উদয় হুসাইন এবং কুশে হুসাইন: সাদ্দাম হুসাইনের দুই কুখ্যাত পুত্র

সাদ্দাম হুসাইন যদি ইরাকের একটি বড় অংশের মানুষের কাছে বিভীষিকার অপর নাম হয়ে থাকেন, তবে তার পুত্রদ্বয় ছিল সমগ্র ইরাকবাসীর কাছে সাক্ষাৎ যমদূত। বড় ছেলে উদয়ের বর্বরতা একসময় সাদ্দামের হুসাইনের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছিল। ইরাক ছাড়াও বহির্বিশ্বেও উদয় তার নিষ্ঠুরতার জন্য কুখ্যাতি লাভ করেছিলেন। এমনকি সাদ্দামের ঘোর সমর্থকদের কাছেও উদয় ছিলেন এক মূর্তিমান আতঙ্কের নাম। অন্যদিকে কুশে হুসেইন ছিলেন অনেকটা পিতার মতো, শীতল চাহনির সাথে ধূর্ত একজোড়া চোখ। ঘটনার পেছনে থেকে ঠান্ডা মাথায় কাজ আদায় করে নিতে সিদ্ধহস্ত।

কুশে হুসাইন (পেছনে বাম থেকে তৃতীয়), উদয় হুসাইন (পেছনে সর্বডানে) এবং সাদ্দাম হুসাইন (সামনে মাঝে বসা); Image Source: The Telegraph

একসময় উদয়কে সাদ্দাম হুসাইনের উত্তরসূরি হিসেবে ভাবা হতো। কিন্তু তার একের পর এক লাগামহীন নিষ্ঠুরতা এবং পরবর্তীতে ঘটে যাওয়া এক দুর্ঘটনা তাকে ক্ষমতার মসনদ থেকে অনেকটা দূরে সরিয়ে দেয়। সেই সময় নিজের যোগ্যতা এবং বড় ভাইয়ের ভাগ্য বিড়ম্বনাকে কাজে লাগিয়ে কুশে হুসাইন নিজেকে বাবার যোগ্য উত্তরসূরিতে পরিণত করেন। তবে যাবতীয় ক্ষমতার দ্বন্দ্ব এবং জাগতিক লৌকিকতাকে পেছনে ফেলে দুই ভাইয়ের ভাগ্য ২০০৩ সালের ২২ জুলাই একই সূতায় গাঁথা পড়ে। ঐদিন আমেরিকান সেনাবাহিনীর হামলায় তারা দুজনই পরপারে যাত্রা করেন।

আজ এই দুই ভাইয়ের জীবনের উল্লেখযোগ্য কিছু দিক সম্পর্কে আমরা জানবো।

উদয় হুসাইন

সাদ্দাম হুসাইনের জ্যেষ্ঠ পুত্র উদয় হুসাইন; Image Source: Famous People

উদয় সাদ্দাম হুসাইন আল-তিকরিতি ছিলেন সাবেক ইরাকি প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হুসাইন এবং তার প্রথম স্ত্রী সাজিদার জ্যেষ্ঠ পুত্র। তার জন্ম ১৮ জুন, ১৯৬৪ সালে, যখন সাদ্দাম হুসাইন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আব্দ আল-কারিম কাশিমকে হত্যা চেষ্টার দায়ে কারাবন্দী ছিলেন। উদয় তার উদ্ধত আচরণ এবং নিষ্ঠুর ব্যবহারের জন্য কুখ্যাত। তার বিরুদ্ধে অসংখ্য হত্যা, ধর্ষণ এবং নির্যাতনের অভিযোগ আছে। এর মধ্যে ইরাকি অলিম্পিক ক্রীড়াবিদ এবং ফুটবল দলের খেলোয়াড়দের ওপর নির্যাতনের ঘটনা অন্যতম। ফলে পিতার শাসনামলেই তাকে বেশ কয়েকবার কারাবন্দী হতে হয়, এমনকি একবার তো তাকে মৃত্যুদন্ডও দেয়া হয়েছিল!

