ভিয়েতনাম যুদ্ধ আমেরিকার ইতিহাসে এক দগদগে ঘা হয়ে আছে। সত্তর এবং আশির দশকের আমেরিকান সমাজে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল এ যুদ্ধ। আর সমাজের অন্যতম শ্রেষ্ঠ দর্পণ যেহেতু চলচ্চিত্র, তাই বহু প্রখ্যাত চলচ্চিত্রের কাহিনীই গড়ে উঠেছে একে ঘিরে।
‘পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার’-এর ভয়াবহতা হয়তো কেতাবি ভাষায় অতটা বুঝে ওঠা সম্ভব হয় না। অন্য যুদ্ধ কিংবা বিশ্বযুদ্ধ নয়, বরং ভিয়েতনাম যুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্রগুলোই প্রথমবারের মতো এই ব্যাধিকে সেলুলয়েডের পর্দায় সার্বজনীনভাবে উপস্থাপন করতে পেরেছিল।
উইন্টার সোলজার (১৯৭২)
১৯৭২ সালের এই ডকুমেন্টারির কাহিনী আবর্তিত হয়েছে উইন্টার সোলজার ইনভেস্টিগেশনকে ঘিরে। ভিয়েতনামে আমেরিকান সৈন্যদের করা যুদ্ধাপরাধগুলো তদন্ত করা ছিল এই অপারেশনের কাজ। ডকুমেন্টারিটির সারবক্তব্য অবশ্য খুব জটিল কিছু নয়। ভিয়েতনামের জনগণের ওপরে মার্কিন সেনাদের করা নির্মম নির্যাতনের কথা উঠে এসেছে বিভিন্ন মার্কিন সেনানিদের জবানিতেই।
অনেকেই অবশ্য এসব গল্পের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তারপরেও উপস্থাপনার গুণে এটি মনোযোগ হারাতে দেয় না দর্শককে। এর ঐতিহাসিক মূল্যও অনেক, কেননা এটিই প্রথম ভিয়েতনাম যুদ্ধের ঋণাত্মক দিকগুলো পপ কালচারে নিয়ে এসেছে।
ট্যাক্সি ড্রাইভার (১৯৭৬)
মার্টিন স্করসেসি এবং রবার্ট ডি নিরো জুটির এই কাজটিকে সর্বকালের সেরা সাইকোলজিকাল থ্রিলারের একটি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সামাজিকভাবে অস্থির এক সময়ে ভিয়েতনাম-ফেরত এক ভেটেরানের মানসিক অবক্ষয় ফুটিয়ে তোলার ক্ষেত্রে শতভাগ সফল হয়েছে এই মাস্টারপিস। ডি নিরোর বিশাল ক্যারিয়ারের স্মরণীয় এক পারফরমেন্স ছিল এটি। সেই সাথে কিশোরী জোডি ফস্টারের নিখুঁত অভিনয় তাকে রাতারাতি লাইমলাইটে নিয়ে এসেছিল।
রবার্ট ডি নিরো অভিনয় করেছেন যুদ্ধফেরত তরুণ ট্র্যাভিস বিকলের ভূমিকায়। নিজের পিটিএসডি এবং ইনসমনিয়ার সাথে মানিয়ে চলার জন্য নাইট শিফটে ট্যাক্সি চালানোর দায়িত্ব নিয়েছে সে। সমাজের কদর্য রূপগুলো দিনের চেয়ে বেশি ফুটে ওঠে রাতেই, তাই যুদ্ধের সার্থকতা নিয়ে নিজের বিবেকের কাছে সে প্রশ্নবিদ্ধ হয় বারবার।
আস্তে আস্তে নিজের বিবেকবোধ হারিয়ে সহিংসতার পথে চলে যায় সে। তবে তার বেছে নেওয়া পথটা কিন্তু আসলেই এই সমাজের প্রাপ্য। চলচ্চিত্র নিয়ে যারা পড়াশোনা করেন, তাদেরকে ক্যারেক্টার স্টাডি শেখানোর জন্য প্রথমেই যে চলচ্চিত্রগুলো দেখানো হয়, তার মধ্যে একটি হলো ‘ট্যাক্সি ড্রাইভার’।
দ্য ডিয়ার হান্টার (১৯৭৮)
সরাসরি যুদ্ধক্ষেত্রের ক্লাইম্যাক্স কিংবা অ্যাকশন নয়, এই সিনেমার মূল আকর্ষণ ছিল চরিত্রগুলোর হৃদ্যতা। এর কাহিনী গড়ে উঠেছে পেনসিলভানিয়ার ছোট্ট এক শহরকে ঘিরে। পেনসিলভানিয়ার তিন ফ্যাক্টরি-কর্মী যুদ্ধে যোগ দেবার উদ্দেশ্যে শহর ছাড়েন। যাবার আগে তাদের আরেক বন্ধুর সাথে হরিণ শিকারে যান তারা। সিনেমাটির নামকরণের কারণ বুঝতে পারছেন নিশ্চয়ই?
