ডেভেনশায়ার রেজিমেন্টের কর্নেল ম্যাকেনজি জানতেন না এটা পুরোটাই জার্মানদের পূর্বপরিকল্পনা ছিল। জয়ের আশায় তিনি যদি জার্মান শিবিরে আক্রমণ করে বসেন, তার পরিণতি হবে ভয়াবহ। যে করেই হোক সেই আক্রমণ শুরুর আগেই থামাতে হবে। প্রায় অসম্ভব এই দায়িত্বটি দেয়া হয় দুই ল্যান্স কর্পোরাল ব্লেক এবং স্কোফিল্ডকে। কমান্ডার এরিনমোরের চিঠি নিয়ে তাদের পাড়ি দিতে হবে শত্রুদের ঘাঁটি, পৌঁছাতে হবে সকালের মধ্যে। এ যেন সময়ের সাথেও যুদ্ধ। এই যুদ্ধে হারলে মারা যাবে ১,৬০০ সৈন্য, যার মধ্যে আছে ব্লেকের ভাই।
পরিচালক স্যাম মেন্ডিস এর আগেও আমাদের আমেরিকান বিউটি, জারহেড বা স্কাইফলের মতো চমৎকার কিছু সিনেমা উপহার দিয়েছেন। তবে এই সিনেমাটির ক্ষেত্রে তার ভিন্ন একটি পরিকল্পনা ছিল। তিনি বলেছেন,
আমি চেয়েছিলাম আপনাদের সে সময়ের বাস্তব অভিজ্ঞতা দিতে। যাতে আপনারা এই দুই সৈনিকের প্রতিটি পদক্ষেপ, প্রতিটি নিঃশ্বাস অনুভব করতে পারেন। তাই এই গল্পটি “ওয়ান শটে” বলার চাইতে ভাল আর কোনো উপায় হতে পারে না।
আর এই কঠিন কাজটির দায়িত্ব তিনি দিয়েছিলেন রজার ডিকিন্সকে। তিনি ইতিমধ্যেই স্কাইফল, সিকারিও, ব্লেড রানার ২০৪৯ সিনেমায় তার নৈপুণ্য দেখিয়ে বর্তমান সময়ের অন্যতম সেরা সিনেম্যাটগ্রাফারের খ্যাতি অর্জন করেছেন।
আলফ্রেড হিচককের সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার মুভি ‘রোপ’ চলচ্চিত্র নির্মাণের সম্পূর্ণ নতুন এই ওয়ান শট পদ্ধতির সাথে আমাদের পরিচয় করিয়ে দেয়। যদিও আসলেই সে সময়ে এক শটে পুরো মুভি ধারণ করা সম্ভব ছিল না। তেমনি ১৯১৭ মুভিটিও এক শটে ধারণ করা হয়নি। পুরো মুভিটিতে ৬১টির বেশি কাট বা দৃশ্য পরিবর্তন রয়েছে যেগুলোর শ্যুটিং হয়েছে যুক্তরাজ্যের ছয়টি আলাদা জায়গায়। তাই মুভিটিকে “ওয়ান শটে” পরিণত করতে প্রয়োজন হয়েছে নিখুঁত টাইমিং, সর্বোচ্চ স্তরের পরিকল্পনা, দুর্দান্ত ক্যামেরার কারসাজি এবং অসাধারণ এডিটিংয়ের।
চিত্রনাট্য
স্যাম মেন্ডিসের দাদা আলফ্রেড হুবার্ট মেন্ডিস মাত্র ১৭ বছর বয়সেই অংশগ্রহণ করেন প্রথম বিশ্বযুদ্ধে। যুদ্ধে তিনি বার্তাবাহকের ভূমিকায় অবর্তীণ হন। তিনি পরবর্তীতে তার নাতি-নাতনিদের শোনাতেন বিশ্বযুদ্ধের সেই দিনগুলোর কথা, যার মধ্যে একটি ঘটনা স্যাম মেন্ডিসের মনে গেঁথে যায়, যেখানে আলফ্রেড জার্মান সেনাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে, সন্ধ্যায় একা নো ম্যানস ল্যান্ড পার হয়ে একটি বার্তা পৌঁছে দেন।
