Fortune favors the brave.
– Pliny the Elder
প্রায় দুই হাজার বছর আগের কথা। খ্রিস্টপূর্ব ৭৯ শতকের ২৪ আগস্ট। রোমান সাম্রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলে, ইতালিতে অবস্থিত এক পাহাড়ের নাম ভিসুবিয়াস। সে পাহাড়ের চূড়া সেদিন প্রচণ্ড শব্দে বিদীর্ণ হয়, বিস্ফোরিত হয়। ধরণী কেঁপে ওঠে সে বিস্ফোরণে। ভূপৃষ্ঠ যেন উন্মত্ত ক্রোধে অগ্ন্যুৎপাতরূপে উগড়ে দেয় তার ভেতরকার সব জ্বালা! পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত পম্পেই আর হারকিউলেনিয়াম শহরের মানুষজন তখন যে যেদিকে পারে ছুটছে। এই প্রলয়ে যে শহর ধ্বংস হতে চলেছে তা নিশ্চিত। বাইরে থেকে তাদেরকে সাহায্য করতে আসবে, এ সাহসও কারো হচ্ছিল না। কিন্তু একজন ঠিকই এগিয়ে এলেন। একটি শহরকে চোখের সামনে অগ্ন্যুৎপাতে ধ্বংস হতে দেখে তার জাহাজের নাবিকরা যখন তাকে জাহাজ ঘুরিয়ে নেয়ার জন্য অনুরোধ করলো, তখন তার বজ্রকন্ঠে উচ্চারিত হয় উপরের চিরঅম্লান উক্তিটি। সে উক্তি যেন হাজার বছর পর এখনো মানুষের কানে বাজে! তিনি প্লিনি দ্য এল্ডার।
২৩ খ্রিস্টাব্দের শেষ দিকে অথবা ২৪ খ্রিস্টাব্দের শুরুর দিকে প্রাচীন রোমান সাম্রাজ্যের গল প্রদেশের নোভাম কোমাম শহরে জন্মগ্রহণ করেন গাইয়াস প্লিনিয়াস সেকান্দাস তথা ‘প্লিনি দ্য এল্ডার’। তার জন্ম এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে, যাদের সম্মান মধ্যযুগের নাইটদের সমমানের ছিল। পদমর্যাদায় প্লিনির পরিবার ছিল দ্বিতীয় সারির, যা ‘ইকুয়েস্ট্রিয়ানস’ নামে পরিচিত ছিল। ইকুয়েস্ট্রিয়ানরাই সাধারণত সামরিক বাহিনীর প্রধান পদগুলো অলঙ্কৃত করতো। সমাজের প্রচলিত ধারা অনুযায়ী তাই প্লিনিও কৈশোরে সামরিক কলাকৌশল রপ্ত করেন। এই সামরিক শিক্ষার জন্য তিনি বেশ কয়েক বছর রোমে বসবাস করেছিলেন। এ সূত্রেই রোমান সাম্রাজ্যের ইতিহাসে সবচেয়ে কুখ্যাত সম্রাট ক্যালিগুলার স্বৈরাচারী শাসন কাছে থেকে দেখার সুযোগ হয় তার।
সামরিক বাহিনীতে থাকাকালীনই প্লিনি সাহিত্যানুরাগী হয়ে ওঠেন। তবে তার সাহিত্যানুরাগ সৈন্য থাকাকালীন জন্মায়নি। রোমে সামরিক শিক্ষা গ্রহণকালে তার সামরিক কৌশলগত দক্ষতার সুনাম ছড়িয়ে পড়ে রোমান বাহিনীর মাঝে। ২৪ বছর বয়সেই তিনি হয়ে ওঠেন দক্ষ, উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা। বিশাল এক অশ্বারোহী বাহিনীর কমান্ডার পদে নিযুক্ত হন তিনি। সে সময় তার বন্ধুত্ব হয় ভেসপাসিয়ান নামক আরেকজন কমান্ডারের সাথে। এই ভেসপাসিয়ানই পরবর্তীতে রোমান সাম্রাজ্যের সম্রাট হয়েছিলেন। যা হোক, কমান্ডার নিযুক্ত হবার পর তার অবসর সময় বেড়ে গেলে তিনি সাহিত্যচর্চা শুরু করেন। বর্শা চালনার কৌশলের উপর ‘ডি জ্যাকুলেশন ইকুয়েস্ট্রি’ নামক একটি বই লেখেন প্লিনি। বইটির সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে জার্মানিতে নিজের যুদ্ধের অভিজ্ঞতা নিয়ে ২০ খণ্ডের বই ‘ওয়্যারস ইন জার্মানি’ রচনা করেন তিনি।
