃত্যুকে নিজের জীবনের সবচেয়ে খারাপ সময় বলে অভিহিত করেছিলেন জেফারসন। মার্থার প্রতি ভালোবাসা অটুট রাখতে তিনি আর বিয়ে করেননি। অবশ্য, বিয়ে না করলেও বেশ কিছু শিশুকে তিনি দত্তক নিয়েছিলেন। স্যালি হেমিংস নামে একটি দাস শিশুকেও দত্তক নেন তিনি।

জেফারসনের দত্তক কন্যা স্যালি হেমিংস; Image Source: allthatsinteresting.com

স্যালির প্রসঙ্গে জেফারসনের জীবনের সবচেয়ে বিতর্কিত দিক, দাসপ্রথাও চলে আসে। এই প্রথা নিয়ে তিনি কখনোই খুব একটা সোচ্চার ছিলেন না। রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরুর দিকে যদিও বলেছিলেন, ধীরে ধীরে দাসপ্রথা বিলুপ্তির দিকে যেতে হবে, তথাপি আমৃত্যু তিনি নিজেই দাসের মালিক ছিলেন। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে তিনি সকল মানুষের সমতার কথা লিখলেও ব্যক্তিগতভাবে তিনি বিশ্বাস করতেন, কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকান-আমেরিকানরা দেশজ আমেরিকানদের চেয়ে কিছুটা নিকৃষ্ট। এই দুই তথাকথিত জাতির একত্রে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস সম্ভব না বলেই তার ধারণা ছিল। পিতার কাছ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া দাস এবং শ্বশুরের উপহার সহ পুরো জীবনে তিনি ৬০০’র অধিক দাস রেখেছেন, যাদের মাঝে নগণ্য সংখ্যককে বিভিন্ন সময়ে মুক্তি দিয়েছেন। অবশ্য, দাসদের প্রতি তিনি সর্বদাই সদয় ছিলেন।

এবার থমাস জেফারসনের রাজনৈতিক জীবনে আলোকপাত করা যাক। ১৭৭৫ সালে আমেরিকায় ‘রেভ্যুলেশনারি ওয়্যার’ শুরু হয়ে যায়। এসময় দ্বিতীয় কন্টিনেন্টাল কংগ্রেসের একজন সদস্য হিসেবে মনোনীত হন জেফারসন। যদিও সেখানে সব বাগ্মীদের নেয়া হচ্ছিল, যারা জ্বালাময়ী বক্তৃতার মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে স্বাধীনতার জন্য তাঁতিয়ে দিতে পারবেন, জেফারসন ছিলেন ভিন্ন। তিনি খুব ভালো বক্তৃতা দিতে পারতেন না। তথাপি তাকে নেয়া হয় তার লেখনীর জন্য। ‘ডিক্লেয়ারেশন অব ইন্ডিপেন্ডেন্স’ তথা আমেরিকার স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র লেখার জন্য যে পাঁচ সদস্যের কমিটি করা হয়, সে কমিটির একজন ছিলেন তিনি। ১৩টি ব্রিটিশ আমেরিকান কলোনির কেন ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্তি লাভ করা উচিত, এ সংক্রান্ত যুক্তি উপস্থাপন করেন জেফারসন তার লেখাতে। ১৭৭৬ সালের ৪ জুলাই গৃহীত হয়েছিল এ ঘোষণাপত্র।

আমেরিকার স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র; Image Source: Military.com

থমাস জেফারসনের রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে বড় সাফল্যগুলোর একটি ছিল মানুষের ধর্মীয় অধিকার নিশ্চিত করা। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র গৃহীত হবার পরপরই তিনি কন্টিনেন্টাল কংগ্রেস থেকে পদত্যাগ করে ভার্জিনিয়ার ডেলিগেট পদে পুনঃবহাল হন। সেখানে তিনি মানুষের ধর্মের স্বাধীনতার জন্য সোচ্চার হন এবং ‘ভার্জিনিয়া স্ট্যাচু ফর রিলিজিয়াস ফ্রিডম’ নামক একটি বই লেখেন, যা ব্যাপক প্রশংসিত হয়। এ বইয়ের কল্যাণে ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিতে আন্দোলন গড়ে ওঠে এবং ভার্জিনিয়ায় আইন পাস হয়। উল্লেখ্য, ভার্জিনিয়ায় এই আইন পাসই পরবর্তীকালে আমেরিকার সংবিধানে প্রথম সংশোধনী হিসেবে ধর্মীয় স্বাধীনতা এনে দেয়।

