‘অ্যা সং অফ আইস এন্ড ফায়ার’ এর প্রথম বই ‘অ্যা গেম অফ থ্রোনস’ প্রকাশ করে জর্জ আর আর মার্টিন ফ্যান্টাসি ঘরানার সাহিত্যে যেন আগুন ধরিয়ে দিলেন। বুদ্ধিদীপ্ত, সুকৌশলী হাতে বিশাল সংখ্যক চরিত্র রচনার পাশাপাশি যুক্ত হয়েছে তার কাব্যিক ভাষার নিপুণতা। দ্বিতীয় বই ‘অ্যা ক্ল্যাশ অফ কিংস’ প্রথম বইটিরই যোগ্য উত্তরসূরী হয়ে দর্শক ও ফ্যান্টাসি ঘরানার অন্য লেখকদের প্রশংসা কুড়িয়েছে।
এই উপন্যাসের যে ব্যাপারটি একে অনবদ্য করে তুলেছে, তা হলো সত্যিকার পৃথিবীর নির্মমতার একেবারে বিশুদ্ধ একটি প্রতিফলন পুরো কাহিনীতে বিদ্যমান; যে পৃথিবীর সাথে মধ্যযুগের ইউরোপের অনেকটা সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়। রাজপরিবারের অজাচার, প্রাসাদ রাজনীতি, শাসকদের অনাচার, যুদ্ধের ভয়াবহ ও নোংরা সব দৃশ্য- যার পরিণতিতে রাজ্যের সাধারণ মানুষদের চূড়ান্ত পরিণতি ভোগ— ফ্যান্টাসি লিখতে গিয়ে মার্টিন এসব ছবি তুলে ধরতে ভোলেননি।
এই সিরিজের আরেকটি অসাধারণ ব্যাপার হলো চরিত্র বর্ণনার বুদ্ধিদীপ্ত কৌশল। অনেকগুলো চরিত্রের আলাদা আলাদা দৃষ্টিকোণ থেকে গল্প বর্ণনার ঢংয়ের কারণে পুরো সেভেন কিংডম জুড়ে চলা ঘটনাগুলোকে শুধুমাত্র গল্পই মনে হয় না, চরিত্রের দৃষ্টি দিয়ে পাঠক তাদের আশেপাশের ঘটনাগুলো চাক্ষুষ করতে পারবে; এ যেন নিজের চারপাশে বয়ে চলা রক্তাক্ত সব ঘটনাপ্রবাহ। এভাবে চরিত্রগুলোর পাশাপাশি পুরো গল্পেই প্রাণ দিয়েছেন জর্জ মার্টিন।
প্রথম বই ‘অ্যা গেম অফ থ্রোনসে’র শুরু থেকেই প্রায় এক দশক জুড়ে চলা গ্রীষ্মকালের অবসান দেখা যায়। উষ্ণ ঋতুর সাথে মিল রেখেই যেন সেভেন কিংডমে এই পুরো দশক জুড়ে শান্তি ও স্থিতি বজায় ছিল। বিপত্তি শুরু হলো যখন রাজা রবার্ট ব্যারাথিয়ন মৃত্যুবরণ করলেন। রবার্ট বিদ্রোহ করে টারগেরিয়ানদের রাজশাসন ছুঁড়ে ফেলে আয়রন থ্রোন দখল করেছিলেন।
তার বিশ্বস্ত বন্ধু ও সহকারি এডার্ড স্টার্কও প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের খেলায় হেরে প্রাণদণ্ডে নিহত হলেন। রবার্টের বিতর্কিত উত্তরাধিকার জোফ্রি সিংহাসনে বসলেও তার শিশুসুলভ ঔদ্ধত্য আর অযোগ্য শাসন পুরো রাজ্যে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা বিদ্রোহ আরো ত্বরান্বিত করলো। রাণী সার্সির ছোটভাই বুদ্ধিমান টিরিয়ন ল্যানিস্টারকে পাঠানো হলো তার বাবার পরিবর্তে সাময়িকভাবে ‘হ্যান্ড অফ দ্যা কিং’ বা পরোক্ষভাবে রাজ্য শাসন করতে।