জার্মানিতে প্রায় দশ বছর অবস্থানের পর ৫৯ খ্রিস্টাব্দে রোমে ফিরে আসেন প্লিনি। তখন রোমের মসনদে বসে আছেন কুখ্যাত সম্রাট নিরো। প্রথমে নিরোর বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হবার চেষ্টা করেও পরে সামরিক বাহিনী থেকে অবসর নিয়ে গা ঢাকা দেন প্লিনি। তার ভাগ্য খুলতে লেগে যায় ১০ বছর। ৬৮ খ্রিস্টাব্দে নিরো মৃত্যুবরণ করলে ক্ষমতায় বসেন ভেসপাসিয়ান, যিনি সামরিক বাহিনীতে থাকাকালীন প্লিনির খুবই কাছের বন্ধু ছিলেন। ভেসপাসিয়ান প্লিনিকে নিজের প্রধান উপদেষ্টা পদে বসিয়ে দিলেন। কয়েক বছর পর উপদেষ্টার কাজ করে গভর্নরের দায়িত্বও পালন করেন প্লিনি। তিনি গভর্নর থাকাকালীন রোমান সাম্রাজ্যের বিভিন্ন প্রদেশে অবকাঠামোগত প্রভূত উন্নয়ন করেন।
প্লিনি বই লেখা শুরু করলেই তা মহাভারতের আকার ধারণ করতো। ইতোপূর্বেই ২০ খণ্ডের একটি দীর্ঘ বই রচনার পর, ৭৭ খ্রিস্টাব্দে প্লিনি প্রকাশ করেন তার জীবনের শ্রেষ্ঠতম কাজ ‘ন্যাচারালিস হিস্টোরিয়া’ বা ‘ন্যাচারাল হিস্ট্রি’। ভেসপাসিয়ানের ছেলে টিটাসকে উৎসর্গ করা ৩৭ খণ্ডের এই বইয়ে রয়েছে ১০ লক্ষাধিক শব্দ! এ তো মহাভারতই বটে! আধুনিককালে একে বলা হচ্ছে পৃথিবীর প্রথম ‘এনসাইক্লোপিডিয়া’ বা বিশ্বকোষ। প্রাচীন রোমান সাম্রাজ্যের ইতিহাস সম্বন্ধীয় একটি বাস্তবসম্মত বই এই ন্যাচারাল হিস্ট্রি। আশ্চর্যজনকভাবে এই বইটির একটি অক্ষরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি! ১০ লক্ষাধিক শব্দের এই মহাগ্রন্থ একেবারে সমূলে অক্ষত রয়েছে! আধুনিককাল পর্যন্ত টিকে থাকা প্রাচীন বইগুলোর মধ্যে ন্যাচারাল হিস্ট্রিই একমাত্র বই যা বিস্ময়করভাবে টিকে আছে সম্পূর্ণ অক্ষত অবস্থায়।
আধুনিক ইতিহাসবিদদের নিকট মহামূল্যবান সম্পদ বলে বিবেচিত ন্যাচারাল হিস্ট্রির পেছনে আছে প্লিনি এবং তার দুই সহকারীর বেশ কয়েক বছরের শ্রম। সহকারীদের একজনের কাজ ছিল প্রাচীন বিখ্যাত সব পণ্ডিত, যেমন- অ্যারিস্টটল, হিপারকাস, এরাটোস্থেনিসের বই উচ্চস্বরে পাঠ করা। প্লিনি সেগুলো মনোযোগ সহকারে শুনতেন এবং সেগুলোর নির্যাসটা নিজের মতো করে গুছিয়ে বলতেন। তার মুখের কথাগুলোই লিখে রাখতো দ্বিতীয় সহকারী, যা পরে বই আকারে প্রকাশিত হয়। এই বইয়ে প্লিনির নির্মোহ, নিরাবেগ বর্ণনায় অবশ্য রোমানরা সন্তুষ্ট হতে পারেনি। কারণ, ন্যাচারাল হিস্ট্রিতে উল্লিখিত ৭০ ভাগ উদ্ধৃতিই গ্রিকদের থেকে নেয়া। অথচ রোমানরা নিজেদেরকে সকলের চেয়ে সেরা এবং অভিজাত বলে মনে করতো।
“বেঁচে থাকতে হলে আপনাকে জেগে থাকতে হবে”- প্লিনি দ্য এল্ডার
প্রচণ্ড পরিশ্রম করতে পারার জন্য প্রসিদ্ধ ছিলেন প্লিনি। সময়ের অপচয় তিনি একদমই অপছন্দ করতেন। ঘুমকে তিনি মনে করতেন সময়ের সবচেয়ে বড় অপচয়! দিনভর সরকারি কাজকর্ম সেরে রাত জেগে লেখালেখি করতেন তিনি। রাতের শেষ প্রহরে কয়েক ঘন্টা ঘুমিয়েই পরবর্তী দিনের কর্মযজ্ঞ শুরু করতেন। তাছাড়া খাওয়া কিংবা ভ্রমণের মতো ব্যাপারগুলোকেও অনুৎপাদনশীল মনে করতেন প্লিনি। কথিত আছে, তিনি অন্যের হাতে খেতেন যেন খাওয়ার সময়ও লিখে যেতে পারেন!
