মেরি কুরি বিজ্ঞানের ইতিহাসে বিস্ময়ের সৃষ্টিকারী একটি নাম। মেরি কুরির নাম শুনেনি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া খুবই দুষ্কর। তেজস্ক্রিয়তা নিয়ে গবেষণার জন্য পুরো পৃথিবী তাকে মনে রাখবে। পৃথিবীর ইতিহাসে তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি বিজ্ঞানের দুটি শাখায় (পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়নে) নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। নারী হিসেবে প্রথম নোবেল জয়ের কৃতিত্বটা তারই। এসব কথা তো সবাই জানে, কিন্তু তার সাফ্যলের পেছনের কাহিনীটা ক’জন জানে! সব বাধা পেরিয়ে এগিয়ে যাওয়ার গল্প, ভালোবাসা, বিয়ে, সন্তান, সংসার আর নিজের গবেষণা একই সুতায় বেঁধে জীবন সংগ্রামের গল্পটা খুব কম মানুষই জানেন।
মেরি কুরি
মেরি কুরির পুরো নাম, মেরি স্কলোডসকা কুরি। তার ডাক নাম ছিল মানিয়া। রাশিয়া বিভাগের সময় ১৮৬৭ সালের ৭ নভেম্বর মেরি কুরির জন্ম হয় পোল্যান্ডের ওয়ার্স শহরে। পরিবারে তাকে ‘মানিয়া’ বলে ডাকা হতো। তার বাবা ব্লাদিস্লাভ শক্লোদোভস্কি একটি নামকরা কলেজের অধ্যাপক ছিলেন। তার মা ওয়ার্স শহরের একটি নামকরা ওয়ার্স বোর্ডিং স্কুল ফর গার্লস এর প্রধান শিক্ষিকা ছিলেন। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ। তাদের বাড়িতে সবসময় লেখাপড়ার আবহ বিরাজ করতো। তার কাছ হতে জানা যায়, তাদের বাবা প্রতি সন্ধ্যায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বিজ্ঞান ও সাহিত্যের আসর বসাতেন। তাই বিজ্ঞানে প্রতি ভালোবাসাটা ছোট থেকেই শুরু হয়েছিল। এরই মধ্যে মেরির যখন দশ বছর বয়স তখন তার মা যক্ষ্মারোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। মায়ের মৃত্যুর পর কিছু দিন যেতে না যেতেই তার বড় বোন জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। মা আর বড় বোনের মৃত্যুতে মেরি খুব ভেঙে পড়েছিলেন।
আর্থিক সংকট ও সংগ্রামময় জীবনের সূচনা
সেই সময়ে রাজনৈতিক অবস্থা ক্রমশ জটিল হয়ে উঠেছিল, পোলিশ চেতনা লালনের জন্য তৎকালীন সরকার মেরির বাবাকে পূ্র্বের চাকরি হতে অব্যাহতি দিয়ে একটি নিম্ন শ্রেণির চাকরিতে নিয়োগ দেন। ফলে তাদের পরিবারে আর্থিক সংকট দেখা দেয়। এতে ছেলেমেয়েদের পড়ালেখা বন্ধ হবার উপক্রম হয়। মেয়ে শিক্ষার্থী হওয়ার কারণে মেরি ও তার মেঝো বোন ব্রনিস্লা নিয়মিত কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারেনি, তিনি ও তার বোন পোলিশের একটি ভ্রাম্যমাণ বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। তবে এরই মধ্যে আর্থিক সংকটে তাদের পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। কিন্তু মেরি ও তার বোন ব্রনিস্লা হাল ছাড়ার পাত্রী ছিলেন না। মেরি ও তার বোন ব্রনিস্লার মধ্যে একটি চুক্তি হলো যে, একজন আরেকজনের পড়াশোনার খরচ জোগাবে। তাই ঠিক হল যে, মেরি কাজ করে বোনের পড়ালেখার ব্যয়ভার বহন করবে। পড়ালেখা শেষ হলে ব্রনিস্লা মেরির পড়ালেখার ব্যয়ভার বহন করবে। ফলে যেই কথা, সেই কাজ। মেরি তার বোনের পড়ালেখার খরচ চালানোর জন্য মাসিক পাঁচশ রুবেলের বিনিময়ে এক অভিজাত রুশ আইনজীবীর বাড়িতে গভর্নেসের চাকরি নেয়। এত অল্প বয়সে কাজ করতে কষ্ট হলেও তিনি প্রায় তিন বছর সেখানে কাজ করেছিলেন। এ সময় তার জীবনে আসেন কাজিমিয়েরেজ জোরভস্কির। মেরি যে বাসায় গভর্নেসের কাজ করতেন, কাজিমিয়েরেজ জোরভস্কির ছিলেন সে বাড়ির ছেলে ছিলেন। নিয়তি হয়ত সহায় ছিল না আর তাই মেরির সাথে কাজিমিয়েরেজ জোরভস্কির সম্পর্কটা ভেঙে গেল। মেরির পরিবার গরিব ছিল বিধায় কাজিমিয়েরেজের পরিবার এ সম্পর্কটা মেনে নেয়নি। কাজিমিয়েরেজও তার পরিবারের কথা অমান্য করেননি। এই বিচ্ছেদ মেরিকে আহত করে। পরে মেরি এ চাকরি ছেড়ে দেন।
ইতোমধ্যে মেরির বোন শিক্ষা কার্যক্রম শেষ করে চিকিৎসকের পেশায় নিয়োজিত হয়। পূর্বশর্ত অনুযায়ী এবার মেরি তার বোনের আর্থিক সহায়তায় বিজ্ঞানের উচ্চশিক্ষার জন্য প্রথমে অস্ট্রিয়ার শাসনাধীনে ক্রাকো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যান। কিন্তু সেখানে বিজ্ঞান ক্লাসে যোগ দিতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সচিব অসম্মতি জ্ঞাপন করে মেরিকে জানিয়ে দেন যে, বিজ্ঞান মেয়েদের জন্য নয়, তিনি যেন রন্ধন শিক্ষা ক্লাসে যোগ দেন। তবে এসব বাধা মেরিকে তার বিজ্ঞানর প্রতি আগ্রহকে দমিয়ে রাখতে পারেনি।
প্যারিসে নতুন অভিজ্ঞতা
১৮৯১ এর শেষের দিকে মেরি পোল্যান্ড থেকে ফ্রান্সের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান। তিনি প্যারিসের সোরবর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে পদার্থবিজ্ঞানে, রসায়নে এবং গণিতে অধ্যয়ন করতে থাকেন। এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে ল্যাটিন কোয়ার্টারে একটি গ্যারেজ ভাড়া করে এং সেখানে বসবাস শুরু করেন। তবে অল্প কয়েকদিনের জন্য তিনি বোনের বাসায়ও ছিলেন। মেরির আয় তখন ছিল খুবই সীমিত। প্রায় সময় তাকে ক্ষুধায় কাটাতে হত। মেরি দিনে পড়তেন, সন্ধ্যায় পড়াতেন এবং পড়িয়ে যা আয় করতেন, তা ছিল খুবই সামান্য। ১৯৮৩ সালে তাকে পদার্থবিজ্ঞানে ডিগ্রি দেয়া হয়।
