সিনেমা দেখে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। তবে রুচির ভিন্নতার কারণে সবার হয়তো সব ধরনের সিনেমা ভালো লাগে না। কেউ হয়তো ভালবাসেন অ্যাকশন-অ্যাডভেঞ্চারধর্মী সিনেমা দেখতে, আবার কারো পছন্দ ক্রাইম-ড্রামা। কিন্তু রহস্য আর সায়েন্স ফিকশন ধাঁচের সিনেমা সবাইকেই কম-বেশি আকর্ষণ করে। বেশিরভাগ সায়েন্স ফিকশন চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে যে ব্যাপারটি ঘটে তা হলো এর বিষয়বস্তু হয় ভবিষ্যৎ প্রযুক্তি কিংবা মহাকাশ ভ্রমণকেন্দ্রিক এবং পরিচালকেরা সেখানে এমন কিছু ব্যাপার তুলে ধরার চেষ্টা করেন, যা ভবিষ্যতে আবিষ্কার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এরকম আবিষ্কার হওয়ার অনেক উদাহরণও রয়েছে।
তবে আমরা সেইদিকে যাবো না। আজকে জানবো বিশেষ কয়েকটি চলচ্চিত্রের নির্দিষ্ট কিছু ঘটনা সম্পর্কে। পুরনো সেসব সিনেমাগুলোতে এমন কিছু ব্যাপার দেখানো হয়েছিল, যেগুলো সময়ের ব্যবধানে বাস্তবে রূপ নিয়েছে। তর্কের খাতিরে ঘটনাগুলোকে হয়তো নিছক কাকতালীয় বলে উড়িয়ে দেয়া যায়। কিন্তু এভাবে মিলে যাওয়ার ব্যাপারটা আসলেই অনেক রহস্যময় বটে।
সুপার মারিও ব্রাদারস
সমালোচক থেকে শুরু করে সাধারণ দর্শক কারো মন জয় করতে পারেনি ১৯৯৩ সালে নির্মিত এ চলচ্চিত্রটি। তবে মুক্তির প্রায় চব্বিশ বছর পরও এর একটি দৃশ্য আজও আলোচনার বিষয়। চলচ্চিত্রের শেষের দিকে কুপা’র জগত (কুপা হচ্ছে মারিও সিরিজের এক ধরনের কচ্ছপ প্রজাতি) এবং বাস্তব জগত সম্পৃক্ত হতে শুরু করে। ঠিক তখন হঠাৎ করে নিউ ইয়র্কের দিগন্তে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা টুইন টাওয়ারে বিস্ফোরণ হয়। ঘটনাটি তখন ছিল নিছকই একটি সিনেমার দৃশ্য।
কিন্তু ঠিক আট বছর পর সেটা শুধু সিনেমার দৃশ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর সত্যি সত্যিই টুইন টাওয়ারে বোমা হামলা হয় এবং সেই দৃশ্যের মতো করেই ধ্বংস হয় ভবন দুটি। তখন সাধারণভাবেই মনে প্রশ্ন জাগে, ব্যাপারটা পুরোপুরি কাকতালীয় ছিলো? নাকি এ দুটোর মধ্যে কোনো যোগসূত্র আছে?
ডেমোলেশন ম্যান
আর্নল্ড শোয়ার্জনেগার, আশি-নব্বইয়ের দশকে টার্মিনেটর, টোটাল রিকল বা কম্যান্ডো চলচ্চিত্র দিয়ে হলিউড দাপিয়ে বেড়ানো এই অস্ট্রিয়ান অভিনেতাকে কে না চেনে? একে তো অভিনেতা, তার উপর জন্মসূত্রে অস্ট্রিয়ান। এই মানুষটি কখনও কোনো মার্কিন অঙ্গরাজ্যের শাসক হবে হবেন, ব্যাপারটি সেই সময় কারোরই চিন্তা-ভাবনায়ই আসেনি। কিন্তু শোয়ার্জনেগার রাজনীতিতে জড়ানোর অনেক আগেই দুজন মানুষ যেন সেটা ঠিকই আঁচ করতে পেরেছিলেন। তারা হলেন মার্কো ব্রাম্বিয়ার পরিচালিত ডেমোলেশোন ম্যান চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্যকার পিটার লেঙ্কোভ এবং রবার্ট রেনাউ।
পেশাগত কারণে একজন অভিনেতাকে অনেক চরিত্রেই অভিনয় করতে হয় এবং বিস্ময়টা সেখানেই। ডেমোলেশন ম্যান চলচ্চিত্রে শোয়ার্জনেগার কোনো চরিত্রেই অভিনয় করেননি। সিনেমারই ২০৩২ সালের একটি দৃশ্যে শোয়ার্জনেগার অতীতে রাষ্ট্রপতি ছিলেন বলে তুলে ধরা হয়। কথোপকথনটি ছিল অনেকটা এরকম-
– আমি মাত্র শোয়ার্জনেগার লাইব্রেরী থেকে কিছু সংবাদ-চিত্র পড়া শুরু করেছি আর ঠিক তখনই তুমি গাড়ি নিয়ে এলে…
– কি? শোয়ার্জনেগারের লাইব্রেরী?
