সর্বকালের অন্যতম সেরা অভিনেতা চার্লি চ্যাপলিন একবার এক শিশুর পিতৃত্ব মামলায় ফেঁসে গেলেন। বছরের পর বছর ধরে চলা এই মামলা নিয়ে হলিউড থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রের ঘরে ঘরে কানাঘুষা চলছিল। কিন্তু এতকিছুর পরেও এর কোনো নিষ্পত্তি হলো না। শেষপর্যন্ত আদালত বিজ্ঞানীদের দ্বারস্ত হলেন। তৎকালীন পিতৃত্ব নির্ণয়ের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মাধ্যম ছিল অভিযুক্তের রক্ত পরীক্ষা করা। আদালতের নির্দেশে স্থানীয় এক গবেষণাগারে চার্লি চ্যাপলিন, অভিযোগকারী মা আর সেই আলোচিত শিশুর রক্ত পরীক্ষা করা হলো। নির্দিষ্ট সময়ে বিজ্ঞানীরা রক্ত পরীক্ষার প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করলেন। প্রতিবেদনে দেখা গেলো, মায়ের রক্তের গ্রুপ টাইপ-এ এবং শিশুর গ্রুপ ছিল টাইপ-বি। এর অর্থ দাঁড়ায় পিতার রক্তের গ্রুপ হয় টাইপ-বি অথবা এবি হতে হবে। কিন্তু চার্লি চ্যাপলিনের গ্রুপ ছিল টাইপ-ও।
আদালত এই প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে চার্লি চ্যাপলিনকে ‘শিশুর পিতা নন’ বলে ঘোষণা দেন। এই আলোচিত মামলার রায় চ্যাপলিনের পক্ষে যাওয়ায় যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন এই অভিনেতা। আর এর জন্য সবচেয়ে বড় ধন্যবাদ যাঁর প্রাপ্য, তিনি হলেন রক্তের গ্রুপ আবিষ্কারক নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী কার্ল ল্যান্ডস্টাইনার। চ্যাপলিনের মামলা বেশ তুচ্ছ উদাহরণ মাত্র। রক্তের গ্রুপ নির্ণয়ের মাধ্যমে অগণিত মুমূর্ষু মানুষের চিকিৎসা করা সম্ভব হয়েছিল, হচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও হবে। এসব কিছু সম্ভব হয়েছে যে মানুষটার জন্য, তিনি কার্ল ল্যান্ডস্টাইনার।
ডাক্তার হবার স্বপ্ন
অস্ট্রিয়ার রাজধানী শহর ভিয়েনায় ১৮৬৮ সালের ১৪ জুন এক সম্ভ্রান্ত ইহুদি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন কার্ল ল্যান্ডস্টাইনার। তার বাবা লিওপোল্ড ল্যান্ডস্টাইনার ছিলেন আইন গবেষক এবং ‘ডাই প্রেস’ নামক একটি দৈনিক পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। তার মায়ের নাম ছিল ফ্যানি নি হ্যাস। মাত্র ৭ বছর বয়সে কার্ল তার বাবাকে হারান। এরপর থেকে মায়ের আদর-স্পর্শে বড় হতে থাকেন তিনি। শৈশব থেকে কার্লের স্বপ্ন ছিল ডাক্তারি পড়াশোনা করা। ভিয়েনা থেকে ১১৫ মাইল দূরে লিঞ্জ শহরের গ্রামার স্কুলে তার শিক্ষার হাতেখড়ি হয়। স্কুল-কলেজের গণ্ডি পেড়িয়ে কার্ল ১৭ বছর বয়সে ঐতিহ্যবাহী ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল স্কুলে গিয়ে ভর্তি হন।
