Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

শ্রীধর চিল্লাল: এক হাতে সবচেয়ে বড় নখের অধিকারী যিনি

‘গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ড’ এর অদ্ভুত সব রেকর্ডের কথা প্রায়ই শুনে থাকি আমরা। বিশ্বের অনন্য সব রেকর্ডের পাশাপাশি অনেক চমকপ্রদ এবং অদ্ভুত আচার, রীতিনীতি, কার্যকলাপ এবং বিশেষ বৈশিষ্ট্য ও স্বভাবের মানুষের সম্পর্কেও জানা যায় এখান থেকে। তেমনিভাবে শ্রীধর চিল্লাল নামে ভারতীয় অদ্ভুত এক ব্যক্তির বিচিত্র রেকর্ডের কথাও জানা গেছে। যিনি এক হাতে সবচাইতে বড় নখের অধিকারী হিসেবে গিনেস বুকে রেকর্ড গড়েছেন। পাশাপাশি সবচাইতে বেশিদিন নখ না কাটার রেকর্ডও তার। প্রায় ৬৫ বছর ধরে তিনি তার বাম হাতের নখ কাটেন না।

শ্রীধর চিল্লাল; Source: Guinness World Records

তবে বর্তমানে তিনি তার নখগুলো কাটার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। চলুন আজ শ্রীধর চিল্লালের এই নখ না কাটার ইতিহাস সম্পর্কে জানা যাক।

নখ না কাটার সিদ্ধান্ত

জীবনে নেয়া যেকোনো চ্যালেঞ্জে সফল হতে গেলে মানুষের একটি প্রেরণার প্রয়োজন পড়ে। সকল প্রকার বাধাবিপত্তির মাঝেও নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছুতে সেই প্রেরণাই মানুষকে সামনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে। শ্রীধরও নিজের হাতের নখ না কেটে রেখে দেয়ার প্রেরণা পেয়েছিলেন এবং তা পেয়েছিলেন তার শিক্ষকের কাছ থেকে!

যুবক শ্রীধর; Source: mb.ntd.tv

শ্রীধরের শিক্ষক তার হাতের নখ বড় রাখতে পছন্দ করতেন। একদিন শ্রীধরের এক বন্ধুর কারণে কোনোভাবে তার শিক্ষকের হাতের একটি নখ ভেঙ্গে যায়। যার ফলে সেই শিক্ষক শ্রীধর সহ ক্লাসের সবাইকে বেদম পিটুনি দেন। সেই ঘটনা সম্পর্কে শ্রীধর নিজেই বলেন,

“বিদ্যালয়ে পড়া অবস্থায় একদিন আমরা চরম পিটুনি খাই আমাদের শিক্ষকের হাতে, কারণ আমার বন্ধু তার হাতের নখ ভেঙে ফেলেছিল। সেই শিক্ষকের ছিল অনেক বড় বড় নখ এবং তিনি সেগুলোর খুব যত্ন নিতেন। আমরা তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম শুধু হাতের নখ ভাঙার জন্য কেন তিনি আমাদের এমনভাবে মারলেন? তিনি বলেছিলেন যে আমরা সেটি কোনোদিন বুঝবো না কারণ আমরা কখনো নখ বড় রাখিনি! নখ বড় না রাখা পর্যন্ত আমরা এটিও বুঝবো না যে শুধু নখ না ভাঙার জন্য কতখানি যত্ন করতে হয় এবং সচেতন থাকতে হয়।”

Source: st-listas.20minutos.es

শিক্ষকের সেই কথা শোনার পর শ্রীধর ও তার বন্ধুরা এটিকে একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করে এবং হাতের নখ বড় রাখার সিদ্ধান্ত নেন। তবে পরবর্তীতে শ্রীধরের অন্যান্য বন্ধুরা নিজেদের নেয়া চ্যালেঞ্জ বেশিদিন ধরে রাখতে পারেননি। শ্রীধর চিল্লালই একমাত্র ব্যক্তি যিনি সেই ১৯৫২ সালে নেয়া নিজের সেই প্রতিজ্ঞা এখনো অটুট রেখেছেন। ৬৫ বছর পার হয়ে গেছে তিনি এখন পর্যন্ত তার বাম হাতের নখ কাটেননি। অর্থাৎ তার হাতের নখেরই বয়স আমাদের অনেকের বাবা-মায়ের বয়সের থেকেও বেশি।