মেন্ডিস সেই গল্পটি থেকেই অনুপ্রাণিত হয়েই ১৯১৭ সিনেমাটির চিত্রনাট্য লেখেন। পুরোটি মেন্ডিস একা লিখেননি, তাকে সাহায্য করেছেন ক্রিস্টি উইলসন-কিয়ারনস। ৩২ বছর বয়সী ক্রিস্টি গিয়েছিলেন লন্ডনের ইম্পেরিয়াল ওয়ার মিউজিয়ামে, পড়েছেন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সকল চিঠি এবং ডায়েরি। ঘুরে দেখেন ফ্রান্সের উত্তরাঞ্চল, যেখানেই মুভির সকল ঘটনা ঘটেছিল। ওয়ান শট মুভির স্ক্রিপ্ট কেমন হবে তা নিয়ে কোনো ধারণাই ছিল না ক্রিস্টির। তারপরেও স্যামের সাথে এক হয়ে সম্পূর্ণ আলাদা ধারার পুরো চিত্রনাট্যটি সম্পূর্ণ করেন।
সেট নির্মাণ
যেহেতু ১৯১৭ মুভিটি দেখতে ওয়ান শট হবে, প্রতিটি টেকের দৈর্ঘ্য বেশ বড় হবে, এবং একটি সেট কখনও দুবার ব্যবহার করা হয়নি, তাই অন্যান্য মুভির চাইতে এর সেট নির্মাণে একটু বেশিই প্রস্তুতি এবং পরিকল্পনার প্রয়োজন ছিল। প্রোডাকশন ডিজাইনার ডেনিস গেসনার এবং স্যাম মেন্ডিস মিলে ফ্র্যাংক হার্লি নামের এক ফটোগ্রাফারের প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়কার তোলা বেশ কিছু ছবি সংগ্রহ করেন। ছবিগুলো ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট এবং ট্রেঞ্চের সেসময়ের অবস্থা বেশ ভালোভাবে ফুটিয়ে তুলতে পেরেছিল, যা গেসনার এবং পুরো আর্ট ডিপার্টমেন্টকে সেট নির্মাণে বেশ সাহায্য করে।
মূল সেট নির্মাণের আগেই ডেনিস গেসনার শেপরেটন স্টুডিওতে একটি মডেল সেট নির্মাণ করেন। এটি বেশ বড় ভূমিকা রাখে লাইটিং এবং ক্যামেরা পরিচালনায়। যেমন- স্কোফিল্ড যখন একটি ধ্বংস হওয়া শহরের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল, সেই দৃশ্যে আলোর প্রধান উৎস ছিল আকাশে ছোড়া কিছু ফ্লেয়ার। তাই তাদের আগে থেকে ঠিক করতে হয়েছে ফ্লেয়ারগুলো আকাশে কত সময় ধরে থাকবে, যা তারা নির্ধারণ করে সে শহরের মডেল সেটটিতে। ছোট একটি আলোর উৎসের মাধ্যমে তারা এটিও নির্ধারণ করে ফ্লেয়ারগুলো কোন পথে যাবে, যার ফলে কোন দিকে বিল্ডিংগুলোর ছায়া পড়বে এবং জানালা দিয়ে ঠিক কীভাবে আলো প্রবেশ করবে।
মূল সেট নির্মাণ একটু বেশিই চ্যালেঞ্জিং ছিল, কারণ অনেকগুলো বিষয় মাথায় রাখতে হয়েছিল। যেহেতু প্রতিটি টেকের দৈর্ঘ্য বেশ বড় এবং ক্যামেরা সবসময় অভিনেতাদের অনুসরণ করছিল, তাই প্রতিটি সেটে যথেষ্ট পরিমাণ জায়গা ছিল ক্যামেরা এবং ক্রুদের জন্য। নো ম্যানস ল্যান্ডের কাঁটাতার বা জার্মান বাঙ্কার সেভাবেই নির্মাণ করা হয়েছিল। এমনকি একটি জানালা এমনভাবে নির্মাণ করা হয়েছিল যাতে তার মধ্যে দিতে ক্যামেরা নিয়ে যাওয়ার সময় সেটি আলাদা করা যায় যায়।
