চিকিৎসাবিজ্ঞানের যে বিস্ময়কর অগ্রগতি তা মাইক্রোবায়োলজি বা অণুজীববিজ্ঞানের হাত ধরেই এসেছে। অথচ এই অণুজীববিজ্ঞান যার হাত ধরে এসেছে সেই লিউয়েনহুককে কয়জন স্মরণ করেন আজ? যিনি ব্যাকটেরিয়া, স্পার্মাটোজোয়া, এককোষী জীবসহ আরো অনেক মৌলিক আবিষ্কার করে গেছেন তাকে নিয়ে আলোচনার অবশ্যই প্রয়োজন আছে। এই মহান জীববিজ্ঞানীকেই আজ স্মরণ করা যাক তবে।
শৈশব
অ্যান্টনি ভন লিউয়েনহুক ১৬৩২ সালের ২৪ অক্টোবর নেদারল্যান্ডের ছোট্ট শহর ডেলফটের এক দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ফিলিপ অ্যান্টনিজ ভন লিউয়েনহুক ছিলেন একজন সামান্য ঝুড়ি প্রস্তুতকারক। এই ঝুড়ি তৈরিতে সাহায্য করতেন তার স্ত্রী মার্গারেটা ডেল ভন ডেন বার্খ। তবে এই ঝুড়ি তৈরিও বেশিদিন চললো না। শিশু লিউয়েনহুকের দুঃখ-দুর্দশা বাড়িয়ে দিতেই যেন পরকালে পাড়ি জমালেন তার বাবা।
পাঁচ বছর বয়সে বাবাকে হারানোয় শিশু লিউয়েনহুকের ভবিষ্যৎ এক ঘোর সংকটের মধ্যে পড়ে। ফিলিপের মৃত্যুর কিছুদিন পরই লিউয়েনহুকের মা দ্বিতীয় বিয়ে করেন। সৎবাবাকে শিশু হুক কখনোই বাবা হিসেবে সহজভাবে মেনে নিতে পারেননি। তাই তিনি চলে গেলেন তার চাচার কাছে, যিনি পেশায় একজন আইনজীবী ছিলেন। সেখানে তিনি অল্পবিস্তর প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন। তবে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ভাগ্য তার নেহায়েত মন্দই বলা চলে। তিনি ডাচ ছাড়া আর কোনো ভাষা শিখতে পারেননি। আর তখনকার সময়ে উচ্চশিক্ষার জন্য একাধিক ভাষায় দক্ষতা থাকা অতীব জরুরি বিষয় ছিল। এর উপর তার যখন ১৬ বছর বয়স, তখন তার সৎবাবাও মারা গেলে মায়ের দেখাশোনার দায়িত্ব তার কাঁধে পড়ে। অগত্যা জীবিকার্জনে নেমে পড়তে হলো কিশোর হুককে।
আমস্টারডামে হুক
যে বছর সৎবাবা মারা গেলেন, সে বছরই জন্মস্থান ডেলফট ছেড়ে বিখ্যাত বাণিজ্যিক শহর আমস্টারডামে পাড়ি জমান লিউয়েনহুক। সেখানে তিনি একটি টেক্সটাইল বিপণিতে কাজ করা শুরু করেন। দ্রুতই তিনি বিশ্বস্ত হয়ে ওঠেন এবং এজন্য তাকে ক্যাশিয়ার পদে উন্নীত করা হয়। ১৬৫৪ সালে তিনি এই টেক্সটাইল বিপণিতে কাজ ছেড়ে দেন এবং ডেলফট ফিরে যান। আর এই ফিরে যাওয়াই তার প্রথম এবং শেষ ফিরে যাওয়া। কারণ বাকি জীবনটা তিনি ডেলফটেই কাটিয়ে দেন।