ভার্জিনিয়ায় এই আইনের মাধ্যমে পুরো আমেরিকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বে পরিণত হন থমাস জেফারসন। ৭০’র দশকের শেষভাগে তিনি পুনরায় কংগ্রেসে যোগ দেন এবং দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ফ্রান্সে আমেরিকান রাষ্ট্রদূত হিসেবে বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিনের স্থলাভিষিক্ত হন। তিনি ইউরোপে থাকাকালীন আমেরিকানরা নতুন করে জাতীয় সংবিধানের খসড়া রচনা করে, যেখানে তিনি মতামত দিতে পারেননি। পরে দেশে ফিরে জনগণের অধিকার এবং প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার সীমা নির্ধারণ সংক্রান্ত বিষয়ে তাৎপর্যপূর্ণ মতামত দেন।

১৭৮৯ সালে রাষ্ট্রদূতের পদ থেকে অব্যহতি দিয়ে স্থায়ীভাবে দেশে ফেরেন জেফারসন। একই বছর আমেরিকার প্রথম প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটনের অনুরোধে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন, মার্কিনরা যে পদটিকে বলে ‘সেক্রেটারি অব স্টেট’। এ পদে জেফারসনই ছিলেন প্রথম ব্যক্তি। এদিকে ওয়াশিংটন সরকারের রাজস্ব সচিব আলেকজান্ডার হ্যামিল্টনের সাথে মতের অমিল শুরু হয় দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম দিন থেকেই। হ্যামিল্টন ছিলেন ফেডারেলিস্ট পার্টির সদস্য, যিনি শক্তিশালী এবং সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী কেন্দ্র সরকারে বিশ্বাসী ছিলেন। অন্যদিকে উদারবাদী জেফারসন কেন্দ্র সরকারের বদলে রাজ্য সরকারকে ক্ষমতায়নের পক্ষপাতী ছিলেন। হ্যামিল্টনের বিরোধিতা করতে তিনি ‘ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিকান পার্টি’ প্রতিষ্ঠা করেন (তিনি ছিলেন একজন সহপ্রতিষ্ঠাতা)।

জন অ্যাডামস; Image Source: History.com

১৭৯৬ সালের মার্কিন নির্বাচনে ফেডারেলিস্ট পার্টির জন অ্যাডামসের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির জেফারসন। তিনি দ্বিতীয় হলে তৎকালীন নিয়ম অনুসারে আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে অভিষিক্ত হন, যা তাকে পরের বার প্রেসিডেন্ট পদের জন্য আরো যোগ্য করে তোলে। পরের বারও জন অ্যাডামসের বিরুদ্ধে নির্বাচনী লড়াই লড়ে বিজয়ী হন তিনি। অবশ্য নির্বাচনী ব্যবস্থার ত্রুটির কারণে নিজ পার্টির আরেক সদস্যের সাথে তার টাই হয়ে গেলে হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভ তাকে ভোট দিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করে।

১৮০১ সালের ৪ মার্চ আমেরিকার তৃতীয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে অভিষিক্ত হন থমাস জেফারসন। অনেকে প্রথমের সাথে নিজের নাম জড়ানো জেফারসন অভিষেকেও আরেক প্রথমের সৃষ্টি করেন। তিনি প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট, যার অভিষেক ওয়াশিংটনে হয়। অভিষেকের দিন অফিসে যাবার সময় ঘোড়ায় চড়ার ঐতিহ্য ভেঙে তিনি পায়ে হেঁটেই যান। প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার প্রথম বড় সাফল্য আসে ১৮০৩ সালে, যখন তিনি ফ্রান্সের কাছ থেকে ৮ লক্ষ ২০ হাজার বর্গকিলোমিটারের লুইজিয়ানা প্রদেশটি কিনে নিতে সক্ষম হন মাত্র ১৫ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে! তার এ পদক্ষেপ আমেরিকার ভূখণ্ড প্রায় দ্বিগুণ করে ফেলে।

বিশাল আয়তনের লুইজিয়ান ফ্রান্সের কাছ থেকে ক্রয় করে আমেরিকাকে ভৌগোলিকভাবে শক্তিশালী করেন জেফারসন; Image Source: haikudeck.com

