পিটার থিয়েল: সিলিকন ভ্যালির প্রভাবশালী এক বিলিয়নিয়ার | পর্ব ১

১. 

১৯৮৮ সালের বসন্তের কোনো একসময় স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবা দলের কয়েকজন সদস্য ক্যালিফোর্নিয়ার মন্টেরিতে এক টুর্নামেন্ট খেলতে যাচ্ছিলেন। তারা যাচ্ছিলেন একটা পুরনো ভক্সভেগেন র‍্যাবিট দিয়ে। সান্টা ক্রুজ পর্বতমালা পার হওয়ার জন্য তারা ক্যালিফোর্নিয়ার চার লেনের মহাসড়ক রুট ১৭ দিয়ে যাচ্ছিলেন। রুট ১৭-কে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বিপজ্জনক রাস্তাগুলোর একটি বলা হয়। কারণ সেখানকার বাঁক, বাজে আবহাওয়া, আর বন্য প্রাণীর আনাগোনার কারণে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেশি। দাবা দলটির তেমন কোনো তাড়া ছিল না। কিন্তু ২০ বছর বয়সী চালক র‍্যাবিটটাকে খুব দ্রুত টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন। সামনের গাড়িগুলোকে অতিক্রম করে যাওয়ার সময় সেগুলোর সাথে প্রায় লাগিয়ে দিচ্ছিলেন। ভ্রমণের বেশিরভাগ সময় তার পা এক্সেলেটরে পুরোপুরি চাপ দেওয়া ছিল।

চালকের আসনে ছিলেন পিটার থিয়েল। আড়াই বছর আগে স্ট্যানফোর্ডে আসা এই চিকন, রসকষহীন যুবক শুরু থেকেই তার সহপাঠীদের কাছে ‘এলিয়েন’ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছিলেন। তিনি মদ্যপান করতেন না, প্রেম করতেন না, রসিকতা করতেন না। তার মাঝে একইসাথে অতৃপ্ত উচ্চাকাঙ্ক্ষা ছিল, এবং তিনি খুব গভীরভাবে মনে করতেন পুরো পৃথিবীই তার বিপক্ষে। তিনি একইসাথে ছিলেন মেধাবী ও ভয়ংকর। তার সহপাঠী মেগান ম্যাক্সওয়েল তার কথা স্মরণ করে বলেন, “এক অদ্ভুত ছেলে।

থিয়েল একটু পর রিয়ারভিউ মিররের দিকে তাকালেন, যখন প্রত্যাশিতভাবেই একটা পুলিশের গাড়ি সাইরেন বাজাতে বাজাতে আসলো। থিয়েল গাড়িটি রাস্তার কিনারায় নিয়ে থামালেন। তারপর জানালার কাচ নামিয়ে পুলিশের সাথে কথা বললেন। পুলিশ তাকে জিজ্ঞেস করল, তিনি কতটা দ্রুত গাড়ি চালাচ্ছিলেন সেটা নিয়ে তার কোনো ধারণা ছিল কিনা। তার সাথে থাকা অন্য তরুণরা যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন গাড়ি থামানোয়। কিন্তু একইসাথে এর পরিণতি কী হয় তা নিয়েও অস্বস্তির সাথে একে অন্যের দিকে তাকাচ্ছিলেন।

ক্যালিফোর্নিয়ার রুট ১৭-কে বিপজ্জনক মহাসড়ক মনে করা হয়; Image Source: Ken Lund/flickr

থিয়েল ওই পুলিশকে তার অপ্রতিরোধ্য কণ্ঠে বললেন,

আমি নিশ্চিত নই গাড়ির গতিসীমার আসলে কোনো মানে আছে কিনা। এটা সম্ভবত সংবিধানবিরুদ্ধ, এবং এটা অবশ্যই স্বাধীনতার ওপর একটা হস্তক্ষেপ।

