ইতিহাসের অন্যতম সেরা স্নায়ুবিজ্ঞানী ওয়াইল্ডার গ্রেভস পেনফিল্ড ১৮৯১ সালের ২৬ জানুয়ারি ওয়াশিংটনের স্পোকেনে জন্মগ্রহণ করেন। তার ডাক্তার বাবা সেমুয়েল পেনফিল্ড এবং মা জেন, উভয়েই ছিলেন ধর্মপ্রাণ খ্রিস্টান। শিশু পেনফিল্ডকে প্রার্থনার জন্য যখন গির্জায় নিয়ে যাওয়া হতো, তখন ফাদার প্রায়ই সেমুয়েল আর জেনকে পরামর্শ দিতেন পেনফিল্ডকে যেন ধর্মযাজক হিসেবে গড়ে তোলেন তারা। ভাগ্যিস, ফাদারের কথা কানে তোলেননি তারা, অন্যথায় মানবজাতি বঞ্চিত হতো ইতিহাসের অন্যতম সেরা স্নায়ুবিজ্ঞানীর অবদান থেকে।
স্পোকেনে বেশি দিন থাকা হয়নি পেনফিল্ডের। মাত্র আট বছর বয়সেই স্পোকেন ছেড়ে হাডসনে বসবাস করতে শুরু করে তার পরিবার। সেখানকার স্থানীয় স্কুলেই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাজীবন শেষ করেন তিনি। তবে কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত হন উচ্চশিক্ষায় প্রবেশকালে। গণিত আর দর্শনের মধ্যে যেকোনো একটি বেছে নিতে বেশ সমস্যা হচ্ছিলো তার। তবে শেষপর্যন্ত দর্শনই পড়তে শুরু করেন নিউ জার্সির প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে। এর পেছনে কারণ ছিল ‘রোডস স্কলারশিপ’, যা পেতে পারলে অক্সফোর্ডে পড়তে যাওয়াটা সহজ হতো।
কিন্তু দু’বছর যেতে না যেতেই বুঝতে পারলেন, দর্শন তার মনে ধরছে না। স্কলারশিপ আর ক্যারিয়ার উভয়ের চিন্তা আপাতত শিকেয় তুলে কিছুদিনের জন্য বিচ্ছিন্ন জীবন কাটালেন পেনফিল্ড। এ সময় তার মা তাকে চিকিৎসাবিজ্ঞান পড়ার পরামর্শ দিলেও তিনি তা কানে নেননি। চিকিৎসক বাবার ক্যারিয়ারে ব্যর্থতা দেখে বালক বয়সেই প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে আর যা-ই করুন, চিকিৎসাবিজ্ঞান পড়বেন না! তবে প্রতিজ্ঞা ভাঙলো সাময়িক অবসর জীবনেই।
বিভিন্ন জনপ্রিয় ক্লাসিক বই পড়ে তখন সময় কাটাচ্ছিলেন পেনফিল্ড। এরই মাঝে তার পড়া হয়ে গেল উইলিয়াম জেমসের জগদ্বিখ্যাত ‘প্রিন্সিপালস অব সাইকোলজি’ বইটি। এই বইটি তার এতটাই মনে ধরলো যে, তিনি একাধিকবার বইটি পড়লেন। তিনি মনোবিজ্ঞানেই প্রকৃত আকর্ষণ অনুভব করতে শুরু করলেন। তথাপি কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার পূর্বে আরো কিছু মনোবিজ্ঞানের বই পড়ে ফেললেন আর উপলব্ধি করলেন, তার মানুষের মন নিয়ে পড়ার চেয়ে মানুষের মনের নিয়ন্ত্রককে নিয়ে পড়াটাই অধিক আকর্ষণীয়। সেটি কী? অবশ্যই মানব মস্তিষ্ক। আর মস্তিষ্কের টানে তাকে প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করে ভর্তি হতে হলো চিকিৎসাবিজ্ঞানে!
