Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

‘নিষিদ্ধ’ পপকর্ণ যেভাবে সিনেমা হলের অংশ হলো

সিনেমাহলে সিনেমা দেখার সময় বা মধ্যবিরতিতে প্রায় সব দর্শককেই পপকর্ণ খেতে দেখা যায়। এটি এখন একটি নিয়মিত দৃশ্য। কিন্তু আজ থেকে একশ বছর আগে এমন ছিল না। তখন সিনেমা থিয়েটারে পপকর্ণ নিয়ে খাওয়া নিষিদ্ধ ছিল। শুধু পপকর্ণই নয়, কোনো খাবারই নেয়া যেত না সিনেমা দেখার সময়। সেই নিষিদ্ধ পপকর্ণ কীভাবে সিনেমা হলের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গেল আর কেনই বা নিষিদ্ধ ছিল তা নিয়েই আজকের এই আয়োজন।

Image Source: tested.com

পপকর্ণের ইতিহাস নতুন নয়। প্রায় ৮,০০০ বছর আগে ভুট্টা চাষ করা হতো টিওসিন্টে থেকে। টিওসিন্টে হচ্ছে একপ্রকার বন্য ঘাস, যা দেখতে বর্তমানে আমাদের পরিচিত আধুনিক ভুট্টার মতো নয়। পপকর্ণ হলো ভুট্টার শাঁসের স্ফীত রূপ। এটি প্রথমে মধ্য আমেরিকায় চাষ হতো। পরে এটি উত্তর ও দক্ষিণ অংশে ছড়িয়ে পড়ে। তবে টিকে থাকে শুধু দক্ষিণ আমেরিকায়। এন্ড্রু স্মিথের ‘পপড কালচার: অ্যা সোশাল হিস্ট্রি অব পপকর্ণ’ বইয়ে পপকর্ণের ইতিহাস সম্পর্কে জানা যায়। তার ভাষায়,

উনবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে উত্তর আমেরিকার তিমি শিকারীরা চিলিতে যায়। সেখানে তারা বিভিন্ন ধরনের পপকর্ণের সাথে পরিচিত হয়। তারা এগুলো পছন্দ করে। তাই সেখান থেকে তারা পপকর্ণ নিউ ইংল্যান্ডে নিয়ে আসে।

সেই সময় থেকে পপকর্ণ আমেরিকা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। বিনোদনের ক্ষেত্রে পপকর্ণ হয়ে ওঠে খাবারের অন্যতম একটি মেন্যু। এজন্য তখন প্রায় সকল বিনোদন কেন্দ্রেই পপকর্ণের উপস্থিতি দেখা যায়। পপকর্ণের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ হলো এটি যেকোনো স্থানে তৈরি করা যেত। ১৮৮৫ সালে চার্লস ক্রেটর বাষ্পচালিত পপকর্ণ তৈরির যন্ত্র আবিষ্কার করেন। ফলে এই যন্ত্র দিয়ে রাস্তাঘাটে যেকোনো স্থানে পপকর্ণ তৈরি করে দ্রুত বিক্রি করা সম্ভব হয়। এতে রাস্তায় বা মাঠে-ময়দানে পপকর্ণ বিক্রি অনেক বেড়ে যায়।

১৯১২ সালে ইলিনয়ের রাস্তায় বাচ্চাদের কাছে পপকর্ণ বিক্রি করছে এক পপকর্ণ বিক্রেতা;  © Kirn Vintage Stock/Corbis

পপকর্ণ মেশিন এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নেয়ার সুযোগ থাকায় আউটডোর স্পোর্টস, সার্কাস, মেলায় পপকর্ণ অনেক জনপ্রিয়তা পায়। শুধুমাত্র বহিরাঙ্গনে সহজলভ্যতাই নয়, এর জনপ্রিয়তার আরেকটি কারণ ছিল রান্নাঘরের প্রয়োজনহীনতা। তখন আরেকটি স্ন্যাকস জাতীয় খাবার ছিল আলুর চিপস। কিন্তু সেটি রান্নাঘরে অনেক ক্ষুদ্র পরিসরে বানানো হতো। তাই আলুর চিপস ছিল জনতার ভিড়ে বিক্রির অনুপযোগী। পপকর্ণ সেই সীমাবদ্ধতা দূর করে দেয়। এর আকর্ষণের আরেকটি কারণ এতে ব্যবহৃত বিশেষ ধরনের সুবাস। তবে বিভিন্ন স্থানে বিনোদনের অন্যতম সঙ্গী হওয়ার পরও সিনেমা থিয়েটারে পপকর্ণ ব্রাত্যই হয়ে থাকে।  

