অতীত কাল থেকেই মানুষ বিভিন্ন প্রাণিকে যুদ্ধ–বিগ্রহের জন্য ব্যবহার করে এসেছে। এই প্রাণিগুলোর মধ্যে রয়েছে কুকুর, ঘোড়া, হাতি এবং উট। অবশ্য এই প্রাণিগুলো যুদ্ধের সময় মূলত মানুষের সহায়ক হিসেবে কাজ করত। যুদ্ধ বস্তুত মানুষই করত, এই প্রাণিগুলো নয়। কিন্তু যদি বড়সড় কোনো প্রাণিকে সৈনিক হিসেবে প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদেরকে মানুষের পরিবর্তে যুদ্ধ করার জন্য যুদ্ধক্ষেত্রে প্রেরণ করা হয়, তাহলে কেমন হবে? বিশালদেহী একদল গরিলা সৈন্য ভারী রাইফেল হাতে সারিবদ্ধভাবে যুদ্ধক্ষেত্রের দিকে অগ্রসর হচ্ছে, এই দৃশ্যটি কল্পনা করাটাই উদ্ভট। কিন্তু ঠিক এরকম দৃশ্যই কল্পনা করেছেন অস্ট্রেলীয় লেখক ম্যাথিউ রাইলি, তার ‘হেল আইল্যান্ড’ টেকনো–থ্রিলারে।
অবশ্য রাইলির ‘শেন স্কোফিল্ড’ সিরিজের প্রতিটি উপন্যাসের ঘটনাবলিই অকল্পনীয়, অভাবনীয় এবং অচিন্তনীয় প্রকৃতির, সুতরাং ২০০৫ সালে প্রকাশিত ‘হেল আইল্যান্ড’ উপন্যাসটি যে এর ব্যতিক্রম হবে না, সেটি বলাই বাহুল্য। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি, টানটান উত্তেজনা, অনন্যসাধারণ অ্যাকশন এবং বিচিত্র সব টুইস্টে রাইলির সব উপন্যাস ভরপুর। হেল আইল্যান্ডও এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নয়। বরং এই উপন্যাসে রাইলি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এমন একটি রূপ তুলে ধরেছেন, যেটি তুলে ধরতে পশ্চিমা লেখকরা, বিশেষ করে থ্রিলার লেখকরা, মোটেই উৎসাহিত বোধ করেন না, বরং সবসময় এড়িয়ে চলেন।
ক্যাপ্টেন শেন স্কোফিল্ড ইউনাইটেড স্টেটস মেরিন কোর ফোর্স রিকনিস্যান্সের (মার্কিন মেরিনের বিশেষ বাহিনী) একজন দুর্ধর্ষ কর্মকর্তা। নিজ দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের জন্য সে জীবন বাজি রেখে একের পর এক লড়াইয়ে অংশ নিয়েছে। কিন্তু সর্বশেষ অভিযানে সে বিরাট এক ব্যক্তিগত ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে এবং এজন্য তার মানসিক সুস্থতা নিয়ে অনেকেই সন্দিহান। এজন্য মার্কিন কমান্ড দেখতে আগ্রহী, নতুন কোনো অভিযানে তার প্রতিক্রিয়া কেমন হয়।
এই উদ্দেশ্যে স্কোফিল্ডের নেতৃত্বাধীন ১০ সদস্যের একটি মেরিন রিকন টিমকে প্রেরণ করা হয়েছে প্রশান্ত মহাসাগরের এক ক্ষুদ্র দ্বীপে। মানচিত্রে দ্বীপটির কোনো উল্লেখ নেই। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মার্কিন সৈন্যরা মরণপণ যুদ্ধের পর একটি আত্মঘাতী জাপানি সৈন্যদলের কাছ থেকে এই দ্বীপটি দখল করে নিয়েছিল। তারপর থেকেই মানচিত্র থেকে দ্বীপটির নাম মুছে দেয়া হয়েছে। কিন্তু মার্কিন মেরিনরা দ্বীপটির একটি মানানসই নাম রেখেছিল– ‘হেল আইল্যান্ড’।