নখ বড় রাখার বাধা-বিপত্তি

শ্রীধরের হাতের নখের সাথে সাথে তার জীবনের সমস্যাগুলোও দিনদিন বেড়ে চলছিলো। প্রথম বাধাটি আসে তার নিজ পরিবার থেকে। তারা তাকে জোর করেছিলো হাতের নখ কেটে ফেলতে। এমনকি শ্রীধরের সেই শিক্ষকও তার এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে বলেছিলেন। কিন্তু শ্রীধর ততদিনে সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছেন যে তিনি কোনদিন আর তার নখ কাটবেন না। যার ফলে পারিবারিক ও সামাজিক বাধা-বিপত্তির পাশাপাশি তিনি চাকরি এবং বিয়ের ক্ষেত্রেও সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিলেন।

Source: ocdn.eu

এ সম্পর্কে তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেন,

“নখ যত বড় হচ্ছিলো আমার জীবনের সমস্যাও তত বেড়ে চলছিলো। আমার পরিবার কখনোই এটা মেনে নিতে পারেনি। এমনকি কেউ আমার কাপড়চোপড়ও ধুতে চাইতো না, ফলে আমাকেই কাজগুলো করা লাগতো। জীবিকা উপার্জনের জন্য আমাকে চাকরি পেতেও প্রচুর সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে, কারণ কেউই আমার মতো কাউকে তাদের অফিসে দেখতে প্রস্তুত ছিল না।

বিয়ের বয়স হবার পরেও কেউ আমাকে বিয়ে করতে চাইতো না। আমি প্রায় ১০-১২ জন পাত্রী দেখেছি। দেখা গেছে, বিয়ে করতে কখনো পাত্রী রাজি হলে তার পিতামাতা রাজি হতো না। কারণ তারা ভাবতো আমার হাতের নখ দ্বারা তাদের মেয়ে আঘাতপ্রাপ্ত হবে। আবার কোনো পাত্রীর পিতামাতা রাজি হলেও তাদের মেয়ে আমাকে নোংরা মানুষ ভেবে বিয়েতে সম্মতি দিতো না।”

শ্রীধর এবং তার স্ত্রী; Source: ndtv.co.kr

শ্রীধর নিজের বিয়ের ক্ষেত্রে এমন সমস্যার সম্মুখীন হলেও শেষ পর্যন্ত বিয়ে করতে সক্ষম হন। তার বড় ভাইয়ের শ্যালিকা তাকে বিয়ে করতে রাজি হয়। সেসময় তার বয়স হয়েছিলো ২৯। তার এই বিয়ের পর শ্রীধর পূর্বে যেসব সমালোচনা এবং উপহাসের স্বীকার হতেন তা অনেকখানিই কমে যায়। কিন্তু জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সব কাজে এই নখ তবুও তার সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। তিনি আশানুরূপ চাকরি পাননি। যেসব চাকরি পেতেন, সেখানেও বেশিদিন টিকতে পারতেন না। প্রায়ই তাকে কর্মক্ষেত্র বদলাতে হতো। তার হাতের নখ বড় রাখার জন্য সবাই তাকে বাঁকা চোখেই দেখতো। অতিরিক্ত বড় নখের কারণে তার বাম হাত একরকম অচলই হয়ে যায়। তিনি কোনো কাজেই সেই হাত ব্যবহার করতে পারেন না।

গিনেস বুকে তার নাম

সত্যতা বিচার এবং মাপজোখের কাজ নিষ্পন্ন করার জন্য ২০১৪ সালের ১৭ নভেম্বর ‘গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড’ থেকে একটি দল মহারাষ্ট্রের পুনেতে শ্রীধরের বাসায় ভ্রমণ করে।

