আমাদের মতো সাধারণ মানুষ জানে, অতিপ্রাকৃত মানেই ভৌতিক বা প্রেতাত্মা সংক্রান্ত বিষয়। কিন্তু আসলেই কি তা-ই? না। অতিপ্রাকৃত অর্থ যেসব ঘটনার ব্যাখ্যা আছে, আবার নেইও। কিংবদন্তি অনেক গল্প আছে, যা কারো কাছে সত্য, কারো কাছে মিথ্যা, কিন্তু রহস্যমোড়া সে গল্প।
এরকম এক বই নিয়েই আমাদের আজকের যাত্রা। বইটির শুরুতেই একটি উক্তি আছে,
“ HISTORY BECAME LEGEND, LEGEND BECAME MYTH”.
বইটিতে কিন্তু বলা হয়নি সব মিথ সত্যি, আবার এটাও বলা হয়নি যে সব মিথ্যা। প্রচলিত সব ধরনের মিথের মধ্যে থেকে খুঁজে খুঁজে কিছু কিছু মিথ আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন লেখক। মোট ২৮টি ভাগে বিভক্ত এই বইয়ের প্রতি পরতে পরতে রহস্য। এই বই কোনো অংশে ফিকশন সাসপেন্স বা থ্রিলারের চেয়ে কম নয়। তবে পার্থক্য একটাই, এটি নন-ফিকশন।
২৮টি পরিচ্ছেদ নিয়ে বিস্তারিত যেমন বলা সম্ভব না, ঠিক তেমনি পুরোটা বলে দিলে বইটি পড়ার আগ্রহ থাকবে না, রহস্য থাকবে না। তাই সংক্ষেপে বইটির পরিচয় সেরে নিচ্ছি।
প্রথমেই বলা যাক ফ্ল্যাপে লেখা হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার সেই গল্প নিয়ে। লেখক শুরুতেই বলে দিয়েছেন, বাঁশিওয়ালার সেই কাহিনী নিছক গল্প নয়, সত্যি ঘটনা। কিন্তু এই গল্পের ভেতরেও যে কত গল্প আছে, সেটা পড়তে গিয়ে বুঝবেন। হ্যামিলনের বাঁশির সুরে তার পিছু পিছু যেমন ইঁদুর গিয়েছিল, তেমনি প্রাপ্য না পেয়ে সেই শহরকে শিশুশূন্য করে দিলেন বাঁশিওয়ালা। কিন্তু আপনি কি জানেন, সেই জাদুর বাঁশির সুর থেকে বেঁচে গিয়েছিল তিনটি শিশু আর একটি ইঁদুর। কিন্তু কীভাবে?
‘লুসিফার’- এই নাম আমাদের কারো কাছে অজানা নয়। কিন্তু কে এই লুসিফার? এই নামে কি আসলেই কেউ ছিল? শোনা যায়, লুসিফার নাকি তার এই পরিণতি নিজেই নিজের হাতে লিখেছিলেন। কে ছিলেন এই লুসিফার? কেন নিজের এই জীবনের কথা তিনি লিখেছিলেন?
এরপরে আসা যাক বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের কথা নিয়ে। এই বারমুডা নিয়ে কত জল্পনা-কল্পনা-গবেষণা। কিন্তু আসলেই কি বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের কোনো অস্তিত্ব আছে? নাকি ভ্রম? কত প্লেন, কত জাহাজ হারিয়ে গেছে ট্রায়াঙ্গলের গোলকধাঁধায়- সেই রহস্য কবে উন্মোচিত হবে?
প্রথম নবী, আমাদের আদি পিতা হযরত আদম (আঃ)। যখন তিনি বেহেশত থেকে বিতাড়িত হয়েছিলেন, তখন তাঁর পবিত্র পা পড়েছিল আমাদের এই উপমহাদেশে, শ্রীলঙ্কাতে। এখনও দেশ-বিদেশ থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ আসে সেখানে। কিন্তু আপনি কি জানেন, শ্রীলঙ্কা আর ভারতের মাঝে আছে এক সেতু, যাকে আদম সেতু বলা হয়? আবার হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মতে, এই সেতুকে বলা হয় ‘রাম সেতু’, যার মূলকথা আছে রামায়ণের অভ্যন্তরে। কিন্তু এই সেতু আসলে কে বানিয়েছিল? জানতে চান? তাহলে বইয়ের ভাঁজে খুঁজে নিন!
ইউসুফ নবী (আঃ) আর জুলেখার প্রেমের কথা সর্বজনবিদিত। কত গান, পালাগান আর কবিতা আছে তাদের নিয়ে। কিন্তু এই গল্প কি আসলেই সত্য নাকি মিথ্যা? আর যদি সত্য হয়েই থাকে, তবে ইউসুফ-জুলেখার কী পরিণতি হয়েছিল শেষমেশ?