স্কুলে পড়াকালে একজন ভালো ছাত্র হিসেবে পরিচিতি ছিল উদয়ের। পরবর্তীতে বাগদাদ ইউনিভার্সিটি কলেজ অব মেডিসিনে ভর্তি হন উদয়। সেখানে তিন বছর পড়াশোনার পর ড্রপ আউট হন। এরপর ভর্তি হন বাগদাদ ইউনিভার্সিটি কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে। সেখান থেকে তিনি ৭৬ জন ছাত্রের মধ্য থেকে প্রথম স্থান অধিকার করে ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রী লাভ করেন। যদিও পরবর্তীতে তার বেশ কয়েকজন প্রফেসর বলেন, ন্যূনতম পাস নম্বর পাবার যোগ্যতাও ছিল না তার। শুধুমাত্র একজন ক্ষমতাশালী পিতা থাকার জন্যই তার এই অভূতপূর্ব সাফল্য লাভ।

(বাম থেকে) কুশে হুসাইন এবং উদয় হুসাইন; Image Source: ABC NEWS

সাদ্দাম হুসাইনের শাসনামলের শুরুর দিকে উদয়কে সাদ্দামের উত্তরসূরি ভাবা হলেও ধীরে ধীরে তিনি সেই স্থান হারিয়ে ফেলেন। বিভিন্ন ভারসাম্যহীন কর্মকান্ডের ফলে সাদ্দাম হুসাইন আর উদয়ের ওপর ভরসা করতে পারছিলেন না। তার পরিবর্তে ছোট ছেলে কুশেকে সাদ্দাম রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত করতে শুরু করেন। পিতার অবহেলাতেই হয়তো উদয়ের কর্মকান্ড আরও লাগামছাড়া হয়ে পড়ে। একসময় তিনি হারিয়ে যান অন্ধকার জগতের গহীন গহ্বরে।

বিকৃত যৌনাচার আর অপরাধমূলক কর্মকান্ড ছিল উদয়ের নিত্যদিনের অভ্যাস। সপ্তাহের প্রায় পাঁচদিনই একাধিক নারীর সাথে রাত কাটাতে ভালোবাসতেন উদয়। তার লোভাতুর যৌন লালসা বাগদাদের অল্প বয়সী যুবতী এবং তাদের পরিবারের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছিল। তবে বাস্তবতা হলো, তার পাশবিকতা থেকে কেউই নিরাপদ ছিল না। তার সাঙ্গপাঙ্গরা বিভিন্ন স্থান থেকে নানা বয়সী নারীদের আটক করে টাইগ্রিস নদীর ধারে অবস্থিত উদয়ের অবকাশ যাপন কেন্দ্র বাগদাদ বোটিং ক্লাবে নিয়ে আসতো। সেখানে অপেক্ষমান মদ্যপ উদয় তাদের মধ্য থেকে পছন্দসই এক বা একাধিক নারীকে রাত কাটানোর জন্য বেছে নিতেন। ভাগ্য ভালো থাকলে ঐসব নারী পরবর্তী সকালে মুখ না খোলার কঠিন শর্তে মুক্তি পেত। যাওয়ার সময় তাদের হাতে ধরিয়ে দেয়া হত সামান্য কিছু ডলার বা গহনা।

নববিবাহিতা তরুণীদের প্রতি উদয় হুসাইনের ছিল দুর্বার আকর্ষণ। বিয়ের আসর থেকে স্বামীর সামনে তাদের তুলে নিয়ে নিজের যৌনলিপ্সা চরিতার্থ করার ব্যাপারে কুখ্যাতি ছিল তার। হতভাগ্য স্বামীদের ওই করুণ দৃশ্য দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার থাকতো না।

‘দ্য ডেভিল্‌স ডাবল্‌স’ মুভিতে উদয় হুসাইনের চরিত্রে ডমিনিক কুপার; Image Source: Hollywood Reporter

একবার বাগদাদের অভিজাত হান্টিং ক্লাবে একটি বিয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছিল। উদয়ের লোলুপ দৃষ্টি গিয়ে পড়ে ওই অনুষ্ঠানের ওপর। তার গুন্ডারা তুলে নিয়ে যায় কনেকে। নিজের সদ্য বিবাহিতা স্ত্রীর প্রতি এই জুলুম সহ্য করতে পারেনি স্বামী। গুলি করে আত্মহত্যা করেন তিনি।

