Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

কে কে মহাজন: ক্যামেরার ফ্রেমে অন্তর্নিহিত অর্থ নির্মাণের স্রষ্টা

“When he looked through my camera for the first time – and that was his first feature film – I asked him to remember the quote from Niels Bohr, the iconic physicist: Confidence comes from not only being always right, but also from not fearing to be wrong. (প্রথমবারের মতো যখন সে আমার হয়ে ক্যামেরায় দেখলো- সেটি ছিলো তার প্রথম ফিচার ফিল্ম- আমি তাকে মহান পদার্থবিদ নীলস বোরের একটি উক্তি মনে করিয়ে দিলাম- আত্মবিশ্বাস সবসময় শুধুমাত্র সঠিক থাকলেই আসে না, সেটি আসে ভুল হওয়ার ভয় না পাওয়া থেকেও।” 

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সিনেমার মূল পরিকল্পনা থাকে পরিচালকের হাতে। সেগুলোকে পর্দায় তুলে ধরার এবং বাস্তবিক করার কাজটি করেন অভিনয়শিল্পীরা। ফলে কোনো সিনেমার যশ কিংবা খ্যাতি মানে এর নির্মাতা বা অভিনেতার ভূয়সী প্রশংসা।

কিন্তু সিনেমার মূল যে কাজ, অর্থাৎ ফ্রেমে একেকটা মুহূর্তকে বন্দী করা, চার দেয়ালের ভেতরে মূল গল্পটাকে নিয়ে আসা, দর্শকদের সিনেমার অন্তর্নিহিত অর্থকে জানানো, তা-ও আবার এত ছোট ফ্রেমে- এই জটিল ও সৃজনশীল কাজটি করে থাকেন একজন সিনেমাটোগ্রাফার।

২০০৭ সালের ১৩ জুলাই পরলোকগমন করেন সিনেমা জগতের এক অখ্যাত তারকা, একজন সিনেমাটোগ্রাফার কে কে মহাজন। মহাজনই বলা চলে তাকে। আগের যুগের মহাজনদের মতোই পরিচালকেরা তার জালে জড়িয়ে থাকতেন।

কে কে মহাজন মারা গেলে বিখ্যাত পরিচালক মৃণাল সেন তার লেখা বই ‘চ্যাপলিন’ কে কে মহাজনকে উৎসর্গ করেন। সেখানে লিখে রাখেন শুরুতে ইংরেজিতে লেখা কথাগুলো।

১৯৬৬ সালের আগস্ট মাসের ৫ তারিখ। সিনেমাটোগ্রাফিতে গোল্ড মেডেল পেয়ে ভারতের ফিল্ম ইনস্টিটিউট থেকে গ্র‍্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেন কেওয়াল কৃষণ মহাজন। বন্ধুদের কাছে তিনি কে কে নামেই অধিক পরিচিত।

কে কে মহাজন যখন সিনেমাটোগ্রাফিতে গোল্ড মেডেল পান; Image Source: Scroll.in 

সেখানে উপস্থিত ছিলেন তখনকার উঠতি নির্মাতা মৃণাল সেন, যিনি পরবর্তীতে বাংলা সিনেমার একজন ত্রাতা ও প্রবাদপুরুষ হিসেবে আখ্যায়িত হন, এমনকি বলিউডের সিনেমাতেও যুক্ত করেন নতুন ধারা। তিনি মহাজনের কাজ দেখেছিলেন। মহাজনের কাজ তাকে ব্যাপকভাবে নাড়া দিয়েছিলো। বিশেষ করে তার কাজের ‘হ্যান্ডহেল্ড’ শটগুলো। সেখানে করিডোরের একটি শট ছিলো। এটি দেখার পর মৃণাল সেন তাকে বলেছিলেন, একদিন তারা হয়তো একত্রে কাজ করবেন।   