পপকর্ণ ছিল জনপ্রিয় স্ন্যাকস জাতীয় খাবার; Image Source: youtube

বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে আমেরিকানদের বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম হয়ে ওঠে নির্বাক সিনেমা। থিয়েটারে নির্বাক সিনেমা দেখার জন্য দর্শকদের ভিড় থাকতো প্রচুর। তবে থিয়েটার মালিকরা সে সুযোগ রেখেছিলেন শুধুমাত্র সমাজের অভিজাত শ্রেণীর জন্য। তখন শিক্ষিত লোকদের জন্যই মূলত থিয়েটারে সিনেমা প্রদর্শিত হতো। সিনেমা হলের মেঝেতে থাকতো আকর্ষণীয় লাল কার্পেট। দর্শকদের বসার জন্য বিশেষ কম্বলও থাকতো। পপকর্ণ আনার সুযোগ দিলে দর্শকরা সেগুলো নোংরা করে ফেলতে পারেন। তাই থিয়েটার মালিকরা পপকর্ণ নিষিদ্ধ রাখেন। তখন সিনেমা হল অনেকটা বর্তমান সময়ের অপেরার মতো ছিল। তাছাড়া পপকর্ণ খাওয়ার শব্দে দর্শকদের সাবটাইটেল পড়ার সময় মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটতে পারে এই আশংকাও ছিল।

১৯২৭ সালে সবাক সিনেমার যাত্রা শুরু হয়। নির্বাক সিনেমার সাবটাইটেল থাকার কারণে নিরক্ষর দর্শকরা তা উপভোগ করতে পারতো না। সবাক সিনেমা আসায় এই বাধা আর থাকে না। ফলে সকল শ্রেণীর দর্শকের কাছে জনপ্রিয়তা পেল সিনেমা। তখন সিনেমা থিয়েটারে দর্শকদের আগমন আরো বাড়তে লাগলো। ১৯৩০ সালে সিনেমা থিয়েটারে প্রতি সপ্তাহে দর্শক সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় ৯০ মিলিয়নে। এই বিপুল পরিমাণ দর্শকের উপস্থিতিতে স্ন্যাকস জাতীয় খাবারের ব্যবসায় প্রচুর লাভের সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু সিনেমা থিয়েটারের মালিকরা তখনও দ্বিধান্বিত ছিলেন।

এ সময় শুরু হয় বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মহামন্দা। এটি পুরো ত্রিশের দশক জুড়ে থাকে, যা ‘দ্য গ্রেট ডিপ্রেশন’ নামে পরিচিত। তবে অন্যান্য ব্যবসা এই মহামন্দায় ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সিনেমা ও পপকর্ণের জন্য এটি ছিল একটি বিশাল সুযোগ। তখন বিনোদনের সস্তা মাধ্যম সিনেমা হওয়ায় দর্শকরা এখানে ভিড় করে। তখন প্রতি ব্যাগ পপকর্ণের দাম ছিল পাঁচ থেকে দশ সেন্টের মধ্যে, যা সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে ছিল। পাইকারী হারে সরবরাহকারীদের জন্যও ছিল এটি একটি লাভজনক বিনিয়োগ। দশ ডলারের ব্যাগ কিনলে বছর চলে যেত। থিয়েটারের লোকরা এতে উদাসীন থাকলেও অন্যরা ঠিকই এই সুযোগটি গ্রহণ করলো।

রাস্তার বিক্রেতারা তখন নিজেদের জন্য পপকর্ণ মেশিন কিনলো। তারা থিয়েটারের বাইরে দর্শকদের কাছে পপকর্ণ বিক্রি করা শুরু করলো। দর্শকরা সিনেমা থিয়েটারে প্রবেশের পূর্বে পপকর্ণ কিনে খেত। অনেক দর্শকই লুকিয়ে পকেটে করে পপকর্ণ নিয়ে যেত থিয়েটারে। তাই অনেক সিনেমা থিয়েটারের দেয়ালে লেখা থাকতো প্রবেশের পূর্বে পকেট থেকে পপকর্ণ খালি করে আসতে। কিছু থিয়েটার যে পপকর্ণ ব্যবসার কথা ভাবেনি এমন নয়। কিন্তু সমস্যা ছিল পপকর্ণ তৈরির জন্য তাদের থিয়েটারে পর্যাপ্ত বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা ছিল না। কিন্তু পপকর্ণ হাতে দর্শকদের আগমন বাড়তে থাকায় থিয়েটার মালিকরা আর উপেক্ষা করতে পারলেন না।