অন্যদিকে, এডার্ড স্টার্কের ছেলে রব স্টার্ক বাবার মৃত্যুর প্রতিশোধ নেওয়ার উদ্দেশ্যে নর্থ থেকে বিশাল সৈন্যবাহিনী নিয়ে রওনা দিয়েছে। তার অধীনের গুরুত্বপূর্ণ লর্ডরা একত্রে তাকে ‘কিং ইন দ্য নর্থ’ ঘোষণা করে দেয়। রবের এক বোন সানসা স্টার্ক ল্যানিস্টারদের হাতে প্রাসাদে জিম্মি। আরেক বোন আরিয়া স্টার্ক নিজের পরিচয় লুকিয়ে রেখে পরিবারের কাছে পৌঁছানোর জন্যে ছুটে বেড়াচ্ছে। আবার, রবার্টের ছোট দুই ভাই নিজেদেরকে রাজা ঘোষণা করে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছে। পৃথিবীর অন্যপ্রান্তে টারগেরিয়ানদের সর্বশেষ বংশধর ডেনেরিস টারগেরিয়ানও তার সদ্যোজাত ড্রাগনদের নিয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছে নিজের পরিবারের হারানো রাজ্য ফেরত নেওয়ার জন্যে।
‘অ্যা ক্ল্যাশ অফ কিংস’ শুরু হয় রবার্টের মেজ ভাই স্ট্যানিস ব্যারাথিয়নের প্রাসাদ থেকে। স্ট্যানিসকে প্রথম বইতে দেখানোই হয়নি, কিন্তু এই বইয়ে স্ট্যানিসকে বর্ণনার জন্যে লেখক নতুন দু’টি চরিত্রের দৃষ্টিকোণ তৈরি করেছেন: একজন ডেভস সিওয়ার্থ এবং অন্যজন মেইস্টার ক্রেসেন। স্ট্যানিস একজন শক্ত হৃদয়ের মানুষ; সিংহাসন জেতার জন্যে যে নিজের ধর্ম ত্যাগ করে এমন একটি ধর্ম বেছে নিল, যেটি পুরো রাজ্যের কাছে অশুভ। এই অশুভ শক্তি দিয়েই সে নিজের ভাইয়ের প্রাণ কেড়ে নেয়।
His claim is the true one, he is known for his prowess as a battle commander, and he is utterly without mercy. There is no creature on earth half so terrifying as a truly just man.
রব স্টার্ককে এই বইতে খুব কমই দেখানো হয়েছে। যেটুকু আছে, তাও তার মা ক্যাটেলিন স্টার্ক চরিত্রের দৃষ্টিকোণ থেকে। রবের নিজস্ব চরিত্র দৃষ্টিকোণ থাকলে তাকে আরো পরিপূর্ণ মনে হতো। পরবর্তীতে একটি সাক্ষাৎকারে অবশ্য জর্জ মার্টিন স্বীকার করেছিলেন, রবের নিজস্ব দৃষ্টিকোণ না দেওয়াটা তার একটা বড় ভুল ছিল। সিংহাসনের খেলায় সবচেয়ে অনভিজ্ঞ ও কমবয়সী হওয়া সত্ত্বেও শক্তিশালী ল্যানিস্টারদের বিরুদ্ধে বুদ্ধিদীপ্ত কৌশলের কারণে একটি যুদ্ধও সে এখন পর্যন্ত হারেনি।
ব্যারাথিয়নদের সবচেয়ে ছোট ভাই রেনলি রাজ্যের দক্ষিণে গিয়ে শক্তিশালী ও বিত্তবান টাইরেলদের মেয়েকে বিয়ে করে। এই বইতে তাকে যে অল্প সময়ের জন্যে দেখানো হয়েছে তার পুরোটাই ছিল ক্যাটেলিন স্টার্কের দৃষ্টিকোণ থেকে। শাসক হিসেবে তার যোগ্যতা প্রশ্ন করার মতো। রাজভোজ, নাইটদের টুর্নামেন্টের আয়োজনের মধ্যেই রাজা হিসেবে তার দায়িত্বটুকু সীমাবদ্ধ।
Robert was the true steel. Stannis is pure iron, black and hard and strong, yes, but brittle, the way iron gets. He’ll break before he bends. And Renly, that one, he’s copper, bright and shiny, pretty to look at but not worth all that much at the end of the day.