আমস্টারডাম থেকে রপ্ত করা ব্যবসায়িক দক্ষতা কাজে লাগালেন লিউয়েনহুক। তিনি নিজ শহর ডেলফটে নিজের টেক্সটাইল বিপণি খুলে বসলেন। কাপড় ছাড়াও তিনি বোতাম, চেইন, ফিতাসহ আরো অনেক আনুষঙ্গিক জিনিস বিক্রয় শুরু করেন। একই বছর বারবারা ডি মে-কে বিয়ে করেন হুক। বারবারার সাথে ১২ বছরের দাম্পত্য জীবনে তিনি ৫ সন্তানের পিতা হন, যাদের মধ্যে কেবল এক মেয়ে মেরিই বেঁচে ছিল। বাকিরা শৈশবেই মারা যায়। ১৬৬৬ সালে যখন বারবারা মারা যান, তখন হুক কর্নেলিয়াকে বিয়ে করেন। দ্বিতীয় স্ত্রীর ঘরে তার আর কোনো সন্তান হয়নি। ১৬৯৩ সালে কর্নেলিয়া মারা গেলে বাকি জীবনটা একাই কাটিয়েছিলেন হুক।
এবার হুকের ভাগ্যের চাকা ঘুরতে শুরু করলো। তার টেক্সটাইল ব্যবসা সফল হলো। কালক্রমে তিনি ডেলফটের বেশ প্রভাবশালী এবং পরিচিত ব্যক্তিত্বে পরিণত হলেন। ডেলফট কাউন্সিলের ‘মিটিং হল’ পরিচালনার সম্মানজনক দায়িত্ব তাকে দেয়া হলো। এই চাকরি থেকে তিনি বেশ ভালো বেতন পেতেন। এর বাইরেও তিনি ডেলফটের ওয়াইন ব্যবসায়ী সমিতির সুপারভাইজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন যার কাজ ছিল আমদানিকৃত ওয়াইনের উপর কর বসানো।
এভাবে ব্যবসায়িক কাজকর্ম আর শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হয়েই লিউয়েনহুকের জীবনের ৪০ বছর কেটে যায় কোনোরকম বৈজ্ঞানিক কাজ ছাড়াই। একটু খটকা লাগছে কি পাঠক? কোনো বিজ্ঞানীর জীবনী পড়তে গিয়ে ভুল করে কার জীবনী পড়ছেন? যে ব্যক্তি প্রাথমিক শিক্ষার পরই আর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সুযোগ পাননি, ব্যবসা বাণিজ্য আর শহুরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ কাজ তদারকি করাই যার কাজ, তিনি ব্যক্তি আবার জীববিজ্ঞানী হন কী করে?
বিজ্ঞানী হবার পথে যাত্রা গ্লাস: পার্ল ও মাইক্রোগ্রাফিয়া
লিউয়েনহুকের বৈজ্ঞানিক সাফল্য অনেকাংশেই তার উচ্চ ক্ষমতার লেন্স তৈরির উপর ভিত্তি করে। তবে তার এই লেন্স তৈরির ব্যাপারটি বেশ মজাদার। কেননা তিনি আমৃত্যু তার লেন্স তৈরির প্রকৃত উপায়টি কাউকে বলে যাননি। বললে যদি তার প্রতিযোগীরা তার চেয়ে এগিয়ে যায়! আরো মজার ব্যাপার হলো তিনি লেন্স তৈরির প্রথম ধাপ হিসেবে একবার একটি পদ্ধতির কথা সবাইকে জানিয়েছিলেন। সেই প্রক্রিয়া অনুসরণ করে অনেকেই লেন্স তৈরি করতে গিয়ে ব্যর্থ হন। পরে জানা যায় হুকের বর্ণিত সেই পদ্ধতিটি একেবারেই বানোয়াট, যা হুক তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের বোকা বানানোর জন্যই প্রকাশ করেছিলেন!