বলতে গেলে সিনেমার শুরু এবং শেষ দুটোই ট্রেঞ্চে। তাই প্রায় ৫,২০০ ফুট লম্বা ট্রেঞ্চ নির্মাণ করার আগে ডেনিস গেসনার ছুটে গিয়েছিলেন ফ্রান্সে। সেখানে তিনি ভিমি রিজের ট্রেঞ্চ এবং সব সুড়ঙ্গ ঘুরে দেখেন। তাছাড়া ব্রিটিশ এবং জার্মান ট্রেঞ্চের মধ্যে গঠনগত এবং উপাদানগত বেশ পার্থক্য আছে। সেসব বিষয়েও খেয়াল রাখতে হয়েছে তাকে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল সময়। কারণ প্রতি দৃশ্য বা শটের দৈর্ঘ্য হতে হবে সেই সেটের সমান। অর্থাৎ কোনো দৃশ্য যদি আট মিনিটের হয় তাহলে অভিনেতাদের সংলাপ বলতে বলতে সেই সেটের একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে যেতে ঠিক আট মিনিট সময় লাগবে হবে। ভক্সকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে মেন্ডিস জানান, তারা কোন দৃশ্য সম্পন্ন করতে কত সময়ের প্রয়োজন তা জানার আগে তারা কোনো সেট নির্মাণ করেননি, যার জন্য প্রয়োজন হয়েছে অনেক বেশি রিহার্সালের।
রিহার্সাল
সব সিনেমার জন্যই রিহার্সাল প্রয়োজন, তবে ১৯১৭ সিনেমাটির জন্য সে প্রক্রিয়াটি কিছুটা ভিন্ন। যেখানে বেশিরভাগ সিনেমার রিহার্সাল হয় শ্যুটিংয়ের দিনেই, কিন্তু ১৯১৭ সিনেমার জন্যে অভিনেতা ডিন চার্লস চ্যাপম্যান এবং জর্জ ম্যাককেকে ছয় মাস আগে থেকেই রিহার্সাল শুরু করতে হয়। রিহার্সাল শুরু হয় শ্যাপরেটন স্টুডিওতে এবং এরপর তারা চলে যান শ্যুটিং স্পটে। সেখানে তখন ঘাস বাদে কিছুই ছিল না। সে অবস্থাতেই তাদের রিহার্সাল করতে হয়েছে, এবং সে রিহার্সাল অনুযায়ী প্রতিটি সেট কতটুকু বড় হবে তা পরিমাপ করা হয়েছে। তারপরেই সেখানে মূল সেট নির্মাণ করা হয়েছে।
তবে শুধু সেট নির্মাণের জন্যে নয়, এত বেশি রিহার্সালের প্রয়োজন হয়েছে যাতে করে প্রত্যেক অভিনেতা তাদের সংলাপের পাশাপাশি ক্যামেরা এবং অন্যান্য ক্রুদের অবস্থান সম্পর্কেও মনে রাখেন। তারপরেও অল্প কিছু ভুল অবশ্যই হয়েছে। যেমন- মুভির শেষ অংশে যুদ্ধের ময়দানের মাঝ দিয়ে জর্জ দৌড়ে যাচ্ছিল, সেখানে তাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল যাতে সে সোজাসুজি তা পার হয়ে যায়, সেভাবেই রিহার্সাল করেছিল সে। কিন্তু বিস্ফোরণ এবং প্রায় ৫০০ সৈন্যের মাঝ দিয়ে যাওয়া অতটা সম্ভব ছিল না। তাই দ্বিতীয় টেকে দূর্ঘটনাবশত দুজন সৈন্যের সাথে পর পর ধাক্কা খায় জর্জ। কিন্তু তাকে আগেই নির্দেশ দেয়া হয়েছিল যতক্ষণ না স্যাম থামতে বলছে, থামা যাবে না। তাই জর্জ না থেমেই সে টেক সম্পূর্ণ করে, যা পুরো দৃশ্যটিকে আরো বেশি উত্তেজনাময় করে তোলে।
লাইটিং