অবিশ্বাস্য হলেও সত্য- ওই পুলিশ তার এই বক্তব্য মেনে নেয়। তিনি থিয়েলকে বলেন, তিনি যেন আরেকটু ধীরে গাড়ি চালান। থিয়েল যখন ওই পুলিশের দৃষ্টিসীমার বাইরে চলে আসলেন, আরো অবিশ্বাস্যভাবে আবার গ্যাস প্যাডেলে চাপ দিয়ে আগের গতিতে গাড়ি চালানো শুরু করেন। তার সাথে থাকা যাত্রীদের মনে হচ্ছিল, তিনি যেন শুধু ক্যালিফোর্নিয়ার আইনই নয়, পদার্থবিজ্ঞানের সূত্রেরও তোয়াক্কা করেন না। তার এক সতীর্থ, যিনি বর্তমানে পঞ্চাশোর্ধ্ব, ওই ঘটনা নিয়ে বলেন,

ওই সফরে গিয়ে আমরা কী খেলেছিলাম, তার কিছুই মনে করতে পারি না। কিন্তু ওই গাড়ি ভ্রমণের ব্যাপারটা আমি কখনো ভুলব না।

থিয়েলের ক্যারিয়ার সম্পর্কে যারা খোঁজখবর রেখেছেন, কিংবা তার সান্নিধ্যে এসেছেন, সবাই-ই তার বিভিন্ন ক্ষেত্রে সেই রুট ১৭ এর ঘটনার সাথে মিল পাবেন। তার মাঝে আছে জনপ্রিয় মতবাদগুলো বিরোধিতা করার মনোভাব, আত্মবিশ্বাস, আর অসম্ভব বিষয়ের ক্ষেত্রে নিজের অনুকূলে ফলাফল নিয়ে আসার ক্ষমতা। ব্যক্তি থিয়েল ও তিনি যেসব কোম্পানি গড়ে উঠতে সাহায্য করছেন, উভয় জায়গাতেই এসবের নিদর্শন দেখা যায়।

সেদিনের সেই হাড়-জিরজিরে দাবা খেলোয়াড় আজ একজন বিলিয়নিয়ার, পেপাল ও প্যালান্টিরের সহ-প্রতিষ্ঠাতা, এবং তর্কসাপেক্ষে তার প্রজন্মের সেরা বিনিয়োগকারী। একইসাথে ২০১৬ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রার্থিতায় আর্থিক সাহায্য দেওয়ার মতো ডানপন্থী উদ্যোগগুলো পৃষ্ঠপোষকতাও করে থাকেন। থিয়েল সম্ভবত বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ইন্ডাস্ট্রির সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তি। সিলিকন ভ্যালির অন্যান্য ব্যক্তি, যেমন- জেফ বেজোস, এলন মাস্ক, এমনকি যারা নিয়মিত মহাকাশে রকেট উৎক্ষেপণ করেন না, তারাও আমজনতার কাছে ভালোই পরিচিত। কিন্তু সিলিকন ভ্যালির প্রকৃত প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব পিটার থিয়েল। প্রযুক্তিখাতের উচ্চাকাঙ্ক্ষী তরুণ উদ্যোক্তারা ও মিলেনিয়াল মুগলরা এই এক ব্যক্তিকে চাটুকারিতা ও অনুকরণ করে থাকে। তিনি যেন এক কাল্ট নেতা।

