Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

মহাকাশ গবেষণার এক জ্যোর্তিময় পুরুষ জ্যোতির্বিজ্ঞানী টাইকো ব্রাহে

মহাকাশ নিয়ে মানুষের গবেষণা সেই প্রাচীনকাল থেকেই। যখন থেকে মানুষ আকাশ দেখতে শুরু করেছে, তখন থেকেই জ্যোতির্বিজ্ঞানের সাথে মানুষের পরিচয়। বিজ্ঞানের উৎকর্ষতার সাথে সাথে জ্যোতির্বিজ্ঞানের গবেষণায়ও প্রতিনিয়ত নতুন নতুন দিক উন্মোচিত হয়েছে। টেলিস্কোপ আবিষ্কারের পর এই গবেষণায় এসেছিল নব বিপ্লব। কিন্তু তার আগে, এই মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে যে কয়জন মানুষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন তাদের মধ্যে টাইকো ব্রাহে ছিলেন অন্যতম। তাকে বলা হয়ে থাকে আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের মূল স্থপতি। তিনি ছিলেন শেষ জ্যোতির্বিদদের একজন যিনি টেলিস্কোপ ছাড়া কেবল খালি চোখে সকল পর্যবেক্ষণ করেছেন এবং তার নির্ভুল মতামত ব্যক্ত করেছেন।

জ্যোতির্বিজ্ঞানী টাইকো ব্রাহে। Source: livescience.com

ষোড়শ শতাব্দীর এই  বিখ্যাত জ্যোতির্বিদ ছিলেন ডেনমার্কের অধিবাসী। জন্ম ১৫৪৬ সালের ১৪ ডিসেম্বরে ডেনমার্কের স্কেনিয়া শহরে যা পরবর্তীতে সুইডেনের অংশ হয়। তার বাবা ছিলেন বেশ বিত্তশালী। তিনি তার পাগলাটে জীবন যাপন ও অবিশ্বাস্য ধরনের মৃত্যুর জন্য বেশ আলোচিত। তার যখন দুই বছর বয়স, তখন তাকে তার বাবার দুর্গ থেকে চুরি করে নিয়ে আসেন তার কাকা জর্জেন ব্রাহে। জর্জেন ব্রাহে ছিলেন নিঃসন্তান।

জর্জেন ব্রাহে। Source: geni.com

টাইকো ব্রাহেকে তিনি অত্যন্ত বিলাস ব্যসনের মধ্যে মানুষ করেছিলেন। ডেনমার্কের রাজপুরুষেরা সচরাচর যেভাবে জীবনযাপন করেন তার চেয়েও অনেক ভালো অবস্থায় রেখেছিলেন। এর ফলে টাইকো কিছুটা খামখেয়ালি হয়ে উঠেছিলেন। তার কাকা চাইতেন, টাইকো একদিন মান্যগণ্য আইনবিদ হয়ে উঠুক। কিন্তু টাইকোর ধ্যান জ্ঞান ছিল গণিত। গণিতই যেন ছিল তার সমস্ত শখের মূলকেন্দ্র।

শোনা যায়, ছাত্রাবস্থায় একদিন কলেজে গণিতের একটা ফর্মুলা নিয়ে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন ম্যানডারাপ পার্সবার্গ নামক এক উচ্চ বংশীয় ব্যক্তির সাথে। যখন এই বিরোধ তীব্র আকার ধারণ করে, তখন মীমাংসার জন্যে পার্সবার্গকে পিস্তল দিয়ে ডুয়েলের আমন্ত্রণ জানান ব্রাহে। এই দ্বৈত সমরে অবতীর্ণ হতে গিয়ে ব্রাহের নাকের কিছুটা অংশ উড়ে যায়। সোনা ও রূপা দিয়ে তিনি সেই নাক মেরামত করেন। বাকি জীবনে শ্বাস প্রশ্বাসের কাজে তিনি এই  প্রস্থেটিক (কৃত্রিম অঙ্গ হিসেবে ব্যবহত) ধাতু ব্যবহার করতেন, যা দেখতে অবিকল নাকের মতো। পকেটে নস্যির কৌটোয় রাখতেন পালিশ করার মাল-মসলা। মাঝে মধ্যেই সোনা রূপোর নাক পালিশ করে নিতেন।

ডুয়েলে নাক হারিয়ে সোনা ও রূপা দিয়ে তৈরি টাইকো ব্রাহের কৃত্রিম নাক। Source: hammurabiseye – WordPress.com

কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষে পড়ার শেষ দিকটায় তিনি আংশিক সূর্যগ্রহণ দেখেন। ততটা মুগ্ধ হতে পারেননি। তবে সূর্যগ্রহণের ফলে দিনের বেলায় সূর্য অদৃশ্য হয়ে যাওয়া তাকে দারুণ নাড়া দেয়। সূর্য গ্রহণের সঠিক ভবিষ্যদ্বাণীর ব্যাপারটাকে তার স্বর্গীয় বলে মনে হয়। এই ভাবনা তার জীবনে এক নতুন দিক খুলে দেয়। তিনি জ্যোতির্বিদ্যায় উৎসাহী হয়ে ওঠেন। জ্যোতির্বিদ্যা সম্পর্কিত সেসময় যেসব বই পাওয়া যেত তা পড়তে শুরু করেন। তখন তিনি মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেন, বিশ্বের সবচেয়ে বড় একজন জ্যোতির্বিজ্ঞানী হবেন।

এদিকে টাইকোর কাকা তার পড়াশোনার জন্য এক শিক্ষক নিয়োগ করেন। কিন্তু শিক্ষক ঘুমিয়ে পড়লেই বইয়ের মলাটের আড়ালে জ্যোতির্বিজ্ঞানের বই পড়তেন টাইকো। তার সময়ে জ্যোতির্বিজ্ঞানের ওপর লেখা বই বলতে ছিল টলেমির আলম্যাগেস্ট। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তার বিশ্ববিদ্যালয়েরই এক গণিত শিক্ষক তাকে মহাকাশ গবেষণায় ব্যাপক উৎসাহ জোগান।

টলেমির আলম্যাগেস্ট। Source: Great Books of the Western World

১৫৪৬ সালে পড়ালেখা শেষ করেন আইনশাস্ত্র নিয়ে। পড়াশোনার পাঠ শেষ হওয়ার পর তিনি ডেনমার্কে ফিরে আকাশ পর্যবেক্ষণে মন দিলেন। টাইকোর কাকাও ইতিমধ্যে মারা গেলেন নিউমোনিয়ায় ভুগে। ডেনমার্কের রাজা দ্বিতীয় ফ্রেডেরিক পানিতে ডুবে যাচ্ছিলেন, তাকে বাঁচানোর জন্যে সেতু থেকে ঝাঁপ দেন টাইকোর কাকা। তারপরই তিনি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হন। এর কয়েকদিন পর পরই তিনি মারা যান। তার মৃত্যুর পর টাইকো তার কাকার বিপুল সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হন।

এরপর টাইকো ব্রাহে জ্যোতির্বিদ্যায় পুরোপুরি মনোনিবেশ করেন। ১৫৭২ সালের ১১ নভেম্বর, রাতের আকাশে একটা নতুন তারা দেখতে পান টাইকো। তারাটি আগে ওখানে ছিল না। কয়েকদিনের মধ্যেই সারা ইউরোপের নজর পড়লো সেই উজ্জ্বল আলোক বিন্দুর দিকে।

মহাবিশ্বের কেন্দ্রে আমাদের এই পৃথিবী- টলেমির এই তত্ত্ব সারা খ্রিষ্টান দুনিয়া অনুসরণ করতো। এই তত্ত্বে নতুন তারার অস্তিত্ব একবারেই অসম্ভব। যাবতীয় পরিবর্তন বিশ্বের সবচেয়ে কাছের অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ। তাই ধরে নেওয়া হলো, টাইকো হয়ত পুচ্ছহীন একটি ধূমকেতুই দেখেছেন, অথবা অন্য কিছু। তবে এটাও সবাই স্বীকার করলেন যে, নতুন আলোর বিন্দুটিই প্রমাণ করে দেবে সে আসলে কী? এক জায়গায় স্থির থাকলে বুঝতে হবে সেটি আসলে তারা।

ব্রাহের জ্যোতির্বিদ্যা গবেষণাগার। ছবি সূত্র:  io9.gizmodo.com

সেসময়ের ইউরোপের সেরা জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা সেরা যন্ত্রপাতি নিয়ে আলোর বিন্দুটি পর্যবেক্ষণ করেও কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারলেন না। টাইকো বিশ্বাস করতেন, জ্যোতির্বিজ্ঞানের পর্যবেক্ষণ নিখুঁত হতে বাধ্য। তার পরেও তিনি জ্যামিতিক পদ্ধতিতে এগোলেন, বুঝতে পারলেন তিনি একটি নতুন তারা আবিষ্কার করেছেন।

টাইকোর ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি যা দিয়ে তিনি মহাকাশ পর্যবেক্ষণ করতেন। Source: Wikimedia