২০ বছর বয়সী পেনফিল্ড তার সংক্ষিপ্ত বিচ্ছিন্ন জীবন থেকে ফিরেই চিকিৎসাবিজ্ঞান পড়া শুরু করতে পারেননি। বরং তিনি দর্শনে স্নাতক সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নেন এবং সাফল্যের সাথে স্নাতক সম্পন্ন করেন। পড়ালেখার পাশাপাশি গৃহশিক্ষকতা, খেলাধুলা, নাচ, গান সব কিছুতেই তার সরব উপস্থিতির কারণে প্রিন্সটনে ‘অলরাউন্ডার’ নামে তার বেশ পরিচিতি এবং সুনাম ছিল। গৃহশিক্ষকতার সাথে অনিচ্ছাকৃতভাবেই কয়েকটি পাড়ার ফুটবল দলের কোচিংয়ের দায়িত্বও পালন করেছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল মেডিকেলে পড়বার জন্য টাকা জমানো।
দুর্ভাগ্যক্রমে চিকিৎসাবিজ্ঞান পড়ার মতো যথেষ্ট টাকা জমাতে পারেননি পেনফিল্ড। বাধ্য হয়ে স্কলারশিপের আশায় প্রিন্সটনে স্নাতকোত্তর পড়ালেখা শুরু করেন। আর এ যাত্রায় বিমুখও হতে হয়নি। ১৯১৪ সালে রোডস স্কলারশিপ লাভ করেন পেনফিল্ড। এর এক সপ্তাহের মাথায় অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্টন কলেজে চিকিৎসাবিজ্ঞান পড়বার জন্য আবেদন করেন। কিন্তু চিকিৎসাবিজ্ঞান পড়ার স্বপ্ন এখানে আরেকবার বাধাপ্রাপ্ত হয়। মার্টন কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় অন্যান্য বিষয়ের সাথে গ্রিকও ছিল। আর গ্রিকের জালেই আটকা পড়েন পেনফিল্ড।
স্কলারশিপের সুবাদে দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ ছিল পেনফিল্ডের সামনে। তাই অকৃতকার্য হয়ে একেবারে দমে যাননি তিনি। প্রতিদিন সকাল আটটায় হার্ভার্ডের এক অধ্যাপকের কাছে গ্রিক শিখতে যেতেন তিনি। অধ্যাপক ৮/১০ জন শিক্ষার্থীকে মানবদেহের ব্যবচ্ছেদ শেখাতেন। যখন শিক্ষার্থীরা কাজ করতে শুরু করতো, তখন সময় দিতেন পেনফিল্ডকে। আর এভাবে মৃতের ব্যবচ্ছেদ দেখতে দেখতে ভর্তি পরীক্ষায় উতরে যাবার মতো গ্রিক শিখে ফেললেন পেনফিল্ড। পরীক্ষায় বেশ ভালোভাবেই পাস করে অবশেষে নিজের স্বপ্নের বিষয় নিয়ে স্বপ্নের প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা শুরু করলেন তিনি। তার ভর্তির কিছুদিনের মাথায়ই মার্টন কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় গ্রিক চিরতরে বাতিল করা হয়!
