Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

তারেক মাসুদের অনন্য এক প্রামাণ্যচিত্র ‘আদম সুরত’

তারেক মাসুদ বাংলাদেশের একজন গুণী চলচিত্র পরিচালক। নির্মাণ করেছেন মাটির ময়না, রানওয়ে, মুক্তির গান-এর মতো অনন্য সব চলচ্চিত্র। তার আরো একটি অসাধারণ কাজ হলো চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের উপর প্রামাণ্যচিত্র আদম সুরত। আদম সুরত ছিল তারেক মাসুদের প্রথম কাজ। এটি তৈরির পর মানুষ ও পরিচালক হিসেবে আরো পরিণত হয়ে উঠেন তিনি।

এই প্রামাণ্যচিত্রটি নির্মিত হয়েছে চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানকে নিয়ে। এস এম সুলতান ছিলেন বাংলার এক বিখ্যাত চিত্রশিল্পী। তিনি শুধু দেশে নয়, সারা বিশ্বে পরিচিত ছিলেন। ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়য়ের বায়োগ্রাফিকাল সেন্টার সুলতানকে ‘ম্যান অব এচিভমেন্ট’ সম্মাননায় ভূষিত করে। তার আঁকা ছবি স্থান পেয়েছে পিকাসো, সালভাদর দালির মতো শিল্পীদের সাথে একই প্রদর্শনীতে। তিনি শুধুই যে চিত্রশিল্পী ছিলেন তা নয়, অদ্ভুত ছিল তার জীবন ধারণের উপায়। নিজের শিল্পের প্রতি সৎ থাকার জন্য ছেড়েছেন আরাম, আয়েশ ও বিলাস। জীবনে কখনো বিয়ে করেননি তিনি। এই অসামান্য মানুষটির সঙ্গ পেয়ে তারেক মাসুদের নিজের জীবনবোধও পাল্টে গিয়েছিল।

‘আদম সুরত’ এর পোস্টার; Source: Bdnews24

‘আদমের সুরত’ তৈরির পেছনের গল্প

সুলতানের জন্ম নড়াইলে। নড়াইলে রয়েছে খরস্রোতা অপরূপ নদী চিত্রা। চিত্রার সাথে সুলতানের জীবন অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। তাই তারেক মাসুদ প্রামাণ্য চিত্রটি শুরু করেছেন চিত্রার ভোর দিয়ে, আর শেষ করেছেন চিত্রার পড়ন্ত বিকেল দিয়ে। তারেকের মতে, প্রামাণ্যচিত্রে একধরনের দিবা-রাত্রি চক্র আছে। ‘আদম সুরত’ হলো আকাশের একটি তারামণ্ডল, যাকে আমরা কালপুরুষ হিসেবে চিনি। এই কালপুরুষ দেখে নাবিকেরা তাদের পথ ঠিক করে। তারেক মাসুদ প্রামাণ্যচিত্রটির নাম আদম সুরত রেখেছেন রূপক অর্থে, যাতে সুলতানের জীবন আদর্শ দেখে মানুষ নিজেদের হারিয়ে যাওয়া জীবনবোধ ফিরে পায়। সুলতান এই প্রামাণ্যের জন্য রাজি হন। কিন্তু তার জন্য একটি শর্ত রাখেন। সেই শর্ত দেখে মানুষ সুলতানের জীবনের গভীরতা সম্বন্ধে কিছুটা হয়তো আঁচ করতে পারবেন।

“আমি এক শর্তে রাজি, তোমরা ছবিটা করতে পারো। সেটা হচ্ছে এটা আমার উপরে ছবি হবে না। আমি একটা নিমিত্ত। আমি ক্যাটালিস্ট, প্রোটাগনিস্ট না। আমার নিমিত্তে বাংলার কৃষক সমাজের উপর একটা ছবি হবে।”

চিত্রার পাড়ে বসে ‘আদম সুরত’ বানানোর গল্প করছেন তারেক মাসুদ; Source: youtube.com

তারেক মাসুদ বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকেই চলচ্চিত্রের সাথে জড়িত ছিলেন। তিনি পুনেতে বৃত্তি পান চলচ্চিত্র নিয়ে পড়ালেখা করার জন্য। কিন্তু এরশাদ ক্ষমতায় আসলে সেই বৃত্তি বাদ হয়ে যায়। তখন তিনি পারিবারিকভাবে টাকা জোগাড় করে ফেলেন যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে চলচ্চিত্র নিয়ে পড়াশোনা করার জন্য।