যাই হোক, অবধারিতভাবেই তিন বন্ধু পড়ে যান ভয়ানক এক পরিস্থিতিতে। যুদ্ধ থেকে বেঁচে ফিরলেও তিনজনের জীবন হয়ে যায় তিনরকম। ক্যারেক্টার ডেভেলপমেন্টগুলো ছিল চরম বেদনাদায়ক। নয়টি অস্কারের মনোনয়ন পাওয়া মুভিটি ক্রিস্টোফার ওয়াকেনকে তার সোনার মূর্তি জিতিয়ে দিয়েছিল।
রাশিয়ান রুলেট গেমকে পৃথিবীবাসীর কাছে বহুল পরিচিতি এনে দেবার কারণেই ‘দ্য ডিয়ার হান্টার’কে একনামে চেনে অনেকে। মূল আকর্ষণ নয়, তবে যুদ্ধের ময়দানের অ্যাকশনগুলোও ছিল তীব্র এবং পীড়াদায়ক।
মুক্তির অব্যবহিত পরেই অবশ্য সমালোচকদের দু’ভাগে বিভক্ত করে দিয়েছিল সিনেমাটি। রাশিয়ান রুলেটের দৃশ্যটি ব্যাপক জনপ্রিয় হলেও সত্যিকার ভিয়েতনাম যুদ্ধে কখনো এর প্রয়োগের কথা শোনা যায়নি। কিন্তু রবার্ট ডি নিরো, ক্রিস্টোফার ওয়াকেন আর মেরিল স্ট্রিপের মতো পাওয়ারহাউজ অভিনেতাদের উপস্থিতি সহজেই একে তুলে দিয়েছে সেরা সিনেমার কাতারে।
অ্যাপোক্যালিপ্স নাও (১৯৭৯)
‘দ্য গডফাদার’ খ্যাত ফ্রান্সিস ফোর্ড কপোলার এই ক্লাসিক সিনেমাটি কুখ্যাত ছিল এর প্রোডাকশনের কারণে। সিনেমার তারকা মার্টিন শিনের হার্ট অ্যাটাক পর্যন্ত হয়ে গিয়েছিল নির্মাণকালে! বেশ কয়েক দফা ফিলিপাইনে মুভির সেট নষ্ট হয়ে গেছে। গ্রিন বেরেট কর্নেল কার্টজের ভূমিকায় অভিনয় করা মার্লোন ব্র্যান্ডো মুটিয়ে গিয়েছিলেন মুভি চলাকালে, এতেও বেশ খানিকটা সময় নষ্ট হয়েছে।
মুভির মূল কাহিনী ছিল এমন যে, পাগল হয়ে যাওয়া গ্রিন বেরেট কর্নের কার্টজকে খুন করার উদ্দেশ্যে ভিয়েতনামের গহীনে এক দুরূহ অভিযানে বের হন মার্টিন শিনের ক্যাপ্টেন উইলার্ড। সিনেমার কাহিনী খুব বাস্তবসম্মত না হলেও একে আধুনিক ওয়ার-ড্রামা জঁনরায় একটি ক্লাসিক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
এটি দেখার সময় দুঃস্বপ্ন বলে ভ্রম হতে পারে। স্বাভাবিক একজন মানুষকে তিলে তিলে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলতে দেখা কোনো সুখকর অভিজ্ঞতা নয়, কিন্তু আদতে এটাই তো যুদ্ধ। যতবারই দেখবেন, ততবারই তীব্র বেদনাদায়ক অনুভূতি রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছাপ ফেলে যাবে।
ফার্স্ট ব্লাড (১৯৮২)