কার্ল বেশ কর্মঠ এবং মনোযোগী ছাত্র ছিলেন। তিনি ছাত্র থাকা অবস্থায় গবেষণার কাজে হাত দেন। সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়ে তিনি ২৩ বছর বয়সে ডক্টরেট ডিগ্রী অর্জন করে চারদিকে সাড়া ফেলে দেন। তিনি সেবার রক্তের উপাদানের উপর মানুষের খাদ্যের প্রভাব নিয়ে একটি জার্নাল প্রকাশ করেছিলেন। সবাই যখন ধরে নিয়েছিল কার্ল বেশ বড় ডাক্তার হবেন, ঠিক তখন তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন যে, পেশাদার ডাক্তারি আর করবেন না। বরং তিনি একজন গবেষক হওয়ার সংকল্প গ্রহণ করলেন।
গবেষণাগারের বিস্ময়
কার্ল ল্যান্ডস্টাইনার জীববিদ্যার পাশাপাশি রসায়ন নিয়ে আগ্রহী হয়ে পড়েন। বিশেষ করে, জৈবিক রসায়নের গূঢ় রহস্য তাকে বেশ আকৃষ্ট করতো। তাই তিনি এই বিষয়ে গবেষণা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। গবেষণাগারের প্রাথমিক কলাকৌশল শিক্ষার উদ্দেশ্যে তিনি জার্মানি এবং সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন গবেষণাগারে কাজ করেন। তার কর্মসঙ্গী হন তৎকালীন বিশ্ববিখ্যাত রসায়নবিদ এমিল ফিশার। এরপর তিনি ১৮৯৬ সালে ভিয়েনায় ফেরত আসেন। তাকে ভিয়েনা হাসপাতালের গবেষক ম্যাক্স ফন গ্রুবারের সহকারী হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয়। এখানে কর্মরত অবস্থায় নব্য গবেষক কার্ল তার গুরু ফন গ্রুবার এবং সহকর্মী গবেষক পল এরলিকের সাথে এক বৈজ্ঞানিক বিতর্কে লিপ্ত হন।
বিতর্কের শুরুটা ছিল ফন গ্রুবার এবং পল এরলিকের মাঝে। বিতর্কের বিষয় ছিল অ্যান্টিবডি ও অ্যান্টিজেন কীভাবে একে অপরের সাথে বিক্রিয়া করে সংযুক্তি গঠন করে। দুজনের সাংঘর্ষিক তত্ত্ব থেকে এই বিতর্কের সূচনা। কার্ল নিজের উদ্যোগে বেশ কিছু পরীক্ষার মাধ্যমে এই সংযুক্তিকরণের কৌশল আবিষ্কার করেন এবং ফন গ্রুবারের তত্ত্ব সমর্থনের মাধ্যমে এই বিতর্কের অবসান ঘটান। এই এক বিতর্ক পুরো চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভবিষ্যৎ বদলে দিয়েছিল। এরপর তিনি রক্তের ‘এগ্লুটিনেশন’ নিয়ে একটি জার্নাল প্রকাশ করেন। গবেষণাগারে রীতিমতো বিস্ময় হিসেবে উত্থান ঘটলো কার্লের। তার এই গবেষণা তাকে আরো মহৎ আবিষ্কারের দিকে ঠেলে দিয়েছিল, যার জন্য আজীবন তাকে মানবজাতি শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে যাবে।
রক্তের গ্রুপ বিপ্লব
তৎকালীন চিকিৎসাবিজ্ঞানে রক্ত সঞ্চালন ছিল অনেকটা মুদ্রা নিক্ষেপের মতো ধোঁয়াশা। নানা রোগে-শোকে এবং দুর্ঘটনায় মানবদেহে রক্তের ঘাটতি দেখা দিত। এই ঘাটতি পূরণের জন্য আরেক মানবদেহ থেকে রক্ত সঞ্চালন খুব একটা সুবিধাজনক প্রক্রিয়া ছিল না। হাতেগোনা কিছু ক্ষেত্র বাদে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সেই রক্ত সঞ্চালনের পর রোগী মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তো। কিন্তু কেন এমন হতো, সেটা কারো জানা ছিল না। তাই রক্ত সঞ্চালনের বিজ্ঞান স্বীকৃত কোনো পদ্ধতিও ছিল না।