এস এম সুলতানকে নিয়ে চলচ্চিত্র বানানোর ইচ্ছা তারেক মাসুদের অনেক দিন ধরে ছিল। তাকে রাজিও করে ফেলেছিলেন। প্রথমদিকে এই প্রামাণ্যের সিনেমাটোগ্রাফার হওয়ার কথা ছিল প্রখ্যাত সিনেমাটোগ্রাফার আনোয়ার হোসেইনের। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে আনোয়ারের কাছে ইউনেস্কোর একটি দুই-তিন মাসের অ্যাসাইনমেন্ট চলে আসে। দেখা গেল, আনোয়ার হোসেইনকে নিয়ে কাজ করতে গেলে প্রামাণ্যের কাজটি পেছাতে হয়। একদিন তারেক মাসুদ আনোয়ারের কাছে গেলেন। তখন আনোয়ার হোসাইন তারেককে বললেন, সুলতানের শরীর ভালো যাচ্ছে না। সুলতান যদি এখন মারা যায় তাহলে তারেক মাসুদের একটি স্বপ্ন সারা জীবন অপূর্ণ থেকে যাবে। তারেক সেখান থেকে বের হয়ে ধানমণ্ডি ১৫-তে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। বাস আসতে দেরি করছিল। তখনই তার মনে একটি পাগলামি চিন্তা চেপে বসে। তিনি আমেরিকা যাবার টাকা দিয়ে সুলতানের উপর ছবি বানানোর সিদ্ধান্ত নেন। পরবর্তীতে তার জীবনের দিকে খেয়াল করলে দেখা যাবে, এই একটি সিদ্ধান্তই তার জীবনকে আমূল পাল্টে দেয়। তারেক মাসুদের মুখে,

এই বাস আসা দেরি না করলে আমার এই আদম সুরত তৈরি করা হতো না।

আনোয়ার হোসাইন; Source: youtube.com

এ ঘটনার বেশ কিছুদিন পরে রাস্তায় মিশুক মুনীরের সাথে তারেকের দেখা। মিশুক তারেকের বিশ্ববিদ্যালয়য়ের বন্ধু। তারেক মিশুককে প্রামাণ্যটি ধারণ করতে বললেন। কিন্তু মিশুক ছিলেন স্টিল ফটোগ্রাফার। সেসময় মিশুক ও তারেক দুজনই ছিলেন নবিশ। তারেক মিশুককে ক্যামেরার কাজ করতে বললে মিশুক বললেন, “আমি তো ক্যামেরা চালাতে জানি না” উত্তরে তারেক বললেন, “আমিও ছবি পরিচালনা করতে জানি না। আমরা বাসে যেতে যেতে শিখবো।”

মিশুক মুনীরের কাছে একটি আমেরিকান সিনেমাটোগ্রাফার ম্যানুয়াল ছিল। এটি বাসে বসে বসে পড়ছিলেন তারা। মিশুক ক্যামেরার থ্রেড লাগানো প্র্যাকটিস করছিলেন। তারেক মাসুদের কাছে কোনো চিত্রনাট্য ছিল না। তিনি ঠিক করেছিলেন, সুলতান যা করবেন, যেদিকে যাবেন, তিনি সেভাবেই তাকে অনুসরণ করবেন। তারেক মাসুদের ভাষায়, প্রামাণ্য চিত্রটিকে তিনি একটি ‘ফ্রি ফ্লুইড ওপেন ক্যানভাস’ এর মতো করতে চেয়েছিলেন। মিশুক মুনীরের কাছে একটি ক্র্যাঙ্ক ক্যামেরা ছিল, যেটাকে দম দিয়ে এক থেকে দুই মিনিট চালানো যেতো। আর তাতে ব্যবহার হতো ১০০ ফুটের ফিল্ম, যা দিয়ে দুই মিনিটের মতো শুট করা যেত। তারপর আবার ফিল্ম রোল পাল্টাতে হতো।