ইরাকে আমেরিকান আগ্রাসনের কিছুদিন আগেও উদয়ের ক্যাডাররা বিয়ের আসর থেকে এক অষ্টাদশী তরুণীকে ধরে নিয়ে আসে। উদয় হুসাইন তাকে ধর্ষণের পর হত্যা করে। তার ছিন্নভিন্ন মৃতদেহ পরবর্তীতে মিলিটারি চাদরে ঢেকে এসিড দিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হয়।

উদয়ের নির্যাতনের শিকার একজন বলেছিলেন, যেদিন থেকে উদয় ইন্টারনেট ব্যবহার শুরু করে সেদিন থেকে ইরাকি জনগণের জীবনে আরও একটি কালো অধ্যায়ের সূচনা হয়। ইন্টারনেট থেকে নতুন নতুন নির্যাতনের কৌশল শিখে তা মানুষের ওপর প্রয়োগ করা তার নেশায় পরিণত হয়। তার মৃত্যুর পর আমেরিকান বাহিনী তার বাসভবন থেকে একটি আয়রন মেইডেন খুঁজে পায়। প্রাচীনকালে আয়রন মেইডেনের ভেতর মানুষকে ঢুকিয়ে নির্যাতন করা হতো।

উদয় হুসাইনের বাসভবনে পাওয়া আয়রন মেইডেন; Image Source: Pinterest

পুরো ইরাক জুড়ে উদয়ের এসব লাগামছাড়া কর্মকান্ড নিয়ন্ত্রণ করার মতো মানুষ ছিলেন একজনই, তার পিতা সাদ্দাম হুসাইন। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো, সাদ্দাম হুসাইন উদয়ের রাশ টেনে ধরার মতো কিছুই করেননি।

তবে হ্যাঁ, একবার সাদ্দাম উদয়ের কোনো এক কাজে প্রচন্ড খেপে গিয়ে তাকে শাস্তি দেয়ার জন্য মনস্থির করলেন। এজন্য তিনি উদয়ের গ্যারেজে থাকা বিলাসবহুল সব গাড়ির বিশাল সংগ্রহে আগুন ধরিয়ে দেন। লেলিহান অগ্নিশিখা একে একে গ্রাস করে বিএমডব্লিউ, রোলস রয়েস, বেন্টলি, পোরশে আর ফেরারির মতো চকচকে সব গাড়ি।

উদয় ১৯৮৮ সালে সাদ্দাম হুসাইনের ব্যক্তিগত পরিচারক এবং দ্বিতীয় স্ত্রী সামিরা শাহবান্দারের পিতা কামাল হানা জিজিওকে হত্যা করে। শাস্তিস্বরূপ সাদ্দাম উদয়কে বন্দী করেন এবং তাকে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত করেন। যদিও তিন মাস কারাবন্দী থাকার পর উদয় মুক্তি পায় এবং তাকে সুইজারল্যান্ডে পাঠিয়ে দেয়া হয়। সুইস সরকারও তাকে ১৯৯০ সালের দিকে বিশৃঙ্খলার দায়ে দেশ থেকে বহিষ্কার করে।

সাদ্দাম হুসাইনের এই কুখ্যাত পুত্রকে একবার ইরাকি অলিম্পিক কমিটি এবং ইরাকি ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান করা হয়। সেখানেও তিনি নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে যান! যেসব অ্যাথলেট পদক লাভে ব্যর্থ হয়, তাদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। এমনকি যেসব ফুটবলার ভালো খেলতে পারতো না, তাদেরকে কয়েদখানায় আটক রেখে নির্যাতন করা হতো উদয়ের নির্দেশে।

এতসব কুখ্যাত ঘটনার জন্ম দেয়া এই মানুষটি আমেরিকান বাহিনীর হামলায় ২০০৩ সালের ২২ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন।

