Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ডাক্তার রানী বাঙ: স্বাচ্ছন্দ্যের জীবন ছেড়ে যিনি ব্রতী হয়েছেন দরিদ্র মানুষের উন্নয়নে

ইউএন উইমেন-এর সহযোগিতায় এম জি মোটর ইন্ডিয়া এবং দ্য বেটার ইন্ডিয়া-র যৌথ প্রয়াস ‘চেঞ্জমেকার্স’ আপনাদের সামনে তুলে ধরছে সেই সমস্ত কৃতী নারীদের কাহিনী যারা তাদের অদম্য মনের জোরে ও ইচ্ছায় অসংখ্য মানুষের জীবনেও এনেছেন এক ইতিবাচক পরিবর্তন।

আজ আমাদের গল্পের নায়ক স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার রানী বাঙ যিনি নিজের চেষ্টায় বহু অসহায় ও দরিদ্র মানুষের ভাগ্যে বড় পরিবর্তন এনেছেন।

রানী বাঙ; Image Source: Vimeo

গ্রামীণ ভারতের স্বাস্থ্য-বিষয়ক শিক্ষা এবং পরিষেবার বেহাল অবস্থার কথা ডক্টর রানী বাঙ প্রথম জানতে পারেন ১৯৭৮ সালে, মহারাষ্ট্রের ওয়ারধা জেলার কানহাপুরে। সেবার নিজের চোখের সামনে এক বিধবা ভূমিহীন কৃষিকর্মীর দুই বছরের কন্যাকে মারা যেতে দেখেন তিনি, বিনা চিকিৎসায়।

ডক্টর রানী বাঙ-এর জীবনের সেই অভিজ্ঞতা তার চোখ খুলে দিয়েছিল

রাই-বাই দাবলে নামক বিধবা নারীটি ডক্টর বাঙ-এর কাছে এসেছিল তার শিশুটির গ্যাস্ট্রো-এন্টারাইটিস এবং নিউমোনিয়ার চিকিৎসা করাতে। শরীর শুকিয়ে যাওয়া অসুস্থ শিশুটিকে ডক্টর বাঙ কাছাকাছি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিলেও তার মা তা করেনি। এর দিন দুয়েক পরে, যখন ডক্টর বাঙ তার চেম্বারে আসেন, তিনি দেখেন সেই শিশুটিকেই তার পাঁচ বছরের দিদির হাতে শুয়ে মৃত্যুর প্রহর গুণতে। রাণীদেবীর চোখের সামনেই মারা যায় একরত্তি মেয়েটি।

তিনি যখন জানতে পারেন যে শিশুটিকে তার মা হাসপাতালে নিয়ে যায়নি, তখন তিনি প্রচণ্ড রেগে যান। কিন্তু রাই-বাই তাকে অসহায় কণ্ঠে বলল,

“আমি বিধবা মানুষ। ঠিকা শ্রমিক হিসেবে কাজ করে যেটুকু উপার্জন করি, তাতেই কোনওরকম আমাদের পেট চলে। যদি আমি আমার অসুস্থ মেয়েকে নিয়ে হাসপাতালে যেতাম, তাহলে সেইদিন আমার কোনও আয় হতো না। আর তার ফলে আমার যে তেরো বছরের ছেলে আর আট বছরের মেয়ে আছে, তারা অভুক্ত থাকত। একটি শিশুর জন্যে আমি কি আমার বড় সন্তানদের সঙ্গে তা করতে পারি? হাজার হোক, বড় হলে তো তারাই আমাকে দেখবে।”

ওই নারীর কথা শুনে ডক্টর বাঙ সেদিনই বুঝেছিলেন যে স্বাস্থ্য পরিষেবা বলতে শুধু চিকিৎসা এবং ওষুধপথ্যকেই বোঝায় না, তার সঙ্গে যুক্ত থাকে রোগীর প্রতি সংবেদনশীলতাও।

তার জীবনে একটি বড় প্রভাব ফেলে ওই ঘটনা।

সেই ঘটনার পর চার-চারটি দশক কেটে গিয়েছে। ডক্টর রানী বাঙ এবং তার স্বামী ডক্টর অভয় বাঙ আজ তিরিশ বছর ধরে মহারাষ্ট্রের গাচিরোলি জেলায় আর্তের সেবায় নিজেদের ব্রতী করেছেন। তাদের সামাজিক এবং শিক্ষাগত উন্নয়নে সপেঁছেন নিজেদের প্রাণ।

রানী বাঙ এবং অভয় বাঙ; যারা সারা জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন মানুষের সেবায়; Image Source: Wikimedia Commons

এই পদ্মশ্রী পুরস্কারপ্রাপ্ত চিকিৎসক দম্পতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরে আসেন নিজেদের মাতৃভূমির জন্যে কিছু করতে এবং ১৯৮৬ সালে ‘সার্চ’ বলে একটি তৃণমূল স্তরের স্বাস্থ্য সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। সার্চ-এর পুরো নাম সোসাইটি ফর এডুকেশন, একশন এন্ড রিসার্চ ইন কমিউনিটি হেলথ। গ্রামে গ্রামে স্বাস্থ্য সমীক্ষা চালিয়ে তারা দেখতে পান যে সেখানকার ৯২ শতাংশ মহিলাই স্ত্রীরোগজনিত সমস্যায় ভুগছেন এবং তাদের মধ্যে বেশিরভাগই এসটিডি বা যৌন-রোগ সম্পর্কিত।