এরপর তিনি গ্যাব্রিয়েল লিপম্যানের শিল্পভিত্তিক গবেষণাগারে কাজ শরু করেন। এরই মধ্যে তিনি আরেকটি ডিগ্রি অর্জনের মাধ্যমে ফেলোশিপ পেয়ে যান। এরপর থেকে তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভালোভাবে পড়াশোনা চালিয়ে যান।
মেরি প্যারিসে ‘দ্য সোসাইটি ফর দ্য এনকারেজমেন্ট অফ ন্যাশনাল ইন্ডাস্ট্রি’র সহায়তায় বিভিন্ন পদার্থের চৌম্বক ধর্ম পরীক্ষার মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক গবেষণা শুরু করেন। এই সময় পিয়েরে আসেন তার জীবনে। প্রকৃত বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহই তাদেরকে এ জায়গায় নিয়ে আসে।
পিয়েরে কুরি ছিলেন বিশিষ্ট পদার্থবিদ। কুরির বাবা ইউজিন কুরি নিজের বাড়িতেই একটি গবেষণাগার গড়ে তুলেছিলেন। সেখানে ভাই জাকা কুরি আর বাবার সাথে পিয়েরে রাতদিন গবেষণা করতেন।
মেরি ও পিয়েরে কুরির বৈজ্ঞানিক প্রেমের উপাখ্যান
পোলিশ পদার্থবিদ অধ্যাপক জোজেফ কোভালস্কি যিনি মেরিকে সব ব্যাপারে সাহায্য করতেন, তিনিই মেরিকে কুরিদের গবেষণাগারে যোগ দিতে পরামর্শ দেন। তিনি জানতেন যে মেরির গবেষণা কাজ চালিয়ে নেয়ার জন্য বড় একটি গবেষণাগার প্রয়োজন। তাই তিনি পিয়েরের সাথে মেরির পরিচয় করিয়ে দেন। মেরিকে দেখেই পিয়েরে তার প্রেমে পড়ে গেলেন। মেরিরও পিয়েরেকে দেখে ভালো লেগেছিল, কিন্তু কাজিমিয়েরেজের সাথে ভালোবাসার তিক্ত অভিজ্ঞতা ভুলতে পারেননি। তাই প্রথমদিকে বিষয়টা এড়িয়ে চলতেন।
যা-ই হোক, দুজনে মিলে চুম্বক গবেষণায় নিয়োজিত হন। গবেষণা চলার সময়ে তাদের মাঝে তীব্র ভালোলাগা ও ভালোবাসার জন্ম নেয়। পিয়েরই বেশি আগ্রহী ছিলেন। অপরদিকে মেরি ছিলেন বাস্তববাদী। একদিন পিয়েরে সাহস করে মেরিকে প্রস্তাব দিয়ে বসেন। মেরি সরাসরি না করেননি, বেশ কিছু অজুহাতে এড়িয়ে যেতে চেয়েছিলেন। আসলে মেরি নিজ দেশ পোল্যান্ডে ফিরে যেতে চেয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে শিক্ষকতা করতে চেয়েছিলেন। পিয়েরে তা জানতে পেরে মেরিকে একটি প্রেমপত্র লেখেন। পত্রটির অংশবিশেষ-
“আমরা একে অপরকে কথা দিয়েছিলাম যে, আমরা একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখবো। আশা করছি, তুমি তোমার মন পরিবর্তন করবে না। কোনো কথা কাউকে দিয়ে জোর করে পূরণ করা সম্ভব নয়। এটা খুব সুন্দর হতো যদি আমরা বাকিটা জীবন একসাথে কাটাতে পারতাম; আমাদর স্বপ্নের মতো করে, তোমার স্বপ্ন, আমাদের স্বপ্ন, বিজ্ঞানকে নিয়ে দেখা আমাদের স্বপ্ন নিয়ে।”
এমনকি পিয়েরেও পোল্যান্ড যেতে চেয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে তিনি কী করবেন! মেরির এমন প্রশ্নে তার জবাব ছিল, সেখানে গিয়ে তিনিও নাহয় শিক্ষকতা করবেন। পরে মেরি আর না করতে পারেননি। অবশেষে, ১৮৯৫ সালের ২৬ জুলাই দুই পরিবারের সম্মতিতে তাদের বিয়ে হলো।
