Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ওয়ান রেড পেপারক্লিপ প্রজেক্টঃ একটি পেপারক্লিপের বিনিময়ে বাড়ির মালিক হবার গল্প

২০০৫ সালের জুলাই মাসে কানাডিয়ান ব্লগার কাইল ম্যাকডোনাল্ড ভাবছিলেন কিভাবে একটা বাড়ির মালিক হওয়া যায় অথবা একটা দ্বীপের (!) অথবা কোনো দ্বীপস্থ এক বাড়ির! কিন্তু সেটা কিভাবে? ভাবতে ভাবতেই কাইলের নজরে পড়লো পাশে থাকা একটা লাল পেপারক্লিপের উপর। ব্যাস, বুদ্ধির বাত্তি জ্বলে গেলো। এই ছোট্ট লাল পেপারক্লিপ দিয়েই শুরু হল কাইলের বিনিময় কার্য। আসুন, শোনা যাক কাইলের সেই মজার গল্পটি

এই সেই লাল পেপারক্লিপ যার থেকে শুরু হওয়া পর্যায়ক্রমিক অদলবদলে কাইল বনে গিয়েছিলেন একটি দোতলা বাড়ির মালিক; ছবিসূত্রঃ Kyle MacDonald

২০০৫ সালের ১২ জুলাই কাইল কম্পিউটারের পাশে টেবিলের উপর পড়ে থাকা লাল পেপারক্লিপটি বিক্রির জন্য ক্রেইগ্সলিস্ট নামের একটা ওয়েবসাইটে পোস্ট করলেন। বিনিময়ে চাইলেন আরো বড় কিংবা ভালো কিছু। সেটা হতে পারে একটা কলম অথবা একটা চামচ। এই পোস্ট দেখে ভ্যাঙ্কুবারের রাওনি আর করিনা কাইলকে ফোন দিলেন। তারা তাদের মাছের মতো দেখতে কাঠের কলমটি (Fish Pen) সেই লাল পেপারক্লিপের বিনিময়ে নিতে চান। ক্যাম্পিং থেকে পাওয়া এই সুন্দর কলমটি দিতে রাওনির খারাপ লাগলেও যেহেতু তারা ভেগান, ছিলেন সেহেতু মাছ আকৃতির কলমটি ব্যবহার করতে তাদের মনে খচখচ করছিল। ভেগান হলো তারা যারা খুব কঠোরভাবে প্রাণীজ খাবার, পণ্য ইত্যাদি যা কিছু আছে প্রাণী সম্পর্কিত সবকিছু থেকে নিজেদের দূরে রাখেন। এরা নিরামিষাশীদের থেকেও একধাপ সংবেদনশীল প্রাণীদের ব্যাপারে। এদেরকে অনেক সময় মাত্রাতিরিক্ত কঠোর প্রকৃতির নিরামিষাশীও বলা হয়ে থাকে। যা-ই হোক, আমরা মূল প্রসঙ্গে ফিরে আসি।

রাওনি আর করিনার সাথে কাইল; ছবিসূত্রঃ Kyle MacDonald

এই সেই মৎস্যাকৃতির কলম; ছবিসূত্রঃ Kyle MacDonald

লাল পেপারক্লিপটি পেয়ে রাওনিরা খুশি। আর এদিকে কাইল ভাবছেন এই কাঠের মৎস্য কলমটি দিয়ে আরো ভালো কী পাওয়া যেতে পারে! তিনি এই কলমটিও বিনিময়ের জন্য ব্লগে পোস্ট করলেন। আর দশ মিনিটের মাথায় অ্যানি রবিনস কাইলকে কল করলেন। তিনি একটি দরজার হাতলের বিনিময়ে কাইলের কাছে থাকা কলমটি নিতে চান। কাইল চলে গেলেন সিয়্যাটল যেখানে অ্যানি থাকেন।