যেহেতু ক্যামেরা সবসময় অভিনেতাদের সাথে সাথে এগিয়ে যাবে, পেছানোর বা থামার তেমন কোনো সুযোগ নেই, তাই ক্যামেরাকে ৩৬০ ডিগ্রিতেই পরিচালনা করা হয়েছে। কিন্তু এতে একটি সমস্যা দেখা দেয়, এত বড় সেটে অতিরিক্ত আলোর উৎস ব্যবহার করা। তাই দিনের দৃশ্যগুলোতে তাদের প্রাকৃতিক আলোর উৎসের উপর নির্ভর থাকতে হয়েছিল। আর সেজন্য রজার ডিকিন্স বেছে নিয়েছিলেন মেঘলা আকাশকে। কারণ রোদে ধারাবাহিকতা রক্ষা করা সম্ভব ছিল না।
আকাশে সূর্যের দেখা পাওয়া মাত্রই শ্যুটিং বন্ধ হয়ে যেত। কখনো সেটা সারাদিনের জন্যেই। অবশ্য মেঘের অপেক্ষায় থাকতে থাকতে তারা রিহার্সাল করতেন। আর মেঘের দেখা পাওয়ামাত্রই সবাই ছুটে যেতেন এবং শ্যুটিং শুরু করতেন। তবে মুভির একেবারে শেষ অংশে যেখানে স্কোফিল্ড গাছের নিচে বসে ছিল, সেখানে ডিকেন্স চেয়েছিলেন যাতে জর্জের মুখে কিছুটা সূর্যের আলো পড়ে। তাই সে দৃশ্যটা সেভাবেই ধারণ করা হয়েছে এবং স্যাম মেন্ডিসও সেটা পছন্দ করেছিলেন।
তবে রাতের দৃশ্যে এবং বাঙ্কারে অতিরিক্ত আলোর উৎস ব্যবহারের সুযোগ ছিল ডিকিন্সের কাছে। ব্রিটিশ বাঙ্কারে ব্যবহার করেছিলেন ৫০০ ওয়াটের কিছু বাল্ব, যেগুলোর আলো কমিয়ে তেলের বাতির আদলে সাজানো হয়েছিল। শহরের দৃশ্যে ফ্লেয়ার ব্যবহার করেছিলেন এবং জ্বলন্ত গির্জার দৃশ্যে ডিকিন্স প্রায় ৫০ ফুট লম্বা একটি লাইট টাওয়ার ব্যবহার করেন।
ক্যামেরা
১৯১৭ সিনেমাটি ধারণের জন্য ক্যামেরা আরেকটি গুরত্বপূর্ণ বিষয় ছিল। কারণ ক্যামেরা কখনো জিপে করে, কখনো মোটর সাইকেলে করে, কখন ক্রেনে, এমনকি ড্রোনের মাধ্যমে অনুসরণ করেছে অভিনেতাদের। আবার কখনো ক্রুরা ক্যামেরা হাতে কর্দমাক্ত ট্রেঞ্চ বা নো ম্যান্স ল্যান্ডে ছুটেছে অভিনেতাদের পিছু পিছু। এসব কারণে রজার ডিকিন্সের প্রয়োজন ছিল একটি ছোট এবং সহজে বহনযোগ্য ক্যামেরা।
এরি (ARRI), যারা বিশ্বের অন্যতম বিখ্যাত ক্যামেরা ডিজাইনার এবং প্রস্তুতকারক, তারা ডিকেন্সের ডিকেন্সের চাহিদা অনুযায়ী এলেক্সা সিরিজের নতুন একটি ক্যামেরা নির্মাণ করেছিল। অর্থাৎ ১৯১৭ হলো প্রথম সিনেমা, যেটায় ALEXA Mini LF ক্যামেরাটি ব্যবহার করা হয়েছে। ক্যামেরাটিতে আছে বড় ফরমেটের সেন্সর, যেটা প্রাকৃতিক আলোতে শ্যুটিংয়ের জন্য বেশ উপযুক্ত।
মুভির বেশিরভাগ দৃশ্যই ধারণ করা হয়েছে ৪০ মি.মি সিগনেচার প্রাইম লেন্সে। তবে কিছু দৃশ্য, যেমন- নদীতে ডিকিন্স ব্যবহার করেছিলেন ৪৭ মি.মি এবং জার্মান বাঙ্কারে ৩৫ মি.মি লেন্স।
মেক-আপ