নিজের ধন সম্পদ দিয়ে সেরা সব যন্ত্রপাতি কিনে টাইকো তার বাকি জীবন সুনির্দিষ্ট পদ্ধতিতে আকাশ দেখেই কাটিয়েছেন। ডেনমার্কের রাজসভার জ্যোতির্বিজ্ঞানী হিসেবে তিনি বিশ্বের প্রথম মান মন্দিরটি তৈরি করেছিলেন কোপেনহেগেনের কাছে একটি দ্বীপে। তার নাম রেখেছিলেন ‘উরানিয়েনরবর্গ’ বা ‘স্বর্গের দূর্গ’। আকাশে উল্লেখযোগ্য কিছু দেখলেই তিনি তা লিখে রাখতেন। সমস্ত তথ্য থাকতো সুরক্ষিত। তার মৃত্যুর পর এসব তথ্য হাতে পেলেন তার সহকারী জোহানস কেপলার।

উরানিয়েনরবর্গের নকশা। Source: WIkimedia

উরানিয়েনরবর্গে অবস্থিত টাইকো ব্রাহের মুর‌্যাল। Source: Wikimedia

টাইকোর নিখুঁত সব তথ্য, বিশেষ করে মঙ্গলগ্রহ সম্পর্কে তার জ্ঞানের ভাণ্ডার কাজে লাগিয়ে কেপলার প্রমাণ করে দেন, ২,০০০ বছর ধরে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা যা বলে আসছেন তা ঠিক নয়। ঠিক বৃত্তাকারে গ্রহগুলো ঘোরে না, ঘোরে উপবৃত্তাকারে।

জোহানস কেপলার। Source: actionsciencelab

টাইকো ব্রাহের জীবন যেমন নানা বৈচিত্র্যময়তায় ভরা, তেমনি তার মৃত্যু নিয়েও রয়েছে নানা কাহিনী। ১৬০১ সালে মুত্রথলির ইনফেকশনের কারণে তার মৃত্যু হয়েছিল বলে জানা যায়। কিন্তু অনেকেই তা বিশ্বাস করেনি। পরবর্তীতে তার মেডিকেল পরীক্ষা করে পরীক্ষকরা জানান যে, বিষক্রিয়ায় তার মৃত্যু হয়েছে। তার শরীরে ব্যাপক পরিমাণে পারদের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন টাইকোর শরীরে এই বিষ দীর্ঘদিন ধরে একটু করে তার খাবারে বা অন্য কিছুর সাথে মিশিয়ে তার শরীরে প্রবেশ করানো হয়।

তার এই মৃত্যুর কারণ হিসেবে দুইজনের নাম সামনে চলে আসে । একজন তার সহকারী জোহানস কেপলার। টাইকোর মৃত্যুর পর তার যাবতীয় গবেষণার নির্ভুল তথ্য যার হাতে আসে। টাইকোর তথ্যের উপর ভিত্তি করে পরবর্তীতে জ্যোর্তিবিজ্ঞানে এক নবদিগন্ত শুরু করেন তিনি। তবে টাইকোর মৃত্যুর জন্য যার নাম সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত হয়, তিনি হচ্ছেন ডেনমার্কের রাজা ক্রিশ্চিয়ান। টাইকো ব্রাহে ছিলেন ক্রিশ্চিয়ানের পিতা দ্বিতীয় ফেড্রিকের ব্যক্তিগত জ্যোতিষী। এছাড়াও লোকশ্রুতি আছে, টাইকোর সাথে  ক্রিশ্চিয়ানের মায়ের প্রণয় ছিল। রাজার প্রতিশোধ স্পৃহার কারণেও টাইকো ব্রাহের মৃত্যু হয়েছিল এমনটাই অনেকে বিশ্বাস করেন। যার কারণেই মৃত্যু হোক না কেন, টেলিস্কোপ আবিষ্কারের পূর্বে শক্তিশালী যন্ত্রপাতিবিহীন নির্ভুল জ্যোতির্বিদ্যা চর্চার এক যুগ পুরুষ ছিলেন টাইকো ব্রাহে।

টাইকো ব্রাহের সমাধি।  Source: Wikimedia

 

This article is in Bengali language. It is about one of the famous astronomers of all time, Tycho Brahe.

References:

1. io9.gizmodo.com/5696469/the-crazy-life-and-crazier-death-of-tycho-brahe-historys-strangest-astronomer
2. livescience.com/24835-astronomer-tycho-brahe-death.html
3. historytoday.com/richard-cavendish/death-tycho-brahe
4. smithsonianmag.com/smart-news/astronomer-and-alchemist-tycho-brahe

Featured Image: i09.gizmodo.com

Related Articles