ডক্টর বাঙ যখন এই জেলায় কাজ করতে শুরু করেন, তখন তিনিই সেখানকার একমাত্র স্ত্রীরোগ চিকিৎসক এবং সেখানকার প্রথম সিজারিয়ান প্রসবও তার তত্ত্বাবধানেই হয়।

ডায়ারিয়া নয়, নিউমোনিয়াই পাঁচ বছরের কম বয়েসের শিশুদের মৃত্যুর হারের সবচেয়ে বড় কারণ

বাঙ দম্পতির গবেষণায় এটাও প্রমাণিত হয় যে ডায়ারিয়া নয়, নিউমোনিয়াই পাঁচ বছরের কম বয়েসের শিশুদের মৃত্যুর হারের সবচেয়ে বড় কারণ। তাদের এই গবেষণার ফল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকেও উদ্বেগে ফেলে এবং তাদের প্রতিষেধক প্রস্তুতের কৌশলে এই আন্তর্জাতিক সংস্থাও রদবদল ঘটায় বাঙ-দের এই পর্যবেক্ষণের পরে। তাদের গবেষণাপত্র আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চিকিৎসা পত্রিকা ‘ল্যানসেট’-ও প্রকাশিত হয় এবং তাদেরকে ল্যানসেট-এর পক্ষ থেকে ‘গ্রামীণ ভারতের স্বাস্থ্য পরিষেবার পথিকৃৎ’ হিসেবেও সম্মানিত করা হয়।

রানী বাঙ যখন এই জেলায় কাজ করতে শুরু করেন, তখন তিনিই সেখানকার একমাত্র স্ত্রীরোগ চিকিৎসক; Image Source: idronline

তবে গ্রামের সংশয়া মেটানোর জন্যে স্থানীয় মানুষের সহযোগিতা প্রয়োজন ছিল। আর তাই তাদের সঙ্গে সমন্বয়সাধনের মাধ্যমে সমস্যার মোকাবিলা করতে বাঙ দম্পতি গাচিরোলি থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরে একটি ১৩ একর জমির উপরে তৈরি করেন শোধগ্রাম। সময়টা ১৯৯৩।

গৃহ-ভিত্তিক সদ্যজাত স্বাস্থ্য পরিষেবা ছাড়াও বাঙ দম্পতি গ্রামের ধাইমাদেরও প্রশিক্ষণ দিতে ব্যস্ত। এই প্রশিক্ষণের মধ্যে রয়েছে প্রসূতি মায়েদের দেখাশোনা; তাদের স্বাস্থ্যগত সমস্যার কথা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের জানানো এবং মা এবং তাদের সদ্যজাত শিশুদের সাধারণ ওষুধ ঠিকঠাক করে খাওয়ানো। ‘অগ্রদূত’ বলে পরিচিত এই নারীদের সদ্যোজাতকে ইনজেকশন দেওয়ার ব্যাপারেও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

আজ শোধগ্রামে মা দন্ত্যেশ্বরী হাসপাতাল ছাড়াও রয়েছে একটি আদিবাসীদের মন্দির যাতে স্থানীয় মানুষরা সেখানে একটি ঘরোয়া ছোঁয়া পায়। এই স্থানেই বাঙ চিকিৎসক দম্পতি থাকেন, এখানেই তাদের সার্চ-এর সদর দফতর এবং গবেষণা কেন্দ্র। এখানে খোলা হয়েছে একটি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রও। পাশাপাশি আদিবাসী যুবাদের প্রশিক্ষণের জন্যে একটি কৃষিজমি ছাড়াও এখানে চালু রয়েছে স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের যৌন শিক্ষার একটি কর্মসূচি।

গ্রামীণ ভারতের স্বাস্থ্য পরিষেবার পথিকৃৎ নারী বাঙ এবং অভয় বাঙ; Image Source: thebetterindia

বাঙ দম্পতি তাদের বাকি জীবন স্বাচ্ছন্দের মধ্যেই কাটাতে পারতেন কিন্তু তারা বেছে নিয়েছেন এমন একটি জীবন যার মধ্যে দিয়ে তারা দেশের দরিদ্র মানুষদের উন্নয়নের জন্যে কিছু করতে পারেন। এমন উচ্চ বিচারের চিকিৎসকদের হাত ধরেই ভারত আজ ভবিষ্যতের ঠিকানায় এগিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর। 

ইউএন উইমেন-এর পূর্ণ সহযোগিতায় এম জি মোটর ইন্ডিয়া এবং দ্য বেটার এবং দ্য বেটার ইন্ডিয়া ভারতের সেই সমস্ত কৃতী নারীদের সম্মান জানাচ্ছে যারা ভারতের সেই সমস্ত কৃতী নারীদের সম্মান জানাচ্ছে যারা প্রতিনিয়ত নিজেদেরকে বিশ্বের সামনে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরে দেশকে এক সুন্দর ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।

এই মহৎপ্রয়াসে আপনিও সামিল হতে আগ্রহী? পেটিএম বা ব্যাঙ্ক মারফত করতে চান আর্থিক অনুদান?

বিশদে জানতে ক্লিক করুন এখানে

এম জি মোটর ইন্ডিয়া সম্পর্কে আরও জানতে তাদের ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রাম পেজগুলি দেখুন।

 

Related Articles