দ্বীপে রয়েছে একটি রিফুয়েলিং স্টেশন, যেটি থেকে মার্কিন যুদ্ধজাহাজগুলোতে জ্বালানি সরবরাহ করা হয়। মার্কিন বিমানবাহী জাহাজ ‘ইউএসএস নিমিৎজ’ সমুদ্রে টহল শেষে মূল ঘাঁটিতে ফেরার পথে দ্বীপটিতে জ্বালানি নেয়ার জন্য থেমেছিল। কিন্তু দ্বীপে এক সুনামি আঘাত হেনেছে এবং সুনামির পর থেকেই নিমিৎজের সঙ্গে সমস্ত যোগাযোগ ছিন্ন হয়ে গেছে। নিমিৎজের সঙ্গে থাকা দুইটি ক্রুজার এবং দ্বীপটির যোগাযোগ কেন্দ্রের সঙ্গেও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। কয়েকদিন আগেই অঞ্চলটিতে একটি উত্তর কোরীয় সাবমেরিনকে টহল দিতে দেখা গেছে। এজন্য নিমিৎজের পরিণতি নিয়ে মার্কিন কমান্ড উদ্বিগ্ন। পরিস্থিতি সরেজমিনে তদন্ত করার জন্য স্কোফিল্ডের সৈন্যদলকে দ্বীপটিতে প্রেরণ করা হয়েছে।
কিন্তু স্কোফিল্ড মার্কিন কমান্ডের প্রকৃত উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ পোষণ করতে শুরু করে, কারণ তাদের সঙ্গে আরো তিনটি বিশেষ বাহিনীর টিমকে প্রেরণ করা হয়েছে। ডেল্টা ফোর্স, নেভি সিল এবং ৮২তম এয়ারবোর্ন ডিভিশনের ১০ জন করে সদস্যের তিনটি দল স্কোফিল্ডের সঙ্গে দ্বীপটিতে পৌঁছে। এই চারটি বাহিনীর রণকৌশল কারো সঙ্গেই কারোটা মেলে না, তাই স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে এদেরকে একসঙ্গে কোনো অভিযানে পাঠানো অর্থহীন। স্কোফিল্ডের ধারণা হয়, এই অভিযান আসলে কোনো মহড়ার অংশ। কিন্তু মহড়ায় ব্যবহৃত নকল গুলির বদলে তাদের কাছে রয়েছে আসল গুলি!
দ্বীপে পৌঁছানোর পর পরিকল্পনা মোতাবেক স্কোফিল্ডের মেরিন রিকন, নেভি সিল ও এয়ারবোর্ন ইউনিট নিমিৎজের ভিতরে তিনটি পৃথক অংশে অবতরণ করে, আর ডেল্টা ইউনিট দ্বীপের মূল ভূখণ্ডে তদন্ত শুরু করে। অচিরেই স্কোফিল্ড এবং অন্যরা নিমিৎজের ভেতর তীব্র যুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার নিদর্শন খুঁজে পায়। এরই মধ্যে আকস্মিকভাবে সিল টিমের সঙ্গে অজ্ঞাত শত্রুদের যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়, কিন্তু সিলরা মোটেই সুবিধা করতে পারেনি। অচিরেই তাদের টিম নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় এবং স্কোফিল্ডের দল রেডিওর মাধ্যমে এই ভয়াবহ যুদ্ধের আওয়াজ শুনতে পায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই এয়ারবোর্ন টিমের সদস্যরাও অজ্ঞাত শত্রুদের হাতে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।
এই অজ্ঞাত শত্রু আর কেউ নয়, যুদ্ধের জন্য প্রশিক্ষিত, পরিমার্জিত ‘এম–৪ কোল্ট কমান্ডো’ রাইফেলধারী এবং অত্যাধুনিক ‘সিগনেট–৫’ রেডিও–ওয়েভ ডিকোডারে সজ্জিত কয়েক শত গরিলা! স্কোফিল্ডের দলের সঙ্গেও শীঘ্রই গরিলাদের যুদ্ধ শুরু হয়ে যায় এবং দলটির বেশ কয়েকজন সদস্য নিহত হয়। ইতোমধ্যে স্কোফিল্ডের দল জাহাজের অভ্যন্তরে একজন লোকের সাক্ষাৎ পায়, যে নিজেকে ‘ডারপা’র (মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সামরিক গবেষণা সংস্থা) একজন বিজ্ঞানী হিসেবে পরিচয় দেয়।