ছবির ডানে মিশুক মুনীর; Source: youtube.com

তারেক মাসুদের দলে ছিলেন মিশুক মুনীর, আলী মোরশেদ নোটন, আরিফুল হক পিয়াল প্রমুখ। তারা থাকতেন ভাঙ্গা বিন্ডিংয়ে। উপরে ছাদ ছিল না। সাথে ছিল সাপ, বাদুড়, এমনকি মুরগীর পায়খানা। তখন তারেক বুঝতে পারলেন আনোয়ার হোসাইনকে না এনে ভালো হয়েছে। কারণ আনোয়ার হোসাইনকে দিয়ে এই অবস্থায় দিনের পর দিন শ্যুট করা যেত না। আর শুটিং চলতো সুলতানের ইচ্ছা মতো। সুলতান যখন শুটিং থামিয়ে বলতেন, চলো, ওদিক থেকে ঘুরে আসি, তখন তা-ই করা হতো। যেন এক মহান শিক্ষক প্রকৃতির মাঝে শিষ্যদের পাঠদান করছেন।

তারেক মাসুদের বন্ধু জন রাইভার, যিনি একটি এনজিওর প্রধান ছিলেন, তিনি তারেকের ফিল্মকে ব্যাংকক থেকে প্রসেস করে আনলেন। তারপর তারা ১৬ মিনি প্রজেক্টরে তা দেখলেন। মিশুক তার কাজ নিয়ে খুবই লজ্জিত ছিলেন। কারণ ক্যামেরায় অনেক কাঁপাকাঁপি হয়েছে। কিন্তু তারেক মাসুদ মিশুকের কাজ নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন। কারণ মিশুকের ফোকাস, আলোর ব্যবহার, এক্সপোজার ছিল খুবই ভালো। তারেক মিশুককে বলেছিলেন “আই এম মোর দ্যান হ্যাপি”

জন রাইবার; Source: youtubee.com

তারেক মাসুদের উদ্দেশ্য ছিল সুলতানের দার্শনিক দিক তুলে ধরা। সুলতান কত বড় শিল্পী ছিলেন, কত বিখ্যাত ছিলেন তা তারেকের বিষয়বস্তু ছিল না। তারেক চেয়েছিলেন একজন শিল্পীর দিন কীভাবে কাটে, রাত কীভাবে কাটে তা দেখানো। তারেকের মুখে,

অনেক বড় একজন শিল্পী থাকেন, কিন্তু তাঁর মধ্যে একজন বড় দার্শনিক শিল্পী থাকেন না।

সুলতান ছিলেন একজন দার্শনিক। তারেক মাসুদ সুলতানের ভেতরকার এই দার্শনিক শিল্পীকে সবার সামনে তুলে ধরতে চেয়েছেন। সেসময় সাধারণ ক্যামেরা দিয়ে ভিডিও এবং অডিও একইসাথে ধারণ করা যেত না। তারেক বিবিসির জন্য মাসখানেক কাজ করেছিলেন। তিনি বিবিসির কাছে তাদের সিঙ্ক সাউন্ড ক্যামেরাটি চান সুলতানের সাক্ষাৎকার নেয়ার জন্য। সেই ক্যামেরা দিয়ে তারেক সুলতানের সাক্ষাৎকার নেন ঢাকায়। শেষের দিকে এসে টাকা শেষ হয়ে আসলে তাকে মেয়াদোত্তীর্ণ ফুটেজ দিয়ে ছবি শুট করতে হয়। এতে ছবির কালারে নানা সমস্যা দেখা দেয়। এ সময় তারেক মাসুদ ছবি তৈরির টেকনিক্যাল দিক নিয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। তিনি বুঝতে পারেন, ভালো চলচ্চিত্র বানাতে গেলে শুধু ছবি বানালেই হবে না। ছবির বানানোর টেকনিক্যাল কৌশলগুলোও জানতে হবে।

তারেক মাসুদের দুঃখ একটিই ছিল। সেটা হলো এস এম সুলতানের একটি মাস্টার শট ছিল। কিন্তু তখন ফিল্মের স্টক শেষ হয়ে আসছিল এবং দিনের আলোও শেষ হয়ে আসছিল। ফলে সেই শটটি আর নেওয়া হয়নি। সাত বছর ধরে এই প্রামাণ্যচিত্রটি নির্মাণ করেন। ফলে তিনি খুবই নিকটে চলে এসেছিলেন সুলতানের। সুলতানকে এভাবে কাছে পাওয়া ছিল তার জীবনে আশীর্বাদস্বরূপ। তার মতে, তিনি আদম সুরত নির্মাণ করেছিলেন বলে মাটির ময়নার মতো ছবি নির্মাণ করতে পেরেছিলেন। তাই তো বলতে পেরেছেন,