অক্সফোর্ডে ওয়াইল্ডার পেনফিল্ডের ক্লাস শুরু হয় ১৯১৫ সালের জানুয়ারি মাসে। ব্রিটেন তখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ব্যস্ত। বিপুল পরিমাণ ব্রিটিশ যুবক চলে গেছে যুদ্ধক্ষেত্রে। আর তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী পদচারণাও ছিল বেশ কম। তার উপর যুদ্ধের কারণে নানা সুযোগ সুবিধা ব্যহত হচ্ছিল অক্সফোর্ডে।
চিকিৎসাবিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের থাকতে দেয়া হতো ১৩ শতকের এক পুরাতন ভবনে, যেখানে আধুনিক সুযোগ সুবিধার অনেক কিছুই অনুপস্থিত ছিল। এর উপর ভাঙা জানালার যে কক্ষটি পেনফিল্ডের জন্য বরাদ্দ ছিল, সেটি কোনো কারণে একটু বেশিই ঠান্ডা ছিল। পানির সংকট, মশার অত্যাচার, প্রতি ১০ জনের জন্য একটি করে গণশৌচাগার, সব মিলিয়ে আরাম আয়েশে জীবন কাটানো পেনফিল্ডের জন্য অক্সফোর্ড জীবনের শুরুর দিনগুলো ছিল দুঃস্বপ্নের মতো।
স্যার উইলিয়াম অসলার আর চার্লস শেরিংটনের মতো বিশ্বখ্যাত চিকিৎসকদের সান্নিধ্যে আসার সুযোগ হয়েছিল পেনফিল্ডের। শুরুর ধকল কাটিয়ে পড়ালেখায় বেশ ভালোভাবেই মনোযোগ দিতে সক্ষম হন তিনি। কিন্তু বেশি দিন পথটা মসৃণ থাকলো না। ১৯১৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি হিসেবে একদল চিকিৎসকের সাথে ফ্রান্সে যাচ্ছিলেন আহত সৈন্যদের সেবা প্রদানের জন্য। কিন্তু শত্রুপক্ষের টর্পেডোর আঘাতে মাঝ দরিয়ায় ডুবে যায় তাদের জাহাজটি। বেশ কয়েকজন মারা যান, গুরুতর আহত হন পেনফিল্ডসহ অনেকেই। তবে উদ্ধারকারী জাহাজ যথাসময়ে পৌঁছে যাবার কারণে প্রাণে বেঁচে গেলেন সে যাত্রায়। এই ধকল কাটতে সময় লেগেছিল ৬ মাসের মতো। এক মাস হাসপাতালে শুয়ে থাকার পর মাসপাঁচেক ক্রাচে ভর করে হাঁটতে হয়েছিল। পুরোপুরি সুস্থ হতে হতে শারীরবিদ্যায় তার স্নাতক সম্পন্ন হয়ে যায় এবং তিনি স্বদেশে ফেরেন।
যুক্তরাষ্ট্রে এক বছরের মতো সময় রেড ক্রসের হয়ে স্বেচ্ছাসেবকের কাজ করে পুনরায় অক্সফোর্ডে ফেরেন পড়ালেখা শেষ করার জন্য। ২৭ বছরে চিকিৎসক হিসেবে স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে দেশে ফেরেন এবং বোস্টনের ব্রিগহাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাক্তারি শুরু করেন। কিন্তু দু’মাসের বেশি ডাক্তারি করাতে পারেননি পেনফিল্ড। তার মাথায় সর্বদাই মানব মস্তিষ্কের কথা ঘুরতো। মানব মস্তিষ্কের উপর উচ্চতর গবেষণা করার জন্য তিনি আবারো ফিরে যান অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে অধ্যাপক শেরিংটনকে অনুরোধ করেন তার গবেষণার সুপারভাইজার হবার জন্য। শেরিংটন অন্য কেউ হলে হয়তো বা সবিনয়ে ফিরিয়ে দিতে পারতেন, কারণ তিনি নিজে তখন একটি গবেষণায় ব্যস্ত ছিলেন। কিন্তু পেনফিল্ডের চোখে মুখে প্রত্যয় আর সম্ভাবনার ঝলক দেখে তিনি আর মুখ ফেরাতে পারলেন না।
