নাসির আল দীন আল তুসি: এক বিস্ময়কর পারস্য প্রতিভার গল্প

চাঁদের দক্ষিণ গোলার্ধে, ৬০ কিলোমিটার ব্যাসের বিশাল এক গর্তের (ক্র্যাটার) নাম ‘নাসিরুদ্দিন’ রাখা হয়েছে। সোভিয়েত জ্যোতির্বিদ নিকোলাই স্টেপানোভিচ ১৯৭৯ সালে ছোট একটি গ্রহ আবিষ্কার করেন। গ্রহটির নাম রাখা হয় ‘তুসি-১০২৬৯’। ইরানে তার নামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ‘কে. এন তুসি ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি’। আজারবাইজানে পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো মানমন্দিরগুলোর একটি তারই প্রচেষ্টায় স্থাপিত হয়েছিল। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তার ৮১২তম জন্মদিন উদযাপনে গুগল তৈরি করে একটি ‘গুগল ডুডল’।

উল্লেখ্য, কোনো বিখ্যাত ব্যক্তির জন্মদিন বা কোনো বিশেষ ঘটনার বর্ষপূর্তি উদযাপনে, গুগলের হোমপেইজে এর লোগো সাময়িক সময়ের জন্য পরিবর্তন করা হয়। স্বল্পকালীন এই নতুন ডিজাইনের লোগোগুলোকে গুগল ডুডল বলে। তাহলে এবার অনুমান করুন তো পাঠক, সেই বিখ্যাত ব্যক্তিটি কে?

নাসির আল দিন আল তুসি (১২০১-১২৭৪); source: thefamouspeople.com

মুহাম্মদ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আল-হাসান আল তুসি, সংক্ষেপে নাসির আল দীন আল তুসি। আরো সংক্ষেপে ‘খাজা নাসির’ নামে পরিচিত তিনি। তিনি একাধারে গণিতবিদ, জ্যোতির্বিদ, যুক্তিবিদ, সঙ্গীতবিদ, চিকিৎসক, স্থপতি, দার্শনিক, ধর্মতাত্ত্বিক এবং লেখক ছিলেন। মধ্যযুগের শ্রেষ্ঠ মুসলিম মনীষীদের মধ্যে তিনি অগ্রগণ্য একজন। তাকে বলা হয় ‘ত্রিকোণমিতির স্রষ্টা’। ত্রিকোণমিতিকে তিনিই একটি পৃথক গাণিতিক শাখা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। জ্যোতির্বিজ্ঞান এবং চিকিৎসাশাস্ত্র সহ বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় ১৫০টির অধিক বই লেখেন এই গুণী পণ্ডিত। তাছাড়া অনেক বিখ্যাত অনারব জ্যোতির্বিদ এবং গণিতবিদের গ্রন্থাবলী তিনি আরবিতে অনুবাদ করেন। তার ১৫০টি বইয়ের মধ্যে ২৫টি ফারসি ভাষায় রচিত, বাকিগুলো আরবিতে। এগুলোর মাঝে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি গ্রন্থের তালিকা উল্লেখ করছি।

শাকল আল কাত্তার ইংরেজি অনুবাদ; source: muslimheritage.com

  • আখলাক-ই-নাসিরি (চরিত্র ও নৈতিকতার উপর)
  • জিজ-ই-ইলখানিক (জ্যোতির্বিজ্ঞান সম্বন্ধীয় তালিকা)
  • তানজিদ আল ইতিকাদ (শিয়া বিশ্বাসের উপর লিখিত গ্রন্থ)
  • আল তাধকিরাহ ফি-ইলিম আল হায়াহ (বিজ্ঞান ও জ্যোতির্বিজ্ঞানের ইতিহাস)
  • শারহ আল ইশারাত (ইবনে সিনার ইশারাত গ্রন্থের উপর লিখিত প্রবন্ধ)
  • কিতাব আল শাকল আল কাত্তা (ত্রিকোণমিতির উপর তার লেখা শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ)

আল তুসির সময়ে ত্রিকোণমিতিকে গণিতের কোনো আলাদা শাখা মনে করা হতো না। বরং জ্যোতির্বিজ্ঞানে এর অত্যন্ত কার্যকরী ব্যবহারের জন্য ত্রিকোণমিতিকেও জ্যোতির্বিজ্ঞানেরই একটি শাখা গণ্য করা হতো। ‘ট্রিটিস অন কোয়াড্রিলেটারাল’ রচনা করে এই ধারণা পাল্টে দেন আল তুসি। তিনি জ্যোতির্বিজ্ঞানকে সম্পূর্ণ বাদ দিয়ে শুধুমাত্র গোলকীয় ত্রিকোণমিতির উপর অসাধারণ এই বইটি রচনা করেন। আর তাতেই ত্রিকোণমিতি জ্যোতির্বিজ্ঞান থেকে আলাদা হয়ে, বিশুদ্ধ গণিতের নিজস্ব এক শাখা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়