তখনকার সময়ে পোশাক শিল্পে ‘গ্লাস পার্ল’ নামক একপ্রকার সাধারণ কাঁচের লেন্স ব্যবহার করা হতো যার সাহায্যে পোশাকের গুণগত মান সহজে নির্ধারণ করা যেতো। হুক সেসব গ্লাস পার্ল নিয়ে কিছুদিন গবেষণা করেন এবং কিছুটা উন্নতি করতে সক্ষম হন। ধারণা করা হয়, এই কাজের সময়ই হুক লেন্স তৈরির প্রতি আগ্রহী হন। অন্যদিকে ১৬৬৮ সালে লিউয়েনহুক ইংল্যান্ড ভ্রমণ করেন। তখন পুরো ইংল্যান্ড জুড়ে রবার্ট হুকের ‘মাইক্রোগ্রাফিয়া’ (১৬৬৫) বইটি বেশ সাড়া ফেলেছিল। মাইক্রোগ্রাফিয়াকে বিজ্ঞানের ইতিহাসে মোড় ঘুরিয়ে দেয়া কয়েকটি বইয়ের একটি ধরা হয়। লিউয়েনহুক এই বইয়ের এক কপি নিয়ে দেশে ফিরলেন। যেহেতু হুকের ইংরেজি ভাষায় দখল ছিল না বললেই চলে, তাই তিনি মাইক্রোগ্রাফিয়া আদতে কতটুকু পড়তে পেরেছিলেন তা ভাববার বিষয়। তবে এই বইটি তার উপকারে লেগেছিল এর মধ্যে রবার্ট হুকের আঁকা চিত্রগুলোর জন্য।
লেন্স তৈরি
যদিও লিউয়েনহুক আমৃত্যু নিজের লেন্স তৈরির পদ্ধতি গোপন রেখেছিলেন, তথাপি আজকের আধুনিক প্রযুক্তির যুগে উদ্ভাবকরা তার লেন্স তৈরির পদ্ধতি উন্মোচন করে ফেলেছেন। হুক আজীবন ছোট গোলকাকার লেন্স ব্যবহার করেছেন। এই লেন্স তৈরির জন্য তিনি প্রথমেই একটি কাঁচের দন্ডের ঠিক মধ্যভাগ উত্তপ্ত করতেন। যখন কাঁচ নরম হয়ে গলতে শুরু করতো তিনি ধীরে ধীরে দন্ডটির দুই প্রান্ত পরস্পর বিপরীত দিকে টেনে গলিত কাঁচের লম্বা চিকন সুতা তৈরি করতেন। তিনি ততক্ষণ দন্ডের দুই প্রান্ত প্রসারিত করতেন যতক্ষণ না চিকন হতে হতে কাঁচের দন্ডটি মাঝখান থেকে ভেঙে যেত বা (গলিত কাঁচের সুতা) ছিঁড়ে যেতো। এরপর সেই সুতার চিকন অগ্রভাগ আবার আগুনের শিখার উপর ধরলে ঐ সুতার অগ্রভাগে ক্ষুদ্র কাঁচের গোলক সৃষ্টি হয়। গোলকটি যত ছোট হতো, এর বিবর্ধন ক্ষমতা তত বেশি হতো। প্রাথমিকভাবে এই লেন্স তিনি তার টেক্সটাইল ব্যবসার উদ্দেশ্যে তৈরি করছিলেন। কিন্তু ধীরে ধীরে (সম্ভবত মাইক্রোগ্রাফিয়া থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে) তিনি এই লেন্স দিয়ে প্রাণ প্রকৃতিকে আরো কাছে থেকে দেখার প্রতি আকৃষ্ট হন।
লিউয়েনহুকের মাইক্রোস্কোপ
ব্রিটিশ বিজ্ঞানী রবার্ট হুকের কম্পাউন্ড মাইক্রোস্কোপ যেখানে ৪০ থেকে ৫০ গুণ বিবর্ধনে সক্ষম ছিল, সেখানে লিউয়েনহুকের তৈরি ছোট গোলক লেন্স দিয়ে তৈরি মাইক্রোস্কোপ প্রায় ২০০ থেকে ৩০০ গুণ বিবর্ধনে সক্ষম ছিল! তৎকালীন পরিপ্রেক্ষিতে এই মাইক্রোস্কোপ ছিল অস্বাভাবিকভাবে অগ্রসর, যা দিয়ে ১.৩৫ মাইক্রোমিটার আকারের ক্ষুদ্র বস্তুও দেখা যেত স্পষ্ট, যেখানে মানুষের দেহের রক্তকণিকার আকৃতি ৬-৮ মাইক্রোমিটার! তার এই অণুবীক্ষণ যন্ত্রের আরো একটি বিশেষত্ব হচ্ছে, এটি সর্বদাই একক লেন্সের ছিল। একাধিক লেন্স ব্যবহারের কথা হুক কখনো ভাবতেই পারেননি।
হুকের অনুপম নমুনা বিশ্লেষণ
লিউয়েনহুক তার জীবনে ৫০০ এর অধিক অণুবীক্ষণ যন্ত্র তৈরি করেছিলেন। এগুলোর কোনোটিই আজকের মাইক্রোস্কোপের সাথে তুলনীয় নয়। তথাপি আমাদের জন্য আরেকটি বিস্ময় জাগানো ব্যাপার হচ্ছে তার অণুবীক্ষণ যন্ত্রে আলোক সৃষ্টির কোনো উৎস নেই। অথচ এই মাইক্রোস্কোপের দ্বারা তিনি মানবজগতের কাছে উন্মোচিত করেছেন অণুজীবদের এক অচেনা, অজানা, বিশাল জগত!