সিয়্যাটলে অ্যানি রবিনসের সাথে কাইল। কাইলের হাতে সিরামিকের হাতল আর অ্যানি ধরে আছেন সেই সুন্দর কলমটি; ছবিসূত্রঃ Kyle MacDonald

দরজার হাতলটি দেখে কাইল যারপরনাই খুশি হলেন। এটা কোনো সাধারণ হাতল ছিল না। ভাস্কর অ্যানি সিরামিকের তৈরি হাতলটির উপর কাজও করেছিলেন। কাইল তার নতুন পাওয়া এই সিয়্যাটল স্যুভেনিরের নাম দিলেন Knob-T। কিন্তু এই যে এত প্রিয় কারুশিল্পের হাতল, এটিও বিক্রির জন্য ব্লগে পোস্ট করলেন কাইল। আর জবাবও আসলো ম্যাসাচুসেটসের অ্যামহার্স্ট থেকে। শন স্পার্ক তার ক্যাম্প স্টোভটি সেই হাতলের বিনিময়ে দিতে চান।

কাইলের সিয়্যাটল স্যুভেনির; ছবিসূত্রঃ Kyle MacDonald

২৫ জুলাই তাই বন্ধু অ্যালানকে নিয়ে অ্যামহার্স্ট রওনা হলেন কাইল ম্যাকডোনাল্ড। হাসিখুশি শন তার কোলম্যান কোম্পানির স্টোভটি সেই সিরামিকের হাতলের বদলে নিয়ে নিলেন। সাথে কাইলকে কিছু ফুয়েলও দিলেন স্টোভ জ্বালানোর জন্য। কিন্তু কাইল তো আছেন অন্য ধান্ধায়! তার লাগবে একটা বাড়ি।

কোলম্যান স্টোভের সামনে হাস্যোজ্জ্বল কাইল ও শন স্পার্ক। সাথে উদম গায়ে দাঁড়িয়ে শনের ছেলে সিমাস; ছবিসূত্রঃ Kyle MacDonald

কোলম্যান স্টোভ; পাশে শনের দেওয়া সেই ফুয়েল ক্যান; ছবিসূত্রঃ Kyle MacDonald

এবারের বিনিময় ক্যাম্প স্টোভের সাথে এক হাজার ওয়াটের একটা লালরঙা হোন্ডা কোম্পানির জেনারেটরের। জেনারেটরটির মালিক ছিলেন একজন সেনাসদস্য- ফার্স্ট সার্জেন্ট ডেভিড। এবার কাইলের একটা নতুন অভিজ্ঞতা হলো। তিনি এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সামরিক ঘাঁটিতে যাননি। ২৪ সেপ্টেম্বর মাকে নিয়ে ক্যালিফোর্নিয়ার ক্যাম্প পেন্ডেলটন মেরিন কোর বেইসে আসা তাই তার জীবনে এক অন্য ধরণের অভিজ্ঞতা ছিল।

হাজার ওয়াটের লালরঙা হোন্ডা জেনারেটর; ছবিসূত্রঃ Kyle MacDonald

সার্জেন্ট ডেভিড খুবই ভালো মানুষ এবং জ্ঞানী ‘শিক্ষক’ও ছিলেন। তিনি কাইলকে তার জেনারেটরের হার্টজ, সাইকেল, এসি, ডিসি ইত্যাদি নানা জিনিস বিশদভাবে বোঝাতে লাগলেন। আর কাইল? সার্জেন্টের কথার আগা-মাথা কিছুই না বুঝলেও কাইল ভাব নিলেন এক বুঝবান সুবোধ বালকের।

‘শিক্ষক’ সার্জেন্ট ডেভিড জেনারেটরের উপর ‘ক্লাস’ নিচ্ছেন; আর কাইল আগামাথা কিছু না বুঝলেও বেশ মনোযোগী ‘ছাত্র’; ছবিসূত্রঃ Kyle MacDonald