“আমার বইয়ের ৩৭ খণ্ডে ২০ হাজারের বেশি বিষয় আলোচনা করেছি। এই আলোচনা করতে গিয়ে আমাকে ১০০ জন সুবিখ্যাত পণ্ডিতের ২ হাজারের অধিক লেখা পড়তে হয়েছে।”- প্লিনি
প্লিনির ন্যাচারাল হিস্ট্রিকে অনেকে পৃথিবীর প্রথম গবেষণাগ্রন্থও বলে থাকেন। তিনি লেখা চৌর্যবৃত্তিকে অত্যন্ত ঘৃণা করতেন এবং খুব সাবধানে সবকিছুর উদ্ধৃতি উল্লেখ করতেন। তার সমসাময়িক লেখকদের তিনি ব্যাপক সমালোচনা করেছেন প্রাচীন পণ্ডিতদের লেখা চুরির জন্য। তিনি স্রোতের বিপরীতে গিয়ে প্রতিটি লেখার সঠিক উৎস উল্লেখ করে দিতেন। উপরন্তু এই পরিশ্রমসাধ্য কাজ তিনি অর্থের জন্য করতেন না মোটেই। তার প্রধান উদ্দেশ্যই ছিল ভবিষ্যতের জন্য প্রামাণিক তথ্য রেখে যাওয়া। তাছাড়া সে সময় কপিরাইট বলতে কিছু ছিল না। ছিল না কোনো ছাপাখানা। প্রতিটি বইয়ের অনুলিপি প্রকাশ করতে হতো হাতে লিখে। তাই, যেকোনো লেখকই অর্থ উপার্জনের উদ্দেশ্যে প্লিনির বই লিখে বিক্রি করতে পারতো, প্লিনির তা থেকে কোনো উপার্জন হতো না।
প্লিনির ন্যাচারাল হিস্ট্রি পৃথিবীর প্রথম বিশ্বকোষ ছিল। এই মহাগ্রন্থে কোনো একক বিষয়ে আলোচনা করেননি প্লিনি। কিংবা কোনো নির্দিষ্ট বিষয়েরও বলা যাবে না এই গ্রন্থকে। জ্যোতির্বিজ্ঞান, নৃতত্ত্ব, উদ্যানবিজ্ঞান, ভূতত্ত্ব, উদ্ভিদবিজ্ঞান, চিকিৎসাশাস্ত্র, কৃষি, রসায়ন, পদার্থবিজ্ঞান, প্রাণীবিজ্ঞান, সামাজিকবিজ্ঞান, অর্থনীতি, দর্শন, সঙ্গীত, অধিবিদ্যা সহ জ্ঞানের প্রায় সকল শাখারই আলোচনা রয়েছে ন্যাচারাল হিস্ট্রিতে। তবে উৎকৃষ্ট তথ্য আর জ্ঞানের পাশাপাশি ন্যাচারাল হিস্ট্রি অসংখ্য অমূলক তথ্য আর প্রাচীন গ্রীক বিজ্ঞানের ভুলভাল ব্যাখ্যায়ও ভরপুর। তার সেসব সত্য/মিথ্যার কিছু নমুনা সংক্ষেপে দেখে নেয়া যাক।
- পৃথিবীর বাইরে, চাঁদ এবং সূর্যের পর উজ্জ্বলতম স্বর্গীয় বস্তু (গ্রহ, নক্ষত্র ইত্যাদি) হচ্ছে শুক্র গ্রহ। চাঁদ এবং সূর্য ছাড়া একমাত্র শুক্রই পৃথিবীতে কোনো বস্তুর ছায়া সৃষ্টি করতে সক্ষম। তার এই তথ্য সম্পূর্ণ সঠিক।
- দিন রাতের দৈর্ঘ্য সম্পর্কে প্লিনি কিছু চমৎকার তথ্য দিয়েছেন। তাছাড়া তিনি ‘থুলা’ নামক একটি স্থানে ভ্রমণের কথা উল্লেখ করেছেন যেখানে বছরের ছয় মাস রাত আর ছয় মাস দিন থাকে। আধুনিককালের ইতিহাসবিদগণ মনে করেন, প্লিনি নরওয়ের আশেপাশেই কোথাও ভ্রমণ করেছিলেন।
- ১৭ শতকে বসে গ্যালিলিও জোয়ার-ভাটার কারণ হিসেবে পৃথিবীর আবর্তনের কথা উল্লেখ করেছিলেন। অথচ তার প্রায় ১৭শ বছর পূর্বেই প্লিনি জোয়ার-ভাটার জন্য চাঁদ এবং সূর্যকে দায়ী করেছিলেন!