– হ্যাঁ। শোয়ার্জনেগার প্রেসিডেন্সিয়াল লাইব্রেরী। আচ্ছা সে না অভিনেতা ছিল?
– সে প্রেসিডেন্ট ছিল?
– হ্যাঁ। যদিও জন্মগতভাবে সে এই দেশের নাগরিক না। কিন্তু তার জনপ্রিয়তার কারণে ৬১ তম সংশোধন অনুযায়ী…
– থাক থাক। আমার আর জানার ইচ্ছা নাই।
ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী আমেরিকার রাষ্ট্রপতি হননি সত্যি, কিন্তু চলচ্চিত্র মুক্তির ঠিক দশ বছর পর ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের শাসক হিসেবে নিযুক্ত হন শোয়ার্জনেগার।
ব্যাক টু দ্য ফিউচার ২
১৯৮৯ সালে মুক্তি পায় বিশ্ববিখ্যাত সায়েন্স ফিকশন সিরিজ ব্যাক টু দ্য ফিউচারের দ্বিতীয় চলচ্চিত্র ‘ব্যাক টু দ্য ফিউচার ২’। পরিচালক রবার্ট জেমেকিস তার এই চলচ্চিত্রে বেশ কিছু প্রযুক্তিগত অগ্রগতির পূর্বাভাস দিয়েছিলেন। ছবির এক পর্যায়ে এর প্রধান চরিত্র মার্টিকে দেখা যায় ২০১৫ সালে টাইম ট্রাভেল করতে এবং দেখানো হয় ২০১৫ সালের সেই পৃথিবীতে ভিডিও কল এবং ফ্ল্যাট স্ক্রিন টিভির প্রচলন শুরু হয়ে গেছে। ভেবে দেখুন, পরিচালক চাইলেই আরো আধুনিক কিছু দেখাতে পারতেন।
যেমন ধরুন ফ্ল্যাট স্ক্রিন টিভিতে ভিডিও কলের পরিবর্তে তিনি দেখালেন কল রিসিভ করার সাথে সাথে অপর প্রান্তের ব্যক্তির হলোগ্রাম ভেসে উঠছে। কিন্তু তিনি সেটা করেননি। কারণ পরিচালক শুধু ভবিষ্যৎ এর কথা চিন্তা করেননি। তিনি হুবহু ২০১৫ সালের চিত্র তুলে ধরতে চেষ্টা করেছেন এবং ঠিক ২০১৫ সালের মধ্যেই ফ্ল্যাট স্ক্রিন টিভি মোটামুটি সহজলভ্য হয়ে উঠে আর স্কাইপের মাধ্যমে ভিডিও কল তখন আহামরি কোনো ব্যাপার ছিলো না। এর পাশাপাশি চলচ্চিত্রে দেখানো ফিঙ্গারপ্রিন্ট এবং কন্ট্রোলার ছাড়া গেইম খেলতে পারার ব্যাপারগুলো ২০১৫ নাগাদ আবিষ্কার হয়ে গিয়েছিল।
২০০১: এ স্পেস অডিসি
বিখ্যাত পরিচালক স্ট্যানলি কুবরিক তার ১৯৬৮ সালের ছবি ‘২০০১: এ স্পেস অডিসি’তে প্রথমবার ট্যাবলেট কম্পিউটার দেখিয়েছিলেন। পরিচালক উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন ২০০১ সালের দিকে ট্যাবলেট কম্পিউটারের ব্যবহার অহরহ দেখা যাবে। হ্যাঁ, টেকনিক্যালি মাইক্রোসফট প্রথমবারের মতো ট্যাবলেট পিসি বাজারজাত করেছে ২০০০ সালে এবং সেটা ২০১০ সালের আগ পর্যন্ত ঠিক সেভাবে জনপ্রিয়তা পায়নি। কিন্তু একটা কথা মাথায় রাখতে হবে, পরিচালকরা জাদুকর নন যে, সবকিছু খাপে খাপে মিলে যাবে। তাছাড়া তার চলচ্চিত্রে তিনি কথা বলতে পারা কম্পিউটার ইন্টেলিজেন্সের ব্যাপকতা এবং এর কুটিল দিকগুলো তুলে ধরেছিলেন (যেমন এখন একবার শুরু হলে অ্যাপলের কম্পিউটার ইন্টিলিজেন্স সিরি’কে চুপ করিয়ে রাখা কষ্টসাধ্য)।
