Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

পাভেল ডুরভ: রাশিয়ার মার্ক জাকারবার্গ

আজ থেকে এক যুগের কিছু সময় আগের কথা। যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করা এক বন্ধুর কাছে নতুন একটি বিষয় সম্পর্কে জানতে পারলেন রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গের এক তরুণ। নতুন বিষয়টি ছিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘ফেসবুক’। তখন ফেসবুক কেবল যাত্রা শুরু করেছে। কিন্তু অল্প কিছুদিনেই যুক্তরাষ্ট্রে দারুণ জনপ্রিয়তা অর্জন করে। নতুন এই ধারণাটি খুবই পছন্দ হয় সেই তরুণের। ঠিক করলেন রাশিয়ার জন্য এমন একটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তৈরি করবেন, যা ফেসবুককে টেক্কা দেবে!

তিনি শুধু ভাবনাতেই বসে থাকেননি। বড় ভাইয়ের সাথে এটি নিয়ে কাজও শুরু করে দিলেন। একসময় তৈরিও করে ফেললেন রাশিয়ানদের জন্য একটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। নাম দিলেন ‘ভিকন্টাক্টে’, যা ভিকে নামেই বেশি পরিচিত। ভিকে আসার অল্প দিনের মধ্যেই রাশিয়ানদের মাঝে এটি তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন করে। বর্তমানে এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৪৬০ মিলিয়নেরও বেশি। ফেসবুক, টুইটার বা ইন্সটাগ্রামের মতো বিশ্বব্যাপী পরিচিতি না থাকলেও ইউরোপে, বিশেষ করে রাশিয়ায় এটি দারুণ জনপ্রিয় একটি মাধ্যম।

সেদিনের সেই সফল রাশিয়ান তরুণের নাম পাভেল ডুরভ, যিনি রাশিয়ার মার্ক জাকারবার্গ নামে পরিচিত। তবে মার্ক জাকারবার্গের তুলনায় তার জীবন অনেক বৈচিত্র্যময়। তার নিজের হাতে গড়া ভিকন্টাক্টে থেকে তাকে বের করে দেয়া হয়। শুধু কোম্পানি থেকেই নয়, দেশ ছেড়ে পালাতেও বাধ্য হন তিনি!

পাভেল ডুরভ © Jude Edginton for Fortune

দেশত্যাগ করলেও উদ্যোম হারাননি। ভিকন্টাক্টের নিয়ন্ত্রণ হারানোর পর নির্মাণ করেন মেসেঞ্জার অ্যাপ ‘টেলিগ্রাম’। এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন ব্যবস্থা থাকায় এটি দিয়ে নিরাপদে তথ্য আদান প্রদান করা যায়। এতে ব্যবহারকারীদের গোপনীয়তা রক্ষা হওয়ায় এই অ্যাপটিও দারুণ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। সফল দুটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রতিষ্ঠাতার সম্পদ মূল্য ২.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ৩৪ বছর বয়সী এই উদ্যোক্তা বর্তমানে দুবাইয়ে অবস্থান করছেন।

তিনি নিজেকে একজন বৈশ্বিক নাগরিক মনে করেন। আজ আমরা জানব তার জীবনের এই পর্যায়ে আসা এবং এর মাঝে ঘটে যাওয়া অনেক বিতর্কিত ঘটনার আদ্যোপান্ত।

পভেল ডুরভ ১৯৮৪ সালের ১০ অক্টোবর রাশিয়ার লেনিনগ্রাদে জন্মগ্রহণ করেন। লেনিনগ্রাদের নামই পরবর্তীতে রাখা হয় সেন্ট পিটার্সবার্গ। রাশিয়ায় জন্ম নিলেও তার বেড়ে ওঠা ইতালিতে। ইতালির তুরিনে তার বাবা একজন স্বনামধন্য স্কলার ও লেখক হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেন। তার চার বছরের বড় ভাই নিকোলাই ডুরভ ছিলেন একজন কম্পিউটার জিনিয়াস। তিনি ছাত্রাবস্থায় আন্তর্জাতিক প্রোগ্রামিং অলিম্পিয়াডে দুবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ছিলেন। বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে পাভেল প্রায়ই তার রোল মডেল ও পথ প্রদর্শক হিসেবে বড় ভাই নিকোলাইয়ের অবদানের কথা বলেন। পাভেল ডুরভ নিজেও কোডিংয়ে দক্ষ হয়ে ওঠেন ছোটবেলা থেকেই।