বড় সাফল্য না থাকলেও তার আমলে আমেরিকার অভূতপূর্ব অবকাঠামোগত এবং আইনশৃঙ্খলার উন্নয়ন হয়। ফলে ১৮০৪ সালের নির্বাচনে ৭০ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হন তিনি। ইলেকটোরাল ভোটে তিনি তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীকে ১৬২-১৪ ভোটে পরাজিত করেন। এ মেয়াদেও তার সুশাসন বজায় ছিল। তবে এ সময় নেপোলিয়নের ইউরোপীয় যুদ্ধ সংক্রান্ত বিষয়ে তার একটি সিদ্ধান্তে তার জনপ্রিয়তায় ভাঁটা পড়ে। যুদ্ধে বারংবার আমেরিকান জাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তিনি একটি বাণিজ্য সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। অথচ মার্কিনরা আশা করছিল, আমেরিকা ব্রিটেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যাবে! উল্লেখ্য, ১৮১২ সালে শেষতক আমেরিকা ব্রিটেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে গিয়েছিল।

“বই ছাড়া জীবন অর্থহীনতার নামান্তর”- থমাস জেফারসন

দ্বিতীয় মেয়াদে জেফারসনের খুব বেশি সাফল্য না থাকলেও প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি মোটেও অর্জনপ্রিয় ছিলেন না। দুই মেয়াদ শেষে তিনি রাজনীতি থেকেই অবসরে যান এবং জ্ঞানচর্চায় মনোনিবেশ করেন। তিনি ছিলেন একজন প্রকৃত বইপোকা, যিনি বলতেন বই ছাড়া তার বেঁচে থাকা সম্ভব না। তিনি জীবনে কত বই পড়েছেন, তার হিসাব নেই। তার ব্যক্তিগত সংগ্রহে হাজার হাজার ক্লাসিক বই ছিল। ১৮১৫ সালে তিনি নামমাত্র মূল্যে নিজের ব্যক্তিগত পাঠাগারের ৬৭০০টি বই কংগ্রেসের কাছে বিক্রি করে দিয়েছিলেন, কংগ্রেসের পাঠাগারটি পুনঃনির্মাণের জন্য। ব্রিটিশদের সাথে যুদ্ধের সময় ব্রিটিশদের দেয়া আগুনে লাইব্রেরিটি পুড়ে গিয়েছিল। জেফারসনের বইয়ে এই পাঠাগার নতুন করে শুরু করে।

ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে থমাস জেফারসনের ভাস্কর্য; Image Source: washingtonexaminer.com

১৮২৫ সালে জেফারসন ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি একাডেমিক ভবনের নকশা তিনি প্রণয়ন করেন। তাছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাস ও সার্বিক পাঠ্যক্রমও তিনি ঠিক করে দেন। বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি একরকম জোর করেই এই পাঠ্যক্রম নির্ধারণের দায়িত্ব তার কাঁধে তুলে দিয়েছিল। কারণ তাদের বিশ্বাস ছিল, তৎকালীন আমেরিকায় তার চেয়ে জ্ঞানী-গুণী মানুষ দ্বিতীয়টি নেই। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক আইন নির্ধারণেও সহায়তা করেছিলেন এবং কঠোরভাবে নিশ্চিত করেছিলেন, সে আইনে যেন সাম্প্রদায়িকতার কোনো ছাপ না থাকে।

থমাস জেফারসন (১৭৪৩-১৮২৬ সাল); Image Source: goalcast.com

১৮২৬ সালের ৪ জুলাই, নিজ হাতে গড়া রাজপ্রাসাদ মন্টিসেলোতে জীবনের সকল সন্তুষ্টি নিয়ে মহাকালের দিকে রওনা দেন ৮৩ বছর বয়সী থমাস জেফারসন। কাকতালীয়ভাবে, তার বন্ধু, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সাবেক প্রতিদ্বন্দ্বী এবং আমেরিকার দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট জন অ্যাডামসও সেদিনই মৃত্যুবরণ করেন। জেফারসনকে তার সুবিশাল মন্টিসেলোতেই সমাহিত করা হয়। ১৯৪৩ সালে তার ২০০তম জন্মবার্ষিকীতে ওয়াশিংটনের ন্যাশনাল মলে ‘জেফারসন মেমোরিয়াল’ নির্মাণ করা হয়। এ মেমোরিয়ালটি কেবলই একজন প্রেসিডেন্টকে স্মরণ করে না, এটি স্মরণ করে একজন জ্ঞানসাধক, উদার রাজনীতিবিদ, তেজোদ্দীপ্ত স্বাধীনতার কণ্ঠস্বর, সর্বোপরি একজন মহাকালের নায়ককে।

Language: Bangla

Topic: Life of Thomas Jefferson, the third American President.

Reference: Hyperlinked inside the article.

Featured Image: brewminate.com

Related Articles