ওয়ান শট মুভি, তাই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে বেশ ঘাম ঝরাতে হয়েছে হেয়ার এন্ড মেক-আপ ডিজাইনার নাওমি ডনিকে। আঘাতের চিহ্ন, পোশাকে কাদার দাগ এসব যাতে প্রতিটি শটেই একই রকম থাকে সেদিকে নজর দিতে হয়েছে। এজন্য বেশ কিছু নতুন পন্থাও অবলম্বন করতে হয়েছে তাকে। যেমন- জার্মান সৈন্য যখন ব্লেককে ছুরিঘাত করে সেখানে রক্তপাত সৃষ্টি করতে প্রস্থেটিক ডিজাইনার ট্রিস্টান ভার্সলুইজের সাথে এক হয়ে নাওমি একটি রিমোটচালিত ব্লাড পাম্প ব্যবহার করেন। কারণ এখানে সেই দৃশ্যটি কেটে আলাদা রক্ত ব্যবহার করে আবার শুরু করার কোনো উপায় ছিল না। এছাড়াও যতজন অতিরিক্ত অভিনেতা ছিলেন সবার চুল তিনি বিশ্বযুদ্ধের সৈনিকদের আদলে কেটেছিলেন।
এবং সবশেষে এডিটিং
পুরো মুভিটি সবগুলো টেক জোড়া লাগিয়ে একটি শটে জোড়া লাগানোর গুরুত্বপূর্ণ কাজটি নিয়েছিলেন অস্কারজয়ী এডিটর লি স্মিথ। সাধারণত এডিটরের কাজ শুরু হয় সম্পূর্ণ শ্যুটিং শেষ হবার পর। কিন্তু এ মুভিটির ক্ষেত্রে সেটা সম্ভব ছিল না। কারণ প্রতিটি কাটকেই বিভিন্ন উপায়ে ঢেকে রাখতে হয়েছে, পর পর দুটি টেকের যথাক্রমে শেষ এবং শুরুতে মিল না থাকলে যেটা কোনোভাবেই সম্ভব না। তাই যখন থেকে স্যাম মেন্ডিস রিহার্সাল শুরু করেছিলেন তখন থেকেই কাজে লেগে পড়েন লি স্মিথ। তিনি প্রতিদিনের শ্যুট হওয়া ফুটেজগুলো নিয়ে তাতে কিছু সাউন্ড ইফেক্ট এবং মিউজিক ব্যবহার করে আগের দিনের ফুটেজের সাথে জোড়া লাগিয়ে স্যামকে উপস্থাপন করতেন। এর ফলে তারা নিশ্চিত হতেন কাটগুলো অদৃশ্য রয়েছে এবং তারা সঠিক টেকটি বেছে নিয়েছেন। তারপর তারা ঠিক করতেন আগামীদিনের শ্যুটিংয়ে ক্যামেরা কোথায় থাকবে এবং তারা ঠিক কোন গতিতে এগিয়ে যাবে।
সিনেমাটির কাটগুলোর ঢাকতে তারা কিছুকিছু ক্ষেত্রে সিজিআইয়ের সাহায্য নিয়েছেন। যেমন- স্কোফিল্ড যখন জার্মান সৈন্যদের হাত থেকে বাঁচতে নদীতে ঝাঁপ দেয়। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা সাহায্য নিয়েছিলেন সিনেমা নির্মাণের বেশ কিছু পুরোনো কৌশলের। যা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন এই ভিডিওটিতে।
সিনেমার গল্পে যেভাবে স্কোফিল্ড একেবারে শেষ মুহুর্তে যুদ্ধ থামাতে পারে, তেমনি স্যাম মেন্ডিস মুভিটির প্রথম পাবলিক স্ক্রিনিংয়ের মাত্র ছয়দিন আগে পুরো মুভির কাজ শেষ করেন। ৯০ মিলিয়ন ডলার বাজেট, দুজন অপেক্ষাকৃত কম পরিচিত অভিনেতা নিয়ে নির্মিত এ মুভিটি নিয়ে মুক্তির আগে থেকেই অস্কারের গুঞ্জন উঠতে থাকে এবং শেষে সেটাই হয়। দশটি বিভাগে মনোনিত হয়ে জিতে নেয় তিনটিতেই, যার মধ্যে রজার ডিকিন্স তার ১৫ তম অস্কার নমিনেশনে দ্বিতীয়বারের মতো সেটা জয় করে নেন। আর বাকি দুটি বিভাগ হলো ভিজ্যুয়াল ইফেক্টস এবং সাউন্ড মিক্সিং। তবে মুভিটির আসল সফলতা সেখানে না। স্যাম চেয়েছিলেন তার নিজস্ব এ গল্পটি সম্পূর্ণ নতুন একটি ধারায় দর্শকদের বলতে। এবং তিনি সেটা করতে পেরেছেন।