Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

দ্য স্টোরি অব দ্য ক্যেলি গ্যাং: হারিয়ে যাওয়া নির্বাক যুগের প্রথম ফিচার-ফিল্ম

নির্বাক যুগের চলচ্চিত্র বলতে চোখের সামনে ভেসে ওঠে ঝাপসা হয়ে আসা ফ্রেমের কাঁপতে থাকা ছবির দ্রুত দৃশ্য পাল্টানো। সেই যুগের চলচিত্র এখনকার প্রযুক্তির সাথে টেক্কা না দিতে পারলেও সেই ছায়াছবির আবেদন ছিল ভিন্ন ধরনের। 

বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম এই চলচ্চিত্রের শতাধিক বছরের ইতিহাসের এমন অনেক অংশ আছে যা সাধারণ চলচ্চিত্রপ্রেমীদের অনেকের জানা হয়ে ওঠে না। শব্দহীন সাদা-কালো চলচ্চিত্র যুগের স্বল্পদৈর্ঘ্যের চলচিত্রের গণ্ডি পেরিয়ে প্রথম একঘণ্টার ফিচারফিল্ম হিসেবে নিজেকে ইতিহাসের পাতায় অধিষ্ঠিত করা ‘দ্য স্টোরি অব দ্য ক্যেলি গ্যাং’ তেমনই এক হারিয়ে যাওয়া ইতিহাসের অংশ। কী ছিল সেই ছায়াছবির কাহিনী? কীভাবে হারিয়ে গেল এই অমূল্য চলচ্চিত্র? কেনই বা উদ্ধার করা সম্ভব হলো না এর ফুটেজ? সেই গল্পও কোনো চলচ্চিত্রের থেকে কম আকর্ষণীয় নয়।

ছবির শুরুর দৃশ্য; Image Source: timeline.nfsaa

চলচ্চিত্রের ইতিহাস এই ছবি থেকে বেশ পুরনো হলেও, প্রাথমিক যুগের চলচ্চিত্রগুলো নির্মাণ করা হতো স্বল্পদৈর্ঘ্যের। প্রথমদিকে কয়েক সেকেন্ডের থেকে শুরু করে পরবর্তীতে এই চলচ্চিত্রের দৈর্ঘ্য যেয়ে দাঁড়ায় ১৫-২০ মিনিটে। কিন্তু ‘দ্য স্টোরি অব দ্য ক্যেলি গ্যাং’ এমন এক চলচ্চিত্র যা সেই প্রথাগত ২০ মিনিটের ধারা ভেঙে একঘণ্টার মাইলফলক স্পর্শ করেছিল। 

যেভাবে শুরু হলো পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের স্বপ্ন বোনা

১৯০৬ সাল, নিজেদের অ্যাথেনিয়াম থিয়েটারে কনসার্ট প্রদর্শনী চালাচ্ছে টেট ব্রাদার্স। নিজেদের পারিবারিক থিয়েটারে কনসার্টের সাথে সেই যুগের জনপ্রিয় শর্টফিল্ম প্রদর্শন করার ব্যবস্থা করে তারা। মেলবোর্নবাসী এই পরিবারের ৫ ভাইয়ের সব কয়জন এই শো’বিজনেসে জড়িত। অন্যের তৈরি চলচ্চিত্র দেখিয়ে ব্যবসা করার পাশাপাশি নিজেরা এই ব্যবসায় কীভাবে সম্পৃক্ত হওয়া যায় সেটাই তাদের মাথায় ঘুরছিল।   

বাণিজ্যিক চলচ্চিত্র হিসাবে নির্মিত ‘দ্য গ্রেট ট্রেন রবারী’র অভাবনীয় সাফল্যও তাদের এ ব্যাপারে আরও আগ্রহী করে তোলে। তাদের আমেরিকান এক প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠানের নির্মাণ করা ‘দ্য গ্রেট ট্রেন রবারী’ ছিল ১০ মিনিট দীর্ঘ্য এক চলচ্চিত্র যা সে সময়ের বিনোদনপ্রেমী সবার দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হয়। ১৯০৩ সালে নির্মিত সেই ছবিতে প্রথমবারের মতো ব্যবহার করা হয় ব্যাকগ্রাউন্ড ন্যারেশন বা ধারাভাষ্য। 