রক্ত সঞ্চালনের এই সমস্যা নিয়ে পরিচিত ছিলেন কার্ল ল্যান্ডস্টাইনারও। ১৯০০ সালে তিনি এই রহস্য উদ্ঘাটনের উদ্দেশ্যে গবেষণা শুরু করেন। তিনি বিভিন্ন মানুষের রক্ত সংগ্রহ করে গবেষণাগারে এক রক্তের সাথে আরেক রক্ত মিশিয়ে এর পরিণাম অবলোকন করতে থাকেন। দেখা যেত, কিছু রক্তের মিশ্রণে রক্ত জমাট বেঁধে যেত। অপরদিকে, কিছু ক্ষেত্রে রক্ত জমাট বাঁধতো না। এবং এই জমাট বাঁধার ধরন একরকম ছিল না। এক রক্ত আরেক রক্তের সাথে জমাট বাঁধলেও সেটা অন্য আরেক রক্তের সাথে কোনো জমাট সৃষ্টি করতো না। কার্ল ল্যান্ডস্টাইনার প্রায় এক বছর নিরলস গবেষণার মাধ্যমে রক্তের অ্যান্টিবডি-এ, অ্যান্টিবডি-বি আবিষ্কার করেন। এরপর এর উপস্থিতি অনুসারে রক্তকে ABO- তিন শ্রেণীতে বিন্যাস করেন। আরো এক বছর পর তিনি ও তার সহকর্মীগণ চতুর্থ ধরন AB গ্রুপ নির্ণয় করতে সক্ষম হন। এই মহান আবিষ্কারের পর চিকিৎসা বিজ্ঞানে রক্ত সঞ্চালন আর বাঁধা নয়, বরং এক সম্ভাবনা হিসেবে উন্মোচিত হলো।
১৯০৩ সালে সর্বপ্রথম এই রক্তের গ্রুপের বাস্তবিক প্রয়োগ সম্পন্ন হয়। কার্ল এবং ম্যাক্স রিখটার নামক গবেষক অপরাধী নির্ণয়ে রক্ত পরীক্ষা করেন। এরপর থেকে অপরাধ বিজ্ঞানে রক্ত পরীক্ষা বেশ প্রভাবশালী পরীক্ষা হিসেবে অন্তর্ভূক্ত হয়। ডাক্তারগণ রক্তের গ্রুপ নির্ণয়ের মাধ্যমে নিউ ইয়র্কের মাউন্ট সিনাই হাসপাতালে ১৯০৭ সালে সর্বপ্রথম এক মুমূর্ষু রোগীর সফল রক্ত সঞ্চালন করতে সক্ষম হলেন। এই পদ্ধতি ব্যবহার করে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে প্রায় দশ হাজার সৈনিকের চিকিৎসা করা সম্ভব হয়েছিল।
সিফিলিস এবং পোলিও গবেষণায় চমক
মারাত্মক যৌনরোগ সিফিলিসকে তখন চিকিৎসা বিজ্ঞানের এক বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে গণ্য করা হতো। ১৯০৫ সালে কার্ল ল্যান্ডস্টাইনার তার গবেষণাগারে এক বানরের দেহে সিফিলিস জীবাণু প্রবেশ করিয়ে একে আক্রান্ত করতে সক্ষম হন। এর মাধ্যমে তিনি সিফিলিস গবেষণায় সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করেন। সিফিলিস গবেষণায় তার সবচেয়ে বড় আবিষ্কার ছিল ভিক্টর মুচা নামক এক বিজ্ঞানীর সাথে ‘ডার্ক ফিল্ড’ অণুবীক্ষণযন্ত্রের সাহায্যে রোগীর দেহে সিফিলিস জীবাণু ব্যাকটেরিয়া Treponema pallidum এর উপস্থিতি নির্ণয় পদ্ধতি আবিষ্কার করা।
এর তিন বছর পর তিনি ভিয়েনার উইলহেলমিনা হাসপাতালের রোগবিদ্যার প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হন। এখানে কর্মরত অবস্থায় তিনি পোলিও রোগের কারণ হিসেবে পোলিও ভাইরাসের উপস্থিতি আবিষ্কার করেন। এই আবিষ্কার পরবর্তীতে পোলিও টিকা উদ্ভাবনের পথ সুগম করে দিয়েছিল। এভাবে এক কালের মহামারী পোলিও নিরাময়ের দীর্ঘ যাত্রার অগ্রগামী হন কার্ল ল্যান্ডস্টাইনার।
হেপ্টেন আবিষ্কার