একদিন তারা একত্রে কাজ করলেন। ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে মোড় ঘুরিয়ে দেয়া এক সিনেমায় আমরা দেখলাম নির্মাতা-সিনেমাটোগ্রাফারের চমৎকার যুগলবন্দী। ১৯৬৯ সালে মুক্তি পাওয়া মৃণাল সেনের সিনেমা ‘ভুবন সোম’ (১৯৬৯) ভারতীয় সিনেমায় যুক্ত করে নতুন মাত্রা। যে সিনেমা বানানোর জন্য কলাকুশলীদের উপযুক্ত পারিশ্রমিক দেয়ার মতো পয়সা পাচ্ছিলেন না নির্মাতা। উঠতি এক নির্মাতার এ প্রয়াসকে বড় মনে হলো মহাজনের কাছে। কিন্তু তার ভাগ্যেও তো ছিলো কানাকড়ি। কে কে মহাজন এগুলো আমলেই নিলেন না।     

মহাজন তার ক্যামেরা হাতে নেয়ার প্রথমদিক থেকেই ‘হ্যান্ডহেল্ড’ শট নিতেন নিখুঁতভাবে। ‘ভুবন সোম’ সিনেমায় তিনি তার এ ধারা অব্যাহত রাখেন। মোড় ঘুরিয়ে দেয়া এই সিনেমায় তার আরেকটি প্রতিভা নতুন যুক্ত হয়। তিনি প্রাকৃতিক আলোকে কীভাবে ব্যবহার করতে হয়, তা দেখিয়েছেন। সূর্যের আলোর কোন বাহারটি ফ্রেমকে বাস্তব করে তুলবে, তা ছিলো তার নখদর্পণে।

‘ভুবন সোম’ সিনেমায় কাজ করছেন কে কে মহাজন ও মৃণাল সেন; Image Source: afcinema.com

আরও একটি অনন্য কাজ হচ্ছে পর্দায় একাকিত্ব ফুটিয়ে তোলা। বিশেষ করে ভিন্ন ধারার সিনেমার ক্ষেত্রে যেটি খুবই জরুরি। মূলধারার সিনেমার বাইরে সূক্ষ্ম ও গভীর ভাবাদর্শের পরিচায়ক সিনেমাগুলোতে ফ্রেমকে এমনভাবে বানাতে হয়, যাতে দর্শকের মনোযোগ কমে না যায়। প্রতিটি দৃশ্যে থাকতে হয় নতুনত্ব। একঘেয়েমি যেন না হয়ে ওঠে, সেদিকে রাখতে হয় সজাগ দৃষ্টি।  

সমাজের বাস্তব গল্প বলতে গিয়ে, কলকাতার মানুষের রোজকার চিত্র ফুটিয়ে তুলতে মৃণাল সেন নির্মাণ করেন ‘কলকাতা ট্রিলজি’। ইন্টারভিউ (১৯৭০), কলকাতা ৭১ (১৯৭২), পদাতিক (১৯৭৩); ছবি তিনটি ‘কলকাতা ট্রিলজি’ নামে পরিচিত। প্রত্যেকটি সিনেমায় ক্যামেরার পেছনে ছিলেন কে কে মহাজন।   

‘ইন্টারভিউ’ সিনেমাটি ভারতীয় সিনেমায় নতুনত্ব নিয়ে আসে। দর্শক দেখতে পান, সিনেমার অভিনয়শিল্পীরা তাদের সাথে সরাসরি কথা বলছেন। এমনকি সিনেমার সিনেমাটোগ্রাফারকেও দেখানো হয় তিনি শট নিচ্ছেন। সিনেমার চিরায়ত ফ্রেম ভেঙে পরিচালক তাক লাগিয়ে দেন দর্শকদের।  

এই চিন্তা যদিও মৃণালের, তথাপি বাস্তবায়নের দায়িত্ব ছিলেন কে কে মহাজন। কলকাতার ট্রামে নেয়া সেই বিখ্যাত শটে দর্শকদের সাথে রঞ্জিত মল্লিকের সরাসরি কথা বলার পরের দৃশ্য আমাদের সিনেমা দেখাকে উৎসাহিত করে। ট্রামে থাকা একজন বুড়ো লোক বলে উঠেন-