সুলাইমান (আঃ) এর জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা জানতে পারবেন এই বইটি থেকে। শোনা যায়, তার নাকি একটি উড়ন্ত সিংহাসন ছিল, আর ছিল এক জাদুর আংটি। কী ছিল সেই জাদুর আংটির ক্ষমতা? তবে এই পরিচ্ছেদে একটা পয়েন্ট লেখক উল্লেখ করেননি। সেটি হলো, সুলাইমান (আঃ) শেষ জীবনে যখন একটি মসজিদ বানাতে চাইলেন, তার পোষা জ্বীনেরা নাকি ঠিকমতো কাজ করত না। তাই তিনি তার মৃত্যুর সময় হলে একটা ঘরে, যেখান থেকে জ্বীনেরা তাকে দেখতে পেত, সেখানে গিয়ে লাঠি ভর দিয়ে দাঁড়ালেন। সে অবস্থাতেই তার মৃত্যু হয়। দীর্ঘদিন পর, যেদিন মসজিদের কাজ শেষ হলো, ঠিক সেদিন উইপোকা তার সেই লাঠি খেয়ে ফেলেছিল। তখন সবাই বুঝতে পারে যে, তিনি ইহলোক ত্যাগ করেছেন।
অনেক সময় আমরা শুনেছি, নিজের মৃত্যুর কথা নাকি অনেকেই বুঝতে পারে, কিন্তু সঠিক দিন-ক্ষণ-তারিখ কেউ বলতে পারে না। তবে এমন একজন রহস্যময় ব্যক্তি ছিলেন, যিনি নিজের মৃত্যু থেকে শুরু করে টুইন টাওয়ার ধ্বংস কবে হবে, সেসব কথা লিখে গিয়েছিলেন। এগুলো কি আসলেই সত্য? নাকি প্রচলিত মিথ, যা কাকতালীয়ভাবে মিলে গেছে?
প্রায় ৩০০ বছর ধরে এক গুহায় ঘুমিয়ে ছিলেন কতিপয় যুবক আর তাদের সাথে থাকা এক কুকুর। পবিত্র কুরআন শরীফে যেমন এই ঘটনাটি নিয়ে একটি সূরা নাজিল হয়েছে, ঠিক তেমনই খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের কাছেও এই ঘটনাটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু কেন? এই যুবকদের পরিচয় কী? কোথায় ঘুমিয়ে আছেন তারা?
টাইম মেশিন আবিষ্কারের জন্য বিজ্ঞানীরা যখন জান-প্রাণ দিয়ে দিচ্ছে, তখন যদি কেউ এসে বলে, আমি ২৭৪৯ সাল থেকে এসেছি। আপনি কি বিশ্বাস করবেন? না করাটাই স্বাভাবিক। কেউই হয়তো করবে না। কিন্তু আল বিলেক নামে এক ব্যক্তি জোর দাবি করেছিলেন, তিনি ভবিষ্যৎ থেকে এসেছেন। অনেক অদ্ভুত কথাও তিনি বলতেন। কে ছিলেন এই বিলেক? কোনো বদ্ধ উন্মাদ, নাকি সত্যিকারের ভবিষ্যতমানব?
ইসলাম ধর্মমতে, ইবলিশ শয়তান আছে, যে সবার মধ্যে শয়তানি শক্তি কিংবা ক্ষমতা ঢুকিয়ে দেয়। কিন্তু মানুষের মধ্যেও একজন আছে, যাকে ইতিহাস চেনে ‘পৃথিবীর খারাপতম মানুষ’ হিসেবে। ‘ক্রোলি’ নামের এই ব্যক্তি নাকি নিয়মিত দৈববাণী শুনতেন। তবে তার খারাপ হয়ে ওঠার পেছনের গল্পটা আসলে কী?
হ্যারি পটার; নাম শোনেনি, এমন মানুষ এ প্রজন্মে হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না। প্রথম বইটিতে লেখিকা উল্লেখ করেছিলেন সেই পরশমণির কথা, যার ছোঁয়াতে আজীবন বেঁচে থাকা যাবে, দীর্ঘায়ু লাভ করা যাবে। এই সিরিজের প্রথম বই থেকেই শোনা যায় নিকোলাস ফ্লামেলের কথাও, যার লক্ষ্য ছিল ‘এলিক্সির অভ লাইফ’ তৈরি করা। তিনি কি পেরেছিলেন সেটা? মিস্টার এন্ড মিসেস ফ্লামেলের কবর থেকে গায়েব হয়ে গিয়েছিল তাদের দেহ। কে নিয়েছিল সেই দেহগুলো? কী ছিল ওতে, যার জন্য তা চুরি হয়ে গেল?
নিউটনের মাথায় আপেল পড়ার ঘটনা আমরা অনেকেই জানি। কিন্তু আমরা কি জানি, তিনি ছিলেন একজন আলকেমিস্ট! বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী নিউটন একজন জাদুকরও ছিলেন বটে। কিন্তু কেন এলেন তিনি এই জাদুর জগতে? এই পরিচ্ছেদে এসে মনে হয়, বইয়ের ছবিগুলো রঙিন হলে মনে হয় আরো ভালো হতো। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সাদা-কালো ছবির দরুন অনেক ছবি স্পষ্ট হয়ে ওঠেনি।
এরকম ২৮টি ঘটনার ছোট ছোট পরিচ্ছেদে সাজানো বইটি, লিখেছেন আব্দুল্লাহ ইবনে মাহমুদ। লেখকের প্রথম বই এটি। তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে বের হয়ে কলম ধরেছেন লেখক হতে। শুভকামনা লেখকের জন্য। এই বই, এই রহস্য এখনও যে অনেক বাকি! অজানা সেই রহস্যের অপেক্ষায় রইলাম।
বই: অতিপ্রাকৃতের সন্ধানে
লেখক: আব্দুল্লাহ ইবনে মাহমুদ
সম্পাদক: মুহাইমিনুল ইসলাম অন্তিক
প্রকাশনী: ছায়াবীথি
অনলাইনে বইটি সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন নিচের লিঙ্কে:
১) অতিপ্রাকৃতের সন্ধানে ২) একই লেখকের আরেকটি বইইহুদী জাতির ইতিহাস