Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

একজন বিনপোল, যুদ্ধফেরত রুশ নারী এবং জেন্ডার লেন্সে লেলিনগ্রাদ

বিনপোল মুভি হিসেবে আমার কাছে জলজ্যান্ত এক বিস্ময়! নির্মাতা কান্তেমির বালাগভ যখন এই চলচ্চিত্র বানান, তখন তার বয়স ২৭ ছুঁই ছুঁই। আর মুভির সিনেমাটোগ্রাফার কেসেনিয়া সেরেদার বয়স মাত্র ২৪। কিন্তু মুভি দেখে এমন অনুমানের সুযোগ নেই। উল্টো নির্মাণশৈলীর ম্যাচুউরিটি চেতনার ভিত নাড়িয়ে দিতে সক্ষম। মুভির বলিষ্ঠ ভাষা ও কাহিনীবিন্যাস ভীষণ রকমের পরিপক্ক চিন্তার প্রতিফলন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঠিক পর পর লেলিনগ্রাদ (বর্তমান সেইন্ট পিটার্সবার্গ) শহরের আলেখ্য বালাগভের বিনপোল। অর্থাৎ চলচ্চিত্রটি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বেছে নিয়ে গল্পাকারে আবির্ভূত হয়েছে। পরিচালকের এ ফিল্ম নির্মাণের মূল অনুপ্রেরণা ছিল ১৯৮৩ সালে নোবেল বিজয়ী সভেতলানা আলেক্সিভিচের লেখা বই War Does Not Have a Woman’s Face। ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটকে গুরুত্ব দিয়ে ফিল্মের আর্ট ডিরেক্টর ১৯৩৮ সালের মার্সিডিজ, ১৯৪২ সালের সংবাদপত্র সংগ্রহ করে ব্যবহার করেছেন। ইতোপূর্বে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে লেলিনগ্রাদ কেন্দ্রিক অসংখ্য সোভিয়েত চলচ্চিত্র নির্মিত হওয়ায় বিনপোলকে অন্যদের থেকে আলাদা আর অভিনব উপায়ে উপস্থাপন করার অলিখিত দায় ছিল পরিচালকের।

আহত যোদ্ধাদের চিকিৎসা দেয়া হয় এমন একটি হাসপাতালের কাহিনি দেখতে পাই এ চলচ্চিত্রে; Image Source: Beanpole Movie

তরুণ নির্মাতা সময়ের দায় মিটিয়ে তার সৃজনশীলতার পরিচয় দিয়েছেন নির্মাণে। যার ফলশ্রুতিতে রুশ মুভিটি ২০১৯ সালের কানসের আন সারতেইন রিগারদ সেকশনের বেস্ট ফিল্ম এবং বেস্ট ডিরেক্টরের সম্মাননা অর্জন করে নেয়। একই বছর রাশিয়া থেকে ৯২ তম অস্কার আসরে বেস্ট ফরেইন ল্যাঙ্গুয়েজ ফিচার ক্যাটাগরিতে প্রেরণের জন্য নির্বাচন করা হয়, এবং সেখানেও শর্টলিস্টেডে অন্তর্ভুক্ত হয়। বক্স অফিসে ২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করা এ মুভি যারা দেখেছেন, সবাই উদ্ভাসিত প্রশংসা করেছেন। রটেন টম্যাটোতে লেখা হয়েছে,

Dramas don’t come much bleaker than Beanpole, director Kantemir Balagov’s wrenching story about the damage caused by war, and the exceedingly high cost of survival.

ডানা মেলে উড়তে চাওয়ার প্রবল আকাঙ্ক্ষার অপ্রত্যাশিত পরিণাম; Image Source: Beanpole Movie