চলচ্চিত্রে ক্যেলি গ্যাং; image source: acinemahistory

টেট ব্রাদার্স নিজেদের প্রতিদ্বন্দ্বীদের সাফল্যে একাধারে যেমন কিছুটা হিংসা অনুভব করছিল, তেমনই চলচ্চিত্র জগতের ভবিষ্যতের ব্যাপারে আরও আশাবাদী হয়ে উঠছিল। আর সেই আশার বাস্তবায়নেই ১৯০৬ সালে চলচ্চিত্র প্রযোজক হিসেবে টেট ফ্যামিলি যাত্রা শুরু করে। 

তাদের নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র ছিল ডকুমেন্টারি ঘরনার একটি স্বল্পদৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র। ‘লিভিং হাথর্ন’ নামের এই চলচ্চিত্রের কাহিনী ছিল মেলবোর্ন শহরতলীর মানুষের জীবন ঘিরে। প্রথম চলচ্চিত্রের সাফল্য তাদের আরো বড় কিছু, নতুন কিছু করার প্রেরণা যোগায়। যার থেকে শুরু হয় ‘দ্য স্টোরি অব দ্য ক্যেলি গ্যাং’ নামের এক স্বপ্নকে বাস্তব করার আয়োজন। 

চলচ্চিত্রের কিছু দৃশ্য এবং পোস্টার; Image Source: nma.gov

গল্পের বুনন এবং ইতিহাসের হাতছানি

পূর্ণদৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্রে দর্শকের সামনে তুলে ধরার জন্য কাহিনী হিসেবে সেসময়কার এক সশস্ত্র ডাকাতদল বেছে নিয়েছিলো টেট ভাইয়েরা। সেই গল্পের মধ্যমণি ছিল নেড ক্যালি নামের এক বুশরেঞ্জার। আঠারো শতকের মধ্য থেকে শেষ যুগের অস্ট্রেলিয়ার সশস্ত্র ডাকাতদের বলা হতো বুশরেঞ্জার। সেই খুনে ডাকাতদের শেষ যুগের বংশধর নেড ক্যালির নিষ্ঠুর হিসেবে প্রচুর দুর্নাম ছিল। 

মূলত তার এবং তার ডাকাতদলের জীবনের নানা ঘটনা নিয়ে নির্মিত সিনেমাটি। সেখানে সে এবং তার দল কীভাবে পুলিশের কাছ থেকে কৌশলে পলায়ন করে, কীভাবে নিজেদের ব্যবসা চালিয়ে যেতে সক্ষম হয়, কত ভয়ানকভাবে তারা সাধারণ মানুষকে খুন করে, এবং শেষপর্যন্ত পুলিশের সাথে কীভাবে বন্দুকযুদ্ধে তাদের জীবনাবসান ঘটে- সেগুলোই ছিল মূলত এই চলচ্চিত্রের গল্প। 

তবে দন্ডপ্রাপ্ত একজন খুনীকে প্রধান করে, এবং পুলিশের বিপক্ষে তাদেরকে নায়কোচিত দেখিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করায় প্রথম থেকেই নিন্দার মুখে পড়তে হয় টেট ব্রাদার্সসহ এই ছবির অনেক কলাকুশলীকে। তাছাড়া, সত্যিকারের ইতিহাসের সাথে এ ছায়াছবির কাহিনীরও বেশ কিছু অসামঞ্জস্য ছিল। নেড ক্যেলিকে সত্যিকার জীবনে পুলিশ গ্রেফতার করে নিয়ে যায় এবং তার কৃতকর্মের সাজা হিসেবে তাকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়, যা চলচ্চিত্রে বীরত্বের সাথে পুলিশের সাথে সম্মুখ যুদ্ধ করতে করতে মারা যাওয়া হিসেবে দেখানো হয়েছে।