সে স্কোফিল্ডের দলকে জানায়, এই গরিলারা ছিল ‘প্রোজেক্ট স্টর্মট্রুপার’ নামক ডারপার একটি প্রকল্প। ডারপা যুদ্ধক্ষেত্রে মানুষের পরিবর্তে গরিলাদের ব্যবহার করতে চাইছিল এবং এই উদ্দেশ্যে গরিলাদের শরীরে তারা জিনগত ও বৈদ্যুতিকভাবে পরিবর্তন ঘটায়। এই গরিলারা সম্পূর্ণ ভীতিহীন ভয়ঙ্কর এক যোদ্ধা দলে পরিণত হয়। ডারপা এদেরকে নিয়ন্ত্রণ করত ‘গ্রাফটিং প্রযুক্তি’র সাহায্যে। তাদের ক্ষমতা পরীক্ষা করার জন্য তাদের বিরুদ্ধে ৬০০ মেরিনের একটি দলকে নামানো হয়েছিল, কিন্তু গরিলারা মেরিনদের নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে। কিন্তু এর পরপরই গরিলারা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় এবং ডারপার বিজ্ঞানীদের খুন করে ফেলে। এখন তারা সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণহীন এবং স্কোফিল্ডের ক্ষুদ্র দল ছাড়া তাদেরকে ঠেকানোর মতো আর কেউ নেই!
এভাবেই অগ্রসর হয়েছে হেল আইল্যান্ড উপন্যাসটির কাহিনী। রাইলির অন্যান্য উপন্যাসের তুলনায় হেল আইল্যান্ড অপেক্ষাকৃত সংক্ষিপ্ত। কিন্তু তাই বলে অন্যান্য উপন্যাসের তুলনায় এটিতে রোমাঞ্চ আর উত্তেজনার মাত্রা মোটেই কম নয়। কারণ স্কোফিল্ডের অন্য প্রতিদ্বন্দ্বীরা সবাই ছিল মানুষ, কিন্তু এবার তার প্রতিদ্বন্দ্বী এমন এক প্রাণি, জিনগত পরিবর্তনের মাধ্যমে যার ভয়ভীতি ক্ষুধাতৃষ্ণা ক্লান্তি সবই দূর করে দেয়া হয়েছে। বস্তুত এই উপন্যাসে যেটা হয়েছে, সেটাকে যুদ্ধ না বলে ম্যাসাকার বলাই ভালো, আর এই ম্যাসাকার থেকে আত্মরক্ষার জন্যই স্কোফিল্ডের লড়াই।
স্কোফিল্ডের সিনিয়ররা যেরকম আশঙ্কা করছিল, এই উপন্যাসে সেটা হয় নি। বিপদের মুখে স্কোফিল্ড দিশেহারা হয়ে পড়ে নি। পূর্ববর্তী উপন্যাসের মনস্তাত্ত্বিক আঘাত তার রণকুশলতাকে হ্রাস করে নি। কিন্তু কেবল রণকুশলতা দিয়ে তো আর অল্প কয়েকজন সৈন্যের পক্ষে শত শত খুনে গেরিলাকে প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়! এজন্য শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত উপন্যাসটি পাঠকের মনোযোগকে চুম্বকের মতো আকর্ষণ করে রাখে।
হেল আইল্যান্ড উপন্যাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দুটি অস্বস্তিকর দিক তুলে ধরা হয়েছে, যেটি সাধারণত পশ্চিমা থ্রিলারগুলোতে দেখা যায় না বললেই চলে। পশ্চিমা লেখকরা, বিশেষত থ্রিলার লেখকরা, বরাবরই তাদের লেখায় তাদের রাষ্ট্রগুলোর একটি মর্যাদাসম্পন্ন ও মহৎ ভাবমূর্তি উপস্থাপন করে থাকেন (‘জেমস বন্ড’ সিরিজের উপন্যাসগুলো যার প্রকৃষ্ট নিদর্শন)। রাইলি এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। তার নিজ দেশ অস্ট্রেলিয়ার তীব্র মার্কিনপন্থী পররাষ্ট্রনীতি সত্ত্বেও তিনি এই উপন্যাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এমন চিত্র তুলে ধরেছেন, যেটিকে ঠিক ‘মর্যাদাসম্পন্ন’ হিসেবে অভিহিত করা যায় না।