- প্রামাণ্য তথ্যের সাথে উত্তেজনাপূর্ণ শ্রুতিকথা, পুরাকথা আর রহস্যময় তথ্য উল্লেখ করতেও কার্পণ্য করেননি প্লিনি। তিনি ব্লেমিয়া নামক একটি সম্প্রদায়ের কথা উল্লেখ করেন যাদের মাথা বলতে কিছু ছিল না এবং চোখ আর মুখ বসানো ছিল বুকে! তাছাড়া তিনি ‘অ্যাজিপানি’ নামক আরেকটি সম্প্রদায়ের কথা উল্লেখ করেন যারা কিনা অর্ধেক মানুষ, অর্ধেক পশু।
- প্রতিটি প্রাণীরই মৃত্যুর পর ওজন বেড়ে যায় বলে উল্লেখ করেন প্লিনি, যা বিজ্ঞানসম্মত।
- দীর্ঘদিনের সমুদ্রভ্রমণে লবণমুক্ত বিশুদ্ধ পানি পাবার উপায় বের করেন প্লিনি। জাহাজের চারধারে ভেড়ার লোম ছড়িয়ে রাখতে হবে। সেগুলো সমুদ্রের বাষ্পনির্গমনে/কুয়াশায় আর্দ্র হবে ধীরে ধীরে। সম্পূর্ণ সিক্ত হলে সেগুলো নিংড়ে নিলেই পাওয়া যাবে লবণমুক্ত পানি!
অসংখ্যা ভুল তথ্য থাকার পরও প্লিনির ন্যাচারাল হিস্ট্রি ইতিহাসের এক অমূল্য রত্ন বলেই বিবেচিত হবে। কারণ এই বই দ্বারাই প্লিনি প্রথম বিশ্বকোষের ধারণার প্রবর্তন করেন, লেখালেখির নৈতিকতা ও উদ্ধৃতি প্রদানের বিষয়টি সামনে নিয়ে আসেন। তাছাড়া কিছু বৈজ্ঞানিক ভুল থাকলেও, তৎকালীন রোমান সাম্রাজ্যের অকাট্য সামাজিক বিবরণ পাওয়া যায় তার এই বইয়ে। আর তার উল্লেখ করা রোমান অবকাঠামো এবং নির্মাণশৈলির বিবরণ তো আজকের যুগের প্রত্মতাত্ত্বিক এবং ইতিহাসবিদগণের জন্য মহামূল্যবান দলিল। প্লিনি বিয়ে করাকে অনুৎপাদনশীল হওয়ারই নামান্তর মনে করতেন। তাই তিনি বিয়ে করেননি। তার সকল অর্থ-সম্পত্তি তিনি তার ভ্রাতুষ্পুত্র ‘প্লিনি দ্য ইয়াঙ্গার’ এর নামে লিখে দেন।
“ভাগ্য সাহসীদের সহায়তা করে”, নিজের জাহাজের নাবিকদের এ কথা বলে তীরে নেমে পড়েন প্লিনি। নেমেই বন্ধু পম্পোনিয়াসকে পেয়ে গেলেও খুঁজে পেলেন না বান্ধবী রেকটিনাকে। সকলের নিষেধ সত্ত্বেও তিনি লোকালয়ের দিকে এগোলেন। এরপর কি হয়েছিল তা জানা যায় না। অগ্ন্যুৎপাতে ধ্বংস হয় পম্পেই এবং হারকিউলেনিয়াম শহর। তিনদিন পর লাভা ঠাণ্ডা হয়ে জমে গেলে প্লিনির অনুসারীরা তাকে খুঁজতে বের হয়। জমাট লাভার উপর প্লিনির নিথর দেহ খুঁজে পাওয়া যায়। আশ্চর্যজনকভাবে তিনি ছিলেন অক্ষত! এতে এটা নিশ্চিত হয়ে যায় যে তিনি সরাসরি অগ্ন্যুৎপাতের জন্য মারা জাননি। তবে তার মৃত্যুর সঠিক কারণও জানার কোনো উপায় ছিল না। মৃত্যুর সময় প্লিনির বয়স ছিল ৫৫ বছর। বন্ধুর জন্য জীবন দিয়ে পৃথিবীর ইতিহাসে চিরস্মরণীয় ধ্রুপদী এক বন্ধুত্বের কথাই লিখে গেছেন প্লিনি দ্য এল্ডার।
ফিচার ছবি: thebacklabel