আল তুসিই প্রথম ব্যক্তি যিনি গোলকীয় ত্রিকোণমিতিতে ছয়টি পৃথক ত্রিভুজের তালিকা তৈরি করেন। তবে ত্রিকোণমিতিতে তার সবচেয়ে বড় সাফল্য হচ্ছে, গোলকীয় ত্রিভুজের জন্য ‘ল অব সাইন’ বা সাইন সূত্র এবং ‘ল অব ট্যানজেন্ট’ বা ট্যানজেন্ট সূত্র আবিষ্কার। শুধু আবিষ্কারই করেননি, এই দুটি সূত্রের পক্ষে প্রমাণও দেন আল তুসি। উচ্চ মাধ্যমিক গণিত বইয়ের কল্যাণে আমরা সকলেই এই সূত্র দুটির সাথে পরিচিত।

তুসির আবিষ্কৃত সাইন এবং ট্যানজেন্ট সূত্র; source: muslimheritage.com

“একটি বস্তু বা সত্তা কোনো অবস্থাতেই সম্পূর্ণরূপে বিলীন হতে পারে না। এর কেবল গঠন, অবস্থা, আকার, রঙ এবং অন্যান্য বাহ্যিক বা আভ্যন্তরীণ ধর্মের পরিবর্তন ঘটে।”– আল তুসি

এই উক্তিটি দ্বারা আল তুসি, একইসাথে পদার্থবিজ্ঞানের শক্তির অবিনশ্বরতা নীতি আর রসায়নের ভরের নিত্যতার নীতির সমর্থন করেছেন! যুক্তিশাস্ত্রে তিনি ইবনে সিনার একনিষ্ঠ সমর্থক ছিলেন। ইবনে সিনার ‘ইশারাত’ গ্রন্থের উপর তিনি একটি প্রশংসাসূচক প্রবন্ধ ‘শারহ আল ইশারাত’ রচনা করেছেন।

চার্লস ডারউইনের ‘ন্যাচারাল সিলেকশন’ প্রকাশিত হয়েছিল ১৮৫৯ সালে। আল তুসি এর প্রায় ৬০০ বছর আগেই বিবর্তনবাদের মৌলিক কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন! ডারউইন তার ‘অরিজিন অব স্পিসিস’ গ্রন্থে আল তুসির কাজের প্রতি কৃতজ্ঞতাও স্বীকার করেছেন, যা অধিকাংশেরই অজানা। আল তুসি তার ‘আখলাক-ই-নাসরি’ গ্রন্থে বিবর্তন নিয়ে যে আলোচনা করেছেন, তা অবশ্য ডারউইনের আলোচনার চেয়ে ভিন্ন। কেননা তিনি মহাবিশ্ব সৃষ্টি ও এর বিবর্তনের উপর গুরুত্বারোপ করেন যেখানে ডারউইন আলোচনা করেছেন প্রাণীর বিবর্তন নিয়ে।

তুসির মতে বিবর্তন; source: muslimheritage.com

তুসির মতে, সৃষ্টির শুরুর দিকে মহাবিশ্ব গড়ে উঠেছিল সমপরিমাণ এবং সমরূপ পদার্থ দিয়ে। কিন্তু দ্রুতই আভ্যন্তরীণ অসঙ্গতি শুরু হয় এবং বিভিন্ন পদার্থের মধ্যে পরিবর্তন শুরু হয়। কিছু পদার্থের পরিবর্তন দ্রুত এবং ভিন্ন উপায়ে ঘটতে থাকে। আর পরিবর্তনের এই ভিন্নতার কারণেই ভিন্ন ভিন্ন পদার্থ বিবর্তিত হয়ে খনিজ, বৃক্ষ, প্রাণী, মানুষের সৃষ্টি হয়। আর জৈবিক বিবর্তনের জন্য বংশগত পরিবর্তনশীলতার প্রয়োজনীয়তাও তিনি ব্যাখ্যা করেন। প্রতিকূল পরিবেশে কীভাবে প্রাণী অভিযোজিত হয়, তা নিয়েও আলোচনা করেন তুসি।