কুশে হুসাইন

কুশে হুসাইন; Image Source: AlterNet History Wiki – Fandom

কুশে সাদ্দাম হুসাইন আল-তিকরিতির জন্ম ১৯৬৬ সালের ১৭ মে। তিনি ছিলেন সাদ্দাম হুসাইনের দ্বিতীয় পুত্র। ২০০৩ সালের দিকে ইরাকের ওপর আমেরিকা এবং ব্রিটেনের যৌথ আক্রমণের সময় কুশে ছিলেন সাদ্দাম হুসাইনের ডেপুটি। একইসাথে তিনি ছিলেন ইরাকি আর্মড্‌ ফোর্সের ডেপুটি কমান্ডার-ইন-চিফ এবং ইরাকি ইন্টেলিজেন্স সার্ভিসের প্রধান। নিজের এই দ্বিতীয় পুত্রের প্রতি সাদ্দামের ছিল অগাধ বিশ্বাস, যার ফলস্বরূপ বড় পুত্র উদয়কে উপেক্ষা করে তিনি কুশেকে ক্ষমতার শীর্ষে উঠিয়ে আনেন।

উদয়ের মতো সবসময় পাদপ্রদীপের আলোয় না থাকলেও পর্দার আড়ালে থেকে নিজের কাজগুলো ঠিকঠাক মতোই করে যাচ্ছিলেন কুশে। তার বয়স যখন ২২ বছর তখন সাদ্দাম হুসাইন তাকে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স – “আম আল-খাস” এর ডেপুটি প্রধান নিযুক্ত করেন। বিরোধীদের দমনে কুশের বাহিনী জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করে এবং হত্যা, গুম, খুনের মাধ্যমে বিরোধীদের নিশ্চিহ্ন করতে থাকে। 

সাদ্দাম হুসাইনের সাথে করমর্দনরত কুশে হুসাইন; Image Source: GlobalSecurity.org

১৯৯১ সালে পার্সিয়ান গাল্‌ফ যুদ্ধ শেষ হবার পর পর ইরাকের দক্ষিণাঞ্চলে বসবাসরত শিয়া মুসলমানেরা বিদ্রোহ করে বসে। সেই সুযোগে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ এইচ. বুশ ইরাকি জনগণকে সাদ্দামের সরকার পতনের আহ্বান জানায়। তার ভাষণ প্রচারিত হয় ভয়েস অব আমেরিকা রেডিও চ্যানেলে। ফলে বিদ্রোহের আগুন খুব দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ে চারপাশে। একসময় তা ইরাকের মাটিতে সাদ্দাম হুসাইনের বিরুদ্ধে সংঘঠিত সবচেয়ে বড় বিদ্রোহে পরিণত হয়। পিতার এই সংকটাপন্ন সময়ে এগিয়ে আসে কুশে। তার বাহিনী ভয়াবহ নিষ্ঠুরতার সাথে বিদ্রোহ দমন করে। তার এই বিদ্রোহ দমনের প্রক্রিয়া মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায় অসংখ্য শিয়া বিদ্রোহীর এবং বিপুল সংখ্যক মানুষকে বন্দী করা হয়। অন্যদিকে বিদ্রোহ দমনের পুরষ্কার স্বরূপ কুশেকে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের প্রধান হিসেবে নিযুক্ত করা হয়।

আইন নিয়ে পড়াশোনা করা কুশে খুব সহজেই আইনকে কাজে লাগাতেন হত্যা, নির্যাতন এবং গণহত্যাকে বৈধতা দেয়ার জন্য। তার জীবনের আরেকটি অন্ধকার অধ্যায় হলো ‘বন্দী ছাটাই’ নীতি। বিভিন্ন বিদ্রোহ এবং অপরাধের কারণে বন্দী বিপুল সংখ্যক ইরাকি নাগরিকের কারণে কারাগারগুলো বোঝাই হয়ে গিয়েছিল। ফলে নতুন কাউকে জেলে ঢোকানো কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। এর সমাধান স্বরূপ কুশে বন্দীদের হত্যা করে কারাগার ফাঁকা করার নির্দেশ দেন। বেশিরভাগ সময়ই বন্দীদের মাথায় গুলি করে হত্যা করা হতো। নিউইয়র্ক ভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতে কয়েক হাজারের বেশি বন্দীকে বিচার বহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়েছিল।