এদিকে একটা ঝামেলা হয়ে গেলো। এক হাজার ওয়াটের সেকেন্ড হ্যান্ড লাল জেনারেটরটি নিউইয়র্কের মার্সিন নামের এক ব্যক্তি নেবেন বলে কাইলের সাথে কথা বললেন। কাইল তার হোটেলের স্টোরেজ লকারে রাখা জেনারেটরটি আনার জন্য রিসিপশনে কথা বললেন। কিন্তু হোটেলের রিসিপশনে বসা লোকের কথা শুনে তো কাইলের মাথায় হাত। কয়েকদিন আগে নাকি স্টোরেজ থেকে গ্যাসের ধোঁয়া দেখতে পেয়ে এখানকার এক ক্লার্ক ৯১১ এ ফোন দিয়ে বসে। আর যায় কোথায়? সাথে সাথে নিউইয়র্কের ফায়ার ডিপার্টমেন্ট (FDNY) জেনারেটরটি বাজেয়াপ্ত করে নিয়ে যায়। এদিকে কাইল যে মার্সিনকে কথা দিয়ে ফেলেছেন!

কাইল বাধ্য হয়ে ট্রেডটি বাতিল করলেন। তিনি চিন্তায় পড়ে গেলেন জেনারেটরটি নিয়ে। এখন এটি তার কাছে আর সম্পদ বলে মনে হচ্ছে না; বোঝা হিসেবে ঠেকছে। কারণ কাইল ধরেই নিয়েছিলেন যে, অগ্নিকান্ডের মতো এমন গুরুতর দোষে তাকে ৫০০ ডলারের মতো জরিমানা করা হবে আর এই টাকা দেবার মতো সাধ্য এখন তার নাই। সুতরাং জেনারেটর পাওয়া, সেটি বিক্রি করা আর শেষতক নিজের একটা বাড়ির স্বপ্ন এখন তার কাছে ধূসর এক অ্যালবামের পুরনো পৃষ্ঠা বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু কাইলের ভাগ্য ভালো ছিল। কোনোরকম ঝামেলা ছাড়াই তিনি তার জেনারেটরটি পেয়ে যান। পেয়েই ফোন করেন নিউইয়র্কের কুইন্সে বাস করা মার্সিনকে। ১৬ নভেম্বর বিকাল চারটার দিকে কাইল উইলিয়ামসবার্গ ব্রিজের ওপারে থাকা মার্সিনের বাড়ি যান। সার্জেন্ট ডেভিডের হাজার ওয়াটের জেনারেটরের বিনিময়ে কাইল পান বিয়ার রাখার এক ধরণের পাত্র যাকে ইংরেজিতে Keg বলে, একটা Budweisier-এর নিয়ন সাইন; অর্থাৎ Instant party kit।

মার্সিনের সাথে অদলবদলের জিনিসপত্র নিয়ে পোজ দিচ্ছেন কাইল; ছবিসূত্রঃ Kyle MacDonald

ততদিনে কাইলের ওয়ান রেড পেপারক্লিপ প্রজেক্ট মোটামুটি সাড়া ফেলে দিয়েছিল। আর তাই এবারের অদলবদলটি হল একজন সেলেব্রিটির সাথে। কুইবেকের কমেডিয়ান আর রেডিও ব্যক্তিত্ব মাইকেল ব্যারেট ছিলেন সেই সেলেব্রিটি।

কমেডিয়ান আর রেডিও ব্যক্তিত্ব মাইকেল ব্যারেটের সাথে কাইল; ছবিসূত্রঃ Kyle MacDonald

কাইল প্রায় মাসখানেক আগে পাওয়া “Instant party kit” দিয়ে ব্যারেটের কাছ থেকে নিলেন স্কি-ডু ব্র্যান্ডের একটা স্নো-মোবিল। সময়টা ছিল শীতের ডিসেম্বর।