সুলতানের ছায়া, আমার জীবনে, আমার কাজে, আমার মৃত্যুতে।

তবে আমাদের জন্য খুবই দুঃখের বিষয় হলো সময়ের অনেক আগেই আমরা তারেক মাসুদ এবং মিশুক মুনীরকে হারিয়েছি। ২০১১ সালে কাগজের ফুল চলচ্চিত্রের লোকেশন ঠিক করে ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান তারেক মাসুদ ও তার বন্ধু মিশুক মুনির।

আদম সুরতের কথা

আদম সুরতের শুরুতে সুলতান বলেন,

আমার একটা বিশেষ উদ্দেশ্য ছোটদের মাঝে সুকুমার বৃত্তি গড়ে তোলার ইচ্ছা। কিন্তু সেখানে আমার শেখানোর যে মোটিভ সেটা কাজ করে না, বরঞ্চ ওরা কীভাবে কী প্রকাশ করে সেটাই আমি  উৎসাহিত করতে পছন্দ করি।

শিশুদের শিক্ষার প্রতি সুলতানের এক অন্য ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল। শিশুদের শিক্ষার জন্য অনেক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, যে শিশু তার পারিপার্শ্বিক পরিবেশ নিয়ে ছবি আঁকে সে কোনো অপরাধ করতে পারে না। তিনি ছোট শিশুদের আঁকা শেখাতেন একদম অন্য আঙ্গিকে। সুলতান বলছেন,

ড্রয়িংটা দেখলে যাতে বোঝা যায় এটা জাম গাছ, আম গাছ না কাঁঠাল গাছ! এ বিষয়ে আমি বিশেষ যত্ন নিই যাতে দেশের গাছপালা, বিভিন্ন জিনিসের ছবি আঁকতে তারা অভ্যস্ত হয়।

সুলতানের আঁকা ‘চর দখল’

সুলতান শিশুদের হাতে কলমে শিক্ষা দিতে চেয়েছিলেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন শিশুদের গড়ে তুলতে হলে প্রথমে তাদের বন্ধু হতে হবে। তার ভাষায়, “গড়ে তুলতে গেলে আমাকে প্রথমে সমস্ত শিশুর বন্ধু হতে হবে।

তিনি তাদের বন্ধু হওয়ার জন্য বুদ্ধিও বের করলেন। গ্রামের অনেক শিশু খাওয়ার জন্য মায়ের কাছে কান্নাকাটি করে। যদি তাদের সকালের খাওয়ারের ব্যবস্থা করা যায় তাহলে তারা সহজেই সুলতানের বন্ধু হয়ে যাবে। তখন তাদের দিয়ে ছবি আঁকাতে পারবেন।

প্রায় দুই যুগ ধরে এখানে সেখানে থেকেছেন সুলতান। কখনো কারো সাথে জড়াননি। পরে এক নিম্নবর্ণের হিন্দু পরিবার তাকে এই জীবন থেকে ফিরিয়ে আনে। সে পরিবার সুলতানের দেখাশোনা করতে থাকে। সুলতান ক্যানভাস এবং রং নিয়ে অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছেন। পরীক্ষা করার প্রধান কারণ হলো বিদেশি ক্যানভাস এবং রং অনেক ব্যয়সাপেক্ষ। পাটের চটকে ব্যবহার করেছেন ক্যানভাস হিসেবে। গাবের আঠা দিয়ে ক্যানভাসকে পার্মানেন্ট করেছেন। জিঙ্ক অক্সাইড, রেড অক্সাইড, ইয়োলো অক্সাইডের সাথে অন্যান্য রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করে রং তৈরি করেছেন। এতে অল্প খরচে বড় ছবি আঁকা যায়। তিনি বলেছেন, তার এই পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করে চিত্রকলার ছাত্ররা বড় ছবি আঁকার সাহস করতে পারবে।