থিম এবং টেকনিক্যাল দিক থেকে এই ছবির অনেকগুলো দিক নিয়ে কথা বলার সুযোগ আছে। প্রথমত, মূল থিমের কথা বলতে গেলে বলতে হয় যে ‘ট্রমা’ এই মুভির ‘কী’ রোল প্লে করে। যুদ্ধসংশ্লিষ্ট প্রতিটি চরিত্রকেই আমরা বিভিন্নভাবে ট্রমাটাইজড হিসেবে দেখতে পাই। ডাক্তার নিকোলাই, নার্স ইয়া (বিনপোল), এবং রেড আর্মির মাশা প্রধান। এছাড়া হাসপাতালে ভর্তিরত যোদ্ধাদের মধ্যেও যুদ্ধের দুর্বিষহ ক্ষতময় স্মৃতি বহন করতে দেখা যায়। স্নাইপার স্তেপানের ‘Quadriplegic’ অবস্থায় তার অসহায়ত্ব, এবং প্যারালাইজড অবস্থায় সন্তানদের কাছে ফিরতে না চাওয়ার জন্য ডাক্তার নিকোলাইয়ের নিকট ইউথানেইশার (Euthanasia) আবেদন যেকোনো দর্শককেই বাকরুদ্ধ করে দিতে সক্ষম। 

“Do it so I run along nice and quick” 

অতঃপর উচ্চ ডোজের মরফিন প্রয়োগে হত্যার করুণ দৃশ্যের অবতারণা করে এ ছবি। নিষ্ঠুরতা দৃশ্যায়নে বিনপোল এখানেই থেমে যায় না। দুর্ঘটনাবশত, তিন বছরের শিশু পাশকার শ্বাসরোধ হয়ে মারা যাওয়ার সিনও লংটেইকে দেখানো হয়েছে সন্নিকট হতে। শুধু দেখানো হয়েছে বললেভুল বলা হবে, সত্যি বলতে- অনুভব করানো হয়েছে পাশকার মৃত্যুর করুণ দৃশ্যকে। গতিময়তা বিচারে মুভিটি বেশ শ্লথ। চরিত্রের আগমনে কোনোরূপ তাড়াহুড়ো নেই। অত্যন্ত ধীরস্থিরভাবে চরিত্রগুলোকে প্রতিষ্ঠা করে পরস্পর সম্পর্কগুলোকে ট্রমার শৈল্পিকতায় একত্রিত করা হয়েছে। এতে রিদম অব ফিল্মের দিক থেকে একঘেয়েমির সম্ভাবনা জাগলেও থিমেটিক কালার ব্যবহারের নিপুণতায় তাতেও গুঁড়েবালি পড়েছে। টেক্সচারে সবুজ এবং লাল ফিল্মের প্রধান রং হিসেবে দেখা যায়। লেলিনগ্রাদের পুরনো জরাজীর্ণ অবয়ব ফিরিয়ে আনার দুর্দান্ত প্রয়াস! যেখানে বর্ণ ব্যবহারে পরিচালক সাংকেতিকতা এবং অর্থবহতাকে প্রাধান্য দিয়েছেন। সবুজ রংয়ের দেয়াল, সবুজ জামা হয়ে উঠেছে স্বপ্ন ও প্রত্যাশার প্রতীক। অনুরূপভাবে, বিষাদের লাল দেখা গেছে হাসপাতালের দেয়ালে, এবং শেষ শটে ইয়ার সোয়েটারে। এই দুটি রঙের অধিক ব্যবহার কৌতূহল জাগিয়েছে, কৌতূহল মিটিয়েছে। সেজন্য কালারের এরূপ অর্থবাচকতা সৃষ্টির কারণে ফিল্মটির বিশেষ ধন্যবাদ প্রাপ্য।

সবুজ-লালে মাখামাখি সিনেমায় নার্স বিনপোল; Image Source: Beanpole Movie

সাউন্ড ডিজাইন বিনপোলের আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক। আবহ সঙ্গীত বা মিউজিকের অগতানুগতিক অফট্র্যাক সাউন্ড এই চলচ্চিত্রের প্রাণ। Post-concussion symptoms of involuntary freeze-up তথা অবচেতন জড়তার এক আপাত অদ্ভুত শব্দের ব্যবহার রয়েছে ছবিতে। এই শব্দের প্রয়োগে নির্মাতা সহজেই বিনাবাক্যে ইয়ার শারীরিক জড়তাকে সংজ্ঞায়িত করেছেন। বাদবাকি শব্দের ব্যবহারেও পরিমিতবোধের সাক্ষ্য আছে। প্রিসাইজড সাউন্ড ডিজাইন নিঃসন্দেহে চলচ্চিত্র বিনপোলের স্বতন্ত্রতার পরিচায়ক। এমনকি, শেষের টাইটেল কার্ডেও মিউজিকের অস্তিত্বহীনতা দ্বিধায় ফেলে ফিল্মের ট্রমাময় জার্নিকে আরও প্রগাঢ় করতে ভূমিকা রাখে। এর সাথে কমিউনাল এপার্টমেন্টের গাদাগাদি করা জীবনযাপন, ‘Hysterectomy scar’ প্রভৃতি উপাদান যুক্ত হয়ে ফিল্মের থিমকে যথাযথ সহায়তা প্রদান করেছে। নিকোলাইয়ের সংলাপে, “Where would he have seen a dog? They’ve all been eaten.”