এনেমি অফ দ্য স্টেটস
মোবাইল ইলেকট্রনিক্সের মাধ্যমে সরকার গোপনে সাধারণ নাগরিকদের উপর নজরদারি করার ব্যাপারটা নব্বইয়ের দশকে কৌতুক হিসেবে দেখা হতো। এই নিয়ে ১৯৯৮ সালে একটি চলচ্চিত্রও মুক্তি পায়, নাম ‘এনেমি অফ দ্য স্টেটস’। এর মূল কাহিনী ছিল- একজন মানুষ সবাইকে বোঝানোর চেষ্টা করছে যে, জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা দুর্নীতিগ্রস্থ হয়ে গেছে এবং তারা অবৈধভাবে নাগরিকদের উপর নজরদারি করছে। ব্যাপারটি হয়তো বিপ্লবী কোনো ধারণা নয়। তবে ঠিক ১৫ বছর পর ২০১৩ সালে এনএসএ কেলেঙ্কারিতে প্রকাশ পায় যে নিরাপত্তা সংস্থা আসলেই নাগরিকদের উপর নজরদারি করছে এবং সেটা ঠিক ‘এনেমি অফ দ্য স্টেটস’ চলচ্চিত্রের মতো করেই।
ওয়াগ দ্য ডগ
১৯৯৭ সালে মুক্তি পাওয়া চলচ্চিত্র ওয়াগ দ্য ডগে দেখানো হয়, যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি এক যৌন কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে নিজের ক্যারিয়ার ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছেন। তখন দুজনের একটি দল ঠিক করা হয় সেই ব্যাপারটি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য। তারা এক মিথ্যা যুদ্ধের নাটক সাজায় এবং মিডিয়া তখন রাষ্ট্রপতির কাহিনী ফেলে সেই যুদ্ধের ব্যাপার নিয়ে উঠেপড়ে লাগে। ভেবে দেখুন, একজন প্রেসিডেন্টের কলঙ্ক ঢাকতে সরাসরি মিথ্যা যুদ্ধের আশ্রয় নেয়া? সেটা শুধু সিনেমাতেই সম্ভব। কিন্তু এমনই একটি ব্যাপার ঘটে ঠিক এর পরের বছর। যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি বিল ক্লিনটন, ফ্যাশন ডিজাইনার মনিকা লেভিন্সকির সাথে যৌন কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েন। পত্রিকাওয়ালারা যখন সেই গল্প নিয়ে ব্যস্ত, তখন এর ঠিক তিন দিন পরই সুদান এবং আফগানিস্তানে বোমা হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। সাথে সাথে ক্লিনটনের কেলেঙ্কারি রেখে সবার মাথা তখন ঘুরে যায় সুদান এবং আফগানিস্তানের দিকে। এখন প্রশ্ন জাগতেই পারে বোমা হামলা কি রাজনৈতিক কারণে ছিল? নাকি সেটা ছিল ওয়াগ দ্য ডগকে বাস্তবে পরিণত করার প্রচেষ্টা?