হেল আইল্যান্ডে উঠে এসেছে ডারপার ভূমিকার কথা। ‘ডিফেন্স অ্যাডভান্সড রিসার্চ প্রোজেক্টস এজেন্সি’ (ডারপা) মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি গবেষণা সংস্থা, কিন্তু এর কার্যপ্রণালী বিশ্বের শীর্ষ গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর চেয়েও গোপনীয়। সংস্থাটির মূল দায়িত্ব হচ্ছে এমন অত্যাধুনিক সব প্রযুক্তির সৃষ্টি করা, যেগুলো বিশ্বব্যাপী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক আধিপত্যকে বজায় রাখা ও জোরদার করা। কিন্তু তারা কী নিয়ে গবেষণা করছে বা কোন ধরনের আবিষ্কার করছে, সেগুলো সাধারণ মানুষ তো বটেই, বহু বিশেষজ্ঞের কাছেও অজ্ঞাত। এক্ষেত্রে একটি উদাহরণই যথেষ্ট। বর্তমান পৃথিবীতে শত শত কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে, কিন্তু এদের মধ্যে খুব কম সংখ্যক মানুষই জানে যে, ইন্টারনেট ডারপার তৈরি।
উপন্যাসে দেখানো হয়েছে, ডারপা গরিলাদের ‘সুপার-সোলজার’ হিসেবে গড়ে তুলেছে। বাস্তবে এখন পর্যন্ত এই ধরনের কোনো প্রকল্পের কথা জানা যায়নি, কিন্তু ডারপা যে কখনো সত্যিই এই ধরনের প্রকল্প হাতে নেয়নি, সেটা কোনো সাধারণ মানুষের পক্ষে নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। অবশ্য, ডারপা যে ‘সুপার-সোলজার’ তৈরি করার প্রচেষ্টা বাস্তবে করেনি, এমনটা কিন্তু নয়। কিন্তু সেক্ষেত্রে তারা মানুষের শরীরেই বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন ঘটিয়ে মানুষের সামর্থ্য বৃদ্ধি করে তাদেরকে ‘অতিমানবীয় সৈনিক’ হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিল। স্নায়ুযুদ্ধের সময় গৃহীত এই প্রকল্পটির উদ্দেশ্য ছিল তদানীন্তন সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য কোনো যুদ্ধে এই ‘অতিমানবীয় সৈনিক’দের ব্যবহার করে নিজেদের বিজয় নিশ্চিত করা। অবশ্য ধারণা করা হয়, এই প্রকল্প সফল হয়নি, কিন্তু এই প্রকল্প যে এখনো চলছে না, সেটি নিশ্চিতভাবে বলাও সম্ভব নয়।
ডারপার এই কার্যক্রম কতটুকু নৈতিক? ধ্বংসাত্মক উদ্দেশ্যে প্রযুক্তির এই অপব্যবহার করা কতটুকু সঠিক? কিংবা এইসব প্রকল্পে মানুষ বা অন্য প্রাণিকে যেভাবে গিনিপিগ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে, সেটা কি মানবাধিকার বা প্রাণি অধিকারের লঙ্ঘন? রাইলির উপন্যাস পড়ে এবং বাস্তবে ডারপার অতীত কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করে ডারপার কার্যক্রম সম্পর্কে এই প্রশ্নগুলো উত্থাপিত হয়। অবশ্য বাস্তবে ডারপার উদ্দেশ্যে এই প্রশ্নগুলো ছুঁড়ে দেয়া তো পরের ব্যাপার, অধিকাংশ মানুষ ডারপার অস্তিত্ব সম্পর্কেই অচেতন।