নমুনা পরীক্ষার ক্ষেত্রে লিউয়েনহুক এতটাই এগিয়ে গিয়েছিলেন যে তার মৃত্যুর প্রায় একশ বছর পর্যন্ত আর কোনো জীববিজ্ঞানী এর বাইরে কোনো কিছু নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা বা পর্যবেক্ষণ করেননি। এক ফোঁটা রক্ত কিংবা ডোবার জল, ক্ষুদ্র কীটপতঙ্গের নিখুঁতভাবে কাটা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, পেশি আর গাছগাছালির ছাল। এসব নমুনা অণুবীক্ষণ যন্ত্রে স্থাপন করার আগে তিনি এগুলো এত সূক্ষ্মভাবে কাটতেন যে এগুলোর মধ্য দিয়ে আলো চলাচল করতে পারতো। ফলে এদের ভেতরের গঠনও স্পষ্টভাবে ভেসে উঠতো তার চোখে।
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হুক তার জীবনে বিজ্ঞান বিষয়ক পড়ালেখাও খুব একটা করেননি। তথাপি তার অর্জন অভাবনীয়। তার পর্যবেক্ষণ এতটাই মানসম্মত ছিল যে তৎকালীন বিজ্ঞানী সমাজ সেগুলো নিয়ে কোনোরকম প্রশ্ন তোলার সুযোগ পায়নি। তিনি পত্র মারফত নিজের পর্যবেক্ষণের ব্যাখ্যা ও চিত্র লন্ডনের রয়্যাল সোসাইটিতে প্রেরণ করতেন এবং রয়্যাল সোসাইটির বিজ্ঞানীরা সেগুলো দেখে বিস্ময়ে বিস্ময়াভিভূত হতেন। রয়্যাল সোসাইটির জার্নাল ‘ফিলোসফিক্যাল ট্রানজেকশনস’-এ সেগুলো প্রকাশিত হতো।
এককোষী জীব
জীববিজ্ঞানের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে শ্রেণিবিন্যাস। যারা শ্রেণিবিন্যাস পড়েছেন, তারা অবশ্যই প্রটিস্টা জগতের অন্তর্ভুক্ত এককোষী জীব নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। এই এককোষী জীবের বিশাল জগত যার হাত ধরে উন্মোচিত হয়, তিনিই লিউয়েনহুক। ১৬৭৪ সালে হুকের এই আবিষ্কারকে তার জীবনের শ্রেষ্ঠ আবিষ্কার বলে গণ্য করা হয়। তবে প্রাথমিকভাবে জীববিজ্ঞানীদের অনেকেই তার এই আবিষ্কার অস্বীকার করেন। ৩ বছর পর ব্রিটিশ বিজ্ঞানী রবার্ট হুক সেগুলো যাচাই করার পরই লিউয়েনহুকের আবিষ্কার স্বীকৃত হয়।
লোহিত রক্তকণিকা
লোহিত রক্তকণিকার আবিষ্কারক হিসেবে লিউয়েনহুকের নাম স্মরণ করে থাকেন অধিকাংশ মানুষ। কিন্তু লোহিত রক্তকণিকা আসলে আবিষ্কার করেন জেন সোয়ামার্ডাম। ১৬৬৮ সালে সোয়ামার্ডামের লোহিত রক্তকণিকা আবিষ্কারের ছয় বছর পর ১৬৭৪ সালে লোহিত রক্তকণিকা পর্যবেক্ষণ করেন লিউয়েনহুক। কিন্তু সোয়ামার্ডামের চেয়ে হুকের পর্যবেক্ষণ ছিল অনেক বেশি স্পষ্ট এবং বর্ণনা অধিক তথ্যবহুল। তবে তিনিই প্রথম ব্যক্তি হিসেবে লোহিত রক্তকণিকার আকৃতি সঠিকভাবে বর্ণনা করেন।