অভিযোজনের ব্যাপারটি পরিষ্কার করতে তুসি তার চারপাশের পশুপাখির উদাহরণ টানেন। জীবন ধারণের জন্য এবং প্রতিরক্ষার জন্য এদের দেহে এমন কিছু অঙ্গ রয়েছে, যেগুলো প্রকৃত অস্ত্রের মতোই কাজ করে। শিং যা বর্শার মতো কাজ করে; দাঁত এবং থাবা কাজ করে ছুরি হিসেবে; খুর কাজ করে গদার মতো। আবার যেসব প্রাণীর এ ধরনের অঙ্গ নেই, প্রতিকূল পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে তাদের রয়েছে তীক্ষ্ণ বুদ্ধি এবং দ্রুত পলায়নের ক্ষমতা, যেমন শেয়াল। আবার যে সকল প্রাণীর দ্রুত পালাবার ক্ষমতাও নেই, তারা দল বেঁধে বাস করে শত্রুর মোকাবিলা করার জন্য, যেমন পিঁপড়া।

আল তুসির মতে, পৃথিবীতে তিন ধরনের জীব রয়েছে- বৃক্ষ, প্রাণী (পশুপাখি) এবং মানুষ। মানুষকে তিনি আলাদা শ্রেণীতে স্থাপন করেছেন। কারণ তার মতে, মানুষ বিবর্তনের মধ্যভাগে রয়েছে। মানুষের বিবর্তন সম্পর্কে তার ব্যাখ্যা-

“মানুষের কিছু বৈশিষ্ট্য তাকে অন্য সকল জীব থেকে আলাদা করে, কিছু বৈশিষ্ট্য আবার পশুর মতো বানিয়ে দেয়, কিছু বৈশিষ্ট্য আছে যেগুলো বৃক্ষের বৈশিষ্ট্যের প্রতিফলন। এসবই প্রমাণ যে, মানুষ ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হচ্ছে এবং পরিপূর্ণতার দিকে ধাবিত হচ্ছে। পূর্বে, পার্থক্য কেবল প্রাণীর প্রকৃতির মধ্যে ছিল। এরপর পার্থক্য গড়ে দেয় পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা এবং জ্ঞান। একসময় পার্থক্য গড়ে দেবে আত্মিক পরিশুদ্ধিতা। মানুষ এখনো নিম্ন শ্রেণীর প্রাণীর সাথে সম্পর্কযুক্ত। তবে নিজেদের প্রচেষ্টায় তারা একদিন আত্মিক পরিশুদ্ধিতা লাভ করবে, উচ্চ স্তরে পৌঁছে যাবে।”

তুসির চেষ্টায় প্রতিষ্ঠিত মারাগেহ মানমন্দিরের বর্তমান চিত্র; source: tishineh.com

আল তুসির সময়ে ইরানের শাসক ছিলেন মঙ্গোল শাসক হুলেগু খান। তুসির প্রচেষ্টায় হুলেগু খান একটি মানমন্দির স্থাপন করেন। এই মানমন্দির থেকে তিনি পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে একটি নিখুঁত অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল টেবিল তৈরির চেষ্টা করেন, যেন নির্ভুল জ্যোতিষশাস্ত্রীয় গণনা করা যায়। তার বই ‘জিজ-ই-ইলখানি’তে তিনি গ্রহ নক্ষত্রের গতিবিধি সম্বন্ধীয় বেশ নিখুঁত একটি ছক তৈরি করেন, যা তার সময়ের সবচেয়ে নির্ভুল ছক বলে গণ্য করা হতো। তাছাড়া কোপার্নিকাসের সূর্যকেন্দ্রিক সৌরমডেলের পূর্ব পর্যন্ত, আল তুসির সৌরমডেলই ছিল সবচেয়ে উন্নত এবং অধিক ব্যবহৃত মডেল। তাই মুসলিমদের নিকট আল তুসি ছিলেন টলেমির চেয়েও জনপ্রিয়।

তুসি কাপল; source: wikimedia.commons

আল তুসি তার সৌরমডেল ব্যাখ্যার জন্য জ্যামিতিক পদ্ধতি অবলম্বন করেন। তিনি দুটি বৃত্তীয় গতির সমষ্টি থেকে রৈখিক গতি সৃষ্টি করেন যা ‘তুসি কাপল’ বা তুসি যুগল নামে পরিচিত। এই তুসি কাপল দিয়ে তিনি টলেমির ‘ইকুয়েন্ট’ ছেঁটে ফেলেন। ফলে বুধ গ্রহ নিয়ে প্রচলিত সমস্যারও সমাধান হয়ে যায়। মজার ব্যাপার হচ্ছে, যদিও তুসি কাপল একটি ভূকেন্দ্রিক মডেল ব্যাখ্যা করতেই আবিষ্কৃত হয়, নিকোলাস কোপার্নিকাস তার সৌরকেন্দ্রিক মডেলেও এই তুসি কাপল ব্যবহার করেন।