নিকোলাইয়ের সাথে বিনপোলের অন্তরঙ্গ দৃশ্য নিশ্চিতভাবে দর্শকমনে সচেতন অস্বস্তিকে আরও বাড়িয়েছে। অপর দৃশ্যে সবুজ জামা পরে মাশার আনন্দ ঘূর্ণনে কৈশোরে ফিরে যাবার অদ্ভুত ব্যাকুলতা অনুভব করা যায়। যুদ্ধ তাদের জীবন থেকে কত কিছুই না কেড়ে নিয়েছে! অথচ বিপরীতেই সাশার পরিবারে যুদ্ধের প্রভাব সেই অর্থে পড়েইনি। ভিন্ন মেরুর দুই নারী চরিত্রকে নির্মাতা একই খাবার টেবিলে পাশাপাশি বসিয়ে বৈসাদৃশ্যের দৃষ্টিকোণ থেকে ভারী সুরে বর্ণনা করেছেন।

অস্বস্তিকর বৈষম্য মানসিক দৃঢ়তাকে নড়বড়ে করে দেয়; Image Source: Beanpole Movie

মূল চরিত্র ইয়া তথা বিনপোলের মুখভঙ্গি, সংলাপ বলায় পরিমিত নিষ্প্রভ ও স্বতঃস্ফূর্ত অভিনয় অবশ্যই এ চলচ্চিত্রের সাফল্যের পেছনে বড় একটি নিয়ামক। পাশাপাশি, যোদ্ধা মাশার স্নিগ্ধতা এবং মা হবার আকুলতা মনের গভীরে ছুঁয়ে যায়। অথচ, দুজনেরই এটি প্রথমবারের মতো ফিচার প্রজেক্টে কাজ। যুদ্ধ বাস্তবতায় মাশার পরিণতি এবং পর্যবেক্ষণ প্রাধান্য পেয়েছে বালাগভের মাস্টারপিস ফিল্মে। আরেকটি তথ্য হচ্ছে- পরিচালক ইচ্ছা করে প্রোডাকশন ডিজাইনে কোনোরকমের কম্যুনিস্ট সিম্বল রাখেনি। অথচ, সময়ের কথা ভাবলে সেরকম প্রতীক সেটে থাকার যৌক্তিকতা ছিল। এ বিষয়ে নির্মাতার বক্তব্য,

I wanted the story to feel timeless, because cinema for me is a tool of immortality, and [someone like Joseph Stalin] doesn’t deserve this immortality.

পরিচালকের অভিমতের সাথে হয়তো কারো আপত্তি থাকতে পারে, তবে সার্বিক বিবেচনায় মনে করি, বিনপোল অতি সম্প্রতি নির্মিত রাশিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও শক্তিশালী চলচ্চিত্র। যে চলচ্চিত্রটি এর নিজস্বতা ও দর্শকদের ভালোবাসায় বহুকাল টিকে থাকবে।

মাশা ও বিনপোলের বন্ধুত্ব দর্শককে অসহায় বোধ করায়; Image Source: Beanpole Movie

চলচ্চিত্র — Дылда (Beanpole) 
পরিচালক — কান্তেমির বালাগভ 
জনরা — হিস্ট্রিক্যাল ড্রামা 
সাল — ২০১৯ 

Language: Bangla

Topic: The article is a review of a Russian historical drama film released in 2019.

Featured Image: cinematokgraf.com

Related Articles