চলচ্চিত্রের দৃশ্যে নেড ক্যেলি; Image Source: wikipidia 

নির্মাণ এবং কারিগরি দিক

দ্য স্টোরি অব দ্য ক্যেলি গ্যাং ছবিটি চিত্রায়িত হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন অঞ্চলে। ধারণা করা হয়- ছবির আউটডোর শুটিং করা হয়েছিল টেট ভাইদের একজন, চার্লস টেটের স্ত্রীর পারিবারিক জমিদারিতে। হাইডেলবার্গ অঞ্চলে বেশ কয়েকদিন ব্যয় করে সেই ফিল্ম ধারণের কাজ সম্পন্ন হয়। ইনডোর অংশের শুটিংয়ের জন্য সেট নির্মাণ করা হয় টেট ভাইদের বাড়িতে। 

তবে সেটাকে ঠিক বাড়ির ভেতরে বলা চলে না। সেসময়কার বড় বাড়ির পেছনে যে ব্যাক ইয়ার্ড থাকত, তেমন জায়গাতেই সেট নির্মাণ করে ছবির বাকি কাজ সম্পন্ন করা হয়। ধারণা করা হয়, চলচ্চিত্রটি নির্মাণে তাদের প্রায় ছয় মাস সময় ব্যয় হয়েছিল। ছবিটির নির্মাণ বাজেট হিসেবে তাদের গুনতে হয় প্রায় ২,২০০ ডলার, যা ১৯০৬ সালের হিসেবে অনেক অর্থই!  

মুক্তি এবং সাধারণ মানুষের আগ্রহ

চলচ্চিত্র নির্মাণ এবং সব ধরনের কারিগরি কাজ শেষে ১৯০৬ সালের ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে বক্সিং ডে উপলক্ষে কলিন্স স্ট্রিটের অ্যাথেনিয়াম থিয়েটারে ছবিটি মুক্তি দেয়া হয়। বিস্ময়ের সাথে টেট ভাইয়েরা দেখেন, তাদের প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশি ব্যবসা করছে ছবিটি। টানা ৫ সপ্তাহ ফুল হাউজ ব্যবসা করে চলচ্চিত্রটি। 

সেসময় শব্দ সংযোজনের ব্যবস্থা অতটা ভালো ছিল না বলে বিশেষ ব্যবস্থা নেয় এই ছবির টিম। প্রতিবারের প্রদর্শনীর সময় থিয়েটারে এক বা একাধিক অভিনেতা নিজে উপস্থিত থেকে চলচ্চিত্রের ফুটেজের সাথে কন্ঠ দান করতেন। শুধু তা-ই নয়, সাউন্ড ইফেক্ট তৈরির জন্য সেসময় থিয়েটারে অল্পবয়স্ক ছেলেদের নিয়োগ দেয়া হয়। 

চলচ্চিত্রে ব্যবহার করা নেড ক্যেলির স্টেশনের একটি স্থির চিত্র; Image Source: redsharknews

সিনেমার জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকায় ১৯০৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে সিডনির প্যালসে থিয়েটারে এর প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। তারপর সেখান থেকে অ্যাডিলেড হয়ে ব্রিসবেনে পৌঁছায় ‘বায়োগ্রাফ কোম্পানি’ নামের এক প্রতিষ্ঠান ছবিটির ডিস্ট্রিবিউশনের দায়িত্ব নিয়েছিল। অর্থাৎ অস্ট্রেলিয়ার নানা শহরে এবং দেশের বাইরে চলচ্চিত্রটি প্রদর্শনীর দায়িত্ব নেয় তারা। ১৯০৭ সালের সেপ্টেম্বর নাগাদ নিউজিল্যান্ড এবং ইংল্যান্ডে ছবিটি মুক্তির জন্য প্রস্তুত করা হয়। দেশের বাইরের সেই প্রদর্শনীগুলোতে একে ‘লঙ্গেস্ট ফিল্ম এভার মেড’ হিসেবে প্রচার করা হয়। 

বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশে প্রদর্শনের জন্য ‘দ্য স্টোরি অব দ্য ক্যেলি গ্যাং’কে বহুবার বিভিন্নভাবে এডিট করা হয়েছে। এই চলচ্চিত্রের মোট রীল ছিল ৬টি। একাধিক রীলে নির্মাণ করা প্রথম চলচ্চিত্র হিসেবে একেই ধরা হয়। প্রাথমিক রিলিজের সময় চলচ্চিত্রটি ৬০ মিনিটের মতো ছিল। তবে প্রদর্শনীভেদে এই দৈর্ঘ্য ৭০-৮০ মিনিট পর্যন্ত পরিবর্তিত হতো। ১৯০৭ সালে নিউ সাউথ ওয়েলসে রিলিজের আগে এই চলচ্চিত্রে জেরিল্ডেরি ব্যাংক লুটের চিত্র নতুন ফুটেজ হিসেবে যোগ করার ব্যবস্থা করা হয়। ১৯১০ সালে পুনরায় রিলিজের আগে এই ফিচার ফিল্মে যুক্ত করা হয় আরো বেশ কিছু অংশ। 

চলচ্চিত্রের বন্দুকযুদ্ধের একটি দৃশ্য; Image Source: acinemahistory

দেশে এবং দেশের বাইরে সাধারণ দর্শকদের কাছ থেকে তুমুল জনপ্রিয়তা পায় এই চলচ্চিত্র। উইলিয়াম গিবসন নামের এক বিশেষজ্ঞের মতে, এই চলচ্চিত্রে অর্থ লগ্নিকারীরা মূল খরচের উপর প্রায় ২৫,০০০ হাজার পাউন্ড রিটার্ন পেয়েছিলেন। ক্যেলী গ্যাঙের ব্যাপারে সহানুভূতি দেখানোয় ভিক্টোরিয়া সরকার ছবিটির ব্যাপারে কঠোর হবার চিন্তা করলেও সাধারণ মানুষের ব্যাপক আগ্রহের কারণে তারা পিছু হটতে বাধ্য হয়। তবে ভিক্টোরিয়ান সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, এ চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর ফলে দেশে অপরাধের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ার উত্তরাঞ্চলের দুটো শহর বেনাল্লা এবং ওয়াঙ্গারাত্তাতে ছবিটি নিষিদ্ধ করা হয়। ১৯১২ সালের এপ্রিল মাসে ছবিটির একটি নতুন সম্পাদিত ভার্সন প্রকাশের অনুমতি বাজেয়াপ্ত করে ভিক্টোরিয়ান সরকার।  

সাদা ঘোড়ায় চড়া ক্যেলির সেই দৃশ্য; Image Source: acinemahistory

হারিয়ে যাওয়া এবং ফিরে আসার উপাখ্যান

বহু চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে দেশ এবং দেশের বাইরে ব্যাপক আলোচনায় থাকা ব্যবসাসফল এই প্রথম ফিচার ফিল্ম অনেকটা যেন কালের শ্রোতেই হারিয়ে যায়। আলাদাভাবে কোনো কারণ চিহ্নিত না করা গেলেও ফিল্মগুলো নষ্ট হয়ে যাবার কারণ সহজেই শনাক্ত করা সম্ভব। 

সেসময়ের নির্মাতাদের ভেতর বিনোদনের এই মাধ্যম সংরক্ষণ করার বা পরবর্তী সময়ের জন্যে রেখে দেবার ব্যাপারে তেমন কোনো ধারণা ছিল না। তাই নির্বাক যুগের আরো বহু অমূল্য ছায়াছবির মতো এই ছবিও সংরক্ষণের অভাবে হারিয়ে যায় চিরতরে। 

সেসময়কার আর সব চলচ্চিত্রের মতোই এটি চিত্রায়িত হয়েছিল সিলভার নাইট্রেট ফিল্মে, যা খুব দ্রুত নষ্ট হয়ে যেত, এবং ছিল খুবই দাহ্য পদার্থের তৈরি। সে কারণে যেখানেই এই ছবির রিল সংরক্ষিত ছিল, সেগুলো অব্যবহৃত থেকে হয় বিনষ্ট হয়েছে, নতুবা ধ্বংসাত্মক আগুনে পুড়ে গেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হবার পর থেকে সত্তরের দশকের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত টিকে ছিল কেবল চলচিত্রটির কিছু স্থির ফটোগ্রাফ, আর ছবি রিলিজ হবার পরের কিছু রিভিউ।