ছোটবেলার পাভেল ডুরভ; Image Source: Instagram

ছোটবেলা থেকেই কর্তৃপক্ষের নিয়ম-কানুনের বেড়াজালের প্রতি বিরক্ত ছিলেন তিনি। স্কুলে পড়ার সময় তার কোডিং দক্ষতাকে স্কুলের কম্পিউটার নেটওয়ার্ক হ্যাক করার কাজে ব্যবহার করেন। তিনি কম্পিউটারের ওয়েলকাম স্ক্রিন পরিবর্তন করে সেখানে তার সবচেয়ে অপছন্দের শিক্ষকের ছবি দিয়ে রাখেন। ছবির পাশে লেখা ছিল “Must Die”। এই ঘটনার পর স্কুলের নেটওয়ার্কে প্রবেশ করার অনুমতি তুলে নেয়া হয়। কিন্তু পাভেল প্রতিবারই নতুন নতুন পাসওয়ার্ড বের করে ফেলতেন।

পাভেল তার বন্ধুদের কাছে বলতেন বড় হয়ে তিনি একজন ইন্টারনেট আইকন হবেন। বড় ভাই নিকোলাইয়ের কাছেই অনুপ্রেরণা পেতেন তিনি। ১৭ বছর বয়সে পাভেল তার পরিবারের সাথে রাশিয়ায় চলে আসেন।

রাশিয়ায় এসে পাভেল ডুরভ সেন্ট পিটার্সবার্গ স্টেট ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হন। সেখানে পড়ার সময় ফেসবুক সম্পর্কে জানতে পারেন। তখনই তিনি রাশিয়ানদের জন্য এমন একটি প্ল্যাটফর্ম সৃষ্টি করতে অনুপ্রাণিত হন। ২০০৬ সালে তিনি স্নাতক সম্পন্ন করার পর ভিকন্টাক্টে বা ভিকে’র যাত্রা শুরু করেন। নিকোলাই ডুরভ জার্মানি থেকে ফোনে তার ছোটভাইকে ভিকে সম্পর্কে বিভিন্ন পরামর্শ দিতেন।

শুরুতে এটি ছিল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের জন্য একটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। ধীরে ধীরে এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা সকল শ্রেণীর মানুষের কাছেই বিপুল হারে বাড়তে থাকে। ২০০৭ এর শুরুতে ব্যবহারকারীর সংখ্যা এক লাখ ছাড়িয়ে যায়। সেই বছরের জুলাইয়ে ব্যবহারকারীর সংখ্যা এক মিলিয়নে পৌঁছে যায়। ভিকের জনপ্রিয়তা দেখে নিকোলাই সেন্ট পিটার্সবার্গে চলে আসেন এবং চিফ টেকনিক্যাল অফিসার হিসেবে যোগ দেন কোম্পানিতে।

পাভেল ডুরভের ভিকন্টাক্টে প্রোফাইল; Image Source: VKontakte/Durov

দুই ভাইয়ের লক্ষ্য ছিল রাশিয়ায় দ্রুত ফেসবুকের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠা এবং ফেসবুকের চেয়েও নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হিসেবে ভিকের বিকাশ ঘটানো। তারা এতে সফলও হয়েছিলেন। অনেক ক্ষেত্রে ফেসবুকের চেয়েও এগিয়ে ছিল ভিকে। তখন মার্ক জাকারবার্গের সাথে তুলনা করা শুরু হয় পাভেল ডুরভকে। ২০১৩ সালে ভিকন্টাক্টের ২১০ মিলিয়ন নিবন্ধিত সদস্য ছিল এবং এই সংখ্যা বেড়েই চলছিল। কিন্তু সেই সময়টায় পাভেল ডুরভকে অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সম্মুখীন হতে হয়।

পাভেল ডুরভকে রাশিয়ার মার্ক জাকারবার্গ বলা হয় ©Marcio Jose Sanchez/AP; Sam Barker