স্কি-ডু ব্র্যান্ডের স্নো-মোবিল; ছবিসূত্রঃ oneredpaperclip.blogspot.com

ইয়াক শহরের সাইনপোস্ট; ছবিসূত্রঃ Kyle MacDonald

ব্যারেটের সাথে অদলবদল হবার সেই সপ্তাহেই ফোন আসে কাইলের কাছে। ফোনটি করেন জেফ কুপার। তিনি SnoRiders West নামের এক ম্যাগাজিনে কাজ করেন। এটি ব্রিটিশ কলম্বিয়ার ক্র্যানব্রুক শহরের এক স্থানীয় ম্যাগাজিন। তারা কাইলকে একটা প্রস্তাব দেয়। প্রস্তাবটি হলো ব্যারেটের কাছ থেকে পাওয়া স্নো-মোবিল তারা কাইলের সাথে অদলবদল করবেন। কিন্তু যেটা দিয়ে করবেন তা না কোন বস্তু, না কোনো টাকা-পয়সা। তারা কাইলকে ইয়াক ভ্রমণের একটা প্যাকেজ প্রস্তাব করেন। দুজনের উত্তর আমেরিকার যেকোনো স্থান থেকে ক্র্যানব্রুকের (এটি ইয়াক থেকে পঁয়তাল্লিশ মিনিটের পথ) ফিরতি বিমান টিকেট, দিনব্যাপী স্কি করা, খাবার আর অবশ্যই ইয়াখে স্নো-মোবিল ভ্রমণ। কাইল এই প্রস্তাবটি গ্রহণ করেন। শেষ হয় কাইলের জন্য এক ঘটনাবহুল ২০০৫।

নতুন বছরের শুরুতেই কাইল তার এই ইয়াক ট্যুরের প্যাকেজটি Cintas Corporation-এ কর্মরত মিস্টার ব্রুনোর সাথে অদলবদল করেন। বিনিময়ে পান ডিজেল ইঞ্জিনচালিত সাদারঙা একটা ফোর্ড ভ্যান

Cintas Corporation-এ কর্মরত মিস্টার ব্রুনোর সাথে কাইল ম্যাকডোনাল্ড। পিছনে ডিজেল ইঞ্জিনচালিত সাদারঙা ফোর্ড ভ্যানটি; ছবিসূত্রঃ Kyle MacDonald

ততদিনে কাইলের এই অদলবদল নীতি আরো জনপ্রিয়তা পেয়ে যায়। এবার তিনি কানাডার অন্টারিও প্রদেশের প্রাদেশিক রাজধানী টরেন্টোর মেটালওয়ার্কস স্টুডিও থেকে প্রস্তাব পান একটি রেকর্ডিং কন্ট্রাক্টের।

টরেন্টোর মেটালওয়ার্কস স্টুডিওর সামনে কাইল; পাশে Cintas Corporation-এর লোগো সম্বলিত ফোর্ড ভ্যানটি; ছবিসূত্রঃ Kyle MacDonald

সেই সাদা কিউব ভ্যানের বদলে পাওয়া এই প্রস্তাবে ছিল- ৩০ ঘন্টা রেকর্ডিং টাইম, ৫০ ঘন্টার মিক্সিং, পৃথিবীর যেকোনো স্থান থেকে টরেন্টোতে যাতায়াতের ব্যবস্থা, টরেন্টোতে রেকর্ডিং-এর সময় থাকার ব্যবস্থা এবং প্রকাশিত অ্যালবামটি সনি-বিএমজি এবং এক্সএম স্যাটেলাইট রেডিওতে প্রচারের ব্যবস্থা। চুক্তিটি অফিশিয়াল করার জন্য কাইলকে একটা মজার কাজও করতে হয়েছিল। ভ্যানের বামদিকের পিছনের চাকায় চুক্তিনামার সাইন করতে হয়েছিল। অবশ্য চাকার এই চুক্তিনামার পাগলামির পাশাপাশি একটা কাগুজে চুক্তিও হয়েছিল।