দ্য চায়নাটাউন
১৯৭৪ সালে মুক্তি পায় বিখ্যাত অভিনেতা জ্যাক নিকোলসন এবং ফায়ে ডানয়ে অভিনীত ক্লাসিক ড্রামা ‘চায়নাটাউন’। চলচ্চিত্রের এক পর্যায়ে জেইক (জ্যাক নিকোলসন) জানতে পারে এতদিন সে ক্যাথরিনকে চিনে এসেছে ভুল পরিচয়ে। ক্যাথরিন আসলে এভিলিনের (ফায়ে ডানয়ে) বোন নয়, তার আপন মেয়ে। অভিনেতা তখন জানতেন না এরকম একটি ঘটনা শীঘ্রই তার জীবনেও ঘটতে যাচ্ছে। চায়নাটাউন চলচ্চিত্রের প্রোমোশনের ইন্টার্ভিউয়ের আগ পর্যন্ত নিকোলসনও তার নানীকে জানতেন নিজের মা হিসেবে। ইন্টার্ভিউয়ের সময় রিপোর্টার নিকোলসনকে তার মায়ের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি প্রথমে তেমন কিছু বলতে পারেননি। পরে তার দুই-বোনের একজনকে (যিনি ছিলেন তার খালা) ফোন দিয়ে জানতে পারেন যে, এতদিন তিনি যাকে মা বলে জেনে এসেছেন তিনি আসলে তার নানী। আর তার অন্য মৃত বোনটি আসলে ছিলেন তার মা। এখানে ব্যাপার হলো জ্যাকের আসল মা জুন ছিলেন একজন প্রতিভাধর নৃত্যশিল্পী। জ্যাক যখন গর্ভে আসেন, তখন জুনের বয়স মাত্র ১৬ বছর। নানী এথেল চেয়েছিলেন জুন যাতে তার সম্ভাবনাময় কর্মজীবন চালিয়ে যান। তাই তিনি নিজে নিকোলসনের মা সেজে তার দেখভাল করা শুরু করেন এবং জুনকে বোন হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন।
পোলটারজিস্ট
স্টিভেন স্পিলবার্গের এই চলচ্চিত্রের কথা মনে আছে? কিংবা এতে ক্যারল এনি চরিত্রে অভিনয় করা হিথার অ’রোর্ককে? এ সিনেমাতে ভয় জাগানোর মতো অদ্ভুত অনেক দৃশ্য আছে। তবে এর সবচেয়ে ভয়ংকর ব্যাপার হলো, এতে ঠিক করা হয়েছে হিথারের মৃত্যুর তারিখ। ১৯৮২ সালে মুক্তি পাওয়া এই চলচ্চিত্রের এক পর্যায়ে ক্যারল এনির ভাই রবিকে অসুস্থ অবস্থায় বিছানায় শুয়ে থাকতে দেখা যায়। তার বিছানার ঠিক উপরের দেয়ালে ছিল ১৯৮৮ সুপার বোলের একটি হাতে আঁকা পোস্টার এবং তাতে সেই সালের জানুয়ারি মাসের ৩১ তারিখ বড় করে লেখা ছিল। পোস্টার অনুযায়ী ১৯৮৮ সালের সেই একই দিনে সুপার বোল অনুষ্ঠিত হয় এবং দুঃখজনক হলেও সত্যি, সেই দিনই সেপ্টিক শকের কারণে হিথার অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরদিন সকালে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
এবাভ সাসপিশন
১৯৯৫ সালে মে মাসের ২১ তারিখ এইচবিও চ্যানেলে ক্রিস্টোফার রিভস অভিনীত এ চলচ্চিত্রটি দেখানো হয়। সেখানে রিভস এক পুলিশ অফিসারের চরিত্রে অভিনয় করেন, মেরুদণ্ডে গুলির আঘাতে যার দুই পা অবশ হয়ে গেছে। টেলিভিশনে চলচ্চিত্রটি দেখানোর ঠিক ছয়দিন পরেই রিভসও ঘোড়ার উপর থেকে পড়ে গিয়ে মেরুদণ্ডে মারাত্মক আঘাত পান যার ফলে তার চার হাত-পা অবশ হয়ে যায়। কে জানতো পঙ্গু চরিত্রের প্রস্তুতি খুব শীঘ্রই তার বাস্তব জীবনে কাজে আসবে?