এই শতকের শুরুর দশকে ইন্টারনেটে রাশিয়ান সরকারের কোনো বিধিনিষেধ ছিল না। ফলে ভিকন্টাক্টে যখন চালু হয় এটি পাইরেসির একটি মাধ্যমও হয়ে ওঠে। পাইরেটেড সিনেমা ও মিউজিক দিয়ে পূর্ণ হয়ে যায় ভিকে। সমালোচকরা অভিযোগ করেন ভিকে থেকে বিনামূল্যে এসব দেখার সুযোগ থাকায় মেধাস্বত্ব অধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে। ভিকের বিরুদ্ধে পর্নোগ্রাফি ছড়ানোর অভিযোগও আনা হয়।

রাশিয়ান সরকার শুরুতে ভিকে থেকে দূরত্ব বজায় রাখছিল। পাভেল ডুরভের সাথে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের তৎকালীন অভ্যন্তরীণ নীতি বিষয়ক প্রধানের দায়িত্বে থাকা ভ্লাদিস্লাভ সুরকভের প্রায়ই সাক্ষাৎ হতো। ধারণা করা হয়, তখন ভিকন্টাক্টেকে তাদের মতো চলার স্বাধীনতা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু ২০১১ সালে দৃশ্যপট পরিবর্তন হয়ে যায়।

২০১১ সালে ভ্লাদিমির পুতিন ঘোষণা দেন, তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে বহাল থাকবেন। সেই বছরের ডিসেম্বরে সংসদ নির্বাচনের জন্য পুতিনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়। তাদের অভিযোগ ছিল সংসদ নির্বাচন ছিল পাতানো। তখন বিক্ষোভকারীরা প্রতিবাদের মাধ্যম হিসেবে বেছে নেয় ভিকন্টাক্টেকে।

রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিষয়ক সংস্থা এফএসবির (FSB) সেন্ট পিটার্সবার্গ শাখা থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ভিকন্টাক্টেকে নির্দেশ দেয়া হয় বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। ভিকন্টাক্টেকে বলা হয় বিক্ষোভকারীদের দ্বারা পরিচালিত সাতটি গ্রুপ ডিলিট করে দিতে। কিন্তু পাভেল ডুরভ এর জবাবে দুঃসাহসী একটি কাজ করেছিলেন। তিনি তার টুইটার ও ভিকে প্রোফাইল থেকে হুডি পরিহিত জিভ বের করা এক কুকুরের ছবি দিয়ে বলেন, এটিই হচ্ছে এফএসবিকে তাঁর দেয়া আনুষ্ঠানিক জবাব। অর্থাৎ, তিনি সরকারের কথা মতো কাজ করবেন না।

আমি জানি না কেন আমি পেজগুলো ব্লক করে দেয়ার নির্দেশ প্রত্যাখ্যান করেছিলাম। আমার ভেতরে তখন এমন কিছু কাজ করছিল যা এটা (সরকারের নির্দেশ পালন) করতে বাধা দিয়েছিল।” সেই ছবি দেয়া সম্পর্কে এভাবেই বলেন তিনি।

রাশিয়ান সরকার তার এই কাজে অবশ্যই খুশি ছিল না। সেই রাতেই পাভেলের বাড়িতে সোয়াত সদস্যরা অস্ত্রসহ এসে হাজির হয়। তারা পাভেলকে দরজা খুলতে বলে। কিন্তু পাভেল তা করতে অস্বীকৃতি জানান। পরে তারা চলে যায়। তখন পাভেল তার ভাই নিকোলাইয়ের সাথে ফোনে কথা বলতে চান। কিন্তু তখন বুঝতে পারেন, সরকার তার ওপর নজরদারি করছে। ফলে ভাইয়ের সাথে তিনি যা কথা বলবেন, সরকারের কাছে তা গোপন থাকবে না। এসময় তিনি একটি যোগাযোগ মাধ্যমের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন, যেখানে নজরদারির সুযোগ থাকবে না। এটাই পরবর্তীতে তাকে টেলিগ্রাম অ্যাপ নির্মাণে অনুপ্রেরণা দেয়।

ভ্লাদিমির পুতিনের সমালোচক আলেক্সেই নাভালনি। তার সমর্থকরা পুতিনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের মাধ্যম হিসেবে ভিকন্টাক্টে ব্যবহার করে ©YURI KOZYREV / NOOR / REDUX