প্রত্যেক আঙুলের দৈর্ঘ্য; Source: ntd.tv

পরিমাপ করার পর দেখা গিয়েছে শ্রীধরের বাম হাতের পাঁচ আঙুলের নখগুলোর সমষ্টিগত দৈর্ঘ্য ৯০৯.৬ সেন্টিমিটার অর্থাৎ প্রায় ১০ মিটারের কাছাকাছি। যেখানে তার বুড়ো আঙুলের নখ সবচাইতে বড়, যার দৈর্ঘ্য ২০১৫ সালের হিসেব অনুযায়ী ১৯৭.৮ সেন্টিমিটার।

মাপজোখের কাজ চলা অবস্থায়; Source: dailymail.co.uk

তার নখের এই দৈর্ঘ্য পরিমাপ করার কাজে দড়ি ব্যবহার করা হয়েছিলো, যাতে সহজে নখের সাথে দড়িটিকে গুটিয়ে নেয়া যায়। এরপর দড়িটির দৈর্ঘ্য মেপে শ্রীধরের নখগুলোর দৈর্ঘ্য বের করা হয়েছিলো।

গিনেস বুকে নাম উঠার পর থেকে তার জীবন একরকম বদলেই যায় বলা চলে। যারা তাকে সহজভাবে নিতে পারতো না, তারাই তাকে আলাদা করে সম্মান দেয়া শুরু করে। সবাই তাকে চিনতে শুরু করে সম্পূর্ণ আলাদা এক ব্যক্তিত্ব হিসেবে। শ্রীধর মনে করেন, ‘গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ড’ এ নাম ওঠা হচ্ছে তার জীবনের সবচাইতে বড় অর্জন। এই অর্জনের ফলে তিনি এতটাই জনপ্রিয়তা পান যে কোনকিছুর জন্যেই তাকে আর লাইনে দাঁড়ানো লাগে না; সবাই তাকে চেনে এবং তারাই তাকে লাইনের প্রথমে স্থান দিয়ে দেয়।

এ ব্যাপারে তিনি বলেন,

“গিনেস রেকর্ডে নাম আসার পর আমার মনে হয়েছে জীবনের সবচাইতে বড় লক্ষ্যে আমি পৌঁছুতে পেরেছি। এখন আমি যেখানেই যাই না কেন সবখানে গর্ব সহকারে আমার অর্জন সম্পর্কে বলতে পারবো, সবাই আমাকে আলাদা করে চিনবে। সেদিন সকলের চাপে যদি আমি আমার নখ কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত নিতাম, তাহলে আজ গিনেস রেকর্ডের এই ‘সবচাইতে বড় নখের অধিকারী’ উপাধিটি পেতাম না।”

বর্তমান জীবন

বর্তমানে শ্রীধরের বয়স ৮০ বছরেরও বেশি। বয়সের সাথে সাথে তার নখগুলোর অবস্থাও বেশ ভঙ্গুর। ঘুমের মাঝেও তাকে বেশ সতর্ক থাকতে হয়। তিনি বলেন, “আমি খুব একটা নড়াচড়া করতে পারি না এখন। প্রায় প্রতি আধঘণ্টা পর পর আমাকে জেগে উঠতে হয় এবং আমার হাতটি সন্তর্পণে বিছানার অপর পাশে নিতে হয়।”

শ্রীধর চিল্লালের নখ; Source: sukeindia.com

যেহেতু তিনি তার এই নখগুলোর কারণে জীবনে তেমন একটা উপার্জন করে সঞ্চয় করতে পারেননি, সেহেতু তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নিজের নখগুলো কেটে ফেলবেন। তারপর সেগুলো জাদুঘরে দিয়ে অর্জিত অর্থ ক্ষতিপূরণ হিসেবে গ্রহণ করবেন। তবে ঠিক কবে তিনি তার হাতের নখগুলো কেটে ফেলবেন, তা এখনো খোলাসা করেননি।

ফিচার ইমেজ: Guinnessworldrecords.com

Related Articles