‘রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও আসেননি’ উপন্যাসটি দুই বাংলার জনপ্রিয় লেখক মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিনের লেখা ‘রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি’ উপন্যাসটির সিকুয়েল। এ লেখায় দুটি উপন্যাস সম্পর্কেই আলাপ করা হবে। আপনি যদি প্রথম উপন্যাসটি না-ও পড়ে থাকেন, তবু আপনার দ্বিতীয় উপন্যাসটি পড়তে খুব একটা সমস্যা হবে না। লেখক সেই চিন্তা করেই সুন্দরভাবে সব ফুটিয়ে তুলেছেন। তবে প্রথম উপন্যাসটি পড়ে নিলে আপনার দ্বিতীয় উপন্যাসটি পড়তে আরো ভালো লাগবে, কারণ তখন আপনার জানা থাকবে রহস্যময় প্রতিটি জিনিসের ব্যাখ্যা।
প্রথমেই ‘রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি’ উপন্যাসটি সম্পর্কে কিছু কথা বলা যাক। লেখক এখানে ছবির মতো সুন্দর এক মফস্বল শহর সুন্দরপুরের কথা তুলে ধরেছেন, যেখানে রয়েছে অনেক রহস্য। সেসব রহস্য সম্পর্কে সুন্দরপুরের মানুষজন জানে খুব কমই। এ গ্রামেরই একটি রেস্তোরাঁর নাম ‘রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি’। রবীন্দ্রনাথ কি সত্যিই কখনো এখানে খেতে আসেননি, নাকি এসেছিলেন? আর কেনই বা রেস্তোরাঁর নাম রাখা হলো রবীন্দ্রনাথের নামে? সেসব নাহয় প্রথম উপন্যাস পড়েই জানলেন।
এই সুন্দরপুরের জমিদার বাড়িতেই থাকত উপন্যাসের সেই রহস্যময়ী নারী। নাম তার মুশকান জুবেরি। শুরুতে মুশকান ছিল ঢাকার এক হাসপাতালের ডাক্তার। তারপর বিশেষ এক কারণে সে ডাক্তারি ছেড়ে দেয়। ডাক্তারি ছেড়ে সুন্দরপুরে এসে এই রেস্তোরাঁটি চালানো শুরু করে। তার হাতের রান্না খেতে বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রতিদিন মানুষ এসে ভিড় করত। খাবারগুলোর স্বাদ অসাধারণ। যে খায়, সে-ই মুগ্ধ হয়ে যায়, কারণ এত মজাদার খাবার এর আগে তারা কেউই কখনো খায়নি। মুশকান রান্নার সময় এক বিশেষ উপাদান মিশিয়ে দিত সব খাবারে। এ কারণেই খাবারগুলো খেতে এত ভালো হতো। কিন্তু সেই উপাদান সম্পর্কে সে ছাড়া রেস্তোরাঁর অন্য কেউই জানত না।
তারপর হঠাৎ একদিন এক আগন্তুক এসে হাজির হয় সুন্দরপুরে। তার নাম নুরে ছফা। তার গতিবিধি ছিল অস্পষ্ট আর রহস্যময়। সুুুন্দরপুুুরে এসে ছফা মুশকানের এই রহস্য উদঘাটন করার চেষ্টা করে। এজন্য সে সাহায্য নেয় আতর আলী নামের একজনের। আতর আলী ছিল সুন্দরপুর থানার সাবেক ইনফর্মার। তার কাছে গ্রামের সব ধরনের খবর থাকত। শুরুতে নুরে ছফা নিজেকে সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দিলেও শেষে সবাই জেনে যায়- সে আসলে সাংবাদিক নয়, বরং ডিবির একজন ইনভেস্টিগেটর। প্রধানমন্ত্রীর পিএস-এর অনুরোধে ছফা সুন্দরপুরে যায় একটি কেসের তদন্তের কাজে।
ছফা সেখানে যাওয়ার পর অদ্ভুত সব ঘটনা ঘটে। অনেকদিন পর সে অবশ্য রহস্য অনেকটাই উদঘাটন করতে পেরেছিল, এবং তখনই সে মুশকানকে ধরতে তার বাড়িতে চলে যায়। মুশকান তখন মোটামুটি সবকিছুই স্বীকার করে ছফার কাছে। কিন্তু শেষমেশ সে এক বিশেষ বুদ্ধি খাটিয়ে পালিয়ে যায় সুন্দরপুর থেকে।
কী সেই রহস্য? কীভাবেই বা মুশকান পালিয়ে যায় সুন্দরপুর থেকে? আর রান্নায় কী বিশেষ উপাদান মেশাত সে? কেনই বা মুশকান ডাক্তারি ছেড়ে দিয়েছিল? সবকিছু জানতে হলে আপনাকে পড়তে হবে ‘রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি’ উপন্যাসটি।
রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও আসেননি