সরকারের সাথে তার বিরোধ ক্রমেই বেড়ে চলছিল। এফএসবি থেকে ভিকের কার্যক্রমে বিভিন্ন সময়ে বিঘ্ন ঘটানো হয়। পুতিনের বিরোধী দলীয় নেতা আলেক্সেই নাভালনির সমর্থকদের দ্বারা পরিচালিত কিছু ভিকে গ্রুপ এবং ইউক্রেনিয়ান এক্টিভিস্ট যারা কিয়েভে ক্রেমলিন বিরোধী আন্দোলনে জড়িত ছিল তাদের ভিকে একাউন্ট বন্ধ করে দেয়ার জন্য এফএসবির পক্ষ থেকে নির্দেশ আসে। কিন্তু পাভেল এবারও সে নির্দেশ গোনায় ধরেননি। সরকারের বিরুদ্ধে পাভেলের এই সাহসিকতা তাকে তুমুল জনপ্রিয়তা এনে দেয় রাশিয়ার জনগণের কাছে।

রাশিয়ার সরকার তখন ভিন্নপথ অবলম্বন করে। তার বিরুদ্ধে ক্রেমলিন থেকে অনেক মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হয়। ২০১৩ সালে তার বিরুদ্ধে এক পুলিশের পায়ের ওপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ আনা হয়। যদিও পাভেলের কোনো গাড়ি ছিল না, এমনকি তিনি গাড়ি চালানোও জানতেন না! এদিকে তার কোম্পানি ভিকের শেয়ারগুলো কিনে নিতে শুরু করে ক্রেমলিনের ঘনিষ্ট লোকজন।

তার কোম্পানির শেয়ারগুলো তখন কিনতে থাকে মেইল ডট আরইউ এবং ইউনাইটেড ক্যাপিটেল পার্টনার্স নামে দুটি কোম্পানি, যাদের সাথে পুতিনের সরাসরি সম্পর্ক ছিল। গাড়ি দুর্ঘটনার কিছুদিন পর ইউনাইটেড ক্যাপিটাল পার্টনার্সের পরিচালক ইলিয়া শার্বোভিচ ঘোষণা দেন, ভিকন্টাক্টের ৪৮ শতাংশ শেয়ার এখন তাদের দখলে। ইলিয়া ছিলেন পুতিনের ঘনিষ্ট ইগোর সেচিনের কাছের লোক।

পাভেল তখন কোম্পানিতে তার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললেন। ২০১৪ সালে পাভেল ডুরভ প্রধান নির্বাহীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান এবং কোম্পানির শেয়ার বিক্রি করে দেন ইভান তাভরিনের কাছে। ইভান তাভরিন ছিলেন রাশিয়ান ধনকুবের এবং মেইল ডট আরইউ এর মালিক অ্যালিশার উসমানভের কাছের লোক। বিলিয়ন ডলার মূল্যের কোম্পানি গড়ে তিনি এখান থেকে পেয়েছিলেন মাত্র ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার! পাভেল তখন বুঝতে পারেন, রাশিয়ায় কিছু করতে হলে তাকে সরকারের পুতুল হয়ে কাজ করতে হবে। তাই তিনি ভাইকে সাথে নিয়ে রাশিয়া ত্যাগ করেন।

ভিকের নিয়ন্ত্রণ হারাতে পারেন বুঝতে পেরে আগেই তিনি গোপনে যুক্তরাষ্ট্রে আরেকটি কোম্পানি নিয়ে কাজ করছিলেন। সেটিই ছিল মেসেঞ্জার অ্যাপ ‘টেলিগ্রাম’। ২০১৩ সালের আগস্টে প্রকাশ্যে এর কথা বলেন তিনি। এর কোডিংয়ের কাজ করেন বড় ভাই নিকোলাই। এতে থাকে এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন সুবিধা, যার কারণে তৃতীয় কোনো পক্ষের মেসেজ জানা সম্ভব হয় না। ফলে অত্যন্ত নিরাপদভাবে ব্যবহারকারীরা যেকোনো বার্তা, ছবি, ভিডিও, ফাইল আদান-প্রদান করতে পারে। তাছাড়া এতে গোপন আরেকটি চ্যাটের অপশন থাকে, যাতে একটি নির্দিষ্ট সময় পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে বার্তাটি বিলীন হয়ে যায়।