এক বছর শেরিংটনের তত্ত্বাবধানে কাজ করার পর গবেষণার জন্য একটি ছোটোখাট ফান্ড জোগাড় করতে সক্ষম হন। তবে এই ফান্ড তার গবেষণার জন্য যথেষ্ট ছিল না। তাই প্রতিদিন সন্ধ্যায় সাইকেল চালিয়ে ২৫ মাইল দূরে একটি হাসপাতালে ডাক্তারি করতে চলে যেতেন পেনফিল্ড। ফিরতে কখনো কখনো অনেক রাত হয়ে যেত, তবুও পরদিন সকাল সকাল ঠিক হাজির হয়ে যেতেন গবেষণাগারে।
জীবনের প্রথম এই গবেষণায় আহামরি সাফল্য না পেলেও এ গবেষণা তাকে একজন স্নায়ুচিকিৎসক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। এই গবেষণার সুবাদেই নিউইয়র্কের প্রেসবিটারিয়ান হাসপাতালে নিউরোসার্জন হিসেবে যোগ দিতে সক্ষম হন।
হাসপাতালে যোগদানের কিছুদিনের মধ্যেই মস্তিষ্কে টিউমারের এক বালকের চিকিৎসা শুরু করেন পেনফিল্ড। তবে টিউমার বেশ গভীরে ছিল এবং পেনফিল্ডের সেখানে কিছু করার ছিল না। বালকটি কয়েক সপ্তাহ পর মারা গেলে পেনফিল্ড তার বাবা-মায়ের অনুমতি সাপেক্ষে বালকটির মস্তিষ্ক কেটে বের করে আনেন পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য, যেন ভবিষ্যতে এরূপ সমস্যার সমাধান করা যায়। পরের বছর পেনফিল্ডের আরো দুজন রোগী মৃত্যুবরণ করে। যদিও উভয়ের অবস্থাই অন্তিম পর্যায়ে ছিল, তথাপি পেনফিল্ড তাদের মৃত্যুর জন্য নিজেকে অযোগ্য ভাবতে লাগলেন। কীভাবে নিজের সক্ষমতা আরো বাড়াবেন সে চিন্তা তাকে পেয়ে বসলো ভালোভাবেই।
ব্যক্তিগত উদ্যোগে নিরলসভাবে গবেষণা চালিয়েই যাচ্ছিলেন পেনফিল্ড। যদিও উল্লেখযোগ্য কোনো সাফল্য তখনো পাননি, তথাপি নিউরোসার্জন হিসেবে তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়তে লাগলো দ্রুত। ১৯২৮ সালের দিকে কানাডার মন্ট্রিলে ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হন তিনি। ৪ বছর পর ম্যাকগিলে প্রতিষ্ঠিত হওয়া ‘ম্যাকগিল নিউরোলজিক্যাল ইনস্টিটিউট’ এর প্রধান হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। সেবছর জার্মানির একটি মানসিক হাসপাতালের আমন্ত্রণে সেখানে গিয়ে নিজের জাত চিনিয়ে আসেন পেনফিল্ড। হাসপাতালটিতে বেশ কয়েকজন রোগী ছিলেন যাদের মস্তিষ্কে আঘাতের কারণে মৃগীরোগের সমস্যা দেখা দেয়। পেনফিল্ড তার স্পেনে শিখে আসা অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে সাধারণ কিছু অনুভূতিনাশক (অ্যানেস্থেটিক) দিয়ে রোগীকে পুরোপুরি অজ্ঞান না করেই মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার করলেন। প্রতিটি অস্ত্রোপচারই ছিল সম্পূর্ণ সফল।