“একে আপনারা সিনেমা বলেন নাকি? এ তো আমাদেরই গল্প।”      

মানুষের নিত্যদিনের গল্প নিয়ে একসাথে মৃণাল-মহাজন যুগলবন্দী আমাদের উপহার দেন কোরাস (১৯৭৪), মৃগয়া (১৯৭৬), একদিন প্রতিদিন (১৯৭৯), আকালের সন্ধানে (১৯৮০), খারিজ (১৯৮২), খন্দর (১৯৮৩) ও একদিন আচানক (১৯৮৮)।

কে কে মহাজন-মৃণাল সেন যুগলবন্দী উপহার দিয়েছেন অনেক চমকপ্রদ সিনেমা; Image Source: afcinema.com

চারবার জাতীয় পুরস্কার জিতেছেন মহাজন। বসু চ্যাটার্জির ‘সারা আকাশ’ (১৯৬৯), মণি কৌলের ‘উসকি রুটি’ (১৯৭০), ভঁকুমার শাহানির ‘মায়া দর্পণ’ (১৯৭২) এবং মৃণাল সেনের ‘কোরাস’ (১৯৭৪) সিনেমার জন্য তিনি এ পুরস্কার পান।

‘একটি নদীর নাম’ শিরোনামের এক সিনেমায় চমৎকার আলোর ভেল্কি দেখিয়েছেন তিনি। সিনেমাটির নির্মাতা অনুপ সিং। এ সিনেমায় কে কে মহাজনের কাজ নিয়ে অনুপ সিং বলেন-

“আপনি আমাদের দেখিয়েছেন জীবনের অন্তর্নিহিত অর্থ। যে অর্থ আপনি সৃষ্টি করেছেন আলো-ছায়ার চমৎকার কারুকার্য দিয়ে। এভাবেই আপনি আমাদের ভেতরে সৃজন করেছেন আরও অনেক কিছু উপভোগের কৌতূহল। সেইসাথে সেগুলো দেখার ধৈর্যও এসেছে তা থেকেই।”   

তাকে ভারতীয় সিনেমার ‘রাউল কুতার’ বলা হয়ে থাকে। বিখ্যাত ফ্রেঞ্চ সিনেমাটোগ্রাফার রাউল কুতার। যিনি জাঁ লুক গদারের মতো পরিচালকের সাথে কাজ করেছেন। বিশ্বের সিনেমার নৌকার পালে নতুন ঢেউ খেলানোর অন্যতম এক কারিগর ছিলেন। হয়ে উঠেছিলেন বাস্তবধর্মী ও শৈল্পিক সিনেমার অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু।   

কে কে মহাজন বাণিজ্যিক সিনেমাতেও ছিলেন সমান পারদর্শী। কম বাজেটের সিনেমায় কাজ করা লোকেরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিশাল বাজেটের বাণিজ্যিক সিনেমা করতে তেমন স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না। তবে মহাজন ছিলেন অন্য ধাতুতে গড়া। বিকল্প ধারার সিনেমার বাইরেও মূলধারার হিন্দি সিনেমায় তিনি কাজ করেছেন। কাজ করেছেন নির্মাতা রমেশ সিপ্পীর সাথে ‘ভ্রষ্টাচার’ (১৯৭৫), ‘আকল্য’ (১৯৯১) সিনেমায়। কাজ করেছেন সুভাষ ঘাইয়ের সাথে ‘কালিচরণ’(১৯৭৫), মোহন কুমারের সাথে ‘অবতার’ (১৯৮৩), বসু চ্যাটার্জির সাথে ‘পিয়া কা ঘর’ (১৯৭২), ‘রজনীগন্ধা’ (১৯৭৪), ‘ছোটি সি বাত’ (১৯৭৫) ইত্যাদি সিনেমায়।  