মেটালওয়ার্কস স্টুডিওর ভেতরে। কাইলের হাতে সেই কাগুজে চুক্তিনামা; ছবিসূত্রঃ Kyle MacDonald

কাইল তার এই রেকর্ডিং চুক্তিটি জডি মেরি নামে এক আমেরিকান উঠতি গায়িকার সাথে বিনিময় করেন। বিপরীতে কাইল কি পান? জডি তাকে তার ফিনিক্সের বাড়িতে এক বছর ফ্রিতে থাকার অফার দেন; সাথে আসা-যাওয়ার বিমান ভাড়া। অন্যদিকে এই রেকর্ডিং চুক্তিটির বদৌলতে জডির গানের দ্বিতীয় অ্যালবাম ‘Pivot’ বের হয় যা তাকে যথেষ্ট খ্যাতি এনে দেয়। পরিচিতি এনে দেয় অ্যালিস কুপার, করবিন বার্নসেন, আদ্রিয়ান গোল্ডেনথাল, ক্রিস হিল আর শিয়া মার্শালদের কাছে।

ফিনিক্সের ডুপ্লেক্স বাড়ির বিভিন্ন অংশের কোলাজ ছবি; ছবিসূত্রঃ flickr.com

কাইল কী করবেন? তিনি তো থাকার জন্য বাংলো স্টাইলের একটা ডুপ্লেক্স বাড়ি পেয়ে গেলেন। ফিনিক্সের বাণিজ্যিক এলাকার কেন্দ্রে, ওক কাঠের মেঝে আর ফায়ারপ্লেস বসানো আরামদায়ক বেডরুম, নতুন রান্নাঘর, আলাদা ডাইনিং রুম আরো কত কি! এগুলোর জন্য তিনি কি থামিয়ে দেবেন তার ক্রমে ক্রমে বিখ্যাত হয়ে ওঠা এই অদল-বদলকে? নাকি এই বিলাসী সুযোগ-সুবিধাগুলোও তিনি অন্য কোনকিছুর সাথে বিনিময় করবেন? হুম, কাইল শেষেরটাই করলেন। যত বিলাসীই হোক না কেন, এই ডুপ্লেক্সের আভিজাত্য উপভোগ তো কেবল বছরখানেকের জন্য। তারপর তো কিছুই থাকবে না তার।

আর তাই কাইল তার এই ফিনিক্সের বিলাসিতা আমেরিকার বিশিষ্ট গায়ক, গীতিকার ও অভিনেতা অ্যালিস কুপারের সাথে এক বিকাল কাটানোর বিনিময়ে অদলবদল করেন। আর এটি তিনি বদল করেন লেসলি নামের এক মহিলার সাথে। এই লেসলি ফিনিক্সে অবস্থিত অ্যালিস কুপারের রেস্তোরাঁ অ্যালিস কুপার্স টাউনে কাজ করতেন। তিনি তার মালিককে সবকিছু খুলে বলেন। সব শুনে অ্যালিস রাজি হয়ে যান একটি বিকাল কাটানোর জন্য। তাহলে কী দাঁড়ালো? লেসলি ফিনিক্সের ডুপ্লেক্স বিলাসিতা কাইলের সাথে বিনিময় করেন কুপারের সাথে এক বিকাল কাটানোর বিনিময়ে।

লেসলির সাথে কাইল; হাতে কুপারের মুখোশ; ছবিসূত্রঃ Kyle MacDonald

মার্ক হেরমান ছিলেন অ্যালিস কুপারের বিশাল ভক্ত। তাকে বলা যায় সংগীতের এক ছোটোখাটো এনসাইক্লোপেডিয়া। অন্যদিকে কাইলের কাছে আছে কুপারের সাথে কাটানোর এক বিকালের টিকেট। তো, আর দেরি কেন দুইয়ে দুইয়ে চার মেলাতে! কিন্তু এমন কি আছে মার্কের কাছে যা দিয়ে কাইল এবারের বিনিময়টা সারতে পারেন? হেরমান কাইলকে আমেরিকান রক ব্যান্ড KISS এর লোগো সম্বলিত একটা মোটরচালিত স্বচ্ছ কাঁচের গোলক (যাকে ইংরেজিতে Snow glove বলে) অফার করেন এক বিশেষ বিকেলের বিনিময়ে।