জার্মানির এই অভিজ্ঞতা পেনফিল্ডকে মৃগীরোগীদের মস্তিষ্ক অপারেশনে নতুন গবেষণার খোরাক সরবরাহ করলো। তিনি জার্মান স্নায়ুবিদ ওতফ্রিড ফোয়ার্স্টারের তড়িৎ উদ্দীপন পদ্ধতি কাজে লাগালেন। অস্ত্রোপচারের সময় মস্তিষ্কের কিছুটা গভীরে থাকা টিউমার আর ক্ষতের চিকিৎসা করতে গেলে প্রায়শই অনেক সুস্থ স্নায়ু কাটা পড়তো। এ ঝামেলা দূর করতে পেনফিল্ড প্রথমেই রোগীর মস্তিষ্কের প্রাইমারি সেন্সরি ও মোটর নিউরনগুলো চিহ্নিত করে ফেলতেন। এতে তিনি সহজে মস্তিষ্কের সুস্থ অংশের ক্ষতি না করেই ক্ষয়প্রাপ্ত স্নায়ুগুলোতে অস্ত্রোপচার করতে সক্ষম হলেন। পেনফিল্ডের এ প্রক্রিয়া ‘মন্ট্রিল প্রসিডিউর’ হিসেবে পরিচিত। আধুনিককালে মস্তিষ্কের টেম্পোরাল লোবের জটিলতম অস্ত্রোপচারগুলোর ভিত্তি গড়ে দিয়েছিল এই মন্ট্রিল প্রসিডিউর।
মন্ট্রিল প্রসিডিউরের সাফল্যের পর মস্তিষ্কের ম্যাপিং করতে শুরু করেন পেনফিল্ড। তিনি মস্তিষ্কের চারটি প্রধান লোব- ফ্রন্টাল, পেরিয়েটাল, টেম্পোরাল আর অক্সিপেটালের বিশেষত্ব এবং কোন লোব কোন ধরনের স্নায়বিক কর্ম সম্পাদন করে তা নিয়ে কাজ করতে শুরু করেন। ১৯৫১ সালে হারবার্ট জ্যাসপার ব্রেইন ম্যাপিংয়ের অত্যাধুনিক পদ্ধতি ‘ইলেকট্রোকর্টিকোগ্রাফি’ আবিষ্কার করলে পেনফিল্ডের কাজ আরো সহজ হয়ে যায়। মৃগীরোগের চিকিৎসায় এ পদ্ধতি ব্যবহার করে সরাসরি রোগীর মস্তিষ্কের ক্ষয়প্রাপ্ত অংশগুলোতে পৌঁছুতে সক্ষম হলেন। আর তাতে তার অস্ত্রোপচারগুলো হয়ে উঠলো আরো বেশি কার্যকর।
ওয়াইল্ডার পেনফিল্ড তার ডাক্তারি জীবনে ১,০০০ এর বেশি মস্তিষ্ক অপারেশন করেছেন। তন্মধ্যে অর্ধেকের বেশি রোগীকেই তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ করে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। বাকি অর্ধেকের সিংহভাগই পুরোপুরি সুস্থ না হলেও অবস্থার উন্নতি হয়েছে। এরকম বিস্ময়কর সাফল্যের জন্য চিকিৎসাজীবনে পেয়েছেন অসংখ্য সম্মাননা।
রয়্যাল সোসাইটির ফেলো নির্বাচিত হবার পাশাপাশি লাভ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ‘মেডাল অব ফ্রিডম’, ফ্রান্সের ‘লিজিয়ন ডি অনার’, ব্রিটেনের ‘অর্ডার অব মেরিট’, কানাডার ‘অর্ডার অব কানাডা’র মতো সম্মানজনক সব পুরস্কার।
অক্সফোর্ডে ডাক্তারি ডিগ্রি সম্পন্ন করতে যাবার সময়েই হেলেন কারমটকে বিয়ে করেছিলেন পেনফিল্ড। তার চার সন্তানের মাঝে দুজনই পরবর্তীতে বিখ্যাত ডাক্তার হয়েছে। ১৯৬০ সালে যখন তিনি ডাক্তারি কর্মজীবন থেকে অবসর নিয়েছিলেন, তার সন্তানরাই তখন তার গবেষণাকর্মের দায়িত্ব নেন। অবসর নিয়েও পুরোপুরি অবসরপ্রাপ্ত হয়ে যাননি পেনফিল্ড।
শরীর ও মন ভালো রাখতে লিখে ফেলেন দুটি উপন্যাস আর স্নায়ুচিকিৎসা নিয়ে একাধিক প্রবন্ধ। এ সময় তার পেটে ক্যান্সার হয়েছিল যা তাৎক্ষণিকভাবে ধরা পড়েনি। যতদিনে ক্যান্সার ধরা পড়ে, ততদিনে তার আয়ু ফুরিয়ে এসেছে। ১৯৭৬ সালের ৫ এপ্রিল মন্ট্রিলেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন পেনফিল্ড। স্নায়ু চিকিৎসার এই পুরোধা ব্যক্তিত্বকে স্মরণ করতে ১৯৯১ সালে তার ছবি সম্বলিত একটি স্ট্যাম্প ছেপেছিল কানাডা। তাতে লেখা ছিল, ‘ইতিহাসের সেরা স্নায়ুচিকিৎসক।