১৯৯৬ সালের দিকে উদয় হুসাইনের ওপর একটি প্রাণঘাতী হামলা চালানো হয়। এর ফলে তিনি প্রায় চলাচলে অক্ষম হয়ে পড়েন। কথিত আছে, এই হামলার নেপথ্যে ছিল কুশে হুসাইন। হামলার পর পর বাথ পার্টিতে আরও উচ্চ পদে কুশের নিয়োগ নিশ্চিত হয়।

(বাম থেকে) উদয় হুসাইন, সাদ্দাম হুসাইন এবং কুশে হুসাইন; Image Source: Mirror

ব্যক্তিগত জীবনে কুশে ছিলেন চুপচাপ স্বভাবের, শীতল এবং উদয়ের তুলনায় অনেক বেশি পরিণত। ১৬ বছর বয়সে পিতার পছন্দ করা পাত্রী লুমার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি। এই দম্পতির চারটি সন্তান ছিল। বড় ভাই উদয় নারীলিপ্সু হলেও কুশে হুসাইন নারীদের যথেষ্ট সম্মান করতেন। তার একজন সাবেক পরিচারক বলেছিলেন, “এমনকি যেসব পতিতাকে আমোদ-প্রমোদের জন্য প্রাসাদে আনা হতো, তাদের সাথেও কুশে সম্মানজনক আচরণ করতেন এবং নানা ধরনের উপহার প্রদান করতেন। তিনি ছিলেন একজন সত্যিকারের ভদ্রলোক, যিনি খুব ভালো করেই জানতেন যে নারীঘটিত যেকোনো স্ক্যান্ডাল তার পাব্লিক ইমেজের কী পরিমাণ ক্ষতি করতে পারে।

হুসাইন ভ্রাতাদের বাসভবন লক্ষ্য করে মিসাইল হামলা চালাচ্ছে আমেরিকান সৈন্যরা; Image Source: Wiki Picture

২০০৩ সালের ২২ জুলাই গোপন তথ্যের ভিত্তিতে আমেরিকান বাহিনীর ১০১ এয়ার ডিভিশন এবং  ৩/৩২৭ পদাতিক ডিভিশন ঘিরে ধরে মসুলে অবস্থিত একটি বাড়িকে। তাদের কাছে তথ্য ছিল, ঐ বাড়িতে উদয় হুসাইন এবং কুশে হুসাইন অবস্থান করছেন। চার ঘন্টা রক্তক্ষয়ী অভিযান চালোনার পর মার্কিন বাহিনী বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে। বাড়িতে বসবাসরত সকল সদস্য ততক্ষণে মৃত্যুবরণ করেছে। লাশের মিছিলে খুঁজে পাওয়া যায় উদয় হুসাইন, কুশে হুসাইন এবং কুশে হুসাইনের ১৪ বছর বয়সী পুত্র মুস্তফা হুসাইনের মৃতদেহ। আমেরিকান সেনাবাহিনী পরবর্তীতে উদয় এবং কুশের ক্ষতবিক্ষত লাশের ছবি প্রকাশ করে, যা তখন সারা বিশ্বে বিতর্কের ঝড় তোলে। দুই ভাইয়ের মৃত্যুর প্রায় পাঁচ মাস পর ধরা পড়েন সাদ্দাম হুসাইন এবং এর মধ্য দিয়ে শেষ হয় প্রায় দুই যুগ ধরে চলা তার প্রবল প্রতাপশালী শাসনের।

আগামী পর্বে সাদ্দাম হুসাইনের পতন এবং শেষ পরিণতি নিয়ে আলোচনা করা হবে এবং ইতি টানা হবে সাদ্দাম হুসাইনকে নিয়ে লেখা ছয় পর্বের ধারাবাহিকের।

তথ্যসূত্র

১) The Prisoner In His Palace – Will BardenWerper

২) সাদ্দাম হোসাইন: জীবনের শেষ দিনগুলো – উইল বার্ডেনওয়ার্পার; অনুবাদ: মোয়াজ আবরার; প্রকাশনী: নবপ্রকাশ

This article is in Bangla language. It's a article about life, family, crime and relationship with father Saddam Hussein of his two son Uday Hussein and Kusay Hussein. The sources are hyperlinked in the article. Please click on the hyperlinks to check the references.

Feature Image: The Daily Mail

Related Articles

Exit mobile version