ক্যেলি গ্যাংয়ের রেললাইন উপড়ে ফেলার দৃশ্য; Image Source: acinemahistory

কোনো ভিডিও ফুটেজ না থাকলেও এই চলচ্চিত্রের প্রতি সিনের ধারাবাহিক বিবরণের কপি, যা দর্শকদের জন্যে প্রস্তুত করা হয়েছিল, সেটি উদ্ধার করা সম্ভব হয়। আর এই বিবরণীর সূত্র ধরেই বিভিন্ন সময় উদ্ধার হওয়া ভিডিও ফুটেজ যাচাই করে নিশ্চিত করা সম্ভব হয়, ফুটেজগুলো নির্বাক যুগের হারিয়ে যাওয়া চলচ্চিত্র ‘দ্য স্টোরি অব দ্য ক্যেলি গ্যাং’ এর অংশ কিনা। 

বর্তমানে এ ছবির বেশ কিছু স্থির চিত্র বাদে সর্বমোট ২০ মিনিটের মতো ফুটেজ সংরক্ষিত আছে। টিকে থাকা ছবিগুলো থেকে দেখা যায়, ক্যেলি গ্যাঙের কৃতকর্মের কোন অংশগুলো আসলে হারিয়ে যাওয়া সেই নির্বাক যুগের ছবিতে উঠে এসেছিল। ইউরো ব্যাংক এবং ইয়াংহাসব্যান্ডের স্টেশনের ডাকাতির ঘটনা, অ্যারন শেরিটের মৃত্যু, গ্লেনরোয়ান নামের স্থানে ট্রেন থামাতে রেললাইন উঠিয়ে ফেলা ইত্যাদি। এর বাইরে ক্যেলির সাদা ঘোড়ায় চেপে বন্দুক তুলে বসে থাকা, কিংবা বা ক্যেলি গ্যাঙের সদস্যদের নিজেদের নামের ওয়ান্টেড পোস্টারের দিকে তাকিয়ে থাকা সেরা কিছু স্থির চিত্র। ১৯৭৬ এবং ১৯৭৮ সালে পুরাতন ফিল্ম কালেকশন ঘেটে ‘দ্য স্টোরি অব দ্য ক্যেলি গ্যাং’-এর কিছু ফুটেজ উদ্ধার করে অস্ট্রেলিয়ান ফিল্ম কর্তৃপক্ষ।  

ক্যেলি গ্যাঙের সদস্যদের নিজেদের নামের পোস্টার দেখার দৃশ্য; Image Source: acinemahistory

১৯৮০ সালে অনেকটা অপ্রত্যাশিত ভাবে মেলবর্নের এক ভাগাড় থেকে এ ছবির আরও বেশ কিছু ফুটেজ আবিষ্কৃত  হয়। সেই ফুটেজটুকু এক বেনামী ব্যক্তি অস্ট্রেলিয়ার ন্যাশনাল ফিল্ম এন্ড সাউন্ড আর্কাইভে বিনামূল্যে দান করেন। এর প্রায় ২৫ বছর পর ২০০৬ সালে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ফিল্ম এন্ড টেলিভিশন আর্কাইভে আবিষ্কার হয় এর আরও একটি নতুন ফুটেজ। প্রায় সাত মিনিটের এই সিকোয়েন্সকে এখন পর্যন্ত আবিষ্কার হওয়া সবচেয়ে দীর্ঘ অংশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। 

কালের গহ্বরে হারিয়ে যাওয়া এই চলচ্চিত্রের ব্যাপারে সকলের আগ্রহ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ, চাইলেই এই ছবিটি দেখা সম্ভব না। আজকের ইন্টারনেটের যুগেও বিশ্বের প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র দেখা নিতান্তই অসম্ভব, কারণ এর অস্তিত্ব সময়ের সাথে মুছে গেছে। হয়তো সুদূর ভবিষ্যতে আবারও কোনো বেনামী দানকারীর হাত ধরে বের হবে হারিয়ে যাওয়া এই ছায়াছবির আরও নতুন কোনো অংশ, বা পুরো চলচ্চিত্রটিই। কিন্তু যতদিন তা না হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত অপূর্ণ এক ইতিহাস হয়েই রয়ে যাবে ‘দ্য স্টোরি অব দ্য ক্যেলি গ্যাং’। 

Related Articles