দেখতে দেখতে ইউরোপে মহাযুদ্ধ শুরু হয়ে গেল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে চিকিৎসা বিজ্ঞান অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো সফল রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমে হাজার হাজার আহত সৈনিকের চিকিৎসার মাধ্যমে। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে কার্ল ল্যান্ডস্টাইনার ১৯১৬ সালে লিওপোল্ডিন হেলেন নামক এক মহিলাকে বিয়ে করেন। এর এক বছর পর তাদের সংসারে এক পুত্র সন্তানের আগমন ঘটে। ঠিক তখন ইউরোপে অর্থনৈতিক মন্দা বিদ্যমান ছিল। অর্থাভাবে জর্জরিত বিজ্ঞানী তার পরিবার নিয়ে ১৯১৯ সালে ভাগ্য পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে নেদারল্যান্ডসে পাড়ি জমান। নতুন দেশে দ্য হেগ শহরে আরকে হাসপাতালে তিনি রক্ত এবং মূত্র পরীক্ষা করার চাকরি লাভ করেন।
এতকিছুর মাঝেও তিনি গবেষণা চালিয়ে যেতে থাকেন। এই সময়ে তিনি প্রায় ১২টি জার্নাল প্রকাশ করতে সক্ষম হন। তিনি এই সময়ে হেপ্টেন নামক এক মহাগুরুত্বপূর্ণ যৌগ আবিষ্কার করেন। এই হেপ্টেন পরমাণুগুলো নিজে থেকে ইমিউন প্রতিক্রিয়া শুরু করে না কিন্তু বড় আকারের প্রোটিনের সাথে সংযুক্ত থাকা অবস্থায় এরা প্রতিক্রিয়া করতে পারে। হেপ্টেন আবিষ্কারকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের জগতে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
নোবেল পুরস্কার অর্জন
১৯২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের রকফেলার ইনস্টিটিউট কার্ল ল্যান্ডস্টাইনারকে ইমিউনিটি এবং অ্যালার্জি নিয়ে গবেষণা করার জন্য আমন্ত্রণ জানান। তিনি এই আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে সপরিবারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। যুক্তরাষ্ট্রের ভিন্ন পরিবেশে তিনি নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে বেশ ঝামেলায় পড়েন। এখানে বিজ্ঞানীদের বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে হতো। এমনকি তারকাদের ন্যায় বিজ্ঞানীদের আলাদা জগত ছিল। তিনি এই জীবনধারা পছন্দ করতেন না। তিনি তার গবেষণাগারে নির্বিঘ্নে কাজ করতে বেশি পছন্দ করতেন।
১৯২৯ সালে তাকে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব প্রদান করা হয়। পরের বছর তাকে বিজ্ঞানীদের আরাধ্য সর্বোচ্চ সম্মানজনক পদক ‘নোবেল পুরস্কার’ প্রদান করা হয়। তিনি চিকিৎসা বিভাগে এই পুরস্কার লাভ করেছিলেন। নোবেল পুরস্কার লাভের পর তার গবেষণার স্পৃহা যেন বেড়ে যায়। তিনি নতুন করে গবেষণায় নেমে পড়েন।
ফের রক্তের গ্রুপ