আল তুসি সফলভাবে বিষুবরেখার বার্ষিক অয়নচলনও পরিমাপ করতে সক্ষম হন। তাছাড়া অ্যাস্ট্রোল্যাব যন্ত্রের উন্নয়নে ভূমিকা রাখেন তুসি। তবে আমাদের ছায়াপথ আকাশগঙ্গা নিয়ে তুসির পর্যবেক্ষণ ছিল অসাধারণ। তিনি বলেন, আকাশগঙ্গা অগণিত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র, ক্ষীণ আলোর (দূরবর্তী তারকাগুলো ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর মনে হয়) তারকার সমন্বয়ে গঠিত, যেগুলো অত্যন্ত কাছাকাছি গুচ্ছাকারে অবস্থান করছে। তার এই পর্যবেক্ষণের তিন শতাব্দী পর গ্যালিলিও নিজের টেলিস্কোপ দ্বারা পর্যবেক্ষণ করে নিশ্চিত করেন যে, আমাদের ছায়াপথ প্রকৃতপক্ষেই অসংখ্য ক্ষীণ আলোর তারকা দ্বারা গঠিত। তবে দূরত্ব বিষয়ক পর্যবেক্ষণটি ছিল ভুল। কেননা এখন আমরা জানি যে, সে তারকাগুলোর মধ্যে দূরত্বও অনেক বেশি।

তুসির সৌরমডেল; source: casswww.ucsd.edu

আল তুসি ১২০১ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ইরানের খোরাসানের তুস নগরে এক ধনী শিয়া পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তুস নগরেই তিনি পদার্থবিজ্ঞান, যুক্তিশাস্ত্র এবং গণিত বিষয়ে পড়ালেখা করেন। কৈশোরে তিনি নিশাপুরে দর্শন ও চিকিৎসাশাস্ত্র পড়ালেখা করেন। পড়ে ইরাকের মসুলে ভ্রমণ করেন জ্যোতির্বিজ্ঞান পড়ার জন্য। ১২৩০ সালে মঙ্গোলরা তুস আক্রমণ করলে আল তুসি পালিয়ে যান এবং ইসম’লি দুর্গে আশ্রয় নেন। সেখানেই তিনি পরবর্তী ২৫ বছর বিভিন্ন গবেষণা এবং পর্যবেক্ষণ করে কাটিয়ে দেন। ১২৫৬ সালে হুলেগু খানের নেতৃত্বে মঙ্গোলরা ইসম’লি দখল করে নেয় এবং আল তুসিকে বন্দী করে। অবশ্য তুসির গুণমুগ্ধ হয়ে হুলেগু খান তুসিকে নিজের উপদেষ্টা নিয়োগ দেন।

হুলেগু খানের সাথে আল তুসির জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু হয়। তিনি ১২৫৯ সালে হুলেগু খানকে রাজি করিয়ে আজারবাইজানে তৎকালীন সবচেয়ে উন্নত মানমন্দির স্থাপন করেন, যা আজও স্বমহিমায় বিদ্যমান। এ সময় তিনি রাত জেগে আকাশ পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি দিনভর আর্কিমিডিস, টলেমি, হাইপেসিস, অটোলিকাস, মেনেলাস, থিওডিসিয়াসের মতো বিজ্ঞানী এবং জ্যোতির্বিদদের গ্রন্থ অনুবাদ করেন। আর পর্যবেক্ষণ থেকে যে অ্যাস্ট্রনমিক্যাল টেবিল তিনি তৈরি করেন, সেটি ব্যবহৃত হতো ১৬ শতক পর্যন্ত।

১২৫৬ সালে আল তুসি একজন মঙ্গোল নারীকে বিয়ে করেন। তার সন্তানাদি ছিল কিনা, সে ব্যাপারে সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না। ১২৭৪ সালের ২৬ জুন তিনি পরলোকগমণ করেন। বিখ্যাত মুসলিম পণ্ডিত ও দার্শনিক ইবনে খালদুন, আল তুসিকে মধ্যযুগের শ্রেষ্ঠ পারসিক পণ্ডিত বলে অভিহিত করেছেন। তার সম্বন্ধে জানবার পর এটা স্পষ্ট যে, খালদুন মোটেও ভুল কিছু বলেননি।

ফিচার ছবি: 3d-car-shows.com (আল তুসির জন্য গুগলের তৈরি করা গুগল ডুডল)

Related Articles

Exit mobile version