পিটার থিয়েল; Image Source: AP

তিনি ও তার কর্মীরা পেপাল নিয়ে দ্রুত বর্ধনশীল কৌশলে কাজ করেন। তার এই কৌশল এয়ারবিএনবি থেকে শুরু করে উইওয়ার্ক পর্যন্ত পুরো একটা প্রজন্মের স্টার্টআপ গড়ে তোলার কৌশলে পরিণত হয়েছে। তার সবচেয়ে কিংবদন্তীতুল্য বাজি ছিল হার্ভার্ডের দ্বিতীয় বর্ষে পড়া এক অসামাজিক ছাত্রকে দশ শতাংশ মালিকানার বিনিময়ে দ্য ফেসবুক ডট কমের জন্য পাঁচ লক্ষ ডলার ঋণ দেওয়া। তিনি উপলব্ধি করেন- এখানে তার আর্থিক ব্যাপারটা গৌণ, বরং তিনি চুক্তিটি যে ঘরানায় করেছেন, সেটাই একসময় বিরাট ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে। থিয়েল নিশ্চিত করেন, মার্ক জাকারবার্গই থাকবেন কোম্পানিটির একচ্ছত্র নেতা। ফেসবুকের বোর্ড পরিচালকরাও তাকে পদচ্যুত করতে পারবেন না। থিয়েলের এমন কৌশল তার বিনিয়োগ করা অন্যান্য কোম্পানিতেও দেখা গেছে, এগুলোর মধ্যে স্ট্রাইপ আর স্পেসএক্সও আছে। বর্তমানে পুরো ইন্ডাস্ট্রিতে একে ব্যতিক্রমের চেয়ে স্বাভাবিক চর্চা হিসেবেই দেখা হয়।

থিয়েল শুধু একটা নির্দিষ্ট ঘরানায় কাজ করে অন্যদের দেখে অনুসরণ করার জন্যই বসে থাকেননি। তিনি তার পদ্ধতিগুলো সম্পর্কে স্ট্যানফোর্ডে উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। তিনি তার সাবেক কর্মীদের গড়ে তোলা কোম্পানিগুলো থেকে শেখানোর চেষ্টা করেন, যাদের বলা হয় ‘পেপাল মাফিয়া’। তিনি পরবর্তীতে তার চিন্তাধারাগুলো লিপিবদ্ধ করেন তার জিরো টু ওয়ান  বইয়ে। বইটি বেস্ট সেলার হয়, থিয়েলের পর্যায়ে ধনী হওয়ার আশাবাদ দেখানো ও তার নিজস্ব আদর্শের জন্য। বইয়ে অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি যুক্তি দেখানো হয়, উদ্যোক্তারা হচ্ছেন ঈশ্বরতুল্য, গণতন্ত্রের চেয়ে রাজতন্ত্র বেশি কার্যকর, এবং ব্যবস্থাপনা পরামর্শের চেয়ে কোনো ব্যক্তিকে কাল্ট ফিগারে পরিণত করা ভালো সাংগঠনিক মডেল। এতে নিয়ম ভাঙাকে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। থিয়েল বড়াই করে বলেন, পেপালের ছয়জন প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে চারজন হাই স্কুলে পড়ার সময় বোমা বানিয়েছিলেন!

পিটার থিয়েলের বই জিরো টু ওয়ান; Image Source: Rick Kettner 

সিলিকন ভ্যালিতে আরো অনেক আইডিয়া প্রচলিত ছিল। কিন্তু সেগুলো আরো ভিন্ন ছিল। কয়েক দশক ধরে সিলিকন ভ্যালিতে স্টিভ জবসের মিথলজিই প্রভাবশালী অবস্থানে ছিল। এই সিইও যুক্তি দেন, প্রযুক্তি হতে পারে সৃজনশীল অভিব্যক্তি প্রকাশের মাধ্যম। তিনি একটা প্রজন্মের উদ্যোক্তাদের বোঝাতে সক্ষম হন যে- তাদের উচিত ক্রেতাদের জীবনযাত্রা উন্নয়নের জন্য পণ্য আবিষ্কার করা।

থিয়েল ষাটের দশকের কাউন্টার কালচারকে অবজ্ঞার দৃষ্টিতে দেখেন। তার মতে, একটা কোম্পানি গড়ে তোলার উদ্দেশ্য হচ্ছে আপনার নিজের নিয়তিকে নিয়ন্ত্রণ করা। থিয়েল তার বইতে লিখেছেন, “একটি স্টার্টআপ গড়ে তোলার মাধ্যমে আপনি একটি নির্দিষ্ট বিষয় আয়ত্তে আনার সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে পারেন।” অর্থনৈতিক মন্দার সময়ে আসা নতুন প্রজন্মের উদ্যোক্তারা তার আদর্শকে গ্রহণ করে নিয়েছেন। তিনি তাদের নিয়ম ভাঙার প্রতি উৎসাহ দেন, এবং সমাজে প্রভাব রাখার চেয়ে আর্থিক লাভের দিকে গুরুত্ব দিতে উপদেশ দেন। তিনি লিখেছেন,