এই বইয়ে আরেকটি চরিত্রের দৃষ্টিকোণ যুক্ত করা হয়েছে, সে হল থিওন গ্রেজয়। থিওনের বাবা বেলন গ্রেজয় রবার্টের শাসনামলের শুরুর দিকে একবার বিদ্রোহ করেছিল। শেষ পর্যন্ত পরাজিত হলেও ভবিষ্যতে যেন আর বিদ্রোহ না করে এজন্যে তার ছেলে থিওনকে এডার্ড স্টার্ক নিজের ঘরে নিয়ে এসেছিলেন। স্টার্ক পরিবারের মধ্যে বড় হওয়া থিওনের মাঝে বিশ্বাসঘাতকতার বীজ অন্তর্নিহিত ছিল। সুযোগ পাওয়া মাত্রই তা প্রকাশে সে ভুল করেনি। অস্থিতিশীল রাজনৈতিক অবস্থার মধ্যে বেলন গ্রেজয় নর্থে আক্রমণ করে বিদ্রোহ ঘোষণা করে দিল। এভাবে শুরু হল পাঁচ রাজার মধ্যকার ‘ওয়ার অভ ফাইভ কিংস’। আর জর্জ মার্টিন এতো সুচারুভাবে এতগুলো ক্ষুদ্র, বিচ্ছিন্ন ঘটনা ও ষড়যন্ত্র, এতগুলো প্রাসাদের মধ্যকার চলমান ঘটনা, যুদ্ধের প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা নির্ভুলভাবে তুলে এনেছেন যে তা অবিশ্বাস্য।
মার্টিনের চরিত্রগুলোর একটা প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে কাউকেই সম্পূর্ণ ভালো কিংবা সম্পূর্ণ মন্দের কাতারে ফেলা যাবেনা। প্রসঙ্গক্রমে, ‘ব্যাটল অভ দ্যা ব্ল্যাকওয়াটারের’ কথা বলা যেতে পারে। স্ট্যানিস ব্যারাথিয়ন এই যুদ্ধে কিংস ল্যান্ডিং আক্রমণ করেছিল। পাঠক এই যুদ্ধে কাকে সমর্থন দেবে, তা চিন্তা করে দ্বিধান্বিত হয়ে পড়বে। এক পক্ষে রয়েছে একজন প্রচণ্ড নির্দয় রাজা, যার থ্রোনে বসার কোনো যোগ্যতাই নেই। এমনকি থ্রোনের প্রতি তার দাবিও সম্পূর্ণ বেআইনি। অন্যদিকে রয়েছে এমন একজন, যে ক্ষমতার লোভে নিজের ভাইকে হত্যা করতে দ্বিধাবোধ করে না; যদিও বাকিদের তুলনায় থ্রোনের প্রতি তার দাবি বেশি যথার্থ।
If you step in a nest of snakes, does it matter which one bites you first?
জর্জ মার্টিনের গদ্য লেখার ক্ষমতা চমৎকার। এরকম নিপুণভাবে লেখার গুণই তার কল্পনার রাজ্যটি পাঠকের কাছে জীবন্ত হয়ে উঠার প্রধান কারণ। একটা পরিবেশের সেটিং রচনার সময়ে এত সূক্ষ্ম সব বর্ণনা দেওয়া হয়েছে যে কোথায় কী শব্দ হচ্ছে, বাতাসে কেমন ঘ্রাণ বিরাজ করছে, চোখের সামনে কী দেখা যাচ্ছে সবই পাঠকের সামনে ভেসে উঠবে। এত বড় বর্ণনা তার বইয়ের আকার বৃদ্ধির প্রধান কারণ। একই সাথে তা পরিবেশের বিশ্বাসযোগ্যতারও প্রধান উপাদান হয়ে উঠেছে।
Ashore, the arms of the great trebuchets rose one, two, three, and a hundred stones climbed high into the yellow sky. Each one was as large as a man’s head; when they fell they sent up great gouts of water, smashed through oak planking, and turned living men into bone and pulp and gristle. All across the river the first line was engaged. Grappling hooks were flung out, iron rams crashed through wooden hulls, boarders swarmed, flights of arrows whispered through each other in the drifting smoke, and men died…
সিরিজের সাথে অমিল
(এই অংশটুকু যারা টিভি সিরিজটি দেখেছেন তাদের জন্যে। মূল কাহিনী না জেনে এই অংশ পড়া উচিত হবে না।)