দ্য গেম অফ ডেথ
এমনিতেই অনেক গুজব রয়েছে ব্রুস লি অভিনীত শেষ এ চলচ্চিত্র নিয়ে। ১৯৭৮ সালে মুক্তি পাওয়া এ চলচ্চিত্রের প্রাথমিক শুটিং শেষ হওয়ার পর মাথা ব্যথার কারণে নেয়া ওষুধের এলার্জিক প্রতিক্রিয়ায় পরদিন সকালেই মারা যান বিখ্যাত এই অভিনেতা। অবশ্য সেটা এখানে মুখ্য বিষয় নয়। ব্যাপার হচ্ছে শুটিংয়ের এক পর্যায়ে সিনেমার জন্য একটি গোলাগুলির দৃশ্যে শট দিতে হয়েছিল ব্রুস লিকে। পরে জানানো হয় এই দৃশ্যের জন্য ব্যবহার করে হয়েছিল আসল গুলি থেকে বানানো বিশেষ এক ধরনের গুলি। ঘটনাটির পুনরাবৃত্তি ঘটে এর ঠিক ২২ বছর পর। ১৯৯৩ সালে দ্য ক্রো চলচ্চিত্রের শুটিংয়ের সময় একই ধরণের দৃশ্যে শট দেয়ার সময় মারা যান ব্রুস লির ছেলে ব্রেন্ডন লি। দৃশ্যতে প্রাণবন্ত রূপ দেয়ার জন্যে শুটিংয়ে আসল গুলি থেকে বানানো নতুন এক ধরণের ফাঁপা গুলি ব্যবহার করে হয়েছিল। কিন্তু ভুলক্রমে ফাঁকা গুলির জায়গায় পিস্তলের ম্যাগাজিনে একটি আসল গুলি রয়ে যায়। এবং পরবর্তীতে গোলাগুলির সেই দৃশ্য শুট করার সময় আসল গুলিটি ব্রেন্ডনের তলপেটে আঘাত করে। আহত অভিনেতাকে তাৎক্ষণিক ক্যালিফোর্নিয়ার এক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে টানা ৬ ঘণ্টা অস্ত্রোপচারের পর তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
দ্য ক্যাবল গাই
মৃত্যুর খবর রেখে এবারে একটু অন্যদিকে আসি। ১৯৯৬ সালে মুক্তি পায় জিম ক্যারি অভিনীত চলচ্চিত্র দ্য ক্যাবল গাই।তাতে চলচ্চিত্রের পরের দশ বছরের টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ভবিষ্যদ্বাণী একবারেই করে রেখেছিলেন জিম ক্যারি। চলচ্চিত্রের শেষ দিকে একটি ডায়লগ ছিল এরকম-
“ভবিষ্যৎ তো এখনই। অতিসত্বর আমেরিকায় সবার ঘরে ঘরে টেলিভিশন, টেলিফোন আর কম্পিউটার থাকবে। এক চ্যানেলে আপনি দেখবেন লুভর মিউজিয়াম, আর চ্যানেল ঘুরালেই রমণীদের কুস্তি। ঘরে বসেই করবেন নানা রকম শপিং, আর মন চাইলে ভিয়েতনামের ফ্রেন্ডের সাথে খেলবেন মর্টাল কমব্যাট গেইম। সম্ভাবনার কোনো শেষ নেই!”
কত সহজেই ঠাট্টাচ্ছলে অনলাইন গেমিং আর অনলাইন শপিং এর ভবিষদ্বাণী করেছেন অভিনেতা জিম ক্যারি।
দ্য ট্রুম্যান শো
একইভাবে ১৯৯৮ সালে মুক্তি পাওয়া ট্রুম্যান শো চলচ্চিত্রের মাধ্যমে জিম ক্যারি ভবিষ্যতের ‘রিয়েলিটি শো’গুলোর মিথ্যাচার এবং সেগুলোর প্রতি মানুষের আসক্তি নিয়ে আরেকটি ভয়ংকর ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। ফলাফল আমাদের চোখের সামনে। কিপিং আপ উইথ দ্য কার্দাশিয়ান, বিগ ব্রাদার, দ্য রিয়াল হাউজওয়াইভস, এমটিভি স্প্লিটভিলা কিংবা বিগ বসে আসক্ত মানুষের অভাব নেই চারিদিকে।