রক ব্যান্ড KISS এর লোগো সম্বলিত Snow glove; ছবিসূত্রঃ Kyle MacDonald

বেশ মজার জিনিস এই গোলক। এটাকে ঝাঁকিয়ে রেখে দিলে মনে হয় যে, ভিতরে বরফ পড়ছে। যা-ই হোক, কাইল হেরমানের প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেলেন।

মার্ক হেরমানের সাথে অদলবদলে কাইল ম্যাকডোনাল্ড; ছবিসূত্রঃ Kyle MacDonald

এবার এক শখের সংগ্রাহক করবিন বার্নসেন কাইলের সাথে যোগাযোগ করলেন। তিনি কাইলের কাছে থাকা কাঁচের গোলকটি নিতে চান। বিনিময়ে তার পরিচালিত Donna On Demand (২০০৯) মুভিতে একটা চরিত্রের রোল প্রস্তাব করেন, সাথে থাকা আর বিমানভাড়া অন্তর্ভুক্ত। কাইল এমন প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেলেন। এক শখের সংগ্রাহককে তার শখ পূরণ করতে সাহায্য করলেন। আর অদল-বদলে পেলেন বার্নসেনের পরিচালনায় হওয়া Donna On Demand মুভির রোল।

শখের সংগ্রাহক করবিন বার্নসেনের সাথে কাইল ম্যাকডোনাল্ড; ছবিসূত্রঃ Kyle MacDonald

ঠিক একটা বছর পেরিয়ে গেলো কাইলের এই অদল-বদলে। অবশেষে ২০০৬ সালের ১২ জুলাই কাইলের কাছে এক অফিসিয়াল অফার আসলো। Donna On Demand মুভিটির সেই রোলের বদলে এগারোশ’ বর্গ ফুটের একটি দোতলা বাড়ি!

বহু আরাধ্য দোতলা বাড়ির সামনে কাইল; ঠিকানাঃ ৫০৩, প্রধান সড়ক, কিপলিং, সাসকাচুয়ান, কানাডা; ছবিসূত্রঃ Kyle MacDonald

যুক্তরাষ্ট্রের মন্টানা ও নর্থ ডাকোটার সীমান্তঘেঁষা এক প্রদেশ কানাডার সাসকাচুয়ান। কিপলিং এই সাসকাচুয়ানের দক্ষিণ-পূর্বের এক ছোট্ট শহর। আর এই শহরেই কাইল খুঁজে পেলেন তার স্বপ্নের বাড়ি। কিপলিঙের অধিবাসীদের নিয়ে সেখানকার তৎকালীন মেয়র কাইলকে কিছু প্রস্তাব করলেন।

১। কাইলকে ১৯২০ সালে নির্মাণাধীন এবং সম্প্রতি (তৎকালীন সময়ে আর কি) সংস্কার করা প্রধান সড়কের পাশে অবস্থিত সাদারঙা একটি দোতলা বাড়ি।

২। কাইলকে কিপলিং শহরের আজীবনের জন্য নাগরিকের সম্মান দেওয়া হবে; সাথে দেওয়া হবে শহরের একটি চাবি।

৩। কিপলিং শহরের চেম্বার অব কমার্স কাইলকে এই নতুন শহরে ব্যবসা করার জন্য ২০০ ডলার প্রদান করবে।