মূল বইয়ের ঘটনা পরম্পরা এত সুবিশাল যে সম্পূর্ণটা টিভি পর্দায় দেখানো সম্ভব না। তাই প্রয়োজন অনুযায়ীই অনেক কিছু বাদ দেওয়া হয়েছে। অনেক ঘটনা আবার চিত্রনাট্য লেখকদের ইচ্ছামতো পরিবর্তিত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন ছিল ডেনেরিস টারগেরিয়ানের অধ্যায়গুলোতে।
খাল ড্রোগো মারা যাওয়ার পরে ডেনেরিসের সাথে যে সামান্য কিছু ডোথরাকি জনগোষ্ঠীর লোকজন অবশিষ্ট রয়ে গেছিল, তারা দীর্ঘদিন ধরে মরুভূমির মধ্যে হেঁটে চলে। এ সময় অনেকেই মৃত্যুবরণ করে। ড্যানির ড্রাগনদের জন্মের সময়ে আকাশে যে ধূমকেতু দেখা গিয়েছিল, ডোথরাকিরা এর নাম দিয়েছিল ‘দ্যা ব্লিডিং স্টার’ বা ‘রক্তাভ নক্ষত্র’। এই ধূমকেতুকে অনুসরণ করেই এরকম তীব্র মরুভূমি ‘দ্য রেড ওয়েস্টে’ এসে পড়ে ড্যানি ও তার অনুসারীরা।
অনেকদিন পরে তারা একটি মৃত শহর খুঁজে পায় ডোথরাকিরা যার নাম দিয়েছিল ‘দ্যা সিটি অভ বোন’। এখানের গাছগাছালি ও জলাশয় ডেনেরিস ও তার অনুসারীদের জীবন বাঁচিয়ে দেয়। এই শহরে অবস্থানরত সময়েই ‘কার্থ’ শহরের পিয়্যাট প্রি ডেনেরিস ও তার ড্রাগনদের সম্মান দেখিয়ে নিজের শহরে আমন্ত্রণ জানায়।
পরবর্তীতে শহরের ধনাঢ্য ব্যবসায়ীদের কাছে ডেনেরিস সামরিক বাহিনী গড়ার উদ্দেশ্যে অর্থসাহায্য চায়, কিন্তু একে একে সবাই তাকে নিরাশ করে। সিরিজে যেমনটা দেখানো হয়েছে- জারো হোয়ান ডাক্সোস ড্যানিকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। তবে সিরিজের মতো বইয়ের কাহিনীতে সে প্রতারণা করেনি। বইয়ে এমনকি তার ভৃত্য ডোরিয়াহও প্রতারণা করেনি। এর আগেই রেড ওয়েস্টে সে মৃত্যুবরণ করে। ড্যানির ড্রাগনদেরও কেউ বন্দি করেনি।
বইয়ের বর্ণনায় ‘হাউজ অফ দ্যা আনডাইয়িং’ কোনো টাওয়ার নয়, বরং একটি প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ, যেটি কার্থের অন্যসব জমকালো স্থাপনার সাথে সম্পূর্ণ বেমানান। ডেনেরিস এখানে আনডাইয়িংদের জ্ঞান সন্ধান করতে প্রবেশ করে। এসময় সে ‘শেইড অভ দ্য ইভিনিং’ নামের পোশন পান করেছিল, যার ফলে পিয়্যাট প্রির মতো তার ঠোঁট নীলচে হয়ে যায়।
‘হাউজ অফ দ্যা আনডাইয়িং’ এর ভেতরে ডেনেরিস এক লম্বা সময় ধরে হেঁটে বেড়ায়। এসময় সে অনেকগুলো ভিশন দেখতে পায়। পিয়্যাট প্রি আগেই তাকে সাবধান করেছিল, এই ভিশনগুলো বিভিন্ন সময়ের সত্য ঘটনা বর্ণনা করবে। ভিশনগুলোর কোনোটিতেই সিরিজের মতো খাল ড্রোগোকে দেখায় না। একটি ভিশনে থ্রোনের পাশে একজন মৃত লোককে দেখা যায়, যার নেকড়ের মাথা ছিল। ড্যানি তার বাবা এইরিসকে দেখতে পায়। আরেকটা ভিশনে সে তার ভাই রেগার টারগেরিয়ানকে দেখতে পায়, যার কোলে একটি বাচ্চা ছেলে। এই ছেলেটিকে রেগার ‘সং অভ আইস এন্ড ফায়ার’ বলে উল্লেখ করে। ঝাপসাভাবে ডেনেরিস নিজের মৃত সন্তানকেও দেখতে পায়, তবে বয়সে সে তরুণ ছিল। এই ভিশনগুলো লেখক হিসেবে জর্জ মার্টিনের দূরদর্শিতার পরিচয় দেয়।
আনডেডদের সাথে দেখা হলে তারা ডেনেরিসকে রহস্যাবৃত কিছু প্রফেসি বলে:
Three fires must you light, one for life and one for death and one to love.
Three mounts must you ride, one to bed and one to dread and one to love.