একটি ব্যবসা প্রতিদিনের তীব্র প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকতে পারে কেবল একচেটিয়া মুনাফার মাধ্যমে।           

সম্ভবত, এক্ষেত্রে তার সেরা ছাত্র মার্ক জাকারবার্গ। তিনি তার ইন্ডাস্ট্রিতে একটি মনোপলি গড়ে তুলেছেন, এবং এর মাধ্যমে প্রতিদ্বন্দ্বীদের সরিয়ে দিয়েছেন। তিনি বিজ্ঞাপনের জন্য ফিয়ের পরিমাণও বাড়িয়ে দিয়েছেন। একইসাথে তার এই শিকারী মনোভাব সম্পর্কে বিশ্বকে জানান দিচ্ছেন যে- এটা সমাজের উপকারের জন্যই করছেন। যদিও বর্তমানে চীনা কোম্পানি টিকটকের সাথে পেরে উঠছেন না।

থিয়েলের উৎসাহে টেক কোম্পানিগুলো দ্রুত এগিয়ে যাওয়া ও প্রতিবন্ধকতাগুলো ভেঙে ফেলার নীতিতে কাজ করা শুরু করে। ফেসবুক তো তাদের মটোই দিয়ে রেখেছে, “মুভ ফাস্ট অ্যান্ড ব্রেক থিংস।” এর নির্বাহীরা মনে করেন- আগে অনুমতি নেওয়ার চেয়ে দোষ করে ক্ষমা চেয়ে নেওয়াই ভালো। তিনি যেসব কোম্পানিতে বিনিয়োগকারী নন, সেগুলোতেও থিয়েলবাদ ছড়িয়ে পড়ে। ই-সিগারেট কোম্পানি জুক বাচ্চাদের লক্ষ্য করে প্রচার করে; রবিনহুড অনভিজ্ঞ বিনিয়োগকারীদের প্রলুব্ধ করে অনিশ্চিত বিনিয়োগকারী পণ্যে বিনিয়োগ করার জন্য; এবং উবার তার চালকদের ন্যূনতম পারিশ্রমিকের চেয়েও কম অর্থ দেয়। একইসাথে আইনও ভঙ্গ করে আনন্দের সাথে।

ফেসবুকের শুরুর দিকের এক উপদেষ্টা রজার ম্যাকনেমি পরবর্তীতে এর বিরুদ্ধে চলে যান। তিনি সম্প্রতি টেক কোম্পানিগুলোর কর্মকাণ্ডে থিয়েলের প্রভাব দেখতে পান। তিনি বলেন,

পেপাল মাফিয়ার দর্শন পুরো একটা প্রজন্মের টেক কোম্পানিগুলোর প্রতিষ্ঠার নীতিতে পরিণত হয়েছে।   

২.

পিটার থিয়েল স্কুলে জনপ্রিয় কেউ ছিলেন না। তার হাই স্কুল ছিল সান ফ্রান্সিসকোর এক মধ্যবিত্ত শহর ফস্টার সিটিতে। তার সহপাঠীরা তার মেধা নিয়ে মুগ্ধ ছিলেন। কিন্তু তিনি ছিলেন একইসাথে দুর্বোধ্য ও উদ্ধত। এসব বিষয় তাকে কটুক্তির লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছিল। তাকে নিয়মিত পীড়া দেওয়া এক সহপাঠী বলেন,

পেছন ফিরে তাকালে স্পষ্টভাবেই বলা যায়, আমরা ওকে বুলি করতাম। আমি সবসময়ই ভেবেছি, সে হয়তো খুন করার জন্য বিভিন্ন ব্যক্তির একটা তালিকা বানিয়ে রেখেছে, আর আমি ওই তালিকায় আছি।