দর্শকরা থিয়েটারের বাইরে পপকর্ণ কিনে খেত; Image Source: cinematreasures.org

থিয়েটার মালিকরা তখন পপকর্ণ বিক্রেতাদের থিয়েটারের লবিতে পপকর্ণ বিক্রির অনুমতি দেন। এতে বিক্রেতাদের কাছ থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ফী নেয়া হয়। বিক্রেতাদের তাতে কোনো আপত্তি ছিল না। কারণ এই সুবিধায় তাদের বিক্রি আরো বেড়ে যায়। একইসাথে সিনেমা দেখতে আগত দর্শক ও রাস্তার পথচারী সকলের কাছেই তাদের পপকর্ণ বিক্রি হতে থাকে। এমনই এক সফল বিক্রেতা ছিলেন কানসাস সিটির বিধবা মহিলা জুলিয়া ব্রেডেন। তিনি লিনউড থিয়েটারের লবিতে পপকর্ণ বিক্রি করতেন। ১৯৩১ সালের মধ্যে চারটি সিনেমা থিয়েটারের বাইরে তার দোকান হয়ে যায়। এগুলো থেকে বছরে তার আয় ছিল ১৪,০০০ ডলারেরও বেশি। আজকের দিনে যা ৩,৩৬,০০০ ডলারের সমান। এমনকি সেই মহামন্দার সময়েও তার ব্যবসা আরো বাড়তে থাকে।

থিয়েটার মালিকরা তখন বুঝতে পারেন, তারা যদি নিজেরাই পপকর্ণ বিক্রি শুরু করেন সেটা আরো লাভজনক হবে তাদের জন্য। এমনই ভাবনা আসে এক থিয়েটার ম্যানেজারের মনে। তিনি হচ্ছেন আর জে ম্যাককিনা। ত্রিশের দশকের মাঝামাঝি সময়ে তিনি আমেরিকার পশ্চিমাঞ্চলে কিছু সিনেমা থিয়েটার পরিচালনা করতেন। ম্যাককিনার একটি থিয়েটারের বাইরে এক বৃদ্ধ লোক পপকর্ণ বিক্রি করতো। ঐ লোক পপকর্ণ বিক্রি করে এতই লাভবান হয় যে সে একটি বাড়ি, একটি ফার্ম ও একটি দোকান কিনে ফেলে। তখন ম্যাককিনা একটি পপকর্ন মেশিন নিয়ে আসেন তার থিয়েটারে। এতে ১৯৩৮ সালে পপকর্ণ থেকেই তার আয় হয় দুই লাখ ডলার। তখন থেকেই থিয়েটারগুলোতে শুরু হয় পপকর্ণের ব্যবসা। পপকর্ণের নিষেধাজ্ঞা আর থাকে না। ফলে এই মহামন্দার সময় পপকর্ণই হয়ে ওঠে সিনেমাহলের রক্ষার ঢাল।    

‘লেটস অল গো টু দ্য লবি’ বিজ্ঞাপনচিত্রের একটি দৃশ্য; Image Source: youtube

পপকর্ণের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। পপকর্ণের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল চকলেট ও কোমল পানীয়। এসব পণ্যের অন্যতম প্রধান কাঁচামাল হলো চিনি। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে আমেরিকায় চিনি আমদানি বন্ধ থাকে। তাই চকলেট ও পানীয় উৎপাদন কমে যায়। আর এই সুযোগে পপকর্ণ আরো বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে যায়। ১৯৪৫ সালে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে অর্ধেকেরও বেশি পপকর্ণ বিক্রি হয় সিনেমা থিয়েটারে। থিয়েটারগুলো তখন পপকর্ণের বিজ্ঞাপন প্রচার করা শুরু করে। এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ১৯৫৭ সালে প্রচারিত ৪০ সেকেন্ডের বিজ্ঞাপনচিত্র ‘লেটস অল গো টু দ্য লবি’। এর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিবেচনা করে ২০০০ সালে লাইব্রেরি অব কংগ্রেস একে ইউনাইটেড স্টেটস ন্যাশনাল ফিল্ম রেজিস্ট্রিতে অন্তর্ভুক্ত করে।

আধুনিক সিনেমা হলগুলোতেও লভ্যাংশের একটি বড় অংশ আসে পপকর্ণ থেকে। সিনেমা থিয়েটারগুলোতে গত কয়েক বছরে অনেক পরিবর্তন এসেছে। আরামদায়ক বসার ব্যবস্থা, অ্যালকোহল ও অন্যান্য খাবারের ব্যবস্থা থাকলেও পপকর্ণ এখনও তার আবেদন ধরে রেখেছে। অনেক সময় এর উচ্চমূল্যের কারণে সমালোচনা হয়। কিন্তু তারপরও সিনেমাহলে হাতে পপকর্ণ না থাকলে যে কারো কাছে সিনেমা দেখা অপূর্ণতা মনে হয়।      

This is a Bangla article about how popcorn became a movie theater thing. All the references are hyperlinked in the article. 

Featured Image: gmumc.com

Related Articles