Three treasons will you know, once for blood and once for gold and once for love.
পরিশেষে তারা তার প্রাণ কেড়ে নিতে চাইলে ড্রোগোন তাদের পুড়িয়ে দেয়। তবে পিয়্যাট প্রি বেঁচে থাকে যাকে সিরিজে মৃত দেখানো হয়।
আরিয়া স্টার্কের গল্পেও অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন রয়েছে। প্রথমত সে হ্যারেনহাল প্রাসাদে ল্যানিস্টারদের হাতে বন্দি হলেও জ্যাকেনের সাহায্যে প্রাসাদে বন্দি নর্থের অনেক গুরুত্বপূর্ণ লর্ডদের সে মুক্ত করে দেয়। পরবর্তীতে প্রাসাদটি রুজ বোল্টন দখল করে নেয়। বোল্টনের কাঠিন্য ও শীতলতা দেখে আরিয়া তার কাছে নিজের পরিচয় প্রকাশ করার সাহস পায়নি। রুজ বোল্টনের ভৃত্য হিসেবে তাকে রেখে দেওয়া হয়। সিরিজে দেখানো হয়, সে টাইউইন ল্যানিস্টারের ভৃত্য ছিল। এটি সিরিজের বেশ প্রশংসনীয় একটি পরিবর্তন। পরবর্তীতে আরিয়া, গেন্ড্রি আর হট পাই হ্যারেনহালের অস্ত্রশালা থেকে ঘোড়া আর তলোয়ার চুরি করে পালিয়ে যায়।
বইয়ের বর্ণনায় রব স্টার্কের সাথে বিয়ে হয় জেইন ওয়েস্টারলিংয়ের। ওয়েস্টারলিং ছিল ল্যানিস্টারদের ব্যানারম্যান। পশ্চিমাঞ্চলে যুদ্ধের সময়ে ধনুকের আঘাতে আহত হলে জেইন তার শুশ্রূষা করে। এভাবে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়, সেখান থেকে তা পরিণয়ে গড়ায়।
বইয়ে স্ট্যানিস ও রেনলি ব্যারাথিয়নের সাথে ক্যাটেলিন স্টার্কের সাক্ষাতের ঘটনাটি একটু ভিন্নভাবে ঘটে। এখানে একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, প্রথমবারের মতো স্ট্যানিসের ম্যাজিকসোর্ড ‘লাইটব্রিংগার’ দেখানো হয়, যা আলোর মধ্যে জ্বলজ্বল করছিল। এই তলোয়ার দিয়ে সে রেড গডের ক্ষমতা প্রদর্শন করে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার যা সিরিজে দেখানো হয়নি, তা হলো ব্র্যানের মতো জন স্নোর ‘ওয়ার্গ’ ক্ষমতা। দ্যা ওয়ালের অপরপাশে যেখানে ওল্ড গডরা সবচেয়ে প্রভাবশালী, সেখানে গিয়ে জন এই ক্ষমতাটি টের পায়। ঘুমের মাঝে সে নিজের নেকড়ে গোস্টের শরীরে প্রবেশ করতে পারে। এভাবে এক জায়গায় ওয়াইল্ডলিংদের আগমন সম্পর্কে আগে থেকেই জেনে যায়।
Look! The beast that tore the life from Halfhand. A warg walks among us, brothers. A WARG! This … this creature is not fit to lead us! This beastling is not fit to live!
একটা চলচ্চিত্র বা টিভি সিরিজ কখনোই বইয়ের সম্পূর্ণটা দেখাতে পারে না। এর একটা বড় কারণ হচ্ছে বই পড়ার সময়ে লেখকের লেখনীর সাথে যুক্ত হয় পাঠকের কল্পনা। উভয়ে মিলে এভাবে একটি চমৎকার পৃথিবী গড়ে তোলে। কিন্তু সেলুলয়েড বা টিভি পর্দায় কল্পনার দড়ি টেনে ধরতে হয়। এরপরেও ‘গেম অফ থ্রোনস’ সিরিজের শুরু ছিল প্রচন্ড সম্ভাবনাময়। যারা সিরিজের সমাপ্তি নিয়ে খানিকটা হলেও নিরাশ, তাদের জন্যে পরামর্শ থাকবে বইগুলো পড়ার জন্যে।
বই ও সিনেমা সম্পর্কিত চমৎকার সব রিভিউ আমাদের সাথে লিখতে আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন এই লিঙ্কে: https://roar.media/contribute/