মুশকান পালিয়ে যাওয়ার পর তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে তাকে খুঁজে যায় নুরে ছফা। কিন্তু কোনো খোঁজই সে পায়নি। তারপর হঠাৎ একদিন পহেলা বৈশাখ থেকে ফেরার সময় মুশকানকে দেখে ছফা। তারপর আবার হারিয়ে ফেলে। প্রধানমন্ত্রীর পিএস হঠাৎ মুশকানের খোঁজ পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠলে নতুন উদ্যমে আবার কাজে নেমে পড়ে ছফা।
তখন সে জানতে পারে, এতদিন সে মুশকান সম্পর্কে যা জানত, তার অনেকটাই মিথ্যে! তারপর নতুন এক গল্প জানতে পারে ছফা। তখন সে গোলকধাঁধায় পড়ে যায়। কোনটি সত্য, আর কোনটিই বা মিথ্যে? মুশকান বছরের পর বছর তার যৌবন ধরে রেখেছে। এর পেছনে একটি কারণ ছফা আবিষ্কার করে। সে এক বিশেষ জিনিস খায়, যার কারণে বছরের পর বছর চলে যায়, কিন্তু মুশকানের বয়স আর বাড়ে না। এই বিশেষ জিনিসটি কী, তা জানার জন্য প্রধানমন্ত্রীর পিএসও তখন পাগল হয়ে ওঠে।
সুন্দরপুর থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর মুশকান সুন্দরপুরের মাস্টার রমাকান্ত কামারকে তার জমিদারবাড়ির দায়িত্ব দেয় এবং মাস্টার জমিদারবাড়িতে একটি স্কুল দেন। সেখানে শ্যামল ও সুস্মিতা নামের দু’জন কাজ করতো। সুস্মিতা সেখানে গানের শিক্ষক ছিল। আর আগের ‘রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি’ রেস্তোরাঁর জায়গাটায় মাস্টার একটি লাইব্রেরি গড়ে তোলেন। সেখানেও অনেকে প্রতিদিন বই পড়তে আসে।
ছফা আরো কিছু তথ্য জানতে পারে। সে জানতে পারে, মুশকান কয়েকজনকে খুনও করেছে। সেসব খুনের পেছনে তার রয়েছে এক অদ্ভুত কারণ। মুশকানকে তার বিভিন্ন কাজে বিভিন্ন সময় নানাভাবে সহায়তা করে একজন ডাক্তার। সেই ডাক্তারের বাসা থেকেই ছফা একটি পাসপোর্ট পায়। সেখান থেকে ছফা বুঝতে পারে মুশকান কলকাতায় আছে।
তারপর ছফা কলকাতা চলে যায় সত্যিকারের রহস্য জানার জন্য আর মুশকানকে ধরার জন্য। কলকাতায় ছফাকে সব ধরনের সাহায্য করে কলকাতার একজন পুলিশ অফিসার। ছফা কলকাতা গিয়ে তার বাড়িতেই ছিল। আর সেখান থেকে সেই পুলিশ অফিসারের মাধ্যমেই বিভিন্ন তথ্য জোগাড় করে সে। তারপর সেসব নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করে শেষমেশ সে বুঝতে পারে, মুশকান কলকাতায় এসে দুজনকে খুন করেছে। ছফা বিভিন্ন অনুমান করতে থাকে এই রহস্যজনক কেসটি নিয়ে, তবে অঙ্ক এত সহজে মেলে না। কারণ যতক্ষণ মুশকানকে ধরা যাচ্ছে না, ততক্ষণ কিছুই নিশ্চিত হয়ে বলা যাচ্ছে না।
শেষমেশ কি মুশকান ধরা পড়েছিল? তার অনন্ত যৌবনের পেছনের রহস্যটা আসলে কী? এসব উত্তর জানার জন্য আপনাকে পড়তে হবে ‘রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও আসেননি’ বইটি। উপন্যাস দুটিতে লেখক সৃষ্টি করেছেন রহস্যের পর রহস্য, যার একটি যখন জানা যায়, তখন আরেকটি নতুন রহস্যের সৃষ্টি হয়। সবমিলিয়ে দারুণ উপন্যাস এই দুটি। মুশকান জুবেরির এই প্রহেলিকাময় জগত সম্পর্কে জানতে থ্রিলারপ্রেমীরা তাই পড়ে নিতে পারেন উপন্যাস দুটি।
লেখকের অন্যান্য বই
২০১০ সালে মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিনের প্রথম মৌলিক থ্রিলার ‘নেমেসিস’ প্রকাশিত হলে পাঠকমহলে দারুণ সাড়া পড়ে যায়। পরবর্তী সময়ে তার কন্ট্রাক্ট, নেক্সাস, কনফেশন, করাচি নামে এই জনপ্রিয় সিরিজের আরো চারটি বইসহ ‘জাল’, ‘১৯৫২’, ‘নিছক কোনো সংখ্যা নয়’, ‘কেউ কেউ কথা রাখে’, ‘পেন্ডুলাম’ বইগুলোও প্রকাশিত হয়।
অনলাইনে কিনুন- রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও আসেননি