বাণিজ্যিক ধারার সিনেমাতেও কাজ করেছেন কে কে; Image Source: Scroll.in

প্রায় ৮০টি ফিচার ফিল্ম, ১০০টি বিজ্ঞাপন, ২০টি ডকুমেন্টারি ও অনেক টিভি সিরিয়ালে সিনেমাটোগ্রাফারের কাজ করেন কে কে মহাজন। ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া (এফটিআইআই) থেকে গোল্ড মেডেল পাওয়া এ কারিগর তার প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন সবধরনের ক্যামেরার কাজেই।

১৯৪৪ সালের নভেম্বর মাসের ২ তারিখে গুরদাসপুরে জন্ম তার। পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞানে গ্রাজুয়েট মহাজন বেছে নেন ক্যামেরাকে। যখন ভারতীয় সিনেমায় একজন সত্যিকার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সিনেমাটোগ্রাফারের খুব দরকার ছিলো।

বিখ্যাত নির্মাতা শ্যাম বেনেগালের সাথেও তার কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। তার পুরস্কারজয়ী কয়েকটি ডকুমেন্টারি হলো শ্যাম বেনেগালের ‘চাইল্ড অব দ্য স্ট্রিট’ (১৯৬৭), কুমার শাহানির ‘আ সার্টেইন চাইল্ডহুড’ (১৯৬৭)।  

প্রতিভার পুরোটাই নিংড়ে দেন কে কে মহাজন; Image Source: Scroll.in

সিনেমায় কাজ করার পাশাপাশি তিনি ক্যামেরার কাজের উপর ট্রেনিংও দিতেন। ওয়ার্কশপ করেছেন অনেক। ক্যামেরায় নতুন কারিগরদের হাত দেয়ার পেছনে তার অবদান ছিলো অন্যতম। ভারতে যারা পরবর্তীতে সিনেমাটোগ্রাফার হিসেবে নতুন ধারা যুক্ত করেছেন, তাদের অনেকেই তার অনুসারী।

২০০০ সালের নভেম্বরে মুম্বাই অ্যাকাডেমি অব দ্য মুভিং ইমেজ কে কে মহাজনকে প্রথম ‘কোডাক টেকনিক্যাল এক্সিলেন্স’ পুরস্কারে ভূষিত করে। যেখানেই পুরস্কৃত হয়েছেন, সেখানেই হাইলাইট করা হয়েছে তার রং নির্বাচনের কাজের দক্ষতাকে। পর্দায় আসল রং বেছে নেয়ার অসামান্য দক্ষতা তাকে আজও একজন ‘সিনেমাটোগ্রাফারের ভ্যানগার্ড’ হিসেবে সবার সামনে উপস্থাপন করে।  

এত প্রশংসার পরেও সহজ-সাবলীল ভাষা কে কে মহাজনের মুখে-

“আমি এই চমৎকার পেশায় থেকে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি। অনেকের সাথে আমার দেখা হয়েছে, কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছে। হয়েছে অনেকদূর যাত্রা। এই পেশার সবচেয়ে চমকপ্রদ দিকটি হচ্ছে, আমি প্রতিনিয়ত শিখছি। শেখার সমাপ্তি নেই। কেউই তার নৈপুণ্যের সেরা হতে পারেন না। প্রতিনিয়তই তা পরিবর্তিত হচ্ছে।” 

This Bangla article is about famous cinematographer K K Mahajan. He has worked in various Hindi and Bengaly films. He also worked with famous director Mrinal Sen.

Featured Image source: Scroll.in

Information Source:

1. Even in the darkness, he dreamed of lights: A tribute to renowned cinematographer KK Mahajan - Scroll

2. KK Mahajan - UpperStall

3. Mrinal Sen... et ses opérateurs, dont K. K. Mahajan - AFC

Related Articles