সুলতান তদারকি করে রং বানাচ্ছেন; © আদম সুরত

এস এম সুলতানের শিকড় ছিল গ্রাম বাংলায়। তিনি বলেন, আমরা গ্রামের কৃষকদের ছোট করি। তাদের বোঝানোর চেষ্টা করি যে তারা কিছু জানে না। এতে তাদের মধ্যে একধরনের হীনমন্যতা সৃষ্টি হয়। তাদের কোনো উচ্চাকাঙ্ক্ষা নেই। গ্রামের মানুষদের জন্য বিদেশি সাহায্য আসে। কিন্তু তারা এটা পায় না। শহরের মানুষরাই এ টাকা আত্মসাৎ করে ফেলে। কিন্তু এতে গ্রামের কৃষকদের কোনো মাথাব্যথা নেই। এই সাহায্য বন্ধ হয়ে গেলে শহরের ক্ষতি হবে, কিন্তু গ্রামের কোনো ক্ষতি হবে না। গ্রামের কৃষকরা তাদের কাজ করে যাচ্ছে এবং যাবে। তার ভাষায়,

তারা যেন কোনো ব্রতে ব্রতী রয়েছে শুধু উৎপন্ন করে যাওয়ার জন্য।

সুলতান বলেন, জারি সারি গান এখন কৃষকরা গায় না। কিন্তু রেডিও টেলিভিশনে এই গান গাওয়া হয়। অনেকটা ফ্যাশনের মতো! এতে যেন কৃষকদের উপহাস করা হয়।

ঢাকায় ইন্টারভিউ দিচ্ছেন সুলতান © আদম সুরত

সুলতান নানা মাধ্যমে ছবি এঁকেছেন। তবে শেষে যেন জলরংকেই তিনি বেছে নিয়েছেন তার প্রিয় মাধ্যম হিসেবে। তার ছবিতে প্রথমদিকে প্রকৃতি প্রাধান্য পায়। পরে মানুষই হয়ে ওঠে তার ছবির প্রধান প্রাণ। আর পেশীবহুল কৃষক এঁকে তিনি যেন প্রতিবাদ করেছেন এই পুঁজিবাদী সমাজের। কৃষকের বলবান শরীর, তার স্ত্রী, সন্তানের পূর্ণ স্বাস্থ্য এঁকে তিনি যেন তাদের সাহস যুগিয়েছেন। কৃষকরা যত নিপীড়িত হয়েছে সুলতান তাদের পেশীকে আরও শক্তিশালী করে এঁকেছেন।

আজকাল হয়তো অনেকের পছন্দ হয় কিনা জানি না যে কৃষকদের জীবন ছবির বিষয় হতে পারে।

সুলতান নিজের বানানো ক্যানভাস ও রং দিয়ে আঁকছেন; © আদম সুরত

কিন্তু সুলতান এই কৃষকদেরই তার ছবির বিষয় করেছেন। তাদের জীবনের কাছাকাছি থেকেছেন, পেয়েছেন ভালোবাসা। বায়বীয় খ্যাতি, বিত্তের চেয়ে হৃদয়ের একটুখানি ভালোবাসার অনেক বেশি। সুলতান এটি উপলব্ধি করেছিলেন। ভালবেসেছেন এবং অঢেল ভালোবাসা পেয়েছেন।

আমাকে অনেকে বলেন, আপনি শহরে থাকলে উন্নতি হতো। শহরে থাকলে আমরা আরও কিছু আশা করতাম। আমি দেখি আমাদের গ্রামের মানুষগুলো হাঁটে-বাজারে গিয়ে তাদের সঙ্গে একটু আলাপ ব্যবহার যা পাই নিঃসঙ্গ অনুভব করি না আমি। সেখানে আমার এপ্রেসিয়েটরস বেশি। গ্রামে একটি সহজ সুন্দর মানুষ যেভাবে ছবিকে পছন্দ করে সে এপ্রেসিয়েশন আমি কোথাও পাই না। তার একটু লাউয়ের মাচার ছবি আঁকলে বলে যে এটি আমার লাউয়ের মাচা। তার দুটো বলদের ছবি আঁকলে সে কত খুশি হয়। তাতে আমার মনে হয় যে আমি অনেক সুখেই আছি গ্রামে।

ফিচার ছবি- সংগৃহীত

Related Articles