সিলভেস্টার স্ট্যালোনের এই সিনেমাটিকে নামকরা ভিয়েতনাম যুদ্ধ বিষয়ক চলচ্চিত্রগুলোর সারিতে দেখে অনেকেই অবাক হতে পারেন। যত যা-ই হোক, বক্স অফিস কাঁপানো জনপ্রিয় অ্যাকশন মুভি হিসেবে বেশি পরিচিতি এর। হ্যাঁ, এটা একটা হাস্যকর এবং কিছুটা অবাস্তব অ্যাকশন মুভি। কিন্তু পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার কিংবা এজেন্ট অরেঞ্জ ডিস্পোজার প্রথম প্রথম সবার নজরে আনার জন্য এর গুরুত্ব অনেক।
যুদ্ধফেরত ভেটেরান র্যাম্বোর ভূমিকায় স্ট্যালোনের আইকনিক চরিত্র জন্ম দেয় এক সফল অ্যাকশন ফ্র্যাঞ্চাইজের। প্রশিক্ষণের অভাবে ভেটেরানদের বেকারত্ব কিংবা তাদের ওপর অবিচারের কথা মানুষকে জানান দিতে পারাতেই ‘ফার্স্ট ব্লাড’-এর সার্থকতা।
প্লাটুন (১৯৮৪)
অলিভার স্টোনের অস্কারজয়ী এই ক্লাসিক চলচ্চিত্রে চার্লি শিন অভিনয় করেছেন ক্রিস টেলরের চরিত্রে। ক্রিস হলো নতুন যোগ দেয়া একজন ইনফ্যান্ট্রি। ভিয়েতনামের জঙ্গলে আচমকা দায়িত্ব পেয়ে সেখানে যাবার পর নিজেকে একদল যুদ্ধাপরাধী সৈন্যদের মাঝে আবিষ্কার করে সে। প্লাটুনের নীতিবান নেতা, সার্জেন্ট এলিয়াসের পক্ষে থাকতে চাইলেও সাইকোপ্যাথ নেতা সার্জেন্ট বার্নসের কুনজরে পড়তে চায় না ক্রিস।
যুদ্ধের ভয়াবহতা আর চার্লির দোলাচলে থাকা নিয়েই এগোতে থাকে সিনেমার কাহিনী। চার্লির চরিত্রে প্রথমে রকসঙ্গীতশিল্পী জিম মরিসনের অভিনয় করার কথা ছিল, কিন্তু তার অকালপ্রয়াণে বিগ ব্রেক পেয়ে যান চার্লি শিন। উইলেম ড্যাফো এবং টম বেরেঞ্জার অভিনয় করেছেন যথাক্রমে সার্জেন্ট এলিয়াস এবং সার্জেন্ট বার্নসের চরিত্রে। স্টোন তার মুনশিয়ানায় দর্শককে যুদ্ধের মাঠে পৌঁছিয়ে দিতে পেরেছিলেন। একারণেই মুক্তির এত বছর পরেও প্লাটুন এত বেশি প্রভাব বিস্তার করে আছে।
গুড মর্নিং ভিয়েতনাম (১৯৮৭)
ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময়ে আর্মি রেডিওতে কাজ করা এক হাসিখুশি ডিস্ক জকির অভিজ্ঞতা নিয়ে গড়ে উঠেছে এর কাহিনী। রবিন উইলিয়ামসের অনবদ্য অভিনয়ে এই কমেডি-ড্রামা হয়ে উঠেছে বারবার দেখার মতো একটি সিনেমা।
বিভিন্ন ক্যারিকেচার আর কণ্ঠাভিনয়ের জন্য তার পরিচিতি ছিল এমনিতেই, নিজের সেই প্রতিভাকে ভালোভাবেই তিনি কাজে লাগিয়েছেন এখানে। তবে কমেডিয়ান হলেও ডিস্ক জকি অ্যাড্রিয়ান কিন্তু ভীরু নন। একদিকে তিনি যুদ্ধের অন্ধকার সময়ে সৈন্যদের অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন। পাশাপাশি সেনাবাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নীতিহীনতার সময়ে তাদেরকে সরাসরি প্রশ্ন করেছেন আর বুদ্ধিবলে বোকাও বানিয়েছেন।