হেল আইল্যান্ডে রাইলি অপর যে বিষয়টি স্পষ্টভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন, সেটি হচ্ছে– নিজ স্বার্থ উদ্ধারের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে কোনো পন্থা অবলম্বন করতে সক্ষম। উপন্যাসে কেবল গরিলাদের ক্ষমতা পর্যবেক্ষণের জন্য মার্কিন সরকার ৬০০ জন মেরিনকে নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়! এক্ষেত্রে তাদের স্বার্থ কী? তাদের স্বার্থ হচ্ছে বিশ্বব্যাপী মার্কিন আধিপত্য বিস্তার। এই উদ্দেশ্যে তারা নিজেদের সৈনিকদেরকে নিজেরাই খুন করে ফেলতেও দ্বিধা বোধ করে না।
বাস্তবে হয়তো মার্কিন সরকার কখনো নিজেদের এত বিরাট সংখ্যক সৈন্যকে নিজেরা খুন করেনি (কিংবা করে থাকলেও সেটা সাধারণ মানুষের জানার কথা নয়)। কিন্তু বিশ্বব্যাপী তাদের কার্যকলাপের মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এটি স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, বিশ্বব্যাপী নিজেদের একচ্ছত্র আধিপত্য রক্ষা জন্য তারা যেকোনো ভয়ঙ্কর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে প্রস্তুত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বব্যাপী নিজেদের প্রভাব অক্ষুণ্ণ রাখার স্বার্থে বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের (ভিয়েতনাম, গ্রানাডা, পানামা, ইরাক প্রভৃতি) বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগে আগ্রাসন চালিয়েছে, অভ্যুত্থান ও হত্যাকাণ্ডের আয়োজন করেছে, নিষ্ঠুর একনায়কদের সমর্থন দিয়েছে (এবং দিচ্ছে) এবং গণহত্যাকে সক্রিয় বা মৌনভাবে সমর্থন করেছে। একইভাবে তারা নিজেদের নাগরিকদের (জাপানি–আমেরিকান সম্প্রদায়, বামপন্থী ও সন্দেহভাজন বামপন্থী প্রভৃতি) বিরুদ্ধেও দমনপীড়ন চালিয়েছে এবং এখনো মার্কিন জনসাধারণের ওপর ব্যাপক নজরদারি অব্যাহত রেখেছে।
সামগ্রিকভাবে, বিশ্ব রাজনীতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ডারপার যে ভূমিকা, সেটিই রাইলি একটি রোমাঞ্চকর অ্যাকশন ও প্রযুক্তিগত চমকে পরিপূর্ণ উপন্যাসের আকারে ‘হেল আইল্যান্ডে’ তুলে ধরেছেন। বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী, হরর উপন্যাস আর রোমাঞ্চকর সাহিত্যের পাঠকদের জন্য তাই ‘হেল আইল্যান্ড’কে সুখপাঠ্য হিসেবে বিবেচনা করা যায়।
বইটি সংগ্রহ করতে
বইয়ের নাম: হেল আইল্যান্ড
লেখকের নাম: ম্যাথিউ রাইলি
প্রকাশক: প্যান ম্যাকমিলান
প্রকাশকাল: ২০০৫