থিয়েল আসলে কখনোই গালাগালি করতেন না। তবে স্ট্যানফোর্ডে প্রথম বর্ষে থাকার সময় তার এক রুমমেটের সাথে তর্ক করার সময় গালি দিয়েছিলেন। ওই রুমমেট এটা স্মরণীয় করে রাখার জন্য একটা কাগজ প্রিন্ট করে রুমের ছাদে লাগিয়ে রাখেন। এতে তারিখ দেওয়া ছিল ‘১৯৮৬ সালের জানুয়ারি’। সেখানে লেখা ছিল, “এই স্থানের নিচে দাঁড়িয়ে থিয়েল প্রথমবারের মতো ফ* শব্দটা উচ্চারণ করে।” ওই সেমিস্টারের বাকি সময়টায় কাগজটা সেখানেই লাগানো থাকে। হলে থাকা অন্যরা এটা নিয়ে হাসাহাসি করত, শুধুমাত্র থিয়েল ছাড়া। তিনি এটা খেয়াল করেননি, এবং তাকে এটা নিয়ে কেউ কিছু বলেওনি। মে মাসে যখন তিনি ওই রুম ছেড়ে চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তখন কেউ একজন তাকে ওই কাগজটা দেখিয়ে দেয়। তিনি কোনো কথা না বলে তার ডেস্কটা নিয়ে সেটার ওপর দাঁড়িয়ে কাগজটা খুলে ছিড়ে ফেলেন।

স্ট্যানফোর্ডে পড়ার সময় পিটার থিয়েলের একটি ছবি; Image Source: Max Chafkin

তাকে রাজনৈতিক দর্শনের দিক থেকে বিদ্রুপ করা হতো না। অন্তত শুরুর দিকে এমন কিছু ছিল না। তিনি বেড়ে ওঠেন ইভানজেলিক্যাল জার্মান অভিবাসী পরিবারে। তিনি নিজেকে আমেরিকান রক্ষণশীল বুদ্ধিজীবী উইলিয়াম এফ বাকলির মতো স্থানে দেখার উচ্চাকাঙ্ক্ষা রাখতেন। স্ট্যানফোর্ডে ডানপন্থী হওয়া অস্বাভাবিক কিছু ছিল না। সেখানে রক্ষণশীল সংস্থা হুভার ইন্সটিটিউশনও কাজ করছে। কিন্তু থিয়েল স্ট্যানফোর্ডকে মনে করতেন বামপন্থীদের বিচরণভূমি। তার এক সহপাঠী বলেন,

তার সাথে যে-ই খারাপ ব্যবহার করত, তাকেই তিনি উদারপন্থী মনে করতেন। স্ট্যানফোর্ডে মানুষজন তার সাথে যেভাবে ব্যবহার করেছিল, সেটা তার মাঝে অনেক বড় প্রভাব ফেলেছিল। তার মাঝে এখনো সেটা আছে।

থিয়েল তখন নতুন পরিচয়ে নিজেকে গড়ে তোলেন। তিনি একজন ডানপন্থী উদ্যোক্তায় পরিণত হন। তিনি কৌতুক করে ভুয়া দাতব্য সংস্থা ‘লিবারেলস ফর পিস’ গড়ে তোলেন। সেখানে তিনি কিছু অস্পষ্ট এজেন্ডা দিয়ে অর্থ তুলতেন, আর সেগুলো নিজে নিয়ে নিতেন। তিনি সহপাঠীদের দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদ প্রসঙ্গে বলেন, আমেরিকান ক্যাম্পাসগুলোতে এটা নিয়ে অতিরিক্ত মাতামাতি করা হয়েছে। তবে থিয়েলের মুখপাত্র জানিয়েছেন, থিয়েলকে কেউ বর্ণবাদ প্রসঙ্গে তার দৃষ্টিভঙ্গি জিজ্ঞেস করেছিল কিনা তিনি মনে করতে পারেন না এবং তিনি সেটা কখনোই সমর্থন করেননি।