চলচ্চিত্রটির সংলাপ কিংবা পার্শ্ব-অভিনেতাদের ভূমিকাও প্রশংসনীয়। তবে কোনো স্ক্রিপ্ট ছাড়াই বেশিরভাগ দৃশ্যে কাজ করা রবিন উইলিয়ামসকে ছাড়া একে কল্পনা করা যায় না। ‘ডেড পোয়েটস সোসাইটি’ কিংবা ‘গুড উইল হান্টিং’ এর মতো এখানেও সিরিয়াস কিছু মুহূর্তের মাঝে পরিবেশ হালকা করে তুলতে দেখা গেছে তাকে। নিরাশার মাঝে আশার আলো ফুটিয়ে আনার মতো চরিত্রগুলোই আসলে রবিন উইলিয়ামসকে অমর করে রেখেছে।
ফুল মেটাল জ্যাকেট (১৯৮৭)
পারফেকশনিস্ট পরিচালক স্ট্যানলি কুবরিকের এই সৃষ্টি ‘হলিউডের দুঃস্বপ্ন’ নামেও পরিচিত। বাস্তবের সাথে কতটুকু মিল আছে, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও সিনেমাটির বর্ণিল চরিত্রগুলো নিঃসন্দেহে দর্শকদের বিভোর করে রাখবে। পারফেকশনিস্ট কুবরিক যথারীতি নানারকম সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিলেন কালজয়ী এই ক্লাসিক নির্মাণের সময়ে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি শতভাগ সফল হয়েছেন। শুধু ভিয়েতনাম যুদ্ধ না, সেনাবাহিনীর আভ্যন্তরীণ পরিস্থিতির অলিগলিতে হাঁটা এই সিনেমা যেকোনো সময়ের সাথেই প্রচণ্ড প্রাসঙ্গিক।
মানসিক বিকারগ্রস্ত প্রাইভেট গোমার, মুখরা ড্রিল সার্জেন্ট হার্টম্যান, নিয়মিত ডায়েরি লেখা প্রাইভেট ডেভিস ওরফে জোকারের মানসিক বিবর্তন দর্শকের মনে প্রভাব ফেলতে বাধ্য। শহরপোড়া ছাইয়ে ধোঁয়াচ্ছন্ন হয়ে থাকা আকাশের ব্যাকড্রপে সৈন্যরা মিকি মাউসের থিম সং গাইতে গাইতে মার্চ করছে, এরকম আইকনিক সব দৃশ্যগুলোর কথা কে-ইবা ভুলতে পারে? সেলুলয়েডের পর্দায় ভিয়েতনাম যুদ্ধের কথা উঠলে এই সিনেমার প্রসঙ্গ আসা অনিবার্য।
বর্ন অন দ্য ফোর্থ অভ জুলাই (১৯৮৯)
টম ক্রুজ তার ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা পারফরম্যান্স দিয়েছেন এই চলচ্চিত্রতেই। এই বায়োপিকের কাহিনী গড়ে উঠেছে প্রাক্তন আমেরিকান সৈন্য রন কোভিচকে ঘিরে। দেশপ্রেমের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে মেরিন কর্পসে যোগ দেয়া রন ভিয়েতনাম যুদ্ধে ভুলবশত নিরীহ কিছু মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ান।