সংসার, গবেষণা আর ভালোবাসা
মেরি ও পিয়েরের জীবনে সংসার,গবেষণা,আর ভালোবাসা যেন হাত ধরাধরি করে চলছিল। মেরি ও পিয়েরে যৌথভাবে গবেষণা শুরু করেন। ১৮৯৮ সালে এই দম্পতি প্রথমে প্লিচব্লেন্ড থেকে তেজস্ক্রিয় পদার্থ পলোনিয়াম এবং পরে রেডিয়াম আবিষ্কার করেন, যা ইউরেনিয়াম হতে দশ লক্ষ গুণ বেশি শক্তিশালী। এই রেডিয়ামের ব্যবহার অপরিসীম। কুরি দম্পতি প্রমাণ করলেন যে, কোনো কোনো মৌলের পরমাণু ক্রমাগত ভেঙে গিয়ে রশ্মি বিকিরণ করে। এই বিকিরণ অন্য কোনো পদার্থ ভেদ করেও যেতে পারে। এই ধরনের পদার্থকে বলে তেজস্ক্রিয় পদার্থ, আর এই গুণকে বলে তেজস্ক্রিয়তা।
মেরি ও পিয়েরে এজন্য ১৯০৩ সালে নোবেল পুরস্কার পান। প্রথমে কমিটি শুধুমাত্র পিয়েরে কুরি ও অঁরি বেকেরেল(তিনিও এ গবেষণায় সাহায্য করেছিলেন) মনোনয়ন করেছিলেন। পরে অবশ্য পিয়েরে নোবেল কমিটির কাছে জানান এর কৃতিত্ব তার একার নয়, মেরি না থাকলে তিনি রেডিয়ামের দেখা পেতেন না। পরে নোবেল কমিটি মেরি কুরির নাম ঘোষণা করেন। দু’জন যেমন গবেষণা একসাথে করতেন, তেমনি সংসারের কাজগুলোও একসাথে ভাগাভাগি করে করতেন। মেরি সবসময় পিয়েরের পাশে থাকতেন।
অনেক বিজ্ঞানীরা মজা করে বলতেন যে, “পিয়েরের সবচেয়ে বড় আবিষ্কার ছিল মেরি।”তারা কাজের ফাঁকে প্রায় সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়তেন। এভাবেই তাদের সুখের জীবন কেটে যাচ্ছিল। এরই মধ্যে তাদের ঘর আলো করে আসেন আইরিন কুরি ও ইভ ক্যুরি।
মা হিসেবে ‘মেরি কুরি’
সন্তান জন্মের পর মেরির দায়িত্ব আরো বেড়ে যায়। মেরি তার অটোবায়োগ্রাফি ‘পিয়েরে ক্যুরি উইথ অটোবায়োগ্রাফিকাল নোটস’ এ লিখেছেন-
“একদিকে আমার ছোট্ট মেয়ে আইরিন, সংসারের কাজকর্ম আর অন্যদিকে বিজ্ঞানকে ঘিরে আমার সাধনা, এসবের মধ্যে সমন্বয় করা খুব কঠিন হয়ে পড়েছিল। কাজের পাশাপাশি আমি কি পারছি আমার সন্তান ও সংসারকে সময় দিতে? এই দ্বিধা মাঝেমাঝেই আমার জন্য কষ্টকর হয়ে উঠত।”
তিনি এক জায়গায় মজা করে লিখেছিলেন,
“আমার স্বামী অবশ্য এসব নিয়ে মাথা ঘামাতেন না। তিনি প্রায়ই বলতেন, তিনি (পিয়েরে) নাকি এমন একজন জীবন সঙ্গিনী পেয়েছেন ,যাকে ঈশ্বর শুধু তার জন্যই সৃষ্টি করেছেন। যার সঙ্গে সব চিন্তাভাবনা ভাগাভাগি করে নিতে পারেন।”
মেরি আরো বলেন,