১৯৮৭ সালে থিয়েল তার ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে স্ট্যানফোর্ড রিভিউ  নামে এক ডানপন্থী পত্রিকা বের করেন। এটা ছিল তার উদ্যোক্তা জীবনের প্রথম ধাপ। এখান থেকেই তার এক নেটওয়ার্ক গড়ে ওঠে, যেটা পরবর্তীতে আরো বড় হতে থাকে, এবং সিলিকন ভ্যালিতে প্রভাব বিস্তার করে। রিভিউয়ের মাধ্যমে থিয়েলের  প্রাথমিক উদ্ভাবনী কার্যক্রম ছিল স্ট্যানফোর্ডের রক্ষণশীল স্নাতকদের সাথে মূলধারার জাতীয় রাজনীতির সাথে সংযোগ করে দেওয়া। এতে ছাত্র সংসদকে ঐচ্ছিকভাবে ২৯ ডলার দেওয়ার বিষয়টি হয়ে দাঁড়ায় ক্ষুদ্র জগতের কর ও ব্যয়ের উদারনীতি। জোরা নিল হারস্টনের মতো অশ্বেতাঙ্গ লেখককে স্ট্যানফোর্ডের পশ্চিমা সংস্কৃতি কোর্সের জন্য নিয়ে আসা হয়ে যায় সভ্যতার জন্য হুমকিস্বরূপ। তহবিল সংগ্রহের জন্য বয়স্ক অ্যালামনাইদের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে সতর্ক করে বলা হয়- এক অধ্যাপক আফ্রিকান-আমেরিকানরা কীভাবে চুল রাখে, তা নিয়ে শিক্ষা দিচ্ছেন। এতে বিপুল পরিমাণ তহবিল চলে আসে। এ ধরনের কিছু কার্যক্রম রোনাল্ড রিগ্যানের শিক্ষামন্ত্রীর নজর কাড়তে সাহায্য করে। তিনি রিভিউ-এর একটা অনুষ্ঠানে ভাষণ দিতে আসেন এবং সেটা জাতীয় খবরের চ্যানেল পিবিএসের ম্যাকনিল/লেহরার নিউজআওয়ার -এ প্রচারিত হয়।  

স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ছবি; Image Source: Stanford News – Stanford University

 

থিয়েলের স্ট্যানফোর্ড পরবর্তী সময়টা প্রস্ফুটিত হয়নি। তিনি সেখান থেকে আইনের ওপর ডিগ্রি নেন। এক স্বনামধন্য ফার্মে কাজ করে আশা করছিলেন সুপ্রিম কোর্টে সুযোগ পাবেন, কিন্তু সেটা পাননি। ম্যানহাটনের ক্রেডিট সুইসে ট্রেডার হিসাবে কাজ করেও সন্তুষ্ট ছিলেন না। তিনি তখন সিদ্ধান্ত নিলেন বাড়ি ফিরে আসবেন। আসবেন এমন এক জায়গায় যেখানে উচ্চাভিলাষী তরুণরা তাদের প্রতিভার ওপর আস্থা রেখে ধনী হওয়ার জন্য নিরলসভাবে কাজ করছে- সেটা হচ্ছে সিলিকন ভ্যালি। ওই সময়ে তার ঘনিষ্ঠ এক বন্ধু বলেন,

সে নিউ ইয়র্কের অভিজ্ঞতা নিয়ে সন্তুষ্ট ছিল না। সে তার অবস্থান দখল করে নেওয়ার জন্য তৈরি ছিল।

This is a Bengali article written about an influencial Silicon Valley billionaire Peter Thiel. The article is translated from an excerpt of the book "The Contrarian".

Reference: 

1. Peter Thiel’s Origin Story 

Featured Image: John Lamparski/Getty Images

Related Articles

Exit mobile version