পরবর্তী সময়ে পায়ে আঘাত পেয়ে যথাযথ চিকিৎসার অভাবে তরুণ বয়সেই হুইলচেয়ারে বন্দী হয়ে পড়েন তিনি। মদের নেশায় বুঁদ থাকা অবস্থায় তার মনে হয়, যুদ্ধের বিরুদ্ধে আন্দোলন করাই তার জীবনে বেঁচে থাকার একটা অনুপ্রেরণা হয়ে উঠতে পারে।
ভিয়েতনাম যুদ্ধকে ঘিরে অলিভার স্টোনের ট্রিলজির দ্বিতীয় অধ্যায় তাকে জিতিয়ে দেয় সেরা পরিচালকের অস্কার। তৃতীয় অধ্যায় ছিল ১৯৯৩ সালের ‘হেভেন অ্যান্ড আর্থ’। কোভিচের ভূমিকায় ক্রুজের অভিনয় তাকে প্রথম অস্কার মনোনয়ন এনে দিয়েছিল।
ক্যাজুয়ালটিজ অভ ওয়ার (১৯৮৯)
‘বর্ন অন দ্য ফোর্থ অভ জুলাই’ এর সাথে একই বছর মুক্তি পাওয়া এই সিনেমাটির জন্য আসলে দর্শক কিংবা সমালোচকদের মনে দাগ কাটার সুযোগ ছিল কমই। তাছাড়া, ভিয়েতনামের গহীন জঙ্গলে আটকে পড়া অসহায় ইনফ্যান্ট্রিম্যানের কাহিনী তো বছর তিনেক আগের ‘প্লাটুন’-এ নিখুঁতভাবে ফুটে উঠেছে। তাই সফল মুভিগুলোর ভিড়ে এটি একটি ব্যর্থতার নাম।
মুভির মূল চরিত্রে ছিলেন ‘ব্যাক টু দ্য ফিউচার’ খ্যাত মাইকেল জে ফক্স। এই সৈন্য দুর্ভাগ্যবশত এক সাইকোপ্যাথিক টিম লিডারের পাল্লায় পড়ে, ভয়ানক সেই লোক ধর্ষণ করে খুন করে এক নিষ্পাপ কিশোরীকে।
সিনেমাটির গুরুতর দৃশ্যগুলো খুব ভালোমতো ফুটিয়ে তুলতে পারেননি জে ফক্স। সেই লিডারের ভূমিকায় অবশ্য ভালোই অভিনয় করেছেন শন পেন। সিনেমার কাহিনীও খুব একটা বাস্তবসম্মত নয়। নির্বিচারে নাগরিকদের খুন করা মাদকাসক্ত সৈন্যদের কাজগুলো খুব বেশি নাটুকে বলে মনে হয়েছে।
ফরেস্ট গাম্প (১৯৯৪)
রবার্ট জেমেকিসের এই মাস্টারপিস সিনেমার মূল কাহিনী প্রায় সবারই জানা, নতুন করে বলার তেমন কিছু নেই। টম হ্যাংকসের অনবদ্য অভিনয়ের ওপর ভর করে চলা এই সিনেমা আসলে একটা আবেগের নাম।
তবে সিনেমাটির মধ্যে উঠে আসা ভিন্ন ভিন্ন নানা গল্পের মাঝে গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হলো ভিয়েতনামের যুদ্ধ। কাহিনীটি প্লাটুনের মতো মেলোড্রামাটিক হয়ে পড়তে পারত সহজেই। কিন্তু ফরেস্টের চরম আশাবাদী চরিত্রটি কাহিনীর মোড় ঘুরিয়ে অন্যদিকে নিয়ে চলে গেছে।