ব্যাকটেরিয়া
১৬৭৬ সালে লিউয়েনহুক আরো একটি যুগান্তকারী আবিষ্কার করেন। তিনি ডোবার পানিতে ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি লক্ষ্য করেন। ব্যাকটেরিয়া এতই ক্ষুদ্র যে তা খালি চোখে দেখা যায় না। তিনি অনুমান করলেন যে একটি বালুর কণার সমআয়তন জায়গা পূরণ করতে ১০ হাজারের অধিক ব্যাকটেরিয়ার প্রয়োজন হবে।
আরো কিছু আবিষ্কার
১৬৭৭ সালে লিউয়েনহুক আবিষ্কার করেন স্পার্মাটোজোয়া তথা শুক্রাণু। এই আবিষ্কারের ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেন যে শুক্রাণু যখন ডিম্বাণুতে প্রবেশ করে, তখনই নিষেক ঘটে। ১৬৮৩ সালে লিউয়েনহুক আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার করেন। তিনি একপ্রকার সাদা তরল বিশিষ্ট সূক্ষ্ম কৈশিক নালী আবিষ্কার করেন, যাকে আমরা এখন লসিকানালী বলে চিনি।
এসবের বাইরেও তিনি শূককীট এবং মাছির জীবনচক্র পর্যবেক্ষণ করেন। পার্থেনোজেনেসিস পর্যবেক্ষণকারী প্রথম ব্যক্তিও লিউয়েনহুক। এমনকি উইলিয়াম হার্ভের আবিষ্কৃত রক্ত সঞ্চালন নিয়েও তিনি পর্যবেক্ষণ করেন। লসিকানালী দিয়ে লসিকার প্রবাহ লক্ষ্য করে তিনি হার্ভের পর্যবেক্ষণ সঠিক বলে সিদ্ধান্ত জানান।
মৃত্যু
অ্যান্টনি ভন লিউয়েনহুক ২৬ আগস্ট, ১৭২৩ সালে ৯০ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। তাকে ডেলফটের ‘ওল্ড চার্চ’ কবরস্থানে সমাধিস্থ করা হয়।
লিউয়েনহুকের জীবন ছিল চক্রাকার। একটি বিজ্ঞানমনস্ক ঐতিহ্যের পরিবারে জন্মগ্রহণ করেও তিনি বিজ্ঞান নিয়ে কোনো পড়ালেখাই করতে পারেননি। অর্জন হয়নি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাও। অথচ মৃত্যুর সময় তিনি ছিলেন পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ জীববিজ্ঞানী, যিনি অনেকগুলো মৌলিক আবিষ্কার করে গেছেন। রবার্ট হুকের কোষ আবিষ্কারের ধারাবাহিকতায় লিউয়েনহুকের বৈজ্ঞানিক কর্মকান্ড বিজ্ঞানের এক নতুন দুয়ার খুলে দিয়ে যায়, যার নাম ‘মাইক্রোবায়োলজি’ বা অণুজীববিজ্ঞান। তাই মাইক্রোবায়োলজির জনক হিসেবে তার অবদান ইতিহাসের পাতায় অম্লান হয়ে থাকবে।
Feature Image Source: madnic.ir