৪। কিপলিং শহরের বাসিন্দারা কাইলের ওয়ান রেড পেপারক্লিপ প্রজেক্টের প্রতি সম্মানার্থে একটি বিশাল লালরঙা পেপারক্লিপ তৈরি করবেন এবং তাদের বানানো সেই পেপারক্লিপ ২০১০ সালের ২৯ মে পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে বড় পেপারক্লিপ হিসেবে গিনেজ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে অন্তর্ভুক্ত ছিল। এটি ১৫ ফুট ২ ইঞ্চি লম্বা আর ভরের দিক থেকে ৩০৪৩ পাউন্ড।

কিপলিঙের বেল পার্কে অবস্থিত তৎকালীন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পেপারক্লিপের উপর বসে আছেন কাইল ম্যাকডোনাল্ড; ছবিসূত্রঃ Kyle MacDonald

৫। যেদিন এই বাড়ি বিনিময় হবে, সেই দিনটি এখন থেকে স্থানীয়ভাবে ওয়ান রেড পেপারক্লিপ দিবস হিসেবে পালিত হবে। শুধু তা-ই নয়, সেদিন স্থানীয় অধিবাসীরা সবাই ব্যাজের মতো একটা লাল রঙের পেপারক্লিপ শরীরে ধারণ করবেন।

৬। কাইলকে একদিনের জন্য কিপলিং শহরের মেয়র করা হবে।

বিস্ময়ে হতবাক হয়ে কাইল গেলেন কানাডার প্রেইরিবিধৌত সাসকাচুয়ানের ছোট্ট শহর কিপলিঙে। বিশাল সংবর্ধনার সাথে তার হাতে তুলে দেওয়া হলো সাদা রঙের দোতলা বাড়ির চাবি।

বেশ আড়ম্বরে কাইলকে বরণ করে নিলো কিপলিংবাসী; ছবিসূত্রঃ Kyle MacDonald

One Red Paperclip: How To Trade a Red Paperclip For a House বইয়ের প্রচ্ছদ; ছবিসূত্রঃ oneredpaperclip.blogspot.com

আসলে কোনোকিছুর পেছনে লেগে থাকলে প্রকৃতি ও প্রতিবেশ আপনার পাশে এসে দাঁড়াবে; যেমনটি দাঁড়িয়েছিল কাইলের পাশে শত শত অচেনা জন। ওহ, একটা কথা বলতে তো ভুলেই গিয়েছিলাম, যে মুভি রোলের বিনিময়ে আজ কাইল একটি বাড়ির মালিক, সেই মুভি রোলটি কিপলিংবাসী একটি অডিশনের মতো করে নোলান হাবার্ড নামের এক সৌভাগ্যবানকে প্রদান করেন। কাইল পরবর্তীতে তার এই ঘটনাবহুল বিনিময়যাত্রার উপর One Red Paperclip: How To Trade a Red Paperclip For a House নামে একটি বই লেখেন। সারা বিশ্বে প্রায় দশটি ভাষায় তার এই বই প্রকাশিত হয়। যদিও এই দশটি ভাষার ভিতর বাংলা নেই।

কাইল ঠিক এই মুহূর্তে কি করছেন তা হয়তো আমরা জানতে পারবো না; কিংবা হয়তো পারবো। কিন্তু আজ থেকে প্রায় ১২ বছর আগে কেবল কম্পিউটারের পাশে টেবিলে পড়ে থাকা একটা পেপারক্লিপ দিয়ে তিনি যে অদলবদলে নেমেছিলেন, সেটা সময়ের পরিক্রমায় বেশ বিখ্যাত হয়ে ওঠে। মোট চৌদ্দটি অদলবদলের প্রক্রিয়ার ভিতর দিয়ে যাওয়ার পর ২০০৬ সালের মধ্য জুলাইতে একটি দোতলা বাড়ির মালিক হন কাইল ম্যাকডোনাল্ড। বাড়ি নংঃ ৫০৩, প্রধান সড়ক, কিপলিং, সাসকাচুয়ান, কানাডা।

Related Articles