ভিকন্টাক্টের পর টেলিগ্রাম অ্যাপ নিয়ে আসেন পাভেল ডুরভ; Image Source: Telegram

ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা পাওয়ায় অল্প দিনের মধ্যেই টেলিগ্রাম অ্যাপটিও ব্যবহারকারীদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। দ্রুতই এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। ২০১৪ সালে ব্যবহারকারী ছিল ৩৫ মিলিয়ন, ২০১৫ সালে হয় ৬০ মিলিয়ন, ২০১৬ তে ১০০ মিলিয়ন, ২০১৭ তে ১৮০ মিলিয়ন এবং ২০১৮ তে ২২০ মিলিয়ন ছাড়িয়ে যায়। গত ১৪ মার্চ বিশ্বব্যাপী ফেসবুক ও ইন্সটাগ্রামের সার্ভিসে বিঘ্ন ঘটায় ২৪ ঘন্টার মধ্যে টেলিগ্রামে ৩ মিলিয়ন নতুন ব্যবহারকারী নিবন্ধিত হয়। এটি বর্তমানে হোয়াটসঅ্যাপ ও মেসেঞ্জারের যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছে।

পাভেল ডুরভ টেলিগ্রামের বিজ্ঞাপনের জন্য কোনো খরচ করেন না। তিনি নিজের জমানো অর্থ থেকে প্রতি মাসে ১ মিলিয়ন ডলার খরচ করতেন এর পেছনে। সিলিকন ভ্যালির অনেক বড় বড় বিনিয়োগকারী ফার্মের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছেন একে শুধুমাত্র নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য। তবে ২০১৭ সালে তিনি নিকোলাইয়ের সাথে একটি ব্লকচেইন সিস্টেম তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেন, যার জন্য বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ফান্ড যোগাড় করা শুরু করেছেন।

ডুরভ ভ্রাতৃদ্বয়ের নতুন এই ক্রিপ্টোকারেন্সির নাম ‘টেলিগ্রাম ওপেন নেটওয়ার্ক’ বা টন, যা টেলিগ্রাম অ্যাপের ওপর ভিত্তি করে বানানো। এই ক্রিপ্টোকারেন্সির জন্য তারা টেলিগ্রাম অ্যাপে পেমেন্ট সিস্টেমও যোগ করেছেন। ২০১৮ সালে তারা এর জন্য ১.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ফান্ড যোগাড় করেন। ২০১৯ এর ৩১ অক্টোবরের মধ্যে টন চালু করতে না পারলে বিনিয়োগকারীদের কাছে তাদের অর্থ ফিরিয়ে দিতে বাধ্য থাকবেন তারা।

টেলিগ্রাম অ্যাপ জনপ্রিয় হলেও এটি নিয়েও কম বিতর্ক হয়নি। এবার শুধু রাশিয়া নয়, অন্যান্য দেশগুলো থেকেও বিপুল সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছেন পাভেল ডুরভ। টেলিগ্রামের বিপক্ষে অভিযোগ এটি একটি বিপজ্জনক মাধ্যম। কারণ, এর মাধ্যমে সন্ত্রাসী, যৌন পাচারকারী, ছেলেধরা ও অন্যান্য অপরাধীরা নিরাপদে যোগাযোগ করতে পারে। তবে পাভেল এসব সমালোচনাকে গায়ে মাখছেন না। তার মতে, প্রযুক্তিকে ভালো-খারাপ দু’দিকেই ব্যবহার করা যায়। তাই বলে প্রযুক্তির উন্নতি থেমে থাকবে না।

টেলিগ্রামের সমালোচনাকে পাত্তা দিচ্ছেন না পাভেল ডুরভ ©Nadine Rupp/Getty Images

অন্যান্য যোগাযোগ মাধ্যমের মতো টেলিগ্রামকেও চীনে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়া সাময়িকভাবে আরো কিছু দেশে এর ওপর নিষেধাজ্ঞা আনয়ন করা হয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছে পাকিস্তান, ইরান এবং ইন্দোনেশিয়া। রাশিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে ২০১৮ সালের এপ্রিলে টেলিগ্রাম অ্যাপের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। যদিও রাশিয়ায় এই নিষেধাজ্ঞা খুব বেশি কার্যকর হচ্ছে না। ভিপিএন দিয়ে অনেক ব্যবহারকারীই এই অ্যাপ ব্যবহার করছে। মজার ব্যাপার, রাশিয়ার সরকারি কর্মকর্তারাও অনেকে এই অ্যাপ ব্যবহার করেন নিরাপত্তার জন্য।