জেগ্যারি সিনিজ অভিনীত লেফটেন্যান্ট ড্যান টেলরের চরিত্রটি মনে করিয়ে দিতে পারে টম ক্রুজের চরিত্রটিকে। এই যুদ্ধে অংশ নেয়া যে আসলে ইগোবাজ রাজনৈতিকদের নৈতিকতার চরম অবক্ষয়ের বহিঃপ্রকাশ, সেটা দেখানোর সাহস অবশ্য করে উঠতে পারেনি সিনেমাটি। তবে ‘ফরেস্ট গাম্প’ এমন এক এপিক, যা কিনা ভিয়েতনাম যুদ্ধের আবর্তে আটকে পড়া অন্ধকারাচ্ছন্ন এক আমেরিকার ইতিহাসকে নিয়ে এসেছে।
উই ওয়ার সোলজারস (২০০২)
মেল গিবসনের এই অসাধারণ মুভিটি যুদ্ধের পেছনের আবেগকে ফুটিয়ে তোলার জন্য বিখ্যাত। যুদ্ধের ভয়াবহতার দৃশ্যগুলো হয়তো চোখকে বন্ধ করতে বাধ্য করবে না, কিন্তু চরিত্রগুলোর মর্মস্পর্শী পরিণতি নিঃসন্দেহে চোখে পানি নিয়ে আসবে।
ভিয়েতনাম যুদ্ধ সম্পর্কিত বেশিরভাগ সিনেমাতেই সম্মুখসমর কিংবা মাইক্রোলেভেলে যুদ্ধ দেখানো হয়। তবে এখানে লেন্সটা জুম আউট করে যুদ্ধটা দেখানো হয়েছে নিজের ব্রিগেডকে নিয়ে যুদ্ধের নানা চ্যালেঞ্জ সামলানো এক কর্নেলের দৃষ্টি থেকে।
এখানে দেখানো যুদ্ধ, ‘ব্যাটল অফ ড্র্যাং’ আমেরিকান ইতিহাসের পাতায় এক স্মরণীয় অধ্যায়। এ যুদ্ধে চার হাজার উত্তর ভিয়েতনামী সৈন্যের মুখোমুখি হয়েছিল মাত্র চারশো সৈন্যের এক ক্যাভালরি। আশ্চর্য হলেও সত্য যে, তাদের বেশিরভাগই ফিরে এসে নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা জানাতে পেরেছেন সবাইকে।
রেসকিউ ডন (২০০৬)
ক্রিশ্চিয়ান বেলের এই ওয়ার ড্রামাটির কাহিনী নেয়া হয়েছে ১৯৯৭ সালের ডকুমেন্টারি ‘লিটল ডিটার নিড টু ডাই’ থেকে। জার্মান-আমেরিকান পাইলট ডিটার ড্যাংলারের সত্যিকারের অভিজ্ঞতা নিয়ে নির্মিত হয়েছে মুভিটি। ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময়ে ডিটারের প্লেনে গুলিবর্ষণ করার ফলে তিনি গিয়ে পড়েন প্যাথেট লিওর পক্ষে থাকা এক দল গ্রামবাসীর হাতে। ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময়ে যুদ্ধবন্দী হবার মতো ভয়াবহ অভিজ্ঞতাকে তীব্রভাবে ফুটিয়ে তোলার জন্য একে একটি অসাধারণ চলচ্চিত্র বিবেচনা করা হয়।
বললে বাড়াবাড়ি মনে হতে পারে, কিন্তু অন্য যুদ্ধের তুলনায় ভিয়েতনাম যুদ্ধের ভয়াবহতা কোনো অংশে কম ছিল না। বনের মাঝে অনায়াসে চলাফেরা করা কিংবা এক ঘুষিতে প্রিজন গার্ডকে কুপোকাত করার মতো টিপিকাল হলিউড হিরোইজমের অনুপস্থিতি সিনেমাটিকে বাস্তবতার সাথে সম্পর্কিত হতে সাহায্য করেছ। দুর্ভাগ্যবশত, মুভিটি বেশ আন্ডাররেটেড।
আরো জানতে পড়তে পারেন বই। অনলাইনে কিনতে ক্লিক করতে পারেন নিচের লিংকে-