ABO ব্লাড গ্রুপিংয়ের মাধ্যমে রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া সম্পাদন করার পরেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে রোগীর দেহে জটিলতা প্রকাশ পেতে থাকে। রক্ত নিয়ে রহস্যজট খুলতে গিয়েও কোথাও যেন হালকা জট থেকেই যাচ্ছিল। সেই জট সমাধায় ফের এগিয়ে আসেন বিজ্ঞানী কার্ল ল্যান্ডস্টাইনার। এবারের যাত্রায় তার সহযোগী ছিলেন আলেকজান্ডার ওয়াইনার। তারা রেসাস প্রজাতির বানরের দেহের রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে সেখানে কিছু ফ্যাক্টরের উপস্থিতি লক্ষ্য করেন। এসব ফ্যাক্টরের উপস্থিতি বিভিন্ন গ্রুপের রক্ত জমাট বাঁধার পেছনে দায়ী ছিল। এমনকি একই গ্রুপের রক্তের ক্ষেত্রে ফ্যাক্টর উপস্থিত ও অনুপস্থিত রক্তের মাঝে জমাট বেঁধে যেত। তারা মানব রক্ত পরীক্ষা করেও এই ফ্যাক্টরের উপস্থিতি নির্ণয় করতে সক্ষম হন। পরবর্তীতে ১৯৩৭ সালে রেসাস বানরের সাথে নাম মিলিয়ে কার্ল ল্যান্ডস্টাইনার ‘রেসাস ফ্যাক্টর’ আবিষ্কার করেন।
এই আবিষ্কারের পর ABO ব্লাড গ্রুপের সাথে গাণিতিক প্রক্রিয়া চিহ্ন যোগ এবং বিয়োগ যুক্ত করে রেসাস ফ্যাক্টরের উপস্থিতি চিহ্নিত করা হয়। এর ফলে নবজাতকের দেহে বিভিন্ন রক্তজনিত জটিলতা প্রতিরোধ করা সম্ভবপর হয় এবং রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া আরো সুবিধাজনক হয়ে ওঠে।
এক আদর্শ গবেষকের প্রয়াণ
কার্ল ল্যান্ডস্টাইনার একজন প্রতিভাবান এবং কর্মঠ গবেষক ছিলেন। তার কাজ করার স্পৃহা এবং উদ্ভাবনী চিন্তাধারা যুগে যুগে গবেষণা ক্ষেত্রে কাজ করা ব্যক্তিদের অনুপ্রেরণা দিয়েছে। তিনি তার গবেষণাকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ নোবেল পুরস্কার ছাড়াও আরনসন পদক, পল এরলিক পদক, ডাচ রেড ক্রস পদক, ক্যামেরুন পুরস্কার এবং মরণোত্তর আলবার্ট লাসকার ক্লিনিক্যাল মেডিকেল গবেষণা পুরস্কার লাভ করেন।
১৯৩৯ সালে তাকে রকফেলার ইনস্টিটিউটের এমেরিটাস প্রফেসর হিসেবে সম্মাননা প্রদান করা হয়। তিনি কাজ করতে এত ভালোবাসতেন যে, গবেষণাগারে কাজ করা অবস্থায় তিনি হার্ট অ্যাটাক করেন। তাকে হাতে পিপেট আঁকড়ে ধরা অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। তাকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করার দুদিন পর ১৯৪৬ সালের ২৬ জুন তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
প্রতিবছর গড়ে প্রায় ১১৭.৪ মিলিয়ন ইউনিট রক্ত চিকিৎসাক্ষেত্রে মুমূর্ষু রোগীর দেহে সঞ্চালনের মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়। এর মাধ্যমে বেঁচে যাচ্ছে কোটি কোটি প্রাণ। আমাদের সকলের পরিবার-পরিজন কিংবা পরিচিত কেউ অসুস্থ হলে তাদের চিকিৎসার জন্যেও রক্তের প্রয়োজন হয়েছে। রক্তের গ্রুপ দিয়ে সঠিক দাতা সংগ্রহের মাধ্যমে রক্ত সঞ্চালন করে তাদের চিকিৎসা সম্পন্ন হয়েছে। মানুষ একে অপরকে রক্তদানের মাধ্যমে বাঁচিয়ে রেখেছে মানবতা। আর যতদিন এভাবে মানবতা বেঁচে থাকবে, ততদিন বিজ্ঞানী কার্ল ল্যান্ডস্টাইনারের অবদান শ্রদ্ধাভরে পৃথিবীর বুকে স্মরণ করা হবে।