টেলিগ্রামের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ আনা হয় ২০১৫ সালে প্যারিসে সন্ত্রাসী হামলার সময়। সেই বছর প্যারিসে সংঘবদ্ধ হামলাকারীরা টেলিগ্রামের মাধ্যমে নিজেদের সাথে যোগাযোগ করছিল। তাছাড়া টেলিগ্রামের পাবলিক চ্যানেল সার্ভিসের মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা বিপুল সংখ্যক মানুষের কাছে বার্তা প্রদান করতে পারত। এর মাধ্যমে ইসলামিক স্টেট বা আইএস নামক সন্ত্রাসী সংগঠন প্রোপাগান্ডামূলক কর্মকান্ড পরিচালনা করত বলে অভিযোগ আনা হয়।

টেলিগ্রাম থেকে তখন আইএস পরিচালিত ৭৮টি চ্যানেল বন্ধ করে দেয়া হয়। তবে পাভেল এই হামলার জন্য ফ্রান্স সরকারকেই দায়ী করেন। অ্যাপলের সাথে এফবিআইয়ের মামলাতেও তিনি প্রকাশ্যে অ্যাপলকে সমর্থন জানান। যদিও অ্যাপল টেলিগ্রামকে সমর্থন করে না, বরং তাদের অ্যাপ স্টোর থেকে টেলিগ্রামকে সরিয়ে দেয়া হয়। ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে-ও টেলিগ্রামের সমালোচক ছিলেন। এডওয়ার্ড স্নোডেনও টেলিগ্রামের সমালোচনা করে টুইট করেন।

তবে পাভেল ডুরভ এসব সমালোচনাকে পাত্তা দিচ্ছেন না। তিনি সন্ত্রাসী হামলার জন্য ভীত হওয়ার চেয়ে ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকার রক্ষা করাকেই বেশি গুরুত্ব দেন। ব্যক্তিগত গোপনীয়তা বজায় রাখাকে মানবাধিকার বলে মনে করেন তিনি।

পাভেল ডুরভ উদ্ভট কাজকর্ম করে শিরোনামে এসেছেন অনেকবার। ২০১২ সালে সেন্ট পিটার্সবার্গের অফিসে কয়েকজন সহকর্মীকে সাথে নিয়ে ৫,০০০ রুবল নোট দিয়ে প্লেন বানিয়ে জানালা দিয়ে রাস্তায় ছুঁড়ে মারেন। তিনি ম্যাট্রিক্স সিনেমার নিও চরিত্রের মতো কালো পোশাক পরেন সবসময়। টুইটার ও ইন্সটাগ্রামে তার অনেক ফলোয়ার থাকলেও তিনি কাউকে ফলো করেন না। হোয়াটসঅ্যাপকে নিয়ে প্রকাশ্যে কড়া সমালোচনা করেছেন।

কালো পোশাকেই তাকে সবসময় দেখা যায়; Image Source: Instagram

রাশিয়া থেকে চলে আসার পর তিনি কয়েক মাস পর পর বিভিন্ন দেশে অবস্থান করতেন। চারজন সহকর্মীকে সাথে নিয়ে বিশ্বজুড়ে ঘুরে বেড়াতেন। এ সময় তিনি এয়ারবিএনবি ব্যবহার করতেন। বর্তমানে দুবাইয়ে থিতু হয়েছেন। টেলিগ্রাম পরিচালনা করেনও সেখান থেকেই।

পাভেল ডুরভ দুটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সফল প্রতিষ্ঠাতা। মার্ক জাকারবার্গের সাথে তার তুলনা দেয়া হলেও জাকারবার্গ যেখানে ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা প্রদানে ব্যর্থ হচ্ছেন, পাভেল সেখানে অনেকটাই সফল। আগ্রহোদ্দীপক ব্যাপার হচ্ছে, দুজনই বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের কাছে বিতর্কিত।

This is a Bangla article written about Pavel Durov. He is the creator of Russian social media VKontakte and messaging app Telegram. He is also known as Mark Zuckerberg of Russia.

Feature Image: Ken Yeung/VentureBeat

References: 

1. Business Insider

2. The Moscow Times

3. YouTube

4. Arabian Business

Related Articles