“বাড়ির কাজে সাহায্য করার জন্য অবশ্য একজন লোক ছিলেন বটে। কিন্তু মেয়ের ছোটখাট বিষয়গুলো আমি নিজে দেখার চেষ্টা করতাম। যখন কাজের জন্য আমাকে ল্যাবরেটরিতে থাকতে হতো, তখন আইরিনকে তার দাদা দেখাশোনা করতেন। নাতনিকে অসম্ভব ভালোবাসতেন তিনি। বলা যায় নাতনির জন্য তার জীবন ঝলমল হয়ে উঠেছিলো। পরিবারের এই ঐক্য, ভালোবাসা, সহানুভূতির কারণে আমি অনায়াসে আমার কাজ চালিয়ে যেতে পেরেছিলাম। মাঝেমধ্যে অবশ্য এর ব্যতিক্রম যে হতো না তা নয়, বিশেষ করে মেয়েটা যখন অসুস্থ হয়ে পড়ত, তখন রাত জাগার কারণে কাজে ব্যাত্যয় ঘটত।”
এত ব্যস্ততার মাঝেও তাদের বাড়িতে অনেক আড্ডা হতো। সেসব আড্ডায় মূলত বিজ্ঞান সাধকেরা থাকতেন। মেরি বলেন,
“আমাদের মতো বিজ্ঞান নিয়ে যারা কাজ করতেন, তাদের সঙ্গে মাঝে মধ্যে বাড়িতে বা বাগানে আড্ডা হতো আমাদের। আর সেইসময়টা আমি আমার মেয়েদের জন্য এটা-সেটা বানানোর প্রয়োজনে সেলাইয়ের কাজ সেরে নিতাম।”
মা হিসেবেও যে মেরি কুরি অনন্য ছিলেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
মানবতায় মেরির অবদান
বেশ সুখেই দিন কেটে যাচ্ছিল মেরি আর পিয়েরের। হঠাৎ করেই মেরির জীবনে নেমে আসে বিষাদের ছায়া। গাড়ি দু্র্ঘটনায় মৃত্যু হয় পিয়েরের। এতে করে মেরি শোকে একদম ভেঙে পড়েন। তবে ১১ বছরের ভালোবাসা এখানেই সমাপ্ত হয়নি। মেরি তার ভালোবাসাকে ধারণ করে এগিয়ে নিলেন অসমাপ্ত কাজ। ১৯১১ সালে প্রথম বিজ্ঞানী হিসেবে পেলেন দ্বিতীয় নোবেল পুরস্কার, তবে এবার রসায়নে। তারপর পিয়েরের প্রতি ভালোবাসাটা উজাড় করে দিলেন মানবসেবায়। তেজস্ক্রিয়তাকে কীভাবে চিকিৎসাবিজ্ঞানে কাজে লাগানো যায়, সে চেষ্টা করলেন। সফলও হলেন এই কাজে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তিনি তা কাজে লাগান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলার সময়ে মেরি বুঝতে পারেন যে যুদ্ধক্ষেত্রে সার্জনদের সাহায্য করার জন্য যুদ্ধস্থলের কাছাকাছি ফিল্ড রেডিওলজিকাল সেন্টার স্থাপন করা প্রয়োজন।
রেডিওলজি, অঙ্গসংস্থানবিদ্যা এবং স্বয়ংক্রিয় বলবিদ্যার উপর দ্রুত অধ্যয়নের পর তিনি এক্স রে যন্ত্র এবং ভ্রাম্যমাণ রেডিওগ্রাফির উন্নয়ন করেন যেগুলো পরবর্তীতে ‘পেটিটস কুরিস’ (ছোট কুরিগুলো) নামে পরিচিত ছিল। তিনি তার মেয়ে আইরিনের সহায়তায় ২০টি ভ্রাম্যমাণ হাসপাতাল গুলোতে রেডিওলজিকাল ইউনিট পরিচালনা করেন।
মেরি কুরির মৃত্যু
কিন্তু দিনরাত তেজস্ক্রিয় মৌল নিয়ে নাড়াচাড়ার ফল ভালো হল না। অচিরেই তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ১৯৩৪ সালের ৪ জুলাই এই মহিয়সী নারীর মৃত্যু হয়।
তিনি শুধু একজন সফল বিজ্ঞানীই ছিলেন না, একাধারে একজন নিবেদিত স্ত্রী , একজন দায়িত্বশীল মা এবং একজন মানবদরদী ছিলেন। পিয়েরে কুরির সাহচর্যে যে তেজস্ক্রিয় ভালোবাসার সূচনা হয়েছিল তার সমাপ্তি ঘটলো মেরি ক্যুরির মৃত্যুর মধ্য দিয়ে।
ফিচার ইমেজ- pinterest.com